পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি16%

পথ চলার বাতি লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

পথ চলার বাতি
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 61 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13236 / ডাউনলোড: 4502
সাইজ সাইজ সাইজ
পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

নিয়ত

সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ যার আছে সুস্থ অন্তর , কারণ সুস্থ অন্তর নিষিদ্ধ বিষয়ের চিন্তা থেকে মুক্ত। তা আসে সব বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য তোমার নিয়ত করা থেকে।

) ي َوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ ﴿٨٨﴾ إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّـهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ(

‘‘ সেদিন না সম্পদ না সন্তানাদি কোন কাজে আসবে শুধু সে ছাড়া যে আসবে কদর্যতা মুক্ত অন্তর নিয়ে।’’ (সূরা শুয়ারাঃ ৮৮-৮৯)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ বিশ্বাসীর নিয়ত তার কাজের চাইতে উত্তম।’’ এবং আরো বলেছেনঃ‘‘ কাজ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল , এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছিলো।’’ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহর তাই অবশ্যই খালেস নিয়ত থাকতে হবে প্রত্যেক ক্রিয়া ও স্থিরতার মুহূর্তে। কারণ সে ক্ষেত্রে সে উদাসীন থাকবে না। যারা উপেক্ষাকারী তারা তিরস্কৃত হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছেঃ

) إ ِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا(

‘‘ তারা গবাদিপশুর মত ছাড়া আর কিছু নয় , না তারা পথ থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে।’’ (সূরা ফুরকানঃ ৪৪)

) أ ُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ(

‘‘ এরা হচ্ছে উদাসীন।’’ (সূরা আরাফঃ ১৭৯)

নিয়ত আসে অন্তর থেকে জ্ঞানের বিশুদ্ধতা অনুযায়ী। এটি পরিবর্তিত হয় বিশ্বাস পরিবর্তনের সাথে সাথে। বিভিন্ন সময়ে এর শক্তি ও দূর্বলতার তারতম্য হয়। যাদের খালেস নিয়ত রয়েছে তাদের স্বার্থপরতা ও কামনা বাসনা পরাভূত হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাসবীহ করার শক্তি ও তাঁর সামনে বিনয়ের কাছে। সে তার প্রকৃতি , তার ক্ষুধা এবং তার কামনা বাসনার কারণে একটি অসুবিধার মধ্যে আছে তবুও অন্যরা তার কাছে স্বস্তি খুঁজে পায়।

পরিচ্ছেদ-৭

যিকর

যে সত্যিকারভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করে সে তাঁকে মেনে চলে। যে ভুলে যায় সে অবাধ্য। আনুগত্য হেদায়েতের চিহ্ন। অবাধ্যতা পথভ্রষ্ঠতার চিহ্ন। এ দুই অবস্থার মূলে রয়েছে যিকর (স্মরণ) এবং ভুলে যাওয়া। তোমার অন্তরকে তোমার জিহবার মনোযোগের কেন্দ্র বানাও যার নড়াচড়া করা উচিত নয় যদি না অন্তর ইঙ্গিত করে ও বুদ্ধি একমত হয় এবং জিহবা বিশ্বাসের সাথে মিল রাখে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানেন তুমি কী লুকাও এবং তুমি কী প্রকাশ কর।

তার মত হও যার আত্মা তার দেহ থেকে ঝরে গেছে অথবা তার মত যে হিসাব দিনের মহাসমাবেশে যোগদান করছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ও তাঁর হুমকি এবং তোমার রব তোমার উপরে যে আদেশ ও নিষেধ জারী করেছেন তা পালন করার ব্যাপারে মনোযোগ না হারিয়ে। নিজেকে নিয়ে বিভোর থেকো না বরং তোমার রব তোমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা নিয়ে ব্যস্ত হও। তোমার অন্তরকে দুঃখ ও ভয়ের পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার যিকরকে তোমার জন্য তাঁর মহান স্মরণের অংশ বানাও। তিনি তোমাকে স্মরণে রাখেন কিন্তু তোমাকে তাঁর কোন প্রয়োজন নেই। তুমি তাকে যে স্মরণ কর তাঁর চাইতে তোমাকে তাঁর স্মরণ আরো মহান , আরো আকর্ষণীয় , আরো প্রশংসনীয় এবং আরো সম্পূর্ণ ও আরো প্রাচীন।

তোমাকে তিনি স্মরণ করার কারণে যে জ্ঞান তুমি লাভ কর তা তোমার ভিতরে বিনয় , ভদ্রতা এবং অনুতাপের জন্ম দিবে। পরিণতিতে তা তোমাকে তাঁর উচ্চ মর্যাদা এবং উপচে পড়া পূর্ববর্তী দানসমূহ দেখতে সাহায্য করবে। তা তোমার আনুগত্যকে তোমার চোখেই তুচ্ছ হিসাবে দেখাবে , তাঁর নেয়ামতের কারণে তা যত বড়ই হোক , এবং তুমি তাঁর প্রতি আন্তরিকভাবে আত্মনিয়োগ করবে। কিন্তু তাঁকে তোমার স্মরণ করার বিষয়ে তোমার চেতনা ও সম্মানবোধ তোমাকে লোক দেখানো , অহংকার , মূর্খতা এবং তোমার চরিত্রের রুক্ষতার দিকে ঠেলে দিবে। এর অর্থ হলো (তার প্রতি) তোমার আনুগত্যকে খুব বেশী মর্যাদা দেয়া অথচ তাঁর উপচে পড়া নেয়ামত ও উদারতাকে ভুলে যাওয়া।

এটি তোমাকে তাঁর কাছ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেবে এবং চলে যেতে থাকা দিনগুলোতে তুমি যা অর্জন করবে তা হবে শুধুই একাকীত্ব। দু ধরনের যিকর আছেঃ আন্তরিক যিকর যেখানে অন্তর হয় প্রশান্ত এবং সে যিকর যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর স্মরণকে বিতাড়িত করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আপনার যথাযথ প্রশংসা করাতে আমি ন্যায়বিচার করতে অক্ষম যেভাবে আপনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন।’’ রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করার বিষয়ে কোন সীমানা নির্ধারন করেন নি। যেহেতু তিনি এ সত্য জানতেন যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহ তাঁর যে স্মরণ করে তার চাইতে উত্তম হচ্ছে বান্দাহকে তাঁর স্মরণ। তাই এটি আরো যথাযোগ্য যে যে-ই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরে আসবে সে যেন কোন সীমানা নির্ধারন না করে এবং যে আল্লাহকে স্মরণ করতে চায় তার জানা থাকা উচিত যে যতক্ষণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাহকে তাঁর স্মরণ করাতে সফলতা না দিবেন বান্দাহ তাঁকে স্মরণ করতে অক্ষম হবে।

ক্বারীদের ধ্বংস

যে ব্যক্তি জ্ঞান ছাড়া তেলাওয়াত করে সে হচ্ছে সেই দেউলিয়া লোকের মত যার না আছে সম্পত্তি না আছে সম্পদ ; কারণ জনগণ কাউকে ঘৃণা করে না সহায়-সম্পত্তি না থাকার কারণে , বরং তারা তাকে ঘৃণা করে তার অহংকার-এর কারণে। সে সবসময় সৃষ্টির সাথে ঐ বিষয়ে দ্বন্দ্বে আছে যা তার উপরে বাধ্যতামূলক নয় এবং যে সৃষ্টির সাথে বিরোধিতায় জড়ায় যে বিষয়ে তাকে আদেশ করা হয় নি সে সৃষ্টি প্রক্রিয়া এবং পরম প্রভুত্বের বিরোধিতায় লিপ্ত আছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

) و َمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّـهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُّنِيرٍ(

‘‘ মানুষের মাঝে সে আছে যে আল্লাহর বিষয়ে তর্ক করে কোন জ্ঞান , কোন হেদায়াত এবং আলোদানকারী কোন কিতাব ছাড়াই।’’ (সূরা লুকমানঃ ২০)

কেউ সে ব্যক্তির চাইতে কঠোর শাস্তি পাবে না যে জ্ঞানের চাদরের উপর অধিকার দাবী করে অথচ তার কাছে না আছে সত্য , না আছে এর অর্থ। যাইদ ইবনে সাবিত তার ছেলেকে বলেছিলেনঃ‘‘ হে আমার পুত্র , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন তোমার নাম অর্থহীন তেলাওয়াতকারীদের তালিকায় না দেখেন।’’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ এমন একটি সময় আমার উম্মতের কাছে আসবে যখন তেলাওয়াতকারীর নাম শোনা অধ্যয়নের চাইতে উত্তম বিবেচিত হবে এবং অধ্যয়ন বিবেচিত হবে অভিজ্ঞতাসহ কাজ করার চাইতে উত্তম আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মোনাফেক্ব হলো কোরআনের ক্বারীদের মধ্যে।’’

সেখানেই থাকো যেখানে থাকার জন্য তোমার বিশ্বাস তোমাকে পরামর্শ দেয় এবং যেখানে তোমাকে থাকতে আদেশ করা হয়। যতটুকু পারো নিজের ভিতরের অবস্থা অন্যদের কাছে গোপন করো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি তোমার আনুগত্যপূর্ণ কাজগুলোকে এমন বানাও যেমন তোমার আত্মা তোমার দেহের সাথে সম্পর্ক রাখে , যেন সেগুলো হয় তোমার অবস্থার ইঙ্গিত যা তুমি তোমার ও তোমার সৃষ্টিকর্তার মাঝে অর্জন করেছো। তোমার সব বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাহায্য চাও এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করো রাতের শেষে ও দিনের শেষে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) اد ْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ(

‘‘ তোমাদের রবকে ডাকো বিনয়ের সাথে ও গোপনে , নিশ্চয়ই তিনি সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’’ (সূরা আরাফঃ ৫৫)

সীমালংঘন হচ্ছে আমাদের যুগে ক্বারীদের চরিত্রের একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য। তোমার সব বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করো। যেন তুমি কামনা-বাসনার কবলে না পড় এবং নিজেকে ধ্বংস করে না ফেলো।

সত্য যাচাই ও মিথ্যা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করো এবং তুমি যেখানে এবং যে লোকদের মাঝে চাও থাকো। যে সতর্কতা অবলম্বন করে তার জন্য পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নেই। সতর্কতা অবলম্বন সব দলের জন্যই কাম্য। এতে রয়েছে সব কল্যাণ ও প্রজ্ঞা। এটি প্রত্যেক গ্রহণযোগ্য আনুগত্যপূর্ণ কাজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাপ। সতর্কতা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মারেফাতের ঝর্না থেকে বেরিয়ে আসা পানিঃ জ্ঞানের প্রত্যেক শাখা এর প্রয়োজনে রয়েছে। কীভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভয়ে ও তাঁর শক্তির ভয়ে চলৎশক্তি রহিত হয় তা জানার জন্য কোন সত্যায়নের প্রয়োজন নেই। সতর্কতায় বৃদ্ধি ঘটে তাঁর বান্দাহদের গোপন বিষয়গুলোর সাথে তাঁর গোপন করুণার পরিচয় করিয়ে দেয়ার কারণে। আর এটি তা প্রত্যেক সত্যের মূল।

মিথ্যা হলো যা কিছু তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে কেটে দেয়। প্রত্যেক দলই এর সাথে একমত। অতএব মিথ্যা পরিত্যাগ করো তোমার গোপনকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি নিবদ্ধ করো কোন পিছুটান ছাড়াই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ বেদুইনরা সবচেয়ে বেশী সত্য যা বলেছে তা হলো লাবিদের কথা যখন সে বলেছেঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া সবকিছু মিথ্যা এবং প্রত্যেক নেয়ামত অতি অবশ্যই ক্ষণস্থায়ী।

তাই তা আঁকড়ে ধরে থাকো যে বিষয়ে পবিত্র , ধার্মিক এবং সতর্ক ব্যক্তিরা ঐক্যমত আর তা হলো- বিশ্বাসের মূল , ইয়াক্বীনের বাস্তবতা , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি ও আত্মসমর্পন। জনগণের মাঝে মতভেদ ও বিরোধিতার মাঝে প্রবেশ করো না , কারণ তাহলে তোমার জন্য বিভিন্ন বিষয় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বাছাইকৃত উম্মত একমত হয়েছে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এক এবং তাঁর মত কিছু নেই এবং তিনি তাঁর বিচারে ন্যায়পরায়ন , তাই করেন যা তাঁর ইচ্ছা এবং পরিচালনা করেন যা তাঁর সিদ্ধান্ত। তাঁর কোন সৃষ্টিতে কেউ জিজ্ঞেস করে না কেন ? । কোন কিছু ছিলো না এবং কোন কিছু হবেও না যা তাঁর সিদ্ধান্ত ও চাওয়া অনুযায়ী নয়। তাঁর তা করার শক্তি আছে যা তিনি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি ও হুমকিতে সত্যবাদী।

কোরআন হচ্ছে তাঁর কথা এবং এর অস্তিত্ব ছিলো জীবিত সত্তা , স্থান ও সময়ের আগে। জীবিত সত্তাগুলোর সৃষ্টি ও সেগুলোর বিলীন হওয়া তাঁর কাছে সমান। তাদের সৃষ্টি তাঁর জ্ঞানের কোন বৃদ্ধি ঘটায় নি এবং তাদের চলে যাওয়া তাঁর রাজ্যে কোন ঘাটতি আনবে না। তাঁর ক্ষমতা পরম এবং তিনি রাজকীয় , সমস্ত মর্যাদা তাঁর।

যদি কেউ তোমার কাছে কিছু আনে যা এ মৌলিক সত্যের চাইতে কম হয় তাহলে তা গ্রহণ করো না। তোমার ভিতরের সত্তাকে এর দিকে নিবদ্ধ করো , তুমি এর নেয়ামতকে কাছেই দেখতে পাবে , তুমি বিজয়ীদের একজন হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আধ্যাত্মিক জ্ঞান (ইরফান)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর রাসূলকে (সা.) ও তাঁর পরিবারকে তাঁর লুৎফ (গোপন দয়া) , উদারতা এবং রহমত এর ভান্ডার থেকে দান করেছেন। তিনি সেগুলোকে শিক্ষা দিয়েছেন তাঁর জ্ঞান ভান্ডার থেকে এবং সমস্ত সৃষ্টির মাঝ থেকে তাদেরকে নিজের জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। পুরো সৃষ্টিজগত থেকে কেউ একজনও তাদের অবস্থা ও চরিত্রের অধিকারী নয় , কারণ তিনি তাদেরকে বানিয়েছেন সমস্ত সৃষ্ট প্রাণীদের জন্য তাঁর কাছে আসার মাধ্যম। তিনি তাদের আনুগত্য ও তাদের প্রতি ভালোবাসাকে তাঁর সন্তুষ্টির কারণ এবং তাদের বিরোধিতা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করাকে তাঁর ক্রোধের কারণ বানিয়েছেন। তিনি সব মানুষ ও দলকে আদেশ দিয়েছেন তাদের রাসূলকে অনুসরণ করার জন্য , তাদের মাধ্যমে আনুগত্য ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমের আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য , তাদের প্রশংসা করার জন্য এবং তাদের আদেশ করেছেন তাদের প্রতি ভালোবাসা , শ্রদ্ধা , ভক্তি , সম্মান প্রদর্শন ও তাদের কাছে আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে তাদের উচ্চ মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য।

অতএব সবাই আল্লাহর রাসূলের (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) প্রশংসা করো এবং তাদেরকে তাদের চাইতে নীচে কোন ব্যক্তির সমান মর্যাদা দিয়ো না। তাদের মাক্বাম , আস্থা ও চরিত্র সম্পর্কে তোমার বুদ্ধি খাঁটিয়ো না যদি না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে তা পরিষ্কার তথ্য হয় এবং যাদের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে তাদের ঐক্যমত হয় সে প্রমাণসমূহের উপরে যেগুলো তাদের মূল্য ও মর্যাদার সাক্ষ্য দেয়। কীভাবে তুমি সেই বাস্তবতা বুঝতে পারবে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে তারা পেয়েছে ? যদি তুমি তাদের কথা এবং কাজকে তাদের চাইতে নীচে কোন ব্যক্তির সাথে তুলনা কর তাহলে তুমি তাদের খারাপ সাথী হবে , এবং তুমি অজ্ঞতার কারণে তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে ও তারা যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কতৃক বিশেষভাবে বাছাইকৃত তা অস্বীকার করবে এবং তুমি বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের স্তর থেকে নীচে পড়ে যাবে। তাই সতর্ক হও এবং আবারও সতর্ক হও।

ইমামদেরকে (আ.) স্বীকৃতি দান

সালমান আল ফারসী থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ‘‘ আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে উপস্থিত হলাম , তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ হে সালমান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন নবী অথবা রাসূলকে পাঠান না যদি না তার সাথে বারোজন সর্দার থাকে। ইয়া রাসূলুল্লাহ , আমি তা দুই কিতাব-এর লোকদের কাছ থেকে জেনেছি। হে সালমান , তুমি কি আমার বারোজন সর্দারকে চেনো , যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার পরে ইমাম হিসাবে নির্বাচন করেছেন ?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন।

হে সালমান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্রতম আদি নূর থেকে এবং আমাকে ডাকলেন এবং আমি তাঁর আদেশ মানলাম। এরপর তিনি আলীকে (আ.) আমার নূর থেকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো। আমার নূর ও আলীর নূর থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ফাতিমাহকে (আ.) ; তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো। আমার , আলীর ও ফাতিমাহর (আ.) থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন আল হাসান ও আল হোসেইনকে (আ.)। তিনি তাদের ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে তাঁর পাঁচটি নাম থেকে নাম দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসার যোগ্য) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল আলী (উচ্চ) এবং এ হলো আলী (আ.)(যে উচ্চ স্থানীয়) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল ফাতির (যিনি শূন্য থেকে সৃষ্টি করেন) এবং এ হলো ফাতিমাহ (আ.) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন তিনি যার কাছে আছে হাসান (অন্যের জন্য কল্যাণ) এবং এ হলো হাসান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন মুহাসসিন (পরম সুন্দর) এবং এ হলো হোসেইন। তিনি নয়জন ইমামকে সৃষ্টি করলেন আল হোসেইন (আ.)-এর নূর থেকে এবং তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা উঁচু আকাশ , বিস্তৃত পৃথিবী , বাতাস , ফেরেশতা ও মানুষ সৃষ্টি করার আগেই আমরা ছিলাম নূর যারা তাঁর প্রশংসা করতো , তাঁর কথা শুনতো এবং তাঁকে মেনে চলতো।

ইয়া রাসূলুল্লাহ , আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক , ঐ ব্যক্তির জন্য কী আছে যে এ ব্যক্তিদের , সেভাবে স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ?

হে সালমান , যে-ই তাদের স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত এবং তাদের উদাহরণ অনুসরণ করে , তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে এবং তাদের শত্রুদের কাছ থেকে মুক্ত থাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শপথ , সে আমাদের একজন। সে সেখানে ফেরত আসবে যেখানে আমরা ফেরত আসবো এবং সে সেখানে থাকবে যেখানে আমরা আছি।

ইয়া রাসূলুল্লাহ , তাদের নাম ও বংশধারা না জানা থাকলে কি বিশ্বাস আছে ?

না , সালমান।

হে আল্লাহর রাসূল , আমি তাদের কোথায় পাবো ?

তুমি ইতিমধ্যেই আল হোসেইনকে (আ.) জানো , এরপর আসবে ইবাদাতকারীদের সর্দার আলী ইবনুল হোসেইন (যায়নুল আবেদীন) (আ.) ; এরপর তার পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ.) - পূর্বের ও পরের নবী ও রাসূলদের জ্ঞান বিদীর্ণকারী (আল বাক্বির) ; এরপর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , আল্লাহর সত্যবাদী জিহবা (আল সাদিক্ব) ; এরপর মূসা ইবনে জাফর , (আ.) যে আল্লাহর জন্য ধৈর্যের মাধ্যমে তার রাগকে নিশ্চুপ রেখেছে (আল কাযিম) ; এরপর আলী ইবনে মূসা , (আ.) যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গোপন বিষয়ে সন্তুষ্ট আছে (আল রিদা) ; এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির মাঝ থেকে নির্বাচিত জন (আল মুখতার) ; এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ , যে আল্লাহর দিকে পথ প্রদর্শক (আল হাদী) ; এরপর আল হাসান ইবনে আলী (আ.) , যে নিশ্চুপ- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গোপন বিষয়ের আমানতদার (আল আসকারি) ; এরপর মিম হা মিম দাল (মুহাম্মাদ) , যাকে ডাকা হয় ইবনে আল হাসান (আ.)- যে ঘোষক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে।

সালমান বলেনঃ আমি কাঁদলাম , এরপরে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ আমার জীবন তাদের সময় পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হোক।

তিনি বললেনঃ হে সালমান , এটি তেলাওয়াত করোঃ

) ف َإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ وَكَانَ وَعْدًا مَّفْعُولًا ﴿٥﴾ ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ الْكَرَّةَ عَلَيْهِمْ وَأَمْدَدْنَاكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَجَعَلْنَاكُمْ أَكْثَرَ نَفِيرًا(

‘‘ যখন দু টি প্রতিশ্রুতির প্রথমটি এলো , আমি তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠালাম আমার শক্তিশালী যোদ্ধা বান্দাহদের , আর তারা বাড়িগুলোর ভিতর পর্যন্ত প্রবেশ করলো এবং তা ছিলো একটি প্রতিশ্রুতি , বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য। এরপর আমরা তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করলাম এবং তোমাদেরকে সম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে একটি বড় সংখ্যার দলে পরিণত করলাম।’’ (সূরা বনী ইসরাইলঃ ৫,৬ )

সালমান বললেনঃ আমি অনেক কাঁদলাম , এবং আমার আকাঙ্ক্ষা প্রচন্ড হয়ে দাঁড়ালো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ , এটি কি আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি ?

হ্যাঁ , তাঁর শপথ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন ; এটি একটি প্রতিশ্রুতি আমার , আলীর , ফাতিমাহর , আল হাসান , আল হোসেইন এবং আল হোসেইনের বংশ থেকে নয়জন ইমামদের কাছ থেকে তোমার জন্য এবং তাদের জন্য যারা আমাদের সাথে আছে এবং যাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে। যে তার বিশ্বাসে সত্যিকারভাবে আন্তরিক , তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শপথ সালমান , ইবলিস ও তার বাহিনীগুলো আসুক। যার আছে সত্যিকার অবিশ্বাস সে শাস্তি পাবে প্রত্যাঘাত ও নির্যাতন এবং উত্তরাধীকার-এর (অন্যদের দ্বারা) মাধ্যমে। তোমার রব কারো উপরে যুলুম করবেন না। আমাদের কথা এই আয়াতে বলা হয়েছে।

) و َنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ ﴿٥﴾ وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ(

‘‘ আমরা চাইলাম তাদেরকে নেয়ামত দিতে যাদেরকে পৃথিবীতে দূর্বল ভাবা হতো এবং তাদেরকে নেতা বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে এবং তাদেরকে যমীনে ক্ষমতা দিতে এবং ফেরাউন , হামান এবং তাদের বাহিনীগুলোকে দেখাতে যা থেকে তারা ভয় পেতো।’’ (সূরা কাসাসঃ ৫,৬ )

সালমান বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম সম্পূর্ণ ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে কীভাবে সালমান মৃত্যুর সাথে দেখা করবে অথবা কীভাবে মৃত্যু তার সাথে দেখা করবে।’’

পরিচ্ছেদ-৮

সাহাবীদের স্বীকৃতি দান

ইয়াক্বিন (নিশ্চিত জ্ঞান) পরিত্যাগ করো না সন্দেহের বদলে এবং যা স্পষ্ট তাও নয় গোপনের বদলে। কোন মন্তব্য করো না সে বিষয়ে যা তুমি দেখতে পাও না সে সম্পর্কে তোমাকে বলার কারণে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঘৃণা করেন তোমার ভাই সম্পর্কে অপবাদ ও খারাপ ধারণাকে। তাহলে তিনি কী ভাবেন সেই দুঃসাহস সম্পর্কে যা-রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীদের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ , মিথ্যা বিশ্বাস অথবা মিথ্যা কথা আরোপ করে ?।

তিনি বলেছেনঃ

) إ ِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم مَّا لَيْسَ لَكُم بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِندَ اللَّـهِ عَظِيمٌ(

‘‘ যখন তোমরা একে স্বাগত জানিয়েছো তোমাদের জিহবা দিয়ে এবং মুখে বলেছো যার বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান ছিলো না এবং তোমরা একে একটি সহজ বিষয় ভেবেছো অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিলো অত্যন্ত ঘৃণ্য।’’ (সূরা নূরঃ ১৫)

যতক্ষণ তুমি লোকদের সম্পর্কে ভালো কথা বলার এবং কাজ করার সুযোগ পাও তারা ভালো হোক বা না হোক তাহলে আর কিছু করো না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا(

‘‘ লোকদেরকে ভালো কথা বলো।’’ (সূরা বাকারাঃ ৮৩)

জেনে রাখো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর রাসূলের (সা.) জন্য সাহাবীদের নির্বাচন করেছেন , তাদেরকে সবচেয়ে সম্মানিত করেছেন এবং তাদেরকে সমর্থন , বিজয় ও কাঙ্ক্ষিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে তার সাথে সঠিক সাহচর্যের পোষাক পরিয়েছিলেন। তিনি তার রাসূল (সা.)-এর জীহবা দিয়ে তাদের মর্যাদা , উন্নত গুণাবলী এবং সম্মানের কথা প্রকাশ করেছেন ; তাই বিশ্বাস করো তাদের ভালোবাসায় , উল্লেখ করো তাদের উচ্চ সম্মান এবং বেদাত সৃষ্টিকারী লোকদের সাহচর্য থেকে সাবধান থাকো , কারণ তা অবিশ্বাস ও অন্তরে পরিষ্কার ক্ষতির সৃষ্টি করবে। যদি তাদের কারো কারো মর্যাদার বিষয় তোমার কাছে স্পষ্ট না থাকে তাহলে তা অদৃশ্য সম্পর্কে যার জ্ঞান আছে তাঁর কাছে ছেড়ে দাও এবং বলোঃ‘‘ ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা , আমি , সে ব্যক্তিকে ভালোবাসি যাকে তুমি ও তোমার রাসূল ভালোবাসো এবং আমি তাকে ঘৃণা করি যাকে তুমি ও তোমার রাসূল ঘৃণা কর।’’ এরপরে আর কোন দায়িত্ব নেই।

ভালোর আদেশ করা ও খারাপকে নিষেধ করা

যে ব্যক্তি তার দুঃচিন্তা ছুঁড়ে ফেলে নি , তার নিজের সত্তার খারাপ ও তার ক্ষুধা থেকে পবিত্র হয় নি , শয়তানকে পরাজিত করে নি এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বেলায়েতের অধীনে এবং তাঁর নিরাপত্তার ভেতর প্রবেশ করে নি সে যথাযথভাবে ভালোর আদেশ এবং খারাপকে যথাযথভাবে নিষেধ করতে অক্ষম এবং যেহেতু সে উল্লেখিত গুণাবলী অর্জন করতে পারে নি , সে ভালোর আদেশ ও খারাপকে নিষেধ করার জন্য যে পদক্ষেপই গ্রহণ করুক তা তার বিরুদ্ধেই যাবে এবং জনগণ তা থেকে কোন উপকার লাভ করবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) أ َتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ(

‘‘ কী ? তোমরা কি জনগণকে ভালো হওয়ার আদেশ দাও এবং নিজেদের সত্তাকে অবহেলা কর অথচ তোমরা কোরআন পড়ছো , তোমরা কি বুঝ না ?’’ (সূরা বাকারাঃ 44)

যে তা করে তাকে ডেকে বলা হয়ঃ‘‘ হে বিশ্বাসঘাতক , তুমি কি আমার সৃষ্টি থেকে তা দাবী কর যা তুমি নিজে প্রত্যাখ্যান করেছো এবং নিজের উপর লাগামকে (এই বিষয়ে) ঢিল দিয়েছো ?’’

বর্ণিত আছে যে আলাবা আল আসাদি রাসূলুল্লাহকে (সা.) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেঃ

) ي َا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ(

‘‘ হে যারা বিশ্বাস কর , নিজেদের সত্তার যত্ন নাও ; যে ভুল করে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না যখন তোমরা সঠিক পথে আছো।’’ (সূরা মায়িদাঃ 105)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ ভালোর আদেশ দাও এবং খারাপকে নিষেধ করো এবং যে ক্ষতি তোমাদের স্পর্শ করে তা সহ্য কর , ঐ সময় পর্যন্ত যখন তোমরা দেখতে পাও নীচতাকে মেনে চলা হচ্ছে , আবেগকে অনুসরণ করা হচ্ছে এবং যখন প্রত্যেকেই তার নিজের মতামতকে বড় করে দেখবে , তখন তোমরা শুধু নিজেদের বিষয়ে মনোযোগ দাও এবং সাধারণ জনগণের বিষয়গুলো উপেক্ষা করে যাও।’’

যে ব্যক্তি ভালোর আদেশ দেয় তার জানা দরকার কী অনুমোদিত এবং কী নিষিদ্ধ ; অবশ্যই সে যেন সে বিষয়ে নিজের পছন্দ-অপছন্দ থেকে মুক্ত থাকে যখন সে ভালোর আদেশ দেয় , জনগনকে ভালো উপদেশ দেয় , যেন তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হয় এবং তাদের নরমভাবে ও পরিষ্কারভাবে আহবান করে এবং সেইসাথে তাদের বিভিন্ন চরিত্র সম্পর্কেও খেয়াল রাখে , যেন সে প্রত্যেককে তার যথাযথ স্থানে রাখতে পারে।

তাকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে নফসের চালাকি এবং শয়তানের ফাঁদ-এর দিকে। তাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে যদি কোন বিপদ আপদ আসে এবং যে বিষয়ে সে তাদেরকে উপদেশ দেয় সে বিষয়ে অবশ্যই সে জনগণের কাছ থেকে তার কোন প্রতিদান নিবে না , না তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে। সে অবশ্যই আক্রমণাত্মক ও আবেগপূর্ণ হবে না। সে নিজের জন্য রাগান্বিত হবে না। সে অবশ্যই নিজের নিয়তকে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য স্থির করবে এবং তাঁর সাহায্য চাইবে এবং তাকেই চাইবে। কিন্তু যদি জনগণ তার বিরোধিতা করে এবং তার প্রতি কর্কশ আচরণ করে তাহলে তাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে এবং যদি তারা তার সাথে একমত হয় এবং তার মতকে গ্রহণ করে , তাহলে তাকে অবশ্যই কৃতজ্ঞ হতে হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে , তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে এবং সে নিজের ত্রুটিগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে।

পরিচ্ছেদ-3

কীভাবে জ্ঞানী ব্যক্তিরা ধ্বংস হয়

তাক্বওয়া (সতর্কতা) এবং ভয় হলো জ্ঞানের উত্তরাধিকার এবং এর পরিমাপ। জ্ঞান হচ্ছে আধ্যাত্মিকতার রশ্মি এবং ঈমান -এর হৃদয় । যে তাক্বওয়া (সতর্কতা) উপেক্ষা করেছে সে জ্ঞানী ব্যক্তি নয় , এমনও যদি হয় সে জ্ঞানের অস্পষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) إ ِنَّمَا يَخْشَى اللَّـهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ(

‘‘ তাঁর দাসদের মাঝে একমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই আল্লাহকে ভয় পায়।’’ ( সূরা ফাতিরঃ 28)

জ্ঞানী ব্যক্তিরা আটটি জিনিসে ধ্বংস হয়ঃ লোভ এবং কৃপণতা , লোক দেখানো (রিয়া) এবং স্বজনপ্রীতি , প্রশংসার প্রতি ভালোবাসা , সে বিষয়ের ভিতরে সন্ধান করা যার বাস্তবতায় তারা পৌঁছাতে অক্ষম , অতিরঞ্জিত প্রকাশভঙ্গি দিয়ে বক্তব্যকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে বিনয়ের অভাব , আত্মম্ভরিতা এবং যা জানে সে অনুযায়ী কাজ না করা।

ঈসা (আ.) বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণ্য হলো ঐ ব্যক্তি যে তার জ্ঞানের জন্য প্রসিদ্ধ , তার কাজের জন্য নয়।’’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ কোন বেয়াদব আহবানকারীর সাথে বসো না যে তোমাকে আহবান করে নিশ্চিত জ্ঞান থেকে সন্দেহের দিকে , আন্তরিকতা থেকে লোক দেখানোর দিকে , বিনয় থেকে অহংকারের দিকে , সৎ উপদেশ থেকে শত্রুতার দিকে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ থেকে আকাঙ্ক্ষার দিকে। তার কাছে যাও যে জ্ঞানী , যে তোমাকে আহবান করে অহংকার থেকে বিনয়ের দিকে , লোক দেখানো থেকে আন্তরিকতার দিকে , সন্দেহ থেকে নিশ্চিত জ্ঞানের দিকে , আকাঙ্ক্ষা থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের দিকে , শত্রুতা থেকে সৎ উপদেশ-এর দিকে।’’ কোন ব্যক্তিই সৃষ্টির কাছে উপদেশ দেয়ার যোগ্যতা রাখে না শুধু সে ছাড়া যে এ খারাপ জিনিসগুলোকে পিছনে ফেলতে পেরেছে তার সত্যবাদিতার মাধ্যমে। সে বক্তৃতার ত্রুটিগুলো দেখতে পায় এবং জানে কী সঠিক ও কী সঠিক নয় এবং চিন্তার ক্রটিসমূহ এবং নফসের লালসা ও আকাঙ্ক্ষাগুলো সম্পর্কে জানে।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ‘‘ দয়ালু ও স্নেহশীল চিকিৎসকের মত হও যে ওষুধ নিবার্চন করে যা উপকারী হবে।’’ তারা ঈসাকে (আ.) জিজ্ঞেস করলোঃ‘‘ কার সাথে আমরা বসবো , হে রুহুল্লাহ ?’’

তিনি বললেনঃ‘‘ তার সাথে যার চেহারা তোমাকে আল্লাহর কথা মনে করায় এবং যার কথা তোমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং যার কাজ তোমাকে আখেরাতকে পেতে উৎসাহিত করে।’’

নিজেকে পাহারা দেয়া ( রিয়াইয়াহ )

যে তার হৃদয়কে কোন কিছু না শোনার প্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে , নফসকে ক্ষুধা থেকে রক্ষা করে এবং অজ্ঞতার বিরুদ্ধে বুদ্ধিকে রক্ষা করে তাকে মুত্তাকীদের দলে প্রবেশ করানো হবে। এরপর যে তার জ্ঞানকে কল্পনাবিলাস থেকে রক্ষা করবে এবং সম্পদকে হারাম থেকে , তাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞান সন্ধান করা বাধ্যতামূলক।’’ আর তাহলো নিজ সত্তা সম্পর্কে জ্ঞান। অতএব সত্তার জন্য প্রয়োজন যে সে প্রত্যেক অবস্থায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে অথবা কৃতজ্ঞতার অভাব স্বীকার করে ক্ষমা চাইবে। যদি তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে তা হবে তার উপরে একটি নেয়ামত এবং যদি না হয় তাহলে তা হবে তার প্রতি (আল্লাহর) ন্যায়বিচার। প্রত্যেক সত্তার জন্য কাজ করা প্রয়োজন যেন তা আনুগত্যের কাজগুলোতে সফলতা লাভ করে এবং ক্ষতিকর কাজ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টাকে রক্ষা করে চলে।

এসবের ভিত্তি হচ্ছে সব প্রয়োজন ও নির্ভরতা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপরে তা বুঝতে পারা এবং তাক্বওয়া ও আনুগত্য। এর চাবি হচ্ছে তোমার বিষয়গুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ছেড়ে দেয়া , সব সময় মৃত্যুকে স্মরণ করে পাওয়ার আশাকে কেটে ফেলা এবং সর্ব-বাধ্যকারী আল্লাহর সামনে তুমি দাঁড়িয়ে আছো তা ভাবা। এটি তোমাকে বিশ্রাম দিবে বন্দীত্ব থেকে , উদ্ধার করবে শত্রু থেকে এবং সত্তাকে শান্তি দিবে । ইখলাস অর্জনের পথ হচ্ছে সুশৃংখল আনুগত্য এবং তার মূল নির্ভর করে জীবনকে একটি দিন -এর মত বিবেচনা করাতে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ এই পৃথিবীর জীবন এক ঘন্টার মত , তাই একে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্যে ব্যয় করো।’’ এ সবকিছুর দিকে দরজা হচ্ছে সর্বক্ষণ গভীর ভাবনার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। এ গুটিয়ে নেয়ার উপায় হচ্ছে সন্তুষ্টি এবং এমন সব পার্থিব বিষয় পরিত্যাগ করা যা তোমার সাথে সম্পর্কিত নয়। গভীর ভাবনার পথ হলো শূন্যতা (আকাঙ্ক্ষাবিহীনতা) এবং শূন্যতার খুঁটি হচ্ছে নফসকে বিরত রাখা বিরত থাকার পূর্ণতা হলো তাক্বওয়া (সতর্কতা) এবং তাক্বওয়ার দিকের দরজা হলো ভয়। ভয়-এর প্রমাণ হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হামদ ও তাসবীহ করা , আন্তরিকতার সাথে তার আদেশ মেনে চলাতে লেগে থাকা , ভয় ও সতর্কতা , এবং নিষিদ্ধ জিনিস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা ; আর এই পথের পথপ্রদর্শক হচ্ছে জ্ঞান।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) إ ِنَّمَا يَخْشَى اللَّـهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ(

‘‘ তাঁর দাসদের মধ্যে তারাই আল্লাহকে ভয় করে যারা জ্ঞানী।’’ (সূরা ফাতিরঃ 28)

কৃতজ্ঞতা

প্রত্যেক শ্বাস নেয়ার সাথে তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত , নিশ্চয়ই হাজার ধন্যবাদ অথবা তারও বেশী। কৃতজ্ঞতার সবচেয়ে নিচের স্তর হচ্ছে রহমত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে আসছে তা দেখতে পাওয়া , তার কারণ যাই হোক না কেন এবং সে কারণের সাথে হৃদয় যুক্ত না থাকা। এতে আছে-যা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা ; এর অর্থ হচ্ছে তাঁর দেয়া নেয়ামতের বিষয়ে তার অবাধ্য না হওয়া অথবা তাঁর আদেশ ও নিষেধগুলোর বিরোধিতা না করা-তাঁর দান করা নেয়ামতের কারণে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একজন কৃতজ্ঞ দাস হও সবদিক থেকে , তাহলে তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সবদিক থেকে উদার রব হিসাবে দেখতে পাবে। যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মুখলেস দাসদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাতে প্রত্যেক অবস্থায় ধন্যবাদ জানানোর চাইতে কোন উত্তম পথ থাকতো তাহলে তিনি ঐ ইবাদাতকে অন্য সব সৃষ্টির উপরে নাম দিতেন। যেহেতু এর চাইতে উত্তম কোন ইবাদাত নেই তাই তিনি সব ইবাদাতের মধ্যে এ ইবাদাতকে বাছাই করেছেন এবং যারা এ ধরনের ইবাদাত করে তাদেরকে বাছাই করেছেন এই বলেঃ

) و َقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ(

‘‘ আমার দাসদের মধ্যে খুব অল্প ক জনই কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী।’’ (সূরা সাবাঃ 13)

পূর্ণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার হলো সবচেয়ে কম কৃতজ্ঞতা প্রকাশে তোমার অক্ষমতা নিয়ে দুঃখ করা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রশংসা আন্তরিকভাবে করার মাধ্যমে তা প্রকাশ করা। কারণ ধন্যবাদ দেয়াটাও বান্দাহর উপর আল্লাহর একটি দান এবং এর জন্যও সে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবে। পূর্ববর্তী নেয়ামতের চাইতেও এটি বেশী মূল্যবান , যা তাকে প্রথম অবস্থায় ধন্যবাদ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। তাই , যত বার একজন ধন্যবাদ দেয় তার জন্য উচ্চতর ধন্যবাদ দেয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায় এবং এভাবে তা চলবে অনন্তকাল পর্যন্ত , আর এভাবে সে তাঁর নেয়ামতে ডুবে থেকে কৃতজ্ঞতার সর্বোচ্চ অবস্থা অর্জনে অক্ষম হয়ে যায়। কারণ কীভাবে বান্দাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নেয়ামতের সমান কৃতজ্ঞতা জানাবে এবং কীভাবে সে আল্লাহর কাজের সাথে নিজের কাজ সমান করবে যখন সবসময়ই বান্দাহ হলো দূর্বল এবং তার কোন রকম শক্তি নেই শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে ছাড়া ?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাঁর বান্দাহদের কাছ থেকে আনুগত্যের প্রয়োজন নেই , কারণ চিরকালের জন্য নেয়ামত বৃদ্ধি করে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। অতএব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একজন কৃতজ্ঞ বান্দাহ হও এবং এভাবে তুমি আশ্চর্যজনক জিনিসগুলো দেখতে পাবে।

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়

যখন তুমি তোমার বাড়ি থেকে বের হও , তা এমনভাবে হও যেন তুমি আর ফেরত আসবে না। বের হও শুধু আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য অথবা ঈমানের জন্য। তোমার আচার-আচরণে প্রশান্ত অবস্থা ও মর্যাদা বজায় রাখো এবং আল্লাহকে স্মরণ করো গোপনে ও প্রকাশ্যে।

আবু যার-এর সাথীদের একজন আবু যার-এর পরিবারের একজনকে জিজ্ঞেস করলো সে কোথায়। সে নারী বললোঃ‘‘ তিনি বাইরে গেছেন।’’

যখন ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো কখন আবু যার ফিরবেন , ঐ নারী বললোঃ‘‘ কখন তিনি ফিরবেন তা আরেকজনের উপর নির্ভর করে , কারণ তার নিজের কোন ক্ষমতা নেই।’’ আল্লাহর ধার্মিক ও পথভ্রষ্ট বান্দাহদের কাছ থেকে শিখো , যেখানেই তুমি যাও। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে বলো তোমাকে তাঁর মুখলেস ও সত্যবাদী বান্দাহদের মাঝে স্থান দিতে এবং যারা চলে গেছে তাদের সাথে যুক্ত করতে এবং তাদের সাথে জড়ো করতে। তাঁর প্রশংসা করো এবং ধন্যবাদ দাও সে কারণে যেসব ক্ষুধা থেকে তিনি তোমাকে সরিয়ে রেখেছেন এবং অন্যায়কারীদের কুৎসিৎ কাজ থেকে তোমাকে তিনি রক্ষা করেছেন বলে। তোমার দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখো অশ্লীল কামনা ও নিষিদ্ধ জিনিস থেকে এবং তোমার ভ্রমণে সঠিক পথ অনুসরণ করো। সতর্ক দৃষ্টি রাখো , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করো প্রত্যেক পদক্ষেপে , যেন তুমি পুলসিরাত পার হচ্ছো। মনযোগ হারিয়ো না। তাঁর লোকদেরকে সালাম বলো- প্রথমে সালাম দিয়ে এবং উত্তর দিয়ে। তাদের সাহায্য করো যারা সৎকাজের জন্য তা চায় , তাদের পথ দেখাও যারা পথ হারিয়ে ফেলেছে এবং মূর্খদের উপেক্ষা করো।

যখন তুমি বাড়িতে ফেরত আসো-এতে প্রবেশ করো যেভাবে একটি লাশ কবরে প্রবেশ করে , যার একমাত্র চিন্তা হলো আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করা।

কোরআন তেলাওয়াতের বিষয়ে

যে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং নিজেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে বিনয়ী করে না , যার অন্তর নরম হয় না , অনুতপ্ত হয় না এবং তাঁর ভিতরে ভয় জাগে না , সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিষয়ের বিরাটত্বকে যথাযথ মূল্য দেয় না এবং সে স্পষ্টভাবে ক্ষতির মধ্যে আছে।

যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করবে তার তিনটি জিনিস প্রয়োজনঃ একটি ভীতিপূর্ণ অন্তর , প্রশান্ত ও গ্রহণে আগ্রহী শরীর এবং একটি যথাযথ তেলাওয়াতের স্থান।

যখন তার অন্তর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করে তখন অভিশপ্ত শয়তান তার কাছ থেকে পালায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

) ف َإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ(

‘‘ যখন তুমি কোরআন পড় , আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও অভিশপ্ত শয়তান থেকে।’’ (সূরা নাহলঃ 98)

যখন সে সব ধরনের সংযুক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করে তখন তার অন্তর তেলাওয়াতে মগ্ন হয় এবং কোরআনের নূর ও এর উপকারিতা লাভে তাকে কোন কিছু বাধাগ্রস্থ করে না। যখন সে একটি নির্জন জায়গা পায় এবং মানুষজন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় দু টি গুণাবলী নিয়ে- অন্তরের বিনয় এবং শারীরিক প্রশান্তি , তখন তার আত্মা এবং তার বাতেনী সত্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে মিলন অনুভব করবে , এবং সে আবিষ্কার করবে ,সেই মিষ্টি স্বাদ যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার সৎকর্মশীল বান্দাহর সাথে কথা বলেন , কীভাবে তিনি তাদের সাথে তাঁর নম্রতা প্রকাশ করেন এবং তাদেরকে বাছাই করেন তাঁর বিভিন্ন সম্মানজনক চিহ্ন ও আশ্চর্যজনক নিদর্শনের জন্য। যদি সে সেই শরবতের এক পেয়ালা পান করে সে কখনোই আর এই অবস্থা ও এই মুহুর্তটির চেয়ে অন্য কিছুকে বেশী চাইবে না । সে এটিকে প্রত্যেক আনুগত্য ও মগ্নতার উপরে স্থান দিবে যেহেতু তাতে রয়েছে রবের সাথে কথপোকথন-কোন মাধ্যম ছাড়াই।

তাই সাবধান হও কীভাবে তুমি তোমার রবের কিতাব পড় , যিনি তোমার অভিভাবক , যাকে তুমি চাও , কীভাবে তুমি তাঁর আদেশে সাড়া দাও এবং তাঁর নিষেধগুলো এড়িয়ে চল এবং কীভাবে তুমি তাঁর সীমানা মেনে চল , কারণ তা এক মহাক্ষমতাবান কিতাবঃ

) ل َّا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ(

‘‘ মিথ্যা-এর মাঝে প্রবেশ করবে না সামনে থেকে অথবা পিছন থেকে , তা নাযিল হয়েছে প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসিত-এর কাছ থেকে।’’ (সূরা হা-মীম আস-সাজদাহঃ 42)

অতএব তা তেলাওয়াত করো ধারাবাহিকভাবে এবং গভীর ভাবনার সাথে এবং তার প্রতিশ্রুতি ও হুমকির সীমানা মেনে চলো। এর উদাহরণ ও সতর্কবানীর উপর গভীরভাবে ভাবো। সতর্ক থাকো শুধু এর অক্ষরগুলোর তেলাওয়াতকে অযাচিত মর্যাদা দেয়া থেকে এবং একই সময়ে এর ভেতরে থাকা আইনগত সীমানা মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়া থেকে।

পরিচ্ছেদ-4

পোষাক

বিশ্বাসীর পোষাকের শ্রেষ্ঠ অলংকার হচ্ছে তাক্বওয়া (সতর্কতা) এবং সবচেয়ে বেশী রহমতপ্রাপ্ত পোষাক হচ্ছে ঈমান। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ(

‘‘ এবং যে পোষাক পাহারা দেয় (অন্যায়ের বিরুদ্ধে) ; তা সর্বোত্তম।’’ (সূরা আরাফঃ 26)

বাইরের পোষাক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে একটি নেয়ামত যা আদমের সন্তানদের ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য দেয়া হয়েছে ; এটি সম্মানের একটি চিহ্ন যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আদমের বংশধরদের দিয়েছেন। তিনি এ সম্মান অন্য কোন প্রাণীকে দেন নি। এটি বিশ্বাসীদের দেয়া হয়েছে তাদের দায়িত্ব পালনের একটি মাধ্যম হিসাবে। তোমার শ্রেষ্ঠ পোষাকগুলো হচ্ছে সেগুলো যা তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয় না , যে পোষাকগুলো প্রকৃতপক্ষে তোমাকে আল্লাহর স্মরণ এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা এবং আনুগত্যের কাছে আনে। যেগুলো তোমাকে পরিচালিত করে না অহংকার , ধোঁকা , কপটতা , গর্ব অথবা দাম্ভিকতার দিকে ; কারণ এগুলো ধ্বংসকারী দুর্যোগ এবং এসবের পরিণতি হচ্ছে হৃদয়ের কাঠিন্য।

যখন তুমি তোমার পোষাক পরবে তখন স্মরণ করো যে আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে তোমার ভুল কাজগুলো ঢেকে দেন। তোমার উচিত তোমার ভিতরের অংশকে ঢেকে দেয়া যেভাবে তুমি তোমার পোষাক দিয়ে বাইরের অংশকে ঢেকে দিচ্ছো। তোমার ভিতরের সত্য ঢেকে যাক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভয়ে এবং তোমার বাইরের সত্য ঢেকে যাক আনুগত্যে।

আল্লাহর উপচে পড়া নেয়ামতকে স্মরণ রাখো। যেহেতু তিনি শারীরিক অভদ্রতা ঢাকতে পোষাক তৈরীর উপায় উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং দরজা খুলে দিয়েছেন তওবা , অনুতাপ ও সাহায্য প্রার্থনার জন্য , যেন ভিতরের অংশ এবং সেগুলোর ভুল কাজ ও খারাপ চরিত্রকে ঢেকে দিতে পারেন।

অন্যের দোষ প্রকাশ করে দিও না যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার ভিতরে এর চেয়ে খারাপ জিনিস গোপন করেছেন। নিজের ক্রটিগুলো নিয়ে চিন্তা করো এবং সে বিষয় ও পরিস্থিতিগুলো উপেক্ষা করো যা তোমার সাথে সম্পর্কিত নয়। সাবধান থাকো হয়তো তুমি অন্যের কাজ কর্মের বিষয়ে নিজের জীবনকে খরচ করে ফেলবে এবং তোমাকে দানকৃত অপূরণীয় সম্পদ অন্যের সাথে বিনিময় করে ফেলবে এর মাধ্যমে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে। অন্যায় কাজগুলোকে ভুলে যাওয়া আল্লাহর সবচেয়ে বড় শাস্তি আনে এ পৃথিবীতে এবং আখেরাতে তা হয় শাস্তির প্রধান কারণ। যতক্ষণ বান্দাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে মেনে চলায় ব্যস্ত থাকে , নিজের দোষগুলো স্বীকার করে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি ঈমান কমে যাবে এমন জিনিস পরিত্যাগ করে তখন সে ধ্বংস থেকে রক্ষা পায় এবং সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমতের সমূদ্রে নিমজ্জিত হয় এবং প্রজ্ঞা ও স্বচ্ছ জ্ঞানের মুক্তা ও উপকারিতা লাভ করে।

কিন্তু যখন সে ভুলে যায় নিজের অন্যায় কাজগুলো এবং নিজের ক্রটিগুলো সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে এবং তার ক্ষমতা ও শক্তিতে পিছিয়ে পড়ে , সে কখনো সফল হবে না।

লোক দেখানো ( রিয়া )

নিজের কাজকে এমন কাউকে দেখিও না যে না পারে জীবন দিতে আর না পারে মৃত্যু দিতে এবং যে তোমার বোঝা নিতে পারে না। লোক দেখানো হলো একটি গাছ যার ফল হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে অন্য খোদাদের গোপনে শরীক করা এবং এর শিকড় হচ্ছে মোনাফেক্বী। বিচার দিনে মোনাফেক্বকে বলা হবেঃ‘‘ তোমার কাজের পুরস্কার যা তুমি মনে কর তা নাও তাদের কাছ থেকে যাদেরকে তুমি আমার অংশীদার হিসেবে নিয়েছিলে। তাদের কাছে চাও যাদের ইবাদাত তুমি করেছিলে এবং ডেকেছিলে , যাদের কাছ থেকে তুমি আশা করেছিলে এবং যাদেরকে তুমি ভয় করতে। জেনে রাখো তোমার ভিতরের কোন কিছু আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে পারো নাঃ তুমি প্রতারিত হবে তোমাকে দিয়েই।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

) ي ُخَادِعُونَ اللَّـهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ(

‘‘ তারা ধোঁকা দিতে চায় আল্লাহকে ও বিশ্বাসীদের , কিন্তু তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয় এবং তারা তা বুঝে না। (সূরা বাকারাঃ 9)

লোক দেখানো সবচেয়ে বেশী ঘটে যেভাবে মানুষ অন্যের দিকে তাকায় , কথা বলে , খায় , পান করে , কোন জায়গায় আগমন করে , যেভাবে অন্যের সাথে বসে , পোষাক পরে , হাসে এবং যেভাবে তারা নামাজ পড়ে , হজ্ব করে , জিহাদ করে , কোরআন তেলাওয়াত করে এবং যেভাবে সব ধরনের বাহ্যিক ইবাদাত করে। কিন্তু যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আন্তরিক , যে তাঁকে অন্তরে ভয় করে এবং যে নিজেকে সব প্রচেষ্টার পরও পিছিয়ে আছে দেখতে পায় সে এর ফলাফল হিসাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে পাবে তার প্রতি সন্তুষ্ট এবং সে তাদের একজন হবে যারা লোক দেখানো ও মোনাফেক্বী থেকে মুক্ত হওয়ার আশা রাখে , তবে এ শর্তে যে সে ঐ অবস্থায় পথ চলতে থাকে।


3

4

5

6

7

8

9

10

11

12