আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 27068
ডাউনলোড: 4751

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 27068 / ডাউনলোড: 4751
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

ষষ্ঠ অধ্যায়

ইমাম আল আসর এর (আঃ) দ্বিতীয় আগমনের প্রতীক্ষা

হযরত শেইখের অসাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি ছিলো হযরত ওয়ালী আল আসর (আমাদের সত্তা তার জন্য কোরবানী হোক) প্রতি তার গভীর ভালবাসা ও তার পুনরাগমনের জন্য অপেক্ষা করা। তিনি বলেনঃ

অনেকে বলে তারা ইমাম আল আসর (আঃ)-কে তাদের নিজেদের চাইতে বেশী ভালোবাসে , অথচ তা সত্য নয়। কারণ আমরা যদি সত্যিই তাকে আমাদের চাইতে বেশী ভালোবাসি তাহলে আমাদের উচিত নিজেদের জন্য কাজ না করে তার জন্য কাজ করা। আল্লাহর কাছে তোমরা সবাই দোয়া করো যেন তিনি তার পুনরাগমনের পথে যত বাধা বিপত্তি আছে তা দূর করে দেন এবং আমাদের হৃদয়কে তাঁর হৃদয়ের অনুগামী রাখেন।

হযরত শেইখের সবচেয়ে বড় দাবী

হযরত শেইখের এক বন্ধু বলেনঃ যত বছর আমি হযরত শেইখের সেবায় ছিলাম আমি কখনো এটি অনুভব করি নি যে শুধু হযরত ওয়ালী আল আসর (আঃ) এর পুনরাগমন ছাড়া তার আর কোন দাবী ছিলো , তিনি বন্ধুদের মনে করিয়ে দিতেন যেন ইমামের (আঃ) পুনরাগমণ ছাড়া অন্য কিছু যতটা সম্ভব কম চাওয়া হয়। তার অপেক্ষারত অবস্থা এতই শক্তিশালী ছিলো যে , কেউ যদি হযরত ওয়ালী আল আসর (আঃ) এর ফারাজ বা পুনরাগমনের কথা তুলতো তিনি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তেন এবং কাঁদতেন।

কীভাবে পিঁপড়া তার প্রিয়তমার কাছে পৌঁছেছিলো

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হযরত শেইখ জোর দিতেন যে যারা হযরত ওয়ালী আল আসরের (আঃ) অপেক্ষায় আছে তারা যেন সব সময় প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে প্রস্তুত থাকে যদিও এমন হয় যে তারা ইমাম (আঃ) এর পুনরাগমন পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন না। তিনি হযরত দাউদ (আঃ) এর একটি ঘটনা বর্ণনা করতেনঃ

মরুভূমির মাঝ দিয়ে অতিক্রম করার সময় হযরত দাউদ (আঃ) একটি পিঁপড়াকে একটি ছোট ঢিবি থেকে কিছু ধূলা তুলে নিতে দেখলেন। সে তা বহন করে অন্য আরেক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিলো। তিনি মহান আল্লাহর কাছে পিঁপড়াটির রহস্য জানতে চাইলেন......। পিপড়াটি কথা বলা শুরু করলোঃ আমার এক প্রিয়তমা আছে যে তার সাথে বিয়ের শর্ত দিয়েছে এ ঢিবি থেকে সব ধূলো যেন ঐ জায়গায় নিয়ে যাই!

তুমি কত সময়ে এ বড় ঢিবিটির ধূলো প্রয়োজনীয় জায়গায় স্থানান্তরিত করতে পারবে ? কারণ তোমার জীবন কি এ জন্য যথেষ্ট ? দাউদ (আঃ) পিঁপড়াকে জিজ্ঞেস করলেন। যার উত্তরে সে বললোঃ আমি এতটুকুই জানি! কিন্তু আমার আনন্দ হচ্ছে যে আমি যদি এভাবে মারা যাই তাহলে আমি আমার প্রিয়তমার পথেই মারা যাবো!

এটি শুনে হযরত দাউদ (আঃ) আবেগাল্পুত হয়ে পড়লেন এবং এ ঘটনাটিকে নিজের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করলেন।

হযরত শেইখ সব সময় বলতেন যেঃ

তোমার সমস্ত সত্তা দিয়ে (আন্তরিকভাবে) হযরত ওয়ালী আল আসরের (আঃ) অপেক্ষা কর এবং এ অপেক্ষার অবস্থা বজায় রাখো আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

আমার সালাম পৌছে দাও হযরত ইমাম (আঃ) কে

তার এক শিষ্য বলেছেনঃ

তিনি সব সময় আল মাহদী (আঃ) এর উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। কখনো দরুদ শেষ করতেন না আজ্জিল ফারাজাহুম (পূনরায় আগমন ত্বরান্নিত হোক) না যুক্ত করে।

তার বৈঠকগুলো কখনো অনুষ্ঠিত হতো না ইমাম আল-আসর (আঃ) এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার পুনরাগমনের দোয়া না করে। জীবনের শেষ দিকে এসে যখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ফারাজের আগেই তার মৃত্যু হবে তখন তিনি তার বন্ধুদের বলতেনঃ

যদি তোমাদের সেই সম্মান হয় যে তোমরা তাঁর (ইমাম আঃ) পুনরাগমন প্রত্যক্ষ করো তাহলে তাঁকে আমার ভালবাসা জানাবে।

ইমাম মাহদী (আঃ) এর জন্য অপেক্ষারত এক যুবকের বারযাখ (কবরের জীবন)

এক যুবকের দাফনের সময় হযরত শেইখ বললেনঃ

আমি দেখলাম হযরত ইমাম মুসা বিন জাফর (আঃ) তাঁর বাহু এগিয়ে দিয়েছেন এই ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরার জন্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম (আশপাশের লোকদের) মৃত্যুর আগে তার শেষ কথা কি ছিল ? তারা বলল এই কবিতাঃ

অপেক্ষারতরা তাদের আত্মা নিয়ে চলে যাচ্ছে তাদের শেষ নিঃশ্বাসে , হে মর্যাদাবানদের বাদশা , আপনার আশ্রয় দিন!

ইমাম মাহদী (আঃ) এর জন্য অপেক্ষারতরা আবার আসবে

হযরত শেইখ বিশ্বাস করতেন যারা সত্যিই ইমাম আল- আসর (আঃ) এর অপেক্ষায় আছে তারা তাদের মৃত্যুর পর ইমাম মাহদী (আঃ) এর সাথে তাঁর পুনরাগমনে26 আবার আসবে। ইমাম মাহদী (আঃ) এর সাথে যারা পৃথিবীতে আবার ফিরে আসবে তাদের মধ্যে তিনি যাদের নাম বলেছেন তারা হলোঃ

আলী বিন জাফর , যার কবর ক্বোমের দার-ই-বিহিশতে এবং মির্যা কুমী যার কবর ক্বোম শহরে শাইখান কবরস্থানে।

রেই শহর-এর মুচি

হযরত শেইখের একজন শিষ্য বলেনঃ একবার আমি তার কাছে উপস্থিত ছিলাম এবং আমরা মাওলা ইমাম আল-আসর (আঃ) এর জন্য অপেক্ষার শর্তাবলী নিয়ে কথা বলছিলাম। তিনি বললেন :

রেই শহরে এক মূচি বাস করতো যার নাম ছিলো ইমাম আলী। আযেরী ভাষাভাষি এ লোকটির কোন স্ত্রী ও সন্তান ছিলো না। সে তার কর্মশালাতেই ঘুমাতো। তার বর্ণনা এসেছে যে সে ছিলো খুবই অসাধারণ আধ্যাত্মিক অবস্থার অধিকারী। সে শুধু ইমাম আল-আসর (আঃ) এর ফারাজ ছাড়া আর কিছু চিনতো না। সে তার অসিয়তনামায় লিখে যায় যে , যখন সে মারা যাবে যেন শহরবানু পর্বতের গোড়ায় তাকে কবর দেয়া হয় যা ছিলো রেই শহরের উপকন্ঠে। যখনই আমি আমার মনোযোগ তার কবরের দিকে দিতাম আমি ইমাম আল-আসর (আঃ) কে সেখানে দেখতে পেতাম।27

সপ্তম অধ্যায়

কবিতা

হযরত শেইখ আধ্যাত্মিক ও নৈতিক কবিতাসমূহে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তার বক্তব্যে বেশীর ভাগ সময়ে শিক্ষণীয় কবিতা থাকতো। তিনি বিশেষভাবে মূল্য দিতেন কবি হাফিজের গজল ও তাক্বদীসের মাসনভীকে। তিনি তাদের কবিতা শুনে কাঁদতেন।

তিনি তাক্বদীসের মসনভীর খুব ভক্ত ছিলেন এবং বলতেন :

যদি তাক্বদীসের একটি বই এ বাজারে থাকতো তাহলে আমি সব দিয়ে দিতাম ঐ একটি কিতাব কেনার জন্য। 28

হযরত শেইখের বহু দিনের ঘনিষ্ট ড: আব্দুল হাসান শেইখ বলেন : হযরত শেইখ ছিলেন হাফিজের কবিতার এক দক্ষ বোদ্ধা এবং তার কবিতাকে তিনি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতেন।

হযরত শেইখের কবিতা ও কবিতা সম্বন্ধে তার অভিমত , বিশেষ করে কবি হাফিজ সম্বন্ধে তার মনোভাব সর্ম্পকে ড: হামিদ ফারযাম বলেনঃ ড: গুইয়ার মাধ্যমে 1954 সন থেকে হযরত শেইখের বন্ধুত্ব লাভের পর থেকে এমন কোন বৈঠক ছিলো না যেখানে আমি তার মুখ থেকে সঠিক সময়ে সে সম্পর্কে সুন্দর কবিতা শুনি নি। তিনি হাফিজের কবিতায় মুগ্ধ ছিলেন। আমি তাকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম কেন তিনি এত হাফিজের কবিতায় মুগ্ধ। তিনি বললেন :

আধ্যাত্মিকতা ও রহস্যময়তাকে হাফিজ সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ করেছেন এবং তার কবিতায় প্রতিভাত হয়েছে সব আত্মিক সত্য এবং রহস্যময় অনুভব।

হযরত শেইখ ছিলেন অন্য কবিদের চেয়ে বেশী হাফিজ অনুরক্ত এবং সবসময় তার কবিতা আবৃত্তি করতেন ; এমনকি যদি তিনি কাউকে সর্তক করতে বা তিরস্কার করতেও চাইতেন29 তাহলে তিনি তার কবিতা আবৃত্তি করতেন।

তিনি সবসময় এ পৃথিবীকে ডাইনী বুড়ি বলতেন। কোন কোন সময় তিনি কোন শিষ্যকে লক্ষ্য করে বলতেন :

আমি দেখছি তুমি আবার এ ডাইনী বুড়ির ফাঁদে পড়েছো !

এবং তখন তিনি হাফিজের কবিতা আবৃত্তি করতেনঃ

এমন কেউ নেই যে তার এই জালে পেঁচিয়ে যায়নি , কে আছে যার পথে এরকম পরীক্ষার ফাঁদ বিছানো নেই ?

তিনি উপহাস করে বলতেন :

বেশীর ভাগ লোকই এতে পেঁচিয়ে যায় এবং খুব কম লোকই আছে যারা এ থেকে মুক্ত।

তিনি আত্ম -অহংকারকে তিরষ্কার করে নিচের এ লাইন দু টো আবৃত্তি করতেনঃ

দরবেশ হওয়ার পথে কুফুরী হলো আত্ম -অহংকার ও নিজ সম্পর্কে ভালো ধারনা ;

আদেশ হলো যা তুমি (আল্লাহ) নির্ধারণ করো

অভিমত হলো যা তুমি (আল্লাহ) ভাবো

সুন্দর কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি

ডঃ ফারযাম এ সম্পর্কে বলেনঃ

মরহুম শেইখ খুব মনোরম সুরে কবিতা আবৃত্তি করতেন। ফায়েদ-ই কাশানীর বিশেষ কিছু কবিতা আবৃত্তি করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। যেমন , নিচের লাইন দুটোঃ

আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই যা (আমি করেছি) মাশুক ছাড়া অন্যের জন্য , আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আমার এ কাল্পনিক অস্তিত্বের জন্য , যদি কোন মুহূর্ত চলে যায় তার (সুন্দর) চেহারা স্মরণ না করে , আমি অসংখ্যবার ক্ষমা চাই সে মুহূর্তটির জন্য।

আমরা এক অপরাহ্নে হযরত শেইখের সাথে তার এক শিষ্যের বাড়িতে ছিলাম। তার ছিলো বিরাট এক মেহমান কক্ষ যার দরজার কাছে হযরত শেইখ বসে হাফিজের এই কবিতাটি পড়ছিলেন :

কে আছে যে প্রেম ও দয়ায় আমার প্রতি আন্তরিক হবে ? (এবং) কল্যাণ করবে অন্যায়ের বদলে , আমার মত অন্যায়কারীর প্রতি ?

তিনি কয়েকটি লাইন কাঁদতে কাঁদতে গাইলেন খুব সুন্দর ও মনোরম সুর দিয়ে এবং অন্যদেরও আবেগাপ্লুত করে ফেললেন। তা এত অসাধারণ ছিলো যে আমি ডাঃ গুইয়াকে বললামঃ

হযরত শেইখ- এর এত সুন্দর কন্ঠ ও মিষ্টি সূর আছে!

তিনি বললেন :

এটি একটি দুঃখ যে তুমি এত দেরীতে তার সাথে পরিচিত হয়েছো। তিনি আধ্যাত্মিক অবস্থায় এত সুন্দর গাইতেন যে দরজা ও দেয়ালগুলো সত্যিকারভাবেই কাঁপতো।

হযরত শেইখের একটি কবিতা ও একটি স্মৃতি

হযরত শেইখ নিজেও মাঝে মাঝে কবিতা লিখতেন। সমসাময়িক মারজা বিখ্যাত ফকীহ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আয়াতুল্লাহ কাযীর (আল্লামা তাবাতাবাইর শিক্ষক) ছাত্র আমার অনুসন্ধানের উত্তরে হযরত শেইখ রজব আলী সম্পর্কে বললেনঃ

আমি তার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম নাজাফে হযরত আয়াতুল্লাহ কাযীর এক বৈঠকে। সে বৈঠকে তিনি আমির আল মুমিনীন (আঃ) সম্পর্কে প্রশংসাসূচক কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন যার প্রতিটি পংক্তি আবজাদ30 এর অক্ষর দিয়ে শুরু। এরপর তিনি তার একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন যা এরকমঃ

আপনি যে নেয়ামত দান করেছেন মহাজগতকে , তার সব দিয়েছেন আমাকে , প্রচুর ও বিভিন্ন ;

আমি ভাবছিলাম যে এটি হবে সবচেয়ে উঁচু ব্যাখ্যা খোদায়ী নেয়ামত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতার , যতক্ষণ না আমি সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার এই বাক্যটির সাক্ষাত পেলাম

আমি আপনার সব নেয়ামতের জন্য শোকর জ্ঞাপন করছি। 31

এক আশ্চর্য ও শিক্ষণীয় কারামাহ

সাপ্তাহিক বৈঠকের নৈতিকতা সম্পর্কিত আলোচনার শেষে একজন যুবক এগিয়ে আসলো সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার 35 নং দোয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করতে : আমি ইয়াযদ থেকে এসেছি। এ বিষয়টি একটি বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিলো এবং উপস্থিত কেউ কেউ হাসাহাসি করেছিলো। বলা হয়েছিলো এর কারণ হলো শেইখের মূর্খতা। কারণ তিনি জানতেন না সাহিফায়ে সাজ্জাদিয়াতে এটি আছে কিনা। সে রাতেই আমি দেখলাম তিনি বলছেনঃ

আমার উদ্ধৃতি দিয়ে যা বলা হয়েছে তা সত্য নয়। আমি যা বলেছি তা এরকমঃ আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা , আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে বরং সেসবের জন্য বেশী যা আমাকে দেন নি।

এ কথাটি সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় 35 নং দোয়াতে আছে।

কোন সন্দেহ নেই যে এটি একটি সত্য স্বপ্ন ছিলো। সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া থেকে কোন কিছু স্বপ্নে পাওয়া গায়েবের সাথে সম্পর্কহীন অবস্থায় একেবারেই অসম্ভব।32

অষ্টম অধ্যায়

রাজনীতি

হযরত শেইখ রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না কিন্তু তিনি ঘৃনিত পাহলভী সরকার ও শাসকগোষ্টির তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি শুধু শাহের বিরোধিতাই করতেন না , মুসাদ্দেককেও সমর্থন করেন নি। তিনি আয়াতুল্লাহ ক্বাশানীর প্রশংসা করতেন এবং বলতেন :

তার ভেতরটি একটি ঝর্ণার উৎসমুখের মত

দু টি রাজনৈতিক ভবিষ্যৎবাণী

হযরত শেইখের সন্তান বলেনঃ 30 তীর 1130 ফার্সী বছর (21 জুলাই 1951) যখন শেইখ বাড়িতে আসলেন , তিনি কেঁদে ফেললেন এবং বললেনঃ

হযরত সাইয়্যেদ আল-শুহাদা এ আগুন নিভিয়ে দিয়েছেন এবং দূর্যোগকে বাধা দিয়েছেন ; অনেক লোককে হত্যার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো আজ। আয়াতুল্লাহ ক্বাশানী সফল (বিজয়ী) হবেন না। এক সাইয়্যেদ আসবেন তিনি বিজয়ী হবেন।

পরে তার ভবিষ্যৎবাণী প্রমাণিত হয় যে তিনি হলেন ইমাম খোমেইনী (রহঃ)।

ইসলামী বিপ্লবের ভবিষ্যৎ

ইমাম খোমেইনী সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আনন্দ হয় যখন ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে তার ভবিষ্যৎবাণী জানা যায়।

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আলী মুহাম্মাদ বিশারাতি বর্ণনা করেন যে 1979র গ্রীষ্মে যখন তিনি সিপাই-ই-পাসদারানের (ইসলামী বিপ্লবী গার্ডবাহিনী) গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ছিলেন তিনি একটি রিপোর্ট পান যে জনাব শরিয়ত মাদারী (তৎকালীন বিদ্রোহী আলেম) মাশহাদে বলেছেন : আমি শেষ পর্যন্ত ইমাম খোমেনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো। জনাব বিশারাতি বলেন : আমি ইমাম খোমেনীর (রাঃ) সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম এবং অন্যান্য রিপোর্টের সাথে তাকে জানালাম যে তাঁর সম্পর্কে জনাব শরিয়ত মাদারী কী বলেছেন। ইমাম (রঃ) মাথা নিচু করে শুনলেন এবং যখন আমি কথা শেষ করলাম তিনি তার মাথা তুলে বললেনঃ

তারা কী বলছে ? আমাদের বিজয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছেন আল্লাহ। আমরা সফল হবো এবং একটি ইসলামী সরকার গঠন করবো এবং পতাকা হস্তান্তর করবো এর প্রকৃত বহনকারী (ইমাম মাহদী -আঃ) -এর নিকট।

আমি জিজ্ঞেস করলাম : আপনি নিজে [হস্তান্তর করবেন] ?

ইমাম (রঃ) নীরব রইলেন এবং উত্তর দিলেন না ।

বারযাখে নাসির আল-দ্বীন ক্বাজার

হযরত শেইখের একজন শিষ্য নাসির আল দ্বীন শাহ কাজার-এর বারযাখের অবস্থা সম্পর্কে তার কাছ থেকে জেনে বলেনঃ

তার আত্মাকে মুক্ত করা হয় শুক্রবারে । ঐ সন্ধ্যাতে তাকে আবার জোর করে তার পূর্বস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সে কাঁদছিলো এবং প্রহরীদের কাছে ভিক্ষা চাইছিলো তাকে ফেরত না নেয়ার জন্য। যখন সে আমাকে দেখলো সে বললো : আমি যদি জানতাম আমার স্থান হবে এরকম আমি কোন দিন চিন্তাও করতাম না পৃথিবীতে আমোদ ফূর্তি করার।

অত্যাচারী রাজাদের প্রশংসা করা

হযরত শেইখ তার বন্ধু ও শিষ্যদের পাহলভী সরকারের সাথে সহযোগিতাতে বাধা দিতেন , বিশেষ করে তাদের প্রশংসা ও (কর্মকর্তাদের) শ্রদ্ধা করার বিষয়ে।

হযরত শেইখের এক শিষ্য তার উদ্বৃতি দেন যে তিনি বলেছেনঃ

আমি দেখলাম বারযাখে এক ধার্মিক ব্যক্তির বিচার হচ্ছে এবং যত খারাপ কাজ তার সময়কার স্বেচ্ছাচারী শাসক করেছে তা তার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। যার বিচার হচ্ছিল সে প্রতিবাদ করলোঃ

আমি এ অপরাধগুলোর কোনটিই করি নি , তাকে বলা হলো : তুমি কি তার প্রশংসায় বলো নি যে দেশকে কী সুন্দর নিরাপত্তা দিয়েছে ?

সে উত্তর দিলো : হ্যা

তখন তাকে বলা হলো : তুমি তার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ছিলে ; সে এসব অপরাধগুলো করেছে তার রাজ্য লাভের উদ্দেশ্যে।

নাহজুল বালাগাতে ইমাম আলী (আঃ) বলেছেনঃ

যে-ই অন্য লোকের আচরণে সন্তুষ্ট সে এমন যে ঐ কাজে তাদের সাথে সহযোগিতা করেছে এবং যে-ই অন্যায় কাজ করলো দু টো গুনাহ তার জন্য লিপিবদ্ধ হয়ঃ একটি তা করার জন্য এবং অপরটি তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার জন্য। 33

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দূতের সাথে সহযোগিতা :

হযরত শেইখের এক বন্ধু , যার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দূতের সাথে কাজ করতো , বললোঃ মাশহাদে যাওয়ার পথে আমি হযরত শেইখের সাথে ছিলাম। তার সাথে একত্রে আমরা পবিত্র মাজার যিয়ারতে গেলাম । তিনি এক কোনায় যিয়ারত পড়তে দাঁড়ালেন ও ইমাম রেযা (আঃ) সাথে কথা বললেন ঠিক সেভাবে যেভাবে আমি আপনার সাথে কথা বলছি। যিয়ারত শেষ হওয়ার পর তিনি একটি সেজদা করলেন (কাবার দিকে ফিরে)। যখন তিনি তার মাথা সিজদা থেকে ওঠালেন তিনি আমাকে ডাকলেন (কাছে) এবং বললেনঃ

পবিত্র ইমাম (আঃ) বলেছেনঃ তোমার ছেলেকে একাজ করতে বাধা দিতে। নয়তো সে তোমার পিঠে এক ভারী বোঝা চাপিয়ে দেবে!

আমরা জানতাম না যে সে আমেরিকানদের সাথে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছে । প্রায় পঁচিশ বছর আগে , একদিন আমার ছেলে আমার কাছে এলো এবং বললোঃ আমি বিদেশ যাচ্ছি , আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি এবং এমনকি ভিসাও নিয়ে নিয়েছি। আমরা যা করলাম তাতে তার সিদ্ধান্তে কোন পরিবর্তন এলো না , শেষ পর্যন্ত আমেরিকা চলে যাবার কিছুদিন পর সে আমাদের চিঠি লিখলো যে , তার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং সে তাকে তালাক দিচ্ছে। তখন থেকে তার কারণে আমরা অনেক সমস্যার মাঝ দিয়ে গিয়েছি ।

দ্বিতীয় ভাগ

এক লাফে দীর্ঘ পথ অতিক্রম