পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি0%

পথ চলার বাতি লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

পথ চলার বাতি

লেখক: আবু আবদিল্লাহ ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ আস-সাদিক্ব (আ.)
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 11079
ডাউনলোড: 2902

পাঠকের মতামত:

পথ চলার বাতি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 61 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11079 / ডাউনলোড: 2902
সাইজ সাইজ সাইজ
পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

নিয়ত

সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ যার আছে সুস্থ অন্তর , কারণ সুস্থ অন্তর নিষিদ্ধ বিষয়ের চিন্তা থেকে মুক্ত। তা আসে সব বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য তোমার নিয়ত করা থেকে।

) ي َوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ ﴿٨٨﴾ إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّـهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ(

‘‘ সেদিন না সম্পদ না সন্তানাদি কোন কাজে আসবে শুধু সে ছাড়া যে আসবে কদর্যতা মুক্ত অন্তর নিয়ে।’’ (সূরা শুয়ারাঃ 88-89)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ বিশ্বাসীর নিয়ত তার কাজের চাইতে উত্তম।’’ এবং আরো বলেছেনঃ‘‘ কাজ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল , এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছিলো।’’ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহর তাই অবশ্যই খালেস নিয়ত থাকতে হবে প্রত্যেক ক্রিয়া ও স্থিরতার মুহূর্তে। কারণ সে ক্ষেত্রে সে উদাসীন থাকবে না। যারা উপেক্ষাকারী তারা তিরস্কৃত হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছেঃ

) إ ِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا(

‘‘ তারা গবাদিপশুর মত ছাড়া আর কিছু নয় , না তারা পথ থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে।’’ (সূরা ফুরকানঃ 44)

) أ ُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ(

‘‘ এরা হচ্ছে উদাসীন।’’ (সূরা আরাফঃ 179)

নিয়ত আসে অন্তর থেকে জ্ঞানের বিশুদ্ধতা অনুযায়ী। এটি পরিবর্তিত হয় বিশ্বাস পরিবর্তনের সাথে সাথে। বিভিন্ন সময়ে এর শক্তি ও দূর্বলতার তারতম্য হয়। যাদের খালেস নিয়ত রয়েছে তাদের স্বার্থপরতা ও কামনা বাসনা পরাভূত হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাসবীহ করার শক্তি ও তাঁর সামনে বিনয়ের কাছে। সে তার প্রকৃতি , তার ক্ষুধা এবং তার কামনা বাসনার কারণে একটি অসুবিধার মধ্যে আছে তবুও অন্যরা তার কাছে স্বস্তি খুঁজে পায়।

পরিচ্ছেদ-7

যিকর

যে সত্যিকারভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করে সে তাঁকে মেনে চলে। যে ভুলে যায় সে অবাধ্য। আনুগত্য হেদায়েতের চিহ্ন। অবাধ্যতা পথভ্রষ্ঠতার চিহ্ন। এ দুই অবস্থার মূলে রয়েছে যিকর (স্মরণ) এবং ভুলে যাওয়া। তোমার অন্তরকে তোমার জিহবার মনোযোগের কেন্দ্র বানাও যার নড়াচড়া করা উচিত নয় যদি না অন্তর ইঙ্গিত করে ও বুদ্ধি একমত হয় এবং জিহবা বিশ্বাসের সাথে মিল রাখে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানেন তুমি কী লুকাও এবং তুমি কী প্রকাশ কর।

তার মত হও যার আত্মা তার দেহ থেকে ঝরে গেছে অথবা তার মত যে হিসাব দিনের মহাসমাবেশে যোগদান করছে তাঁর প্রতিশ্রুতি ও তাঁর হুমকি এবং তোমার রব তোমার উপরে যে আদেশ ও নিষেধ জারী করেছেন তা পালন করার ব্যাপারে মনোযোগ না হারিয়ে। নিজেকে নিয়ে বিভোর থেকো না বরং তোমার রব তোমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা নিয়ে ব্যস্ত হও। তোমার অন্তরকে দুঃখ ও ভয়ের পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার যিকরকে তোমার জন্য তাঁর মহান স্মরণের অংশ বানাও। তিনি তোমাকে স্মরণে রাখেন কিন্তু তোমাকে তাঁর কোন প্রয়োজন নেই। তুমি তাকে যে স্মরণ কর তাঁর চাইতে তোমাকে তাঁর স্মরণ আরো মহান , আরো আকর্ষণীয় , আরো প্রশংসনীয় এবং আরো সম্পূর্ণ ও আরো প্রাচীন।

তোমাকে তিনি স্মরণ করার কারণে যে জ্ঞান তুমি লাভ কর তা তোমার ভিতরে বিনয় , ভদ্রতা এবং অনুতাপের জন্ম দিবে। পরিণতিতে তা তোমাকে তাঁর উচ্চ মর্যাদা এবং উপচে পড়া পূর্ববর্তী দানসমূহ দেখতে সাহায্য করবে। তা তোমার আনুগত্যকে তোমার চোখেই তুচ্ছ হিসাবে দেখাবে , তাঁর নেয়ামতের কারণে তা যত বড়ই হোক , এবং তুমি তাঁর প্রতি আন্তরিকভাবে আত্মনিয়োগ করবে। কিন্তু তাঁকে তোমার স্মরণ করার বিষয়ে তোমার চেতনা ও সম্মানবোধ তোমাকে লোক দেখানো , অহংকার , মূর্খতা এবং তোমার চরিত্রের রুক্ষতার দিকে ঠেলে দিবে। এর অর্থ হলো (তার প্রতি) তোমার আনুগত্যকে খুব বেশী মর্যাদা দেয়া অথচ তাঁর উপচে পড়া নেয়ামত ও উদারতাকে ভুলে যাওয়া।

এটি তোমাকে তাঁর কাছ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেবে এবং চলে যেতে থাকা দিনগুলোতে তুমি যা অর্জন করবে তা হবে শুধুই একাকীত্ব। দু ধরনের যিকর আছেঃ আন্তরিক যিকর যেখানে অন্তর হয় প্রশান্ত এবং সে যিকর যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর স্মরণকে বিতাড়িত করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আপনার যথাযথ প্রশংসা করাতে আমি ন্যায়বিচার করতে অক্ষম যেভাবে আপনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন।’’ রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করার বিষয়ে কোন সীমানা নির্ধারন করেন নি। যেহেতু তিনি এ সত্য জানতেন যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহ তাঁর যে স্মরণ করে তার চাইতে উত্তম হচ্ছে বান্দাহকে তাঁর স্মরণ। তাই এটি আরো যথাযোগ্য যে যে-ই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরে আসবে সে যেন কোন সীমানা নির্ধারন না করে এবং যে আল্লাহকে স্মরণ করতে চায় তার জানা থাকা উচিত যে যতক্ষণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাহকে তাঁর স্মরণ করাতে সফলতা না দিবেন বান্দাহ তাঁকে স্মরণ করতে অক্ষম হবে।

ক্বারীদের ধ্বংস

যে ব্যক্তি জ্ঞান ছাড়া তেলাওয়াত করে সে হচ্ছে সেই দেউলিয়া লোকের মত যার না আছে সম্পত্তি না আছে সম্পদ ; কারণ জনগণ কাউকে ঘৃণা করে না সহায়-সম্পত্তি না থাকার কারণে , বরং তারা তাকে ঘৃণা করে তার অহংকার-এর কারণে। সে সবসময় সৃষ্টির সাথে ঐ বিষয়ে দ্বন্দ্বে আছে যা তার উপরে বাধ্যতামূলক নয় এবং যে সৃষ্টির সাথে বিরোধিতায় জড়ায় যে বিষয়ে তাকে আদেশ করা হয় নি সে সৃষ্টি প্রক্রিয়া এবং পরম প্রভুত্বের বিরোধিতায় লিপ্ত আছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

) و َمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّـهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُّنِيرٍ(

‘‘ মানুষের মাঝে সে আছে যে আল্লাহর বিষয়ে তর্ক করে কোন জ্ঞান , কোন হেদায়াত এবং আলোদানকারী কোন কিতাব ছাড়াই।’’ (সূরা লুকমানঃ 20)

কেউ সে ব্যক্তির চাইতে কঠোর শাস্তি পাবে না যে জ্ঞানের চাদরের উপর অধিকার দাবী করে অথচ তার কাছে না আছে সত্য , না আছে এর অর্থ। যাইদ ইবনে সাবিত তার ছেলেকে বলেছিলেনঃ‘‘ হে আমার পুত্র , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন তোমার নাম অর্থহীন তেলাওয়াতকারীদের তালিকায় না দেখেন।’’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ এমন একটি সময় আমার উম্মতের কাছে আসবে যখন তেলাওয়াতকারীর নাম শোনা অধ্যয়নের চাইতে উত্তম বিবেচিত হবে এবং অধ্যয়ন বিবেচিত হবে অভিজ্ঞতাসহ কাজ করার চাইতে উত্তম আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মোনাফেক্ব হলো কোরআনের ক্বারীদের মধ্যে।’’

সেখানেই থাকো যেখানে থাকার জন্য তোমার বিশ্বাস তোমাকে পরামর্শ দেয় এবং যেখানে তোমাকে থাকতে আদেশ করা হয়। যতটুকু পারো নিজের ভিতরের অবস্থা অন্যদের কাছে গোপন করো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি তোমার আনুগত্যপূর্ণ কাজগুলোকে এমন বানাও যেমন তোমার আত্মা তোমার দেহের সাথে সম্পর্ক রাখে , যেন সেগুলো হয় তোমার অবস্থার ইঙ্গিত যা তুমি তোমার ও তোমার সৃষ্টিকর্তার মাঝে অর্জন করেছো। তোমার সব বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাহায্য চাও এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করো রাতের শেষে ও দিনের শেষে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) اد ْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ(

‘‘ তোমাদের রবকে ডাকো বিনয়ের সাথে ও গোপনে , নিশ্চয়ই তিনি সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’’ (সূরা আরাফঃ 55)

সীমালংঘন হচ্ছে আমাদের যুগে ক্বারীদের চরিত্রের একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য। তোমার সব বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করো। যেন তুমি কামনা-বাসনার কবলে না পড় এবং নিজেকে ধ্বংস করে না ফেলো।

সত্য যাচাই ও মিথ্যা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভয় করো এবং তুমি যেখানে এবং যে লোকদের মাঝে চাও থাকো। যে সতর্কতা অবলম্বন করে তার জন্য পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নেই। সতর্কতা অবলম্বন সব দলের জন্যই কাম্য। এতে রয়েছে সব কল্যাণ ও প্রজ্ঞা। এটি প্রত্যেক গ্রহণযোগ্য আনুগত্যপূর্ণ কাজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাপ। সতর্কতা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মারেফাতের ঝর্না থেকে বেরিয়ে আসা পানিঃ জ্ঞানের প্রত্যেক শাখা এর প্রয়োজনে রয়েছে। কীভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভয়ে ও তাঁর শক্তির ভয়ে চলৎশক্তি রহিত হয় তা জানার জন্য কোন সত্যায়নের প্রয়োজন নেই। সতর্কতায় বৃদ্ধি ঘটে তাঁর বান্দাহদের গোপন বিষয়গুলোর সাথে তাঁর গোপন করুণার পরিচয় করিয়ে দেয়ার কারণে। আর এটি তা প্রত্যেক সত্যের মূল।

মিথ্যা হলো যা কিছু তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে কেটে দেয়। প্রত্যেক দলই এর সাথে একমত। অতএব মিথ্যা পরিত্যাগ করো তোমার গোপনকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি নিবদ্ধ করো কোন পিছুটান ছাড়াই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ বেদুইনরা সবচেয়ে বেশী সত্য যা বলেছে তা হলো লাবিদের কথা যখন সে বলেছেঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া সবকিছু মিথ্যা এবং প্রত্যেক নেয়ামত অতি অবশ্যই ক্ষণস্থায়ী।

তাই তা আঁকড়ে ধরে থাকো যে বিষয়ে পবিত্র , ধার্মিক এবং সতর্ক ব্যক্তিরা ঐক্যমত আর তা হলো- বিশ্বাসের মূল , ইয়াক্বীনের বাস্তবতা , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি ও আত্মসমর্পন। জনগণের মাঝে মতভেদ ও বিরোধিতার মাঝে প্রবেশ করো না , কারণ তাহলে তোমার জন্য বিভিন্ন বিষয় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বাছাইকৃত উম্মত একমত হয়েছে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এক এবং তাঁর মত কিছু নেই এবং তিনি তাঁর বিচারে ন্যায়পরায়ন , তাই করেন যা তাঁর ইচ্ছা এবং পরিচালনা করেন যা তাঁর সিদ্ধান্ত। তাঁর কোন সৃষ্টিতে কেউ জিজ্ঞেস করে না কেন ? । কোন কিছু ছিলো না এবং কোন কিছু হবেও না যা তাঁর সিদ্ধান্ত ও চাওয়া অনুযায়ী নয়। তাঁর তা করার শক্তি আছে যা তিনি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি ও হুমকিতে সত্যবাদী।

কোরআন হচ্ছে তাঁর কথা এবং এর অস্তিত্ব ছিলো জীবিত সত্তা , স্থান ও সময়ের আগে। জীবিত সত্তাগুলোর সৃষ্টি ও সেগুলোর বিলীন হওয়া তাঁর কাছে সমান। তাদের সৃষ্টি তাঁর জ্ঞানের কোন বৃদ্ধি ঘটায় নি এবং তাদের চলে যাওয়া তাঁর রাজ্যে কোন ঘাটতি আনবে না। তাঁর ক্ষমতা পরম এবং তিনি রাজকীয় , সমস্ত মর্যাদা তাঁর।

যদি কেউ তোমার কাছে কিছু আনে যা এ মৌলিক সত্যের চাইতে কম হয় তাহলে তা গ্রহণ করো না। তোমার ভিতরের সত্তাকে এর দিকে নিবদ্ধ করো , তুমি এর নেয়ামতকে কাছেই দেখতে পাবে , তুমি বিজয়ীদের একজন হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আধ্যাত্মিক জ্ঞান (ইরফান)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর রাসূলকে (সা.) ও তাঁর পরিবারকে তাঁর লুৎফ (গোপন দয়া) , উদারতা এবং রহমত এর ভান্ডার থেকে দান করেছেন। তিনি সেগুলোকে শিক্ষা দিয়েছেন তাঁর জ্ঞান ভান্ডার থেকে এবং সমস্ত সৃষ্টির মাঝ থেকে তাদেরকে নিজের জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। পুরো সৃষ্টিজগত থেকে কেউ একজনও তাদের অবস্থা ও চরিত্রের অধিকারী নয় , কারণ তিনি তাদেরকে বানিয়েছেন সমস্ত সৃষ্ট প্রাণীদের জন্য তাঁর কাছে আসার মাধ্যম। তিনি তাদের আনুগত্য ও তাদের প্রতি ভালোবাসাকে তাঁর সন্তুষ্টির কারণ এবং তাদের বিরোধিতা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করাকে তাঁর ক্রোধের কারণ বানিয়েছেন। তিনি সব মানুষ ও দলকে আদেশ দিয়েছেন তাদের রাসূলকে অনুসরণ করার জন্য , তাদের মাধ্যমে আনুগত্য ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমের আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য , তাদের প্রশংসা করার জন্য এবং তাদের আদেশ করেছেন তাদের প্রতি ভালোবাসা , শ্রদ্ধা , ভক্তি , সম্মান প্রদর্শন ও তাদের কাছে আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে তাদের উচ্চ মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য।

অতএব সবাই আল্লাহর রাসূলের (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) প্রশংসা করো এবং তাদেরকে তাদের চাইতে নীচে কোন ব্যক্তির সমান মর্যাদা দিয়ো না। তাদের মাক্বাম , আস্থা ও চরিত্র সম্পর্কে তোমার বুদ্ধি খাঁটিয়ো না যদি না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে তা পরিষ্কার তথ্য হয় এবং যাদের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে তাদের ঐক্যমত হয় সে প্রমাণসমূহের উপরে যেগুলো তাদের মূল্য ও মর্যাদার সাক্ষ্য দেয়। কীভাবে তুমি সেই বাস্তবতা বুঝতে পারবে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে তারা পেয়েছে ? যদি তুমি তাদের কথা এবং কাজকে তাদের চাইতে নীচে কোন ব্যক্তির সাথে তুলনা কর তাহলে তুমি তাদের খারাপ সাথী হবে , এবং তুমি অজ্ঞতার কারণে তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে ও তারা যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কতৃক বিশেষভাবে বাছাইকৃত তা অস্বীকার করবে এবং তুমি বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের স্তর থেকে নীচে পড়ে যাবে। তাই সতর্ক হও এবং আবারও সতর্ক হও।

ইমামদেরকে (আ.) স্বীকৃতি দান

সালমান আল ফারসী থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ‘‘ আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে উপস্থিত হলাম , তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ হে সালমান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন নবী অথবা রাসূলকে পাঠান না যদি না তার সাথে বারোজন সর্দার থাকে। ইয়া রাসূলুল্লাহ , আমি তা দুই কিতাব-এর লোকদের কাছ থেকে জেনেছি। হে সালমান , তুমি কি আমার বারোজন সর্দারকে চেনো , যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার পরে ইমাম হিসাবে নির্বাচন করেছেন ?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন।

হে সালমান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্রতম আদি নূর থেকে এবং আমাকে ডাকলেন এবং আমি তাঁর আদেশ মানলাম। এরপর তিনি আলীকে (আ.) আমার নূর থেকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো। আমার নূর ও আলীর নূর থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ফাতিমাহকে (আ.) ; তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো। আমার , আলীর ও ফাতিমাহর (আ.) থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন আল হাসান ও আল হোসেইনকে (আ.)। তিনি তাদের ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে তাঁর পাঁচটি নাম থেকে নাম দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসার যোগ্য) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল আলী (উচ্চ) এবং এ হলো আলী (আ.)(যে উচ্চ স্থানীয়) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল ফাতির (যিনি শূন্য থেকে সৃষ্টি করেন) এবং এ হলো ফাতিমাহ (আ.) , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন তিনি যার কাছে আছে হাসান (অন্যের জন্য কল্যাণ) এবং এ হলো হাসান , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হলেন মুহাসসিন (পরম সুন্দর) এবং এ হলো হোসেইন। তিনি নয়জন ইমামকে সৃষ্টি করলেন আল হোসেইন (আ.)-এর নূর থেকে এবং তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা উঁচু আকাশ , বিস্তৃত পৃথিবী , বাতাস , ফেরেশতা ও মানুষ সৃষ্টি করার আগেই আমরা ছিলাম নূর যারা তাঁর প্রশংসা করতো , তাঁর কথা শুনতো এবং তাঁকে মেনে চলতো।

ইয়া রাসূলুল্লাহ , আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক , ঐ ব্যক্তির জন্য কী আছে যে এ ব্যক্তিদের , সেভাবে স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ?

হে সালমান , যে-ই তাদের স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত এবং তাদের উদাহরণ অনুসরণ করে , তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে এবং তাদের শত্রুদের কাছ থেকে মুক্ত থাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শপথ , সে আমাদের একজন। সে সেখানে ফেরত আসবে যেখানে আমরা ফেরত আসবো এবং সে সেখানে থাকবে যেখানে আমরা আছি।

ইয়া রাসূলুল্লাহ , তাদের নাম ও বংশধারা না জানা থাকলে কি বিশ্বাস আছে ?

না , সালমান।

হে আল্লাহর রাসূল , আমি তাদের কোথায় পাবো ?

তুমি ইতিমধ্যেই আল হোসেইনকে (আ.) জানো , এরপর আসবে ইবাদাতকারীদের সর্দার আলী ইবনুল হোসেইন (যায়নুল আবেদীন) (আ.) ; এরপর তার পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ.) - পূর্বের ও পরের নবী ও রাসূলদের জ্ঞান বিদীর্ণকারী (আল বাক্বির) ; এরপর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , আল্লাহর সত্যবাদী জিহবা (আল সাদিক্ব) ; এরপর মূসা ইবনে জাফর , (আ.) যে আল্লাহর জন্য ধৈর্যের মাধ্যমে তার রাগকে নিশ্চুপ রেখেছে (আল কাযিম) ; এরপর আলী ইবনে মূসা , (আ.) যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গোপন বিষয়ে সন্তুষ্ট আছে (আল রিদা) ; এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির মাঝ থেকে নির্বাচিত জন (আল মুখতার) ; এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ , যে আল্লাহর দিকে পথ প্রদর্শক (আল হাদী) ; এরপর আল হাসান ইবনে আলী (আ.) , যে নিশ্চুপ- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গোপন বিষয়ের আমানতদার (আল আসকারি) ; এরপর মিম হা মিম দাল (মুহাম্মাদ) , যাকে ডাকা হয় ইবনে আল হাসান (আ.)- যে ঘোষক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে।

সালমান বলেনঃ আমি কাঁদলাম , এরপরে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ আমার জীবন তাদের সময় পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হোক।

তিনি বললেনঃ হে সালমান , এটি তেলাওয়াত করোঃ

) ف َإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ وَكَانَ وَعْدًا مَّفْعُولًا ﴿٥﴾ ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ الْكَرَّةَ عَلَيْهِمْ وَأَمْدَدْنَاكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَجَعَلْنَاكُمْ أَكْثَرَ نَفِيرًا(

‘‘ যখন দু টি প্রতিশ্রুতির প্রথমটি এলো , আমি তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠালাম আমার শক্তিশালী যোদ্ধা বান্দাহদের , আর তারা বাড়িগুলোর ভিতর পর্যন্ত প্রবেশ করলো এবং তা ছিলো একটি প্রতিশ্রুতি , বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য। এরপর আমরা তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করলাম এবং তোমাদেরকে সম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে একটি বড় সংখ্যার দলে পরিণত করলাম।’’ (সূরা বনী ইসরাইলঃ 5,6 )

সালমান বললেনঃ আমি অনেক কাঁদলাম , এবং আমার আকাঙ্ক্ষা প্রচন্ড হয়ে দাঁড়ালো। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ , এটি কি আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি ?

হ্যাঁ , তাঁর শপথ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন ; এটি একটি প্রতিশ্রুতি আমার , আলীর , ফাতিমাহর , আল হাসান , আল হোসেইন এবং আল হোসেইনের বংশ থেকে নয়জন ইমামদের কাছ থেকে তোমার জন্য এবং তাদের জন্য যারা আমাদের সাথে আছে এবং যাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে। যে তার বিশ্বাসে সত্যিকারভাবে আন্তরিক , তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শপথ সালমান , ইবলিস ও তার বাহিনীগুলো আসুক। যার আছে সত্যিকার অবিশ্বাস সে শাস্তি পাবে প্রত্যাঘাত ও নির্যাতন এবং উত্তরাধীকার-এর (অন্যদের দ্বারা) মাধ্যমে। তোমার রব কারো উপরে যুলুম করবেন না। আমাদের কথা এই আয়াতে বলা হয়েছে।

) و َنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ ﴿٥﴾ وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ(

‘‘ আমরা চাইলাম তাদেরকে নেয়ামত দিতে যাদেরকে পৃথিবীতে দূর্বল ভাবা হতো এবং তাদেরকে নেতা বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে এবং তাদেরকে যমীনে ক্ষমতা দিতে এবং ফেরাউন , হামান এবং তাদের বাহিনীগুলোকে দেখাতে যা থেকে তারা ভয় পেতো।’’ (সূরা কাসাসঃ 5,6 )

সালমান বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম সম্পূর্ণ ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে কীভাবে সালমান মৃত্যুর সাথে দেখা করবে অথবা কীভাবে মৃত্যু তার সাথে দেখা করবে।’’

পরিচ্ছেদ-8

সাহাবীদের স্বীকৃতি দান

ইয়াক্বিন (নিশ্চিত জ্ঞান) পরিত্যাগ করো না সন্দেহের বদলে এবং যা স্পষ্ট তাও নয় গোপনের বদলে। কোন মন্তব্য করো না সে বিষয়ে যা তুমি দেখতে পাও না সে সম্পর্কে তোমাকে বলার কারণে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঘৃণা করেন তোমার ভাই সম্পর্কে অপবাদ ও খারাপ ধারণাকে। তাহলে তিনি কী ভাবেন সেই দুঃসাহস সম্পর্কে যা-রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীদের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ , মিথ্যা বিশ্বাস অথবা মিথ্যা কথা আরোপ করে ?।

তিনি বলেছেনঃ

) إ ِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم مَّا لَيْسَ لَكُم بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِندَ اللَّـهِ عَظِيمٌ(

‘‘ যখন তোমরা একে স্বাগত জানিয়েছো তোমাদের জিহবা দিয়ে এবং মুখে বলেছো যার বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান ছিলো না এবং তোমরা একে একটি সহজ বিষয় ভেবেছো অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিলো অত্যন্ত ঘৃণ্য।’’ (সূরা নূরঃ 15)

যতক্ষণ তুমি লোকদের সম্পর্কে ভালো কথা বলার এবং কাজ করার সুযোগ পাও তারা ভালো হোক বা না হোক তাহলে আর কিছু করো না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا(

‘‘ লোকদেরকে ভালো কথা বলো।’’ (সূরা বাকারাঃ 83)

জেনে রাখো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর রাসূলের (সা.) জন্য সাহাবীদের নির্বাচন করেছেন , তাদেরকে সবচেয়ে সম্মানিত করেছেন এবং তাদেরকে সমর্থন , বিজয় ও কাঙ্ক্ষিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে তার সাথে সঠিক সাহচর্যের পোষাক পরিয়েছিলেন। তিনি তার রাসূল (সা.)-এর জীহবা দিয়ে তাদের মর্যাদা , উন্নত গুণাবলী এবং সম্মানের কথা প্রকাশ করেছেন ; তাই বিশ্বাস করো তাদের ভালোবাসায় , উল্লেখ করো তাদের উচ্চ সম্মান এবং বেদাত সৃষ্টিকারী লোকদের সাহচর্য থেকে সাবধান থাকো , কারণ তা অবিশ্বাস ও অন্তরে পরিষ্কার ক্ষতির সৃষ্টি করবে। যদি তাদের কারো কারো মর্যাদার বিষয় তোমার কাছে স্পষ্ট না থাকে তাহলে তা অদৃশ্য সম্পর্কে যার জ্ঞান আছে তাঁর কাছে ছেড়ে দাও এবং বলোঃ‘‘ ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা , আমি , সে ব্যক্তিকে ভালোবাসি যাকে তুমি ও তোমার রাসূল ভালোবাসো এবং আমি তাকে ঘৃণা করি যাকে তুমি ও তোমার রাসূল ঘৃণা কর।’’ এরপরে আর কোন দায়িত্ব নেই।