আল্লাহ ভীতি
তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়গুলোর দরজা বন্ধ করে দাও সেসব জিনিসের উপর যা তোমার অন্তরকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে তোমার খারাপ অবস্থান সরিয়ে ফেলো এবং এর পিছনে আনো কেয়ামতের দিনের শোক ও অনুতাপ এবং যত খারাপ কাজ করেছো তার জন্য লজ্জা। একজন সাবধানী ব্যক্তির অবশ্যই তিনটি নীতি থাকতে হবেঃ সে সব মানুষের ত্রুটি উপেক্ষা করবে , সে তাদেরকে অপমান করা থেকে বিরত থাকবে এবং তার উচিত তিরস্কারের পর প্রশংসা করে সাম্য আনা।
আল্লাহ ভীতির ভিত্তি হচ্ছে সর্বক্ষণ নিজের হিসাব নেওয়া। কথায় সত্যবাদী হওয়া ও লেনদেনে বিশুদ্ধ হওয়া , প্রত্যেক সন্দেহপূর্ণ জিনিস ছেড়ে দেয়া , প্রত্যেক ত্রুটি ও সন্দেহ পরিত্যাগ করা , যা তোমার সাথে সম্পর্কিত নয় সেসব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সে দরজাগুলো না খোলা যেগুলো তুমি জানবে না কীভাবে বন্ধ করতে হয়।
তার সাথে বসো না যে তোমার কাছে যা স্পষ্ট তা অস্পষ্ট করে তোলে , তার সাথেও নয় যে বিশ্বাসকে হালকা ভাবে নেয়। সে জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করো না যার জন্য তোমার অন্তরের ক্ষমতা নেই এবং যা তুমি বুঝতে পারবে না- তা যেই বলুক এবং তাকে কেটে দাও যে তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে কেটে দেয়।
সামাজিক মেলামেশা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির সাথে সামাজিক সৌজন্যমূলক সম্পর্ক রাখার সময় তাঁর অবাধ্য হওয়ার মত সব কাজ এড়িয়ে চলা বান্দাহর উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অতিরিক্ত উদারতার চিহ্ন। যে তার গভীরতম সত্তায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আন্তরিক ও বিনয়ী তার বাহ্যিক দিকে ভালো সামাজিক মেলামেশা থাকবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে লোকজনের সাথে মিশো এবং মেলামেশা করো না শুধু পৃথিবীর বিষয়ে তোমার অংশের জন্য , মর্যাদা লাভের জন্য , লোক দেখানোর জন্য অথবা সুখ্যাতির জন্য। শরিয়তের সীমা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ো না সামাজিক মেলামেশার কারণে। যেমনঃ অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা অথবা সুখ্যাতি অর্জনের জন্য , কারণ এগুলো তোমার ক্ষতি পূরণ করবে না এবং তুমি আখেরাত হারাবে কোন ফিরতি সুযোগ ছাড়া। তোমার চেয়ে বয়সে বড়দের সাথে এমন আচরণ করো যেমন করতে তোমার বাবার সাথে এবং তোমার চেয়ে বয়সে ছোটদের সাথে তেমন যেমন করতে তোমার সন্তানের সাথে। তোমার সমবয়সীদের সাথে আচরণ করো যেমন করতে ভাইয়ের সাথে। তুমি নিজে যা নিশ্চিত জানো তা বদল করো না ঐ জিনিসের সাথে যা তুমি অন্যের কাছ থেকে শুনেছো এবং যা তুমি সন্দেহ কর। নম্র হও যখন তুমি সৎকাজের আদেশ কর এবং দয়ালু হও যখন তুমি খারাপকে নিষেধ কর। কখনোই কোন পরিস্থিতিতে ভালো উপদেশ পরিত্যাগ করো না। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
)
و
َقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا(
‘‘
মানুষের সাথে ভালো কথা বলো’’
(সূরা বাকারাঃ ৮৩)
সেসব জিনিস থেকে নিজেকে কেটে ফেলো যা তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ ভুলিয়ে দেয় , যখন‘
লোভ জাগা’
তোমাকে তাঁর আনুগত্য থেকে অমনোযোগী করে দেয়–
কারণ তা আসে শয়তানের বন্ধু ও সাহায্যকারীদের কাছ থেকে। তাদেরকে দেখা যেন তোমাকে সত্যের অনুসরণ থেকে সরিয়ে না দেয়। কারণ তা হবে অবশ্যই এক ভয়ানক ক্ষতি। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
ঘুম
মনোযোগী লোকের ঘুম ঘুমাও , উপেক্ষাকারীর ঘুম ঘুমিয়ো না , বুঝদারদের মাঝে মনোযোগীরা ঘুমায় শুধু বিশ্রামের জন্য এবং অলসতার কারণে ইচ্ছা করে ঘুমিয়ো না।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘
আমার চোখগুলো ঘুমায় কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।’’
যখন তুমি ঘুমের জন্য শোও এ নিয়ত রাখো যে তুমি ফেরেশতাদের উপর তোমার বোঝা লাঘব করবে এবং নফসকে এর ক্ষুধা থেকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং ঘুমের মাধ্যমে নিজেকে পরীক্ষা করবে ; এ সত্যকে জেনে রাখো যে তুমি অক্ষম ও দূর্বল। তোমার কোন শক্তি নেই তোমার নড়াচড়া ও স্থিরতার উপর–
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হুকুম ও পরিমাণ ছাড়া। মনে রেখো ঘুম হচ্ছে মৃত্যুর ভাই। এটিকে ব্যবহার করো মৃত্যুর দিকে পথ প্রদর্শক হিসেবে , কারণ মৃত্যু থেকে জেগে উঠার কোন পথ নেই অথবা ফিরে এসে তোমার কাজকে শুদ্ধ করা নেই যা তুমি হারিয়েছো। যে ব্যক্তি ওয়াজিব ও নফল নামাজের সময় ঘুমিয়ে পার করে দেয় তার ঘুম হচ্ছে উপেক্ষাকারীদের ঘুম এবং তার পথ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থদের পথ ; সে দোষী। যে তার বাধ্যতামূলক ও নফল নামাজের দায়িত্ব সম্পাদন করেছে এবং তার দায়িত্বসমূহ পালন করেছে সে একটি প্রশংসিত ঘুম ঘুমাচ্ছে। আমাদের সময়ে যারা এ গুণাবলী অর্জন করেছে তাদের জন্য ঘুমের চাইতে নিরাপদ আর কিছু আমি জানি না। কারণ লোকেরা তাদের বিশ্বাসকে পাহারা দেয়া এবং তাদের আচরণের যত্ন নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা তাদের বাম দিকের পথ ধরেছে। যখন একজন মুখলেস বান্দাহ বেজায়গায় কথা না বলার জন্য সংগ্রাম করে , তখন কীভাবে সে সে কথা শোনা এড়িয়ে যাবে যা তাকে‘
কথা না বলা’
থেকে বাধা দিবে যদি তার একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে ? ঘুম হচ্ছে এমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
)
إ
ِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَـٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا(
‘‘
নিশ্চয়ই শ্রবনশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তর , এসব কিছুকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।’’
(সূরা বনী ইসরাইলঃ ৩৬)
অতিরিক্ত ঘুমের মধ্যে অনেক খারাপ লুকায়িত আছে–
আমরা যেভাবে উল্লেখ করেছি যদি সেভাবেও হয়। খুব বেশী ঘুম আসে অতিরিক্ত পানে এবং অতিরিক্ত পান আসে অতিরিক্ত তৃপ্তি থেকে। এ দু’
টোই নফসের উপর ভারী হয়ে দেখা দেয় আনুগত্য করার পথে এবং এগুলো অন্তরকে গভীর ভাবনা এবং বিনয়ী না করে শক্ত করে দেয়।
তোমার ঘুমকে এ পৃথিবীর শেষ বিষয় বানিয়ে ফেলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করো তোমার অন্তর ও জিহবা দিয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি তোমার আনুগত্য দিয়ে তোমার অন্যায় কাজকে পরাভূত করো এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাও যখন তুমি ঘুমাও সকালের নামাজ পর্যন্ত উপাস থেকে। যদি তুমি রাতে জেগে উঠো , শয়তান তোমার কানে ফিসফিস করে বলেঃ‘‘
আবার ঘুমাও , এখনও তোমার জন্য লম্বা রাত রয়েছে ,’’
কারণ সে চায় তুমি নিবিড় আত্ম পর্যালোচনা এবং তোমার রবের সামনে তোমার অবস্থা তুলে ধরা হারাও। মনোযোগ হারিয়ো না সকালে ক্ষমা চাইতে , কারণ সে সময় প্রার্থনায় মগ্নদের মাঝে দেখা দেয় আল্লাহকে পাওয়ার অনেক আকাঙ্ক্ষা।