কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 42613
ডাউনলোড: 3619

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 42613 / ডাউনলোড: 3619
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

কোরআন মজীদ রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) শ্রেষ্ঠতম মুজিযাহ্

কোরআন রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) একমাত্র মু জিযাহ্ নয়

যে কোনো ওয়াকেফহাল ব্যক্তিই জানেন যে , কোরআন মজীদ হচ্ছে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর শ্রেষ্ঠতম মু জিযাহ্ এবং একই সাথে সমস্ত নবী-রাসূলের ( আঃ) প্রদর্শিত সকল মু জিযাহর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। বিশেষ করে মানবেতিহাসের সমস্ত মু জিযাহর মধ্যে এই একটিমাত্র মু জিযাহ্ই এখনো বহাল রয়েছে এবং ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

আমরা আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনা সমূহে কোরআনে করীমের অলৌকিকতার বিভিন্ন দিকের ওপর সংক্ষেপে আলোকপাত করেছি এবং সেই সাথে অন্য সমস্ত মু জিযাহর ওপর কোরআন মজীদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণও উল্লেখ করেছি। কিন্তু এখানে আমরা যে কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই তা হচ্ছে কোরআন মজীদ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর শ্রেষ্ঠতম মু জিযাহ্ , কিন্তু একমাত্র মু জিযাহ্ নয়। কারণ , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) বহু মু জিযাহর অধিকারী ছিলেন।

অতীতের নবী-রাসূলগণ ( আঃ) যে সব মু জিযাহর অধিকারী ছিলেন হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)ও সেই একই ধরনের মু জিযাহর অধিকারী ছিলেন। বরং তিনি পূর্ণতর রূপে এ সব মু জিযাহর অধিকারী ছিলেন। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ও একমাত্র চিরস্থায়ী মু জিযাহ্ কোরআন মজীদ হচ্ছে বিশেষভাবে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক আনীত মু জিযাহ্ - যা অন্য কোনো নবী-রাসূলকে ( আঃ) দেয়া হয় নি এবং এ দিক থেকে তিনি যে অসাধারণ মর্যাদার অধিকারী তা-ও অন্য কোনো নবী-রাসূলকে ( আঃ) দেয়া হয় নি।

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) মু জিযাহ্ সমূহ পূর্ণতর

প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় যে , বিভিন্ন নবী-রাসূলকে ( আঃ) প্রদত্ত মু জিযাহ্ দুই ধরনের। এক ধরনের মু জিযাহ্ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূলগণকে ( আঃ) দেয়া হয়েছিলো তাঁদের নবুওয়াত প্রমাণের জন্য। সুস্থ বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের জন্য নবীর নবুওয়াতের সত্যতা সম্পর্কে প্রত্যয় উৎপাদনে তা-ই যথেষ্ট। কিন্তু এ জাতীয় মু জিযাহ্ প্রদর্শনের পরেও যারা ঈমান আনে নি তাদেরকে পরকালীন শান্তির জন্য ছেড়ে দেয়া হয়।

নবী-রাসূলগণকে ( আঃ) প্রদত্ত দ্বিতীয় ধরনের মু জিযাহ্ হচ্ছে এমন যা কাফেরদের দাবীর জবাবে প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তা দেখার পরেও ঈমান না আনা ইহকালেই তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছে। যেমন : ছামূদ্ জাতির নিকট প্রেরিত হযরত ছ্বালেহ্ ( আঃ) মু জিযাহ্ স্বরূপ যে উষ্ট্রী আনয়ন করেন তার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করায় ছামূদ জাতি ধ্বংস হয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ ( আঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহও যে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে পূর্ণতর রূপে প্রদান করা হয়েছিলো তার সপক্ষে দু টি অকাট্য প্রমাণ রয়েছে :

(1) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত বিভিন্ন মু জিযাহ্ সম্পর্কে বহু মুতাওয়াতির্ হাদীছ রয়েছে। এছাড়া এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন চিন্তা ও মতের অনুসারী গ্রন্থকারগণের প্রণীত বহু গ্রন্থ রয়েছে।

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত বিভিন্ন মু জিযাহ্ সম্পর্কিত এ মুতাওয়াতির্ হাদীছ সমূহ দুই দিক থেকে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ; অতীতের নবী-রাসূলগণের ( আঃ) প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহ সম্পর্কে আহলে কিতাব্ সূত্রে যে সব বর্ণনা পাওয়া যায় সে সব বর্ণনা এ দু টি বিশিষ্ট মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। তা হচ্ছে :

এক : সময়ের নৈকট্য

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহ সময়ের দিক থেকে আমাদের অধিকতর নিকটবর্তী। আর বলা বাহুল্য যে , যে ঘটনাই সময়ের দিক থেকে পাঠক বা শ্রোতার নিকটতর হয় এবং ঘটনাটির সংঘটনকালের ব্যবধান সংক্ষিপ্ততর হয় তা অধিকতর প্রত্যয় উৎপাদক হয়ে থাকে , আর তা থেকে প্রত্যয় হাছ্বিল্ করা সহজতরও বটে।

দুই : তাওয়াতোর্ ও বর্ণনার আধিক্য

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহের বর্ণনাকারীর সংখ্যা অনেক বেশী। কারণ , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর ছ্বাহাবীদের সংখ্যা বনী ইসরাঈলের মধ্যে হযরত মূসা ( আঃ) ও হযরত ঈসা ( আঃ)-এর সঙ্গীসাথীদের তুলনায় অনেক বেশী ছিলো। বস্তুতঃ যতো লোক হযরত মূসা ( আঃ) ও হযরত ঈসা ( আঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহ প্রত্যক্ষ করেছিলেন তার চেয়ে অনেক গুণ বেশী লোক হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহ প্রত্যক্ষ করেন ও বর্ণনা করেন। বিশেষ করে হযরত ঈসা ( আঃ)-এর যুগে তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা ছিলো খুবই কম - আঙ্গুলে গণনা করার মতো। ফলে তাঁর মু জিযাহ্ বর্ণনাকারীর সংখ্যাও ছিলো আঙ্গুলে গণনা করার মতো (যা তাওয়াতোর্ পর্যায়ের বলে গণ্য হতে পারে না)।

এর চেয়েও বড় কথা হচ্ছে এই যে , পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের ( আঃ) মু জিযাহ্ সমূহ বর্ণনাকারীদের তালিকা পরম্পরা সূত্রে পাওয়া যায় না অর্থাৎ মু জিযাহর সকল প্রত্যক্ষদর্শী ও তাঁদের কাছ থেকে শ্রবণকারীদের তালিকা সংরক্ষিত হয় নি। অন্যদিকে ছিটেফোঁটা যাদের নাম পাওয়া যায় তাঁদের জীবনেতিহাস সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না অর্থাৎ তাঁদের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। ফলে এ সব বর্ণনা আদৌ নির্ভরযোগ্য ও প্রত্যয়উৎপাদক হতে পারে না। তবে মুসলমানরা যে , ঐ সব মু জিযাহ্ সম্পর্কে ঈমান পোষণ করে , তা করে সে সম্পর্কে কোরআন মজীদ ও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে , আহলে কিতাবের বর্ণনার কারণে নয়।

অন্যদিকে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহ প্রত্যক্ষ দর্শক ও পরবর্তী পর্যায়ে তথা প্রতিটি স্তরে শত শত বর্ণনাকারী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে এবং সংশ্লষ্ট প্রতিটি বর্ণনাকারীর জীবনকাহিনী ইলমে রিজাাল্-এ বর্ণিত হয়েছে।

এতদসত্ত্বেও হযরত মূসা ( আঃ) ও হযরত ঈসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ সমূহ সম্পর্কে তাওয়াতোর্ ও উদ্ধৃতির আধিক্যের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে (যদিও এ সম্পর্কে প্রকৃত অবস্থা তা-ই যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) , তাহলে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর মু জিযাহ্ সমূহ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর তাওয়াতোর্ সমস্ত রকমের সন্দেহ-সংশয়ের উর্ধে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত মু জিযাহর সংখ্যা অনেক। যেমন : চন্দ্র দ্বিখণ্ডিতকরণ , মৃতকে জীবিতকরণ , কাঠের তৈরী মিম্বারের ক্রন্দন ও তাঁর সাথে কথা বলা , তাঁর সাথে সাপের কথা বলা , সীমিত খাদ্যে বিস্ময়কর পরিমাণে বৃদ্ধি (বরকত) হওয়া ইত্যাদি। আমরা এখানে এ সব মু জিযাহ্ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। কারণ , এখানে আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কোরআন মজীদ - যা চিরস্থায়ী মু জিযাহ। কোরআন মজীদকে জানতে পারলে এবং তার অলৌকিকত্ব সম্পর্কে প্রত্যয়ের সৃষ্টি হলে অন্য কোনো মু জিযাহ সম্পর্কে অবগত না থাকলেও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াত সম্পর্কে প্রত্যয় সৃষ্টির পথে কোনো বাধা থাকে না। [বস্তুতঃ অত্র অধ্যায়ের আলোচনার উদ্দেশ্য শুধু তাদের ভ্রান্তি নিরসন যারা মনে করে যে , আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর অন্য কোনো মু জিযাহ ছিলো না।]

(2) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) যে অতীতের নবী-রাসূলগণের ( আঃ) সমস্ত মু জিযাহর অধিকারী ছিলেন তার সপক্ষে দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে এই যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) অতীতের নবী-রাসূলগণের ( আঃ) প্রদর্শিত বহু মু জিযাহর কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাঁদের মাধ্যমে এ সব মু জিযাহ্ প্রদর্শিত হওয়ার কথা সত্যায়িত করেছেন। অতঃপর তিনি অন্য সমস্ত নবী-রাসূলের ( আঃ) ওপর তাঁর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করেছেন এবং নিজেকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে ঘোষণা করেছেন।

এমতাবস্থায় হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও উচ্চতর মর্যাদার দাবী হচ্ছে এই যে , তিনি অতীতের নবী-রাসূলগণের ( আঃ) প্রদর্শিত মু জিযাহ্ সমূহের পূর্ণতর রূপের অধিকারী হবেন , ঠিক যেভাবে অতীতের নবী-রাসূলগণকে ( আঃ) খোদায়ী আয়াত ও কিতাব্ দেয়া হলেও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে খোদায়ী কিতাবের পূর্ণতম সংস্করণ দেয়া হয়েছে।

এটা কী করে হতে পারে যে , যিনি অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর তাঁর মধ্যে অন্যদের পূর্ণতাবাচক গুণাবলীর মধ্য থেকে কতক গুণ কম বা অপূর্ণ মাত্রায় থাকবে ? এটা কি চিন্তা করা যায় যে , উদাহরণস্বরূপ , যে ডাক্তার দাবী করেন যে , তাঁর জ্ঞান অন্য সমস্ত ডাক্তারের জ্ঞানের তুলনায় বেশী অথচ এমন কোনো কোনো ডাক্তার পাওয়া যাবে যারা কোনো কোনো বিশেষ ব্যধির চিকিৎসায় সক্ষম যার চিকিৎসায় তিনি সক্ষম নন ? এহেন অবস্থা বিচারবুদ্ধির বিচারে একেবারেই অসম্ভব।

এ কারণেই আমরা দেখতে পাই যে , যারা মিথ্যা নবুওয়াতের দাবী করে তারা স্বয়ং মু জিযাহ্ নামক বিষয়টির অস্তিত্বই অস্বীকার করে। তারা সমস্ত নবী-রাসূলের ( আঃ) সমস্ত মু জিযাহকেই অস্বীকার করে এবং এতদসংক্রান্ত আয়াত সমূহের মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। এর উদ্দেশ্য ছিলো , কেউ যেন এ সব ভণ্ড নবীর কাছে মু জিযাহ্ প্রদর্শনের জন্য দাবী করে না বসে - যা প্রদর্শনে তারা পুরোপুরি অক্ষম। এভাবে তারা তাদের মিথ্যা দাবীর স্বরূপ লুক্কায়িত রাখার চেষ্টা করে।