নিজেকে পাহারা দেয়া (
রিয়াইয়াহ )
যে তার হৃদয়কে কোন কিছু না শোনার প্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে , নফসকে ক্ষুধা থেকে রক্ষা করে এবং অজ্ঞতার বিরুদ্ধে বুদ্ধিকে রক্ষা করে তাকে মুত্তাকীদের দলে প্রবেশ করানো হবে। এরপর যে তার জ্ঞানকে কল্পনাবিলাস থেকে রক্ষা করবে এবং সম্পদকে হারাম থেকে , তাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘
প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞান সন্ধান করা বাধ্যতামূলক।’’
আর তাহলো নিজ সত্তা সম্পর্কে জ্ঞান। অতএব সত্তার জন্য প্রয়োজন যে সে প্রত্যেক অবস্থায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে অথবা কৃতজ্ঞতার অভাব স্বীকার করে ক্ষমা চাইবে। যদি তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে তা হবে তার উপরে একটি নেয়ামত এবং যদি না হয় তাহলে তা হবে তার প্রতি (আল্লাহর) ন্যায়বিচার। প্রত্যেক সত্তার জন্য কাজ করা প্রয়োজন যেন তা আনুগত্যের কাজগুলোতে সফলতা লাভ করে এবং ক্ষতিকর কাজ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টাকে রক্ষা করে চলে।
এসবের ভিত্তি হচ্ছে সব প্রয়োজন ও নির্ভরতা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপরে তা বুঝতে পারা এবং তাক্বওয়া ও আনুগত্য। এর চাবি হচ্ছে তোমার বিষয়গুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ছেড়ে দেয়া , সব সময় মৃত্যুকে স্মরণ করে পাওয়ার আশাকে কেটে ফেলা এবং সর্ব-বাধ্যকারী আল্লাহর সামনে তুমি দাঁড়িয়ে আছো তা ভাবা। এটি তোমাকে বিশ্রাম দিবে বন্দীত্ব থেকে , উদ্ধার করবে শত্রু থেকে এবং সত্তাকে শান্তি দিবে । ইখলাস অর্জনের পথ হচ্ছে সুশৃংখল আনুগত্য এবং তার মূল নির্ভর করে জীবনকে‘
একটি দিন’
-এর মত বিবেচনা করাতে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘
এই পৃথিবীর জীবন এক ঘন্টার মত , তাই একে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্যে ব্যয় করো।’’
এ সবকিছুর দিকে দরজা হচ্ছে সর্বক্ষণ গভীর ভাবনার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। এ গুটিয়ে নেয়ার উপায় হচ্ছে সন্তুষ্টি এবং এমন সব পার্থিব বিষয় পরিত্যাগ করা যা তোমার সাথে সম্পর্কিত নয়। গভীর ভাবনার পথ হলো শূন্যতা (আকাঙ্ক্ষাবিহীনতা) এবং শূন্যতার খুঁটি হচ্ছে নফসকে‘
বিরত রাখা’
।‘
বিরত থাকার’
পূর্ণতা হলো তাক্বওয়া (সতর্কতা) এবং তাক্বওয়ার দিকের দরজা হলো ভয়। ভয়-এর প্রমাণ হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হামদ ও তাসবীহ করা , আন্তরিকতার সাথে তার আদেশ মেনে চলাতে লেগে থাকা , ভয় ও সতর্কতা , এবং নিষিদ্ধ জিনিস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা ; আর এই পথের পথপ্রদর্শক হচ্ছে জ্ঞান।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
)
إ
ِنَّمَا يَخْشَى اللَّـهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ(
‘‘
তাঁর দাসদের মধ্যে তারাই আল্লাহকে ভয় করে যারা জ্ঞানী।’’
(সূরা ফাতিরঃ ২৮)
কৃতজ্ঞতা
প্রত্যেক শ্বাস নেয়ার সাথে তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত , নিশ্চয়ই হাজার ধন্যবাদ অথবা তারও বেশী। কৃতজ্ঞতার সবচেয়ে নিচের স্তর হচ্ছে রহমত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে আসছে তা দেখতে পাওয়া , তার কারণ যাই হোক না কেন এবং সে কারণের সাথে হৃদয় যুক্ত না থাকা। এতে আছে-যা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা ; এর অর্থ হচ্ছে তাঁর দেয়া নেয়ামতের বিষয়ে তার অবাধ্য না হওয়া অথবা তাঁর আদেশ ও নিষেধগুলোর বিরোধিতা না করা-তাঁর দান করা নেয়ামতের কারণে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একজন কৃতজ্ঞ দাস হও সবদিক থেকে , তাহলে তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সবদিক থেকে উদার রব হিসাবে দেখতে পাবে। যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মুখলেস দাসদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাতে প্রত্যেক অবস্থায় ধন্যবাদ জানানোর চাইতে কোন উত্তম পথ থাকতো তাহলে তিনি ঐ ইবাদাতকে অন্য সব সৃষ্টির উপরে নাম দিতেন। যেহেতু এর চাইতে উত্তম কোন ইবাদাত নেই তাই তিনি সব ইবাদাতের মধ্যে এ ইবাদাতকে বাছাই করেছেন এবং যারা এ ধরনের ইবাদাত করে তাদেরকে বাছাই করেছেন এই বলেঃ
)
و
َقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ(
‘‘
আমার দাসদের মধ্যে খুব অল্প ক’
জনই কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী।’’
(সূরা সাবাঃ ১৩)
পূর্ণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার হলো সবচেয়ে কম কৃতজ্ঞতা প্রকাশে তোমার অক্ষমতা নিয়ে দুঃখ করা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রশংসা আন্তরিকভাবে করার মাধ্যমে তা প্রকাশ করা। কারণ ধন্যবাদ দেয়াটাও বান্দাহর উপর আল্লাহর একটি দান এবং এর জন্যও সে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবে। পূর্ববর্তী নেয়ামতের চাইতেও এটি বেশী মূল্যবান , যা তাকে প্রথম অবস্থায় ধন্যবাদ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। তাই , যত বার একজন ধন্যবাদ দেয় তার জন্য উচ্চতর ধন্যবাদ দেয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায় এবং এভাবে তা চলবে অনন্তকাল পর্যন্ত , আর এভাবে সে তাঁর নেয়ামতে ডুবে থেকে কৃতজ্ঞতার সর্বোচ্চ অবস্থা অর্জনে অক্ষম হয়ে যায়। কারণ কীভাবে বান্দাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নেয়ামতের সমান কৃতজ্ঞতা জানাবে এবং কীভাবে সে আল্লাহর কাজের সাথে নিজের কাজ সমান করবে যখন সবসময়ই বান্দাহ হলো দূর্বল এবং তার কোন রকম শক্তি নেই শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে ছাড়া ?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাঁর বান্দাহদের কাছ থেকে আনুগত্যের প্রয়োজন নেই , কারণ চিরকালের জন্য নেয়ামত বৃদ্ধি করে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। অতএব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একজন কৃতজ্ঞ বান্দাহ হও এবং এভাবে তুমি আশ্চর্যজনক জিনিসগুলো দেখতে পাবে।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়
যখন তুমি তোমার বাড়ি থেকে বের হও , তা এমনভাবে হও যেন তুমি আর ফেরত আসবে না। বের হও শুধু আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য অথবা ঈমানের জন্য। তোমার আচার-আচরণে প্রশান্ত অবস্থা ও মর্যাদা বজায় রাখো এবং আল্লাহকে স্মরণ করো গোপনে ও প্রকাশ্যে।
আবু যার-এর সাথীদের একজন আবু যার-এর পরিবারের একজনকে জিজ্ঞেস করলো সে কোথায়। সে নারী বললোঃ‘‘
তিনি বাইরে গেছেন।’’
যখন ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো কখন আবু যার ফিরবেন , ঐ নারী বললোঃ‘‘
কখন তিনি ফিরবেন তা আরেকজনের উপর নির্ভর করে , কারণ তার নিজের কোন ক্ষমতা নেই।’’
আল্লাহর ধার্মিক ও পথভ্রষ্ট বান্দাহদের কাছ থেকে শিখো , যেখানেই তুমি যাও। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে বলো তোমাকে তাঁর মুখলেস ও সত্যবাদী বান্দাহদের মাঝে স্থান দিতে এবং যারা চলে গেছে তাদের সাথে যুক্ত করতে এবং তাদের সাথে জড়ো করতে। তাঁর প্রশংসা করো এবং ধন্যবাদ দাও সে কারণে যেসব ক্ষুধা থেকে তিনি তোমাকে সরিয়ে রেখেছেন এবং অন্যায়কারীদের কুৎসিৎ কাজ থেকে তোমাকে তিনি রক্ষা করেছেন বলে। তোমার দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখো অশ্লীল কামনা ও নিষিদ্ধ জিনিস থেকে এবং তোমার ভ্রমণে সঠিক পথ অনুসরণ করো। সতর্ক দৃষ্টি রাখো , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করো প্রত্যেক পদক্ষেপে , যেন তুমি পুলসিরাত পার হচ্ছো। মনযোগ হারিয়ো না। তাঁর লোকদেরকে সালাম বলো- প্রথমে সালাম দিয়ে এবং উত্তর দিয়ে। তাদের সাহায্য করো যারা সৎকাজের জন্য তা চায় , তাদের পথ দেখাও যারা পথ হারিয়ে ফেলেছে এবং মূর্খদের উপেক্ষা করো।
যখন তুমি বাড়িতে ফেরত আসো-এতে প্রবেশ করো যেভাবে একটি লাশ কবরে প্রবেশ করে , যার একমাত্র চিন্তা হলো আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করা।
কোরআন তেলাওয়াতের বিষয়ে
যে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং নিজেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে বিনয়ী করে না , যার অন্তর নরম হয় না , অনুতপ্ত হয় না এবং তাঁর ভিতরে ভয় জাগে না , সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিষয়ের বিরাটত্বকে যথাযথ মূল্য দেয় না এবং সে স্পষ্টভাবে ক্ষতির মধ্যে আছে।
যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করবে তার তিনটি জিনিস প্রয়োজনঃ একটি ভীতিপূর্ণ অন্তর , প্রশান্ত ও গ্রহণে আগ্রহী শরীর এবং একটি যথাযথ তেলাওয়াতের স্থান।
যখন তার অন্তর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করে তখন অভিশপ্ত শয়তান তার কাছ থেকে পালায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
)
ف
َإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ(
‘‘
যখন তুমি কোরআন পড় , আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও অভিশপ্ত শয়তান থেকে।’’
(সূরা নাহলঃ ৯৮)
যখন সে সব ধরনের সংযুক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করে তখন তার অন্তর তেলাওয়াতে মগ্ন হয় এবং কোরআনের নূর ও এর উপকারিতা লাভে তাকে কোন কিছু বাধাগ্রস্থ করে না। যখন সে একটি নির্জন জায়গা পায় এবং মানুষজন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় দু’
টি গুণাবলী নিয়ে- অন্তরের বিনয় এবং শারীরিক প্রশান্তি , তখন তার আত্মা এবং তার বাতেনী সত্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে মিলন অনুভব করবে , এবং সে আবিষ্কার করবে ,সেই মিষ্টি স্বাদ যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার সৎকর্মশীল বান্দাহর সাথে কথা বলেন , কীভাবে তিনি তাদের সাথে তাঁর নম্রতা প্রকাশ করেন এবং তাদেরকে বাছাই করেন তাঁর বিভিন্ন সম্মানজনক চিহ্ন ও আশ্চর্যজনক নিদর্শনের জন্য। যদি সে সেই শরবতের এক পেয়ালা পান করে সে কখনোই আর এই অবস্থা ও এই মুহুর্তটির চেয়ে অন্য কিছুকে বেশী চাইবে না । সে এটিকে প্রত্যেক আনুগত্য ও মগ্নতার উপরে স্থান দিবে যেহেতু তাতে রয়েছে রবের সাথে কথপোকথন-কোন মাধ্যম ছাড়াই।
তাই সাবধান হও কীভাবে তুমি তোমার রবের কিতাব পড় , যিনি তোমার অভিভাবক , যাকে তুমি চাও , কীভাবে তুমি তাঁর আদেশে সাড়া দাও এবং তাঁর নিষেধগুলো এড়িয়ে চল এবং কীভাবে তুমি তাঁর সীমানা মেনে চল , কারণ তা এক মহাক্ষমতাবান কিতাবঃ
)
ل
َّا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ(
‘‘
মিথ্যা-এর মাঝে প্রবেশ করবে না সামনে থেকে অথবা পিছন থেকে , তা নাযিল হয়েছে প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসিত-এর কাছ থেকে।’’
(সূরা হা-মীম আস-সাজদাহঃ ৪২)
অতএব তা তেলাওয়াত করো ধারাবাহিকভাবে এবং গভীর ভাবনার সাথে এবং তার প্রতিশ্রুতি ও হুমকির সীমানা মেনে চলো। এর উদাহরণ ও সতর্কবানীর উপর গভীরভাবে ভাবো। সতর্ক থাকো শুধু এর অক্ষরগুলোর তেলাওয়াতকে অযাচিত মর্যাদা দেয়া থেকে এবং একই সময়ে এর ভেতরে থাকা আইনগত সীমানা মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়া থেকে।