পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি0%

পথ চলার বাতি লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

পথ চলার বাতি

লেখক: আবু আবদিল্লাহ ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ আস-সাদিক্ব (আ.)
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 11083
ডাউনলোড: 2902

পাঠকের মতামত:

পথ চলার বাতি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 61 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11083 / ডাউনলোড: 2902
সাইজ সাইজ সাইজ
পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

বিশ্বাসীদের সম্মান ও মর্যাদা

কেউ বিশ্বাসীদের সম্মান রক্ষা করে না সে ছাড়া যে বিশ্বাসীদের উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পবিত্র দাবীকে সম্মান করে। সেই ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রাসূলের পবিত্র দাবীকে সম্মান করে যে ব্যক্তি বিশ্বাসীদের সম্মানের দাবীকে রক্ষা করে , বিশেষ যত্নবান থাকে। যে ব্যক্তি বিশ্বাসীদের সম্মানকে ছোট করে দেখে সে তার বিশ্বাসের পোষাককে ছিঁড়ে ফেলেছে।

রাসূল (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আল্লাহর প্রতি সম্মান দেখানোর একটি অংশ হচ্ছে যারা বিশ্বাসে আললাহর নিকটবর্তী তাদের প্রতি সম্মান দেখানো’’ এবং আরো বলেছেনঃ‘‘ যে ব্যক্তি কম বয়সীদের প্রতি ক্ষমাশীল নয় এবং বয়স্কদের প্রতি সম্মান দেখায় না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কোন মুসলমানকে কাফের বলো না যখন তওবা তা পূরণ করতে পারে , যদি না সে সেই ব্যক্তি হয় যার কথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন।’’

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) إ ِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ(

‘‘ মুনাফেক্বরা আগুনের সর্বনিম্নস্তরে আছে।’’ (সূরা নিসাঃ 145)

নিজেকে তোমার বিষয়ে ব্যস্ত রাখো যে বিষয়ে তোমাকে প্রশ্ন করা হবে।

পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন

পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ববোধ আসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্পর্কে বান্দাহর সঠিক জ্ঞান থেকে , যেহেতু অন্য কোন ইবাদাত নেই যা ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে দ্রুত আনবে বিশ্বাসী পিতা-মাতার প্রতি আল্লাহর জন্য দায়িত্ব পালনের চাইতে। তা এজন্য যে পিতা-মাতার অধিকার এসেছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অধিকার থেকে , যদি তারা উভয়ে ঈমান ও সূন্নাহর উপরে থাকে এবং সন্তানকে তাদের আনুগত্যের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্য করাতে বাধা না দেয় অথবা তাকে সরিয়ে না দেয় নিশ্চিত জ্ঞান থেকে সন্দেহে , বিরত থাকা হতে পৃথিবীর আশা আকাঙ্ক্ষা গুলোর দিকে অথবা তাকে আহবান করে সেদিকে যা ঈমান ও সূন্নাহর বিরোধী। যদি পরিস্থিতি এরকম হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হলো আনুগত্য এবং তাদের আনুগত্য হলো বিদ্রোহ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ(

‘‘ যদি তারা তোমার সাথে তর্ক করে যেন তুমি আমার সাথে শরীক কর যার কোন জ্ঞান তোমার নেই , তাদেরকে মেনো না। তাদের সাথে এ পৃথিবীতে দয়াপূর্ণ সাহযর্চ রাখো , এবং তার পথ অনুসরণ করো যে আমার দিকে ফিরে , এরপরে আমার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন’’ (সূরা লুকমানঃ 15)

তাদের সাথে সাহচর্যের বিষয়ে তাদের পাশে থাকো এবং তাদের প্রতি নম্র হও। তাদের বোঝা বহন করো যেভাবে তারা তোমার বোঝা বহন করেছে যখন তুমি শিশু ছিলে এবং তাদেরকে দেয়া থেকে বিরত থেকো না যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমাকে প্রচুর দিয়েছেন , খাবার ও পোষাকের বিষয়ে। তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং তাদের কণ্ঠস্বরের উপর তোমার কণ্ঠস্বর উঁচু করো না। তাদের সম্মান করা আল্লাহর একটি আদেশ ; তাদের সাথে সবচেয়ে ভালোভাবে কথা বলো এবং তাদের প্রতি দয়ালু হও। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের পুরস্কার নষ্ট হতে দেবেন না যারা ভালো কাজ করে।

পরিচ্ছেদ-9

বিনয়

বিনয় প্রত্যেক মর্যাদাপূর্ণ আসন ও উচ্চ স্থানকে জড়িয়ে ধরে। যদি বিনয়-এর কোন ভাষা থাকতো যা মানুষ বুঝতে পারতো তাহলে তা বিভিন্ন বিষয়ের ফলাফলের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতা সম্পর্কে বলতো। বিনয় হলো যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পথে করা হয়। এছাড়া আর যা আছে সব প্রতারণা। যে ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি বিনয়ী , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে তাঁর অনেক বান্দাহর উপরে স্থান দিবেন। বিনয়সম্পন্ন লোকদের চেনার মত অনেক নিদর্শন রয়েছে। যখন তাদের একজনকে বিনয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো সে বললোঃ এর অর্থ তুমি সত্যের প্রতি বিনয়ী হও এবং তা অনুসরণ কর , যদি তা তুমি কোন শিশুর কাছ থেকেও শোন।’’ অনেক ধরনের অহংকার জ্ঞানকে ব্যবহার , গ্রহণ ও অনুসরণ করাতে বাধা দেয়। এ সম্পর্কে কিছু আয়াত আছে যেখানে দাম্ভিকদের নিন্দা করা হয়েছে। বিনয়সম্পন্ন লোকদের নিদর্শন রয়েছে যা আকাশের ফেরেশতারা ও পৃথিবীর ইরফানি (আধ্যাত্মিক) ব্যক্তিরা দেখে চিনতে পারে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َعَلَى الْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّا بِسِيمَاهُمْ(

‘‘ সবচেয়ে উঁচু স্থানগুলোতে থাকবে ঐসব মানুষেরা যারা সবাইকে জানবে তাদের চিহ্ন দেখে।’’ (সূরা আরাফঃ 46)

এবং অন্য জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) م َن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّـهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ(

‘‘ যে কেউ তোমাদের মধ্য থেকে তার বিশ্বাস থেকে ঘুরে যায় , তাহলে আল্লাহ এক গোষ্ঠিকে আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসেন এবং তারা তাঁকে ভালোবাসে , বিশ্বাসীদের প্রতি বিনয়ী এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠিন।’’ (সূরা মায়িদাঃ 54)

) إ ِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ(

‘‘ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সতর্ক (মুত্তাক্বী)। ’’ (সূরা হুজুরাতঃ 13)

) ف َلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ(

‘‘ তোমাদের নিজেদের আত্মাকে পবিত্র বলো না।’’ (সূরা নাজমঃ 32)

বিনয়ের মূল আসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মহাসম্মান , ভয় এবং বিরাটত্ব অনুভব করা থেকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন ইবাদাতে সন্তুষ্ট নন এবং তা গ্রহণ করেন না যদি না তা বিনয়ের সাথে আসে। বিনয়ের সত্যিকার অর্থ কেউ জানে না শুধু তারা ছাড়া যারা তাঁর নিকটবর্তী ও তাঁর একত্বের সাথে যুক্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َعِبَادُ الرَّحْمَـٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا(

‘‘ দয়ালু খোদার বান্দাহ হলো তারা যারা যমীনে হাঁটে বিনয়ের সাথে এবং যখন মুর্খরা তাদেরকে সম্বোধন করে তারা বলেঃ সালাম।’’ (সূরা ফুরকানঃ 63)

তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিধর এবং এর জনগণের অভিভাবক মুহাম্মাদকে বিনয়ী হতে বলেছেন এই বলেঃ

) و َاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ(

‘‘ বিশ্বাসীদের প্রতি বিনম্র হও।’’ (সূরা হিজরঃ 88)

বিনয় থেকে জন্ম নেয় আত্মসমর্পণ , নম্রতা , ভয় ও ভদ্রতা ; এ গুণগুলো শুধু বিনয়ের ভেতর থেকেই প্রকাশ পায়। সত্যিকার ও পরিপূর্ণ মর্যাদা শুধু তাদেরকেই দেয়া হয় যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পরম সত্তার প্রতি বিনীত।

মুর্খতা

মুর্খতা হলো একটি আকার যার গঠন প্রকৃতি পৃথিবীর গঠন প্রকৃতির মত। যখন তা সামনে এগিয়ে যায় তখন অন্ধকার দেখা দেয় এবং যখন তা পিছনে সরে আসে তখন আলো দেখা দেয়। আল্লাহর বান্দাহ-র সাথে একবার এদিক আরেকবার ওদিক করে , যেভাবে সূর্যের সাথে সাথে ছায়া একবার এদিক একবার ওদিক করে। তুমি কি মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখ নি ? কোন কোন সময় তুমি দেখো যে , সে নিজের গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ এবং সেগুলোর প্রশংসা করছে অথচ একই সময়ে সে অন্যের ভেতরে এগুলোর ভুল বের করছে এবং সেগুলোর সমালোচনা করছে। অন্য সময়ে দেখতে পাও যে , কোন ব্যক্তি তার নিজের প্রকৃতি জানে এবং এর সমালোচনা করছে এবং অন্যের ভেতরে এগুলোকে প্রশংসা করছে। সে নিরাপত্তা ও হতাশার ভিতর দুলে। যদি সে সততা ও নিরাপত্তা পায় সে ঠিক থাকে। আর যদি সে সাহয্যের অভাব দেখে এবং তাকে ছেড়ে যাওয়া হয় তাহলে সে ভুল করে। মুর্খতার চাবি হচ্ছে নিজ জ্ঞানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং এর উপরে পূর্ণ আস্থা রাখা। জ্ঞানের চাবি হচ্ছে এক স্তরের জ্ঞানের সাথে উচ্চতর স্তরের জ্ঞান বিনিময় করা ঐশী অনুগ্রহ ও পথ নির্দেশসহ। একজন মুর্খ ব্যক্তির সর্বনিম্ন গুণ হচ্ছে সে জ্ঞানের দাবী করে যা সে পাওয়ার যোগ্য নয়। তার সবচেয়ে সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার অজ্ঞতা সম্পর্কে তার অজ্ঞতা এবং তার মুর্খতার চরম দিকটি হলো সে জ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করে। সব মুর্খ লোক একই ধরনের।

খাদ্য গ্রহণ

অল্প খাবার সব মানুষের জন্যই সব ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় , কারণ তা বাইরের ও ভেতরের সত্তার জন্য কল্যাণকর। খাওয়া তখন প্রশংসনীয় যখন তা করা হয় প্রয়োজনের কারণে , রিযক্ব-এর একটি মাধ্যম হিসাবে , যখন প্রচুর আছে অথবা পুষ্টির জন্য। প্রয়োজনে খাওয়া হলো বিশুদ্ধদের জন্য। খাওয়া একটি মাধ্যম ও মুত্তাক্বীদের জন্য রিযক্ব হলো সাহায্য। প্রচুর আছে এমন সময়ে খাওয়া হলো তাদের জন্য যারা আস্থা (তাওয়াক্কুল) রাখে এবং পুষ্টির জন্য খাওয়া হলো বিশ্বাসীদের জন্য।

বিশ্বাসীদের অন্তরের জন্য প্রচুর খাওয়ার চাইতে আর কোন কিছু ক্ষতিকর নেই , কারণ তা দু টো জিনিস ঘটায় অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং কামনা বাসনার উত্থান ঘটায়। ক্ষুধা বিশ্বাসীদের জন্য স্বাদ বৃদ্ধিকারী , রুহের পুষ্টি , অন্তরের জন্য খাবার এবং দেহের জন্য স্বাস্থ্য। রাসূল (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আদমের সন্তান তার পেটের চাইতে খারাপ কোন পাতিল ভরে না।’’

দাউদ (আ.) বলেছেনঃ‘‘ এক লোকমা খাবার যা আমার প্রয়োজন তা রেখে দেয়া বিশ রাত জেগে থাকার চেয়ে আমার কাছে বেশী পছন্দনীয়।’’

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ বিশ্বাসী খায় একটি পাকস্থলী ভরার জন্য এবং মোনাফেক্ব খায় সাতটি (পাকস্থলী) ভরার জন্য।’’ এবং অন্য জায়গায় বলেছেনঃ‘‘ দুর্ভোগ সে লোকদের জন্য যার দু জায়গায় ফুলে- যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো সেগুলো কী ? তিনি বলেছেনঃ‘‘ পাকস্থলী ও যৌনাঙ্গ।’’ ঈসা (আ.) বলেছেনঃ‘‘ অন্তর-এর জন্য কাঠিন্যের চাইতে খারাপ রোগ আর নেই এবং কোন আত্মা আর কোন কারণে বেশী দুর্বল হয়ে যায় নি যা ক্ষুধার অভাবে ঘটেছে , এ দু টো হলো বহিষ্কৃত হওয়া ও হতাশ হওয়ার দু চালক।’’

শয়তানী কুমন্ত্রণা ( ওয়াসওয়াসা )

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহদের উপর শয়তান নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে যখন তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ পরিত্যাগ করে , দাম্ভিক হয়ে যায় এবং তাঁর হারামের সম্মুখীন হলে নির্বিকার থাকে এবং ভুলে যায় যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের গোপন বিষয়গুলো দেখছেন।

কুমন্ত্রণা আসে অন্তরের বাইরে থেকে বুদ্ধির পরোক্ষ অনুমতিক্রমে এবং একে টিকিয়ে রাখে মানুষের নিজের প্রকৃতি ; যখন তা অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন ভুল , পথভ্রষ্ঠতা ও অবিশ্বাস দেখা দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাহদের নিঃশব্দে ডেকেছেন এবং তাদেরকে ইবলিস-এর শত্রুতা সম্পর্কে বলেছেনঃ

) إ ِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا(

‘‘ শয়তান তোমাদের শত্রু , তাই তাকে শত্রু হিসাবে নাও।’’ (সূরা ফাতিরঃ 6)

তার সাথে সে ব্যক্তির মত হও যে রাখালের কুকুরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে এবং কুকুর-এর মালিককে তার কাছ থেকে কুকুর সরিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ করছে। বিষয়টি এরকমই যখন শয়তান তোমার কাছে কুমন্ত্রণা দিতে আসে তোমাকে সত্য পথ থেকে সরিয়ে নিতে এবং তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ ভুলিয়ে দিতে।

তখন তার কাছ থেকে আশ্রয় চাও তোমার রব ও তার রবের কাছে। তিনি সত্যকে মিথ্যার বিরুদ্ধে রক্ষা করবেন এবং যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে তাকে সাহায্য করবেন , যেহেতু তিনি বলেনঃ

) إ ِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ(

‘‘ নিশ্চয়ই তার কোন ক্ষমতা নেই তাদের উপর যারা বিশ্বাস করে এবং তাদের রবের উপর নির্ভর করে।’’ (সূরা নাহলঃ 99)

মানুষ তখনই শুধু তা করতে পারবে যখন সে জানে কীভাবে সে আসে এবং জানে তার কুমন্ত্রণার পদ্ধতি কী-সার্বক্ষণিক সতর্কতা , খেদমতে আন্তরিকতা , সর্ব-সচেতন আল্লাহর ভয় ও তাঁর বেশী বেশী স্মরণের মাধ্যমে।

আর যে ব্যক্তি সচেতন প্রহরায় তার সময় ব্যয় করতে অবহেলা করে সন্দেহতীতভাবে সে শয়তানের শিকারে পরিণত হবে। শয়তান ব্যক্তির নফস নিয়ে যা করে তা থেকে তার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিতঃ সে একে পথভ্রষ্টতা , ধোঁকা এবং দাম্ভিকতার দিকে নিয়ে যায় ; ঐ ব্যক্তিকে ধোঁকার মাধ্যমে তার নিজের কাজকর্ম , তার ইবাদাত এবং তার অর্ন্তদৃষ্টিকে তার কাছে প্রশংসনীয় করে তোলে।

তার প্রতি শয়তানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে একটি অভিশাপ নেমে আসে তার জ্ঞান , তার ইরফান (আধ্যাত্মিক জ্ঞান) এবং তার যুক্তিবুদ্ধির ক্ষমতার উপর চিরকালের জন্য। অথচ যারা অবহেলা করে না তাদের উপর তার কোন ক্ষমতা নেই । তাই আল্লাহর দৃঢ়তম দড়ি ধরো , যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং প্রত্যেক শ্বাসের সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পূর্ণ প্রয়োজন অনুভব করা। প্রতারিত হয়ো না যখন শয়তান তোমার আনুগত্যের কাজকর্মগুলোকে তোমার চোখে সুন্দর করে দেখায় ; যদি সে তোমার কাছে কল্যাণের নিরানববইটি দরজা খুলে ধরে তা শুধু এজন্যই যে সে যেন তোমাকে পরাভূত করতে পারে একশতম দরজাটি খুলে ধরে। তাই তার মোকাবিলা করো বিরোধিতার মাধ্যমে , তার পথকে আটকে দাও এবং তার লোভ দেখানোকে প্রত্যাখ্যান করো।

পরিচ্ছেদ-10

গর্ব

গর্ব বিষয়টি অহমিকার সব দিক জড়িয়ে ধরে আছে , এগুলো তাদের মধ্যে পাওয়া যায় যারা তাদের কাজ কর্ম নিয়ে গর্ব করে , তাদের শেষ পরিণতি কী হবে তা সম্পর্কে খুব কমই জেনে। যে-ই নিজেকে নিয়ে গর্ব করে তার কাজ সত্য পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সে তাই দাবী করে যা তার নয়।

কোন ব্যক্তি যদি কোন কিছু দাবী করে যাতে তার অধিকার নেই সে একজন মিথ্যাবাদী , যদি এমনও হয় যে সে দীর্ঘদিন তার দাবী গোপন রাখে। গর্বকারী ব্যক্তির বেলায় যা প্রথমে ঘটে তা হলো তার গর্বের বিষয়টি তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় যেন সে জানতে পারে সে ঘৃণিত এবং অক্ষম ; আর সে নিজের বিরুদ্ধেই নিজে সাক্ষী দিবে এবং তা হবে তার বিরুদ্ধে দৃঢ়তর প্রমাণ। এটি ঘটেছিলো ইবলিসের বেলায়।

গর্ব একটি গাছ যার বীজ হলো অবিশ্বাস , যার মাটি হলো মোনাফেক্বি এবং এর পানি হচ্ছে সীমালংঘন। এর শাখাগুলো হলো অজ্ঞতা , এর পাতাগুলো হলো ভুলপথ এবং এর ফল হলো আগুনে চিরদিন থাকার অভিশাপ। যে গর্ব পছন্দ করলো সে অবিশ্বাসের বীজ বুনলো এবং মোনাফেক্বী চাষ করলো । অবশ্যম্ভাবী যে এটি ফল দিবে এবং শেষ পর্যন্ত সে আগুনের ভেতর পড়বে।

উদারতা

উদারতা হলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রকৃতির একটি অংশ এবং বিশ্বাসের খুঁটি। একজন ব্যক্তি বিশ্বাসী হতে পারে না যদি না সে উদার হয়। অবশ্যই আরো যা থাকতে হবে তা হলো নিশ্চিত বিশ্বাস (ইয়াক্বীন) এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা (হিম্মাহ) , কারণ উদারতা হলো ইয়াক্বীন-এর একটি রশ্মি। প্রচেষ্টা তার জন্য সহজ যে তার উদ্দেশ্য জানে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বন্ধু প্রকৃতিগতভাবেই উদার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে প্রিয় প্রত্যেক ব্যক্তিকে উদারতা দান করা হয়েছে যাদের এ পৃথিবী থেকে সামান্য আছে । উদারতার একটি নিদর্শন হচ্ছে এ পৃথিবীর সম্পদ এবং কে এর মালিক , বিশ্বাসী অথবা অবিশ্বাসী , অনুগত অথবা বিদ্রোহী এবং উচ্চ মর্যাদার বা নিম্ন শ্রেণীর এসব সম্পর্কে আগ্রহের অভাব। উদার ব্যক্তি অন্যদের খাওয়ায় যখন সে নিজে ক্ষুধার্ত থাকে , সে অন্যদের পোষাক দান করে যখন সে নিজে খালি গা থাকে , সে অন্যদের দেয় অথচ সে অন্যদের থেকে উপহার নিতে অস্বীকার করে। সে এর মাধ্যমে উপকৃত হয় এবং তার উদারতার মাধ্যমে সে অন্যদের ঋণী করে না। যদি সে সমস্ত পৃথিবীর মালিক হতো সে নিজেকে এর ভেতরে একজন বিদেশী হিসেবে দেখতো। যদি সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য এক ঘন্টার ভেতর এর পুরোটাই ব্যয় করে ফেলতো তবুও তা তার জন্য আফসোসের কারণ হতো না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ উদার ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তী , জনগণের নিকটবর্তী , জান্নাতের নিকটবর্তী এবং আগুন থেকে অনেক দূরে। অন্যদিকে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে দূরে , জনগণের কাছ থেকে দূরে , জান্নাত থেকে দূরে এবং আগুনের কাছে। একমাত্র ঐ ব্যক্তিকে উদার বলা যায় যে নিজেকে ব্যয় করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জানতে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্যে , যদি এমনও হয় তা একটি রুটি ও পানির মাধ্যমে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেনঃ‘‘ যে ব্যক্তি উদার সে উদার ঐ বিষয়ে যার মালিক সে নিজে এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার চেহারা (পূর্ণ দৃষ্টি) আশা করে। আর যে ব্যক্তি উদার হওয়ার ভান করে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে , সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তি এবং ক্রোধ লাভকারী। সে সব মানুষের মধ্যে নিজের প্রতি সবচেয়ে কৃপণ , তাই অন্যদের প্রতি সে কেমন হবে , যখন সে তার নিজের কামনা বাসনার অনুসরণ করে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশের বিরোধিতা করে ?, যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ(

‘‘ অতি অবশ্যই তারা বহন করবে তাদের নিজেদের বোঝা এবং অন্য বোঝাগুলোও তাদের নিজেদের বোঝার সাথে।’’ (সূরা আনকাবুতঃ 13)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আদমের সন্তান চীৎকার করে বলে ,‘‘ আমার সম্পত্তি! আমার সম্পত্তি! আমার সম্পদ! আমার সম্পদ!’’ হে হতভাগা , কোথায় ছিলে তুমি যখন ছিলো সাম্রাজ্য অথচ তোমার অস্তিত্ব ছিলো না ? তুমি যা খাও ও পান কর অথবা যে পোষাক তুমি পড় ও তা ব্যবহারের মাধ্যমে ছিঁড়ে শেষ কর অথবা যা তুমি দান কর এবং যা তুমি টিকিয়ে রাখ তার চেয়ে বেশী কিছু কি আছে ? হয় তোমাকে এর মাধ্যমে দয়া করা হচ্ছে অথবা তোমাকে এর জন্য শাস্তি দেয়া হবে। অতএব তোমার বুদ্ধি ব্যবহার করো এবং বুঝে নাও যে তোমার জন্য উচিত নয় নিজের সম্পত্তির চাইতে অন্যের সম্পত্তি বেশী ভালোবাসা।

বিশ্বাসীদের আমীর ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ‘‘ তুমি ইতোমধ্যে যা দিয়েছো তা তাদের জন্য নিদিষ্ট ছিলো যারা এখন তার মালিক ; তুমি যা ধরে রেখেছো তা হলো তাদের জন্য যারা এর উত্তরাধিকারী হবে এবং তোমার এখন যা আছে এর উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই শুধু এর কারণে দাম্ভিক হওয়া ছাড়া। কত চেষ্টাইনা তুমি কর এ পৃথিবী পাওয়ার জন্য , কৃতিত্ব দাবী করার জন্য! তুমি কি চাও নিজেকে দরিদ্র করতে এবং অন্যদের ধনী করতে ?’’

নিজের হিসাব নেয়া

যদি কোন ব্যক্তিকে তার নিজের হিসাব নিতে কোন কিছুই বাধ্য না করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে উপস্থিত হওয়ার লজ্জা এবং গোপন বিষয়গুলোর উপর থেকে পর্দা ছিঁড়ে নেয়ার বেইযযতি ছাড়া , তাহলে মানুষ পাহাড়ের চুড়া থেকে নিজেকে নীচে ফেলে দিতো এবং কোন বাড়িতে আশ্রয় নিতো না , সে খেতোও না পানও করতো না এবং ঘুমাতোও না শুধুমাত্র নিজের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন ছাড়া। এরকম আচরণই করে মানুষ প্রত্যেক শ্বাস গ্রহণের সাথে যখন সে কিয়ামত (পুনরুত্থান) দেখতে পায় এর আতংক ও দুঃখ-কষ্টসহ। সে তার অন্তরের ভিতরে সে সময়টিকে দেখতে পায় যখন সর্ব-বাধ্যকারী খোদার সামনে সে দাঁড়াবে এবং যখন সে নিজের হিসাব নেয় তখন সে যেন দেখতে পায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে তাকে ডাকা হয়েছে উপস্থাপনের জন্য এবং তাকে যেন মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَىٰ بِنَا حَاسِبِينَ(

‘‘ যদি সরিষা দানার ওজনেও হয় , তাও আমরা উপস্থিত করবো এবং আমরা হিসাব নেয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ (সূরা আম্বিয়াঃ 47)

ইমামদের একজন (আ.) বলেছেনঃ‘‘ নিজের হিসাব নাও তোমাকে হিসাব দেয়ার জন্য ডাকার আগেই। তোমার কাজকর্মকে তোমার লজ্জা পাওয়ার ভয়ের দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো , তোমার জন্য তা ওজন করার আগেই।’’

আবু যার বলেছেনঃ‘‘ জান্নাতের উল্লেখ হচ্ছে মৃত্যু এবং জাহান্নামের আগুনের উল্লেখ করাতেও তাই। কী আশ্চর্য যে একজন ব্যক্তির সত্তা বাস করে দুটি মৃত্যুর মাঝে।’’

বর্ণিত আছে ইয়াহইয়া (আ.) পুরো রাত ভাবতেন জান্নাত ও জাহান্নাম নিয়ে , এতে তার রাত কাটতো জাগ্রত অবস্থায় এবং তিনি ঘুমাতেন না। এরপর সকাল বেলায় তিনি বলতেনঃ‘‘ হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা , মানুষ কোথায় পালাবে ? কোথায় মানুষ থাকতে পারে ? হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা , মানুষ পালাতে পারে শুধু তোমার কাছে।’’