আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 26987
ডাউনলোড: 4743

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 26987 / ডাউনলোড: 4743
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

চতুর্থ অধ্যায়

আল্লাহর বন্ধুদের আন্তরিকতা

হযরত শেইখের শিষ্যদের প্রশিক্ষণে তার একটি প্রধান চিন্তা ছিলো এতে জোর দেয়া যে , শুধু বিশ্বাসে ও ইবাদাতেই আন্তরিকতা নয় , বরং সব কাজেই আন্তরিকতা রাখতে হবে। সব সময় তিনি জোর দিয়ে বলতেন :

সত্যিকার ধর্ম প্রচার হয় মিম্বার থেকে কিন্তু তবুও তাতে দু টো জিনিস কম থাকে : আন্তরিকতা ও আল্লাহ প্রেম। এ দু টোকে অবশ্যই প্রচারের বিষয়ে যুক্ত করতে হবে।

সব কাজ আল্লাহর জন্য

হযরত শেইখের সবচেয়ে মূল্যবান ও শিক্ষণীয় বক্তব্য ছিলো :

সব কিছুই ভালো , কিন্তু (যদি তা হয়) আল্লাহর জন্য।

কোন কোন সময় তিনি তার সেলাই মেশিনের দিকে ইশারা করে বলতেন :

এই সেলাই মেশিনের দিকে তাকাও! এর সব বড় ছোট যন্ত্রাংশগুলোতে প্রস্তুতকারীর মার্কা আছে----এটিই বোঝাচ্ছে এর সবচেয়ে ছোট নাটের মধ্যেও এর প্রস্তুতকারকের নাম রয়েছে। একজন বিশ্বাসীর সমস্ত কাজেও আল্লাহর নাম অবশ্যই থাকা উচিত।

হযরত শেইখের বিদ্যালয়ে আধ্যাত্মিকতা সন্ধানকারী অবশ্যই কোন কিছু করার আগে ভাববে এটি অবৈধ কিনা , হলে আল্লাহর জন্য এড়িয়ে যাবে এবং যদি তা বৈধ হয় তা আল্লাহর জন্য করবে। তাকে এটিও দেখতে হবে যে তা তার শরীরী আকাঙ্ক্ষার জন্য আনান্দদায়ক কিনা। তাকে অবশ্যই শারীরী আকাঙ্ক্ষার জন্য প্রথমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং এরপর আল্লাহর জন্য কাজটি করতে অগ্রসর হবে।

আল্লাহর জন্য খাওয়া ও বিশ্রাম নেয়া

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত আবু জার (রাঃ) কে যে উপদেশ দেনঃ হে আবু জার! তোমার উচিত সব কাজে পরিষ্কার নিয়ত রাখা , এমনকি (বৈধ) ঘুমে ও খাদ্য গ্রহণে। 124

হযরত শেইখ সবসময় তার শিষ্যদের বলতেন :

তোমাদের সব কাজ যেন হয় আল্লাহর জন্য , এমনকি তোমাদের খাওয়া ও ঘুমানোও। যখন এক কাপ চা আল্লাহকে স্মরণ করে পান করবে তোমাদের অন্তরের ঐশী আলোতে উজ্জল হয়ে উঠবে। কিন্তু যদি তা পান কর নিজেদের আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত করার জন্য এটি তাতে পরিণত হবে যা তোমরা চেয়েছিলে (আল্লাহ ছাড়া অন্যকিছু)। 125

আয়াতুল্লাহ মাহদাভী কানী বলেছেন :

আমার তালাবা (মাদ্রাসার ছাত্র) হিসেবে পড়াশোনায় শুরুর দিকে , যখন আমি চোদ্দ বছর বয়সী ছিলাম , আমি একদিন চাইলাম নিজের জন্য একটি জামা বানাতে। মরহুম বোরহানের কাছ থেকে ধার করা কাপড়-চোপড় ফেরত দেয়ার পর।

আমি গেলাম এক ব্যক্তির কাছে যার নাম ছিলো শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত , সাথে কাপড় নিয়ে গেলাম বানানোর জন্য। তার কর্মশালা ছিলো তার বাড়িতেই প্রবেশদ্বারের পাশেই একটি কক্ষে। আমি একটু সময়ের জন্য বসলাম , তারপর হযরত শেইখ এলেন এবং বললেনঃ

তুমি কী হতে চাও ?

আমি উত্তর দিলাম : একজন তালাবা। তিনি বললেন : তুমি কি তালাবা হতে চাও নাকি একজন মানুষ ?

আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম যে একজন সাধারণ মানুষ একজন ধর্মীয় ছাত্রের সাথে এভাবে কথা বলছে। তিনি বলতে লাগলেন : রাগ করো না! তালাবা হওয়া ভালো কিন্তু এর উদ্দেশ্য হলো (সত্যিকার) মানুষ হওয়া। আমি তোমাকে একটি উপদেশ দিচ্ছি মনে রাখার জন্য ; তোমার ঐশী লক্ষ্যকে ভুলে যেও না। তুমি এখনো অল্প বয়সী আছো এবং এখনও (গুনাহর) দূষিত হয়ে যাও নি। যা কিছু তুমি কর চেষ্টা করো তা আল্লাহর জন্য করতে। এমনকি যখন তুমি সুস্বাদু খাবার খাও , তা খাও এ নিয়তে যে এর মাধ্যমে তুমি শক্তি অর্জন করবে ইবাদাতের জন্য এবং আল্লাহর পথে কাজ করবে। কখনোই এ উপদেশ তোমার জীবনে ভুলো না।

আল্লাহর জন্য সেলাই করো

তিনি মূচীকে বলতেন : যখন তুমি একটি জুতা বানাও , প্রথমেই তা আল্লাহর কারণে বানাও এবং তা সুন্দর ও মজবুত করে সেলাই করো যেন তা দ্রুত ছিড়েঁ না যায় এবং দীর্ঘদিন টেকে।

তিনি কোন দর্জিকে বলতেন :

যখন কোন কাপড় তুমি সেলাই কর , চেষ্টা করো তা আল্লাহর কারণে সেলাই করতে এবং মজবুত ভাবে।

আল্লাহর জন্য আসো!

হযরত শেইখের এক শিষ্য আন্তরিকতার বিষয়ে তার পরামর্শ সম্পর্কে বলেন যে হযরত শেইখ বলেছেন :

যখন তোমরা আসো (শেইখের বাসায়) , আল্লাহর জন্য আসো ; যদি আমার জন্য আসো , তবে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে!

তার মনের অবস্থা ছিলো বিস্ময়কর। তিনি লোকদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকতেন নিজের দিকে নয়।

আগুনে ফুঁ দাও আল্লাহর জন্যে!

হযরত শেইখের এক সন্তান বলেন :

শেইখ আব্দুল কারীম হামিদ আমার বাবার কারখানায় কাজের ছেলে ছিলেন। একদিন তিনি লোহার পাইপ দিয়ে আগুনে ফুঁ দিচ্ছিলেন পুরানো দিনের ইরানী লোহার পাইপ এর মাধ্যমে যা দিয়ে আগুন উস্কে দেয়া হতো , তখন আমার বাবা তাকে বললেন :

আব্দুল কারীম! তুমি কি জানো কিভাবে আগুনে ফুঁ দিতে হয় ?

তিনি বললেন :

না , জনাব , কীভাবে ফুঁ দিবো ? আমার বাবা বললেন :

দু ঠোঁট পরস্পর চেপে ধরো এবং আল্লাহর জন্য ফুঁ দাও!

তাদেরকে ভালোবাসো আল্লাহর জন্যে

হযরত শেইখের এক শিষ্য বলেছেন হযরত শেইখ তাকে ব্যক্তিগত বৈঠকে বলেছেন : তোমার মন ঘুরে বেড়াচ্ছে অমুক অমুক জায়গায় ; তা ঠিক আছে , কিন্তু তা যেন হয় আল্লাহর জন্য।

একদিন আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে হযরত শেইখের বাড়িতে গেলাম। হযরত শেইখ আমার বন্ধুর অন্তরের দিকে ইশারা করে বললেন : আমি সেখানে দু টো শিশু দেখছি ; তা ভালো , কিন্তু অন্তর হচ্ছে আল্লাহর ঘর। সন্তানের জন্য আগ্রহ অবশ্যই হতে হবে আল্লাহর জন্য।

তিনি বললেন :

ধর্মীয় লোকদের কাজ সবই ভালো , কিন্তু তাদের আমিত্ব কে আল্লাহ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

আল্লাহর কারণে চুমু দাও

আয়াতুল্লাহ ফাহরী হযরত শেইখের আন্তরিকতা সম্পর্কে পরামর্শ এভাবে বর্ণনা করেন :

তিনি সব সময় যে কথাটি ব্যবহার করতেন তা হচ্ছে আল্লাহর জন্য কাজ করো। তিনি এ কথাটি এতো বেশী উচ্চারণ করতেন যে আল্লাহর জন্য কাজ করো কথাটি তাদের নীতি বাক্য হয়ে দাঁড়ালো। একজন মাহুত যেমন হাতীর মাথায় বার বার আঘাত করে হাতুড়ি দিয়ে তেমনি হযরত শেইখ তার শিষ্যদের মনকে আঘাত করতেন আল্লাহর জন্য কাজ করো কথাটি দিয়ে!

তিনি নিজের ও অপরের উদাহরণ দিতেন এ বিষয়ে এ শিক্ষা রপ্ত করার জন্য। সব অবস্থায় তিনি সবাইকে জোর দিতেন আল্লাহর জন্য কাজ করতে। তিনি বলতেন :

আল্লাহ তোমাদের জীবনের সমস্ত কাজে যেন উপস্থিত থাকেন। এমনকি যখন তুমি রাতে ঘরে ফেরো ও স্ত্রীকে চুমু দাও , তাকে চুমু দাও আল্লাহর কারণে!

যারা হযরত শেইখের বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছে তারা তার এ উপদেশ পালনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক মাক্বাম ও অতিন্দ্রীয় জ্ঞান অর্জন করেছে ।

তুমি আল্লাহর জন্য কী করেছো ?

হযরত শেইখের এক সন্তান নীচের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন :

একদিন আমার বাবা ও আমি বিবি শাহারবানু পাহাড়ে গেলাম। পথে আমরা এক সাধকের সাক্ষাত পেলাম এবং আমার বাবা তাকে জিজ্ঞেস করলেন :

আপনার আত্ম -সংযমের ফল কী পেয়েছেন ?

সাধক নীচু হয়ে মাটি থেকে একটি পাথর তুললেন । পাথরটি একটি নাশপাতিতে পরিণত হলো এবং তিনি আমার বাবাকে তা খেতে দিলেন এই বলে :

নিন খান!

আমার বাবা একবার তার দিকে তাকালেন এবং বললেন :

এটি আপনি আমার জন্য করেছেন , আমাকে বলুন আপনি আল্লাহর জন্য কী করেছেন ?!

একথা শুনে সাধক কেঁদে ফেললো!

দূর্ভোগ আমার প্রতি , দূর্ভোগ আমার প্রতি

হযরত শেইখের এক শিষ্য যিনি তার সাথে ত্রিশ বছর কাটিয়েছেন বলেন যে হযরত শেইখ তাকে বলেছেন :

আমি এক আধ্যাত্মিক লোকের রুহকে দেখলাম বারযাখে যে ইরানের বড় একটি শহরে বাস করতো , সে নিজেকে নিয়ে আফসোস করছিলো তার উরুতে থাপ্পর দিয়ে এবং এই বলে : দূর্ভোগ আমার প্রতি! আমি (পৃথিবী থেকে) বের হয়ে এসেছি পরিশুদ্ধ ও আন্তরিক কোন আমল হাতে না নিয়ে!

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সে কেন এমন করছে। সে বললো : আমি আমার জীবনে এক ব্যবসায়ীর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম যে আমাকে তার কিছু আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। আমি তার কাছ থেকে যখন বিদায় নিলাম আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি সাধনা করবো যেন আমিও অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারি , অতিন্দ্রীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং বারযাখ ও অদৃশ্য জগত দেখার জন্য। আমি ত্রিশ বছর আত্ম -সংযম অনুশীলন করলাম সফল হওয়ার আগে। তখন মৃত্যু আমার দরজায় টোকা দিলো। এখন (বারযাখে) তারা আমাকে বলছে : তুমি ঐ আধ্যাত্মিক লোকের সাথে সাক্ষাত করার আগ পর্যন্ত শরীরী আকাঙ্ক্ষায় গা ভাসিয়েছিলে এবং এর পর তোমার জীবনের ত্রিশ বছর কাটিয়েছো অতিন্দ্রীয় জ্ঞান অর্জন এবং বারযাখের দৃশ্য দেখার জন্য। এখন বলো শুধুমাত্র আমাদের জন্য তুমি কী করেছো ?!

আল্লাহর জন্য ভালো হওয়া

সমকালের একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি যিনি নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার উপর একজন প্রফেসর বলেন :

আমি হযরত শেইখ রজব আলী খাইয়্যাতকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম দেখতে তিনি আমার সম্পর্কে কী ভাবেন। তিনি উত্তর দিলেন : আগা হাজ্ব শেইখ! তুমি ভালো হতে চাও নিজের জন্য কিন্তু আল্লাহর জন্য ভালো হও!

যিয়ারতে যাও আল্লাহর জন্য!

হযরত শেইখের এক শিষ্য বলেন : একবার আমি হযরত শেইখকে জিজ্ঞেস করলাম যে তিনি ইমাম রেজা (আঃ) এর মাযারে , মাশহাদে একত্রে যেতে রাজী আছেন কি না।

তিনি বললেন : আমার নিজে থেকে কোন অনুমতি নেই (কিছু করার)! প্রথমে তার উত্তর আমার কাছে অদ্ভূত লাগলো যে কিভাবে আবার তার যিয়ারতে অনুমতি নেই। কিছু সময় পরে আমি জানতে পারলাম যে একজন সাধকের কোন ব্যক্তিগত মতামত নেই , আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া এবং তার কাজ আল্লাহর অনুমতি ও সম্মতি সাপেক্ষে হয়।

পরে ইমাম রেজা (আঃ) এর প্রতি আন্তরিকতা সম্পর্কে কথা উঠলো। হযরত শেইখ এ সম্বন্ধে বললেন :

যদি আমরা যাই আল্লাহর জন্য এবং অন্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া আর কোন কিছু না থাকে হযরত ইমাম (আঃ) এ যিয়ারতকে গ্রহণ করেন বিশেষ আনুকূল্যে। ইমাম রেজা (আঃ) এর মাযার যিয়ারতে একবার আমার আর কোন ইচ্ছা ছিলো না একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া। পবিত্র ইমাম (আঃ) আমার প্রতি এমন অনুগ্রহ করেছিলেন যে চরম বিস্ময় বিমুগ্ধ হয়ে গেলাম। যদি এ অনুগ্রহ ভাষায় প্রকাশ করা যেতো তাহলে আমি বলতাম তা কেমন অনুভূত হয়েছিলো। যা হোক , যদি তোমরা চাও এ দয়া ও অনুগ্রহ অনুভব করতে তাহলে তোমাদের পবিত্র করতে হবে , তখন দেখতে সক্ষম হবে আমি যা দেখেছি!

আন্তরিকতার পুরস্কার

হযরত শেইখ এই শব্দগুচ্ছ বার বার ব্যবহার করতেন তার কথায় :

যে আল্লাহর সাথে থাকবে , আল্লাহ তার সাথে থাকবেন। 126

যে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর জন্য কাজ করে , আল্লাহ তার জন্য থাকবেন। এছাড়া বলতেন :

তোমরা আল্লাহর জন্য হয়ে যাও , তিনি এবং তাঁর ফেরেশতারা তোমাদের জন্য হয়ে যাবেন।

কোন কোন সময় বলতেন :

যদি কোন মানুষ সেভাবে কাজ না করে , এমনকি এ সম্পর্কে কথা বলাও ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতার উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ঐশী পথ নির্দেশনা

হযরত শেইখ মনে করতেন বিশেষ ঐশী পথ নির্দেশনা আন্তরিকতার বিশেষ পুরস্কার। নিচের আয়াতকে তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করতেন :

) وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا(

এবং যারা আমাদের পথে সংগ্রাম করে আমরা অবশ্যই তাদের পথ দেখাবো। (সূরা আনকাবুত-69)

যদি তোমরা আল্লাহর জন্য দাঁড়িয়ে যাও , সমস্ত বিশ্ব জগতের সম্পদ তোমাদের পথ দেখাবে এবং সমর্থন করবে। যেহেতু তাদের পরিপূর্ণতা তোমাদের সাথে মিশে যাবার মধ্যে নিহিত তাই তারা পূর্ণতা লাভের জন্য প্রকৃতিগতভাবে যে সব জিনিসের তারা অধিকারী তা দিয়ে দিতে চায় । যদি মানুষ আল্লাহর জন্য দাঁড়িয়ে যায় অস্তিত্ববান সমস্ত প্রাণী তার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে তাদের কাছে যা আছে তাকে উপহার দেয়ার জন্য এবং তার পথপ্রদর্শক হওয়ার জন্য।

হযরত শেইখ মনে করতেন আন্তরিকতার সর্বোচ্চ স্তর বিশেষ ঐশী পথনির্দেশনা লাভের জন্য খুবই জরুরী যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর বিশেষ প্রশিক্ষণ। তা হলো এই যে , মানুষের আর কোন লক্ষ্য থাকবে না , তার সব প্রচেষ্টা হবে একমাত্র সর্বশক্তিমানের সন্তুষ্টি ছাড়া ; এমনকি সে নিজের সম্পূর্ণতা লাভও উপেক্ষা করবে।127 তিনি এ সম্পর্কে বলেন :

যতক্ষণ মানুষ তার নিজের সম্পূর্ণতায় (কামালিয়াত) খেয়াল রাখবে সে সত্য লাভ করবে না। মানুষের অধীনে যত উপায় ও উপকরণ রয়েছে তার সবগুলো আল্লাহকে পাওয়ার পথে ব্যয় করবে। সে ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে তাঁর নিজের জন্য প্রশিক্ষণ দিবেন।

কাজে আল্লাহর সুবাস

হযরত শেইখ বলেন :

যখন তুমি আল্লাহকে জানবে , যা-ই তুমি করবে তা হওয়া উচিত একমাত্র প্রেম ও আন্তরিকতা থেকে। এমনকি নিজের সম্পূর্ণতার দিকেও খেয়াল করবে না কারণ শরীরী নফস খুবই চালাক ও সুক্ষ্ণ এবং নিজেকে (মানুষের পবিত্র চিন্তার উপর) চড়াও করাতে নাছোড়বান্দা।

যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ নিজেকে চাইবে এবং নিজের দিকে মনোযোগ দিবে তার কাজ হবে রসকষহীন এবং ঐশী লক্ষ্যে নয়। যা হোক , যখন সে আত্ম -কেন্দ্রিকতা পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহমূখী হয়ে যায় তখন তার কাজগুলো ঐশী রং ধারণ করে এবং তার কাজে ঐশী সুবাস পাওয়া যায় ; এবং সেটির একটি ইঙ্গিতও আছে ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) এর কথায় :

আপনার প্রেমের সুবাস কতইনা সুন্দর। 128

শয়তানকে পরাজিত করা

আল্লাহর জন্য কাজ করার রহমত হলো শয়তানকে পরাজিত করতে পারা। হযরত শেইখ বলেন :

যে আল্লাহর জন্য উঠে দাঁড়ায় সে মুখোমুখি হবে শরীরী নফসের ও তার সাথের পচাত্তরটি সৈন্যদলের বিরুদ্ধে এবং শয়তানও তার সৈন্যসহ উঠে দাঁড়ায় তাকে ধ্বংস করার জন্য , কিন্তু আল্লাহর সৈন্য বাহিনীই বিজয়ী।

বুদ্ধি পচাত্তরটি সৈন্যবাহিনী দিয়ে তৈরী। সেও আত্ম -নিবেদিত ইবাদাতকারীকে পরাজিত হতে দেবে না :

) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ(

অবশ্যই , তোমার কোন ক্ষমতা থাকবে না আমার আন্তরিক ইবাদাতকারীদের উপর। (সূরা হিজর-42)

যদি তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুতে আগ্রহী না হও , শরীরী নফস ও শয়তান তোমার উপর কোন ক্ষমতা রাখবে না ; বরং তারা তোমার কাছে পরাভূত হবে।

তিনি আরও বলেন :

পরীক্ষা রয়েছে প্রত্যেক নিঃশ্বাসে। তোমার দেখা উচিত তা ঐশী উদ্দেশ্যে নেয়া , নাকি তা শয়তানি ইচ্ছার সাথে মিশ্রিত।

অন্তরের চোখ খোলা

হযরত শেইখ বিশ্বাস করতেন যতক্ষণ মানুষ আল্লাহ ছাড়া অন্যদিকে মনোযোগী এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কিছু চাইছে সে প্রকৃতপক্ষে একজন মুশরিক এবং তার অন্তর শিরকে দূষিত। তিনি উল্লেখ করতেন কোরআনের এ আয়াত :

) إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ(

অবশ্যই মুশরিকরা অপবিত্র ও নোংরা। (সূরা তাওবাহ-28)

যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তর শিরকের ধূলামাখা থাকবে , মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত অস্তিত্বের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানবে না।

এরপর শেইখ বলেছেন : যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের মনোযোগ আল্লাহ ছাড়া অন্য দিকে থাকবে সে অস্তিত্বের বহির্ভাগে পর্দাবরণে থাকবে এবং সৃষ্টির অভ্যন্তরীণ চেহারা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে।

হে হাফিয , তুমিই পথের পর্দা , সরে যাও!

আনন্দিত সে যে এ পথে পর্দাবরণ মুক্ত।

যাহোক , যদি মানুষ তার অন্তরকে শিরকের ধূলা থেকে পবিত্র করে সৃষ্টি জগতের রহস্য তার কাছে আমানত রাখা হবে। হযরত শেইখ বলেন :

যদি কেউ আল্লাহর জন্য কাজ করে তবে তার অন্তরের চোখ খুলে যায়। যদি তুমি তোমার অন্তরের বিষয়ে সতর্ক থাকো এবং এতে আল্লাহ ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে না দাও তুমি দেখতে সক্ষম হবে যা অন্যরা দেখতে অক্ষম এবং তা শুনবে যা অন্যরা শুনতে অক্ষম। 129

বস্তুগত ও আত্মিক নেয়ামত

পবিত্র কোরআন বলে , যদি কেউ এ পৃথিবীর জীবনের প্রতি লালায়িত থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে রয়েছে এ পৃথিবীর পুরস্কার ও আখেরাতের চির পবিত্র জীবন :

) مَنْ كَانَ يُرِيدُ ثَوَابَ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ ثَوَابُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ(

যে এই পৃথিবীর জীবনে পুরস্কার চায় তাহলেতো (তার জানা উচিত) আল্লাহর কাছে রয়েছে এই পৃথিবীর জীবনের পুরস্কার ও আখেরাতের পুরস্কার। (সূরা নিসা-134)

অন্য কথায় সর্বশক্তিমান আল্লাহই সব ; যে আল্লাহকে পেয়েছে তার সবই আছে।130 হযরত শেইখের এক ভক্ত বলেন : হযরত শেইখ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার পেশা কী। আমি বললাম আমি একজন কাঠমিস্ত্রী। তিনি বললেন : তুমি কি তারকাটায় হাতুড়ি ঠোক আল্লাহর স্মরণ রেখে , না কি টাকার কথা স্মরণ রেখে ?! যদি তুমি টাকার স্মরণে আঘাত করো তাহলে তুমি শুধু টাকাই পাবে , কিন্তু যদি তুমি আল্লাহর স্মরণে আঘাত করো তাহলে টাকা ও আল্লাহর সাথে মিলন দু টোই পাবে। 131

আমি তাদের শিক্ষা দিয়েছি আল্লাহর জন্য

হযরত শেইখের এক শিষ্য বলেন যে তিনি বলেছেন :

এক বিরাট জনতা আয়াতুল্লাহ বরুজারদীর (রঃ) জানাযায় অংশ নিলো এবং তা এক বিশাল অনুষ্ঠানে পরিণত হলো। আমি আধ্যাত্মিক অবস্থায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম তাকে কীভাবে এত বড় সম্মান দেয়া হচ্ছে। তিনি উত্তরে বললেন : আমি সব তালাবাকে আল্লাহর জন্য শিক্ষা দিতাম।

আল্লাহ আমাদের সমস্যা দেখলেন

হযরত শেইখের এক ভক্ত বলেন হযরত শেইখ বলেছেন : আমার ছেলেকে ডাকা হলো বাধ্যতামূলক মিলিটারী সার্ভিসে। আমি তার সাথে যেতে চাইলাম এ সমস্যার সমাধান করতে যখন এক দম্পতি এলো আমার কাছে তাদের বিরোধ মিটাতে সাহায্য করতে। তাই আমি রয়ে গেলাম তাদের সমস্যা সমাধান করতে। দুপুরের পর আমার ছেলে বাসায় ফিরলো এবং বললো :

মিলিটারী গ্যারিসনের কাছে যাওয়ার পর আমার এমন মাথা ব্যাথা শুরু হলো যে আমার মাথা ফুলে গেলো। (গ্যারিসনের) ডাক্তার আমাকে পরীক্ষা করলেন এবং আমাকে পরীক্ষা করে মিলিটারী সার্ভিস থেকে বাতিল বলে ঘোষণা দিলেন। গ্যারিসন ছেড়ে আসার সাথে সাথে আমি সামান্য ব্যাথা ও ফোলার চিহ্নও পেলাম না।

হযরত শেইখ আরো বললেন :

আমরা (আমি) অন্য লোকের সমস্যা সমাধান করতে অগ্রসর হলাম এবং আল্লাহ আমাদের সমস্যার সমাধান করলেন।