পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি16%

পথ চলার বাতি লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

পথ চলার বাতি
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 61 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13248 / ডাউনলোড: 4506
সাইজ সাইজ সাইজ
পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

1

কলুষতা

বাইরের সত্তায় কলুষতা আসে ভেতরের কলুষতা থেকে। যদি তুমি তোমার গভীরতম সত্তাকে ঠিক কর তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার বাইরের সত্তাকে ঠিক করে দিবেন ; যদি তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভেতরে ভয় কর তাহলে তিনি জনগণের সামনে তোমার চাদর ছিঁড়বেন না। কিন্তু যে ভিতরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে বাইরে প্রকাশ করে দেবেন।

সবচেয়ে বেশী কলুষতার জন্ম হয় দীর্ঘ আশা , লোভ এবং গর্ব থেকে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে ক্বারুনের ঘটনা বলেছেনঃ

) و َلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّـهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ(

‘‘ পৃথিবীতে ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টির সুযোগ খুঁজো না ; নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না’’ (সূরা কাসাসঃ ৭৭)

অন্য জায়গায় তিনি বলেছেনঃ

) ت ِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ(

‘‘ আখেরাতের বাসস্থান ,আমরা তা তাদেরকেই শুধু দেই যাদের ইচ্ছা নেই এ পৃথিবীতে গর্ব করার এবং ফাসাদ (কলুষতা সৃষ্টি) করার এবং সমাপ্তি ভালো তাদের যারা মুত্তাক্বী (সতর্কতা অবলম্বনকারী)। ’’ (সূরা কাসাসঃ ৮৩)

এ ত্রুটিগুলো আসে তা থেকে যা ক্বারুন করতো ও বিশ্বাস করতো। কলুষতার মূল নিহিত আছে এ পৃথিবীর ভালোবাসায় , এর সম্পদ জমা করায় , নিজের নফসকে অনুসরণ করায় , এর ক্ষুধাকে বৃদ্ধি করায় , প্রশংসা পছন্দ করায় , শয়তানের সাথে একমত হওয়ায় এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করায় ; এ সবগুলো দোষ যুক্ত হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি কোন মনোযোগ না দেয়া পছন্দ করায় এবং তাঁর দানসমূহ ভুলে যাওয়ার সাথে।

অতএব , তোমার উচিত মানুষজনের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া , এ পৃথিবীকে প্রত্যাখ্যান করা , তোমার বিশ্রামের মাঝে বাধা দেয়া , তোমার সাধারণ স্বভাবগুলোর সাথে সম্পর্ক ছেদ করা , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সর্বক্ষণ স্মরণ করার মাধ্যমে দুনিয়ার ক্ষুধাগুলোর উৎসকে গোড়া থেকে কেটে ফেলা এবং তাঁর আনুগত্যকে আঁকড়ে থাকা এবং লোকজনের , ও তোমার কোন সাথীর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং তোমার পরিবার ও আত্মীয়দের শত্রুতা সহ্য করা। যদি তুমি তা কর তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ার দরজা তোমার জন্য খোলা হবে , যেহেতু তোমার প্রতি তাঁর আছে ভালো মনোভাব , ক্ষমা এবং রহমত। এতে তুমি কথা অগ্রাহ্যকারীদের দল পরিত্যাগ করবে এবং শয়তানের হাতে বন্দী থাকা তোমার অন্তরকে মুক্ত করবে। তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দরজায় উপস্থিত হবে তাদের সাথে যারা তাঁর কাছে আসে এবং তুমি এমন এক পথে ভ্রমণ করবে যার উপরে তুমি আশা করতে পারো পরম মর্যাদাবান , পরম সম্মানিত , পরম উদার ও পরম করুণাময়ের কাছে আসার জন্য অনুমতি।

সুস্থতা

যেখানেই তুমি থাকো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সুস্থতা চাও প্রত্যেক অবস্থায় , তোমার বিশ্বাসের জন্য , তোমার অন্তরের জন্য এবং তোমার সর্বশেষ পরিণতির জন্য। যে তা চায় সে সবসময় তা পায় না।

তাহলে কীভাবে কিছু লোক পারে নিজেদেরকে দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি করতে , সুস্থতার উল্টো পথে চলতে এবং এর নীতিগুলোর বিরোধিতা করতে- নিরাপত্তাকে ধ্বংস ও ধ্বংসকে নিরাপত্তা ভেবে ?

প্রত্যেক যুগেই সুস্থতাকে মানুষের কাছ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে , বিশেষ করে এই যুগে , তবুও তা আবার খুঁজে পাওয়া যাবে অন্য মানুষের অপছন্দ এবং এমনকি আঘাত সহ্য করার মাধ্যমে , দুর্যোগের মুখে ধৈর্য্য ধরার মাধ্যমে , মৃত্যুকে হালকা ভাবে নিয়ে , যা কিছু ঘৃণ্য তা থেকে পালিয়ে গিয়ে এবং সামান্য বস্তুগত সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে। যদি তুমি সেরকম না হও তাহলে তোমাকে অবশ্যই নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে। যদি তুমি তা না করতে পারো তাহলে নিরব থাকো , যদিও নিরবতা নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার মত নয়। যদি তুমি নিরব না হতে পারো তাহলে তা বলো যা তোমাকে সাহায্য করবে এবং তোমার ক্ষতি করবে না। কিন্তু তা নিরবতার মত নয় , যদি তুমি তা করার জন্য কোন উপায় না দেখ তাহলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াও , নিজের নফসকে নিয়ে যাও আগে যাও নি এমন এলাকায় , বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য , বিনীত অন্তর ও দৃঢ় দেহ নিয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) إ ِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّـهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا(

‘‘ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের উপর যুলুমকারী , তাদের প্রাণ হরণের সময় ফেরেশতারা বলেঃ তোমরা কী অবস্থায় ছিলে ? তারা বলেঃ আমরা (আমাদের) দেশে দূর্বল ছিলাম তারা বলবেঃ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিলো না যে তোমরা সেখানে হিযরত করতে পারতে .?’’ (সূরা নিসাঃ ৯৭ )

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৎকর্মশীল বান্দাহদের সে চরিত্র গ্রহণ কর।

অস্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সংগ্রাম করো না , এবং পরস্পরবিরোধী বিষয় নিয়েও সন্তুষ্ট থেকো না। যদি কেউ তোমাকে বলে , আমি , বলো তুমি । কোন বিষয়ে জ্ঞানের দাবী করো না , যদি সে বিষয়ে তুমি বিশেষজ্ঞও হও। তোমার গোপন বিষয় শুধু তার কাছেই উম্মুক্ত করো যে তোমার চেয়ে বিশ্বাসে উন্নত। এভাবে তুমি সম্মান পাবে। যদি তুমি এটি কর তাহলে তুমি সুস্থতা পাবে এবং তুমি থাকবে মহান আল্লাহর সাথে অন্য কিছুর সাথে সংযুক্ত না থেকে।

পরিচ্ছেদ-১৪

ইবাদাত

ইবাদাতের রীতিনীতি ও বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো পালনে অধ্যাবসায়ী হও কারণ সেগুলো হচ্ছে উৎস : যে সেগুলো অর্জন করে এবং তা সঠিকভাবে পালন করে সে সবকিছুই পেলো। সবচেয়ে ভালো ইবাদাত হচ্ছে যা নিরাপত্তার কাছাকাছি আসে। এটি সবচেয়ে ক্ষতিমুক্ত এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তা যত ছোটই হোক। যদি তুমি তোমার বাধ্যতামূলক ও অতিরিক্ত (নফল) নামায পড়ে থাকো তাহলে তুমি সত্যিকার ইবাদাতকারী।

বাদশাহর গালিচায় পা রাখার বিষয়ে সাবধান থাকো যদি না তুমি তা কর নিজেকে মর্যাদাশূন্য মনে করে , প্রয়োজন স্বীকার করে , ভয় করে এবং সম্মান দেখিয়ে। তোমার নড়াচড়াকে লোক দেখানো মুক্ত করো এবং তোমার গোপনকে কাঠিন্য মুক্ত করো।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ যে ব্যক্তি নামায পড়ছে সে তার রবের সাথে কথা বিনিময় করছে।’’ তাই লজ্জিত থাকো তাঁর সামনে যিনি তোমার গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন , যিনি তোমার কথাবার্তা শুনছেন এবং তোমার বিবেক যা লুকায় তাও জানেন। সেখানেই উপস্থিত থাকো যেখানে তিনি তোমাকে তা করতে দেখবেন যা তিনি চান তুমি কর এবং দেখবেন তা সম্পাদন করতে যা করার জন্য তিনি তোমাকে ডেকেছেন। যারা আমাদের আগে চলে গেছেন তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছিলেন একটি বাধ্যতামূলক নামায শেষ করার মুহূর্ত থেকে আরেকটি শুরু করার মুহূর্ত পর্যন্ত যেন তারা দু টো নামাযই সম্পাদন করতে পারেন আন্তরিকভাবে ও সঠিকভাবে। মনে হচ্ছে আমাদের সময়ে বাধ্যতামূলক ইবাদাত ছেড়ে দেয়া একটি নৈতিকগুণে পরিণত হয়েছে যা হলো একটি দেহ থাকার মত যার কোন আত্মা নেই।

আলী (আ.) ইবনে আল হোসেইন (আ.) বলেছেনঃ‘‘ আমি আশ্চর্য হই ঐ ব্যক্তিকে নিয়ে যে অতিরিক্ত কিছু চায় অথচ বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পরিত্যাগ করে ; সে তা শুধু এজন্য করে যে তার এ বিষয়ে যথাযথ স্বীকৃতি নেই এবং এর প্রতি তার সম্মানের অভাব রয়েছে। মানুষকে তাঁর আদেশ মানতে প্রস্তুত করাতে এবং তাদের জন্য তা নির্বাচনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইচ্ছাকে সে দেখতে পায় না।

গভীর ভাবনা

এ পৃথিবীর যা অতীত হয়ে গেছে তার উপর গভীরভাবে ভাবো । এর কোন অংশ কি কারো জন্য রয়ে গেছে ? কেউ কি রয়ে গেছে , হোক উচ্চ সম্মানিত অথবা মর্যাদাশূন্য , ধনী অথবা দরিদ্র , বন্ধু অথবা শত্রু ? একইভাবে এখানে এখনও যা ঘটে নি তার সাথে ঘনিষ্ট মিল রয়েছে যা ইতোমধ্যেই অতীত হয়েছে। পানির সাথে পানির যে মিল আছে তার চেয়ে বেশী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ মৃত্যু সতর্ককারী হিসাবে যথেষ্ট , বুদ্ধি পথ প্রদর্শক হিসাবে যথেষ্ট ; তাক্বওয়া (সতর্কতা অবলম্বন) জীবনোপকরণ হিসাবে যথেষ্ট ; ইবাদাত পেশা হিসাবে যথেষ্ট ; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঘনিষ্ট বন্ধু হিসাবে যথেষ্ট ; কোরআন সত্য-মিথ্যা স্পষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।’’ এবং অন্য জায়গায় বলেছেনঃ‘‘ এ পৃথিবীর যা বাকী আছে তা হলো দুঃখ দুর্দশা ও পরীক্ষা। যদি কোন ব্যক্তি রক্ষা পায় তাহলে তা ঘটে শুধু আন্তরিকভাবে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে।’’ নূহ (আ.) বলেছিলেনঃ‘‘ আমি পৃথিবীকে পেয়েছি একটি বাড়ির মত যার দু টো দরজা আছে। আমি এর একটি দিয়ে প্রবেশ করেছি এবং অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছি’’

এরকমই হচ্ছে তার অবস্থা যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রক্ষা করেছেন। তাহলে তার অবস্থা কী যে এ পৃথিবীতে আরাম বোধ করে , এর উপরে নির্ভর করে , একে চাষ করার মাধ্যমে তার জীবনকে নষ্ট করে এবং যে পৃথিবীর চাহিদায় পূর্ণ ?

গভীর ভাবনা ভালো কাজগুলোর আয়না এবং খারাপ কাজগুলোর কাফ্ফারা। এটি অন্তরের আলো এবং অন্যদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যের নিশ্চয়তা দেয় এবং আখেরাতের বাসস্থান লাভের জন্য উত্তম। এটি মানুষকে তার কাজকর্মের ফলাফলকে আগে ভাগেই দেখতে সাহায্য করে এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাত অতুলনীয় হয়ে দাঁড়ায় যখন এ গুণটি সাথে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

‘‘ এক ঘন্টার জন্য গভীর ভাবনা এক বছরের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম।’’

গভীর ভাবনার মাক্বাম শুধু তারাই লাভ করে যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বেছে নিয়েছেন ইরফানি নূর (মারেফাত) এবং তাওহীদের জন্য

বিশ্রাম

বিশ্বাসী শুধু তখনই সত্যিকার বিশ্রাম অর্জন করে যখন সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মোলাক্বাত লাভ করে। যদিও বিশ্রাম এ চারটি জিনিসের মাধ্যমে লাভ করা যেতে পারে নিরবতা যার মাধ্যমে তুমি বুঝতে পারো তোমার অন্তরের অবস্থা এবং তোমার সৃষ্টিকর্তার সাথে তোমার সত্তার সম্পর্ক সম্পর্কে ; নিজেকে গুটিয়ে নেয়া যার মাধ্যমে তুমি যুগের খারাপ বিষয়গুলো থেকে রক্ষা পাবে প্রকাশ্যে ও সত্তার ভেতরে ; ক্ষুধা যা দেহের মাংসের ক্ষুধা ও লোভকে হত্যা করে এবং রাত্রিজাগরণ যা তোমার অন্তরকে আলোকিত করে , তোমার প্রকৃতিকে পবিত্র করে এবং তোমার আত্মাকে পরিষ্কার করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ যদি কোন ব্যক্তি ভোর বেলায় নিজের অন্তরকে পায় প্রশান্ত , শরীরকে সুস্থ্য এবং সেদিনের জন্য খাবার , তা যেন এমন যে সারা পৃথিবী তার জন্য পছন্দ করা হয়েছে।’’ ওয়াহাব ইবনে মুনাবিবহ উপরের এবং নীচের কথাগুলো উদ্ধৃত করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে- যিনি বলেছেনঃ‘‘ হে সন্তুষ্টি সম্মান ও ধন সম্পদ তোমার কাছেই পাওয়া যায়। যে জিতে সে তোমার মাধ্যমেই জিতে।’’

আবু আল-দারদা বলেছেনঃ‘‘ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার জন্য নির্দিষ্ট করেছেন তা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে না , এমনও যদি হয় তা বাতাসের পাখার উপর আছে এবং আবু যার বলেছেনঃ‘‘ যে ব্যক্তি তার রবকে বিশ্বাস করে না তার গোপন বিষয় সবসময় প্রকাশ হয়ে যায় , যদি তা শক্ত পাথরের ভেতরেও বন্দী থাকে।’’ কেউ এর চেয়ে বেশী ক্ষতিতে নেই , এর চেয়ে জঘন্য এবং এর চেয়ে নীচে নেই সে ব্যক্তির চাইতে যে বিশ্বাস করে না যে তার রব তার জন্য নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং তাকে তিনি সৃষ্টি করার আগেই তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দান করেছেন । এর পরেও এই ব্যক্তি নির্ভর করে তার শক্তি , ব্যবস্থাপনা , প্রচেষ্টা এবং সংগ্রামের উপর এবং তার রবের দেয়া সীমানা অতিক্রম করে পথ ও উপায় খোঁজ করতে গিয়ে যার কোন প্রয়োজন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার জন্য রাখেন নি।

পরিচ্ছেদ-১৫

সম্পদের লোভ

সম্পদের লোভে কোন কিছু চেয়ো না ; কারণ তুমি যদি তা উপেক্ষাও কর তা তোমার কাছে আসবেই , যদি তা তোমার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। তখন তুমি তোমার অন্তরে আল্লাহর সাথে আরাম পাবে এবং তা ত্যাগ করার জন্য পাবে প্রশংসা ; কিন্তু তোমাকে অভিযুক্ত করা হবে তা খোঁজায় তাড়াহুড়া করার জন্য এবং তাঁর উপর আস্থা না রাখার জন্য এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না থাকার জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন একটি ছায়ার মত ; যখন তুমি এর পেছনে ছোট , তা তোমাকে ক্লান্ত করে ফেলে এবং একে তুমি কখনোই ধরতে পারো না। যদি তুমি একে ছেড়ে দাও তা তোমার পিছনে লেগে থাকবে সর্বক্ষণ এবং তোমাকে ক্লান্ত হওয়ার জন্য কোন কারণ দেবে না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ সম্পদ-লোভী ব্যক্তি বঞ্চিত ; সে বঞ্চিত থাকা সত্ত্ব্যেও যেখানেই সে থাকুক সে অভিযুক্ত । কারণ সে বঞ্চিত ছাড়া আর কী হবে যখন সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার চুক্তি থেকে পালায় এবং তাঁর কথার বিরোধিতা করেঃ

) الل َّـهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ(

‘‘ আল্লাহ , যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এরপর তোমাদের জীবনোপকরণ দিয়েছেন। এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেন এরপর তোমাদেরকে জীবিত করেন।’’ (সূরা রূমঃ ৪০)

সম্পদ-লোভী ব্যক্তি সাতটি কঠিন সমস্যাপূর্ণ খারাপের মাঝে থাকেঃ চিন্তা যা তার দেহের ক্ষতি করে কিন্তু কোন সাহায্য করে না ; দুঃশ্চিন্তা- যার কোন শেষ নেই ; মানসিক ক্লান্তি যা থেকে সে বিশ্রাম পাবে শুধু মৃত্যুতে , যদিও সে বিশ্রামের সময়ই সবচেয়ে বেশী মানসিক ক্লান্তিতে থাকে ; ভয় যা সে ভয় করে তাকে তার মধ্যেই ফেলে ; দুঃখ- যা তার ভরণপোষণে তার কোন লাভ না এনে সমস্যার সৃষ্টি করে ; হিসাব নিকাশ যা তাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তি থেকে রক্ষা করবে না যদি না তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং শাস্তি যা থেকে কোন পলায়ন অথবা রক্ষা নেই।

যে ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আস্থা রাখে সে সকাল ও সন্ধ্যা তাঁর দেয়া নিরাপত্তা ও সুস্থতার ভেতর কাটায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার যা প্রয়োজন তা তার জন্য দ্রুত এগিয়ে দিয়েছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করেছেন বিভিন্ন জিনিস যা শুধু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানেন।

সম্পদের লোভ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ক্রোধ থেকে প্রবাহিত হয়। যখন বান্দাহ ইয়াক্বীনবিহীন নয় তখন সে সম্পদ লোভী নয়। ইয়াক্বীন হলো ইসলামের যমীন এবং ঈমানের আকাশ।

সত্যবাদিতা

সত্যবাদিতা একটি নূর যা এর পৃথিবীতে বাস্তবে আলো বিকিরণ করেঃ এটি সূর্যের মত , যার বাস্তবতা থেকে সবকিছু আলো খোঁজে , এ বাস্তবতায় কোন হ্রাস পাওয়া ছাড়াই। প্রকৃতপক্ষে একজন সত্যবাদী ব্যক্তি প্রত্যেক মিথ্যাবাদীকে বিশ্বাস করে তার সত্যবাদিতার বাস্তবতার কারণে। এর অর্থ হলো সত্যবাদিতার বিরোধী কোন কিছু-এমনকি যা সত্যবাদিতা নয় তাও এর সাথে একই জায়গায় বাস করতে অনুমোদিত , যা আদমের ক্ষেত্রে ঘটেছিলো- সে ইবলিসকে বিশ্বাস করেছিলো যখন সে মিথ্যা বলেছিলো। ইবলিস মিথ্যা শপথ করেছিলো আর আদমের ভিতরে কোন মিথ্যা কথা ছিলো না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

) ف َنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا(

‘‘ আমরা তার ভিতরে দৃঢ়তা পাই নি।’’ (সূরা ত্বোয়া-হাঃ 115)

কারণ ইবলিস এমন কিছু আবিষ্কার করেছিলো যা আগে জানা ছিলো না , প্রকাশ্যেও এবং গোপনেও। ইবলিসকে হাজির করা হবে তার মিথ্যার সাথে এবং সে কখনোই আদমের সত্যবাদিতা থেকে লাভবান হবে না। অথচ তা থেকে আদম লাভবান হয়েছে , যে ইবলিসের মিথ্যা কথা বিশ্বাস করেছিলো যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সাক্ষ্য দিয়েছেন তার জন্য যখন তিনি বলেছেন যে সে (আদম) অনড় থাকতে পারে নি সে বিষয়ে যা তার আচরণের বিপরীত ছিলো। তা প্রকৃতপক্ষে এটিই বুঝায় যে তার নির্বাচিত হওয়া শয়তানের মিথ্যাতে হারিয়ে যায় নি।

সত্যবাদিতা হচ্ছে সত্যবাদীর বৈশিষ্ট্য। সত্যবাদিতার বাস্তবতা দাবী করে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাহকে পবিত্র করবেন যে রকম তিনি ঈসার (আ.) সত্যবাদিতা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন- যা ঘটবে বিচার দিনে।

তিনি তা ইঙ্গিত করেছেন মুহাম্মাদ (সা.)-এর সম্প্রদায়ের সত্যবাদী লোকদের নির্দোষিতা উল্লেখ করেঃ

) ه َـٰذَا يَوْمُ يَنفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ(

‘‘ আজ সেইদিন যেদিন সত্যবাদীদের জন্য তাদের সত্য লাভ বয়ে আনবে।’’ (সূরা মায়িদাঃ 119)

আমিরুল মুমিনীন বলেছেনঃ‘‘ সত্যবাদীতা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটি তরবারী- তাঁর আকাশে ও পৃথিবীতে ; প্রত্যেক জিনিসকে তা কেটে ফেলে যা তা স্পর্শ করে।’’ তুমি যদি জানতে চাও তুমি সত্যবাদী না মিথ্যাবাদী , তাহলে তুমি সত্যবাদিতা বলতে যা বুঝাও ও এ জন্য তোমার দাবীর সবকিছুর দিকে তাকাও। এরপর এ দুটোকে ওজন করো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে একটি পাল্লাতে , যেন এমন যে তুমি হাশরের দিনে উপস্থিত আছো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

) و َالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ(

‘‘ এবং সে দিনের মাপ হবে নিখুঁত।’’ (সূরা আরাফঃ 8)

তুমি যা বুঝাতে চাও তাতে যদি সাম্য ও যথার্থতা থাকে তাহলে তোমার দাবী সফল এবং তোমার সত্যবাদিতা সত্য যখন জিহবা হৃদয়ের সাথে ভিন্নমত রাখে না এবং না হৃদয় জিহবা-এর সাথে ভিন্নমত রাখে। এ বর্ণনায় সত্যবাদী ব্যক্তি হলো সেই ফেরেশতার মত যে তার আত্মাকে বের করে আনে ; যদি আত্মাকে বের করে আনা না হয় তাহলে সে আর কী করবে ?

ইখলাস (বিশুদ্ধ আন্তরিকতা)

প্রত্যেক সম্মানিত কাজের ভিতরে ইখলাস রয়েছে। এটি একটি মনোভাব যা শুরু হয় গ্রহণ (ক্ববুল হওয়া) দিয়ে এবং শেষ হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি দিয়ে। অতএব যার কাজ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা গ্রহণ করেন এবং যার উপরে তিনি সন্তুষ্ট সে হচ্ছে মুখলেস ব্যক্তি , তার কাজের পরিমাণ খুব কম হওয়া সত্ত্বেও। যার কাজ গৃহীত হয় না সে মুখলেস নয় , তার কাজের পরিমাণ বেশী হওয়া সত্ত্বেও। যেভাবে আমরা দেখি আদম (আ.) ও ইবলিস (তার উপর লানত)-এর মাঝে কী ঘটেছিলো ।

ক্ববুল হওয়ার নিদর্শন হচ্ছে সত্যবাদিতা এবং সঠিকতার উপস্থিতি- যা আশা করা হয় সবকিছু ব্যয় করার পর , প্রত্যেক নড়াচড়া ও স্থিরতায় সঠিক সচেতনতা বজায় রেখে । তার যা আছে তা ধরে রাখতে মুখলেস ব্যক্তির সত্তা নিয়োজিত থাকে এবং তার জীবন ব্যয় হয় তার যা আছে তা গুছিয়ে নিতে এবং জ্ঞান ও কাজ এবং কর্মী ও কর্মের মধ্যে ঐক্য আনতে। যদি সে তা অর্জন করে থাকে তাহলে সে সব অর্জন করেছে এবং যদি সে তা হারায় তাহলে সে সব হারায় ; এবং তা বাস্তবায়িত হয় শিরকহীনতার (তারযিহ) অর্থকে পবিত্র করার মাধ্যমে। যেমন প্রথম ইমাম বলেছেনঃ‘‘ যারা কাজ করে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে তারা ছাড়া যারা ইবাদাত করে ; যারা ইবাদাত করে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে তারা ছাড়া যারা জানে ; যারা জানে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে তারা ছাড়া যারা সত্যবাদী ; যারা সত্যবাদী তারা ধ্বংস হয়ে যাবে তারা ছাড়া যারা মুখলেস (আন্তরিক) ; যারা মুখলেস তারা ধ্বংস হয়ে যাবে তারা ছাড়া যারা মুত্তাক্বী (সতর্ক) ; যারা মুত্তাক্বী তারা ধ্বংস হয়ে যাবে তারা ছাড়া যারা নিশ্চিত (ইয়াক্বীন) হয়েছে ; এবং যারা নিশ্চিত হয়েছে তারা সুমহান চরিত্রের ; যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ(

‘‘ এবং তোমার রবের দাসত্ব করো ঐ পর্যন্ত যখন তোমার ইয়াক্বীন এসে যাবে।’’ (সূরা হিজরঃ 99)

একদম নীচের ইখলাস হলো যখন বান্দাহ নিজের উপর চাপ প্রয়োগ করে যতটুকু তার পক্ষে সম্ভব এবং এরপর সে তার কাজের কোন মূল্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আছে বলে মনে করে না যার কারণে সে তার রবকে তার কাজের পুরস্কার দিতে বলবে তার জ্ঞান অনুযায়ী , কারণ যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে দাসত্বের (উবুদিয়াহ) সব দায়িত্ব পালন করতে বলেন তখন সে তা করতে পারবে না। মুখলেস ব্যক্তির সর্বনিম্ন মাক্বাম হলো এ পৃথিবীতে সব অন্যায় কাজ থেকে নিরাপত্তা এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া এবং পরবর্তী পৃথিবীতে জান্নাত পাওয়া।

পরিচ্ছেদ-5

তাক্বওয়া ( সতর্কতা )

তাক্বওয়ার তিনটি স্তর আছেঃ

1। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপর নির্ভর করে তাক্বওয়া। যার অর্থ হচ্ছে পরস্পরবিরোধী বিষয়গুলো পরিত্যাগ করা এবং সামান্য সন্দেহকেও পরিত্যাগ করা এবং এটিই হচ্ছে তাক্বওয়া যা সর্বোচ্চস্থানীয় ব্যক্তিরা অনুশীলন করে।

2। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিষয়ে তাক্বওয়া। যার অর্থ হচ্ছে সব সন্দেহপূর্ণ বিষয় পরিত্যাগ করা এবং নিষিদ্ধকে (হারাম) সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা , এটি উচ্চ শ্রেণীর লোকদের তাক্বওয়া।

3। আগুন ও শাস্তির বিরুদ্ধে তাক্বওয়া। যার পরিণতিতে হারামকে পরিত্যাগ করা হয়- এটি সাধারণ জনগণের তাক্বওয়া।

তাক্বওয়া হচ্ছে পানির মত যা একটি নদীতে বইছে। তাক্বওয়ার তিনটি স্তর হলো সব রং-এর ও প্রকারের গাছ যা ঐ নদীর তীরে রোপন করা হয়েছে। প্রত্যেক গাছ নদী থেকে পানি শোষণ করে তার মর্ম , ক্ষমতা , তার কোমলতা এবং স্থুলতা অনুযায়ী।

এরপর সেসব গাছ এবং ফল থেকে প্রাণীরা যে উপকারিতা লাভ করে তা তাদের মান ও মূল্য অনুযায়ী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ(

‘‘ খেজুর গাছগুলোর একটি শিকড় এবং (অন্যদের) বিভিন্ন শিকড়- তারা একই পানি থেকে সিক্ত হয় এবং তাদের কিছুকে আমরা অন্যগুলোর চাইতে বেশী ফল দান করি।’’ (সূরা রা দঃ 4)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্যে তাক্বওয়া হচ্ছে গাছগুলোর জন্য পানির মত এবং গাছগুলোর প্রকৃতি এবং তাদের বিভিন্ন রং ও স্বাদের ফলগুলো হচ্ছে বিশ্বাসের মাত্রার মত। যার আছে সর্বোচ্চ মাত্রার বিশ্বাস এবং আত্মায় আছে বিশুদ্ধতম প্রকৃতি তার আছে সর্বোচ্চ তাক্বওয়া। যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী তার ইবাদাত হচ্ছে শুদ্ধতর ও বেশী আন্তরিক এবং যে এরকম সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটতর।

কিন্তু প্রত্যেক ইবাদাত যা তাক্বওয়া ছাড়া অন্য কিছুর উপরে প্রতিষ্ঠিত তার ফলাফল শূন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) أ َفَمَنْ أَسَّسَ بُنْيَانَهُ عَلَىٰ تَقْوَىٰ مِنَ اللَّـهِ وَرِضْوَانٍ خَيْرٌ أَم مَّنْ أَسَّسَ بُنْيَانَهُ عَلَىٰ شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانْهَارَ بِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ(

‘‘ তাই সে কি উত্তম যে তার ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহ ভীতি ও তার সন্তুষ্টির উপরে , নাকি সে যে তার ভিত্তি স্থাপন করেছে এক ভঙ্গুর , ফাপাঁ তীরের উপর , এতে তা তাকে নিয়ে ভেঙ্গে পড়েছে জাহান্নামের আগুনের ভিতর ?’’ (সূরা তওবাঃ 109)

তাক্বওয়ার ব্যাখ্যা হচ্ছে ক্ষতিকর কিছু না থাকা সত্ত্বেও কোন বিষয়ে প্রবেশ না করা শুধু এ ভয়ে যে তাতে এরকম কিছু রয়েছে। বাস্তবে তা হলো বিদ্রোহ ছাড়া আনুগত্য , ভুলে যাওয়া ছাড়া স্মরণ , অজ্ঞতা ছাড়া জ্ঞান এবং তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা গ্রহণ করেন এবং তা প্রত্যাখ্যাত হয় না।

আল্লাহ ভীতি

তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়গুলোর দরজা বন্ধ করে দাও সেসব জিনিসের উপর যা তোমার অন্তরকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে তোমার খারাপ অবস্থান সরিয়ে ফেলো এবং এর পিছনে আনো কেয়ামতের দিনের শোক ও অনুতাপ এবং যত খারাপ কাজ করেছো তার জন্য লজ্জা। একজন সাবধানী ব্যক্তির অবশ্যই তিনটি নীতি থাকতে হবেঃ সে সব মানুষের ত্রুটি উপেক্ষা করবে , সে তাদেরকে অপমান করা থেকে বিরত থাকবে এবং তার উচিত তিরস্কারের পর প্রশংসা করে সাম্য আনা।

আল্লাহ ভীতির ভিত্তি হচ্ছে সর্বক্ষণ নিজের হিসাব নেওয়া। কথায় সত্যবাদী হওয়া ও লেনদেনে বিশুদ্ধ হওয়া , প্রত্যেক সন্দেহপূর্ণ জিনিস ছেড়ে দেয়া , প্রত্যেক ত্রুটি ও সন্দেহ পরিত্যাগ করা , যা তোমার সাথে সম্পর্কিত নয় সেসব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সে দরজাগুলো না খোলা যেগুলো তুমি জানবে না কীভাবে বন্ধ করতে হয়।

তার সাথে বসো না যে তোমার কাছে যা স্পষ্ট তা অস্পষ্ট করে তোলে , তার সাথেও নয় যে বিশ্বাসকে হালকা ভাবে নেয়। সে জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করো না যার জন্য তোমার অন্তরের ক্ষমতা নেই এবং যা তুমি বুঝতে পারবে না- তা যেই বলুক এবং তাকে কেটে দাও যে তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে কেটে দেয়।

সামাজিক মেলামেশা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির সাথে সামাজিক সৌজন্যমূলক সম্পর্ক রাখার সময় তাঁর অবাধ্য হওয়ার মত সব কাজ এড়িয়ে চলা বান্দাহর উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অতিরিক্ত উদারতার চিহ্ন। যে তার গভীরতম সত্তায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আন্তরিক ও বিনয়ী তার বাহ্যিক দিকে ভালো সামাজিক মেলামেশা থাকবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে লোকজনের সাথে মিশো এবং মেলামেশা করো না শুধু পৃথিবীর বিষয়ে তোমার অংশের জন্য , মর্যাদা লাভের জন্য , লোক দেখানোর জন্য অথবা সুখ্যাতির জন্য। শরিয়তের সীমা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ো না সামাজিক মেলামেশার কারণে। যেমনঃ অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা অথবা সুখ্যাতি অর্জনের জন্য , কারণ এগুলো তোমার ক্ষতি পূরণ করবে না এবং তুমি আখেরাত হারাবে কোন ফিরতি সুযোগ ছাড়া। তোমার চেয়ে বয়সে বড়দের সাথে এমন আচরণ করো যেমন করতে তোমার বাবার সাথে এবং তোমার চেয়ে বয়সে ছোটদের সাথে তেমন যেমন করতে তোমার সন্তানের সাথে। তোমার সমবয়সীদের সাথে আচরণ করো যেমন করতে ভাইয়ের সাথে। তুমি নিজে যা নিশ্চিত জানো তা বদল করো না ঐ জিনিসের সাথে যা তুমি অন্যের কাছ থেকে শুনেছো এবং যা তুমি সন্দেহ কর। নম্র হও যখন তুমি সৎকাজের আদেশ কর এবং দয়ালু হও যখন তুমি খারাপকে নিষেধ কর। কখনোই কোন পরিস্থিতিতে ভালো উপদেশ পরিত্যাগ করো না। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا(

‘‘ মানুষের সাথে ভালো কথা বলো’’ (সূরা বাকারাঃ 83)

সেসব জিনিস থেকে নিজেকে কেটে ফেলো যা তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ ভুলিয়ে দেয় , যখন লোভ জাগা তোমাকে তাঁর আনুগত্য থেকে অমনোযোগী করে দেয় কারণ তা আসে শয়তানের বন্ধু ও সাহায্যকারীদের কাছ থেকে। তাদেরকে দেখা যেন তোমাকে সত্যের অনুসরণ থেকে সরিয়ে না দেয়। কারণ তা হবে অবশ্যই এক ভয়ানক ক্ষতি। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।

ঘুম

মনোযোগী লোকের ঘুম ঘুমাও , উপেক্ষাকারীর ঘুম ঘুমিয়ো না , বুঝদারদের মাঝে মনোযোগীরা ঘুমায় শুধু বিশ্রামের জন্য এবং অলসতার কারণে ইচ্ছা করে ঘুমিয়ো না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আমার চোখগুলো ঘুমায় কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।’’ যখন তুমি ঘুমের জন্য শোও এ নিয়ত রাখো যে তুমি ফেরেশতাদের উপর তোমার বোঝা লাঘব করবে এবং নফসকে এর ক্ষুধা থেকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং ঘুমের মাধ্যমে নিজেকে পরীক্ষা করবে ; এ সত্যকে জেনে রাখো যে তুমি অক্ষম ও দূর্বল। তোমার কোন শক্তি নেই তোমার নড়াচড়া ও স্থিরতার উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হুকুম ও পরিমাণ ছাড়া। মনে রেখো ঘুম হচ্ছে মৃত্যুর ভাই। এটিকে ব্যবহার করো মৃত্যুর দিকে পথ প্রদর্শক হিসেবে , কারণ মৃত্যু থেকে জেগে উঠার কোন পথ নেই অথবা ফিরে এসে তোমার কাজকে শুদ্ধ করা নেই যা তুমি হারিয়েছো। যে ব্যক্তি ওয়াজিব ও নফল নামাজের সময় ঘুমিয়ে পার করে দেয় তার ঘুম হচ্ছে উপেক্ষাকারীদের ঘুম এবং তার পথ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থদের পথ ; সে দোষী। যে তার বাধ্যতামূলক ও নফল নামাজের দায়িত্ব সম্পাদন করেছে এবং তার দায়িত্বসমূহ পালন করেছে সে একটি প্রশংসিত ঘুম ঘুমাচ্ছে। আমাদের সময়ে যারা এ গুণাবলী অর্জন করেছে তাদের জন্য ঘুমের চাইতে নিরাপদ আর কিছু আমি জানি না। কারণ লোকেরা তাদের বিশ্বাসকে পাহারা দেয়া এবং তাদের আচরণের যত্ন নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা তাদের বাম দিকের পথ ধরেছে। যখন একজন মুখলেস বান্দাহ বেজায়গায় কথা না বলার জন্য সংগ্রাম করে , তখন কীভাবে সে সে কথা শোনা এড়িয়ে যাবে যা তাকে কথা না বলা থেকে বাধা দিবে যদি তার একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে ? ঘুম হচ্ছে এমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) إ ِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَـٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا(

‘‘ নিশ্চয়ই শ্রবনশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তর , এসব কিছুকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।’’ (সূরা বনী ইসরাইলঃ 36)

অতিরিক্ত ঘুমের মধ্যে অনেক খারাপ লুকায়িত আছে আমরা যেভাবে উল্লেখ করেছি যদি সেভাবেও হয়। খুব বেশী ঘুম আসে অতিরিক্ত পানে এবং অতিরিক্ত পান আসে অতিরিক্ত তৃপ্তি থেকে। এ দু টোই নফসের উপর ভারী হয়ে দেখা দেয় আনুগত্য করার পথে এবং এগুলো অন্তরকে গভীর ভাবনা এবং বিনয়ী না করে শক্ত করে দেয়।

তোমার ঘুমকে এ পৃথিবীর শেষ বিষয় বানিয়ে ফেলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে স্মরণ করো তোমার অন্তর ও জিহবা দিয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি তোমার আনুগত্য দিয়ে তোমার অন্যায় কাজকে পরাভূত করো এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাও যখন তুমি ঘুমাও সকালের নামাজ পর্যন্ত উপাস থেকে। যদি তুমি রাতে জেগে উঠো , শয়তান তোমার কানে ফিসফিস করে বলেঃ‘‘ আবার ঘুমাও , এখনও তোমার জন্য লম্বা রাত রয়েছে ,’’ কারণ সে চায় তুমি নিবিড় আত্ম পর্যালোচনা এবং তোমার রবের সামনে তোমার অবস্থা তুলে ধরা হারাও। মনোযোগ হারিয়ো না সকালে ক্ষমা চাইতে , কারণ সে সময় প্রার্থনায় মগ্নদের মাঝে দেখা দেয় আল্লাহকে পাওয়ার অনেক আকাঙ্ক্ষা।

পরিচ্ছেদ-6

হজ্ব

যদি তুমি হজ্বে যেতে চাও , তাহলে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তোমার অন্তরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি নিবদ্ধ কর একে বিচ্ছিন্ন করে এবং তোমার ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মাঝে প্রত্যেক বাধা থেকে একে মুক্ত করে। তোমার সৃষ্টিকর্তার উপরে তোমার সব বিষয় ছেড়ে দাও , তাঁর উপর নির্ভর করো তোমার প্রত্যেক কর্মে ও স্থিরতার প্রত্যেক মুহূর্তে , আত্মসমর্পন করো তাঁর আদেশ , সিন্ধান্ত এবং রায়ের কাছে। পরিত্যাগ করো এ পৃথিবীকে , বিশ্রামকে এবং এবং সব সৃষ্টিকে। সেসব দায়িত্ব পালন করো যেগুলো তুমি অন্য লোকদের জন্য পালন করতে দায়বদ্ধ। নির্ভর করো না তোমার রিয্ক্বের উপর , যে পশুর উপর তুমি আরোহন কর , তোমার সাথীদের উপর না তোমার খাদ্য এবং তোমার যৌবন ও না তোমার সম্পদের উপর। কারণ ভয় করো যে এগুলো তোমার শত্রু হয়ে যাবে এবং তোমার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। এভাবে তুমি বুঝতে পারবে যে কোন ক্ষমতা ও কোন শক্তি নেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অভিভাবকত্ব ও তাঁর পক্ষ থেকে সফলতা দান করা ছাড়া।

হজ্বের জন্য প্রস্তুতি নাও সে ব্যক্তির মত যে ফেরত আসবে আশা করে না। ভালো লোকদের সাথী হও এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তোমার সব দায়িত্ব পালনে পরিশ্রমী হও। যত্নবান হও সৌজন্য দেখানোতে , অধ্যাবসায়তে , ধৈর্য ধরাতে , কৃতজ্ঞতা স্বীকারে , দয়া করাতে এবং উদারতায় সব সময় অন্যকে নিজের আগে রেখে , তাদেরকেও যারা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর অযু কর আন্তরিক তওবার পানি দিয়ে অন্যায় কাজের কারণে। পোষাক পড় সত্যবাদিতার , পবিত্রতার , বিনয়ের এবং ভয়ের। হজ্বের পোষাক পড়ে নিজেকে বিরত রাখো প্রত্যেক জিনিস থেকে যা তোমাকে বাধা দেয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণে। নয়তো তা তোমাকে বাধা দিবে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশে।

তাঁর আহবানে সাড়া দাও এক উত্তর দিয়ে যার অর্থ স্পষ্ট , বিশুদ্ধ এবং আন্তরিক। যখন তুমি তাঁকে ডাকো , তাঁর প্রতি তোমার বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো। তাওয়াফ কর তোমার অন্তর দিয়ে ফেরেশতাদের সাথে যারা আরশকে তাওয়াফ করে যেভাবে তুমি তাওয়াফ কর মুসলিমদের সাথে যারা কাবাকে প্রদক্ষিণ করে। দ্রুত এগিয়ে যাও যখন তুমি দৌড় দাও ভয়ে , তোমার কামনা বাসনা থেকে , শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে ব্যক্তিগত সব অনুমান থেকে নিজেকে মুক্ত করে। যখন তুমি মিনাতে যাও পিছনে ফেলে যাও কথা গ্রাহ্য না করার স্বভাবকে এবং ভুলগুলোকে। তা চেও না যা তোমার জন্য হারাম এবং যা পাওয়ার যোগ্য তুমি নও। তোমার দোষগুলো স্বীকার করো আরাফাতে , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে তোমার চুক্তি মেলে ধর , তাঁর তাওহীদের শপথের মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হও ও তাঁকে ভয় করো মুযদালিফাতে। তোমার আত্মা নিয়ে সর্বোচ্চ সমাবেশে আরোহন করো যখন তুমি আরাফাতের পর্বতে আরোহন করো। কামনা বাসনা ও লোভের গলাকে কেটে ফেলো কোরবানীতে। পাথর মারো তোমার ক্ষুধাকে , হীন অবস্থাকে , অশ্লীলতাকে এবং দোষনীয় কাজগুলোকে যখন তুমি আক্বাবাহর স্তম্ভকে পাথর ছুঁড়ে মারো। তোমার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দোষগুলোকে কামিয়ে ফেলো যখন তুমি তোমার মাথা কামাও এবং প্রবেশ করো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিরাপত্তা বেষ্টনীতে তাঁর আশ্রয়ে তাঁর চাদরের ভিতরে , তাঁর নিরাপত্তার ঘরে এবং তাঁর সতর্ক পাহারার ভিতরে এবং তোমার আশা আকাঙ্ক্ষার পিছনে ছোটা পরিত্যাগ করো তার পবিত্র দরবারে প্রবেশ করে। বায়তুল্লাহয় যাও এবং এর চারদিকে হাঁটো এর মালিক ও তাঁর প্রজ্ঞাকে , তাঁর মর্যাদাকে ও তাঁর শক্তিকে প্রশংসা করে। পাথরকে (হাযরে আসওয়াদ) জড়িয়ে ধরো তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থেকে এবং তাঁর শক্তির সামনে বিনীত হও। তাঁকে ছাড়া সবকিছু পরিত্যাগ করো বিদায়ী তাওয়াফে। তোমার আত্মা ও তোমার অভ্যন্তরীণ সত্তাকে পবিত্র করো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে মোলাকাতের জন্য , যেদিন তুমি তাঁর মোলাকাত লাভ করবে সাফা -তে দাঁড়িয়ে।

মারওয়াহতে নিজের গুণাবলী নিশ্চিহ্ন করে আল্লাহর কাছ থেকে সাহস ও সৌজন্য গ্রহণ করো । তোমার হজ্বের অবস্থাগুলোতে সামঞ্জস্য বজায় রাখো এবং তোমার রবের সাথে যে চুক্তি তুমি করেছো তা পূরণ করো , যার জন্য তুমি বিচার দিনে তাঁর কাছে দায়বদ্ধ। জেনে রাখো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ্বকে বাধ্যতামূলক করেছেন এবং তিনি তাঁর বিষয়ে অন্য সব ইবাদাত থেকে এটিকে বাছাই করেছেন যখন তিনি বলেছেনঃ

) و َلِلَّـهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا(

‘‘ আল্লাহর জন্য আল্লাহর ঘরে হজ্ব মানব জাতির উপর বাধ্যতামূলক এবং প্রত্যেকের উপরে যারা সেখানে যেতে সক্ষম।’’ (সূরা আলে ইমরানঃ 97)

রাসূলুল্লাহ (সা.) হজ্বের আনুষ্ঠানিক কর্মকান্ডগুলোকে সাজিয়েছেন মৃত্যু , কবর , পুনরুত্থান এবং বিচার দিনের প্রস্তুতি ও ইঙ্গিত হিসেবে। মানবজাতির জন্য এ শিক্ষায় তিনি তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন কারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কারা আগুনে প্রবেশ করবে , শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হজ্বের আনুষ্ঠানিক কর্মকান্ডগুলিকে সাজিয়ে যাদের বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা আছে তাদেরকে দেখিয়ে ।

যাকাত

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য বাধ্যতামূলক দান (যাকাত) তোমার শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে প্রাপ্য। এমনকি তোমার প্রত্যেক চুলের গোড়া থেকেও। প্রকৃতপক্ষে তোমার জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে যাকাত বাধ্যতামূলক। চোখের যাকাত হলো সহানুভুতিসহ দৃষ্টিপাত এবং কামনা-বাসনার দৃষ্টি ও এ ধরনের জিনিস থেকে চোখকে সরিয়ে রাখা। কানের যাকাত হলো সবচেয়ে ভালো শব্দ শোনা। যেমন প্রজ্ঞা , কোরআন , বিশ্বাসের জন্য লাভজনক বিষয়গুলো , যেমন , সতর্কবানী এবং এর বিপরীতগুলো এড়িয়ে চলা যেমন- মিথ্যা , অপবাদ এবং এরকম জিনিস।

জিহবার যাকাত হলো মুসলমানদের সৎ উপদেশ দেয়া , যারা উদাসীন তাদেরকে জাগ্রত করা , অনেক তাসবীহ এবং যিকর করা এবং এরকম অন্যান্য জিনিস।

হাতের যাকাত হলো অন্যের জন্য টাকা-পয়সা খরচ করা , তোমাকে দেয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নেয়ামতগুলোর বিষয়ে উদার হওয়া , জ্ঞান ও তথ্য লিখে রাখাতে তা ব্যবহার করা যার মাধ্যমে অন্য মুসলমানেরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্যে লাভবান হবে এবং একে খারাপ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা। পায়ের যাকাত হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি দায়িত্ব পালনে দ্রুত যাওয়া-যেমন , ধার্মিক লোকদের সাক্ষাতে যাওয়া , যিকর-এর সমাবেশে যাওয়া , লোকজনের মাঝে সম্পর্ক ঠিক করে দেয়া , আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা , জিহাদে নিয়োজিত হওয়া এবং এমন জিনিস করা যা তোমার অন্তরকে সুস্থ এবং তোমার বিশ্বাসকে শুদ্ধ করবে।

আমরা এখানে কিছু যাকাত-এর পথ উল্লেখ করেছি , যেগুলো অন্তর বুঝতে পারে এবং সত্তা তা সম্পাদন করতে পারে। যদিও আরো অনেক আছে উল্লেখ করার মত যেগুলো আয়ত্বে আনতে পারে শুধু তাঁর মুখলেস ও অত্যন্ত নিকট বান্দাহরা। নিশ্চয়ই তারা যাকাতের নেতা এবং তাদেরই আছে এ মর্যাদার চিহ্ন। হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে সে জিনিসে সফলতা দিন যা আপনি ভালোবাসেন এবং যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন।


4

5

6

7

8

9

10

11

12