কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 42614
ডাউনলোড: 3620

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 42614 / ডাউনলোড: 3620
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

সূরাহ্ কাওছারের বিকল্প !

একই লেখক সূরাহ্ কাওছারের বিকল্প রচনার নামে লিখেছেন :

) انا اعطيناک الجواهر. فصل لربک و جاهر. و لا تعتمد قول ساحر(

নিশ্চয়ই আমি তোমাকে জাওয়াহের দিয়েছি। অতএব , তুমি তোমার প্রভুর জন্য ঊচ্চৈঃস্বরে নামায আদায় করো , আর জাদুকরদের কথার ওপরে আস্থা স্থাপন করো না।

উল্লেখ্য ,جواهر হচ্ছেجوهر -এর বহুবচন।جوهر -এর দু টি অর্থ : (1) কোনো কিছুর মূল বস্তু ( Essence), (2) মূল্যবান মণিমুক্তা। বলা বাহুল্য যে , এখানে দ্বিতীয় অর্থই লক্ষ্য।

লেখক তাঁর ধারণা অনুযায়ী কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কোরআনের সূরাহ্ আল্-কাওছার্-এর যে তথাকথিত বিকল্প রচনা করেছেন তা কয়েকটি দিক থেকে ত্রুটিযুক্ত ও বাত্বিল। তা হচ্ছে :

(1) পাঠক-পাঠিকাগণ নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন , লেখক তাঁর তথাকথিত বিকল্প সূরায় কোরআন মজীদের সূরাহ্ কাওছারের বর্ণনাভঙ্গি ও শব্দ সংযোজন পদ্ধতির অনুকরণ করেছেন ; তিনি শুধু এর কয়েকটি শব্দের পরিবর্তন করেছেন মাত্র। আর এ করেই তিনি কল্পনা করেছেন যে , তিনি কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন এবং সূরাহ্ কাওছারের বিকল্প রচনা করেছেন।

(2) আর এই তথাকথিত বিকল্পটিও তাঁর নিজের নয় , বরং তিনি এটি মুসাইলামাহ্ কাযযাব্ থেকে চুরি করেছেন এবং সামান্য রদবদল করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। কারণ , মুসাইলামাহ্ সূরাহ্ কাওছারের মোকাবিলায় লিখেছিলো :

انا اعطيناک الجماهر. فصل لربک و هاجر. و ان مبغضک رجل کافر

অবশ্য আমি তোমাকে অনেকগুলো জনসমষ্টি দিয়েছি। অতএব , তুমি তোমার প্রভুর জন্য নামায আদায় করো ও হিজরত করো। আর নিশ্চয়ই তোমার শত্রু ব্যক্তি কাফের।

(3) এর চেয়েও বিস্ময়কর হচ্ছে এই যে , লেখক ধরে নিয়েছেন যে , দু টি কালামের বাক্যসমূহের অন্ত্যমিল ও ঝঙ্কার যদি অভিন্ন হয় তাহলেই বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের মানদণ্ডে তা সমপর্যায়ের হবে। অথচ আসলে তা নয়। বরং কোনো কালামের ফাছ্বাহাতের জন্য সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে এই যে , কালামের বিভিন্ন বাক্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বয় থাকতে হবে যা লেখকের বক্তব্যে পুরোপুরি অনুপস্থিত।

বস্তুতঃ জাওয়াহের দান করার অনিবার্য দাবী এ নয় যে , এ জন্য নামায আদায় করতে হবে এবং তা-ও উচ্চৈঃস্বরে। কারণ , আল্লাহ্ তা আলা তাঁর বান্দাহদেরকে অসংখ্য নে আমত দান করেছেন। এর মধ্যে ধনসম্পদের তুলনায় অধিকতর মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বহু নে আমত রয়েছে , যেমন : জীবনের নে আমত , বিচারবুদ্ধি (عقل )-এর নে আমত , ঈমানের নে আমত ইত্যাদি। এমতাবস্থায় উক্ত লেখক কী করে ধনসম্পদের নে আমতের জন্য নামায আদায় অপরিহার্য মনে করছেন ?

তবে হ্যা , যে ব্যক্তি ধনসম্পদ শোষণের মাধ্যমে সমাজের শীর্ষে আরোহণ করেছে এবং ধনসম্পদকেই নিজের জন্য ক্বিবলাহ্ , খোদা ও জীবন-লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছে - যার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ধনসম্পদেই কেন্দ্রীভূত এবং পার্থিব ধনসম্পদ সংগ্রহ ও পুঞ্জীভূতকরণই যার একমাত্র লক্ষ্য , এ কারণে যে চার হাত-পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ধনসম্পদের দিকে এগিয়ে চলে , ধনসম্পদ অর্জনের পিছনে সমস্ত রকমের চেষ্টা ও শ্রম কেন্দ্রীভূত করে এবং অন্য সমস্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ওপর একে অগ্রাধিকার প্রদান করে , তার ব্যাপারই আলাদা। আর , কথায় বলে , পাত্রের গা চুঁইয়ে তা-ই বের হয় যা আছে তার অভ্যন্তরে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , সূরাহ্ কাওছারে যে নামায আদায়ের কথা বলা হয়েছে তা (উক্ত লেখক তাঁর তথাকথিত বিকল্পেও যা বহাল রেখেছেন) তা সাধারণভাবে বাধ্যতামূলক নামায নয় , বরং বিশেষ ও অসাধারণ নে আমতের জন্যে নামায অর্থাৎ শোকরানা নামায। কারণ , সূরাহ্ কাওছারে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে কাওছার নামক নে আমত দানের কথা বলা হয়েছে। এই কাওছার -এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আধিক্য বা প্রাচুর্যের অধিকারী যে কোনো কিছু এবং প্রচুর কল্যাণের উৎস ব্যক্তি । অত্র সূরায় হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে প্রদত্ত কাওছার -এর দু টি পারিভাষিক অর্থ রয়েছে , তা হচ্ছে : (1) বেহেশতের কাওছার নামক হাউয যা থেকে তিনি হাশরের দিনে তাঁর অনুসারীদেরকে পানি পান করাবেন। (2) তাঁর সন্তান হযরত ফাত্বেমাহ্ ( আঃ) - যার বংশধরদের মধ্য থেকে মা ছ্বূম ইমামগণ ( আঃ) ছাড়াও কারবালার নেত্রী হযরত যায়নাব (সালামুল্লাহি আলাইহা) এবং অসংখ্য মুজতাহিদ , ফকীহ্ , আলেম , দার্শনিক , মুজাহিদ ইত্যাদি বিশিষ্ট ও যুগস্রষ্টা ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে। তাঁদের সকলের পরিচিতি তুলে ধরতে হলে বিরাট এক বিশ্বকোষ রচনা করতে হবে। বলা বাহুল্য যে , তাঁরা মানবতার জন্য , বিশেষ করে জ্ঞান , শিক্ষা ও নৈতিকতার বিস্তারের ক্ষেত্রে শুধু মুসলমানদের জন্য নয় , বরং সমগ্র মানবতার জন্য অফুরন্ত কল্যাণের উৎস হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে কিয়ামত পর্যন্ত হযরত ফাত্বেমাহ্ (সাঃ আঃ)-এর বংশে এ ধরনের ব্যক্তিত্ববর্গের আগমন অব্যাহত থাকবে।

অনেক মুফাসসিরের মতে , অত্র সূরায় কাওছার পরিভাষাটি উপরোক্ত ঊভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে এবং এ মতটিই সঠিক বলে মনে হয়। তবে এ সূরাহ্ একটি ভবিষ্যদ্বাণীও বটে। এ কারণে এর উপরোক্ত দু টি বাহ্যিক তাৎপর্যের মধ্যে দ্বিতীয়োক্তটিই হচ্ছে সর্বপ্রধান বাহ্যিক তাৎপর্য। কারণ , তা মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের সামনে এ দুনিয়ার বুকেই বাস্তবায়িত হয়েছে।

অত্র সূরায় কাওছার পরিভাষাটি হাউযে কাওছার ও হযরত ফাত্বেমাহ্ (সাঃ আঃ) - এ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাক বা এর যে কোনো একটি অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাক , তা যে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে প্রদত্ত এক ব্যতিক্রমধর্মী মহা নে আমত তাতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। অন্যদিকে ধনসম্পদ কমবেশী সবাইকেই দেয়া হয়েছে এবং প্রভূত ধনসম্পদের মালিকের সংখ্যাও কোনো যুগেই খুব একটা কম ছিলো না। তাছাড়া প্রভূত ধনসম্পদ জোর-যুলুম সহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পন্থায়ও হস্তগত করা যায়। অন্যদিকে বৈধ ধনসম্পদও অবৈধ কাজে ব্যবহার করলে বা তা থেকে দরিদ্র জনদের ও সমাজের হক্ব্ আদায় না করলে সে সম্পদ কার্যতঃ নে আমত নয় , বরং আযাব ও চিরন্তন দুর্ভাগ্যের কারণ।

(4) লেখকের কাছে প্রশ্ন করা যেতে পারে : তিনি যেجواهر -এর পূর্বে নির্দিষ্টকরণ মূলকال যোগ করেالجواهر বলেছেন তার উদ্দেশ্য কী ?

উক্ত বাক্যে লেখকের লক্ষ্য যদি কোনো সুনির্দিষ্ট ও বিশেষجواهر হয়ে থাকে তাহলে বলবো , তাঁর রচিত বাক্যসমূহের মধ্যে এমন কোনো নিদর্শন নেই যা থেকে বোঝা যেতে পারে যে , তিনি কোন্ সুনির্দিষ্টجواهر বুঝাতে চেয়েছেন। আরجواهر শব্দের আগেال যোগ করার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য যদি হয় দুনিয়ার সমস্ত ধনসম্পদ বুঝানো (যেহেতু বহুবচনের আগেال যোগ করলে সমগ্র বুঝায়) , তাহলে তাঁর এ ভাষণ যে মিথ্যা তা বলাই বাহুল্য। কারণ , বিশ্বের সমস্ত ধনসম্পদ যে কখনোই কোনো এক ব্যক্তিকে দেয়া হয় নি তা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট।

(5) লেখককে আরো প্রশ্ন করা যেতে পারে যে , তাঁর রচিত কালামের প্রথম দুই বাক্য এবং শেষ বাক্য (و لا تعتمد قول ساحر )-এর মধ্যে সম্পর্ক কী ? আর এখানেساحر (জাদুকর)-এর লক্ষ্যই বা কে ? আরساحر -এর কোন্ কথার ওপর আস্থা রাখা ঠিক হবে না ?

এখানে লেখকের লক্ষ্য যদি কোনো সুনির্দিষ্ট জাদুকর এবং তার কথার কোনো সুনির্দিষ্ট অংশ হয়ে থাকে তাহলে এমন কোনো নিদর্শন উল্লেখ করা উচিত ছিলো যাতে সেই সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ও তার বক্তব্যের সুনির্দিষ্ট অংশটি সম্বন্ধে জানা যেতো। কিন্তু লেখকের এ বাক্যে এরূপ কোনো নিদর্শন বিদ্যমান নেই।

আর তাঁর লক্ষ্য যদি হয় যে কোনো জাদুকরের যে কোনো কথাই (যেমন : লেখকের বাক্যেقولساحر উভয় শব্দই অনির্দিষ্টবাচক এবং তা নিষেধাজ্ঞাবাচক বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে - যা সাধারণ ও সর্বজনীন অর্থ জ্ঞাপন করে) , তাহলে এ বাক্যের অর্থ হবে : কোনো জাদুকরের কোনো কথার ওপরই আস্থা স্থাপন করো না বা নির্ভর করো না। তাহলে লেখকের কথা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ , বিচারবুদ্ধি বলে না যে , জাদুকরের কোনো কথাই বিশ্বাস করা যাবে না , তা সে কথা সাধারণ কাজকর্মের ব্যাপারে হোক না কেন বা অন্যদের কথার প্রতি সমর্থনসূচক কথা হোক না কেন।

আর লেখকের উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে , জাদুকরদের জাদু সংশ্লিষ্ট কথাবার্তায় বিশ্বাস করো না , তাহলে তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ , জাদুকর ব্যক্তি জাদুকর হিসেবে কোনো বক্তব্য নিয়ে উপস্থিত হয় না , আর জাদু কোনো কথা বা বক্তব্য নয়। বরং জাদুকরের জাদু হচ্ছে কতোগুলো কৌশল ও প্রতারণামূললক কাজ , কোনো কথা বা ভাষণ নয়।

তাছাড়া জাদুকর তার কাজকে জাদু হিসেবেই পরিচিত করে। সে আগেই জানিয়ে দেয় যে , সে এমন কৌশলের অধিকারী যার ফলে যা বাস্তবে নেই তাকেই আছে বলে লোকদেরকে দেখিয়ে দিতে পারে। জাদুকর তার জাদুর এ পরিচয় দানের কথায় সত্যবাদী। অতএব , তাতে আস্থা স্থাপন না করার কারণ নেই। মোদ্দা কথা , সূরাহ্ কাওছারের তথাকথিত বিকল্প রচনাকারীর সংশ্লিষ্ট বাক্যটি একটি অর্থহীন বাহুল্য বাক্য।

(6) সূরাহ্ কাওছার এমন লোকদের কথার জবাবে নাযিল্ হয় যারা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে বিদ্রুপ করতো এবং বলতো : এ ব্যক্তি একজনابتر (নির্বংশ) এবং খুব শীঘ্রই সে যখন মারা যাবে তখন তার নাম ও তার আদর্শ হারিয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :

) ام يقولون شاعر نتربص به ريب المنون( .

তারা কি বলে : সে একজন কবি ; আমরা তার মৃত্যু-দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করবো। ? (সূরাহ্ আত্-তূর্ : 30)

বিরোধীদের এ জাতীয় বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে সা্ত্বনা দেয়ার লক্ষ্যে আল্লাহ্ তা আলা সূরাহ্ কাওছার নাযিল্ করেন এবং এরশাদ করেন :

) انا اعطيناک الکوثر( .

(হে রাসূল!) অবশ্যই আমি আপনাকে প্রভূত কল্যাণের উৎস (কাওছার) দান করেছি।

হ্যা , সকল দিক থেকেই হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে প্রভূত কল্যাণ প্রদান করা হয়। এ দুনিয়ার বুকে তিনি রিসালাত-নবুওয়াত , মানুষের হেদায়াত ও মুসলমানদের নেতৃত্বের মর্যাদায় ভূষিত হন , অন্যদিকে স্বীয় জীবদ্দশায়ই তিনি অনুসারীদের সংখ্যাধিক্য ও দুশমনদের বিরুদ্ধে বিজয়ের অধিকারী হন। তেমনি তাঁর কন্যা হযরত ফাত্বেমাহর (সাঃ আঃ) মাধ্যমে তাঁর বংশধারা বিস্তার লাভ করে এবং সংখ্যার দিক থেকেও তাঁরা আধিক্যের অধিকারী। আর পরকালেও তিনি সবচেয়ে বড় শাফা আতকারীর মর্যাদা লাভ করবেন , প্রশংসিত ধামে হবে তাঁর অবস্থান , বেহেশতে তিনি পাবেন সমগ্র মানবকুলের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদা এবং তিনি হবেন হাউযে কাওছারের অধিকারী - যেখান থেকে কেবল তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা পিপাসা নিবৃত্তি করে পরিতৃপ্ত হতে সক্ষম হবেন। এ ছাড়াও আরো বহু নে আমতের অধিকারী হবেন তিনি।

এরপর আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) فصل لربک و انحر( .

অতএব , (এসব নে আমতের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ) নামায আদায় করুন এবং পশু যবেহ্ করুন।

অবশ্যنحر শব্দের কয়েকটি মানে হতে পারে। যেমন : মানত হিসেবে বা ঈদুল আয্হা উপলক্ষ্যে উষ্ট্র যবেহ্ করা , তাকবীর বলার সময় দুই হাত গলা পর্যন্ত উঠানো , শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহকারে ক্বিবলাহমুখী হওয়া। তেমনি নামাযের ক্বিয়াম অবস্থায় যথাযথ ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে দাঁড়ানোওنحر শব্দের অন্যতম অর্থ।

ওপরেنحر শব্দের যতোগুলো অর্থ উল্লেখ করা হলো তার সবগুলোই এ প্রসঙ্গে প্রযোজ্য। কারণ , এর যে কোনো অর্থই গ্রহণ করি না কেন , তা-ই এক ধরনের শোকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। আল্লাহ্ তা আলা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে যে সীমাহীন নে আমত প্রদান করেন তার জবাবে এভাবে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্যে তাঁকে নির্দেশ দেয়া হয়।

আল্লাহ্ প্রদত্ত সীমাহীন নে আমতের জন্যে শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য নির্দেশ দেয়ার পর আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) انا شانئک هو الابتر( .

নিঃসন্দেহে আপনার দুশমনই - আপনাকে উপহাসকারীই - নির্বংশ।

বস্তুতঃ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে যারা বিদ্রুপ ও উপহাস করেছে তাদের পরিণতি তা-ই হয়েছে যা কোরআন মজীদ তার উক্ত আয়াতে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। অর্থাৎ তাদের জন্য কোনো সুনাম-সুখ্যাতি যেমন বজায় থাকে নি , তেমনি তাদের বংশধারার পরিচয় বহনকারী লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর পরকালেও তারা কঠিন শাস্তি ও অপমান-লাঞ্ছনা-গঞ্জনার সম্মুখীন হবে।

এই হচ্ছে সংক্ষেপে সূরাহ্ কাওছারের লক্ষ্য ও তাৎপর্য। এমন উঁচু মানের ও বালাগ্বাতের বিচারে পূর্ণতা বিশিষ্ট সূরাহর সাথে উক্ত লেখকের পরস্পর সম্পর্করহিত বাক্য তিনটির আদৌ কোনো তুলনা চলে কি ?

কী আশ্চর্য! উক্ত লেখক বহু কসরত করে যে বাক্যগুলো উপস্থাপন করেছেন তাতে কোরআন মজীদেরই বাক্যগঠন রীতি ও শব্দসংযোজন পদ্ধতির অনুকরণ করেছেন , আর রদবদলকৃত শব্দাবলীর অংশবিশেষ মুসাইলামাহ্ থেকে গ্রহণ করেছেন এবং অন্ধ দুশমনী , গোঁড়ামি ও অজ্ঞতা বশতঃ এগুলোকে পরস্পর গ্রথিত করে বাক্য রচনা করেছেন , অথচ এরই সাহায্যে তিনি কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ , ফাছ্বাহাত ও অলৌকিকতার মোকাবিলা করতে চাচ্ছেন এবং কোরআন মজীদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাকে খাটো করার চেষ্টা করছেন!!