কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 60406
ডাউনলোড: 3142

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 60406 / ডাউনলোড: 3142
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী ( আঃ ) এ উম্মাহ ( জাতি ) থেকে

তিরমিযী তার সহীহ তে 270 পৃষ্ঠায় আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ আমি ভয় পেলাম নবী (সাঃ )-এর পর খারাপ কিছু ঘটতে পারে তাই আমি নবীকে জিজ্ঞেস করলাম এবং তিনি উত্তরে এরকম বললেনঃ নিশ্চয় মাহদী আমার উম্মত থেকে এবং সে তাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবে ।

হুদাল ইসলাম - এর 25তম সংস্করণে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে ইবনে মাযাহ থেকে যে আবু সাঈদ থেকে তা বর্ণনা করেছেন ।

ইকদুদ দুরার -এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদে আবু মুসলিম আব্দুর রহমান ইবনে আউফ এবং তিনি তার পিতা থেকে , তিনি নবী (সাঃ ) থেকে , তিনি বলেছেনঃ

অবশ্যই আল্লাহ একজন মানুষকে আামার উম্মত থেকে নিয়োগ দিবেন । তিনি ঐ পর্যন্ত বললেনঃ সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণ করে দিবে ।

একই বইয়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে লেখক হাফেয আবু নাঈম এর সেফাতুল মাহদী কিতাব থেকে যিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে , তিনি নবী (সাঃ ) থেকে যিনি বলেছেনঃ

মাহদী আমাদের আহলুল বায়েত থেকে , সে আমার উম্মত থেকে ।

ফুসুল আল মুহিম্মা -র লেখক আবু দাউদ ও তিরমিযী থেকে এবং এ দু জন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে এবং তিনি নবী (সাঃ ) থেকে , তিনি বলেছেনঃ

পৃথিবীর জীবন একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ দিনটিকে এমন দীর্ঘ করে দিবেন যে , আমার উম্মত থেকে এবং আমার বংশ থেকে একজন আসবে যে আমার নাম বহন করবে এবং পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে ।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 433 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু সাঈদ খুদরীর জাওহার উল আক্বদাইন থেকে । ঐ হাদীসে নবী (সাঃ ) বলেনঃ মাহদী আমার উম্মতের মধ্যে । এছাড়া উক্ত লেখক আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদের বই আল ফিতান থেকে এবং তিনি হিশাম ইবনে মুহাম্মদ এবং তিনি নবী (সাঃ ) থেকে যিনি বলেছেনঃ মাহদী আমার উম্মত থেকে এবং তিনি সে ঈসা ইবনে মরিয়মের নেতা হবে ।

রাগেব তার মুফরাদাত -এ বলেছেনঃ উম্মাহ হলো কোন দল যা তৈরী হয় আচার -ব্যাবহার , সময় ও স্থানের মাধ্যমে , তা তাদেরকে একত্র করে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাতে কোন পার্থক্য নেই ।امة ( উম্মাহর ) বহুবচন হচ্ছেامم ( উমাম ) । একটি দল বলেছেঃ প্রত্যেক নবীর উম্মাহ হচ্ছে তার অনুসারীরা এবং যে তার আচার - ব্যবহার অুনসরণ করে না সে তার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত হবে না এমনও যদি হয় সে তার সময়ে জীবন যাপন করেছে । অতএব ইসলামের উম্মাহ হলো ঐ মানুয়েরা যারা ইসলামী আইন এবং যা কিছু নবী ( সাঃ ) এনেছেন তা মেনে চলা । সে নবী ( সাঃ ) কে দেখেছে বা দেখেনি অথবা তার সময়ে জীবন যাপন করেছে কি করেনি তাতে কোন পার্থক্য নেই । অধিকিন্তু , তা সবার জন্য প্রযোজ্য , তা পরিবার ও গোত্রের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না । এমনও যদি হয় তাদের ভাষা , সময় ও স্থানের কারণে পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য আছে ।

এ বইয়ে লেখক অভিমত ব্যক্ত করেছেনঃ এটি পরিষ্কার যে স্পষ্টভাবে জানানোর উদ্দেশ্যে আল মাহদী শব্দে আলিফ ও লামের ব্যবহার একটি চুক্তির কারণে । এ অর্থে যে মাহদী , যাকে আসমানী কিতাবসমূহে স্মরণ করা হয়েছে এবং যার বিষয়ে নবীরা সুসংবাদ দিয়ে গেছেন তাদের জাতীসমূহের মাঝে আসবেন এ বরকতপূর্ণ উম্মাহ থেকে এবং আর কোন উম্মাহ থেকে নয় । তাই এ উম্মাহর আনন্দিত ও খুশী হওয়া প্রাপ্য এ সম্মানে ভূষিত হওয়ার জন্য । এটি সত্য যে কিছু বিচ্ছিন্ন হাদীসে আমরা এ ধরণের কথা পাই যে , মাহদী ঈসা ইবনে মারিয়াম ছাড়া কেউ নয় ।

ইবনে হাজার এ হাদীসটি লিখেছেন সাওয়ায়েক্ব এর 89নং পৃষ্ঠায় ।

ইবনে হাজার এবং হাকেম এ ধরণের একটি হাদীস এনেছে নবী ( সাঃ ) এর কাছ থেকেঃ সময় খুব দূরে নয় যখন সমস্যা ও কষ্ট জনগণের উপর আধিপত্য করবে এবং পৃথিবী এর অধিবাসীদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবয় জনগণ লোভের দিকে এগিয়ে যাবে । খারাপদের ইপর সময় ঘনিয়ে আসবে এবং মাহদী ঈসা ইবনে মারিয়াম ছাড়া কেউ নয় ।

ইনে হাজার হাকেমের উদ্ধৃতি দিয়েচেনঃ এ হাদীসগুলো আমাকে চিন্তান্বিত করে নি বরং অনেক আশ্চর্য হয়েছি ।

বায়হাক্বী বলেনঃ শুধু মোহাম্মদ ইবনে খালিদ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ।

হাকেম বলেনঃ সে ( মোহাম্মদ ইবনে খালিদ ) অপরিচিত এবং তার বর্ণিত হাদীসগুলোতে বর্ণনার ক্রমধারায় পার্থক্য আছে ।

নাসাঈও এ ধরণের হাদীস প্রত্যাখ্যান করেছেন ।

দায়েরাতুল মাআরেফের 10ম খণ্ডে 475 পৃষ্ঠায় লেখক এ হাদীসটি বর্ণনা করে ইবনে মাজাহর মতামত ব্যক্ত করেনঃ ইমাম কুরতুবী বলেছেন - এ হাদীসটি আল মাহদী সম্পর্কে পূর্ববর্তী হাদীসগুলোর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । কারণ এ হাদীসটির উদ্দেশ্য শুধু মাহদীর উপরে ঈসা ইবনে মারিয়মে ( আঃ ) এর মর্যাদা বর্ণনা করা । তাহলো ক্রটিহীনতা ও পূর্ণতার দৃষ্টিভঙ্গিতে ঈসা ছাড়া কোন মাহদী নেই । তাই এটি মাহদীর অস্তিত্বের বিরোধী নয় । এটি হচ্ছে সেরকম কথার মত যে আলী ছাড়া কোন শক্তিশালী লেঅক নেই ।

এছাড়া এ দৃষ্টিভঙ্গি এ হাদীসটি দ্বারা সমর্থিত যে , মাহদী আমার বংশ থেকে , সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করবে এবং ঈসার ( আঃ ) সাথে আবির্ভূত হবে , যে তাকে দাজ্জালকে হত্যা করতে সাহায্য করবে লাদ নামে ফিলিস্তিনের এক জায়গাতে । নিশ্চয় সে এ উম্মতের উপর শাসক হবে এবং ঈসা ইবনে মারিয়ম তার পিছনে নামাজ পড়বে এবং আল্লাহ সব জানেন ।

ইকদুদ দুরার - এর লেখক ভূমিকাতে লিখেছেনঃ এবং মানুষের মাঝে তারা আছে যারা মনে করে মাহদী হচ্ছে পুতঃপবিত্র ঈসা ইবনে মারিয়ম ছাড়া আর কেউ নয় । তাই আমি তাদের বলেছিঃ যে ব্যক্তি মাহদীর আবির্ভাবকে অস্বীকার করে সে আসলে ঈসার কথা বলছে না ; কারণ একথা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে এখানে তার কথা বলা হচ্ছে এবং যে মনে করে মাহদী হলো ঈসা ইবনে মারিয়ম এবং এ হাদীসের নির্ভরযোগ্য নিয়ে জিদ করে অবশ্যই তার ধর্মান্ধতা ও ভূল তাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনেছে । এরপর তিনি বলেছেন - যদিও এ হাদীসটি প্রবাদের মত লোকের মুখে মুখে আছে তবুও কিভাবে এটিকে সত্য বলে বিবেচনা করা যায় যখন হাদীস বিশেষজ্ঞরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ? এর উৎসগুলো বিবেচনা করে এবং এর সনদের উপর গভীরভাবে ভাবার পর কোন ব্যক্তি যদি এ হাদীসের উপর নির্ভর করে তাহলে তা হবে এক প্রহসন ।

এ বক্তব্যের প্রমাণ হচ্ছে ইমাম আবু আব্দুর রহমান একে প্রত্যাখ্যান করার উপর জোর দিয়েছেন এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য , কারণ হাদীসটি ফিরে যায় মুহাম্মদ ইবনে খালেদ জুনদীর কাছে ।

এছাড়া ইমাম আবুল ফারাজ জওযী তার বই ইলাল - মুতানাহিয়া তে এ হাদীসটির দূর্বলতা বর্ণনা করেছেন হাফেজ আবি বকর বায়হাক্বীর কথা থেকে যিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি জুনদীর সাথে সম্পর্কিত এবং সে একজন অপরিচিত ব্যক্তি । অধিকিন্তু জুনদী বর্ণনা করেছে আবান ইবনে আইয়াশ থেকে এবং সেও প্রত্যাখ্যাত এবং অপ্রশংসিত ব্যক্তি । আবান বর্ণনা করেছে হাসান থেকে এবং তিনি নবী ( সাঃ ) থেকে এবং তার বর্ণনা উৎসের ধারায় ফাক রয়েছে । যা হোক , এ হাদীসটি সত্য বিবেচনা করার কোন কারণ নেই ।

বায়হাক্বী তার উস্তাদ হাকেম নিশাপুরী থেকৈ বর্ণনা করেছেন ( তার কথা হাদীসের কৌশল ও এর বর্ণনাকারীর স্থান বোঝাতে যথেষ্ট ): জুনদি এবং ইবনে আইয়াশ অপরিচিত ও প্রত্যাখ্যাত এবং হাদীসটির সূত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । প্রায় সব হাদীস বিশেষজ্ঞ ইমাম মাহদী সম্পর্কে হাদীস এনেছেন এবং সবাই তার নাম উল্লেখ করেছেন এবং তাকে স্মরণ রেখেছেন এবং যারা পরিষ্কার দৃষ্টিসম্পন্ন ও সচেতন তাদের জন্য এটি স্পষ্ট যে হাদীসগুলোর একটি অংশ অন্য অংশকে সমর্থন করে এবং এটি হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রমাণ যে ঐ হাদীসগুলো এ প্রত্যাখ্যাত হাদীসটি থেকে উত্তম ।

এছাড়া হাফেয আবু আব্দুল্লাহ হাকেম এ বিষয়ে তার মুসতাদরাকে কথা বলেছেন যা দুটি সহীহতেও ( বুখারী ও মুসলিম ) উল্লেখিত হয়েছে এবং এ কারণে এ বিষয়ে আর কোন কথা বলা অপ্রয়োজনীয় । তিনি মনে করিয়ে দেন যে যদি কোন হাদীস বিরাট সংখ্যক লোক বর্ণনা করে থাকে তা এমন হাদীসের চাইতে অধিকতর গুরুত্ব রাখে এরকম নয় এবং হাদীসটি বিশ্বাসযোগ্য কি অবিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে আলোচনা করেছেন । তিনি লিখেছেনঃ যে কারণে আমি এ হাদীসটি এনেছি তা এর উপর যুক্তি তর্ক করার জন্য নয় বরং আমার বিস্ময় প্রকাশ করার জন্য ।

তিনি আরো বলেনঃ

এ হাদীসটির চাইতে সূনান সূরী ও তার শিষ্যদের হাদীসটি আরও ভালো ।

এরপর তিনি নবী ( সাঃ )- এর হাদীসটি বর্ণান করেন যা বলেঃ

তার নাম ও আমার নাম একই এবং এরপর লিখেছেনঃ প্রখ্যাত আলেমগণের অভিমত হযরদ ( সাঃ ) এ বক্তব্যের মাধ্যমে যা বলতে চেয়েছেন তাহলো মাহদীর নাম ও তার নাম একই রকম ।

এভাবে উপরোক্ত বক্তব্য এ কথার সত্যতা প্রকাশ করে যে মাহদী ঈসা ইবনে মারিয়ম ( আঃ ) নন । অন্য কেউ । তাছাড়া যদি আমরা এ হাদীসটি সঠিক বলে ধরেও নেই তবুও আমরা এটিকে এর আপাতঃ অর্থে নিতে পারিনা , বরং আমাদের উচিৎ এর আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা নেয়া , কারণ সত্য হাদীসগুলো আমারা প্রত্যাখ্যান করতে পারিনা যা এ হাদীসটির বিপক্ষে যায় । হতে পারে এর আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা এ কথার আরবী আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার মত । এ দিক থেকে দু টি হাদীসের আধ্যাত্মিক অর্থ পরস্পরের নিকটে এবং এ ধরণের হাদীসের সংখ্যা প্রচুর । তাই প্রত্যাখ্যান করার প্রকৃত উদ্দেশ্য এটি নয় যে আমরা উপসংহারে আসব যে মাহদী ও ঈসা ইবনে মারিয়ম একই ব্যক্তি । বরং এটি বলা উচিৎ যে এ বাক্যটি এসেছে হযরত মাহদী অথবা ঈসাকে সম্মান দিতে অথবা এর রয়েছে অন্য কোন আধ্যাত্মিক অর্থ ।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা - র লেখক 434 পৃষ্ঠায বলেনঃ নিশ্চয়ই ইবনে খালিদ এর কাছ থেকে এ হাদীসটি যে মিথ্যা তার প্রমাণ বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়ঃ

প্রথমতঃ যদি হাদীসটি সঠিক হত তাহলে ইয়াযিদ ও হাজ্জাজ এর সময়কার নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতা আরও অনেকগুন বৃদ্ধি পেত এবং আজ পৃথিবীতে ভাল কোন কিছু থাকতো না । বরং উল্লেখিত সময়ের পর অর্থাৎ উমর ইবনে আব্দুল আযীয ও আব্বাসীর খলীফাদের সময় থেকে আজ পর্যন্ত শান্তি ও কল্যাণ বজায় আছে আল্লাহর রহমতে ।

দ্বিতীয়তঃ নবী ( সাঃ ) নবুয়তের নিয়োগ প্রাপ্তির আগে আরবদের মধ্যে মাহদাভিয়াত বিষয়টি প্রচলিত ছিলো না যাতে বলা যেতো ঈসা ইবনে মারিয়ম ছাড়া কোন মাহদী নেই ।

তৃতীয়তঃ আল্লাহ তার কিতাবের অনেক আয়াতে মাহদী সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন , নবী ( সাঃ ) নিজেও তার অনুসারীদের কাছে তার সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন যেভাবে পূর্ববর্তী নবীগণ ( আঃ ) আমাদের নবীর ( সাঃ ) আগমন সম্পর্কে এবং মাহদী সম্পর্কিত পরিস্থিতির বিষয়ে অন্যদের সুসংবাদ দিয়েছেন । আমি এসব সুসংবাদ সংগ্রহ করেছি ও উল্লেখ করেছি ; মাশারেকুল ইখওয়ান কিতাবে ।

আমরা এসব সম্মানিত ব্যক্তিদের কথা থেকে যা বুঝতে পারি তা হলোঃ

প্রথমতঃ এটি একটি মিথ্যা হাদীস ।

দ্বিতীয়তঃ এটি অকার্যকর ও দূর্বল ।

তৃতীয়তঃ এটি বহুল বর্ণিত হাদীসগুলোর বিরোধিতা করে ।

চতুর্থতঃ এর প্রকৃত অর্থ এর আপাতঃ অর্থ থেকে ভিন্ন ।

এ হাদীস থেকে উপসংহার টানা যায় যে , মাহদীর আবির্ভাব ও আকাশ থেকে ঈসার অবতরণ দু টো সম্পর্কিত বিষয় , যেখানে তাদের পরস্পরকে আলাদা করা যায় না । এটি ঠিক যে মনে হয় তারা দু জনে একই অথবা হাদীসটি থেকে কিছু হারিয়ে গেছে ; প্রকৃতপক্ষে যা ছিলো তা হলো -মাহদী (আঃ ) হলো সেই যার সাথে রয়েছে ঈসা (আঃ ) । এছাড়া ছড়ানো ছিটানো হাদীসসূহ প্রমাণ করে এ অর্থ সঠিক । তাই ঈসা (আঃ ) হচ্ছেন মাহদীর (আঃ ) বিষয়ে একটি সত্য নিদর্শন ।

মাহদী(আঃ ) কেনান থেকে

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তার প্রথম অধ্যায়ে ইমাম আবু আমারা উসমান ইবনে সাইদ মুক্বারী থেকে এবং তিনি ক্বাতাদাহ থেকে , যিনি বলেছেনঃ

আমি সাইদ ইবনে মাসায়েবকে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী সত্য কিনা । সে বললোঃ হ্যাঁ , তিনি সত্য । আমি তখন বললামঃ সে কোন গোত্রের ? সে বললোঃ কেনান । আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ কোন শাখা ? সে বললোঃ কুরাইশ । আমি আরও জিজ্ঞেস করলাম সে কোন পরিবারের লোক ? সে বললোঃ বনি হাশিম । আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কোন পরিবারের তিনি ? সে বললঃ ফাতেমার (আঃ ) বংশ ।

লেখক বলেনঃ কেনান হলো কাযিমার সেই ছেলে যে মাদরকার সন্তান ছিলো , তার পিতা ইলিয়াস , তার পিতা মাযার , তার পিতা নেযার , তার পিতা সাদ , তার পিতা আদনান ।

সাবায়েক আল যাহাব -এর লেখক বলেনঃ বনু কেনান হলো মাযার থেকে এক পরিবার এবং মাযারের এক ছেলে ছিল যার বংশধারায় এসেছেন নবী (সাঃ ) তার নাম ছিল নেযার । মাযারের আরো সন্তান ছিল যারা নবীর (সাঃ ) ধারায় এসেছিলো ; তারা ছিলঃ মালিক , মালকান , হারিম , আমর , আমের , সাদ , ঘানাম , আউফ , মুজরাবা , কারওয়াল , জাযাল এবং গুরওয়ান । আবু উবাইদ বলেনঃ তারা সবাই ছিলেন ইয়েমেন থেকে এবং ইবার নামের বইতে এসেছে যে তাদের বাসস্থান ছিলো মক্কার উপকন্ঠে ।

মাহদী(আঃ ) ক্বুরাইশ থেকে

ইক্বদুদ দুরার বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে লেখক ইমাম আবু আব্দুল্লাহ নাইম ইবনে হেমাদ থেকে তিনি ইবনে ওয়ায়েল থেকে তিনি ইমাম আবুল হুসেইন আহমাদ ইবনে জাফর মানাউই থেকে তিনি কাতাদা থেকে , যিনি বলেছেনঃ আমি সাইদ ইবনে মাসায়েবকে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কিনা । সে বললঃ হ্যা । আমি বললামঃ সে কোন গোত্রের ? সে বললোঃ কুরাইশ । আমি জিজ্ঞেস করলাম সে কোন দলের ? সে বললঃ বনি হাশিম । আমি বললামঃ সে কোন পরিবারের?সে বললঃ সে আব্দুল মোত্তালিবের বংশধর। আমি বললামঃ কোন পরিবারের ? সে বললঃ সে ফাতেমার বংশ থেকে । আমি বললামঃ তার কোন সন্তান থেকে ? সে বললঃ যথেষ্ট হয়েছে । এছাড়া একই বইয়ে সপ্তম অধ্যায়ে হাফেয আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ এর আল ফাতান থেকে যা ইসহাক্ব ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে তালহা থেকে তিনি তাউস থেকে যিনি বলেনঃ উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং তার পরবিারের সদস্যরা বিদায় জানাচ্ছিলেন । এরপর তিনি বললেনঃ আমি কোন ধনভান্ডার সম্পর্কে জানি না যা আমি দান করতে পারি । কাবাঘর এবং এতে যে সম্পদ ও অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে তা আল্লাহর পথে ব্যয় কর ।

তখন আলী বললেনঃ হে আমিরুল মু মিনীন , আপনি এ বিষয়টি ছেড়ে দিন , কারণ আপনি এ সম্পদের মালিক নন । বরং এর মালিক ক্বুরাইশ গোত্রের এক যুবক যে সময়ের শেষে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে ।

ইবনে হাজার তার বই সাওয়ায়েক্ব এর 99 পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ আহমাদ এবং মাওয়ারদি নবী (সাঃ ) থেকে একটি হাদীস এনেছে যিনি বলেছেনঃ সুসংবাদ তোমাদের মাহদী সম্পর্কে , সে কুরাইশ থেকে , আমার বংশ থেকে ।

ইসাফুর রাগেবীন -এ 151 পৃষ্ঠায় একই জিনিস বর্ণনা করা হয়েছে । এ বইয়ের লেখক বিশ্বাস করেনঃ কুরাইশ হলো নেযার ইবনে কেনান । আমার জামেউল লতিফে পড়িঃ জেনে রাখো কুরাইশ কেন ডাকা হয় তার বিষয়ে মতভেদ আছে । বলা হয় তাদের এ নাম দেয়া হয় সমূদ্রের একটি পশুর নামে । যে পশু খায় কিন্তু তাকে খাওয়া হয়না । বিজয় লাভ করে কিন্তু পরাজিত হয় না (রূপক মন্তব্য শক্তি ও শ্রেষ্ঠত্বের ইঙ্গিত করে ) এবং এ গোত্রও এ পশুটির মত তাদের কাঠিন্য ও মর্যাদায় ।

মাদারেকে আমরা পাইঃ কুরাইশ হচ্ছে এক শক্তিধর পশু যা জাহাজ নিয়ে খেলা করে এবং আগুন ছাড়া একে পতিহত করা যায় না । এবং ক্ষুদ্র সংস্করণ সম্মান দেখানোর জন্য ।

অন্যরা বলেনঃ তাদেরকে কুরাইশ বলা হয় এজন্য যে তাদের গোত্রের নেতা ইবনে ইয়াখলেদ গালিব ইবনে ফাহরকে কুরাইশ নামে ডাকা হত । আর এভাবে বলা হতো -কুরাইশের গোত্র এসেছিলো । কুরাইশের গোত্র গিয়েছিলো এবং এভবে তারা এ নামে বিখ্যাত হয়ে যায় ।

অন্যরা বলেনঃ তাদের গোত্রর একজনের নাম ছিলো কুসাই যে তাদেরকে একত্র করে মক্কায় এনেছিলো এবং ক্বরাশ অর্থ একত্র হওয়া যেহেতু সে তাদেরকে একত্র করেছিলো তাই তাকে এ নাম দেয়া হয় । এটিও বলা হয় যে কুরাইশ ছিলো কুসাই এর নাম আর এ কারণে তার গোত্রের নাম দেয়া হয় কুরাইশ ।

আবার কেউ কেউ বলেনঃ কুরাইশ শব্দটি তাক্বরীশ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ উপার্জন করা এবং যেহেতু তারা ব্যবসা করতো এবং তার মাধ্যমে উপার্জন করতো অতএব তাদেরকে কুরাইশ বলা হয় ।

এটিও বলা হয় নাযর এর নাম ছিলো ক্বুরাইশ । তাই তার পরিবারও এ নামে বিখ্যাত হয়ে উঠে ।

আবার কেউ বলেঃ তাদের ক্বুরাইশ ডাকা হয় এজন্য যে তারা হাজীদের মালপত্রের তাক্বরীশ করতো , আর তাক্বরীশ অর্থ তল্লাশী করা । আর তারা চেকপয়েন্ট খুলে মালামাল তল্লাশী করা ছাড়া হাজীদের সামনে যেতে বাধা দিতো ।

মাহদী(আঃ ) বনি হাশিম থেকে

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তার বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ইমাম আবুল হুসেইন আহমাদ ইবনে জাফর মানাউই এবং ইমাম আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং এ দু জন কাতাদা থেকে বর্ণনা করেন যিনি বলেছেনঃ আমি সাঈদ ইবনে মাসীবকে জিজ্ঞেস করলামঃ

মাহদী কি সত্য ?

সে বললোঃ হ্যাঁ

আমি বললামঃ সে কোন গোত্রের ?

সে বললোঃ ক্বুরাইশ

আমি বললামঃ সে কোন দলের ?

সে বললোঃ বান হাশিমের দল

আমি বললামঃ কোন পরিবারের ?

সে বললোঃ আব্দুল মোত্তালিবের বংশ থেকে ।

আমি বললামঃ তাদের কোন জনের কাছ থেকে ?

সে বললোঃ ফাতেমার বংশ থেকে

আমি বললামঃ তার কোন সন্তান থেকে ?

সে বললোঃ যথেষ্ঠ হয়েছে ।

লেখক বলেনঃ হাশিম ছিলো আবদে মুনাফ , যে ছিলো কুসাই এর সন্তান , তার পিতা কাল্ব , তার পিতা মুররা , তার পিতা কা ব , তার পিতা লুই , তার পিতা গালিব , তার পিতা পাহর , তার পিতা মালিক , তার পিতা নাযর , তার পিতা কেনান ।

জামেউল লতিফ এ এসেছেঃ হাশিমের নাম ছিলো আমরুল আলা এবং এ নামে তাকে ডাকার কারণ ছিলো দুর্ভিক্ষের সময় সে তার গোত্রকে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতো । উদারতায় ও দানশীলতায় সে এতই উপরে উঠেছিলো যে সে পশু ও পাখিদের খাবার সরবরাহ করার জন্য পাহাড়ের উপর উট জবাই করে দিতো । যখনই মক্কায় কোন দুর্ভিক্ষ দেখা দিতো সে এর অধিবাসীদের খাওয়াতো নিজের অর্জিত সম্পদ থেকে এবং মক্কার ধনীদেরকে দরিদ্রদের জন্য সম্পদ দান করতে উদ্বুদ্ধ করতো যতক্ষণ না আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করতেন ।

এরপর সে সিরিয়াতে যায় ও সিজারের (বাদশাহ ) সাথে দেখা করে িএবং তার কাছ থেকে কুরাইশদের স্বাধীনতার জন্য নিরাপত্তাপত্র সংগ্রহ করে । সে আব্দুল মোত্তালিবকে উয়েমেনের দিকে পাঠায় এবং সে জায়গার রাজা থেকে একটি বিশ্বস্তদার সনদ সংগ্রহ করে । এরপর সে ক্বুরাইশদের ব্যবসায়ীদের শীত ও গ্রীষ্মে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে আদেশ দেয় । এভাবে তারা গ্রীষ্মে সিরিয়ার দিকে যেতো এবং শীতে ইয়েমেনের দিকে যেতো । এভাবেই তাদের জীবন ধারণের উপকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলো হাশিমের উসিলায় । আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা ও প্রাণভয় থেকে রক্ষা করলেন । আবদে মানাফ ছিলেন হাশিমের পিতা যার নাম দেয়া হয়েছিলো চৌদ্দতম রাতের চাঁদ তার সুন্দর চেহারা ও উদারতার জন্য । তারপর কুসাই তার উত্তরাধিকারী হয় এবং শাসন কাজ ও হাজীদের পানি খাওয়ানোর দায়িত্ব তার কাছে ন্যস্ত হয় । কুসাইয়ের আরও নাম ছিলো যেমন , যাইদ ও ইয়াজিদ । তাকে কুসাই ডাকা হত এজন্য যে সে ও তার মা ফাতিমা , যে ছিলো সাদ এর কন্যা , বনি উযরার গোত্রকে ছেড়ে তার চাচাদের সাথে বাস করতে শুরু করে এবং মক্কা থেকে দূরে সরে যায় । তাই তাকে কুসাই ডাকা হতো যাقاصی শব্দ থেকে নেয়া যার অর্থ দূর ; জমা করা - ও এর একটি অর্থ , কারণ সে যখন বড় হয়ে উঠে সে মক্কায় ফেরত আসে এবং মরুভুমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুরাইশদের একত্র করে মক্কায় আনে এবং এরপর খাযাই গোত্রকে সেখান থেকে বহিষ্কার করে ।

মাহদী ( আঃ ) আব্দুল মোত্তালিবের বংশ থেকে

ইকদুদ দুরার এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ থেকে যেমন ইমাম আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মাজার সুনান , হাফেজস আবুল কাসেম তাবারানীর মু জাম থেকে এবং হাফেজ আবু নাঈম ইসফাহানী এবং আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন , যিনি বলেছেনঃ নবী (সাঃ ) এরশাদ করেছেনঃ

আমরা সাত জন -আমার ভাই আলী , আমার চাচা হামযা , জাফর , হাসান , হোসেইন , মাহদী এবং আমি আব্দুল মোত্তালিবের সন্তান বেহেশতের সর্দার ।

লেখক বলেনঃ সাদ ইবনে মাসীর থেকে ক্বাতাদা যে হাদীস বলেছেন তা বিষয়টিকে চিহ্নিত করে । জামেউল লতিফ এ লেখা আছেঃ আব্দুল মোত্তালিবের নাম ছিল শাইবাতুল হামদ এবং কোন কোন সময় তাকে আমের নামেও ডাকা হতো । তাকে শাইবাতুল হামদ বলা হত কা্রণ তার চুলে সাদা নিদর্শন ছিলো । তাকে আবুল হারিসও বলা হত কারণ তার আবুল হারিস নামের একটা ছেলে ছিল । তাকে আব্দুল মোত্তালিব বলা হত কারণ তার পিতা হাশিম মক্কায় মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন তার ভাই , মোত্তালিবকে বলেছিলঃ ইয়াসরিবে তোমার আবদের (চাকর ) যত্ন নিও তাই তখন থেকে তাকে আব্দুল মোত্তালিব বলা হয় ।

কেউ কেউ বলেন যে যখন তার চাচা তাকে মক্কায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তার চেহারা খু্ব ভাল ছিলো না । মোত্তালিবকে তার ভাতিজার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে তাকে ভাতিজা পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করত এবং বলতঃ সে আমার দাস । পরে যখন মক্কায় তার চেহারা ভাল হয়ে গেল মোত্তালিব প্রকাশ করলেন সে তার ভাতিজা ছিল । বলা হয় তার ছিল ফ্যাকাশে চেহারা এবং যখন সে চাচা মোত্তালিবের সাথে মক্কায় গেল লোকেরা মনে করল সে ছিল তার চাকর এবং বলত মোত্তালিব একজন আবদ বা চাকর এনেছে । এভাবে সে আব্দুল মোত্তালিব নামে সুপরিচিত হয়ে উঠে ।