কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 60443
ডাউনলোড: 3147

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 60443 / ডাউনলোড: 3147
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী (আঃ) সেবতাঈনের’ ( ইমাম হাসান ও হোসেইনের আঃ) বংশ থেকে

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ের 3য় ভাগে হাফেয আবু নাইম ইসফাহানীর সিফাত আল মাহদী কিতাব থেকে বর্ণনা করেন যিনি বর্ণনা করেছেন আলী ইবনে হাল্লাল থেকে যিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন : আমি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাক্ষাত লাভের সম্মান লাভ করলাম তার অন্তিম সময়ে এবং ফাতেমা তার পাশে কাদছিলেন। তিনি উক্ত দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণনা করলেন এবং শেষে এসে বললেন : হে ফাতেমা , আমি তার শপথ করে বলছি যিনি আমাকে নির্বাচিত করেছেন যে মাহদী এ উম্মাহ থেকে আসবে ঐ দু জন (হাসান ও হোসেইন) থেকে।

পৃথিবীর অবস্থা এমন হবে যে বিবাদ বৃদ্ধি পাবে। সমাধানের সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং জনগণ একে অপরের উপর হিংস্রভাবে ঝাপিয়ে পড়বে। এমন হবে যে না বড়রা ছোটদের উপর দয়া করবে , না ছোটরা বড়দের সম্মান করবে। যখন তা ঘটবে আল্লাহ একজনকে (মাহদী) নিয়োগ দিবেন যিনি পথভ্রষ্ট দুর্গগুলো জয় করবেন এবং আবৃত হৃদয়গুলোকে মুক্ত করবেন (এক উদাহরণমূলক মন্তব্য ; যে হযরত মাহদী (আঃ) মিথ্যা ধর্মগুলোর উপর বিজয় লাভ করবেন এবং ইসলামের দিকে বিপথগামী হৃদয়গুলোকে অনুগত করে আনবেন)। নিশ্চয়ই সে শেষ সময়ে বিদ্রোহ করবে যেভাবে আমি আমার সময়ে বিদ্রোহ করেছি। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

লেখক বলেন : এ হাদীসটি গাঞ্জি বর্ণনা করেছেন আবু নাঈম ইসফাহানীর নিতাই মাহদী এবং আবুল কাসেম তাবারানীর মুআ জাম কাবীর থেকে এবং বেশীর ভাগ হাদীস বিশেষজ্ঞ এ হাদীসটি তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন শব্দের কিছু তারতম্য রেখে। এদের কিছুতে আমাদের থেকে লেখা হয়েছে ঐ দু জন থেকে -র জায়গায়।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 432 পৃষ্ঠায় লিখেছেন জাওহার আল আক্বদাইন -এর লেখক বলেছেন , গবেষণায় দেখা যায় , আলী ও ফাতিমা (আঃ)-এর বিয়ের সময় নবী (সাঃ)-এর দোয়ার প্রভাব হাসান ও হোসেইনের বংশে সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাদের বংশ থেকে কিছু এসে চলে গেছে এবং কিছু আসার বাকী আছে। যদি ভবিষ্যতে মাহদী ছাড়া আর কেউ নাও আসে নবী (সাঃ)-এর দোয়া বাস্তবে ঘটেছে বলে যথেষ্ট প্রমাণিত হবে। এ বইয়ের লেখক বলেন : আলী ইবনে হাল্লাল এর হাদীসে আমরা যেভাবে দেখেছি যে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও হযরত শপথ করে বলছেন বিষয়টির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য।

যাহোক , যে কারণে মাহদী (আঃ) সিবতাইন (আঃ) (আলীর সন্তানদের ) থেকে তাহলো হযরত বাক্বের এর মা (ফাতিমা) হযরত আলী ইবনে হোসেইন যয়নুল আবেদীনের (আঃ) স্ত্রী এবং হযরত হাসান ইবনে আলী আল মুজতাবা (আঃ) এর কন্যা এবং এ মহিলা সম্পর্কে ইমাম বাক্বের (আঃ) বলেছেন :

ফাতেমা একজন পরহেযগার মহিলা। আর আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বের হাসান ও হোসেইনের সন্তান এবং সে ও তার সম্মানিত সন্তানরা তাদের অন্তর্ভূক্ত যারা এ সম্মান লাভ করেছে। প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) এ সম্মানিত ও বরকতপূর্ণ বংশধারা থেকে ; কারণ তিনি মুহাম্মাদ ইবনে হাসান ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে বাক্বের ইবনে আলী ইবনে হুসেইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব , আমিরুল মুমিনীন (আঃ)।

মাহদী (আঃ) ইমাম হোসেইনের (আঃ) বংশ থেকে

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তার কিতাবের প্রথম অধ্যায়ে হাফেজ আবু নাঈমের সিফাত আল মাহদী থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বলেন :

রাসূলুলাহ (সাঃ) একটি খোতবা দিলেন। এরপর তিনি আমাদের কাছে সব প্রকাশ করলেন কী কী অবশ্যই ঘটতে যাচ্ছে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত । এরপর তিনি বললেন : যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনও না থাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ দিনটিকে এত লম্বা করে দিবেন যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে একজন আসবে যার নাম আমার নামে। তখন সালমান উঠে দাড়ালেন এবং বললেন , হে আল্লাহর রাসূল আপনার কোন বংশ থেকে তিনি আসবেন ? রাসূল (সাঃ) বললেন : সে আসবে আমার এ সন্তান থেকে এবং তিনি তার হাত হোসেইনের মাথার উপর রাখলেন।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 49নং পৃষ্ঠায় বলেছেন নাহজলু বালাগার ব্যাখ্যায় (খুব সম্ভব তিনি ইবনে আবিল হাদীদের ব্যাখ্যার কথা বলেছেন) কাযী উল কযাত , কাফি উল কুফাত আবুল কাসিম ইসমাইল ইবনে ইবাদ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যার বর্ণনাধারা আলী (আঃ) পর্যন্ত সংযুক্ত , যিনি মাহদী সম্পর্কে কিছু একটা বলেন এবং এরপর বলেন , নিশ্চয়ই সে হোসেইনের বংশ থেকে।

এ বইয়ের লেখক বলেন : এ বিষয়ে হাদীসগুলো মুসতাফিযা হাদীস। আমাদের ইমামিয়া শিয়াদের মধ্যে একই মত এবং সুন্নী বিশেষজ্ঞ ভাইদের মাঝে যা বিখ্যাত তা আমাদের মাঝেও একই। যাহোক কিছু অল্প সংখ্যক হাদীসে এর বিপরীত অর্থেরও কিছু পাই।

এদের মাঝে আবু দাউদ তার সহীহতে (খণ্ড 4 , পৃষ্ঠা- 89) আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন : আলী (আঃ) হাসানের দিকে তাকালেন এবং বললেন : নিশ্চয়ই আমার সন্তান সাইয়্যেদ যেভাবে নবী (সাঃ) তাকে ডেকেছেন। খুব শীঘ্র তার বংশ থেকে একজন আবির্ভূত হবে। যার নাম হবে তোমাদের নবীর নামে। সৃষ্টিতে সে নবীর (সাঃ) মত হবে কিন্তু তার আচরণে সে সেরকম হবে না। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে।

কিছু সুন্নী আলেম মাহদীকে আবু মুহাম্মাদ হাসান আল মুজতাবা (আঃ)-এর বংশ থেকে উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে ইবনে হাজার তার কিতাব সাওয়ায়েক্ব এর 99 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : আবু দাউদ তার সুনানে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে মাহদী হাসানের বংশ থেকে এবং এর রহস্য এর মধ্যে নিহিত আছে যে হাসান খেলাফতকে ত্যাগ করেছিলেন আল্লাহর জন্য এবং জনগণের প্রতি তার স্নেহের জন্য। এভাবে আল্লাহ ক্বায়েমকে (যিনি প্রচণ্ড দুঃখ কষ্টের দিনে আসবেন) স্থাপন করলেন তার বংশধারায় যেন তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিতে পারেন। যেসব হাদীস বলে যে তিনি হোসেইনের বংশ থেকে সেগুলো দূর্বল ।

এ বইয়ের লেখক বলতে চান : উসুলে ফিক্বহ -র নিয়মাবলী অনুযায়ী উপরে উল্লেখিত হাদীসের উপর নির্ভর করা সঠিক হবে না নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য :

প্রথমত : আবু দাউদের বর্ণনায় কিছু অসামঞ্জস্য রয়েছে যেভাবে ইকদুদ দুরার এর লেখক আবু দাউদের সুনান থেকে বর্ণনা করেছেন যে সবাই হোসেইনের দিকে তাকালো।

দ্বিতীয়ত : একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ একই হাদীস বর্ণনা করেছেন হুবুহু শুধু তা বাদে যে আলী হোসেইনের দিকে তাকালেন।

তৃতীয়ত : ভুলের একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে হাসান ও হোসেইন শব্দ দু টো কোন কোন সময়ে একটি অন্যটির জায়গায় ভুলভাবে লেখা হয় , বিশেষ করে কুফী অক্ষরে।

চতুর্থত : সুন্নী আলেমদের মাঝে যা বিখ্যাত এ হাদীসটি তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

পঞ্চমত : হাদীসটি অন্যান্য হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক যেগুলো তাদের বর্ণনা ধারায় আরো বিশ্বস্ত এবং প্রকাশে আরো সুস্পষ্ট। এগুলোর কিছু কিছু ইতোমধ্যেই বর্ণনা করা হয়েছে এবং আল্লাহ চাইলে পরে বাকীগুলো বর্ণনা করা হবে।

আর ষষ্ঠত : হাদীসটি সম্ভবত মিথ্যা ও জাল। হয়তো এজন্য যে তারা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর নিকটবর্তী হতে চেয়েছিলো যিনি নফসে যাকিয়্যাহ নামে পরিচিত। তারা তাকে খুশী করার জন্য সম্ভবত এটি করেছিলো।

মাহদী (আঃ) ইমাম হোসেইনের (আঃ) নবম বংশধর

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 493 নম্বর পৃষ্ঠায় মুয়াফফাক্ ইবনে আহমাদ খাওয়ারাযমীর মানাক্বিব থেকে এবং তিনি সলিম ইবনে ক্বায়েস হাল্লালি থেকে , তিনি বর্ণনা করেন সালমান ফারসী থেকে , যিনি বলেন :

আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাক্ষাত এর সুযোগ লাভ করলাম। আমি যা দেখলাম তা হলো হোসেইন ইবনে আলী তার কোলে বসে আছে এবং নবী (সাঃ) তার চোখের উপর চমু দিচ্ছেন এবং তার জামা চুষছেন এবং বলছেন : তুমি একজন সর্দার , একজন সর্দারের সন্তান এবং একজন সর্দারের ভাই। তুমি একজন ইমাম , একজন ইমামের সন্তান এবং একজন ইমামের ভাই। তুমি একজন ঐশী প্রমাণ , একজন ঐশী প্রমাণের ভাই এবং নয় জন ঐশী প্রমাণের পিতা এবং তাদের নবম জন হচ্ছে ক্বায়েম ।

একই কথা দেখা যায় ইক্বদুদ দুরার -এ। উক্ত বইয়ের 258 পৃষ্ঠায় মাওয়াদ্দাতুল ক্বুরবা -র দশম অধ্যায় থেকে বর্ণনা করেন : সালিম ইবনে ক্বায়েস হাল্লালি থেকে বর্ণিত হয়েছে যে সালমান ফারসী বলেন :

আমি যখন নবী (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম আমি দেখলাম হোসেইন তার কোলে বসে আছে এবং তিনি তার চোখের উপর চুমু দিচ্ছেন ও তার জামা চুষছেন। এরপর নবী (সাঃ) বললেন : তুমি একজন সর্দার , একজন সর্দারের সন্তান , তুমি একজন ইমাম এবং একজন ইমামের সন্তান। তুমি একজন ঐশী প্রমাণ এবং নয়জন ঐশী প্রমাণের পিতা , তাদের নবমজন হচ্ছে ক্বায়েম।

এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু হাদীস রয়েছে যেগুলো ইনশাআল্লাহ আমরা শীঘ্র বর্ণনা করবো।

এ বইয়ের লেখক বলছেন : এটি সম্ভব মনে হয় না যে মুসলমানরা কেউ এ নয় ব্যক্তিত্বের কথা জানে না এবং তাদের নাম জানে না। এ বর্ণনার পরে তাদের নাম আর উল্লেখ না করে পারা যায় না। তাদের প্রথম জন হলো আবুল হাসান যয়নুল আবেদীন। তার ছেলে আবু জাফর মোহাম্মাদ আল বাক্বের , তার ছেলে আবু আব্দুল্লাহ জাফর আস- সাদেক , তার ছেলে আবুল হাসান মুসা আল-কাযেম , তার ছেলে আবুল হাসান আর-রিদা , তার ছেলে আবু জাফর মোহাম্মাদ আল জাওয়াদ , তার ছেলে আবুল হাসান আলী আল হাদী , তার ছেলে মুহাম্মাদ হাসান আল- আসকারী , তার ছেলে আবুল ক্বাসিম মোহাম্মাদ মাহদী , যিনি তাদের মধ্যে নবম এবং ক্বায়েম

মাহদী (আঃ) ইমাম সাদিক (আঃ)-এর বংশ থেকে

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 499 পৃষ্ঠায় হাফেয আবু নাঈম ইসফাহানীর আরবাইনে (যা মাহদী-আঃ সম্পর্কিত 40 টি হাদীসের সংকলন) থেকে বর্ণনা করেছেন। এদের মধ্যে একটি হাদীস লাগভী যিনি ইবনে খেসবাব নামে বেশী পরিচিতি , তার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন : আবুল ক্বাসেম তাহের ইবনে হারুন ইবনে মূসা কাযিম তার দাদা থেকে একটি হাদীস আমার জন্য বর্ণনা করেন , তিনি বলেছেন :

আমার মালিক জাফর ইবনে মুহাম্মাদ বলেছেন , পরহেযগার উত্তরাধিকারী আমার বংশ থেকে আসবে এবং সে মাহদী। তার নাম হচ্ছে মুহাম্মাদ আর তার উপাধি হচ্ছে আবুল ক্বাসিম। সে আত্মপ্রকাশ করবে শেষ সময়ে। তার মায়ের নাম হবে নারজীস এবং তার মাথার উপরে থাকবে এক টুকরো মেঘ। যা তাকে সূর্যের মাঝে ছায়া দান করবে। এটি তার সাথে সাথে যাবে যেখানেই সে যাবে এবং উচ্চস্বরে ভারী কন্ঠে বলবে : এ হলো মাহদী অতএব তাকে মেনে চলো।

এছাড়াও অন্য হাদীস রয়েছে যার সাথে আপনাদের শীঘ্রই পরিচয় করিয়ে দিবো।

ইবনে হাজার সাওয়ায়েক্ব -এর 120 পৃষ্ঠায় বলেন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-বাক্বের ছয়টি সন্তান রেখে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ও পূর্ণ ছিলো জাফর সাদেক ; এ কারণেই তাকে তার পিতার উত্তরাধিকারী ও ওয়াসী বানানো হয় এবং জনগণ তার কাছ থেকে এত জ্ঞান বর্ণনা করেছে যে তার সুখ্যাতি সব জায়গায় পৌছে গেছে।

বিখ্যাত সুন্নী জ্ঞানী ব্যক্তিগণ যেমন ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ , ইবনে জারীহ , মালিক , সুফিয়ানীন , আবু হানিফা , শুয়াবা এবং আইয়ুব বাখতিয়ানি তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন :

) إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ(

আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। নিশ্চয় তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই নির্বংশ। (সূরা কাউছার)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী বলেন : (কাউসার)- এর বিভিন্ন অর্থের একটি হতে পারে বংশ। কারণ এ সূরা নাযিল হয়েছিলো তাদের যুক্তি খণ্ডন করে যারা নবী (সাঃ) কে সন্তান না থাকার জন্য টিটকারী করত। তখন আল্লাহ তাকে এমন এক প্রজন্ম দিলেন যা সময়ের সাথে বজায় থাকবে। এভাবে আপনারা নিজেরাই দেখতে পারেন নবী (সাঃ)-এর বংশের কত জনকে হত্যা করা হয়েছে তারপরও পৃথিবী তাদের উপস্থিতিতে পূর্ণ অথচ বনি উমাইয়্যার একজনও বেঁচে নেই। আবারও আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে যারা আহলুল বায়েত থেকে যেমন বাক্বের , সাদেক , কাযিম , রেযা (সাঃ) নফসে যাকিয়্যাহ এবং তাদের মত অন্যরা কত বড় জ্ঞানী।

মাহদী (আঃ) ইমাম রেযা (আঃ)-এর বংশ থেকে

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 448 পৃষ্ঠায় ফারায়েদুস সেমতাইন থেকে বর্ণনা করেন যে হাসান ইবনে খালিদ বলেছেন : আলী ইবনে মুসা রেযা (আঃ) বলেছেন :

যার ধার্মিকতা নেই , তার বিশ্বাস নেই এবং তোমাদের মধ্যে আল্লাহর সামনে সেই সবচেয়ে সম্মানিত যে সবচেয়ে ধার্মিক । এরপর তিনি বললেন : নিশ্চয়ই আমার বংশধর থেকে চতুর্থ জন দাসীদের নেত্রীর সন্তান যে পৃথিবী থেকে সব নৃশংসতা ও নিপীড়ন মুছে ফেলবে।

একই বইয়ের 454 পৃষ্ঠায় লেখক ফারায়েদুস সেমতাইন থেকে বর্ণনা করেন : আহমাদ ইবনে যিয়াদ দেবেল খুযাঈ থেকে বর্ণনা করেন : আমি আমার কবিতা পড়লাম যার শুরু ছিলো ইমাম রেযা (আঃ)- এর সামনে , যখন আমি কবিতার এ অংশে পৌছুলাম :

خروج امام الا محالة واقع

یقوم علی اسم الله بالبرکات

یمیز فینا کل حق و باطل

ویجزی علی النعماء و النقمات

হযরত কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন এবং বললেনঃ হে দেবেল , রুহুল কুদুস তোমার জিহ্বা দিয়ে কথা বলেছে , তুমি কি জানো এ ইমাম কে ?

আমি বললামঃ না আমি তাকে জানি না । কিন্তু আমি শুনেছি যে একজন ইমাম আপনার বংশ থেকে আসবেন যিনি পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন ।

হযরত বললেনঃ আমার পরে ইমাম হবে আমার সন্তান মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পর তার সন্তান আলী এবং আলীর পর তার সন্তান হাসান এবং হাসানের পর তার সন্তান হুজ্জাত আল -ক্বায়েম এবং সেই প্রতীক্ষিত ব্যক্তি ।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব -এর 122 পৃষ্ঠায় বলেছেঃ যখন হযরত মূসা ইবনে জাফর ইন্তেকাল করলেন তিনি সাইত্রিশ জন পুত্র ও কন্যা সন্তান রেখে গেলেন । তাদের মধ্যে একজন আলী আল -রিদা যিনি বেশী পরিচিতি এবং মেধায় অন্যদের চাইতে সুস্পষ্টভাবে অগ্রগামী ছিলেন । এ কারণে মামুন (তৎকালীন শাসক ) তাকে তার হৃদয়ে স্থান দিয়েছিলেন এবং তার মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি তার সাম্রাজ্যে তাকে একজন অংশীদার হিসিবে নিয়ে ছিলেন ও তার কাছে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন । 201 হিজরীতে তিনি নিজ হাতে হযরতের অভিভাবকত্ব লিখে দেন এবং বিরাট সংখ্যক জনতাকে সাক্ষী রাখেন । যা হোক হযরত এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তার আগেই যার কারণে মামুন খুব শোকাবিভূত হয়ে পড়েন । ইন্তেকালের আগেই হযরত ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে তিনি আঙ্গুর ও রুম্মানের বিষক্রিয়ায় মারা যাবেন এবং মামুন তাকে তার বাবা রশীদের পাশে কবর দিতে চাইবে কিন্তু সফল হবে না , এভাবে হযরত সব বলে গিয়েছিলেন কী ঘটবে ।

একবার হযরত এক ব্যক্তিকে বলেন : হে আব্দুল্লাহ , আল্লাহর প্রতি সন্তষ্ট থাকো এবং প্রস্তুত থাকো সেজন্য যা তোমার জন্য ঘটবেই। এরপর তৃতীয় দিন আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করলো। এ ঘটনাটি হাকেম বর্ণনা করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন ঈসা থেকে যিনি বর্ণনা করেছেন আবু হাবিব থেকে , যিনি বলেছেন : আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষাত করেছি এবং তাকে সালাম দিয়েছি। সে সময় আমি দেখলাম তাঁর পাশে একটি ট্রেতে সাইহানী খেজুর এবং তিনি আমাকে আঠারোটি খেজুর দিলেন। এরপর আমি জেগে উঠলাম এবং আমার স্বপ্নকে ব্যাখ্যা করলাম এভাবে যে আমি আর আঠারো দিন বাচবো।

যাহোক বিশ দিন পর আবুল হাসান আলী আর রিদা মদীনা থেকে এলেন এবং সেই একই মসজিদে এলেন যেখানে স্বপ্নে আমি রাসূল (সাঃ)-কে দেখেছিলাম। জনগণ তার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলো তাদের সালাম পেশ করার জন্য। আমি নিজেও তার কাছাকাছি গেলাম এবং তাকে বসে থাকতে দেখলাম সেই জায়গায় যেখানে আমি রাসূল (সাঃ)-কে বসে থাকতে দেখেছিলাম এবং দেখলাম তার পাশেই রাখা আছে একটি সাইহানি খেজুরের ট্রে । সেই একই ট্রে যা আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। পরে আমি উনাকে সালাম দিলাম এবং তিনি আমাকে তার নিজের কাছে ডাকলেন এবং আমাকে সেই খেজুরের একমুঠ দিলেন। যখন আমি সেগুলো গুণলাম আমি বুঝতে পারলাম যে সেগুলো একই সংখ্যার যা রাসূল (সাঃ) আমাকে স্বপ্নে দিয়েছিলেন। আমি আরো চাইলে তিনি বললেন , যদি রাসূলল্লাহ (সাঃ) তোমাকে এর চাইতে বেশী দিতেন আমিও তোমাকে আরো বেশী দিতাম।

যখন হযরত নিশাপুরে আসলেন তিনি একটি খচ্চরের গাড়ীর উপরে ছিলেন এবং সেখানে ছিলো পর্দা টাঙ্গানো। তখন দু জন ব্যক্তি যারা ছিলো হাদীস বিশেষজ্ঞ , আবু জাররা রাযী এবং মুহাম্মাদ ইবনে আসলাম তুসী তার কাছে গেলেন বেশ কিছু সংখ্যক আলেমকে সাথে নিয়ে। তারা হযরতকে অনুরোধ করলেন তার মোবারক চেহারা প্রকাশ করার জন্য এবং তাদের জন্য হাদীস বর্ণনা করার জন্য যা তিনি তার পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তখন তার আদেশ অনুযায়ী খচ্চরের গাড়িটি থেমে গেলো এবং তার দাসেরা পর্দা খুলে দিলো। যখন জনগণের চোখ তার বরকতময় চেহারার উপর পড়লো তারা আমোদ উল্লাস করতে লাগলো। কিছু লোক আনন্দ করছিলো আর কিছু লোক বেশী আনন্দে কাদছিলো। কিছু মানুষ মাটিতে বসে পড়লো এবং যারা তার কাছে ছিলো তারা খচ্চরের পায়ে চুমু খেতে লাগলো। তখন আলেমগণ চীৎকার করে বললো : হে জনগণ , শান্ত হও এবং হযরত যা বলেন তা শোন।

যখন জনগণ শোনার জন্য প্রস্তুত হলো হযরত এ হাদীসটি বলতে শুরু করলেন , আর যেহেতু জনতার সংখ্যা খুব বেশী ছিলো ঐ দু জন , আবু জাররা এবং মুহাম্মাদ ইবনে আসলাম হযরতের বাণী চীৎকার করে প্রচার করছিলো জনতার কাছে। পরে হযরত বললেন : আমার পিতা মূসা ক্বাযিম আমার কাছে তার পিতা জাফর সাদেক থেকে যিনি তার পিতা মুহাম্মাদ বাক্বের থেকে যিনি তার পিতা যায়নুল আবেদীন থেকে যিনি তার পিতা হোসেইন থেকে যিনি তার পিতা আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে যিনি বলেছেন : আমার প্রিয় আল্লাহর হাবীব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :

জিবরাইল আমাকে এমন বলেছে - আমি মহান আল্লাহকে বলতে শুনেছি :لا اله الا الله -র শব্দগুলো আমার দূর্গ , তাই যে কেউ তা বলবে সে আমার দূর্গে প্রবেশ করবে এবং যে আমার দূর্গে প্রবেশ করবে সে আমার শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।

এরপর তিনি পর্দা টেনে দিলেন এবং সামনে এগিয়ে চললেন। প্রায় 20 হাজার লেখক এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্য একটি হাদীসে এসেছে হযরত বলেছেন : বিশ্বাস হলো হৃদয় দিয়ে স্বীকৃতি দান , জিহবার স্বীকারোক্তি এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ । হয়তোবা তিনি বলেছিলেন উভয়টিই।

আহমাদ বলেন : যদি এ হাদীসটি এর বর্ণনাকারীদের ক্রমধারাসহ কোন পাগল লোকের সামনে পড়া হয় তাহলে সে সুস্থ হয়ে যাবে।