কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 43025
ডাউনলোড: 3686

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 43025 / ডাউনলোড: 3686
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ - ফাছ্বাহাত্ ও জ্ঞানগর্ভতার একটি দৃষ্টান্ত

কোরআন মজীদের মু জিযাহর একটি অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে এই যে , সমগ্র কোরআন মজীদে যে জ্ঞান ও শিক্ষা উপস্থাপন করা হয়েছে প্রতিটি সূরায়ই তার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে , কিন্তু তা এমনভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে যার ফলে বিভিন্ন সূরাহ্ পাঠের সময় পাঠক-পাঠিকার কাছে তার পুনরাবৃত্তিকে মোটেই পুনরাবৃত্তি বলে অনুভূত হয় না। আর ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে , কোরআনের মু জিযাহর আরেকটি প্রধান দিক হচ্ছে তার ভাষার গতিশীলতা ও প্রাঞ্জলতা ব্যাহত না করেই বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তুর সমাহার ঘটানো। কোরআনের তৃতীয় আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে , তার ভাষা না কবিতা , না গদ্য , বরং বিভিন্ন ধরনের কবিতার ভাষায় ব্যবহার্য মাধুর্য ও বলিষ্ঠতার সমন্বয় ঘটিয়ে কাব্যসৌন্দর্যমণ্ডিত গদ্যে স্বীয় বক্তব্য উপস্থাপন - যার ফলে বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের মহানায়কগণও এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে।

বলা বাহুল্য যে , কোরআন মজীদ কোনো প্রথাগত গ্রন্থের মতো গ্রন্থ নয় এবং এর সূরাহ্গুলোও কোনো প্রথাগত গ্রন্থের অধ্যায়ের মতো বা কোনো প্রবন্ধের মতো নয়। বরং কোরআন মজীদ ও তার সূরাহ্ সমূহের বক্তব্য ও ভাষা অনেকটা ভাষণের বক্তব্য ও ভাষার ন্যায় , কিন্তু তার সাহিত্যকুশলতা এমনই যার ফলে বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের মহানায়কগণ এর মোকাবিলায় দিশাহারা ও হতভম্ব হয়ে পড়তে বাধ্য।

এখানে আমরা কোরআন মজীদের একটি সূরাহর উদ্ধৃতি দিয়ে তার প্রকাশকুশলতার প্রতি সংক্ষেপে দৃষ্টি দেবো - যা থেকে আমাদের উপরোক্ত বক্তব্যের অকাট্য প্রমাণ মিলবে।

আমরা এখানে কোরআন মজীদের সূরাহ্ আল্-মুল্ক্ উদ্ধৃত করছি :

) بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ. تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (١) الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ (٢) الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فُطُورٍ (٣) ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ (٤) وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ (٥) وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ (٦) إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ (٧) تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ (٨) قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلا فِي ضَلالٍ كَبِيرٍ (٩) وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ (١٠) فَاعْتَرَفُوا بِذَنْبِهِمْ فَسُحْقًا لأصْحَابِ السَّعِيرِ (١١) إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ (١٢) وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوا بِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ (١٣) أَلا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ (١٤) هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأرْضَ ذَلُولا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ (١٥) أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الأرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ (١٦) أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ (١٧) وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ (١٨) أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلا الرَّحْمَنُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ بَصِيرٌ (١٩) أَمْ مَنْ هَذَا الَّذِي هُوَ جُنْدٌ لَكُمْ يَنْصُرُكُمْ مِنْ دُونِ الرَّحْمَنِ إِنِ الْكَافِرُونَ إِلا فِي غُرُورٍ (٢٠) أَمْ مَنْ هَذَا الَّذِي يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ بَلْ لَجُّوا فِي عُتُوٍّ وَنُفُورٍ (٢١) أَفَمَنْ يَمْشِي مُكِبًّا عَلَى وَجْهِهِ أَهْدَى أَمْ مَنْ يَمْشِي سَوِيًّا عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ (٢٢) قُلْ هُوَ الَّذِي أَنْشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالأبْصَارَ وَالأفْئِدَةَ قَلِيلا مَا تَشْكُرُونَ (٢٣) قُلْ هُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الأرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ (٢٤) وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (٢٥) قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُبِينٌ (٢٦) فَلَمَّا رَأَوْهُ زُلْفَةً سِيئَتْ وُجُوهُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَقِيلَ هَذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تَدَّعُونَ (٢٧) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَهْلَكَنِيَ اللَّهُ وَمَنْ مَعِيَ أَوْ رَحِمَنَا فَمَنْ يُجِيرُ الْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (٢٨) قُلْ هُوَ الرَّحْمَنُ آمَنَّا بِهِ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ هُوَ فِي ضَلالٍ مُبِينٍ (٢٩) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ(

পরম দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে। পরম বরকতময় তিনি যার হাতে রয়েছে (আসমান-যমীনের) সকল রাজত্ব ; আর তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপরই নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী - যিনি তোমাদের মধ্যে কর্মের বিচারে কে অধিকতর উত্তম হবে তা পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন ; আর তিনি মহাপরাক্রান্ত ও ক্ষমাশীল। তিনি স্তরে স্তরে বিন্যস্ত করে সপ্ত উর্ধলোক সৃষ্টি করেছেন ; তুমি পরম দয়াবানের সৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য (খুঁত) দেখতে পাবে না। আরেক বার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখো , কোনো ফাঁক (অসম্পূর্ণতা) দেখতে পাও কি ? কিছুক্ষণ পরে তুমি দ্বিতীয় বারের জন্য (সেদিকে) দৃষ্টি ফেরাও ; তোমার দৃষ্টি ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে ফিরে আসবে। আর আমি পৃথিবীর আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা অলঙ্কৃত করে রেখেছি এবং আমি তাকে শয়ত্বানদের জন্য ক্ষেপণাস্ত্রস্বরূপ করেছি , আর প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্য প্রজ্জ্বলিত অগ্নির শাস্তি , আর যারা তাদের রবকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি। আর তা কতোই না নিকৃষ্ট স্থান! আর যখন তারা তাতে নিক্ষিপ্ত হবে তখন তারা তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে। তখন তা (জাহান্নাম) আক্রোশে ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। কোনো গোষ্ঠীকে যখন তাতে নিক্ষেপ করা হবে তখন তার প্রহরীরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে : তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আসেন নি ? তারা বলবে : হ্যা , আমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিলেন , কিন্তু আমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম এবং বলেছিলাম : আল্লাহ্ কোনো কিছুই নাযিল করেন নি। (দোযখের প্রহরীরা বলবে :) তোমরা তো বড় ধরনের গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিলে। তখন তারা (পরিতাপের সাথে) বলবে : আমরা যদি (মনোযোগের সাথে) শ্রবণ করতাম এবং বিচারবুদ্ধি কাজে লাগাতাম তাহলে আমরা দোযখবাসীদের অন্তর্ভুক্ত থাকতাম না! অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। দূর হোক দোযখবাসীরা। (অন্যদিকে) যারা তাদের রব-কে না দেখেও ভয় করে নিঃসন্দেহে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বিরাট শুভ প্রতিদান। আর তোমরা তোমাদের কথা গোপন কর বা প্রকাশ কর (তাঁর কাছে তা সমান , কারণ ,) অবশ্যই তিনি অন্তরস্থ বিষয়াদি সম্বন্ধে সদাজ্ঞাত। সাবধান! যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না ? বরং তিনি তো সূক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ। তিনিই হচ্ছেন সেই সত্তা যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য সুগতিসম্পন্ন করে বানিয়েছেন , সুতরাং তোমরা তার স্কন্ধে বিচরণ কর এবং তাঁর রিয্ক্ব্ ভক্ষণ কর ; আর তাঁর কাছেই তোমাদের পুনরুত্থান। উর্ধলোকে যিনি আছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে প্রোথিত করে দেবেন এবং তা প্রকম্পিত হতে থাকবে - এ ব্যাপারে কি তোমরা নিঃশঙ্ক হয়ে গিয়েছো ? অথবা , যিনি উর্ধলোকে আছেন তিনি তোমাদের ওপর প্রস্তর বর্ষণ করবেন , অতঃপর তোমরা অচিরেই জানতে পারবে আমার সতর্কীকরণ কেমন ছিলো - এ ব্যাপারে কি তোমরা নিঃশঙ্ক হয়ে গিয়েছো ? বস্তুতঃ তাদের পূর্ববর্তীরা (আমার সতর্কবাণীকে) প্রত্যাখ্যান করেছিলো ; অতঃপর কেমন ছিলো আমার অস্বীকৃতি! তারা কি তাদের (মাথার) ওপরে উড়ন্ত পাখীদেরকে দেখে নি - যারা পাখা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয় ? বস্তুতঃ পরম দয়াবান ব্যতীত কেউই তাদেরকে স্থির রাখে না ; নিঃসন্দেহে তিনি প্রতিটি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি রাখেন। তোমাদের সাহায্য করবে পরম দয়াবান ব্যতীত তোমাদের জন্য এমন কোন্ বাহিনী আছে ? কাফেররা তো কেবল আত্মপ্রতারণার কবলে নিপতিত বৈ নয়। তিনি যদি রিয্ক্ব্ বন্ধ করে দেন তাহলে এমন কে আছে যে তোমাদেরকে রিয্ক্ব্ প্রদান করবেন ? বরং তারা জিদের বশে অবাধ্যতায় ও বিমুখতায় নিমজ্জিত রয়েছে। যে ব্যক্তি মুখ থুবড়ে পড়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলে সে-ই কি অধিকতর সঠিক পথ প্রাপ্ত , নাকি যে ব্যক্তি মেরুদণ্ড সোজা করে সরল-সুদৃঢ় পথে চলে ? (হে রাসূল!) বলুন , তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণশক্তি , দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ বানিয়েছেন , কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। (হে রাসূল!) বলুন , তিনিই তোমাদেরকে ধরণীর বুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর কাছেই তোমরা সমবেত হবে। আর তারা বলে : কখন এ প্রতিশ্রুতি (বাস্তবায়িত হবে) যদি তোমরা (এ প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো ? (হে রাসূল!) বলুন , অবশ্যই তার জ্ঞান কেবল আল্লাহরই কাছে , আর আমি তো কেবল সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্ককারী বৈ নই। অতঃপর তারা যখন তা (সেই প্রতিশ্রুতি) আসন্ন দেখতে পাবে তখন কাফেরদের চেহারাগুলো কালিমালিপ্ত হয়ে যাবে এবং (তাদেরকে) বলা হবে : এই হলো তা-ই যা তোমরা চাচ্ছিলে। (হে রাসূল!) বলুন , তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছো যে , আল্লাহ্ যদি আমাকে ও আমার সঙ্গীসাথীদেরকে ধ্বংস করে দেন বা অনুগ্রহ করেন , তো কে কাফেরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে ? (হে রাসূল!) বলুন , তিনি পরম দয়াবান ; আমরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর ওপরই ভরসা করেছি ; তোমরা অচিরেই জানতে পারবে কে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে। তোমরা কি ভেবে দেখেছো যে , তিনি যদি তোমাদের পানিকে (ভূগর্ভে) শুষিয়ে দেন , তো কে তোমাদের জন্য প্রবহমান পানির ব্যবস্থা করবে ?

এ সূরাহটির বাচনভঙ্গিতে একই সাথে যে মাধুর্য ও ওজস্বিতার সমাহার ঘটেছে এবং এর ভাষায় যে ধরনের বিমোহিতকর ঝর্ণাধারার গতি ও ঝঙ্কার রয়েছে তা এর মূল (আরবী) পাঠের যে কোনো পাঠক-পাঠিকার কাছেই সুস্পষ্ট। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় যে , মাত্র 30টি আয়াত বিশিষ্ট স্বল্পায়তনের এ সূরাহটিতে অনেকগুলো পয়েন্ট স্থান পেয়েছে এবং বক্তব্যে এক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্টে গমনের বিষয়টি তাসবীহ্-মালার একটি দানা থেকে আরেকটি দানায় স্থানান্তরের ন্যায় এমনভাবে ঘটেছে যে , বক্তব্যের গতিশীলতায় কোথাওই কোনো ধরনের ছেদ অনুভূত হয় না।

এ সূরায় যে সব পয়েন্ট স্থান পেয়েছে আমরা তার একটা ফিরিস্তি তৈরী করার চেষ্টা করি :

0 এতে আল্লাহ্ তা আলার নিম্নোক্ত গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে : তিনি দয়াময় , মেহেরবান , পরম বরকতময় , আসমান-যমীনের সকল রাজত্বের অধিপতি , সব কিছুর ওপরে ক্ষমতাবান , মৃত্যু ও জীবনের স্রষ্টা , মহাপরাক্রান্ত , ক্ষমাশীল , অদৃশ্য , অন্তরস্থ বিষয়ে অবগত , সকল কিছুর স্রষ্টা , সৃষ্টির সব কিছু সম্পর্কে অবগত , সূক্ষ্মদর্শী , সর্বজ্ঞ , প্রতিটি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি রাখেন এবং বান্দাহকে সাহায্যকারী।

এছাড়া এতে অপর যে পয়েন্ট্গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে :

0 মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (কর্মের পরীক্ষা)

0 স্তরে স্তরে বিন্যস্ত সপ্ত উর্ধলোক সৃষ্টি

0 আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য নেই (সবই নিখুঁত)।

0 আল্লাহর সৃষ্টিতে অসম্পূর্ণতা নেই।

0 পৃথিবীর আকাশ প্রদীপমালা (নক্ষত্রমালা) দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে।

0 শয়ত্বানের উর্ধলোকে অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার ব্যবস্থা আছে।

0 প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখা (উল্কা) সৃষ্টি

0 কাফেরদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির ব্যবস্থা

0 জাহান্নাম নিকৃষ্ট স্থান

0 জাহান্নামের গর্জন

0 জাহান্নামে প্রহরী আছে।

0 আল্লাহ্ তা আলা সতর্ককারী (নবী) পাঠিয়েছেন।

0 কাফেররা নবীকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

0 কাফেররা সতর্ককারী আগমন ও তাদের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রত্যাখ্যানের কথা স্বীকার করবে।

0 কাফেররা স্বীকার করবে যে , তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণী নাযিলের সম্ভাবনার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছিলো।

0 কাফেররা গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিলো।

0 কাফেররা নবীর দাও আত্ মনোযোগ দিয়ে শোনে নি এবং আক্বল্ দ্বারা বিবেচনা করে নি।

0 কাফেররা নবীর দাও আত্ অন্ধভাবে প্রত্যাখ্যানের জন্য আফসোস্ করবে।

0 (মানুষের উচিত যে কোনো কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও আক্বল্ দ্বারা বিবেচনা করা।)

0 দোযখবাসীদের প্রতি আল্লাহর ধিক্কার

0 ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ্ তা আলার ক্ষমা ও শুভ প্রতিদান

0 পৃথিবী সুগতিসম্পন্ন ও বিচরণের উপযোগী

0 আল্লাহ্ সকলের জন্য রিয়ক্বের ব্যবস্থা রেখেছেন।

0 সকলকেই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে।

0 পুনরুত্থান সংঘটিত হবে।

0 আল্লাহর আযাব : ভূগর্ভে প্রোথিত করণ

0 আল্লাহর আযাব : প্রস্তরবৃষ্টি

0 পানি ছাড়া প্রাণী বাঁচে না (ইঙ্গিত)।

0 আল্লাহ্ পানি মাটিতে শুষিয়ে দিয়ে আযাব দিতে পারেন।

0 পূর্ববর্তীরা আল্লাহকে অস্বীকার করেছিলো।

0 আল্লাহ্ পাখীদেরকে আকাশে উড্ডয়নকারী বানিয়েছেন।

0 কাফেররা আত্মপ্রতারিত।

0 কাফেররা জিদের বশে অবাধ্য ও বিমুখ হয়ে আছে।

0 আল্লাহ্ কর্তৃক নির্দেশিত সরল-সুদৃঢ় পথই সঠিক পথ।

0 মানুষকে শ্রবণশক্তি , দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ দেয়া হয়েছে।

0 মানুষ খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

0 মানুষ ধরণীর বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

0 কাফেররা আল্লাহর প্রতিশ্রুতিকে (ক্বিয়ামত্ সম্পর্কে) উড়িয়ে দেয়।

0 ক্বিয়ামত্ কখন সংঘটিত হবে সে সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল আল্লাহ্ তা আলারই আছে।

0 রাসূল (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সতর্ককারী মাত্র (জবরদস্তিকারী নন)।

0 ক্বিয়ামতের দিনে কাফেরদের চেহারা কালিমালিপ্ত হবে।

0 কাফেরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে।

0 নবী ও ঈমানদারগণ পরম দয়াবান আল্লাহর ওপর ভরসা করেন।

এখানে উক্ত সূরাহর বক্তব্যকে কেবল এতে সন্নিবেশিত তথ্যাদির দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হয়েছে। এ সূরাহর বক্তব্যের বালাগ্বাত্-ফাছ্বাহাতের সৌন্দর্য সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ সূরাহটি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।