অধ্যায়–
৭
ধর্মশিক্ষাকেন্দ্রের প্রতি সতর্কবাণী
এটা খুবই সম্ভব যে নোংরা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে শয়তানি চক্র নৈতিক ও আত্ম-সংস্কারমূলক কর্মসূচীকে মূল্যহীন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করবে ; মিম্বরে বসে উপদেশ দেয়া , খুৎবা দেয়া ইত্যাদিকে“
স্কলারদের জন্য বেমানান”
হিসেবে উপস্থাপন করবে ; এবং যেসব পণ্ডিত ব্যক্তিত্বের যোগ্যতা আছে মাদ্রাসাগুলোর সংস্কার সাধন করার , তাদের কাজকর্মকে বাধাগ্রস্ত করবে , তাদেরকে“
মিম্বরী”
(অর্থাৎ খুৎবা-অলা) বলে উপহাস করবে। আজকে এমনকি কোনো কোনো মাদ্রাসায় মিম্বরে বসে খুৎবা দেয়াকে অপমানজনক মনে করা হয় ! তারা ভুলে যায় যে বিশ্বাসীদের নেতা ইমাম আলী (আ.) নিজে একজন মিম্বরী (খুৎবা দানকারী) ছিলেন। মিম্বরে বসেই তিনি মানুষকে তিরস্কার করতেন , সতর্ক করতেন , সচেতন করতেন , দিকনির্দেশনা দিতেন। অন্যান্য ইমামগণও (আ.) এমনটাই ছিলেন।
সম্ভবত গোপন এজেন্টরা মাদ্রাসা থেকে নীতি ও আধ্যাত্মিকতাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এই খারাপ জিনিসটি ঢুকিয়ে দিয়েছে ; ফলশ্রুতিতে মাদ্রাসাগুলো দুর্বল ও নীতিহীন হয়ে পড়েছে। আল্লাহ না করুন ; দল তৈরী করা , স্বার্থপরতা , ভণ্ডামি ও দ্বন্দ্ব যেনো মাদ্রাসায় অনুপ্রবেশ না করে। মাদ্রাসার লোকেরা একে অপরের সাথে মারামারি করছে , একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে লাগছে , একে অপরকে অপমান করছে ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে। ইসলামী কমিউনিটিতে তারা অসম্মানিত , তাই শত্রুরা এবং বিদেশীরা মাদ্রাসার উপর প্রভাব খাটাতে পারছে এবং মাদ্রাসাকে শেষ করে দিচ্ছে। এই খারাপ লোকগুলো জানে যে মাদ্রাসার প্রতি এদেশের মানুষের সমর্থন আছে। আর যতদিন জাতি সমর্থন দিচ্ছে মাদ্রাসাকে , ততদিন তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে লড়ে জেতা যাবে না।
কিন্তু যখন একটা সময়ে মাদ্রাসার লোকজন ও ছাত্রদের মাঝে ইসলামী আচরণ ও নৈতিকতার অভাব প্রকাশ পাবে , তারা পরস্পরের সাথে মারামারি করবে , পরস্পরবিরোধী দল তৈরী করবে , আত্ম-সংস্কার ও পরিশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করবে না , অনুপযুক্ত কাজে নিজেদের হাত নোংরা করবে , তখন স্বাভাবিকভাবেই মাদ্রাসা ও আলেমগণ সম্পর্কে মুসলিম জাতি খারাপ ধারণা করবে। ফলশ্রুতিতে তাদের জনসমর্থন হারিয়ে যাবে , এবং একটা পর্যায়ে শত্রুরা এখানে প্রভাব খাটানো সুযোগ পেয়ে যাবে। যদি দেখো যে কোনো আলেম বা মারজা 'কে (মারজা-ই-তাক্বলিদ = সকল বিষয়ে অনুসরণযোগ্য আলেম) সরকার ভয় পাচ্ছে , গুরুত্ব দিচ্ছে , তখন বুঝবে যে এর কারণ হলো এরা (সরকার) জনগণের থেকে লাভ উঠায় , আবার একইসাথে জনগণকে ভয়ও পায়। তারা আশঙ্কা করে যে , যদি তারা কোনো আলেমের প্রতি ঘৃণা , ঔদ্ধত্য ইত্যাদি প্রকাশ করে , তাহলে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। কিন্তু যদি আলেমরাই একে অপরের বিরোধিতা করে , একজন আরেকজনকে অসম্মান করে , এবং ইসলামী নৈতিক আচরণবিধি অনুযায়ী আচরণ না করে , তাহলে সমাজে তাদের যে অবস্থান রয়েছে , তা থেকে তারা বিচ্যুত হয়ে পড়বে , জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। মানুষ তোমাদেরকে রুহানি (আলেম , আধ্যাত্মিক ব্যক্তি) হিসেবে দেখতে চায়। দেখতে চায় ইসলামী আদব-কায়দা পালনকারী হিসেবে , দেখতে চায় হিজবুল্লাহ (আল্লাহর দল) হিসেবে। এইসব মেকি জাঁকজমক , চাকচিক্য থেকে নিজেকে সংযত করো ; ইসলামী আদর্শ প্রচারের অগ্রযাত্রায় ও মুসলিম জাতির স্বার্থে কোনো আত্মত্যাগকেই না কোরো না। সর্বশক্তিমান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে তাঁর পথে অগ্রসর হও এবং অনন্য স্রষ্টা ছাড়া আর কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিও না।
যাইহোক , যদি প্রত্যাশার বিপরীতে মানুষ দেখে যে , আধ্যাত্মিকতার দিকে মনোযোগ দেয়ার বদলে তোমরা কেবল দুনিয়াবি বিষয়েই মশগুল , এবং অন্যদের মত তোমরাও ব্যক্তিগত ও দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের পিছনে ছুটছো , দুনিয়াবি সুখের জন্য লড়াই করছো ; এবং আল্লাহ না করুন নিজেদের নোংরা , নীচ দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলাম ও কুরআনকে খেলাচ্ছলে গ্রহণ করছো , ধর্মকে ব্যবসায় পরিণত করেছো–
তাহলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে , সন্দিগ্ধ হয়ে পড়বে। তোমরাই এর জন্য দায়ী হবে। যদি মাদ্রাসার পাগড়িধারী লোকেদের কেউ কেউ পদ-পদবী , দুনিয়াবী বিষয় , ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ইত্যাদির কারণে পরস্পর মারামারি করে , একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় ও গিবত করে , তাহলে তারা ইসলাম ও কুরআনের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করলো , এবং পবিত্র আস্থার ভঙ্গ করলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর আস্থা রেখে তাঁর দেয়া পবিত্র ধর্মকে রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন হলো এক মহান ঐশী আস্থার নিদর্শন। উলামা এবং রুহানিগণ হলেন এই স্বর্গীয় আস্থার বাহক , আর এই আস্থার যেনো ভঙ্গ না হয় , সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাদেরই। (ইসলাম নিয়ে বিবদমান আলেমগণের) এই একগুঁয়েমি , দুনিয়াবী ও ব্যক্তিগত বিরোধ–
এগুলো সবই ইসলাম ও তার মহান নবীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা।
আমি জানি না এইসব বিরোধিতা , হীন স্বার্থ হাসিলের জন্য দল তৈরী করা , পারস্পরিক শত্রুতা ইত্যাদির মাধ্যমে কী লক্ষ্য অর্জিত হয়। যদি সেটা তোমাদের দুনিয়াবী স্বার্থে হয়ে থাকে , তাহলে তোমাদের তো দুনিয়াবী তেমন কিছুই নেই! যদি তোমরা দুনিয়াবী আনন্দ-সুখ অর্জন করে থাকো , তাহলে তো এত দ্বন্দ্ব থাকার কথা না ! অবশ্য যদিনা তোমরা সেইসব রুহানি হও , যারা রুহানিয়াত বলতে বোঝে কেবল আলখাল্লা আর পাগড়ি। যেই রুহানি (আলেম , আধ্যাত্মিক ব্যক্তি) আধ্যাত্মিক বিষয়ে মশগুল , যার মধ্যে ইসলামের সংস্কারমূলক গুণাবলী আছে , যে নিজেকে আলী ইবনে আবি তালিবের (আ.) অনুসারী মনে করে , সেতো দুনিয়ার লোভে পড়তে পারে না ! এবং দুনিয়াবী বিষয়কে সে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণও হতে দেবে না। তোমরা যারা নিজেদেরকে বিশ্বাসীদের নেতার (আ.) অনুসারী বলে দাবী করো–
এই মহান মানুষটার জীবন সম্পর্কে তোমাদের কিঞ্চিৎ হলেও গবেষণা করে দেখা উচিত , আর ভেবে দেখা উচিত , আসলেই কি তোমরা তাঁর অনুসারী ! তোমরা কি তাঁর তাক্বওয়া , কঠোর সংযম , সাধারণ অনাড়ম্বর জীবন যাপন সম্পর্কে জানো ? তোমরা কি সেটা অনুসরণ করো ? অত্যাচার-অবিচার , শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই মহান মানুষটির লড়াই সম্পর্কে কি তোমরা কিছু জানো ? জানো কিভাবে তিনি নির্যাতিত মানুষকে নির্দ্বিধায় সমর্থন দিতেন , সমাজের বাস্তুহারা দুর্দশাগ্রস্ত শ্রেণীর প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতেন ? তোমরা কি সেটা চর্চা করো ?“
শিয়া”
শব্দটা কি কেবলই ইসলামের এক আলঙ্কারিক রূপ ?
তাহলে , তোমাদের সাথে সেইসব মানুষের পার্থক্য কোথায় , যারা সদগুণের দিক থেকে“
শিয়াদের”
তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর ? তাদের তুলনায় তোমাদের কী-ই বা বিশেষত্ব আছে ?
যারা আজকে দুনিয়ার একটা অংশকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে , হত্যা-রক্তপাত করছে , তারা এসব করছে কারণ তারা দুনিয়ার জাতিগুলোকে লুট করার প্রতিযোগীতায় নেমেছে ; তারা প্রতিযোগীতায় নেমেছে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করার , মানুষের শ্রমের ফসলকে দখল করা এবং দুর্বল ও অনুন্নত জাতিগুলোকে নিজের করায়ত্ত্বে নিয়ে আসার। একারণে তারা স্বাধীনতা , উন্নতি-অগ্রগতি , সীমান্ত রক্ষা , স্বাধীনতা রক্ষা ইত্যাদি প্রতারণামূলক শ্লোগান দিয়ে প্রতিদিনই দুনিয়ার কোনো না কোনো প্রান্তে যুদ্ধের আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে , লক্ষ লক্ষ টন বোমা ফেলছে নিরাপত্তাহীন জাতিগুলোর উপর। দুনিয়াবী বিষয়ে মত্ত কলুষিত মস্তিষ্কের মানুষের কাছে এধরণের যুদ্ধ খুবই যৌক্তিক। কিন্তু তোমাদের (আলেমদের) যে লড়াই , পারস্পরিক দ্বন্দ্ব , তা এমনকি ঐসব দুনিয়ালোভী মানুষের কাছেও অযৌক্তিক। যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তোমরা কেনো পরস্পর লড়াই করছো , তাহলে তারা জবাব দেবে যে ওমুক ওমুক দেশ দখল করার জন্য করছি : ওমুক ওমুক দেশের সম্পত্তি আমাদের নিতে হবে। কিন্তু যদি তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে , কেনো তোমাদের মধ্যে এত দ্বন্দ্ব , কেনো তোমরা পরস্পর লড়াই করছো , তোমাদের উত্তর কী হবে ? দুনিয়ার কী লাভ তোমরা পাচ্ছো , যার জন্যে তোমরা লড়াই করছো ? মারজা-ই-তাক্বলিদ তোমাদেরকে“
শাহরিয়াহ”
নামক যে মাসিক ভাতা দেন , তা এমনকি অনেকের সিগারেট-খরচের চেয়েও কম ! ঠিক মনে পড়ছে না , তবে কোনো পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে দেখেছি যে ওয়াশিংটনের একজন ধর্মযাজককে ভ্যাটিকান সিটি থেকে যে পরিমাণ টাকা দেয়া হয় , তা খুবই মোটা অঙ্কের। আমার মনে হয় সেটা শিয়া মাদ্রাসার গোটা বাজেটের চেয়েই বেশি ! তোমাদের এধরণের জীবনযাত্রা ও অবস্থায় কি পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মানায় ?
এ সমস্ত দ্বন্দ্ব , আসলে যার কোনো পবিত্র লক্ষ্য নেই , এসব দ্বন্দ্বের গোড়া হলো দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা। যদি তোমাদের মাঝে এধরণের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান থাকে , তবে এর কারণ হলো তোমরা নিজেদের অন্তর থেকে দুনিয়ার মায়াকে ত্যাগ করতে পারোনি। যেহেতু দুনিয়াবী লাভ খুবই সীমিত , সুতরাং সেটা অর্জনের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তুমি কোনো নির্দিষ্ট পদ অর্জন করতে চাও , যেটা কিনা আরেকজনও চায় , এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই এটা ঈর্ষা ও বিবাদের জন্ম দেবে। কিন্তু যারা খোদার লোক , যারা দুনিয়ার মায়াকে অন্তর থেকে বের করে দিয়েছে , এক আল্লাহ ছাড়া যাদের আর কোনো লক্ষ্য নেই , তারা কখনোই একে অপরের সাথে লড়াই করে না ; এমন দূর্দশা-অনৈক্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। যদি আজকে স্বর্গীয় নবীগণ সকলে কোনো শহরে একত্রিত হতেন , তবে তাঁদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য কিংবা দ্বন্দ্ব থাকতো না , কারণ তাঁদের সকলের লক্ষ্য ও গন্তব্য একই। তাঁদের প্রত্যেকের হৃদয়ই খোদামুখী , এবং দুনিয়ার যেকোনো মায়া থেকে তাঁরা মুক্ত।
যদি তোমাদের কাজকর্ম , জীবনযাত্রা , অভিযাত্রা তেমনটাই হয় যা এখন দেখা যাচ্ছে , তাহলে তোমরা বরং খোদাকে ভয় করো। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন , তোমরা না আবার আলী ইবনে আবি তালিবের (আ.) অনুসারী না হয়ে দুনিয়া ত্যাগ করো। তোমাদের ভয় করা উচিত যে , তোমাদের তওবা না-ও কবুল হতে পারে , এবং ইমাম আলীর শাফায়াত তোমার উপকার না-ও করতে পারে । সুযোগ হারানোর আগেই তোমাদের উচিত এই বিষয়টার সমাধান করা। এইসব তুচ্ছ অপমানজনক দ্বন্দ্ব বাদ দাও। এসব দ্বন্দ্ব-লড়াই সম্পূর্ণরূপে অনুচিত। তোমরা কি (এক মুসলিম জাতি ভেঙে) একাধিক জাতি সৃষ্টি করছো ? তোমাদের ধর্ম কি উগ্র জাতীয়তাবাদের ধর্ম ? কেনো তোমরা সাবধান হচ্ছো না ? কেনো তোমরা বিশুদ্ধ , সৎ ও পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ নও ? কেনো ? কেনো ?
এসব বিভেদ খুব মারাত্মক , কারণ এসবের ফলস্বরূপ এমন অনৈক্যের জন্ম হয় , যার ক্ষতি পূরণ করা অসম্ভব। (বিভেদের ফলস্বরূপ) মাদ্রাসাগুলো শেষ হয়ে যাবে , সমাজে তোমরা হবে মূল্যহীন ও অসম্মানিত। এইসব দল সৃষ্টি করা কেবল তোমাদের-ই ক্ষতি বয়ে আনছে। এটা যে কেবল তোমাদের জন্যই কলঙ্কজনক তা নয় , বরং সমাজ ও জাতির জন্য এটা অসম্মান ও বদনাম ডেকে আনে , ফলস্বরূপ ইসলাম হয় ক্ষতিগ্রস্ত। যদি তোমাদের পরস্পরবিরোধিতার কারণে মুসলিম জাতির মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি হয় , তাহলে সেটা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট সেটা হবে অন্যতম কবিরা গুনাহ , কারণ এর ফলে সমাজে অনৈক্য সৃষ্টি হবে , যা আমাদের উপর শত্রুদের প্রভাব বৃদ্ধির দ্বার খুলে দেবে। সম্ভবত মাদ্রাসার ভিতরে অনৈক্য ও শত্রুতার প্রসার ঘটানোর জন্য কোনো অদৃশ্য হাত কাজ করছে। মানুষের চিন্তাকে দূষিত করে , মানুষের মাঝে সংশয় ঢুকিয়ে দিয়ে এগুলোকে“
ধর্মীয় দায়িত্বের”
ছদ্মবেশ পরিয়ে সেই অদৃশ্য হাত বিভেদ ও সংঘাতের বীজ বপন করছে। এভাবে তারা ধর্মশিক্ষাকেন্দ্রে সৃষ্টি করেছে অনৈক্য , যাতে যে ব্যক্তিরা ইসলামের ভবিষ্যতের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারতো , তারা যেনো শেষ হয়ে যায়। তারা যেনো ইসলাম ও ইসলামী সমাজের খেদমতে না আসে। সতর্ক ও সচেতন হওয়াটা আমাদের দরকার।“
আমার ধর্মীয় দায়িত্ব হলো এটুকু , আর ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা হলো এটুকু”
–
এজাতীয় চিন্তা করে নিজেকে বোকা বানিও না। কখনো কখনো শয়তান মানুষের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ করে দেয়। কখনো কখনো স্বার্থপর চাওয়া-পাওয়া মানুষকে বাধ্য করে ধর্মীয় দায়িত্বের নাম করে (স্বার্থলোভী) কাজ করতে। কোনো মুসলমানকে কষ্ট দেয়া কিংবা কোনো ভাইয়ের সম্পর্কে খারাপ কিছু বলা–
এগুলো কোনো ধর্মীয় দায়িত্ব নয়।
এটাই হলো দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা , নিজের প্রতি ভালোবাসা। এগুলোই হলো শয়তানের কুমন্ত্রণা , যা মানুষের জন্য আঁধার ডেকে আনে। এই শত্রুতা হলো ধ্বংসপ্রাপ্তদের শত্রুতা :“
জাহান্নামবাসীদের জন্যে বাকবিতণ্ডা অবশ্যম্ভাবী ।”
(সূরা সা 'দ , ৩৮:৬৪)
শত্রুতা আর বাকবিতণ্ডা হলো জাহান্নামের জিনিস। দোযখের মানুষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে , থাকে পারস্পরিক মারামারি। যদি তোমরা এই দুনিয়ার জন্যে ঝগড়া করো , তবে সাবধান হও ! কারণ তোমরা নিজেদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করছো , আর তোমরা তার মাঝপথে আছো। পরকালের দুনিয়ায় তো কোনো কিছুর জন্যে মারামারি নেই ! ওপারের দুনিয়ার মানুষেরা বিশুদ্ধ , প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী। তাদের পরস্পরের মাঝে কেবলই শান্তি। খোদার প্রতি ভালোবাসা আর আনুগত্য তাদের হৃদয় ছাপিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো আল্লাহতে ঈমান আনা ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসা। আল্লাহর বান্দাদের প্রতি ভালোবাসা-ই হলো তাঁর ভালোবাসার ছায়া।
তোমার নিজের হাতকে আগুনের মধ্যে দিও না। দোযখের আগুনের শিখাকে উস্কে দিও না। জাহান্নাম মানুষের নোংরা কাজকর্ম দ্বারা প্রজ্বলিত। এগুলো হলো একগুঁয়ে লোকেদের কাজ , যা দোযখের আগুনকে প্রজ্বলিত করে। হাদীসে বর্ণিত আছে :“
আমি জাহান্নামকে অতিক্রম করেছি যখন তার আগুন নেভানো ছিলো।”
যদি কোনো মানুষ নিজের কর্ম দ্বারা জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্বলিত না করে , তবে জাহান্নামের চিহ্ন থাকবে না। এজাতীয় (একগুঁয়ে) আচরণের ভিতরেই থাকে জাহান্নাম। এজাতীয় আচরণের দিকে এগিয়ে যাওয়া মানে জাহান্নামের দিকেই এগিয়ে যাওয়া। যখন মানুষ এই দুনিয়া থেকে চলে যায় , তার সামনে পর্দা উন্মোচিত হয় , তখন সে উপলব্ধি করে যে :“
এ হলো তারই ফল , যা তোমরা ইতিপূর্বে নিজহাতে পাঠিয়েছো ,...”
(আলে ইমরান , ৩:১৮২) এবং“
তারা তাদের কৃতকর্মকে সেখানে উপস্থিত দেখবে”
(সূরা কাহফ , ১৮:৪৯)। মানুষের এই দুনিয়ার সকল কৃতকর্ম অপর দুনিয়ায় দেখা যাবে , এবং তার জন্যে সেই কর্মগুলোকে সত্যিকার রূপ দেয়া হবে :“
অতঃপর কেউ অনু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে , এবং কেউ অনু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তা-ও দেখতে পাবে।”
(সূরা যালযালাহ , ৯৯:৭-৮)। মানুষের এই দুনিয়ার সকল কথা-কর্ম অপর দুনিয়ায় প্রতিফলিত হবে। যেনো আমাদের জীবনের সবকিছু ফিল্মে রেকর্ড করা হচ্ছিলো , আর ঐ দুনিয়ায় সেই ফিল্মটা দেখানো হবে , এবং কেউ-ই সেটার বিন্দুমাত্র অস্বীকার করতে পারবে না। আমাদের সকল কাজকর্ম , পদক্ষেপ–
সবকিছু আমাদেরকে দেখানো হবে , সেইসাথে আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেবে সাক্ষ্য :“
... তারা ( মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ , ত্বক) বলবে : আল্লাহ , যিনি সকল কিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন , তিনি আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছেন।...”
(সূরা ফুসসিলাত , ৪১:২১)।
আল্লাহ , যিনি সকল কিছুকে বাকশক্তি দান করবেন এবং সাক্ষী বানাবেন , তাঁর সামনে তোমার কোনো নোংরা কর্মকেই তুমি অস্বীকার করতে বা লুকাতে পারবে না। একটু চিন্তা করো , সামনে তাকাও , তোমার কর্মের পরিণতি ভেবে দেখো , মৃত্যুর পরে যেসব ভয়ানক ঘটনা ঘটে তা স্মরণে রাখো , কবরের চাপকে স্মরণ করো , বারযাখের দুনিয়াকে স্মরণ করো , এবং তার পরে যে যন্ত্রণা-দূর্দশা আসবে , তাকে উপেক্ষা কোরো না। অন্ততঃ জাহান্নামে বিশ্বাস রাখো। যদি কোনো মানুষ মৃত্যুর পরের ভয়ানক ঘটনাগুলোর কথা স্মরণে রাখে , সে তার জীবন যাপনের ধারা বদলে ফেলবে। যদি এই বিষয়ে তোমাদের ঈমান ও নিশ্চয়তা (নিশ্চিত জ্ঞান) থাকতো , তবে তোমরা এতো স্বাধীনভাবে নীতিহীন জীবন যাপন করতে না।
তোমাদের লেখনী , তোমাদের পদক্ষেপ , তোমাদের জিহবা–
এগুলোকে সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রণ করো সংস্কার ও নিজেদেরকে বিশুদ্ধ করে তোলার জন্য।