জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ0%

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ লেখক:
: নূরে আলম মাসুদ।
প্রকাশক: -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 16 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 10230 / ডাউনলোড: 2527
সাইজ সাইজ সাইজ
জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

অধ্যায় 11

জ্ঞান ও ঈমান

এমন লোককেও তোমরা দেখবে যে , (আধ্যাত্মিকতার) এই বাস্তবতাগুলি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান আছে , কিন্তু এর উপর ঈমান নেই। যারা গোরস্থানে কাজ করে , তারা মৃত মানুষকে ভয় পায় না , কারণ তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে মৃত মানুষ কারো ক্ষতি করতে পারে না ; এমনকি মানুষটি যখন বেঁচে ছিলো , সেই দেহে আত্মা ছিলো , তখনও সে ক্ষতির কারণ ছিলো না , আর প্রাণবিহীন এই শূন্য খাঁচা কী-ই বা ক্ষতি করতে পারবে ? কিন্তু যারা মৃত মানুষকে ভয় পায় , তারা একারণে ভয় পায় যে , এই বিষয়ের সত্যতায় তাদের আস্থা নেই। তাদের কেবলমাত্র জ্ঞান আছে। তারা স্রষ্টা সম্পর্কে জানে , জানে প্রতিদান দিবস সম্পর্কে , কিন্তু তারা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত নয়। তাদের বুদ্ধিশক্তি যা বুঝতে পেরেছে , সে ব্যাপারে তাদের অন্তর বেখবর। স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ তারা জানে , জানে পুনরুত্থান দিবসের বাস্তবতা সম্পর্কেও , কিন্তু ঠিক এই ইন্টেলেকচুয়াল প্রমাণগুলিই হয়তো হৃদয়ের সামনে এমন এক পর্দা হিসাবে উপস্থিত হয়েছে , যা অন্তরে ঈমানের আলোকে জ্বলে উঠতে দিচ্ছে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অন্তরে ঈমানের আলো প্রজ্জ্বলিত হবে না , যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে অন্ধকার ও বাধাবিঘ্ন হতে মুক্ত করে আলোর পথে নিয়ে আসেন : যারা ঈমান এনেছে , আল্লাহ তাদের অভিভাবক ; তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে।... (সূরা বাকারা , 2:257)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যার অভিভাবক , তিনি যাকে অন্ধকার থেকে বের করে আনেন , সে আর একটি পাপও করে না , অপরের গিবত করে না , মানুষকে অপবাদ দেয় না , এবং সে কখনোই দ্বীনি ভাইদের প্রতি হিংসা-দ্বেষ পোষণ করে না। তার নিজের হৃদয়ই আলোকিত এক অনুভুতি দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায় , এবং সে তখন আর দুনিয়া বা দুনিয়াবী বিষয়কে বেশি আদরণীয় করে দেখে না। যেমনটা ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: যদি আমাকে গোটা দুনিয়া আর এতে যা কিছু আছে তার সবকিছু দেয়া হতো , আর তার বিনিময়ে একটা পিঁপড়ার মুখ থেকে অন্যায়ভাবে , নিষ্ঠুরভাবে বার্লি দানার খোসা কেড়ে নিতে বলা হতো , আমি কখনোই সে প্রস্তাব গ্রহণ করতাম না।

কিন্তু তোমাদের কেউ কেউ সব বিষয়ে নিজেদেরকে জড়াতে চাও ; আর ইসলামের মহান স্কলারদের সম্পর্কে মন্দ কথা বলো। সাধারণ মানুষেরা যদি রাস্তার আতর বিক্রেতা কিংবা মুদি দোকানি সম্পর্কে গিবত করে তো তোমরা গিবত করো ইসলামের স্কলারদের , তাদেরকে অপমান করো , তাদের সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলো কারণ তোমাদের ঈমান দৃঢ় নয় এবং কর্মফল যে ভোগ করতে হবে , সে ব্যাপারে তোমরা বিশ্বাস করো না।

আর কিছু নয় , বরং ইসমত (নিষ্পাপতা , নির্ভুলতা) হলো পরিপূর্ণ ঈমান। নবী ও আউলিয়াগণের বিশুদ্ধতার মানে এই নয় যে , জিব্রাইল (আ.) হাতে ধরে তাঁদেরকে পথ দেখিয়েছেন। অবশ্যই , যদি জিব্রাইল (আ.) শিমারকে পথ দেখাতেন , তবে সে কখনোই পাপ করতো না। কিন্তু নিষ্পাপতা হলো আসলে ঈমান থেকে উৎসরিত। কোনো মানুষের যদি মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান থাকে , এবং সে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে খোদাকে সেভাবেই দেখে , যেভাবে সে চোখ দিয়ে দেখে সূর্যকে , তাহলে তার দ্বারা কোনো পাপ সংঘটন সম্ভব হবে না। সশস্ত্র ব্যক্তির সামনে মানুষ যেমন নিষ্পাপ হয়ে যায় , অনেকটা তেমন। এই ভয়টা আসে খোদায়ী উপস্থিতির উপর বিশ্বাস থেকে , আর এই বিশ্বাস মানুষকে পাপ করা থেকে বিরত রাখে। মাসুমিন (আ.) (নিষ্পাপগণ) তাঁদেরকে বিশুদ্ধ মাটি থেকে তৈরী করার পর তাঁদের আধ্যাত্মিক নিষ্ঠা , দীপ্তি ও সৎ গুনাবলী অর্জনের কারণে তাঁরা নিজেদেরকে খোদার সম্মুখে সদা-উপস্থিত হিসেবে দেখতেন , সর্বজ্ঞ আল্লাহর উপস্থিতিতে যিনি সকল কিছু জানেন এবং সব বিষয়কে পরিবেষ্টন করে আছেন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কথাটির তাৎপর্যের উপর তাঁদের ইমান আছে (পরিপূর্ণ আস্থা আছে) , এবং তাঁরা বিশ্বাস করেন যে আল্লাহ ছাড়া আর সবকিছুই নশ্বর , আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই ক্ষমতা নেই মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার : ...আল্লাহর সত্তা ছাড়া আর সকল কিছু ধ্বংস হবে... (সূরা আল কাসাস , 28:88)।

সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দুনিয়া-ই আল্লাহর কাছে প্রকাশ্য এই কথায় যদি মানুষের নিশ্চয়তা ও আস্থা থাকে , এবং মহান আল্লাহ তায়ালা সদা উপস্থিত ও সকল কিছু দেখেন এতে যদি ঈমান থাকে , তবে সেই ব্যক্তির পাপ করার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। বুঝসম্পন্ন বাচ্চার সামনে মানুষ অপকর্ম করে না , এবং নিজের গোপন অংশ প্রকাশ করে না , তাহলে খোদার উপস্থিতিতে সেই একই কাজ কি সে করে , এবং অপকর্ম করতে ভয় করে না ? এর কারণ হলো , বাচ্চার উপস্থিতির ব্যাপারে তার আস্থা আছে , কিন্তু ঐশী উপস্থিতির (আল্লাহর উপস্থিতি) ব্যাপারে যদিওবা তার জ্ঞান আছে , কিন্তু আস্থা নেই (ঈমান নেই)। নানামুখী পাপ তার হৃদয়কে অন্ধকার ও কালো করে দিয়েছে , যার ফলে এই সত্যগুলিকে মেনে নিতেই সে অক্ষম হয়ে পড়েছে , এবং এমনকি এগুলোকে অবাস্তবও মনে করছে হয়তো।

প্রকৃতপক্ষে , মানুষ কখনোই বেপরোয়া জীবন যাপন করতো না , যদি সে নিশ্চিত না হোক , একে অন্ততঃ একটা সম্ভাবনা হিসেবে মনে করতো যে , পবিত্র কুরআনে যা বলা হয়েছে তা সত্য , যে ওয়াদাগুলো করা হয়েছে , যে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে এগুলো সত্য , এবং তার উচিত তার পথ ও কর্মকে সংশোধন করা। যদি তোমরা এমন কথা শুনতে যে এই রাস্তা দিয়ে গেলে হিংস্র প্রাণীর মুখোমুখি হতে হবে কিংবা এই রাস্তায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আছে যারা তোমাকে অপহরণ করবে , তাহলে ঠিকই ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়া বাদ দিতে , এবং তথ্যটার সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের চেষ্টা করতে। জাহান্নাম বলে একটা কিছু হয়তো আছে যেখানে (পাপকর্মের শাস্তি হিসেবে) অনন্তকাল আগুনের মধ্যে থাকতে হবে কেউ এটা মনে করবে , অথচ একইসাথে পাপকাজও করে যেতে থাকবে এটা কী করে সম্ভব ?

যে ব্যক্তি মনে করে যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সদা বিরাজমান ও সবকিছু দেখছেন , এবং সে নিজেকেও তার রবের সামনে উপস্থিত বলে অনুভব করে , যে মনে করে যে তার কথা ও কর্মের প্রতিফল দেয়া হবে , বিচার হবে , শাস্তি হবে , এবং এই দুনিয়ায় নেয়া তার প্রতিটা পদক্ষেপ , উচ্চারিত প্রতিটি কথা , কৃত কর্মগুলো সবকিছুই রাক্বিব ও আতিদ নামক আল্লাহর ফেরেশতা দ্বারা রেকর্ড করা হচ্ছে , এবং তারা খুব ভালোভাবেই সেটা রেকর্ড করছে এমতাবস্থায় কি সেই ব্যক্তি নিজের ভুল ও পাপকর্মের ব্যাপারে উদাসীন থাকতে পারে ? মানুষ এমনকি এই সত্যগুলোকে সম্ভব বলেও মনে করা না এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ব্যাপার। কারো কারো আচার আচরণ ও জীবন যাপন দেখে পরিষ্কার বোঝা যায় যে অপার্থিব জগতের অস্তিত্বকেই তারা সম্ভব বলে মনে করে না ; কারণ পরকালের জগতটাকে কেবলমাত্র সম্ভব বলে মনে করাটাই মানুষকে অসংখ্য ভুল ও পাপ থেকে দূরে রাখে।

অধ্যায় 12

আত্মশুদ্ধির পথে প্রথম পদক্ষেপ

আর কতকাল তোমরা গাফিলতির মাঝে ঘুমিয়ে থাকতে চাও ? এইভাবে পাপে নিমজ্জিত হয়ে ? খোদাকে ভয় করো ! তোমার কর্মফলের ব্যাপারে সতর্ক হও ! গাফিলতির এই ঘুম থেকে জেগে ওঠো ! না , তোমরা এখনও জেগে ওঠোনি। তোমরা এখনও প্রথম পদক্ষেপটিই নাওনি। (খোদামুখী) অভিযাত্রার পথে প্রথম পদক্ষেপ হলো ইয়াক্বযাহ (জেগে ওঠা) , কিন্তু তোমরা এখনও ঘুমিয়ে আছো। তোমাদের চোখ হয়তো খোলা আছে , কিন্তু হৃদয় ঘুমিয়ে আছে। তোমাদের অন্তর যদি ঘুমিয়ে না থাকতো এবং পাপকর্মের দরুণ কালো না হতো , মরিচা না ধরতো , তাহলে এমন উদাসীনভাবে বেখেয়াল হয়ে নিজেদের অনুচিত কথা-কর্ম চালিয়ে যেতে না। পরকালীন দুনিয়া নিয়ে যদি একটু ভাবতে , এর ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা করতে , তবে তোমরা নিজেদের দায়িত্বগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে।

(এই দুনিয়ার বাইরেও) আরেকটা দুনিয়া আছে , পুনরুত্থান আছে। (মানুষ অন্যান্য সৃষ্টির মত নয় ,যাদের কোনো প্রত্যাবর্তন নেই।) কেনো তোমরা সাবধান হচ্ছো না ? কেনো জেগে উঠছো না , সচেতন হচ্ছো না ? কেনো নিতান্তই অসতর্কভাবে নিজের মুসলিম ভাইয়ের গিবতে লিপ্ত হচ্ছো , তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলছো , অথবা এগুলো শুনছো ? তোমরা কি জানো না যে , যে জিহবা গিবতে লিপ্ত হয় , কেয়ামতের দিন তাকে পদদলিত করা হবে ? গিবত যে জাহান্নামীদের খাবার , তা শুনেছো ? কখনো কি চিন্তা করে দেখোনি এই বিভেদ , শত্রুতা , ঈর্ষা , সন্দেহপ্রবণতা , স্বার্থপরতা আর অহংকার-ঔদ্ধত্যের ফলাফল কতটা মন্দ ? এসব মন্দ নিষিদ্ধ কাজের সূদুরপ্রসারী ফলাফল হলো জাহান্নাম , আর আল্লাহ না করুন , এসব কাজ এমনকি চিরস্থায়ী আগুনের দিকে মানুষকে নিয়ে যেতে পারে , তা জানো কি ?

আল্লাহ চান না মানুষ এমন রোগে আক্রান্ত হোক , যাতে কষ্ট অনুভুত হয় না। কারণ রোগে কষ্ট অনুভুত হলে মানুষ বাধ্য হয় প্রতিকার খুঁজতে , ডাক্তারের কাছে বা হসপিটালে যেতে , কিন্তু যে রোগে কোনো কষ্ট অনুভুত হয় না , তা আরো ভয়ানক। যতক্ষণে সেটা ধরা পড়ে , তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। মানসিক অসুস্থতার কারণে যদি ব্যথা অনুভুত হতো , তাহলে সেই ব্যথার জন্য খোদার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো যেতো। কারণ মানুষ বাধ্য হয়ে শেষমেষ প্রতিকার খুঁজতো। কিন্তু ব্যথাহীন এই ভয়ানক রোগের সমাধান কী ? অহংকার ও স্বার্থপরতার রোগের কোনো কষ্ট নেই। (এগুলো ছাড়াও) অন্যান্য পাপ মানুষের হৃদয় ও আত্মাকে দূষিত করে ফেলে , কোনোরূপ ব্যথা অনুভুত হওয়া ছাড়াই। এসব রোগে যে শুধু ব্যথা অনুভুত হয় না , তা নয় , বরং এতে আপাতঃ আনন্দও পাওয়া যায়। পরচর্চার আড্ডাগুলো খুবই আনন্দের ! নিজের প্রতি ভালোবাসা আর দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা , যা হলো সকল পাপের মূল , তা-ও সুখকর। ড্রপসি রোগে আক্রান্ত রোগী পানির কারনেই মারা যায় , তবুও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পানি খাওয়াকে উপভোগ করে।

এটাই স্বাভাবিক যে , অসুস্থতার কারণে যদি মানুষ আনন্দ পায় , আর তাতে কোনো ব্যথা-বেদনাও না থাকে , তবে সে এর কোনো প্রতিকার খুঁজবে না। যতই তাকে সতর্ক করা হোক না কেনো যে এটা প্রাণঘাতী রোগ , সে বিশ্বাসই করবে না ! যদি কাউকে ভোগবাদিতা ও দুনিয়াপূজার রোগে পেয়ে বসে , আর দুনিয়ার প্রতি মায়ায় তার অন্তর আচ্ছন্ন হয়ে যায় , তবে দুনিয়া আর দুনিয়াবী জিনিস ছাড়া অন্য যেকোনো কিছুতেই সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আল্লাহ না করুন , তখন সে হবে আল্লাহর শত্রু , আল্লাহর বান্দাদের শত্রু , নবী-আউলিয়াগণ ও আল্লাহর ফেরেশতাদের শত্রু। তাদেরকে সে অপছন্দ করবে , ঘৃণা করবে। আর যখন খোদার তরফ থেকে ফেরেশতা তার জান কবজ করতে আসবে , তখন তার ঘৃণাবোধ হবে , বিকর্ষণ হবে , কারণ সে দেখবে যে খোদার ফেরেশতা তাকে তার প্রিয়বস্তু (দুনিয়া ও দুনিয়াবী জিনিস) থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।

সেক্ষেত্রে এমনও সম্ভব যে সেই ব্যক্তি আল্লাহদ্রোহী হয়ে , খোদায়ী উপস্থিতির প্রতি শত্রুতা পোষণ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে। কাযভিন এর অন্যতম মহৎ ব্যক্তি (তাঁর উপর সালাম) বলেছিলেন যে , তিনি একবার এক লোকের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন। জীবনের শেষ মুহুর্তে সে চোখ খুলে বলেছিলো , খোদা আমার উপর যে জুলুম করেছেন , আর কারো উপর এত জুলুম করা হয়নি ! খোদা এখন আমায় এই সন্তানদের থেকে আলাদা করতে চান , যাদেরকে বড় করতে আমি এত কষ্ট সহ্য করেছি। এর চেয়ে বড় জুলুম কি আর আছে ? কেউ যদি নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে , দুনিয়া থেকে নজর ফিরিয়ে না নেয় , এবং অন্তর থেকে দুনিয়ার মায়াকে বিতাড়িত না করে , তাহলে আশঙ্কা থেকে যায় যে , খোদার প্রতি এবং তাঁর আউলিয়াগণের প্রতি উপচে-পড়া রাগ ও ঘৃণা নিয়ে সে দুনিয়া ত্যাগ করবে। তাকে ভয়ানক পরিণাম বরণ করতে হবে। এধরণের লাগামহীন বেপরোয়া মানুষকে কি আশরাফুল মাখলুকাত বলা উচিত , নাকি বলা উচিত আসফালাস সাফিলিন (নিকৃষ্টদের মধ্যে নিকৃষ্টতম) ? সময়ের শপথ। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয় , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের। কুরআনের এই সূরা অনুযায়ী , (সবাই-ই ক্ষতিগ্রস্ত) কেবলমাত্র ব্যতিক্রম হলো সেইসব বিশ্বাসীগণ , যারা সৎকাজ করে। আর সৎকাজ অবশ্যই আত্মার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু তোমরা দেখবে যে , মানুষের অধিকাংশ কাজই (আত্মার সাথে নয় , বরং) দেহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে না। যদি তুমি দুনিয়া ও নিজের প্রতি ভালোবাসা দ্বারা পরিচালিত হও , আর এই মায়া যদি তোমাকে আধ্যাত্মিক সত্য ও বাস্তবতাগুলো অনুধাবন করতে বাধা দেয় , বাধা দেয় নির্ভেজালভাবে আল্লাহর রাহে কাজ করতে , সৎকাজের আদেশ ও সবরের তাকিদ করতে , আর ফলশ্রুতিতে সঠিক পথনির্দেশ গ্রহণ করা বাধাগ্রস্ত হয় , তবে তুমি পথভ্রষ্ট ( দোয়াল্লিন - lost)হয়ে যাবে। পথভ্রষ্ট হয়ে হারিয়ে যাবে এই দুনিয়ায় , এবং পরকালেও ; কারণ যৌবন তুমি শেষ করে ফেলবে , বঞ্চিত হবে স্বর্গীয় সুখ ও পরকালীন অন্যান্য সৌভাগ্য থেকে , এমনকি দুনিয়াবী সৌভাগ্য থেকেও। অন্যান্য মানুষের যদি জান্নাতে যাবার কোনো পথ না-ও থাকে , ঐশী দয়ার দরজা যদি তাদের জন্য বন্ধও হয়ে যায় , যদি জাহান্নামের আগুনে অনন্তকাল বসবাস তাদের জন্য নির্ধারিতও হয়ে যায় , তবুও তারা তো অন্তত এই দুনিয়ার জীবনটাকে সর্বোচ্চ ভোগ করে নেবে , দুনিয়াবী আরাম-আয়েশ উপভোগ করবে , কিন্তু তুমি ? ...

সাবধান ! দুনিয়া ও আত্মপ্রেম না আবার তোমাদের মাঝে এতটা বৃদ্ধি পায় যে , শয়তান তোমাদের ঈমান কেড়ে নিতে সক্ষম হবে ‍! বলা হয় যে , শয়তানের সকল প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের ঈমান কেড়ে নেয়া। শয়তানের দিবারাত্র সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা হলো মানুষকে ঈমানহারা করার জন্য। ঈমানের গ্যারান্টির দলিল তো তোমাকে কেউ দেয়নি। হয়তো কারো ঈমানটাই ধার করা (অর্থাৎ দৃঢ় নয়) , এবং শেষমেষ শয়তান সেটাকে পেয়ে বসবে , আর সে এই দুনিয়া ত্যাগ করবে অন্তরে মহান আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর আউলিয়াগণের প্রতি শত্রুতা নিয়ে। আবার হয়তো কেউ জীবনভর ঐশী দয়া পেয়েও শেষজীবনে এসে হতাশ হয়ে ঈমান ত্যাগ করলো , আর দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো রহমান রহিম আল্লাহর বিরোধী হয়ে।

যদি দুনিয়াবী বিষয়ে তোমার কোনো আগ্রহ থাকে , সম্পর্ক থাকে , দুনিয়ার প্রতি মায়া থাকে তবে তা ছিন্ন করতে চেষ্টা করো। বাহ্যিক জাঁকজমকের এই দুনিয়া এতই তুচ্ছ যে সে ভালোবাসা পাবার যোগ্য নয়। আর যারা দুনিয়ার জীবনের এই তুচ্ছ বাহ্যিক জাঁকজমক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে , দুনিয়ার জীবন তো তাদের ভালোবাসা পাবার যোগ্য-ই নয়। এই দুনিয়ার জীবনে তোমাদের কী আছে যে এর প্রতি তোমরা আসক্ত হবে ? মসজিদ , মাদ্রাসা , নামাজের জায়গা কিংবা ঘরের কোণটি ছাড়া তোমাদের আর কিছুই নেই। আর এর জন্য প্রতিযোগীতা করা কি তোমাদের সাজে ?

এগুলো কি তোমাদের ভিতরে মতানৈক্য সৃষ্টি আর সমাজকে দূষিত করার কারণ হতে পারে ? ধরো , দুনিয়াবী মানুষদের মতন তোমাদের জীবনও আরামদায়ক বিলাসী জীবন , আর আল্লাহ না করুন , সেই জীবনটাকে তোমরা ভোগ-বিলাস , পানাহারে কাটিয়ে দিয়েছো। এরপর এই জীবনটা যখন শেষ হবে , তখন দেখবে যে জীবনটা এক সুখ-স্বপ্নের মতন পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই জীবনের প্রতিফল ও দায়বদ্ধতাগুলো ঠিকঠিক সাথেই থাকবে। অনন্ত শাস্তির তুলনায় এই সংক্ষিপ্ত আপাতঃ সুখকর জীবনের (ধরে নিলাম এই জীবন সুখকর) কী মূল্য আছে ? দুনিয়াবী মানুষের শাস্তি কখনো কখনো অনন্তকালের জন্য। দুনিয়াবী মানুষেরা , যারা ভাবে যে তারা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা অর্জন করে লাভবান হয়েছে , তারা ব্যর্থ হয়েছে , এবং তারা ভুলের মধ্যে আছে। সবাই দুনিয়াকে নিজের পরিবেশ-পরিস্থিতির জানালা দিয়ে দেখে , আর মনে করে যে সে যেটুকু দেখেছে , সেটাই হলো দুনিয়া। বস্তুজাগতিক দুনিয়ার যেটুকু মানুষ বিচরণ করেছে ও আবিষ্কার করেছে , বস্তুজাগতিক দুনিয়া তার চেয়ে অনেক বেশি বড়। গোটা এই জগতটার সম্পর্কে বর্ননা আছে যে , আল্লাহ কখনো এর দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকান নাই। (বিহারুল আনওয়ার , অধ্যায় 122 , হাদিস 109) তবে সেই অপর জগতটি কেমন , যার দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দয়ার দৃষ্টিতে তাকিয়েছেন ? যে মহত্বের উৎসের দিকে (আল্লাহর পরম সান্নিধ্যের দিকে) মানুষকে আহবান জানানো হয়েছে , তা আসলে কী রকম ? মহত্ত্বের উৎসকে প্রকৃতরূপে উপলব্ধি করার যোগ্যতা-ই মানুষের নেই।

তুমি যদি নিজের নিয়তকে বিশুদ্ধ করো , কর্মকে সংশোধন করো , অন্তর থেকে পদ-পদবীর প্রতি আকর্ষণ , নিজেের প্রতি মায়া ইত্যাদি দূর করো , তবে তোমার জন্য একটা উচ্চ মর্যাদার স্থান তৈরী হবে। আল্লাহর সৎ বান্দাদের জন্য যে উচ্চ মর্যাদার স্থান প্রস্তুত করা হয় , তার তুলনায় গোটা দুনিয়া ও এর বাহ্যিক সকল বিষয়ের এমনকি এক পয়সা মূল্য নেই। এই সুউচ্চ অবস্থান অর্জনের চেষ্টা করো। যদি পারো তো নিজেদের কাজে লাগাও , এমনভাবে আত্মোন্নয়ন করো যেনো তোমরা এমনকি এই সুউচ্চ অবস্থানের দিকেও নজর না দাও। এই সুউচ্চ অবস্থান অর্জনের জন্য আল্লাহর ইবাদত কোরো না। বরং খোদাকে ডাকো , মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে তাঁকে সেজদা করো কারণ তিনিই ইবাদতের একমাত্র যোগ্য , সর্বশক্তিমান। তবেই আলোর পর্দা ছিন্ন করে মহত্ত্বের উৎসকে লাভ করতে পারবে। কিন্তু এমন অবস্থান কি তোমার বর্তমান কথা-কর্ম দ্বারা অর্জন করা সম্ভব ? তুমি যে পথে হাঁটছো , সে পথে কি সেই অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব ? খোদায়ী শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া , জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা থেকে পালানো কি এতই সহজ ? নিষ্পাপ ইমামগণের (আ.) আল্লাহর কাছে অশ্রুপাত ও ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এর কান্না যে আসলে আমাদের জন্য শিক্ষা , এবং এর মাধ্যমে তাঁরা অন্যদের শিখাতে চেয়েছেন কিভাবে আল্লাহর কাছে কাঁদতে হয় , তা কি বোঝো ? এত উচ্চ আধ্যাত্মিকতা ও আল্লাহর কাছে সুউচ্চ অবস্থান অর্জন করার পরও তারা খোদার ভয়ে অশ্রুপাত করতেন ! তাঁরা বুঝতেন যে সামনে এগিয়ে চলার পথ কতটা কঠিন ও ভয়ানক। সিরাত , যার একপাশে হলো এই দুনিয়া আর অন্যপাশে পরকালীন দুনিয়া , আর যা জাহান্নামের মধ্য দিয়ে গেছে সেই সিরাত অতিক্রম করার পরিশ্রম , কষ্ট ও দুঃসাধ্যতা সম্পর্কে তাঁরা সচেতন ছিলেন। তাঁরা আলমে বারযাখ (কবরের জগৎ) সম্পর্কে সচেতন ছিলেন , সচেতন ছিলেন পুনরুত্থানের ব্যাপারে , শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে। তাই তাঁরা কখনোই তৃপ্ত ছিলেন না , সদা সর্বদা ঐশী শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

এসব ভয়াবহ শাস্তি নিয়ে তোমরা কী চিন্তা করেছো ? আর তা থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় নিয়ে ? কখন তোমরা আত্মসংস্কার ও আত্মশুদ্ধির সিদ্ধান্ত নেবে ? এখন , যতদিন তোমাদের বয়স কম , যৌবনের শক্তি আছে নিজেদের ভিতর , নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার শক্তি আছে , শারীরিক দুর্বলতা পেয়ে বসেনি এখনো , এমন সময় যদি পরিশুদ্ধির চিন্তা না করো , নিজেদের গড়ে না তোলো , তাহলে যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবে , তোমাদের দেহমন দুর্বলতার কবলে পড়বে , ইচ্ছাশক্তি , দৃঢ়তা , প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে , পাপের বোঝা তোমাদের হৃদয়কে কালো করে ফেলবে তখন কিভাবে পরিশুদ্ধ হবে , নিজেকে গড়ে তুলবে ? জীবনের ফেলে আসা প্রতিটা মুহুর্ত , প্রতিটা পদক্ষেপ , প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে সাথে আত্মসংস্কার আরো কঠিন হয়ে আসে , আর অন্তরের ব্যাধি ও অন্ধকার বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়তে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শক্তি কমে আসে , নেতিবাচক গুনাবলী বৃদ্ধি পায়। সুতরাং , বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলে আত্মশুদ্ধি , সদগুণাবলী ও তাক্বওয়া অর্জন কঠিন হয়ে যায়। মানুষ তখন আর তওবা করতে পারে না। তওবা তো আর কেবল মুখে বলা নয় যে আমি আল্লাহর কাছে তওবা করলাম , বরং অনুতপ্ত হওয়া ও পাপকর্ম ত্যাগ করাই হলো তওবা। যে ব্যক্তি পঞ্চাশ কিংবা সত্তর বছর যাবৎ মিথ্যা , গিবত ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিলো , পাপ আর সীমালঙ্ঘন করতে করতেই যার দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছে , তার পক্ষে এভাবে অনুতপ্ত হয়ে পাপকর্ম ত্যাগ করা সম্ভব হয় না। এমন মানুষেরা জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পাপেই নিমজ্জিত থাকে।

তরুণ যুবকদের নিষ্কর্মা বসে থেকে বয়সের ভারে সাদা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত নয়। (আমি বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়েছি , বৃদ্ধ বয়সের দূর্ভাগ্য ও কষ্ট সম্পর্কে আমি জানি।) তরুণ বয়সেই তোমরা কিছু অর্জন করতে পারবে। যতদিন যৌবনের শক্তি ও দৃঢ়তা আছে , তোমরা নিজেদের স্বার্থপর কামনা-বাসনাগুলোকে বিতাড়িত করতে পারবে , দূর করতে পারবে দুনিয়াবী আকর্ষণ ও পাশবিক বৃত্তিগুলোকে। কিন্তু যদি তরুণ বয়সেই আত্মসংস্কারের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার চিন্তা না করো , তাহলে যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হবে , ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যাবে। বয়স থাকতে থাকতেই চিন্তা করো , শ্রান্ত-ক্লান্ত বৃদ্ধ হবার আগেই চিন্তা করো। তরুণ অন্তর হলো জান্নাতী হৃদয় , এই অন্তরে রোগের প্রতি ঝোঁক কম থাকে। কিন্তু বয়স্ক মানুষের অন্তরে রোগের প্রতি ঝোঁক থাকে প্রবল , তার হৃদয়ে পাপের শেকড় এতটাই গভীর ও দৃঢ় যে তা উৎপাটন করা যায় না। যেমনটা ইমাম বাক্বির (আ.) বলেছেন যে , মানুষের অন্তর একটা আয়নার মতন। প্রতিটা পাপকর্মের সাথে সাথে এতে একটি করে কালো দাগ পড়তে থাকে , এবং এভাবে দাগ পড়তে পড়তে শেষমেষ এমন অবস্থা হয়ে যায় যে , খোদার নাফরমানী ছাড়া একটা দিনও পার হয় না।

মানুষ যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয় , তখন অন্তরকে প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন। আল্লাহ না করুন , যদি আত্মশুদ্ধি না করেই দুনিয়া ত্যাগ করো , তাহলে কিভাবে খোদার সামনে দাঁড়াবে , যেখানে তোমার অন্তরটা কালো হয়ে গিয়েছে , চোখ-কান-জিহবা পাপে কলুষিত হয়ে গিয়েছে ? যে জিনিস পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ অবস্থায় তোমাকে দেয়া হয়েছিলো , আস্থা ভঙ্গ করে তাকে কলুষিত করে কিভাবে সেটা আল্লাহর কাছে ফেরত দেবে ? এই চোখ , কান , যা তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন , এই হাত , এই জিহবা , যা তোমার আদেশ মেনে চলছে , শরীরের এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এগুলো সবই তোমার কাছে সর্বশক্তিমান খোদার আমানত , আর এগুলো তোমাকে দেয়া হয়েছিলো শতভাগ পবিত্র , বিশুদ্ধ অবস্থায়। এগুলো দিয়ে পাপকর্ম করলে তা অবিশুদ্ধ , কলূষিত হয়ে যায়। আল্লাহ না করুন , এগুলো যদি নিষিদ্ধ কর্মের দ্বারা কলুষিত হয়ে যায় , তাহলে যখন আমানত ফেরত দেবার সময় আসবে , তখন হয়তো জিজ্ঞাসা করা হবে যে , আমানতের জিনিস কি এভাবেই রক্ষা করতে হয় (যেভাবে তুমি একে রেখেছিলে) ? যখন তোমার কাছে আমানত রাখা হয়েছিলো , তখন কি এগুলো এই অবস্থায়ই ছিলো ? তোমাকে যে অন্তর দেয়া হয়েছিলো , সেটার কি এই দশা ছিলো ? তোমাকে যে দৃষ্টি দান করা হয়েছিলো , তা কি এমনই ছিলো ? তোমার শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ , যাকে তোমার ইচ্ছাধীন করে দেয়া হয়েছিলো , সেগুলো কি এরকম নোংরা আর কলুষিত ছিলো ? আমানতের এত বড় খেয়ানত করে কিভাবে খোদার সামনে দাঁড়াবে ?

তোমরা এখনও তরুণ। তোমরা এমনভাবে জীবন যাপন করেছো যে , দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক আরাম-আয়েশই ত্যাগ করেছো। এখন যদি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় , যৌবনের সুসময়গুলো খোদার পথে ব্যয় করো নির্দিষ্ট পবিত্র এক লক্ষ্য নিয়ে , তাহলেই এই জীবনটা আর ব্যর্থ হবে না ; বরং ইহকাল ও পরকাল তোমারই হবে। কিন্তু তোমাদের আচার-আচরণ যদি এমনই থেকে যায় যেমনটা দেখা যাচ্ছে , তাহলে তোমরা যৌবনকে নষ্ট করেছো এবং জীবনের সবচে সুন্দর সময়টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। পরকালে খোদার সামনে তোমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে , তিরস্কার করা হবে , এবং খোদাদ্রোহী কাজকর্মের শাস্তি কেবল ঐ দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এই দুনিয়াতেও নানাবিধ কষ্ট-ক্লেশ , দুর্গতি , সমস্যা ইত্যাদি তোমাদের আঁকড়ে ধরবে , আর দুর্ভাগ্যের ঘূর্ণিস্রোতে পড়ে যাবে।