কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 60052
ডাউনলোড: 3102

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 60052 / ডাউনলোড: 3102
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

নৃশংসতা ও নিপীড়ন

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক -এ (পৃষ্ঠা 99) আবুল কাসিম তাবরানি থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার পরে আসবে খলিফারা। খলিফাদের পরে আসবে শাসকরা এবং শাসকদের পরে আসবে রাজারা। তাদের পর আসবে অত্যাচারীরা এবং তার পরে আবির্ভূত হবে এক ব্যক্তি আমার আহলে বায়েত থেকে যে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা অবিচারে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো।

ইসাফুর রাগেবীন -এর লেখক (148 পৃষ্ঠায়) একই রকম একটি হাদীস হাকেম থেকে বর্ণনা করেছেন।

বিশৃঙ্খলা

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তৃতীয় পরিচ্ছেদ , নবম অধ্যায়ে হাফিয আবু নাঈম থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আবু হালাল থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন- যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন আমি তারঁ কাছে গেলাম। তিনি একটি হাদীস বললেন এবং এভাবে শেষ করলেন- হে ফাতেমা , আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যিনি আমাকে সত্যসহ নিয়োগ দিয়েছেন যে মাহদী এ উম্মাহ থেকে এবং সে হাসান ও হোসেইন থেকে।

আল্লাহ মাহদীকে এমন সময়ে পাঠাবেন যখন পৃথিবী বিশৃঙ্খলায় পড়বে। যখন বিদ্রোহ বিজয়ী হবে , যখন উপায় কর্তিত হবে , যখন একদল অপর দলের উপর বিদ্রোহ করবে , যখন কোন বৃদ্ধ কম বয়সীদের উপর দয়া করবে না এবং যখন কোন কম বয়সী থাকবে না যারা বয়স্কদের শ্রদ্ধা করবে। মাহদী পথভ্রষ্টতা ও দুষ্কর্মের দূর্গগুলো জয় করবে। মাহদী শেষ যুগে ধর্মের জন্য উঠে দাঁড়াবে যেভাবে আমি এর শুরুতে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

হত্যা ও মৃত্যু

ইকদুদ দুরার -এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদ , চতুর্থ অধ্যায়ে আলী ইবনে মুহাম্মাদ আযদী থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে তিনি তার পিতামহ আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- মাহদীর সময়ে লাল ও সাদা মৃত্যু ও পঙ্গপাল দৃশ্যমান হবে। লাল মৃত্যু তরবারীর (অস্ত্র ) কথা ইঙ্গিত করে এবং সাদা মৃত্যু প্লেগের কথা বোঝায়।

একই বইতে একই অধ্যায়ে এর লেখক ইমাম আবু আমরো উসমান ইবনে সাঈদ মুক্বারীর সুনান এবং হাফেজ নাঈম ইবনে হেমাদ- এর ফাতান থেকে আমিরুল মোমিনীন আলী (আঃ)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন-

মাহদী আবির্ভূত হবে না যতক্ষণ না (প্রতি) তিনজনের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়। অন্যজন মৃত্যুবরণ করে এবং তৃতীয়জন বাকী থাকে।

দুর্যোগ এবং পরীক্ষা

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক মেশকাতলু মাসাবিহ ও হাকেম এর মুসতাদরাক থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

দুর্যোগ এ উম্মতের উপর আপতিত হবে এমনভাবে যে , কোন ব্যক্তি এ থেকে কোন আশ্রয় খুঁজে পাবে না। এরপর আল্লাহ আমার আহলে বায়েত থেকে একজনকে নিয়োগ দিবেন যে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা আগে নৃশংসতা ও অত্যাচারে পূর্ণ ছিলো।

ইকদুদ দুরার এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদ , চতুর্থ অধ্যায়ে ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- মাহদী আবির্ভূত হবে না যতক্ষণ না জনগণ ভীত হয় , যখন জনগণ ভূমিকম্প ও প্লেগ-এ আক্রান্ত হয় , যখন বিশৃঙ্খলা ও মতভেদ জনগণের মধ্যে দেখা দেয় , যখন তাদের ধর্মের বিষয়ে বিভেদ দেখা দেয় , তখন জনগণের অবস্থা এমনভাবে পরিবর্তিত হবে যে তারা মৃত্যু চাইবে রাত ও দিন। মাহদী আবির্ভূত হবে হতাশা ও নিরাশার সময়ে। রহমতপাপ্ত সে যে মাহদীকে অনুভব করবে এবং তার সাহায্যকারীদের কাতারে যোগদান করবে। অভিশাপ তার উপর যে তাকে ও তার আদেশের বিরোধিতা করবে।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে এর লেখক আবু সাঈদ খুদরী থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আমার পরে বিদ্রোহ দেখা দিবে তা থেকে মুক্তি সম্ভব হবে না। ঐ বিদ্রোহগুলোতে যুদ্ধ ও ছড়ানো ছিটানো সংঘাত ঘটবে। এরপর আরও কঠিন বিপর্যয় দেখা দেবে। এমনভাবে যে , এক জায়গায় তা থেমে গেলে অন্য জায়গায় তা চলতে থাকবে। তা ঐ পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে যে , কোন আরব ঘর ও কোন মুসলমান তা থেকে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়ে থাকবে না। তখন আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে।

এ হাদীসটি হাফেয আবু মুহাম্মাদ হোসেইন তার মাসাবিহ -তে এবং হাফিয নাঈম ইবনে হেমাদ তার বই ফাতান -এ উল্লেখ করেছেন। সহীহ বোখারীতেও এর একটি প্রমাণ দেখা যায়।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব (পৃষ্ঠা 97)-এ হাকিম আবু আব্দুল্লাহর সহীহ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ শেষ যুগে কঠিন দুর্যোগ আমার উম্মতের উপর আপতিত হবে। এমন কঠিন দুর্যোগ যে তা আগে কখনোই শোনা যায় নি এবং জনগণ তা থেকে কোন আশ্রয় পেতে ব্যর্থ হবে। সে সময় আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন যে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

সাইয়্যেদ খোরাসানী

ইকদুদ দুরার -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে বর্ণনা করেন যিনি সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

বনি আব্বাস থেকে এক ব্যক্তি পূর্ব দিক হতে আত্মপ্রকাশ করবে এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তা প্রতিষ্ঠিত হবে। এরপর ছোট ছোট কালো পতাকাবাহী লোকেরা উঠে দাড়াবে এবং তারা আবু সুফিয়ানের বংশের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তারা মাহদীর কাছে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।

একই বইতে একই অধ্যায়ে এর লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ফাতান থেকে এবং তিনি মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়াহ থেকে বর্ণনা করেন- পতাকাবাহী লোকজন খোরাসান থেকে উত্থিত হবে , এরপর সাদা রং-এর পতাকার লোকেরা উঠে দাড়াবে। বনি তামিম গোত্রের তামিম ইবনে সালেহ নামে এক লোক তাদের মুখোমুখি হবে। তখন জনগণ মাহদীকে চাইবে ও তাকে খুজবে।

একই বইয়ের একই অধ্যয়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি শারি ইবনে আব্দুল্লাহ , কাশিফ ইবনে সাদ ও হামযা ইবনে হাবিব থেকে বর্ণনা করেন-

পূর্ব দিকের জনগণ বনি হাশিমের এক ব্যক্তির কাছে আনুগত্যের শপথ করবে যে খোরাসানের সেনাবাহিনী নিয়ে আবির্ভূত হবে। বনি তামিম গোত্রের এক ব্যক্তি তার মুখোমুখি হবে। যদি পাহাড়ও তার মুখোমুখি হয় সে তা ধ্বংস করে দিবে। পরে সে সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর মুখোমু খি হবে এবং তাদেরকে পরাজিত করবে। তাদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ হবে এবং সে তাদের হত্যা করবে। সে তাদেরকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উচ্ছেদ করবে এবং তাদেরকে ইরাকে পরাজিত করবে। এরপর তাদের মাঝে একটি ঘটনা ঘটবে যাতে সুফিয়ানী বিজয় লাভ করবে এবং হাশেমী বংশীয় এক লোক মক্কার দিকে পালিয়ে যাবে এবং তামিম ইবনে সালেহ (যে হাশেমীর সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে পালিয়ে যাবে। যখন মাহদী আবার আবির্ভূত হবেন হাশেমীও আবির্ভূত হবে।

নাফসে যাকিয়্যাহর (পবিত্র আত্মার ব্যক্তি) হত্যাকাণ্ড

ইকদুদ দুরার এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ এর ফাতান থেকে এবং তিনি আম্মার ইবনে ইয়াসির থেকে বর্ণনা করেন - যখন নাফসে যাকিয়্যাহকে হত্যা করা হবে এক আহবানকারী আকাশ থেকে ডেকে উঠবে জেনে রাখ তোমাদের শাসক হচ্ছে অমুক ব্যক্তি (মাহদী ) যে পৃথিবীকে সত্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক নাইম ইবনে হেমাদ-এর ফাতান থেকে এবং তিনি কাব আল আহবার থেকে বর্ণনা করেন যে- মদীনা লুট করা বৈধ হয়ে যাবে এবং নাফসে যাকিয়্যাহকে হত্যা করা হবে।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক ইমাম হোসেইন ইবনে আলীর (আঃ) কাছ থেকে বর্ণনা করেন- মাহদীর জন্য পাঁচটি নিদর্শন থাকবে- 1. সুফিয়ানী ; 2. ইয়ামানী ; 3. আসমানী আহবান ; 4. বাইদাহর ভুমি ধ্বসে যাওয়া ও 5. নাফসে যাকিয়্যাহর হত্যাকাণ্ড।

দাজ্জালের বিদ্রোহ

ইকদুদ দুরার -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন এবং তারা মা আয ইবনে জাবাল থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূল ল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আমার উম্মতের মধ্য থেকে একটি গোত্র সত্যের জন্য যুদ্ধ করবে এবং শত্রুদের উপর বিজয়ী হবে যতক্ষণ না সে শেষবারের মত দাজ্জালের মুখোমুখি হয়। একটি হাদীসে উল্লেখ আছে হযরত (সাঃ) বলেছেন- আমার উম্মতের একটি দল।

একই বইয়ের নবম অধ্যায়ে লেখক হাকেমের মুসতাদরাক থেকে বর্ণনা করেন (যিনি বর্ণনাধারাকে সঠিক মনে করেন যদি তা মুসলিমও বর্ণনা করে থাকেন) যিনি জাবিল ইবনে সামরাহ এবং নাফেহ ইবনে উক্ববাহ থেকে বর্ণনা করেছেন-

আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি- তোমরা আরব উপদ্বীপের লোকজনের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তাদের উপর বিজয় লাভ করবে। এরপর তোমরা ইরানীদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তাদের উপরও বিজয় লাভ করবে। এরপর তোমরা দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে।

একই বইয়ের 12তম অধ্যায়ে লেখক আবুল আব্বাস ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে তুগলাব থেকে বর্ণনা করেন- দাজ্জালকে দাজ্জাল বলা হয় এজন্য যে সব কিছু উল্টোভাবে দেখায়।

একই অধ্যায়ে লেখক বুখারী থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ এমন কোন নবীর উম্মাত নেই যা ভয়ংকর ও মিথ্যাবাদী দাজ্জালকে ভয় করে না।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক - এ (99 পৃষ্ঠায়) আবুল হোসেইন আবারী থেকে বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে প্রচুর হাদীস এসেছে মাহদীর আবির্ভাব সম্পর্কে যে হযরত মাহদী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর বংশধর , তিনি সাত বছর শাসন করবেন , তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন এবং তিনি ঈসা (আঃ)- এর সাথে আবির্ভূত হবেন এবং ঈসা (আঃ) তাকে দাজ্জাল হত্যায় সাহায্য করবেন।

সুফিয়ানীর বিদ্রোহ

ইক্বদুদ দুরার -এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান থেকে এবং তিনি হাফসা (নবী (সাঃ)-এর স্ত্রী) থেকে বর্ণনা করেন-

আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি এ বাড়ি একটি সেনাবাহিনীর হাত থেকে নিরাপদ থাকবে যা এটিকে আক্রমণ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেনাদলটি একটি নরম ভূমিতে অবস্থান নিবে। মাঝখানের সারিটি মাটিতে দেবে যাবে। যখন প্রথম সারিটি শেষ সারির কাছ থেকে সাহায্য চাইবে তখন তাদের মধ্যে থেকে কেউ বেঁচে থাকবে না সে ছাড়া যে তাদের বিষয়ে জানাবে।

এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ানকে সম্বোধন করে বলেন- আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে আপনি হাফসার বিষয়ে মিথ্যা বলেন নি এবং তিনিও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যা বলেন নি। এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম তার সহীহ তে বর্ণনা করেছেন।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক ইমাম মুসলিম (সহীহ) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উতবা থেকে বর্ণনা করেন যে-

আমি উম্মুল মুমিনীন (নবীর (সাঃ) স্ত্রী উম্মে সালামা)-এর কাছে গেলাম হারিস ইবনে রবীয়াহ এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ানের সাথে। দু জনই উম্মে সালামার কাছে জানতে চান ঐ সেনাবাহিনী সম্পর্কে যা মাটিতে দেবে যাবে। উম্মে সালামা বললেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এক ব্যক্তি কাবা ঘরে আশ্রয় নিবে। আল্লাহ একটি সেনাবাহিনী আনবেন এবং যখন তারা নরম ভুমিতে পৌঁছাবে তারা এতে ডুবে যাবে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম- ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার কী অবস্থা হবে যে ব্যর্থ হবে ? তিনি বললেন- সেও তাদের সাথে ডুবে যাবে কিন্তু আল্লাহ তাকে বিচার দিবসে তার নিয়ত অনুযায়ী বিচার করবেন।

একটি হাদীসে ইমাম বাকীর (আঃ) বলেন- নরম ভূমি বলতে মদীনাকে বোঝানো হয়েছে ।

একই বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি যুহুরী থেকে বর্ণনা করেন যে- যখন সুফিয়ানী এবং মাহদী পরস্পর যুদ্ধে মুখোমুখি হবে তখন আকাশ থেকে একটি চীৎকার শোনা যাবে- জেনে রাখো আল্লাহর ওয়ালীরা অমুক ব্যক্তির (মাহদীর) সাহায্যকারী।

একই বইয়ের 2য় অংশে , চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি খলিল ইবনে সুফিয়ান থেকে বর্ণনা করেন- সুফিয়ানী বিদ্রোহ করবে এবং তার হাতে থাকবে তিনটি বাশী। সে তা যার জন্য বাজাবে সেই মারা যাবে।

একই বইয়ের 2য় অংশে , চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ (ফাতান) এবং আবু আব্দুল্লাহ (মুসতাদরাক) থেকে এবং তারা ইবনে মাসুদ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

সাতটি দুর্যোগ থেকে সতর্ক থাকো যা আমার পরে ঘটতে যাচ্ছে- মদীনার বিশৃঙ্খলা , মক্কার বিশৃঙ্খলা , ইয়েমেনের বিশৃঙ্খলা , সিরিয়ার বিশৃঙ্খলা , পূর্ব দিক থেকে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে , পশ্চিম দিক থেকে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে এবং শেষটি যা মধ্য সিরিয়া থেকে দেখা দিবে তা হবে সুফিয়ানীর বিশৃঙ্খলা ।

ইবনে মাসুদ বলেন- তোমাদের কেউ কেউ দুর্যোগসমূহের শুরু দেখবে এবং আমরা এর শেষ অংশ দেখবো

ওয়ালিদ ইবনে আব্বাস বলেন- মদীনার বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিলো তালহা ও যুবায়ের-এর কাছ থেকে। মক্কার বিশৃঙ্খলা ছিলো ইবনে জুবায়ের থেকে , ইয়েমেনের বিশৃঙ্খলা ছিলো নাজদাহ থেকে , সিরিয়ার বিশৃঙ্খলা বনি উমাইয়্যাহ থেকে এবং মধ্য সিরিয়ার বিশৃঙ্খলাও এ একই দল থেকে।

ইকদুদ দুরার -এর পরিচ্ছেদ 2 , চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক জাবির ইবনে ইয়াযীদ জুয়াফী থেকে এবং তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে ইমাম বাক্বীর (আঃ) বলেছেন- হে জাবির নিজের জায়গায় দৃঢ়ভাবে বসে থাকো যতক্ষণ আমি নিদর্শনগুলো তোমার কাছে বর্ণনা করি- সিরিয়া থেকে তিনটি পতাকা বেরোবে। লাল এবং সাদা পতাকা , কালো ও সাদা পতাকা এবং সুফিয়ানীর পতাকা। সুফিয়ানী দশ হাজার সৈন্যকে কুফার দিকে পাঠাবে। তারা লুট করবে , হত্যা করবে এবং এর অধিবাসীদের বন্দী করবে। যখন তারা এ কাজে ব্যস্ত হবে তখন খোরাসান থেকে সৈন্যরা পতাকা বহন করে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাবে। তারা মাহদীর সাহায্যকারী। সুফিয়ানী মদীনার দিকে সৈন্য প্রেরণ করবে এবং মাহদী মদীনা থেকে মক্কায় গোপনে চলে যাবেন। সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর প্রধানকে মাহদীর মক্কার দিকে গোপনে চলে যাওয়া সম্পর্কে জানানো হবে।

নাজদেহ ইবনে আমের হানাফী খাওয়ারিজদের একজন যে তার বাহিনীকে ধরার জন্য আদেশ দিবে। কিন্তু তারা তাকে খুঁজে পাবে না। সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর সেনাপতি বাইদাহ (মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী নরম স্থান) নামের এক জায়গায় পৌঁছাবে এবং এক আহবানকারী আসমান থেকে ডেকে উঠবে- হে বাইদাহ , এ দলটিকে ধ্বংস কর। তখন বাইদাহর স্থানটি তাদের গিলে ফেলবে

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক (414 পৃষ্ঠায়) দুররুল মুনজুম বই থেকে বর্ণনা করেছেন- মাহদীর আবির্ভাবের একটি নিদর্শন হবে সুফিয়ানীর বিদ্রোহ। সে মক্কার দিকে 30 ,000 সৈন্য পাঠাবে যেখানে তারা বাইদাহ নামক স্থানে ডুবে যাবে।

ইবনে আবিল হাদীদ তার নাহজুল বালাগার তাফসীরে (খণ্ড-1 , পৃষ্ঠা 211) গায়েব সম্পর্কে আলী (আঃ)-এর ভাষণ সম্পর্কে বলেন- আবু দাউদ থায়ালেসি বর্ণনা করেছেন সোলাইমান যাররিক থেকে , তিনি আব্দুল আযীয থেকে , তিনি আবুল আলিয়া থেকে , তিনি মাযরাহ থেকে (যিনি আলী (আঃ) সাথী ছিলেন) যিনি বলেন-

একটি সেনাবাহিনী অগ্রসর হবে যতক্ষণ না বাইদাহর ভূমি পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখানে সৈন্যবাহিনীটি মাটিতে ডুবে যাবে।

আবুল আলিয়া বলেন- আমি মাযরাহকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি আমাকে গায়েব সম্পর্কে কোন সংবাদ দিবেন কিনা। তিনি বললেন- আমি যা বলি তা সংরক্ষণ কর কারণ আলী ইবনে আবি তালিবের মত একজন নির্ভরযোগ্য মানুষ আমাকে তা জানিয়েছেন।

ইসাফুর রাগেবীন -এর লেখক 153 পৃষ্ঠায় বলেছেন- হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে সুফিয়ানী সিরিয়া থেকে মাহদীর বিরুদ্ধে সৈন্যবাহিনী পাঠাবে এবং তারা বাইদাহ র ভূমিতে এসে মাটিতে ডুবে যাবে। কেউ বেঁচে থাকবে না সে ব্যক্তি ছাড়া যে তাদের সম্পর্কে খবরটা ছড়িয়ে দিবে। সুফিয়ানী এবং মাহদী তাদের নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে ঐ ব্যক্তির দিকে এগিয়ে যাবে এবং মাহদীর বিজয় হবে এবং সুফিয়ানী নিহত হবে।

মাহদীর (আঃ) আগমনের নিদর্শনসমূহ

ফুসুলুল মুহিম্মা -র লেখক 12তম অধ্যায়ে বলেন- হাদীসসমূহে এসেছে মাহদীর আবির্ভাব ও ঘটনাসমূহ সম্পর্কে যা তার উত্থানের আগে ঘটবে এবং প্রমাণ সম্পর্কে যা তার আবির্ভাবের আগে আবিষ্কৃত হবে। যেমন-

1. সুফিয়ানীর বিদ্রোহ।

2. হাসানী-র হত্যাকাণ্ড।

3. বনি আব্বাসের মাঝে সাম্রাজ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব।

4. মধ্য রমযানে সূর্যগ্রহণ।

5. চন্দ্রগ্রহণ রমযানের শেষে যা জ্যোর্তিবিজ্ঞানের হিসাব বিরোধী।

6. পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠবে।

7. 70 জন ধার্মিক ব্যক্তিকে হত্যা।

8. হত্যাকাণ্ড।

9. কুফার মসজিদের দেয়াল ধ্বংস হওয়া।

10. খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহীদের অগ্রসর হওয়া।

11. ইয়ামানীর উত্থান।

12. মিশরে মাগরেবীদের বিদ্রোহ এবং সিরিয়ায় গিয়ে ক্ষমতা দখল।

13. তুর্কীদের একটি দ্বীপে অবতরণ।

14. রামাল্লাহতে (ফিলিস্তীনে) রোমানদের আগমন।

15. পূর্ব দিকে একটি নক্ষত্র উঠবে যা চাঁদের মত জ্বলজ্বলে।

16 , চাঁদটি দু টুকরো হয়ে পরস্পর নিকটবর্তী থাকবে।

17. আকাশে একটি লাল আভা দেখা যাবে।

18. একটি আগুন দেখা যাবে পূর্ব দিকে এবং তিন দিন অথবা সাত দিন থাকবে।

19. আরবরা তাদের লাগাম ছেড়ে দিবে।

20. আরবরা শহরসমূহের মালিক হবে।

21. আরবরা ইরানীদের শাসন থেকে বেরিয়ে আসবে।

22. মিশরের অধিবাসীরা তাদের শাসককে হত্যা করবে।

23. সিরিয়া ধ্বংস হবে এবং তিনটি পতাকা এর দিকে অগ্রসর হবে।

24. ক্বায়েম ও আরবের পতাকা মিশরের দিকে অগ্রসর হবে।

25. খোরাসানের দিকে খোদাই করা পতাকা অগ্রসর হবে।

26. কিছু আরব হীরাহর উপকণ্ঠে পৌছাবে।

27. পূর্বদিক থেকে কালো পতাকা আসবে।

28. ফোরাত নদীতে একটি ফাটল দেখা দিবে যার কারণে কুফার রাস্তায় পানি বইবে।

29. ষাটজন মিথ্যাবাদী আবির্ভূত হবে এবং পত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে।

30. আবু তালিবের বংশধর থেকে বারোজন বিদ্রোহ করবে এবং প্রত্যেকেই নিজেকে ইমাম দাবী করবে।

31. বনি আব্বাসের একজন মর্যাদাবান ব্যক্তি বাগদাদের কাছে কার্ক সেতুর কাছে পানিতে ডুবে মারা যাবে।

32. একটি কালো বাতাস বাগদাদে বইবে।

33. বাগদাদে একটি ভূমিকম্প হবে এতে এর বেশীর ভাগ অংশই ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে।

34. ইরাকের অধিবাসীদেরকে ভয় আকড়েঁ ধরবে। 35. ইরাকের লোকদের মৃত্যু দ্রুত্র ধরে ফেলবে।

36. ইরাকের লোকেরা সম্পদ ও ফলের অভাবে পড়বে।

37. তারা চারাগাছ ও গুড়ো খাদ্যের দিকে আকৃষ্ট হবে।

38. জনগণের কৃষি উৎপাদন হবে অত্যন্ত কম।

39. অনারবদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিবে এবং তারা পরস্পরের রক্ত ঝরাবে।

40. দাসরা তাদের প্রভুদের অবাধ্য হবে ও তাদেরকে হত্যা করবে ।

41. এরপর চব্বিশবার বৃষ্টি হবে। পৃথিবীর মাটি এর মৃত্যুর পর আবার জীবিত হবে এবং এর সম্পদ উগড়ে দিবে। তখন সব ধরনের দূর্যোগ মাহদীর প্রতি বিশ্বাসীদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে। তখন তারা বুঝতে পারবে মাহদী মক্কায় আবির্ভূত হয়েছেন। ফলে তারা মক্কার দিকে অগ্রসর হবে তাকে সাহায্য করার জন্য।

এসব ঘটনার কিছু অবশ্যই ঘটবে আর কিছু শর্তসাপেক্ষে ঘটতে পারে। আল্লাহ ভালো জানেন কী ঘটবে। আমরা হাদীস অনুযায়ী ঘটনাগুলো বর্ণনা করলাম।

আলী ইবনে ইয়াযীদ ইযাদী তার পিতা থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বলেছেন- যখন ক্বায়েমের আবির্ভাব নিকটবর্তী হবে লাল ও সাদা মৃত্যু হাজির হবে। লাল রঙ্গের পঙ্গপাল মৌসুমের বাইরে দেখা যাবে। লাল মৃত্যু তরবারীর (অস্ত্র ) কথা বোঝায় এবং সাদা মৃত্যু প্লেগের কথা বোঝায়।

জাবির জুআফী বর্ণনা করেন যে ইমাম মোহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) তাকে বলেছেন- নিজের জায়গায় স্থির থাকো যতক্ষণ না এ নিদর্শনগুলো দেখো। সেগুলো হচ্ছে বনি আব্বাসের মাঝে দ্বন্দ্ব , আকাশ থেকে এক আহবানকারী ডেকে উঠবে , সিরিয়াতে একটি গ্রাম দেবে যাবে , তুর্কীদের এক দ্বীপে অবতরণ করবে , রামাল্লাহতে রোমানদের আগমন ঘটবে , ঘটবে প্রত্যেক ভূমিতে দ্বন্দ্ব যতক্ষণ না সিরিয়া ধ্বংস হয়ে যায় , সামাজিক জীবন ধ্বংস হওয়ার কারণ হবে এবং পতাকাসমূহের উত্তোলন- যার একটি হবে লাল ও সাদা , অন্যটি কালো ও সাদা এবং অন্যটি সুফিয়ানীর।