কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 60375
ডাউনলোড: 3138

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 60375 / ডাউনলোড: 3138
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী(আঃ ) আবু তালিবের বংশ থেকে

ইকদুদ দুরার এর লেখক 4র্থ অধ্যায়ের 3নং ভাগে সাইফ ইবনে উমাইরা থেকে বলেন , যিনি বলেছেনঃ আমি জাফর মানসুরের সাথে ছিলাম । তিনি আমাকে এভাবে বললেনঃ হে সাইফ এটা অবশ্যই ঘটবে যে , একজন আহবান কারী আকাষ থেকে ডাকবে , একজন মানুষের পক্ষ থেকে যে আবু তালিবের বংশধর । আমি বললামঃ আপনার জন্য আমি উৎসর্গ হই হে আমিরুল মুমিনীন । আপানি কি হাদীস বর্ণনা করছেন যা এইমাত্র বললেন ?; তিনি বললেনঃ হ্যাঁ , আমি তার নামে কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ । আমি ঠিক সেই কথা বর্ণনা করেছি যা আমার কান শুনেছে । আমি বললামঃ কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি এরকম হাদীস শুনিনি । তিনি বললেনঃ হে সাইফ , নিশ্চয় তিনি সত্য এবং যে সময় এ ঘটনা ঘটবে আমার (তার ডাকে )সাড়া দিতে অন্যের চাইতে অগ্রবর্তী থাকব । আর মাহদী হবে আমাদের চাচাতো ভাইদের একজন থেকে । আমি বললামঃ ফাতিমার বংশ থেকে ? তিনি বললেনঃ হে সাইফ আমি যদি আবু জাফর (হযরত বাক্বির ) ছাড়া অন্য কারো কাছে তা শুনতাম আমি তা তোমার কাছে বলতাম না এবং নিশ্চয়ই এ বিষয়ে আমাকে বলেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ।

আমার সাবায়েক আল যাহাবে পড়িঃ ইবনে ইসহাক্ব বলেন আবু তালিবের নাম ছিল আবদে মানাফ । অন্যদিকে হাকেম আবু আব্দুল্লাহ বলেনঃ আবু তালিবের নাম ও ডাক নাম একই ।

তাযকেরাতুল আইম্মার লেখক লিখেছেনঃ তার বংশ পরিচয় সম্পর্কে আমার বলেছি যে সে আব্দুল মোত্তালিবের সন্তান এবং যখন আব্দুল মোত্তালিব মৃত্যুপথযাত্রী তিনি নবী (সাঃ ) কে আবু তালিবের কাছে সোপর্দ করেন ।

মুহাম্মদ ইবনে সাদ তাবাক্বাত বইতে ইবনে আব্বাস , মুজাহিদা , আ্তা , যাহরী এবং তাদের আরো উলামা থেকে বর্ণনা করেন যে আব্দুল মোত্তালিব আম -উল -ফীল (হস্তি বর্ষের )-এর 2য় বর্ষে ইন্তেকাল করেন এবং নবী (সাঃ ) সে সময় আট বছর বয়সী ছিলেন । প্রকৃতপক্ষে আব্দুল মোত্তালিব ইন্তেকাল করেন একশ বিশ বছর বয়সে এবং তাকে হেজওয়ানে কবর দেয়া হয় । উম্মে আইমান বলেনঃ আমি দেখেছি নবী (সাঃ ) আব্দুল মোত্তালিবের কাফিনের নীচে হাটছেন ও কাদছেন যখন তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ।

অন্য আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায় আব্দুল মোত্তালিব আশি বছর বয়সী ছিলেন যখন তিনি এ পৃথিবী ত্যাগ করেন । যাহোক প্রথম বক্তব্যটি বেশী সঠিক বলে মনে হয় ।

মুজাহিদ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছে যে ক্বাফা গোত্রের বনি মুযহাক্ব এর একদল লোক যখন নবী (সাঃ ) এর পায়ের ছাপ দেখলো তারা শিশুটিকে বলল আমরা পায়ের ছাপের এমন মিল আর দেখি নি যা নবীদের পায়ের ছাপের মত । তখন আব্দুল মোত্তালিব আবু তালিবের দিকে ফিরলেন এবং বললেনঃ তারা যা বলেছে তা শুনে রাখ , নিশ্চয় আমার এ সন্তানের এক রাজ্য হবে ।

তখন থেকে , আবু তালিব যতটুকু সম্ভব উঠে দাড়ালেন আল্লাহর রাসূলকে সাহায্য করার জন্য এবং তিনি নিজের উপর দায়িত্ব মনে করলেন তার বিষয়ে তাকে সাহায্য করার জরন্য । এমন হল যে তিনি তার কাছ থেকে কখরোই বিচ্ছিন্ন হতেন না । তিনি তার প্রতি এতই আকর্ষিত ছিলেন যে তিনি তাকে তার নিজের ছেলেদের চাইতে অগ্রাধিকার দিতেন এবং শুধু তখনই ঘুমাতেন যখন হযরত তার পাশে থাকতেন । তিনি তাকে বলতেন তোমার চলা ফেরা ভাল এবং তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ।

ইবনে সাদ তাবাকাত বইতে লিখেছেনঃ একবার আবু তালিব রাসূলুল্লাহর (সাঃ ) সাথে যিল মুজায -এ গেলেন । যখন রাসূল (সাঃ ) পিপাসার্ত হলেন তখন আবু তালিব বললেনঃ হে ভাতিজা , তুমি পিপাসার্ত হয়েছো অথচ কোন পানি নেই । এরপর নবী (সাঃ ) নীচে নেমে আসলেন ও পায়ের গোড়ালী দিয়ে মাটিতে আঘাত করলেন । খুব শীঘ্রই পানি ঠেলে বেরিয়ে এল এবং হযরত তা থেকে পানি পান করলেন । ঐতিহাসিকরা লিখেছেন আবু তালিব হযরতকে সাহায্য করার জন্য উঠে দাড়িয়েছিলেন এবং প্রায়ই তার কাছ থেকে শত্রুদের তাড়িয়ে দিতেন । কুরাইশরা একদিন তার কাছে এলো এবং বললঃ তোমার ভাতিজা আমাদের খোদাদেরকে অপমান করেছে , আমাদের বড় বড় লোকদের পাগল বলেছে এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের পথভ্রষ্ট বলেছে । অতএব তাকে আমাদের কাছে সোপর্দ কর অন্যথায় আমাদের মাঝে যাদ্ধ হবে ।

আবু তালিব উত্তরে বললেনঃ তোমাদের মুখ চিরকালের জন্য বন্ধু হোক । আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমি কখনোই তাকে তোমাদের কাছে তুলে দিবো না ।

তারা বললঃ ইমারা ইবনে ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা কুরাইশদের মাঝে সবচেয়ে সুদর্শন ও মর্যাদাবান যুবক । তুমি তাকে তোমার সন্তান হিসেবে রাখতে পারমুহাম্মদের বদলে আর মুহাম্মদকে তুলে দাও আমাদের হাতে যেন আমার তাকে হত্যা করতে পারি । চলো আমরা আমাদের মানুষ বদলা বদলি করি ।

আবু তালিব উত্তর দিলেনঃ তোমাদের উপর দুর্ভোগ আসুক । আল্লাহ তোমাদের চেহারা কালো ও অন্ধ করে দিক । আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে নিশ্চয় তোমরা অত্যন্ত খারাপ কথা বলেছ । তোমরা কি বলতে চাও আমি আমার সন্তানকে তোমাদের হাতে তুলে দেই যেনর তোমরা তাকে হত্যা কর এবং এর বদলে তোমরা আমাকে তোমাদের সন্তান দিবে যেন আমি তার যত্ন নেই ! আল্লাহর শপথ করে বলছি তা যদি করি তাহলে আমি একজন অত্যন্ত খারাপ লোক হবো ।

এরপর তিনি বললেনঃ আমি চাই তোমরা বাচ্চা উটকে তার মা থেকে আলাদা কর যদি মা উট অন্য বাচ্চার প্রতি আকৃষ্ট হয় আমি মুহাম্মদকে তোমাদের হাতে তুলে দিব । এরপর তিনি একটি কবিতা পড়লেন ।

জন্মের আট বছর পর থেকে তার রিসালাত প্রকাশের জন্য নিয়োগ প্রাপ্তির দশম বছর পর্যন্ত প্রায় চুয়াল্লিশ বছর আবু তালিব হযরত (সাঃ ) এর সমর্থনে উঠে দাড়িয়েছেন এবং তার ক্ষতি করা শত্রুদেরকে বাধা দিয়েছেন । তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার যত্ন নিতে তিনি কোন প্রচেষ্টা বাকী রাখেন নি ।

নূরুল আবসার -এ লেখক আবু তালিবের মৃত্যুর তারিখ বলেছেন 1লা যিলক্বাদ , অর্থনৈতিক অবরোধের পরে । ডা বজায় ছিল আট মাস একুশ দিন ।

মাওয়াহেব -উল -লাদনিয়া তে উল্লেখ করা হয়েছে যে আবু তালিবের মৃত্যুর সময় বয়স ছিলো সাতাশি বছর । একই বছরে উম্মুল মুমিনীন খাদিজা ইন্তেকাল করেন এবং নবী (সাঃ ) এ বছরকে দুঃখের বছর (আম উল -হুযন ) নাম দেন ।

আবু তালিব সম্পর্কে আরো জানার জন্য ইতিহাস বিইগুলো যেমন , সিরাতে ইবনে হিশাম ও তারিখে তাবারী ও সমকালের লেখা পড়তে পারেন । বিশেষ করে যাইনি দেহলানের বাগইয়াত আত -তালিব ফী আহওয়াল আবি তালিব পড়তে পারেন । একই লেখক আল ফুতুহাত আল ইসলামিয়া বইটিও লিখেছেন । এ ছাড়া আমাদের চাচাতো ভাই সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আলী শারাফুদ্দীন আমালীর লেখা শেইখ উল -আবতাহ পড়তে পারেন যা এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালবই হিসেবে পরিচিত ।

মাহদী(আঃ ) মুহাম্মদ (সাঃ ) এর বংশ থেকে

আবু দাউদ তার সহীহ -র 4র্থ খণ্ডে (87 পৃষ্ঠায় ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ ) বলেছেনঃ

যদি পৃথিবীর জীবন এর একদিনেরও বেশী না থাকে আল্লাহ দিনটিকে এত দীর্ঘ করে দিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি আমার বংশ থেকে একজনকে নিয়োগ দিবেন ।

উক্ত বইয়ের 81 পৃষ্ঠায় আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ ) বলেছেনঃ মাহদী আমার থেকে ।

নূরুল আবসার এর লেখক 230 পৃষ্ঠায় তিরমিযী থেকে বর্ণনা করেন একই ধরনের একটি হাদীস । এরপর তিনি লিখেছেন তিরমিযী মনে করেন এ হাদীসটি দৃঢ় ও সত্য এবং তাবারানী ও অন্যান্যরাও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব এর 98 পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে রুইয়ানি , তাবারানী ও অন্যান্যরা নবী (সাঃ ) থেকে এ ধরণের একটি হাদীস এনেছেন যেঃ মাহদী আমার বংশ থেকে ।

ইসাফুর রাগেবীন এর 149 পৃষ্ঠায় ও নূরুল আবসার এর 230 পৃষ্ঠায় নবী (সাঃ ) এর একটি হাদীস শিরভিয়া থেকে বর্ণিত হয়েছে , যে বর্ণনা করেছে হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে ।

এছাড়া নূরুল আবসার এর লেখক 231 পৃষ্ঠায় আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেছেনঃ আমি নবী (সাঃ ) কে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী আমাদের থেকে আসবে কি না । মুহাম্মদের বংশধর নাকি অন্যদের মাঝ থেকে ? তিনি উত্তরে বললেনঃ সে আমাদের থেকে ।

অন্য একদল বলেঃ নবীর (সাঃ )ال আল হলো তারা যাদের যাকাত নেয়া হারাম এবং এর বদলে খুমস (এক পঞ্চমাংশ আয়কর )অনুমোদিত

আরেকদল বলেঃال (আল ) বলতে ঐ ব্যক্তিদের বোঝায় যারা ধর্ম অনুসরণ করে ও তার আচার ব্যবহার অনুসরণ করে ।

যাহোক , প্রথম অভিমতটি সঠিক এ কারণে যে একটি হাদীস রয়েছে হোসাইন ইবনে মাসুদ বাগউইর তাফসীরে সুন্নাতে রাসূল কিতাবে (যা ঐক্যমতের হাদীসগুলোর সংগ্রহ ) এবং তিনি আব্দুর রহমান ইবনে লাইলী থেকে বর্ণনা করেন যিনি বলেছেনঃ কা ব ইবনে আজযা আমার সাথে সাক্ষাত করলো এবং বলল , আমি কি তোমাকে কিছু দিব যা আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ )বলতে শুনেছি ? আমি বললামঃ হ্যা , আমাকে দাও ।

সে বললঃ আমি রাসূলকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কিভাবে আহলুল বায়েতের উপর দরুদ পেশ করব । রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) বললেনঃ

اللهم صل علی محمد و علی آل محمد کما صلیت علی ابراهیم و آل ابراهیم وبارک علی محمد و علی آل محمد کما بارکت علی ابراهیم و علی آل ابراهیم انک حمید مجید.

হে আল্লাহ , শান্তি বর্ষণ করুন মুহাম্মদ ও তার বংশের উপর যেভাবে আপনি শান্তি বর্ষণ করেছেন ইবরাহিম ও তার বংশের উপর এবং বরকত নাযিল করুন মুহাম্মদ ও তার বংশের উপর যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহিম ও তার বংশের উপর ।

এরপর তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ ) তার আহলুল বায়েতকেال (আল )বলেছেনএভাবে দুটো একই অর্থ বহন করে এবং হযরত একটি শব্দের সাথে অন্য শব্দটির অদল -বদল করেন এমনভাবে যে তার ال হল তার আহলুল বায়েত এবং তার আহলুল বায়েত হল তার الঅতএব এর অর্থ হল একই

দ্বিতীয় অভিমতটি সঠিক একটি হাদীসের কারণে যা হাদীস বিশেষজ্ঞরা তাদের হাদীস বইতে এনেছেন । এছাড়া ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ , আবু দাউদ ও নাসাঈ একমত যে হাদীসটি সত্য এবং তাদের প্রত্যেকেই তাদের সহীহ -তে আব্দুল মোত্তালিব ইবনে রাবিয়া ইবনে হারিস থেকে বর্ণনা করেছেনঃ

আমি নবী (সাঃ )-কে বলতে শুনেছিঃ সাদকা ময়লা তা নয় , মুহাম্মদ ও তার আলের জন্য তা থেকে খাওয়া অনুমোদিত নয় ।

এছাড়া তারা তাদের অভিমতকে সমর্থন দিয়েছেন একটি হাদীস দিয়ে যা মালিক ইবনে আনাস মূসা -তে বর্ণনা করেছেন নবী (সাঃ ) থেকে যে তিনি বলেছেনঃ সাদকা মুহাম্মদের বংশের জন্য অনুমোদিত নয় , কারণ তা লোকদের ময়লা । এভাবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে তার আলের উপর সাদকা নিষিদ্ধ করেছেন এবং ডাদের উপর সাদকা গ্রহণ নিষিদ্ধ তারা হলেন বনি হাশিম ও বনি আব্দুল মোত্তালিব ।

যায়েদ ইবনে আরক্বামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কারা রাসূল (সাঃ )-এর বংশ যাদের উপর আল্লাহ সাদকা গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছেন , তিনি বললেনঃ আলীর বংশ , জাফরের বংশ , আব্বাসের বংশ এবং আক্বিলের বংশ । আর দ্বিতীয় অভিমতটি প্রথমটির নিকটতর ।

যারা তৃতীয় মতটি দেয় তাদের কারণ হলো আল্লাহর এ কথাঃ

) إِلَّا آلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ(

তবে লুতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয় , আমরা অবশ্যই এদের সবাইকে রক্ষা করবো । (সূরা হিজরঃ59 )

লুতের বংশ ছাড়া ; তাফসীরকারকদের মাঝে ঐক্যমত রয়েছে যে এ আয়াতেال (বংশ ) হলো তারা যারা তার দিকে ঝুকে ছিলো ও তার পথ অনুসরণ করেছিল ।

সবগুলো অভিমত দৃষ্টির সামনে রাখলে স্পষ্ট হয় যেال হচ্ছে আহলুল বায়েত , যাদের উপর যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ এবং তারা তার ধর্ম অনুসরণ করেছে এবং তার পথ অনুসরণ করেছে ।

মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) বংশ থেকে

আবু দাউদ তার সহীহ র চতুর্থ খণ্ডের 87 পৃষ্ঠায় উম্মে সালামা থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন : মাহদী আমার বংশ থেকে

ইসাফুর রাগেবীন এর 147 পৃষ্ঠায় নবী (সাঃ) থেকে একই রকমের একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে নাসায়ী , ইবনে মাজাহ , বায়হাক্বী ও অন্যান্যদের থেকে।

ইবনে হাজার সাওয়ায়েক্ব এর 98 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : আবু নাঈম নবী (সাঃ) থেকে একটি হাদীস এনেছেন যে , নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার বংশ থেকে একজন মানুষকে পাঠাবেন। এরপর তিনি বললেন : সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে।

একই হাদীস এসেছে ইসাফুর রাগেবীনের 149 পৃষ্ঠায়। একই বইতে লেখক 97 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : আবু দাউদ , তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ নবী (সাঃ) থেকে একটি হাদীস এনেছেন যা এরকম : যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে নিশ্চয় আল্লাহ আমার বংশ থেকে একজন মানুয়ের আবির্ভাব ঘটাবেন ।

অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ ) বলেছেনঃ সে আমার বংশ থেকে যে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিল ।

একই হাদীস রয়েছে ইসাফুর রাগেবীন এর 147 পৃষ্ঠায় । মাতালিবুস সূল এর লেখক লিখেছেনعترة ইতরাত (বংশ ) এর অর্থ আরবীতেعشیرة (পরিবার ) এবং অন্যরা বলেনذرّیة জুররিয়াত (সন্তান ) ।

এরপর তিনি বলেন : দু টো অর্থই তাদের মাঝে পাওয়া যায় কারণ তারা তার পরিবার ও একই সাথে সন্তান। যাহোক তারাعشیرة ও ইতরাত (পরিবার) হিসেবে বিবেচিত কারণ নিকট রক্ত সম্পর্কীয়। তারা তারذرّیة জুররিয়াত (সন্তান) হিসেবে বিবেচিত কারণ তারা তার কন্যার সন্তান। কারণ আল্লাহ ইবরাহিম (আঃ) সম্পর্কে বলেন :

) وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (84) وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِنَ الصَّالِحِينَ(

আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়া কুব ,তাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম ; এর আগে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ , সুলায়মান ও আইউব , ইউসুফ , মূসা ও হারুনকেও ; আর এভাবেই সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি এবং যাকারিয়া , ইয়াহইয়া , ঈসা এবং ইলইয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। তারা সবাই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত । (সূরা আন আমঃ 84-85)

এভাবে আল্লাহ সবহানাহু ওয়া তায়ালা হযরত ঈসা সহ উল্লেখিত ব্যক্তিদেরকে হযরত ইবরাহিমের সন্তানদের মধ্যে গন্য করেছেন যেখানে হযরত ইবরাহিমের সাথে হযরত ঈসার সম্পর্ক শুধু তার মায়ের মাধ্যমে এবং আর কারো মাধ্যমে নয়।

এরপরে তিনি আরো লিখেছেন : বর্ণিত হয়েছে যে শোবি নামে একজন সুন্নী আলেম হাজ্জাজ ইবনে ইউসফূ সাক্বাফীর সময়ে বাস করতো। সে ছিলো হাসান ও হোসেইনের পেমিক। তা এমনই যে যখনই সে তাদের স্মরণ করতো , বলতো : এ দু জন আল্লাহর রাসূলের সন্তান। পরে কিছু লোক হাজ্জাজকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেয়। যার ফলে সে খুবই রাগান্বিত হয় এবং তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। একদিন তাকে তার এক মজলিশে ডাকা হলো যেখানে বসরা ও কুফার সম্মানিত ব্যক্তিগণ , আলেমরা ও ক্বুরাইশরা উপস্থিত ছিলো। শোবি প্রবেশ করলো ও সালাম দিলো কিন্তু হাজ্জাজ কোন গুরুত্বই দিলো না এবং তার সালামের উত্তরও দিলো না অথচ শোবির সেই অধিকার ছিলো। যখন সে বসলো হাজ্জাজ বললো : হে শোবি , তুমি কি জানো আমি তোমার সম্পর্কে কী শুনেছি যা নিশ্চয়ই তোমার নির্বুদ্ধিতা প্রমাণ করে ?

শোবি বললো : সেটি কী ? হাজ্জাজ বললো : তুমি কি জানো না যে পুরুষদের পুত্র সন্তানরা হলো তারা যারা তার মিত্র এবং রক্তের সম্পর্ক শুধু পিতার মাধ্যমে। তাই তুমি কিসের উপর ভিত্তি করে বলছো যে আলীর সন্তানরা নবী (সাঃ) এর সন্তান! তাদের মা ছাড়া তাদের কি আর কোন সম্পর্ক আছে রাসূলের সাথে একথা বিবেচনা করে যে রক্তের সম্পর্ক কন্যাদের মাধ্যমে নয় বরং তা পিতার দিক থেকে। শোবি কিছু সময়ের জন্য মাথা নীচু করে রইলো ঐ পর্যন্ত যখন হাজ্জাজ তার অস্বীকৃতিতে সীমালংঘন করলো এবং মজলিশের অন্যান্যদের এ বিষয়ে জানালো। শোবি চুপচাপ রইলো এবং হাজ্জাজ তাকে চুপ থাকতে দেখে আরো তিরষ্কার করতে থাকলো। এরপর শোবি তার মাথা উঁচু করলো এবং বললো : হে আমির , আমি আপনাকে আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাহতে একজন অজ্ঞ বক্তা ছাড়া কিছু দেখছি না যে সেগুলো নিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে , হাজ্জাজের রাগ বৃদ্ধি পেলো সে শোবিকে বললো : অভিশাপ তোমার উপর , তোমার কত বড় সাহস তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলো!

শোবি উত্তর দিলো : হ্যাঁ , তারা আপনার মজলিশে উপস্থিত আছে- মিশর থেকে আসা কোরআনের ক্বারী এবং কিতাবের জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ , যারা আপনার কাছে আরো প্রিয় তারা সবাই জানে আমি কি বলছি। এটি কি ঠিক নয় যে আল্লাহ যখন তাঁর দাসদের সম্বোধন করতে চান তখন তিনি বলেন : হে আদমের সন্তানগণ অথবা হে ইসরাইলের সন্তানগণ। ইবরাহিম সম্পর্কে আল্লাহ বলেনو من ذرّیّته (এবং তার সন্তানদের থেকে) ঐ পর্যন্ত যখন ইয়াহইয়া ও ঈসার কথা বলেন। অতএব , হে হাজ্জাজ কিভাবে আপনি আদম , ইবরাহিমের ও ইসমাইল সাথে ঈসার সম্পর্ক দেখেন ? তা কি তার পিতার মাধ্যমে নাকি পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে ? সে কি তাদের সাথে তার মা মরিয়মের মাধ্যমে যুক্ত নয় ? এছাড়া সত্যবাদী বর্ণনাকারীদের বর্ণনা অনুযায়ী হাসান সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেছেন : নিশ্চয়ই আমার সন্তান (এবং তিনি হাসানের দিকে ইঙ্গিত করলেন) একজন সাইয়্যেদ (সর্দার)। যখন হাজ্জাজ এ যুক্তি শুনলো সে লজ্জায় মাথা নীচু করলো। পরবতীর্তে সে শোবির প্রতি দয়া ও ভদ্রতা দেখিয়েছে এবং মজলিসে উপস্থিত সকলের সামনে লজ্জা পেয়েছে।

এখন এটি পরিষ্কার হলো -ইতরাত (বংশ) হচ্ছে নবীর (সাঃ) সন্তান , এবং পরিবার , সবগুলো অর্থই তাদের প্রতি পযোজ্য।