কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 60047
ডাউনলোড: 3100

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 60047 / ডাউনলোড: 3100
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী (আঃ) ও তার জন্ম

একদল বিশেষজ্ঞ , তাদের মধ্যে আছেন সূফী হাদীসবেত্তা মুহাম্মাদ খাজা বুখারী তার বই ফাসলুল খেতাব এ (ইয়া নাবিউল মাওয়াদ্দার 387 পৃষ্ঠায় যেভাবে লেখা আছে) বর্ণনা করেছেন যে , হযরত ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদ (আঃ)-এর কন্যা হাকিমাহ এবং আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর (আঃ) ফুপু সবসময় প্রর্থনা করতেন ও কাদতেনঁ এবং আল্লাহর কাছে চাইতেন তিনি যেন তাকে হযরত এর পুত্র সন্তান-এর সাক্ষাত লাভে সফলতা দেন। 255 হিজরীর 15ই শাবান যখন তিনি হযরত হাসান আসকারীর (আঃ) সাথে সাক্ষাত করলেন তখন হযরত তাকে তার সাথে থাকতে বললেন কারণ একটি ঘটনা ঘটবে। তাই তিনি ঐ জায়গায় থেকে গেলেন। খুব সকালে নারজিস বেগম (হযরত মাহদীর মা) অসুবিধা বোধ করতে লাগলেন। তখন হাকিমাহ তার কাছে দ্রুত্র গেলেন এবং এর কয়েক মহুর্ত পর নারজিস বেগম খতনা করা এক বরকতময় সন্তান প্রসব করলেন। যখন হাকিমাহর দৃষ্টি বাচ্চার উপর পড়লো তিনি তাকে কোলে তুলে নিলেন এবং হযরত হাসান আসকারী (আঃ)-এর কাছে গেলেন। হযরত হাসান আসকারী তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তার বরকতময় হাত পিঠ ও চোখে বুলিয়ে দিলেন এবং তার মুখের উপর মুখ রাখলেন। এরপর তিনি আযান দিলেন বাচ্চার ডান কানে এবং আকামাত দিলেন তার বাম কানে। এরপর বললেন , হে ফুপু , তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যান। হাকিমাহ তা পালন করলেন এবং বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন। হাকিমাহ বলেন , আবার আমি আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর বাসায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ আমি দেখলাম হযরত একটি হলদু জামা পড়া বাচ্চাকে বহন করছেন যার চেহারা আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তখন তার ভালোবাসা আমার হৃদয় ঢেকে ফেললো এবং আমি বললাম , হে আমার ওয়ালী (অভিভাবক) এ বরকতময় বাচ্চা সম্পর্কে আপনার কী বলার আছে ? তিনি বললেন- হে ফুপু , সে সেই প্রতীক্ষিত জন যার সম্পর্কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। তখন আমি নিজেকে মাটিতে ফেলে দিলাম এবং আল্লাহকে সিজদা করলাম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে।

এ বইয়ের লেখক বলতে চান- যা আমরা আগে বর্ণনা করেছি এবং পরে যা আমরা বর্ণনা করবো তা তার জন্মকে প্রমাণ করে। এসব রেওয়ায়েতের বেশ কয়েকটি অংশ আছে। এক অংশ ইঙ্গিত করে তিনি 12তম উত্তরাধিকারী , অন্যগুলি বলে তিনি 12তম ওয়াসী। এছাড়া অন্যগুলো বলে তিনি ইমাম হোসেইন (আঃ)-এর নবম বংশধর। আরো কিছু অংশ বলে তিনি ইমাম রিদা (আঃ)-এর 4র্থ বংশধর এবং কিছু বলে তিনি হযরত আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান। আরো কিছু অংশ বলে তার আত্মগোপন সম্পর্কে এবং তাকে যে চেনা যাবে না সে সম্পর্কে ।

এ মুসতাফিযা , বরং মুতাওয়াতির রেওয়ায়েতসমূহ পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে প্রতীক্ষিত মাহদী হলেন ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান।

এখন কেউ বলতে পারে উপরোক্ত রেওয়ায়েতগুলো বর্ণনা ধারার দুর্বলতায় দুষ্ট তাই এগুলোকে অস্বীকার করা যায়।

লেখক বলতে চান- যে কেউ রেওয়ায়েতগুলো দেখেছে এবং রিজাল শাস্ত্র পড়ে দেখেছে সে কখনোই তা চিন্তা করবে না। কারণ একদল হাদীসবেত্তা এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা স্বীকার করেছেন এবং কেউ কেউ এদের সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন। বরং হাকেম , যিনি এ শিল্পের একজন নেতা তিনি নিজেও বোখারী ও মুসলিম- এর অভিমত অনুযায়ী এগুলোকে সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন।

আহলে সুন্নাতের বেশীরভাগ আলেম এ হাদীসগুলোর বর্ণনাধারা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের সঠিকতা সমর্থন করেছেন। এদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রত্যাখ্যান করার শামিল।

বেশ কিছু সুন্নী আলেম , হাদীসবেত্তা এবং ঐতিহাসিকের নাম আমরা উল্লেখ করতে চাই যাদের বক্তব্য হলো হযরত মাহদী (আঃ)-এর জন্ম হয়েছে , যেমন-

1। ইসাফুর রাগেবীন অনুযায়ী শেই মহিউদ্দীন আরাবীর ফুতহাতুল মাক্কিয়্যাহ-তে যা এসেছে।

2। শেইখ আব্দুল ওয়াহহাব শারানীর কিতাব আল ইওয়াকিত- ওয়াল- জাওহার -এ।

3। শেইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসফূ গাঞ্জীর কিতাব আল বায়ান ।

4। নুরুল আবসার অনুযায়ী ইবনে ওয়ারদীর তারিখ -এ।

5। ইবনে হাজার হাইসামীর কিতাব সাওয়ায়েকুল মুহরেক্বা - তে।

6। সেবতে ইবনে জওযীর কিতাব তাযকেরাতুল আইম্মা

7। শেইখ মুহাম্মাদ ইবনে তালহার কিতাব মাতালিবুস সূল -এ।

8। শেইখ নুরুদ্দীন আলীর কিতাব ফুসুলুল মুহিম্মা -তে।

9। সম্মানিত সাইয়্যেদ আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ সিরাজুদ্দীন-এর কিতাব সিহাহুল আখবার

10। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লেকান তার ওয়াফায়াতুল আইয়ান এ।

11। ইবনে খালেক্বানের বর্ণনা অনুযায়ী ইবনে আযরাক্ব-এর কিতাব তারিখ -এ।

12। সূফী শেইখ সাইয়্যেদ হাসান আরাক্বী (আল ইওয়াক্বিত ওয়াল জাওহার অনুযায়ী)।

13। শেইখ আলী খাওয়াস (উপরে উল্লেখিত কিতাবে যেভাবে এসেছে)।

14। সূফী আলেম শেইখ মোহাম্মাদ খাওয়াজার ফাসলুল খেতাব -এ (ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা অনুযায়ী)।

15। সাইয়্যেদ মুমিন শাবলানজি তার নুরুল আবসার কিতাবে।

16। সূফী আলেম শেইখ কুন্দুযির ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা তে।

17। বিজ্ঞ বংশ ইতিহাসবিদ আবুল ফায়েয মুহাম্মাদ আমিন বাগদাদী সুয়েদী তার সাবা য়েকুস যাহাব কিতাবে।

18। বর্তমান যুগের বংশ ইতিহাসবিদ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাইয়্যেদ হোসেইন রাফাঈ তার নুরুল আনওয়ারেশ কিতাবে।

19। শেইখ আহমাদ জামীর কবিতা অনুযায়ী যা ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা তে এসেছে। আখবার সাহেবুয যামান -এ।

20। শেইখ আতহার নিশাবুরী র কবিতা অনুযায়ী।

21। শেইখ জালালুদ্দীন রুমীর কবিতা অনুযায়ী।

এছাড়াও আরো অনেকে বিষয়টির সত্যায়ন করেছেন। এভাবে দেখা যায় শিয়া ও সুন্নী উভয়েই এ বিষয়ে একমত। যারা সুন্নী সূত্রের বই ও লেখা পড়ে থাকেন তারা বুঝতে পারবেন যে শিয়া ও সুন্নী উভয়েই একমত যে আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর একটি সন্তান ছিলো যার নাম মুহাম্মাদ , তার উপাধি মাহদী ও তার কুনিয়াত বা ডাকনাম হলো আবুল কাসিম এবং এও সত্য যে তিনি ছিলেন তার পিতার একমাত্র সন্তান , তবে তাদের মাঝে মাহদী সম্পর্কে সামান্য মতভেদ আছে। যেমন ইবনে খাল্লেকান ও অন্যান্য সুন্নী ব্যক্তিদের মধ্যে ইবনে খাল্লেকান বলেন , শিয়ারা ভাবে মাহদী হচ্ছেন ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান। এরপর তিনি বলেছেন ,- মাহদীর জীবন এখন পর্যন্ত চলছে এ বিষয়টি সাধারণ নয় এবং তার সম্ভাবনা কম।

যখন হাসান আসকারীর ছেলে আবুল কাসেম মাহদীর জন্ম হয়ে গেছে বলে প্রমাণিত হবে তখন মাহদী (আঃ) জন্ম ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে , ভবিষ্যতে জন্ম নেবেন একথা সঠিক নয় বলে প্রমাণিত হবে। যদিও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে মুতাওয়াতির হাদীস থেকে এবং আহলে বাইতের নিষ্পাপ সদস্যদের কথা থেকে , যারা অন্যদের চাইতে বেশী জ্ঞান রাখেন এবং সূফী সাধক এবং পণ্ডিত ব্যক্তিদের কথা থেকে জানা গেছে প্রতীক্ষিত মাহদী এ শিশুটিই যার কথা আমরা ইতিমধ্যে বর্ণনা করেছি।

যাহোক , তার জন্ম সম্পর্কে যা অধিকতর সঠিক বলে মনে হয় তা হলো তিনি জন্ম নিয়েছিলেন 255 হিজরীর 15ই শাবান। আর তাই তার বাবার ইন্তেকালের সময় তার বয়স ছিলো পাচঁ বছর।

মাহদীর (আঃ) নাম , উপাধী ও ডাক নাম

তিরমিযী তার সহীহ -র দ্বিতীয় খণ্ডে (270 পৃষ্ঠায়) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

এ পৃথিবী শেষ হবে না যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি এ পৃথিবী জয় করে। তার নাম আমার নামের মত।

একই বইয়ের একই জায়গায় তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে তবুও আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে যার নাম হবে আমার নামের মত।

এরপর তিনি লিখেছেন এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত। ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব -এ (98 পৃষ্ঠায়) বর্ণনা করেছেন আহমাদ , আবু দাউদ ও তিরমিযী থেকে এবং তিনজনই রাসূল (সাঃ) থেকে যিনি বলেছেনঃ

পৃথিবী শেষ হবে না যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আসবে এবং শাসন করবে। তার নাম হবে আমার নামের মত।

ইসাফুর রাগেবীনের লেখক একই হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইকদুদ দুরার - এর লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইমাম আবু বকর মুক্বারীর সুনান থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

পৃথিবী শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি তা জয় করে।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে তিনি হাফেয আবু নাঈমের সিফাতুল মাহদী এবং আবু মুক্কারীর সুনান থেকে এবং তারা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। তার নাম আমার নামের মত এবং তার নৈতিকতা আমার নৈতিকতার মত। সে পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে।

আবার উক্ত বইয়ের একই অধ্যায়ে তিনি হাফেয আবু নাঈম থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

পৃথিবীর জীবন যদি আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন যার নাম হবে আমার নামের মত এবং যার নৈতিকতা হবে আমার নৈতিকতা। তার ডাক নাম হবে আবুল কাসিম।

এছাড়া একই বইয়ের একই অধ্যায়ে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

সময়ের শেষে আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। তার নাম ও ডাক নাম আমার নাম ও ডাক নামের মত হবে। সে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতায় ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

আমরা উক্ত বিষয়ে যা বর্ণনা করেছি তা অল্প কিছু সংখ্যক হাদীস যা হযরত মাহদীর (আঃ) নাম ও ডাক নাম উল্লেখ করে।

ইকদুদ দুরার - এর লেখক এ বিষয়ে একটি আলাদা অধ্যায় বর্ণনা করেছেন। এগুলো ও অন্যান্য কিছু হাদীস এবং তাদের দীর্ঘ ব্যাখ্যা (যা আমরা ইতিমধ্যে কিছু বর্ণনা করেছি এবং যা ভবিষ্যতে উল্লেখ করবো) দেখায় যে তার নাম মুহাম্মাদ । তার উপাধি হচ্ছে মাহদী এবং ডাক নাম বা কুনিয়াত হলো আবুল কাসিম এবং এগুলো সুপরিচিত বিষয়। যাহোক দু একটি হাদীসে তার নাম আহমাদ বলে বর্ণিত হয়েছে। সম্ভবতঃ এটি বর্ণনাকারীর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অথবা তার পক্ষ থেকে একটি ভুল। এ ধারণা যদি ভুলও হয় তবে আমরা বলবো এ হাদীস অন্যান্য হাদীসগুলোর তুলনায় সংখ্যায় অতি নগণ্য।

তাযকেরাতলু আউলিয়ার লেখক আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তানদের কথা বলতে গিয়ে বলেন , তাদের মধ্যে আছে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে মূসা ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হোসেইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব। তার ডাক নাম হচ্ছে আবু আব্দুল্লাহ ও আবুল ক্বাসেম এবং তিনি হলেন উত্তরাধিরারী , হুজ্জাত (প্রমাণ) , যুগের কর্তা , ক্বায়েম , এবং মুনতাযার (প্রতীক্ষিত জন)। তিনি হবেন শেষ ইমাম।

মাতালিবুস সূল - এর লেখক হযরত মাহদীর জন্মের স্থান উল্লেখ করার পর বলেন- যাহোক , তার নাম হলো মুহাম্মাদ , তার ডাক নাম আবুল ক্বাসিম এবং তার উপাধিগুলো হলো- হুজ্জাত (প্রমাণ) , খালাফাহ সালেহ (সৎকর্মশীল উত্তরাধিকারী)। তাকে মুনতাযার (প্রতীক্ষিতজন) নামেও ডাকা হয়।

ইবনে হাজার তার কিতাব সাওয়ায়েক্ব - এ ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর কথা উল্লেখ করার পর বলেন- তিনি কোন উত্তরাধিকারী রেখে যান নি একমাত্র পুত্র আবুল ক্বাসিম মুহাম্মাদ হুজ্জাত ছাড়া। যার বয়স তার বাবার ইন্তেকালের সময় ছিলো পাঁচ বছর। কিন্তু আল্লাহ তাকে সে বয়সেই প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং তাকে ক্বায়েম এবং মুনতাযার বলে সম্বোধন করা হয়।

নুরুল আবসার এর লেখক মাহদীর (আঃ) কথা উল্লেখ করার পর বলেন- তার নাম হলো মুহাম্মাদ এবং তার ডাক নাম আবুল ক্বাসিম। ইমামিয়াহরা তাকে এ উপাধি দিয়েছে যেমন- হুজ্জাত , মাহদী , খালাফে সালেহ , ক্বায়েম এবং সাহেবুয্যামান। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে মাহদী উপাধি।

মাহদী (আঃ) ও তার পিতা-মাতার নাম

পূর্ববর্তী হাদীসগুলো থেকে যা স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলো (এ বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে) যে প্রতীক্ষিত মাহদী হলেন আবু মুহাম্মাদ ইমাম হাসান আসকারীর পুত্রসন্তান।

নুরুল আবসার -এর লেখক বলেন- মাহদীর পিতা ছিলেন আবু মুহাম্মাদ খালেস ইবনে আলী হাদি ইবনে মুহাম্মাদ জাওয়াদ ইবনে আলী রিদা। মাহদীর মা ছিলেন একজন ক্রীতদাসী যার নাম ছিলো নারজিস এবং কেউ বলে তার নাম ছিলো সীগাল এবং অন্যরা বলে তার নাম ছিলো সুযান

শৈশবে ইমাম মাহদীর (আঃ) ইমামত লাভ

এতক্ষণ মাহদীর (আঃ) বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা যা লিখেছি তা প্রমাণ করে যে তিনি শৈশবেই ইমামতের সম্মান লাভ করেছিলেন এবং এ মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন মাত্র পাচঁ বছর বয়সে।

এখন আমরা দেখতে চাই যে পাচঁ বছর বয়সে কারো পক্ষে ইমামতের আসন পাওয়া সম্ভব এবং অনুমোদনযোগ্য কিনা , নাকি নবী , রাসূল ও তাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য প্রথমে বালেগ হওয়া ও শারীরিক যোগ্যতা লাভ করা অত্যাবশ্যক।

এ বিষয়ে আমরা বিশদ আলোচনা না করে শুধু সংক্ষেপে বলবো যে , রিসালাত , নবুয়ত ও ইমামত এবং তাদের উত্তরাধিকার একমাত্র আল্লাহর হাতে ; এতে অন্য কারো পছন্দ ও অধিকার নেই। অতএব বিবেকবুদ্ধি বলে যে প্রমাণ উপস্থিত থাকার কারণে বলা যায় কোন শিশু যদি নবুয়ত অথবা ইমামত লাভ করে এতে আপত্তি করার কিছু নেই যেহেতু মহান আল্লাহ একজন ইমাম ও নবীর গুণাবলী একজন শিশুর ভিতরে জমা করতে সক্ষম। আল্লাহর ক্ষমতায় কোন দূর্বলতা নেই এবং ঈসা (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ঘটনা আমাদের কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেয়।

বাসীরুদ দারাজাত বইয়ের লেখক আলী ইবনে ইসবাত থেকে বর্ণনা করেন- আমি হযরত আবু জাফরকে (ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)) আমার দিকে আসতে দেখলাম। তিনি যখন আমার কাছে চলে আসলেন আমি তাকে একবার আপাদমস্তক দেখলাম। যেন মিশরে আমার বন্ধুদের কাছে তার বর্ণনা দিতে পারি। এরপর তিনি আল্লাহকে সিজদা করলেন এবং বললেন , নিশ্চয়ই আল্লাহ ইমামতের বিষয়ে যুক্তি উপস্থিত করেছেন যেভাবে তিনি করেছেন নবুয়তের বিষয়ে এবং তিনি বলেছেন :

) وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا(

এবং আমরা তাকে জ্ঞান দিয়েছিলাম শৈশবে। (সূরা মারইয়ামঃ 12)

তিনি আরো বলেছেন ,

) حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً(

যখন সে পূর্ণত্বে পৌঁছায় এবং চল্লিশ বছর বয়সে পৌঁছায়। (সূরা আহক্বাফঃ 15)

ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দা -র লেখক মাহদীর (আঃ) জন্ম বর্ণনা করে 452 পৃষ্ঠায় ফাসলুল খিতাব বই থেকে উল্লেখ করেছেন : মহান আল্লাহ তাকে প্রজ্ঞা দান করেছেন তার শৈশবেই এবং তাকে বানিয়েছেন একজন হুজ্জাত (প্রমাণ) দুনিয়ার মানুষের জন্য। যেমন তিনি তার নবীদের বিষয়ে বলেছেন :

) يَايَحْيَى خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا(

হে ইয়াহইয়া , কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধরো এবং আমরা তাকে প্রজ্ঞা দিয়েছিলাম যখন সে শিশু ছিলো। (সূরা মারইয়ামঃ 12)

তিনি আরো বলেন (ঈসা আঃ সম্পর্কে) :

) فَأَشَارَتْ إِلَيْهِ قَالُوا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَنْ كَانَ فِي الْمَهْدِ صَبِيًّا(

তারা বললো : আমরা কীভাবে তার সাথে কথা বলবো যে দোলনায় এক শিশু ? (সূরা মারইয়ামঃ 29)

) قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا(

সে বললো : নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর একজন দাস , তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে একজন নবী বানিয়েছেন। (সূরা মারিইয়ামঃ 30)

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক -এর 114 পৃষ্ঠায় আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর মৃত্যু উল্লেখ করার পর বলেন- তিনি আবুল কাসিম মুহাম্মাদ হুজ্জাতকে ছাড়া আর কাউকে তার উত্তরাধিকারী করে যান নি যার বয়স তার পিতার মৃত্যুর সময় ছিলো পাচঁ বছর। কিন্তু আল্লাহ তাকে সে সময়ই প্রজ্ঞা দান করেছিলেন।

এছাড়া শাবরাউই তার ইত্তেহাফ -এর 79 (পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন যে , তার খেলাফাত বা উত্তরাধিকার তাঁর পিতার মৃত্যুর পরে পাঁচ বছর বয়সে শুরু হয়েছিলো এবং লেখক মনে করেন যে , তার জন্ম হয়েছিলো 15ই শাবানের রাতে।

মহান আল্লাহ তার বাবার মৃত্যুর সময় তাকে পাঁচ বছর বয়সে প্রজ্ঞা দান করেন যেভাবে তিনি নবী ইয়াহইয়াকে শৈশবে ইমামত দান করেছিলেন এবং ঈসা (আঃ) কে শৈশবে নবী বানিয়েছিলেন। শাবরাউই তার ইত্তেহাফ -এর 79 পৃষ্ঠায় বলেছেন যে তার খিলাফত (উত্তরাধিকার) শুরু হয়েছিলো পাঁচ বছর বয়সে , তার বাবার মৃত্যুর পর এবং তিনি মনে করেন তার জন্ম হয়েছিলো 15ই শাবান। ইবনে খালকানও ওয়াফিয়াতুল আইয়্যান-এর 1ম খণ্ডের 451 পৃষ্ঠায় হযরতের জন্ম দিবস 15ই শাবান 255 হিযরী বলে উল্লেখ করেছেন। সুয়েদি তার সাবায়েকুয-যাহাব (78 পৃষ্ঠা)-এ তার পিতার মৃত্যুর সময়ে তার বয়সকে পাঁচ বছর ছিলো বলে উল্লেখ করেছেন।

মাহদী (আঃ) ও তার দীর্ঘ জীবন

আমরা পূর্বের হাদীসগুলো থেকে জানতে পেরেছি যে প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) যিনি শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন এবং পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো এবং তিনি হাসান আসকারীর সন্তান আবুল কাসেম মুহাম্মাদ আল মাহদী ছাড়া কেউ নন। এটিও প্রমাণিত যে তিনি জন্মেছিলেন 255 হিজরীর 15ই শাবান ভোরে। এ বিষয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে যে তিনি সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত বেঁচে আছেন এবং মাহদীর (আঃ) বয়স এখন এক হাজার একশত বছরেরও বেশী এবং শুধু আল্লাহই বলতে পারেন তিনি কবে (পবিত্র কাবা ঘরে) আবির্ভূত হবেন এবং কবে ইন্তেকাল করবেন।

যদিও জনগণের মাঝে দীর্ঘ জীবন একটি সাধারণ ঘটনা নয় তবু তা প্রকৃতিগতভাবে সম্ভব । এছাড়া মাহদীর (আঃ) দীর্ঘ জীবনের প্রমাণ ও কারণও রয়েছে। অন্য কথায় , মাহদীর দীর্ঘায়িত জীবন একটি সম্ভব ঘটনা এবং যুক্তিও তা নিশ্চিত করে।

তাযকেরাতুল আইম্মা র লেখক বলেন , পরো ইমামিয়া মাযহাব বিশ্বাস করে যে খালাফ-ই-হুজ্জাত জীবিত আছেন এবং তার রিযক লাভ করছেন। হযরত বেচেঁ আছেন এটি প্রমাণ করতে তারা নীচের যক্তিগুলো উপস্থিত করে

তাদের যুক্তি- একদল লোক যেমন , হযরত খিযির (আঃ) ও হযরত ইলইয়াস (আঃ) এখন পর্যন্ত এক লম্বা জীবন যাপন করছেন ; এখন পর্যন্ত জানা যায়নি কত বছর ধরে তারা জীবিত আছেন। প্রত্যেক বছর তারা পরস্পর সাক্ষাত করেন এবং পরস্পরের চুল স্পর্শ করেন।

তওরাতে এসেছে যে , যুলকারনাইন 3 ,000 বছর বেচেছিলেন । কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করে তিনি 1 ,500 বছর বেচেছিলেন।

মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বলেন- আওয়াজ ইবনে উনাক 3 ,600 বছর বেঁচেছিলেন। আওয়াজ ইবনে উনাক (যার বাবার নাম ছিলো সুবহান ও মায়ের নাম ছিলো উনাক) আদম (আঃ) এর যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলো এবং জীবন যাপন করতে থাকে যতক্ষণ না মূসা (আঃ) তাকে হত্যা করেন।

যাহোক , থামারুসও বেচেছিলোঁ 1 ,000 বছর।

নবীদের মধ্যে আমরা হযরত আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ) এর কথা বলতে পারি যারা 1 ,000 বছরের বেশী জীবিত ছিলেন।

ক্বাইনান 900 বছর অন্যদের মাঝে বেঁচেছিলেন। মেহলাঈল 800 বছর বেঁচেছিলো। নুক্বাইল ইবনে আব্দুল্লাহ বেঁচেছিলো 700 বছর। ভবিষ্যতবক্তা রাবিয়া ইবনে উমর বেঁচেছিলো 600 বছর। আমের ইবনে যরেব , যে আরবদের মাঝে ছিলো একজন বিচারক , সে বেঁচেছিলো 500 বছর। একইভাবে সুলাবা এবং সাম ইবনে নূহ 500 বছর বেঁচেছিলো। হারব ইবনে মাযায জারহামি 400 বছর বেঁচেছিলো।

আরফাখশাদ 480 বছর বেঁচেছিলেন। ক্বায়েস ইবনে সাঈদা 380 বছর বেঁচে ছিলো। কাআব ইবনে জুমহা অথবা জাম্মা দুসী 390 বছর বেচেছিলেন। হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) 250 বছর বেঁচেছিলেন এবং অন্যান্যদের মতে 300 বছর বেঁচেছিলেন।

মাতালিবুস সুল - এর লেখক বলেন- মাহদীর জন্ম হয়েছিলো মুতামিদ- এর সময় এবং এখন পর্যন্ত গোপন আছেন (শত্রুদের দিক থেকে) ভয়ের কারণে। কোন ব্যক্তি যদি আত্মগোপনে যায় এবং এরপর তার কাছ থেকে আর কোন সংবাদ না আসে তার অর্থ এটি নয় যে তার মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় ইমাম মাহদী (আঃ)-এর দীর্ঘ জীবন কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা নয়। কারণ আল্লাহ জীবনকে দীর্ঘায়িত করেছেন অনেক নবীর , ওয়াসীর , নির্বাচিতদের এবং শত্রুদের। তার পবিত্র বান্দাদের মধ্যে আমরা উল্লেখ করতে পারি হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত খিযির (আঃ)-এর কথা। এ ছাড়া আরও অনেক নবী ছিলেন (যেমন হযরত নূহ আঃ) যারা 1 ,000 বছর বেঁচেছিলেন। বিতাড়িত শত্রুদের মাঝে আমরা উল্লেখ করতে পারি শয়তান ও দাজ্জাল- এর কথা এবং অন্যরা যেমন আদ বেঁচেছিলো প্রায় 1 ,000 বছর। একই ঘটনা ছিলো লোকমান (আঃ)- এর বিষয়ে। এসব আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনা করে যার মাধ্যমে তিনি তার কিছু বান্দাকে দীর্ঘ জীবন দিয়েছেন। তাই এটি বলা কী ভুল হতে পারে যে মাহদীর জীবনকেদীর্ঘায়িত করা হয়েছে তার আবির্ভাবকার্ল পর্যন্ত