রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আধ্যাত্মিক জ্ঞান (ইরফান)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর রাসূলকে (সা.) ও তাঁর পরিবারকে তাঁর লুৎফ (গোপন দয়া) , উদারতা এবং রহমত এর ভান্ডার থেকে দান করেছেন। তিনি সেগুলোকে শিক্ষা দিয়েছেন তাঁর জ্ঞান ভান্ডার থেকে এবং সমস্ত সৃষ্টির মাঝ থেকে তাদেরকে নিজের জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। পুরো সৃষ্টিজগত থেকে কেউ একজনও তাদের অবস্থা ও চরিত্রের অধিকারী নয় , কারণ তিনি তাদেরকে বানিয়েছেন সমস্ত সৃষ্ট প্রাণীদের জন্য তাঁর কাছে আসার মাধ্যম। তিনি তাদের আনুগত্য ও তাদের প্রতি ভালোবাসাকে তাঁর সন্তুষ্টির কারণ এবং তাদের বিরোধিতা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করাকে তাঁর ক্রোধের কারণ বানিয়েছেন। তিনি সব মানুষ ও দলকে আদেশ দিয়েছেন তাদের রাসূলকে অনুসরণ করার জন্য , তাদের মাধ্যমে আনুগত্য ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমের আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য , তাদের প্রশংসা করার জন্য এবং তাদের আদেশ করেছেন তাদের প্রতি ভালোবাসা , শ্রদ্ধা , ভক্তি , সম্মান প্রদর্শন ও তাদের কাছে আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে তাদের উচ্চ মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য।
অতএব সবাই আল্লাহর রাসূলের (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) প্রশংসা করো এবং তাদেরকে তাদের চাইতে নীচে কোন ব্যক্তির সমান মর্যাদা দিয়ো না। তাদের মাক্বাম , আস্থা ও চরিত্র সম্পর্কে তোমার বুদ্ধি খাঁটিয়ো না যদি না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে তা পরিষ্কার তথ্য হয় এবং যাদের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে তাদের ঐক্যমত হয় সে প্রমাণসমূহের উপরে যেগুলো তাদের মূল্য ও মর্যাদার সাক্ষ্য দেয়। কীভাবে তুমি সেই বাস্তবতা বুঝতে পারবে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে তারা পেয়েছে ? যদি তুমি তাদের কথা এবং কাজকে তাদের চাইতে নীচে কোন ব্যক্তির সাথে তুলনা কর তাহলে তুমি তাদের খারাপ সাথী হবে , এবং তুমি অজ্ঞতার কারণে তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে ও তারা যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কতৃক বিশেষভাবে বাছাইকৃত তা অস্বীকার করবে এবং তুমি বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের স্তর থেকে নীচে পড়ে যাবে। তাই সতর্ক হও এবং আবারও সতর্ক হও।
ইমামদেরকে (আ.) স্বীকৃতি দান
সালমান আল ফারসী থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ‘‘
আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে উপস্থিত হলাম , তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ‘
হে সালমান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন নবী অথবা রাসূলকে পাঠান না যদি না তার সাথে বারোজন সর্দার থাকে।’
‘
ইয়া রাসূলুল্লাহ , আমি তা দুই কিতাব-এর লোকদের কাছ থেকে জেনেছি।’
‘
হে সালমান , তুমি কি আমার বারোজন সর্দারকে চেনো , যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার পরে ইমাম হিসাবে নির্বাচন করেছেন ?’
‘
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন।’
‘
হে সালমান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্রতম আদি নূর থেকে এবং আমাকে ডাকলেন এবং আমি তাঁর আদেশ মানলাম। এরপর তিনি আলীকে (আ.) আমার নূর থেকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো। আমার নূর ও আলীর নূর থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ফাতিমাহকে (আ.) ; তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো। আমার , আলীর ও ফাতিমাহর (আ.) থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন আল হাসান ও আল হোসেইনকে (আ.)। তিনি তাদের ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে তাঁর পাঁচটি নাম থেকে নাম দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসার যোগ্য) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল আলী (উচ্চ) এবং এ হলো আলী (আ.)(যে উচ্চ স্থানীয়) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন‘
আল ফাতির (যিনি শূন্য থেকে সৃষ্টি করেন) এবং এ হলো ফাতিমাহ (আ.) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন তিনি যার কাছে আছে হাসান (অন্যের জন্য কল্যাণ) এবং এ হলো হাসান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন মুহাসসিন (পরম সুন্দর) এবং এ হলো হোসেইন। তিনি নয়জন ইমামকে সৃষ্টি করলেন আল হোসেইন (আ.)-এর নূর থেকে এবং তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো–
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা উঁচু আকাশ , বিস্তৃত পৃথিবী , বাতাস , ফেরেশতা ও মানুষ সৃষ্টি করার আগেই আমরা ছিলাম নূর যারা তাঁর প্রশংসা করতো , তাঁর কথা শুনতো এবং তাঁকে মেনে চলতো।’
‘
ইয়া রাসূলুল্লাহ , আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক , ঐ ব্যক্তির জন্য কী আছে যে এ ব্যক্তিদের , সেভাবে স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ?’
‘
হে সালমান , যে-ই তাদের স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত এবং তাদের উদাহরণ অনুসরণ করে , তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে এবং তাদের শত্রুদের কাছ থেকে মুক্ত থাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শপথ , সে আমাদের একজন। সে সেখানে ফেরত আসবে যেখানে আমরা ফেরত আসবো এবং সে সেখানে থাকবে যেখানে আমরা আছি।’
‘
ইয়া রাসূলুল্লাহ , তাদের নাম ও বংশধারা না জানা থাকলে কি বিশ্বাস আছে ?’
‘
না , সালমান।’
‘
হে আল্লাহর রাসূল , আমি তাদের কোথায় পাবো ?’
‘
তুমি ইতিমধ্যেই আল হোসেইনকে (আ.) জানো , এরপর আসবে ইবাদাতকারীদের সর্দার আলী ইবনুল হোসেইন (যায়নুল আবেদীন) (আ.) ; এরপর তার পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ.)
- পূর্বের ও পরের নবী ও রাসূলদের জ্ঞান বিদীর্ণকারী (আল বাক্বির) ; এরপর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , আল্লাহর সত্যবাদী জিহবা (আল সাদিক্ব) ; এরপর মূসা ইবনে জাফর , (আ.) যে আল্লাহর জন্য ধৈর্যের মাধ্যমে তার রাগকে নিশ্চুপ রেখেছে (আল কাযিম) ; এরপর আলী ইবনে মূসা , (আ.) যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গোপন বিষয়ে সন্তুষ্ট আছে (আল রিদা) ; এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির মাঝ থেকে নির্বাচিত জন (আল মুখতার) ; এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ , যে আল্লাহর দিকে পথ প্রদর্শক (আল হাদী) ; এরপর আল হাসান ইবনে আলী (আ.) , যে নিশ্চুপ- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গোপন বিষয়ের আমানতদার (আল আসকারি) ; এরপর মিম হা মিম দাল (মুহাম্মাদ) , যাকে ডাকা হয় ইবনে আল হাসান (আ.)- যে ঘোষক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে।’
সালমান বলেনঃ‘
আমি কাঁদলাম , এরপরে বললামঃ‘
ইয়া রাসূলুল্লাহ আমার জীবন তাদের সময় পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হোক।’
তিনি বললেনঃ‘
হে সালমান , এটি তেলাওয়াত করোঃ
)
ف
َإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ وَكَانَ وَعْدًا مَّفْعُولًا ﴿٥﴾ ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ الْكَرَّةَ عَلَيْهِمْ وَأَمْدَدْنَاكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَجَعَلْنَاكُمْ أَكْثَرَ نَفِيرًا(
‘‘
যখন দু’
টি প্রতিশ্রুতির প্রথমটি এলো , আমি তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠালাম আমার শক্তিশালী যোদ্ধা বান্দাহদের , আর তারা বাড়িগুলোর ভিতর পর্যন্ত প্রবেশ করলো এবং তা ছিলো একটি প্রতিশ্রুতি , বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য। এরপর আমরা তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করলাম এবং তোমাদেরকে সম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে একটি বড় সংখ্যার দলে পরিণত করলাম।’’
(সূরা বনী ইসরাইলঃ 5,6
)
সালমান বললেনঃ‘
আমি অনেক কাঁদলাম , এবং আমার আকাঙ্ক্ষা প্রচন্ড হয়ে দাঁড়ালো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ , এটি কি আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি ?’
‘
হ্যাঁ , তাঁর শপথ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন ; এটি একটি প্রতিশ্রুতি আমার , আলীর , ফাতিমাহর , আল হাসান , আল হোসেইন এবং আল হোসেইনের বংশ থেকে নয়জন ইমামদের কাছ থেকে তোমার জন্য এবং তাদের জন্য যারা আমাদের সাথে আছে এবং যাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে। যে তার বিশ্বাসে সত্যিকারভাবে আন্তরিক , তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শপথ সালমান , ইবলিস ও তার বাহিনীগুলো আসুক। যার আছে সত্যিকার অবিশ্বাস সে শাস্তি পাবে প্রত্যাঘাত ও নির্যাতন এবং উত্তরাধীকার-এর (অন্যদের দ্বারা) মাধ্যমে। তোমার রব কারো উপরে যুলুম করবেন না। আমাদের কথা এই আয়াতে বলা হয়েছে।
)
و
َنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ ﴿٥﴾ وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ(
‘‘
আমরা চাইলাম তাদেরকে নেয়ামত দিতে যাদেরকে পৃথিবীতে দূর্বল ভাবা হতো এবং তাদেরকে নেতা বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে এবং তাদেরকে যমীনে ক্ষমতা দিতে এবং ফেরাউন , হামান এবং তাদের বাহিনীগুলোকে দেখাতে যা থেকে তারা ভয় পেতো।’’
(সূরা কাসাসঃ 5,6
)
সালমান বলেনঃ‘
আমি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম সম্পূর্ণ ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে কীভাবে সালমান মৃত্যুর সাথে দেখা করবে অথবা কীভাবে মৃত্যু তার সাথে দেখা করবে।’’