আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 26779
ডাউনলোড: 4709

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 26779 / ডাউনলোড: 4709
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

দ্বিতীয় অধ্যায়

আয়াতুল্লাহ হুজ্জাতের ইন্তেকাল

চতুর্থ ভাগের শুরুতেই যেমন বলা হয়েছে , আমি যথোপযুক্ত মনে করছি যে আল্লাহর আরো দু জন বন্ধুর ইন্তেকালের বর্ণনা দিতে যাদের মিল রয়েছে হযরত শেইখ রজব আলীর সাথে। এ দু জনের একজন হচ্ছেন আয়াতুল্লাহ হুজ্জাত (রঃ) যিনি ছিলেন হযরত শেইখ রজব আলীর মারজা ; এবং হযরত শেইখ তার আন্তরিকতার জন্য তাকে সম্মান করতেন এবং তাকে দেখেছিলেন দুনিয়াবি আকাঙ্ক্ষা বর্জিত।175 এখন আমরা এ সম্মানিত ব্যক্তির ইন্তেকালের ঘটনাটি শুনবো তারই মেয়ের জামাই সম্মানিত আয়াতুল্লাহ হাজ্ব শেইখ মোরতাযা হায়েরীর (রঃ) কাছ থেকে যা আমি একজন সামান্য ছাত্র হিসেবে জেনেছি :

বাড়ি মেরামত

সর্বপ্রথম আমার বলা উচিত যদিও মরহুম আয়াতুল্লাহ হুজ্জাত ছিলেন আমার শিক্ষক ও আমার শশুর। আমি তার বাড়িতে খুব বেশী যেতাম না এবং তার সভাপতি হওয়ার বিষয়ে (প্রতিষ্ঠানের) কোন তৎপরতায় নিজেকে জড়াইনি । তিনি ছিলেন আয়াতুল্লাহ বুরুজারদী (রঃ) এর সময়ে একজন মারজা অথবা আযারবাইযান এলাকার বেশীর ভাগ লোকের মারজা। তেহরান ও আযারবাইযানে এবং অ-আযারবাইযানীরাও তার কাছে যেতেন [তাদের ধর্মীয় সমস্যার সমাধান করার জন্য)। তিনি মাসিক বেতনও দিতেন [তালাবা বা ধর্মীয় ছাত্রদের] এবং একটা পর্যায় পর্যন্ত [ব্যক্তিগত] খরচের অনুমতিপ্রাপ্ত ছিলেন। কোন এক বছরে শীতের শুরুতে তখনও বেশী ঠান্ডা পড়ে নি , তিনি তার বাড়িটি মেরামত করছিলেন। উঠানের এক কোণায় গর্ত খোঁড়া হচ্ছিলো নুতন একটি বিল্ডিং উঠানোর জন্য এবং কিছু শ্রমিক বাড়ির ভিতরে মেরামতের কাজ করছিলো। একটি কূপও খোঁড়া হচ্ছিলো বিল্ডিং সম্প্রসারণের প্রয়োজনে।

নির্মাণ কাজ তার টাকায় হচ্ছিলো না। হচ্ছিলো তারই এক শিষ্যের টাকায় যিনি তেহরানে বাস করতেন। যদি আমার ভুল না হয় তার নাম ছিলো চাইচি।

আমি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে

একদিন সকালে176 আমি তাকে দেখতে গেলাম তার বাড়ির ভিতরে। তিনি বিছানায় বসে ছিলেন কিছুটা সুস্থতা বোধ করে। ক্র নিক ব্রংকাইটিস এর কারণে , তিনি হাপাঁনীতে ভুগতেন যখন ঠান্ডা পড়তো। তখন শীত শুরু হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি হাপাঁনীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন না বলে মনে হলো। আমাকে বলা হলো তিনি নির্মাণ শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম তিনি কেন তাদের বিদায় করে দিয়েছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে ও পরিষ্কারভাবে বললেন :

আমি মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছি তাই এ নির্মাণ কিসের জন্য ?

আমি কিছু বললাম না এবং মনে হয় না আমি খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম তার এ উত্তরে। তখন তিনি আমাকে বললেন :

আমার প্রিয়! আগামী কয়েকদিন তুমি এসো।

তিনি বোঝালেন আগের মত আর দূরত্ব বজায় রাখবেন না।

হে আল্লাহ! আমি যা করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলাম তা করেছি

আমার মনে আছে আমি প্রতি সকালে (তার কাছে) যেতাম মাকাসিব শিক্ষা দেয়ার পর। যা আমি শিখাতাম তার বাড়ির বাইরের দিকের ঘরে এবং কোন কোন সময় সন্ধ্যায়। একদিন সম্ভবত বুধবার , তিনি আমাকে বিশেষভাবে খবর দিলেন তার সাথে সাক্ষাত করার জন্য কিছু কাজে। আমি তাকে সেদিন দেখতে গেলাম। তার সামনে ছিলো এক বিরাট লোহার সিন্দুক এবং আগা হাজ্ব সাইয়্যেদ আহমদ যানজানি177 তার সামনে বসেছিলেন। তিনি কাগজপত্র ও চুক্তিপত্র গুলো আগা যানজানিকে দিলেন এবং সিন্দুকের সমস্ত টাকা আমাকে দিলেন ভিন্ন কাজে খরচ করার জন্য এবং এর কিছু আমার অংশ হিসেবে আমাকে দিলেন। তিনি ইতোমধ্যেই তার অসিয়ত (উইল) কয়েক কপি করে লিখেছেন এবং আমাকে এক কপি পাঠিয়েছিলেন যা এখনও আমার কাছে আছে। তার কিছু টাকা ছিলো নাজাফে , তাবরিযে এবং ক্বোমে মরহুম মুহাম্মদ হোসেইন ইয়াযদির কাছে যিনি ছিলেন আমার মরহুম পিতার (রঃ) একজন অসীয়ত সম্পাদনকারী। আয়াতুল্লাহ হুজ্জাত তার অসীয়ত নামায় উল্লেখ করেছিলেন যে , সমস্ত টাকা পয়সা যা তিনি তার প্রতিনিধিদের কাছে আমানত রেখেছিলেন তা ছিলো সাহম-ই ইমাম (অংশ যা গুপ্ত ইমাম আঃ-এর) এবং জমির একটি খন্ড-যা পরে মসজিদ-ই-আগা বরুজারদীর একটি বিশাল অংশ হয়েছিলো যা তার নিজের পয়সায় কিনেছিলেন মাদ্রাসার জন্য।

তিনি তার অসীয়তনামায় উল্লেখ করেছিলেন যে , জমিটি হযরত ইমাম মাহদী (আঃ)-এর মালিকানায় আছে এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ পাবে না কিন্তু যদি আগা বুরুযারদী তা মসজিদের জন্য চান তাহলে তা তাকে দেয়া যাবে।

তার নগদ অর্থ যা ছিলো তা তার লোহার সিন্দুকেই ছিলো এবং গত কয়েকদিন যাবৎ তিনি ধর্মীয় কর ও সাদক্বাসমূহ জমা নিচ্ছিলেন না। যা হোক , আগা যানজানী মনে হয় সেগুলো জমা নিচ্ছিলেন যিনি মাসিক বেতন দেয়া শুরু করেছিলেন (তালাবাদের জন্য) আয়াতুল্লাহ হুজ্জাতের ইন্তেকালেন পর প্রথম মাস থেকেই। কয়েকটি মুদ্রা তার বালিশের নীচে ছিলো। যা তিনি অসুস্থ হওয়ার পর তার মেয়ে অর্থাৎ আমার স্ত্রী তার পকেট থেকে নিয়ে তার বালিশের নীচে রেখেছিলো তার সুস্থ হয়ে উঠার দিন পর্যন্ত রাখার জন্য এবং তা পরে সাদকা হিসেবে দেয়ার জন্য যা ছিলো অতীতের মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি কাজ যে সম্পর্কে আমিও ওয়াকিবহাল ছিলাম। মনে হয় তা অনেকটা মানত , যদি রোগী সুস্থ হয় তবে তা দান করে দেয়া হবে। তা ছিলো একমাত্র পয়সা যা সম্পর্কে আগা (হুজ্জাত) জানতেন না। তিনি যখন তার সিন্দুক থেকে সব টাকা আমাকে দিলেন যথাযথভাবে খরচ করার জন্য তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে বললেন :

হে আল্লাহ! আমি করেছি যা আমি করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলাম। এখন তুমি আমার জীবন নাও! 178

আমার মৃত্যু হবে দুপুর বেলা

আমি তার সাথে আরো ঘনিষ্ট হওয়ার কারণে তাকে বললাম : জনাব , আপনি কোন কারণ ছাড়া ভয় পাচ্ছেন! প্রতিবারই আপনি এ সমস্যায় ভোগেন কিন্তু পরে ভালো হয়ে যান। তিনি বললেন :

না , আমার বিষয়টি অথবা আমার মৃত্যু দুপুর বেলা হবে।

আমি আর কিছু বললাম না এবং তার কিছু কাজে বাইরে গেলাম। আমি একটি ডরশকী (ঠেলা গাড়ি) নিলাম তার কাজগুলো দ্রুত করার জন্য পাছে তার মৃত্যু হয়ে যায় দুপুর বেলাতেই এবং তার কথামত টাকা পয়সাগুলো যথাযথভাবে খরচ ও এদের উত্তরাধিকারীদের কাছে পৌছানোর আগেই। আমি কাজ সেরে ফেললাম দুপুরের মধ্যেই এবং তিনি সেদিন মারা গেলেন না।

কোরআন খুললেন

একদিন রাতে তিনি আমাকে পবিত্র কোরআন দিতে বললেন। কিছুক্ষন ভেবে এবং যিকর এর পর তিনি কোরআন খুললেন যে কোন এক জায়গায়। যে পাতা খুললো তার প্রথম আয়াত ছিলো :

শুধু তারই জন্য প্রার্থনা , পরম সত্য। (সূরা রাদ-14)

মনে হলো তিনি কাঁদলেন এবং আল্লাহর সাথে ফিসফিস করে কথা বললেন যা আমি এখন মনে করতে পারছি না। তিনি তার সিল মোহরটি ভেঙ্গে ফেললেন। আমি এটি মনে করতে পারছিনা তা কি সে রাতেই না অন্য কোন রাতে।

আগা আলী , দয়া করে ভেতরে আসুন!

একদিন তার মৃত্যুর নিকটবর্তী সময় তিনি দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন , স্পষ্ট ছিলো যে তিনি কিছু দেখছেন যখন তিনি বললেন :

আগা আলী , দয়া করে ভেতরে আসুন!

অল্প সময় পরেই তিনি নিজের মধ্যে ফেরত এলেন। শেষ কয়েক দিন তিনি যিকর ও মোনাজাতে ছিলেন। একবার দোয়ায়ে আদিলাহ পড়া হলো। মনে নেই আমি পড়েছি নাকি অন্য কেউ। তার মৃত্যুর দিন আমি আমার বাসাতে আল মাকাসিব এর ক্লাস নিলাম। একটু নিশ্চিন্ত হয়েই যে তার অবস্থা তত খারাপ নয়। এর পর আমি তার ঘরে গেলাম যেখানে তিনি বিছানায় ছিলেন। সে সময় তার কন্যা অর্থৎ আমার স্ত্রী তার সাথে ছিলো। তিনি বিছানায় শুয়ে মাটির দিকে চেয়ে যিকর করছিলেন ও দোয়া পড়ছিলেন। সে (আমার স্ত্রী) বললো তিনি আজকে যেন একটু মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। মনে হয় তা অতিরিক্ত যিকর ও দোয়ার কারণে। আমি যখন সালাম দিলাম তিনি বললেন :

আজকে কি বার ?

আমি বললাম শনিবার। এরপর তিনি বললেন :

আগা বুরুজারদী কি ক্লাস নিতে গেছেন ?

আমি বললাম , জী । এবং তিনি খুব আন্তরিকতা সহ উত্তর দিয়ে বললেন বেশ কয়েকবার :

আল হামদুলিল্লাহ - সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।

তিনি আরো কিছু বললেন আমি এখানে তা আর বললাম না সংক্ষিপ্ত করার ইচ্ছায়।

তুরবা (কারবালার মাটি) পানির সাথে মিশিয়ে

তার কন্যা বললেন : আগা আজ কিছুটা বিপর্যস্ত , চলুন তাকে কিছু তুরবা দেই। আমি বললাম ঠিক আছে। সে পানির সাথে তুরবা মিশ্রিত করলো এবং আমি তাকে তা পান করার জন্য সাধলাম। তিনি উঠে বসলেন এবং আমি তার জন্য গ্লাস ধরে রইলাম। খাবার অথবা ওষুধ মনে করে তিনি ভ্রু কুচঁকে বললেন ; এটা কী ?

আমি বললাম এটি তুরবা। তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো এবং সাথে সাথে গ্লাসটা নিয়ে পুরো পানিটা পান করে নিলেন। এরপর আমি তাকে একথা বলতে শুনলাম :

আমার শেষ খাওয়া হচ্ছে এ পৃথিবী থেকে (ইমাম) হুসেইনের (আঃ) তুরবা।

তিনি তুরবা কথাটি খুব স্পষ্ট করে বললেন। তিনি দু বার শুয়ে পড়লেন ও আবার উঠে বসলেন এবং দোয়া পড়তে ও যিকর করতে লাগলেন। আমি ঘরের বাইরে ও ভিতরে অবস্থান করতে থাকলাম। দোয়ায়ে আদিলা তার জন্য দ্বিতীয়বার পড়া হলো তারই অনুরোধে। আগা সাইয়্যেদ হাসান তারই ছেলে একটি বালিশে ভর দিয়ে পা ভাঁজ করে বসেছিলেন। তার বিশ্বাস ফার্সী ও আযেরী ভাষায় আল্লাহর কাছে তার বিশ্বাসকে খুব আন্তরিকতার সাথে তুলে ধরছিলেন।

কোন মধ্যস্থতাকারী ছাড়া ?!

আমার মনে আছে তিনি বলেছিলেন আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) সম্পর্কে তার খেলাফত স্বীকার করে আযেরী ভাষায় :

বিলা ফাসলী হীচ ফাসলী ইউখদি , লাপ বিলা ফাসলী , বিলা ফাসলী , কিজিম ফাসলী ওয়ার (কোন মধ্যস্থতাকারী ছাড়া , কোন মধ্যস্থতাকারী ছিলো না , কোন মধ্যস্থতাকারী ছিলো না , অবশ্যই কোন মধ্যস্থতাকারী ছিলো না! কার মধ্যস্থতাকারী আছে) ?!

এরপর তিনি পবিত্র কোরআন থেকে নবী (সাঃ)- এর আহলুল বায়েত এবং ইমাম আলী (আঃ) সম্পর্কে আয়াত তেলাওয়াত করলেন :

) مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ(

---- একটি রুপক ভালো কথা ভালো গাছের মত , যার মূল দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং এর শাখাগুলো আকাশের দিকে উঠে গেছে। (সূরা ইবরাহীম-24)

আমি নিজে এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং এ বিস্ময়কর আধ্যাত্মিক দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করছিলাম পুরোপুরি আশ্চর্য হয়ে। আমার মনে হলো তাকে বলি : আগা! আমার জন্য দোয়া করুন! কিন্তু আমি লজ্জিত হলাম , কারণ প্রথমত তিনি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এবং পারিপাশিরক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। শুধু নিজেকে দেখছিলেন আল্লাহর উপস্থিতিতে এবং তার আধ্যাত্মিক দায়িত্বসমূহকে তার মৃত্যুর আগে । এবং দ্বিতীয়ত এরকম অনুরোধের অর্থ হবে আমরা তার মৃত্যুর দৃশ্য দেখছি এবং মৃত্যুর কাছে তাকে আত্মসমর্পন করতে দেখছি।

আমি নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলাম এ দৃশ্যের পিছনে এবং ভেতরে ছিলেন আগা সাইয়্যেদ হাসান এবং অন্যজন তার কন্যা এবং তার পরিবারের সদস্যরা। আমি তাকে আরো বলতে শুনেছি :

হে আল্লাহ! আমার সমস্ত বিশ্বাস উপস্থিত আছে , আমি সেগুলোকে আপনার কাছে আমানত রাখলাম (এখন) , আমাকে তা ফেরত দেবেন (পরকালে)।

আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং মোনাজাতে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ করে বালিশে হেলান দিয়ে কিবলামুখী অবস্থায় তার নিঃশ্বাস শেষ হয়ে গেলো। যারা উপস্থিত ছিলো তারা মনে করলো তার হার্ট এটাক হয়েছে তাই তারা কিছু কেরোসিনের ফোটা তার মুখে ঢেলে দিলো। কিন্তু আমি দেখলাম তরল পদার্থটি তার ঠোটের কোণে ফেরত এসে গেলো। তিনি ইন্তেকাল করেছেন তার নিঃশ্বাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে এবং তুরবার শরবত পান করার পর কোন কেরোসিন তার ভিতর প্রবেশ করেনি। আমি স্পষ্ট সচেতন ছিলাম যে তিনি চলে গেছেন। আমি কক্ষ ত্যাগ করলাম এবং আযান শুনতে পেলাম মাদ্রাসায় হুজ্জাতিয়ায়। তার মৃত্যু সংঘটিত হলো দুপুরে যেমন তিনি বুধবার দিন বলেছিলেনঃ

আমার মৃত্যু (অথবা আমার বিষয়টি) হবে দুপুরে ।

শেষে আয়াতুল্লাহ হায়েরী যোগ করেনঃ

এ বর্ণনা এক দৃঢ় বিশ্বাসকে তুলে ধরে এবং অদৃশ্য জগতের কিছু নিদর্শনও তুলে ধরে :

1. তিনি আগেই বলেছিলেন যে তার মৃত্যু হবে দুপুরে এবং তাই ঘটেছিলো।

2. তিনি আলী (আঃ)-কে অতীন্দ্রীয়ভাবে দেখেছিলেন।

3. তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে এ পৃথিবীতে তার শেষ খাবার হবে তুরবা এবং তাই ঘটেছে , তিনি তুরবা না চেয়েই , অথবা গ্লাসে কী আছে তা না জেনেই (যে তাতে পানি ও তুরবা মিশ্রিত)। যেহেতু গ্লাসে কী আছে না জেনে তিনি প্রথমে তা পান করতে অনিচ্ছুক ছিলেন ।179

তৃতীয় অধ্যায়

আয়াতুল্লাহ হাজ্ব আখুন্দ তুরবাতির ইন্তেকাল

আরেকজন আল্লাহর বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনাটি আগ্রহের সৃষ্টি করে এবং তা শিক্ষণীয় , তিনি হচ্ছেন মরহুম হাজ্ব আখুন্দ তুরবাতি। তিনি বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক মরহুম হুসেইন আলী রাশেদ (রঃ)-এর পিতা। মরহুম হুসেইন আলী রাশেদ (রঃ) তার বাবার মৃত্যুর ঘটনাটি তার লেখা বই বিস্মৃত নৈতিক গুণাবলী যা তার বাবার জীবনী , তাতে এভাবে লিখেছেন :

ইন্তেকালের এক সপ্তাহ আগে

যেসব জিনিস আমরা (তার পরিবারের সদস্যরা) তার সম্পর্কে মনে করতে পারি এবং যা এখনও আমাদের কাছে আশ্চর্যজনক তা হলো আমার বাবা ইন্তেকাল করেন 16ই অক্টোবর 1943 সনে (17 শাওয়াল 1362 হি.) সূর্যোদয়ের দু ঘন্টা পরে , সকালের নামায শেষে তার বিছানায়। তার পা কিবলার দিকে লম্বা করা। তিনি তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সচেতন ছিলেন এবং ফিসফিস করে কিছু কথা বলছিলেন যেন তিনি বুঝতে পারছিলেন যে তিনি মারা যাচ্ছেন। শেষ যে কথা তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তার রুহ চলে যাবার আগে তা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

রাসূলের (সাঃ) প্রতি সালাম

তার ইন্তেকালের ঠিক এক সপ্তাহ আগে রোববার তার সকালের নামাযের পরে তিনি কিবলার দিকে ফিরে শুয়েছিলেন তার চাদর দিয়ে তার চেহারা ঢেকে। হঠাৎ তার পুরো শরীর আলোকিত হয়ে উঠলো সূর্যের রশ্মির মত। তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো যা এর আগে অসুস্থতার কারণে ছিলো হলদে ফ্যাকাশে ; তা এমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো যে তা চাদরের উপর দিয়েই বোঝা যাচ্ছিলো যা তার শরীর ঢেকেছিলো। তিনি একটু নড়াচড়া করলেন এবং বললেন :

সালামুন আলাইকুম ইয়া রাসূলাল্লাহ , আপনি এসেছেন আপনার অযোগ্য এক দাসকে দেখতে ?!

তারপর , যেন সত্যিই কিছু লোক তাকে দেখতে এসেছে এমন ভাবে তিনি সালাম দিলেন , আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ)-কে , এবং সব ইমাম (আঃ)-কে বারোজন ইমাম (আঃ) পর্যন্ত। একের পর এক এবং তাদেরকে ধন্যবাদ দেন তাকে দেখতে আসার জন্য। এরপর তিনি হযরত ফাতেমা (আঃ)-কে সালাম ও সম্মান জানালেন। অবশেষে তিনি হযরত যয়নাব (আঃ)-কে সালাম দিলেন এবং এ সময় অনেক কাঁদলেন , এই বলে :

বিবি! আমি আপনার জন্য অনেক কেঁদেছি।

শান্তিতে থাকেন , হে মা!

এরপর তিনি নিজের মাকে সালাম দিলেন এই বলে :

আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ মা , আপনি আমাকে পবিত্র দুধ দিয়েছেন।

এ অবস্থা চললো সূর্যোদয়ের দু ঘন্টা পর পর্যন্ত। এরপর যে আলো তার শরীরকে আলোকিত করে রেখেছিলো তা চলে গেলো এবং তার চেহারা আগের মত ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। ঠিক এক সপ্তাহ পর আরেক রোববার সেই দু ঘন্টা সময় তিনি মৃত্যুর কষ্ট অনুভব করলেন এবং হালকাভাবে তার দেহ ছেড়ে চলে গেলেন।

আমাকে বিরক্ত করো না

এই দুই রোববারের মাঝামাঝি আমি তাকে বললাম :

আমরা কিছু শুনি আমাদের নবীদের কাছ থেকে ও মর্যাদাপূর্ণ লোকদের কাছ থেকে এবং আমরা আফসোস করি যদি আমরা তাদের সময় থাকতাম এবং তাদের কাছ থেকে সরাসরি শুনতাম ; এখন আপনি হচ্ছেন আমার সবচাইতে নিকটাত্মীয় যার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। হায় আমি যদি জানতাম কী ঘটেছিলো। তিনি চুপ থাকলেন এবং কিছুই বললেন না। আমি আমার অনুরোধে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে দু তিন বার বললাম কিন্তু তিনি চুপ রইলেন। আমি চতুর্থ অথবা পঞ্চম বার অনুরোধ করতে তিনি উত্তর দিলেন :

আমাকে বিরক্ত করো না হোসেইন আলী!

আমি বললাম : আমি কিছু বুঝতে চেয়েছি।

তিনি বললেন :

আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না ; তুমি যাও এবং নিজে তা বোঝ।

এ অবস্থা একটা ধাঁধাঁ হয়ে রইলো আমার জন্য এবং আমার মা , ভাই , বোন এবং ফুপুর জন্য এখন পর্যন্ত , যখন আমি এ ঘটনাটি লিখছি সকাল 9:30 , মঙ্গলবার , 15 জুলাই , 1975 (পাঁচ রজব 1395 হিঃ)। আমি এর বিস্তারিত কিছুই জানিনা শুধু এতটুকু বলতে পারি তা সত্যিই ঘটেছে ।180