পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি0%

পথ চলার বাতি লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

পথ চলার বাতি

লেখক: আবু আবদিল্লাহ ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ আস-সাদিক্ব (আ.)
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 11088
ডাউনলোড: 2902

পাঠকের মতামত:

পথ চলার বাতি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 61 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11088 / ডাউনলোড: 2902
সাইজ সাইজ সাইজ
পথ চলার বাতি

পথ চলার বাতি

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

কলুষতা

বাইরের সত্তায় কলুষতা আসে ভেতরের কলুষতা থেকে। যদি তুমি তোমার গভীরতম সত্তাকে ঠিক কর তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার বাইরের সত্তাকে ঠিক করে দিবেন ; যদি তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভেতরে ভয় কর তাহলে তিনি জনগণের সামনে তোমার চাদর ছিঁড়বেন না। কিন্তু যে ভিতরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে বাইরে প্রকাশ করে দেবেন।

সবচেয়ে বেশী কলুষতার জন্ম হয় দীর্ঘ আশা , লোভ এবং গর্ব থেকে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে ক্বারুনের ঘটনা বলেছেনঃ

) و َلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّـهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ(

‘‘ পৃথিবীতে ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টির সুযোগ খুঁজো না ; নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না’’ (সূরা কাসাসঃ 77)

অন্য জায়গায় তিনি বলেছেনঃ

) ت ِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ(

‘‘ আখেরাতের বাসস্থান ,আমরা তা তাদেরকেই শুধু দেই যাদের ইচ্ছা নেই এ পৃথিবীতে গর্ব করার এবং ফাসাদ (কলুষতা সৃষ্টি) করার এবং সমাপ্তি ভালো তাদের যারা মুত্তাক্বী (সতর্কতা অবলম্বনকারী)। ’’ (সূরা কাসাসঃ 83)

এ ত্রুটিগুলো আসে তা থেকে যা ক্বারুন করতো ও বিশ্বাস করতো। কলুষতার মূল নিহিত আছে এ পৃথিবীর ভালোবাসায় , এর সম্পদ জমা করায় , নিজের নফসকে অনুসরণ করায় , এর ক্ষুধাকে বৃদ্ধি করায় , প্রশংসা পছন্দ করায় , শয়তানের সাথে একমত হওয়ায় এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করায় ; এ সবগুলো দোষ যুক্ত হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি কোন মনোযোগ না দেয়া পছন্দ করায় এবং তাঁর দানসমূহ ভুলে যাওয়ার সাথে।

অতএব , তোমার উচিত মানুষজনের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া , এ পৃথিবীকে প্রত্যাখ্যান করা , তোমার বিশ্রামের মাঝে বাধা দেয়া , তোমার সাধারণ স্বভাবগুলোর সাথে সম্পর্ক ছেদ করা , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সর্বক্ষণ স্মরণ করার মাধ্যমে দুনিয়ার ক্ষুধাগুলোর উৎসকে গোড়া থেকে কেটে ফেলা এবং তাঁর আনুগত্যকে আঁকড়ে থাকা এবং লোকজনের , ও তোমার কোন সাথীর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং তোমার পরিবার ও আত্মীয়দের শত্রুতা সহ্য করা। যদি তুমি তা কর তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ার দরজা তোমার জন্য খোলা হবে , যেহেতু তোমার প্রতি তাঁর আছে ভালো মনোভাব , ক্ষমা এবং রহমত। এতে তুমি কথা অগ্রাহ্যকারীদের দল পরিত্যাগ করবে এবং শয়তানের হাতে বন্দী থাকা তোমার অন্তরকে মুক্ত করবে। তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দরজায় উপস্থিত হবে তাদের সাথে যারা তাঁর কাছে আসে এবং তুমি এমন এক পথে ভ্রমণ করবে যার উপরে তুমি আশা করতে পারো পরম মর্যাদাবান , পরম সম্মানিত , পরম উদার ও পরম করুণাময়ের কাছে আসার জন্য অনুমতি।

সুস্থতা

যেখানেই তুমি থাকো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সুস্থতা চাও প্রত্যেক অবস্থায় , তোমার বিশ্বাসের জন্য , তোমার অন্তরের জন্য এবং তোমার সর্বশেষ পরিণতির জন্য। যে তা চায় সে সবসময় তা পায় না।

তাহলে কীভাবে কিছু লোক পারে নিজেদেরকে দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি করতে , সুস্থতার উল্টো পথে চলতে এবং এর নীতিগুলোর বিরোধিতা করতে- নিরাপত্তাকে ধ্বংস ও ধ্বংসকে নিরাপত্তা ভেবে ?

প্রত্যেক যুগেই সুস্থতাকে মানুষের কাছ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে , বিশেষ করে এই যুগে , তবুও তা আবার খুঁজে পাওয়া যাবে অন্য মানুষের অপছন্দ এবং এমনকি আঘাত সহ্য করার মাধ্যমে , দুর্যোগের মুখে ধৈর্য্য ধরার মাধ্যমে , মৃত্যুকে হালকা ভাবে নিয়ে , যা কিছু ঘৃণ্য তা থেকে পালিয়ে গিয়ে এবং সামান্য বস্তুগত সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে। যদি তুমি সেরকম না হও তাহলে তোমাকে অবশ্যই নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে। যদি তুমি তা না করতে পারো তাহলে নিরব থাকো , যদিও নিরবতা নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার মত নয়। যদি তুমি নিরব না হতে পারো তাহলে তা বলো যা তোমাকে সাহায্য করবে এবং তোমার ক্ষতি করবে না। কিন্তু তা নিরবতার মত নয় , যদি তুমি তা করার জন্য কোন উপায় না দেখ তাহলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াও , নিজের নফসকে নিয়ে যাও আগে যাও নি এমন এলাকায় , বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য , বিনীত অন্তর ও দৃঢ় দেহ নিয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) إ ِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّـهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا(

‘‘ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের উপর যুলুমকারী , তাদের প্রাণ হরণের সময় ফেরেশতারা বলেঃ তোমরা কী অবস্থায় ছিলে ? তারা বলেঃ আমরা (আমাদের) দেশে দূর্বল ছিলাম তারা বলবেঃ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিলো না যে তোমরা সেখানে হিযরত করতে পারতে .?’’ (সূরা নিসাঃ 97 )

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৎকর্মশীল বান্দাহদের সে চরিত্র গ্রহণ কর।

অস্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সংগ্রাম করো না , এবং পরস্পরবিরোধী বিষয় নিয়েও সন্তুষ্ট থেকো না। যদি কেউ তোমাকে বলে , আমি , বলো তুমি । কোন বিষয়ে জ্ঞানের দাবী করো না , যদি সে বিষয়ে তুমি বিশেষজ্ঞও হও। তোমার গোপন বিষয় শুধু তার কাছেই উম্মুক্ত করো যে তোমার চেয়ে বিশ্বাসে উন্নত। এভাবে তুমি সম্মান পাবে। যদি তুমি এটি কর তাহলে তুমি সুস্থতা পাবে এবং তুমি থাকবে মহান আল্লাহর সাথে অন্য কিছুর সাথে সংযুক্ত না থেকে।

পরিচ্ছেদ-14

ইবাদাত

ইবাদাতের রীতিনীতি ও বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো পালনে অধ্যাবসায়ী হও কারণ সেগুলো হচ্ছে উৎস : যে সেগুলো অর্জন করে এবং তা সঠিকভাবে পালন করে সে সবকিছুই পেলো। সবচেয়ে ভালো ইবাদাত হচ্ছে যা নিরাপত্তার কাছাকাছি আসে। এটি সবচেয়ে ক্ষতিমুক্ত এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তা যত ছোটই হোক। যদি তুমি তোমার বাধ্যতামূলক ও অতিরিক্ত (নফল) নামায পড়ে থাকো তাহলে তুমি সত্যিকার ইবাদাতকারী।

বাদশাহর গালিচায় পা রাখার বিষয়ে সাবধান থাকো যদি না তুমি তা কর নিজেকে মর্যাদাশূন্য মনে করে , প্রয়োজন স্বীকার করে , ভয় করে এবং সম্মান দেখিয়ে। তোমার নড়াচড়াকে লোক দেখানো মুক্ত করো এবং তোমার গোপনকে কাঠিন্য মুক্ত করো।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ যে ব্যক্তি নামায পড়ছে সে তার রবের সাথে কথা বিনিময় করছে।’’ তাই লজ্জিত থাকো তাঁর সামনে যিনি তোমার গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন , যিনি তোমার কথাবার্তা শুনছেন এবং তোমার বিবেক যা লুকায় তাও জানেন। সেখানেই উপস্থিত থাকো যেখানে তিনি তোমাকে তা করতে দেখবেন যা তিনি চান তুমি কর এবং দেখবেন তা সম্পাদন করতে যা করার জন্য তিনি তোমাকে ডেকেছেন। যারা আমাদের আগে চলে গেছেন তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছিলেন একটি বাধ্যতামূলক নামায শেষ করার মুহূর্ত থেকে আরেকটি শুরু করার মুহূর্ত পর্যন্ত যেন তারা দু টো নামাযই সম্পাদন করতে পারেন আন্তরিকভাবে ও সঠিকভাবে। মনে হচ্ছে আমাদের সময়ে বাধ্যতামূলক ইবাদাত ছেড়ে দেয়া একটি নৈতিকগুণে পরিণত হয়েছে যা হলো একটি দেহ থাকার মত যার কোন আত্মা নেই।

আলী (আ.) ইবনে আল হোসেইন (আ.) বলেছেনঃ‘‘ আমি আশ্চর্য হই ঐ ব্যক্তিকে নিয়ে যে অতিরিক্ত কিছু চায় অথচ বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পরিত্যাগ করে ; সে তা শুধু এজন্য করে যে তার এ বিষয়ে যথাযথ স্বীকৃতি নেই এবং এর প্রতি তার সম্মানের অভাব রয়েছে। মানুষকে তাঁর আদেশ মানতে প্রস্তুত করাতে এবং তাদের জন্য তা নির্বাচনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইচ্ছাকে সে দেখতে পায় না।

গভীর ভাবনা

এ পৃথিবীর যা অতীত হয়ে গেছে তার উপর গভীরভাবে ভাবো । এর কোন অংশ কি কারো জন্য রয়ে গেছে ? কেউ কি রয়ে গেছে , হোক উচ্চ সম্মানিত অথবা মর্যাদাশূন্য , ধনী অথবা দরিদ্র , বন্ধু অথবা শত্রু ? একইভাবে এখানে এখনও যা ঘটে নি তার সাথে ঘনিষ্ট মিল রয়েছে যা ইতোমধ্যেই অতীত হয়েছে। পানির সাথে পানির যে মিল আছে তার চেয়ে বেশী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ মৃত্যু সতর্ককারী হিসাবে যথেষ্ট , বুদ্ধি পথ প্রদর্শক হিসাবে যথেষ্ট ; তাক্বওয়া (সতর্কতা অবলম্বন) জীবনোপকরণ হিসাবে যথেষ্ট ; ইবাদাত পেশা হিসাবে যথেষ্ট ; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঘনিষ্ট বন্ধু হিসাবে যথেষ্ট ; কোরআন সত্য-মিথ্যা স্পষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।’’ এবং অন্য জায়গায় বলেছেনঃ‘‘ এ পৃথিবীর যা বাকী আছে তা হলো দুঃখ দুর্দশা ও পরীক্ষা। যদি কোন ব্যক্তি রক্ষা পায় তাহলে তা ঘটে শুধু আন্তরিকভাবে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে।’’ নূহ (আ.) বলেছিলেনঃ‘‘ আমি পৃথিবীকে পেয়েছি একটি বাড়ির মত যার দু টো দরজা আছে। আমি এর একটি দিয়ে প্রবেশ করেছি এবং অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছি’’

এরকমই হচ্ছে তার অবস্থা যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রক্ষা করেছেন। তাহলে তার অবস্থা কী যে এ পৃথিবীতে আরাম বোধ করে , এর উপরে নির্ভর করে , একে চাষ করার মাধ্যমে তার জীবনকে নষ্ট করে এবং যে পৃথিবীর চাহিদায় পূর্ণ ?

গভীর ভাবনা ভালো কাজগুলোর আয়না এবং খারাপ কাজগুলোর কাফ্ফারা। এটি অন্তরের আলো এবং অন্যদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যের নিশ্চয়তা দেয় এবং আখেরাতের বাসস্থান লাভের জন্য উত্তম। এটি মানুষকে তার কাজকর্মের ফলাফলকে আগে ভাগেই দেখতে সাহায্য করে এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাত অতুলনীয় হয়ে দাঁড়ায় যখন এ গুণটি সাথে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

‘‘ এক ঘন্টার জন্য গভীর ভাবনা এক বছরের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম।’’

গভীর ভাবনার মাক্বাম শুধু তারাই লাভ করে যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বেছে নিয়েছেন ইরফানি নূর (মারেফাত) এবং তাওহীদের জন্য

বিশ্রাম

বিশ্বাসী শুধু তখনই সত্যিকার বিশ্রাম অর্জন করে যখন সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মোলাক্বাত লাভ করে। যদিও বিশ্রাম এ চারটি জিনিসের মাধ্যমে লাভ করা যেতে পারে নিরবতা যার মাধ্যমে তুমি বুঝতে পারো তোমার অন্তরের অবস্থা এবং তোমার সৃষ্টিকর্তার সাথে তোমার সত্তার সম্পর্ক সম্পর্কে ; নিজেকে গুটিয়ে নেয়া যার মাধ্যমে তুমি যুগের খারাপ বিষয়গুলো থেকে রক্ষা পাবে প্রকাশ্যে ও সত্তার ভেতরে ; ক্ষুধা যা দেহের মাংসের ক্ষুধা ও লোভকে হত্যা করে এবং রাত্রিজাগরণ যা তোমার অন্তরকে আলোকিত করে , তোমার প্রকৃতিকে পবিত্র করে এবং তোমার আত্মাকে পরিষ্কার করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ যদি কোন ব্যক্তি ভোর বেলায় নিজের অন্তরকে পায় প্রশান্ত , শরীরকে সুস্থ্য এবং সেদিনের জন্য খাবার , তা যেন এমন যে সারা পৃথিবী তার জন্য পছন্দ করা হয়েছে।’’ ওয়াহাব ইবনে মুনাবিবহ উপরের এবং নীচের কথাগুলো উদ্ধৃত করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে- যিনি বলেছেনঃ‘‘ হে সন্তুষ্টি সম্মান ও ধন সম্পদ তোমার কাছেই পাওয়া যায়। যে জিতে সে তোমার মাধ্যমেই জিতে।’’

আবু আল-দারদা বলেছেনঃ‘‘ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার জন্য নির্দিষ্ট করেছেন তা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে না , এমনও যদি হয় তা বাতাসের পাখার উপর আছে এবং আবু যার বলেছেনঃ‘‘ যে ব্যক্তি তার রবকে বিশ্বাস করে না তার গোপন বিষয় সবসময় প্রকাশ হয়ে যায় , যদি তা শক্ত পাথরের ভেতরেও বন্দী থাকে।’’ কেউ এর চেয়ে বেশী ক্ষতিতে নেই , এর চেয়ে জঘন্য এবং এর চেয়ে নীচে নেই সে ব্যক্তির চাইতে যে বিশ্বাস করে না যে তার রব তার জন্য নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং তাকে তিনি সৃষ্টি করার আগেই তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দান করেছেন । এর পরেও এই ব্যক্তি নির্ভর করে তার শক্তি , ব্যবস্থাপনা , প্রচেষ্টা এবং সংগ্রামের উপর এবং তার রবের দেয়া সীমানা অতিক্রম করে পথ ও উপায় খোঁজ করতে গিয়ে যার কোন প্রয়োজন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার জন্য রাখেন নি।

পরিচ্ছেদ-15

সম্পদের লোভ

সম্পদের লোভে কোন কিছু চেয়ো না ; কারণ তুমি যদি তা উপেক্ষাও কর তা তোমার কাছে আসবেই , যদি তা তোমার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। তখন তুমি তোমার অন্তরে আল্লাহর সাথে আরাম পাবে এবং তা ত্যাগ করার জন্য পাবে প্রশংসা ; কিন্তু তোমাকে অভিযুক্ত করা হবে তা খোঁজায় তাড়াহুড়া করার জন্য এবং তাঁর উপর আস্থা না রাখার জন্য এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না থাকার জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন একটি ছায়ার মত ; যখন তুমি এর পেছনে ছোট , তা তোমাকে ক্লান্ত করে ফেলে এবং একে তুমি কখনোই ধরতে পারো না। যদি তুমি একে ছেড়ে দাও তা তোমার পিছনে লেগে থাকবে সর্বক্ষণ এবং তোমাকে ক্লান্ত হওয়ার জন্য কোন কারণ দেবে না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ সম্পদ-লোভী ব্যক্তি বঞ্চিত ; সে বঞ্চিত থাকা সত্ত্ব্যেও যেখানেই সে থাকুক সে অভিযুক্ত । কারণ সে বঞ্চিত ছাড়া আর কী হবে যখন সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার চুক্তি থেকে পালায় এবং তাঁর কথার বিরোধিতা করেঃ

) الل َّـهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ(

‘‘ আল্লাহ , যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এরপর তোমাদের জীবনোপকরণ দিয়েছেন। এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেন এরপর তোমাদেরকে জীবিত করেন।’’ (সূরা রূমঃ 40)

সম্পদ-লোভী ব্যক্তি সাতটি কঠিন সমস্যাপূর্ণ খারাপের মাঝে থাকেঃ চিন্তা যা তার দেহের ক্ষতি করে কিন্তু কোন সাহায্য করে না ; দুঃশ্চিন্তা- যার কোন শেষ নেই ; মানসিক ক্লান্তি যা থেকে সে বিশ্রাম পাবে শুধু মৃত্যুতে , যদিও সে বিশ্রামের সময়ই সবচেয়ে বেশী মানসিক ক্লান্তিতে থাকে ; ভয় যা সে ভয় করে তাকে তার মধ্যেই ফেলে ; দুঃখ- যা তার ভরণপোষণে তার কোন লাভ না এনে সমস্যার সৃষ্টি করে ; হিসাব নিকাশ যা তাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তি থেকে রক্ষা করবে না যদি না তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং শাস্তি যা থেকে কোন পলায়ন অথবা রক্ষা নেই।

যে ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আস্থা রাখে সে সকাল ও সন্ধ্যা তাঁর দেয়া নিরাপত্তা ও সুস্থতার ভেতর কাটায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার যা প্রয়োজন তা তার জন্য দ্রুত এগিয়ে দিয়েছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করেছেন বিভিন্ন জিনিস যা শুধু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানেন।

সম্পদের লোভ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ক্রোধ থেকে প্রবাহিত হয়। যখন বান্দাহ ইয়াক্বীনবিহীন নয় তখন সে সম্পদ লোভী নয়। ইয়াক্বীন হলো ইসলামের যমীন এবং ঈমানের আকাশ।