কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 60053
ডাউনলোড: 3103

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 60053 / ডাউনলোড: 3103
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী (আঃ) ইমাম হাসান আসকারীর (আঃ) সন্তান

যখন আপনারা বুঝতে পারবেন আমরা কি বলছি ও রেওয়ায়েত কী বলছে তখন এর শেষে বুঝতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না (অর্থাৎ প্রতীক্ষিত মাহদী যে আবু মোহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান)। যাহোক , একটি সিদ্ধান্তে আসার পদ্ধতিগত বিষয়ের প্রয়োজনে আমরা তা উপরের শিরোনামের অধীনে লিখেছি। আমরা বলছি ইতোমধ্যে উল্লেখিত রেওয়ায়েতসমূহ ইঙ্গিত করে যে মাহদী হলেন ইমাম হোসেইনের (আঃ) নবম বংশ এবং আবুল হাসান আল-রিদার (আঃ) চতুর্থ বংশধর তা বিষয়টি প্রমাণ করে (মাহদী হাসান আসকারীর (আঃ) সন্তান)। বিশেষ করে যে রেওয়ায়েত আমরা ফারায়েদুস সিমতাঈন থেকে বর্ণনা করেছি যেখানে হযরত রিদা (আঃ) দেবেল খুযাঈকে বলেছেন :

নিশ্চয়ই আমার পরে ইমাম হবে আমার সন্তান মুহাম্মাদ তাক্বী জাওয়াদ এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান আলী হাদী নাক্বী এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান হাসান আসকারী এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান মুহাম্মাদ হুজ্জাত মাহদী মুনতাযার ।

এছাড়া আমরা যা পরবতীর্তে বর্ণনা করবো তা এ বিষয়কে প্রমাণিত করবে যে মাহদী খলিফাদের মধ্যে 12তম , ইমামদের মধ্যে 12তম। তিনি একজন ওয়াসী এবং আসমানী প্রমাণ।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 491 পৃষ্ঠায় হাফেয আবু নাঈম- এর আরবাঈন থেকে বলেছেন : পরহেযগার উত্তরাধিকারী আসবেন হাসান ইবনে আলী আসকারীর সন্তানদের মাঝ থেকে। তিনিই মাহদী , যুগের নেতা।

ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 157 পৃষ্ঠায় আব্দুল ওয়াহাব শরোনীর আল ইয়াওয়াকিত্ব ওয়াল জাওহার থেকে এবং তিনি আল ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ বই থেকে বর্ণনা করেছেন :

জেনে রাখো মাহদীর আগমন অবশ্যম্ভাবী কিন্তু সে আত্ম প্রকাশ করবে না যতক্ষণ না পৃথিবী নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ হয়। তখন তিনি একে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবেন। তিনি নবী (সাঃ)-এর বংশ ও ফাতেমা (আঃ)-এর বংশধর। তার পূর্ব পুরুষ হোসেইন ইবনে আবি তালিব এবং তার পিতা হাসান আসকারী যার পিতা ইমাম আলী আল নাক্বী তার পিতা ইমাম মোহাম্মাদ তাক্বী তার পিতা ইমাম আলী আর-রিদা , তার পিতা ইমাম মুসা কাযিম , তার পিতা ইমাম জাফর সাদেক , তার পিতা ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বের , তার পিতা ইমাম যয়নুল আবেদীন , তার পিতা ইমাম হোসেইন তার পিতা আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)।

তার নাম নবী (সাঃ)-এর নামে এবং মুসলিমরা তার হাতে বাইয়াত হবে রুকন এবং মাক্বাম -এর মাঝে (মাকামে ইবরাহিমের)।

(এ বইয়ের) লেখক বলেন : আমাদের বেশীর ভাগ শিয়া আলেম এবং আহলে সুন্নাতের আলেমগণও এ মহামূল্যবান বাক্যগুলো আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জাওহার বই থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি তা আবার আল ফুতুহাত আল মাক্কিয়্যাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ বইয়ের বতমার্ন সংস্করণে তা আমি পাই নি (তাই একটু ভাবুন হয়তোবা এ হাদীসটি বর্তমান যুগে বাদ দেয়া হয়েছে)।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 451 পৃষ্ঠায় ফাসলুল খেতাব থেকে বর্ণনা করেছেন : এটি পবিত্র ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর (আঃ) কথা যিনি বলেছেন : কোন সন্তান রেখে যাবো না আবুল ক্বাসিম মুহাম্মাদ ছাড়া যাকে এ উপাধি দেয়া হবে যেমন , ক্বায়েম , হুজ্জাত , মাহদী , সাহেবুয্যামান , খাতামুল আইম্মা , ইসনা আশার , ইমামিয়াদের মাঝে।

এ বইয়ের লেখক বলছেন : ইমামিয়াদের মাঝে কথাটি সত্যের সাথে সম্পর্কিত যে তিনি 12তম।

একই আলেম উল্লেখিত বইয়ের 470 পৃষ্ঠায় বলেছেন : সাইয়্যেদ আব্দুল ওয়াহহাব শারানী তার বই আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জওহার -এর 65তম অধ্যায়ে লিখেছেন :

মাহদী ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান

আবারও এ আলেম 471 পৃষ্ঠায় মাতালিবসু সূল এবং কামাল উদ্দীন তাইহার দুররুল মুনাযযাম থেকে বলেছেন : মাহদী মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান।

একই বইয়ের 471 পৃষ্ঠায় লেখক বলেছেন : বায়ান নামের কিতাবের শেষ অধ্যায়ে গাঞ্জী বলেন : নিশ্চয়ই মাহদী হবে হাসান আসকারীর ছেলে।

একই বইয়ের 471 পৃষ্ঠায় লেখক লিখেছেন : ফুসুলুল মুহিম্মার লেখক বলেছেন- নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুত্র মাহদী আলী আল-নাক্বীর সন্তান আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান (আঃ)।

দুররুল মূসাউইয়া -র লেখক বলেন : যাদেরকে আমি পেয়েছি আমাদের শিয়াদের মত বিশ্বাস রাখে মাহদীর বিষয়ে তারা হলো মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ গাঞ্জী তার আল বায়ানে , মুহাম্মাদ ইবনে তালহা শাফেঈ মাতালিবুস সূল -এ , সিবতে ইবনে জওযী তাসকিরাতুল আইম্মা -তে এবং শারাণী আল ইয়া ওয়াকীত্ব আল জওহার -এ , যেখানে তারা সবাই বলেছেন :

মাহদী ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন 255 হিজরীর 15ই শাবানের রাতে এবং তিনি এখনও বেচেঁ আছেন যতক্ষণ না তিনি এবং ঈসা ইবনে মরিয়াম পরস্পর সাক্ষাত করেন।

একই বিষয় এসেছে তাবাক্বাত -এ যেখানে এর লেখক শেইখ হাসান আরাক্বী থেকে বর্ণনা করেছেন (যিনি মাহদীর সাথে সাক্ষাত লাভ করেছিলেন যার পূর্ণ বর্ণনা তাবাক্বাতে এসেছে)।

আলী খাওয়াস ও শেইখ মহিউদ্দীন (তার ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ-র 366 অধ্যায়ে) এ বিশ্বাসে মত দিয়েছেন। শারানী তার লওয়াক্বেহ আল আনওয়ার এ (যা ফুতুহাতুল মাক্কীয়্যাহর উপসংহারে) শাবান মিসরী ইসাফুর রাগেবীন -এ এবং তার আল ইয়াওয়াক্বিত -এ তার হুবহু কথা (দু টোই মিশরী ছাপা) শেইখ সালাহউদ্দীন সাফাদি যার হুবহু বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে , শার এ দায়েরা থেকে ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত -এ , ফুসুলুল মুহিম্মাতে শেইখ আলী ইবনে মুহাম্মাদ মালিকি এবং শেইখ হামুইনি শাফেঈ ফারায়েদুস সিমতাইন -এ বর্ণনা করেছেন : নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুত মাহদী হচ্ছেন আলী আল নাক্বীর সন্তান মুহাম্মাদ হাসান আসক্বারীর সন্তান।

তৃতীয় অধ্যায়

মাহদী (আঃ) ও তার চেহারা

আবু দাউদ তার সহীহতে (খণ্ড-4 , পৃষ্ঠা-88) আবু সাইদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :

মাহদী আমার থেকে , তার ঝকঝকে কপাল এবং লম্বা নাক।

আবু নাঈম থেকে ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক -এর 98 পৃষ্ঠায় নবী (সাঃ)-এর একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন :

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন। তার সামনের দাতগুলোতে সামান্য ফাক আছে এবং তার কপাল আলোতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

ইসাফুর রাগেবীনের লেখক আবু নাইম থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন , ইবনে হাজার (98 পৃষ্ঠায়) রুইয়ানি ও তাবরানি থেকে এবং তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে : মাহদী আমার বংশ থেকে। তার রং আরবী এবং তার দেহগঠন ইসরাইলী (অর্থাৎ তার উচ্চতা , শক্তিশালী দেহগঠন)।

একই হাদীস ইসাফুর রাগেবীনে এসেছে (149 পৃষ্ঠায়)। ইসাফুর রাগেবীনের 140 পৃষ্ঠায় লেখক আবু নাঈম ইসফাহানীর হুলিয়াতুল আউলিয়া থেকে বর্ণনা করেছেন : মাহদী এক যুবক যার আছে কালো চোখ , লম্বা ভ্রু , উচুঁ নাক , কোঁকড়ানো দাড়ি এবং ডান গালে ও ডান হাতে তিল।

নুরুল আবসার -এর লেখক 229 পৃষ্ঠায় আবু দাউদ ও তিরমিযী থেকে এবং তারা আবু সাঈদ খুদরী থেকে , যিনি বলেন , আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি যে ,

মাহদী আমার থেকে। তার আছে জ্বলজ্বলে কপাল ও উচুঁ নাক।

একই বইতে লেখক 230 পৃষ্ঠায় ইবনে শিরউইয়্যা থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে , তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ

মাহদী আমার সন্তান , তার গায়ের রং আরবী (ফর্সা) এবং তার দেহগঠন ইসরাইলের দেহগঠনের মত।

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন , যিনি মাহদী সম্পর্কে বলেন :

সে এক পুরুষ যার রয়েছে জ্বলজ্বলে কপাল , খাড়া নাক , প্রশস্ত উরু। তার ডান গালে আছে একটি তিল এবং তার দাঁতগুলোর মাঝে ফাঁক রয়েছে।

একই বইতে একই অধ্যায়ে লেখক আবু জাফর মুহাম্মাদ আলী আল বাক্বের (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে : আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিবকে মাহদীর দেহগঠন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন :

সে একজন যুবক মাঝারী গঠনের , এবং আকর্ষণীয় চেহারার , তার চুল তার কাধঁ পর্যন্ত ঝুলে থাকবে , তার চেহারা থেকে জ্যোতি ছড়াবে।

মাহদী (আঃ) ও তার চরিত্র

ইবনে হাজার সাওয়ায়েক -এর (98 পৃষ্ঠায়) রুইয়ানি ও তাবরানি থেকে এবং তারা রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে : মাহদী আমার বংশ থেকে। এরপর তিনি বলেন : আকাশের বাসিন্দারা এবং পৃথিবীর বাসিন্দারা তার শাসন নিয়ে খুশী। তাবরানি যোগ করেছেন , আকাশের পাখিরা। একই হাদীস পাওয়া যায় ইসাফুর রাগেবীনের 149 পৃষ্ঠায়।

ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 151 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন আহমাদ ও মাওয়ারদী থেকে , তারা নবী (সাঃ) থেকে ,

সুসংবাদ তোমাদেরকে মাহদী সম্পর্কে এরপর তিনি বলেন : আকাশের বাসিন্দারা এবং পৃথিবীর বাসিন্দারা তাকে নিয়ে খুশী। সে সম্পদ সমানভাবে ভাগ করে দিবে , মুহাম্মাদের উম্মাহকে অভাব থেকে মুক্তি দেবে এবং তাদেরকে তার সৎকর্মশীলতা দিয়ে আরাম দিবে।

ইকদুদ দুরার এর লেখক 8ম অধ্যায়ে তাউস থেকে বর্ণনা করেন , মাহদীর নিদর্শন হচ্ছে তিনি শাসকদের প্রতি কঠোর হবেন এবং জনগণের প্রতি উদার হবেন সম্পদ বণ্টনে এবং অসহায়দের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়াতে নরম হবেন। এরপর তিনি লিখেছেন : এ হাদীসটি নেয়া হয়েছে আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ফাতান বই থেকে।

ইকদুদ দুরার -এর তৃতীয় অধ্যায়ের 9ম অংশে লেখক হাফেজ আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি আবু রুমিয়াহ থেকে বলেন , মাহদী অসহায়দের খাওয়াবেন।

নুরুল আবসারের লেখক ইমাম আহমাদ-এর মুসনাদ থেকে এবং তিনি আবু সাইদ খুদরী থেকে যিনি বলেছেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আমি মাহদীর বিষয়ে তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি।

এরপর তিনি বললেন : আকাশের বাসিন্দারা ও পৃথিবীর বাসিন্দারা তাকে নিয়ে খুশী। সে জনগণের মাঝে সম্পদ সমানভাবে বন্টন করে দিবে এবং মুহাম্মাদের উম্মাহর হৃদয়কে অভাবমুক্ত করে দিবে। সে তাদেরকে তার সৎকর্মশীলতা দিয়ে আরাম দিবে।

একই বইয়ের একই পৃষ্ঠায় লেখক বলেছেন হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী-এর ফাতান থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ,

মাহদী আমার সন্তান। এরপর তিনি বললেন , আকাশের বাসিন্দারা , পৃথিবীর বাসিন্দারা এবং আকাশের পাখিরা তার শাসন নিয়ে আনন্দিত।

মাহদী (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মত

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 493 পৃষ্ঠায় খাওয়ারাযমীর মানাক্বেব থেকে যিনি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ মাসরুর থেকে , তিনি হুসেইন ইবনে মুহাম্মাদ আমের থেকে , যিনি বর্ণনা করেন তার চাচা আব্দুল্লাহ ইবনে আমের থেকে , যিনি মুহাম্মাদ ইবনে আবু উমাইর থেকে , তিনি আবু জুমাইলা মুফাযযাল ইবনে সালেহ থেকে , তিনি জাবের ইবনে ইয়াযদী থেকে , তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহিল আনসারী থেকে , যিনি বলেছেন , রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেন :

মাহদী আমার সন্তান। তার নাম ও উপাধি আমার নাম ও উপাধির মত। সমস্ত মানুষের মাঝে সে সৃষ্টিতে ও চরিত্রে আমার মত হবে।

উল্লেখিত বইতে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে আবু বাসীর থেকে , যিনি বর্ণনা করেছেন হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক থেকে , যিনি তার পিতা আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

ফুতুহাতুল মাক্কীয়্যাহ র লেখক 366তম অধ্যায়ে মাহদীর (আঃ) চরিত্র সম্পর্কে লিখেছেন : তিনি সৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মত কিন্তু চরিত্রে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাইতে সামান্য কম যেহেতু কেউই তার মত হতে পারবে না যেমন আল্লাহ বলেছেন :

) وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ(

অবশ্যই তুমি সুমহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। (সূরা ক্বালামঃ 4)

এ বইয়ের লেখক বলতে চান ; কোন মত অনুযায়ীই দু জন ব্যক্তি এক হওয়া অসম্ভব স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু এ ধরনের মন্তব্য একজনের সাথে অন্যজনের নৈকট্য বোঝায় , যেমন প্রথম হাদীস থেকে এ ধরনের অর্থ পাওয়া যায় , সব মানুষের মধ্যে তিনি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে সবচেয়ে মিল রাখেন।

মাহদী (আঃ) ও তার চিন্তাভাবনা

আবু দাউদ তার সহীহ -র 88 পৃষ্ঠায় রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে সালামা থেকে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে , মাহদী এবং রুকন মাক্বাম -এর মাঝে তার বাইয়াত গ্রহণ প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বলেন : জনগণ তাদের নবীর মত কাজ করবে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর নীতিমালা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক (437 পৃষ্ঠায়) আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন , যিনি মাহদীর (আঃ) বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করেন-

যখন তারা (জনগণ) হেদায়েতকে তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করার জন্য পদক্ষেপ নিবে তখন মাহদী খেয়াল খুশীকে হেদায়েতের অনুসরণ করার জন্য পরিবর্তন করে দিবেন। যখন তারা কোরআনকে তাদের বুদ্ধি অনুযায়ী ব্যাখা করবে , মাহদী তখন বুদ্ধিকে কোরআনের অনুসরণ করাবে। মাহদী তোমাদের কাছে ন্যায়বিচার প্রদর্শন করবে। মাহদী কোরআন ও সুন্নাহর বিধানকে জীবিত করবে যা তখন পর্যন্ত ছিলো মৃত ও প্রাণহীন।

সাওয়ায়েক্ব -এর 98 পৃষ্ঠায় ইবনে হাজার বলেন : ইবনে হেমাদ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন , যার বর্ণনাধারা রাসূল (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছায়। হযরত বলেছেন :

মাহদী আমার জাতি থেকে , সে আমার সুন্নাহর জন্য যুদ্ধ করবে যেভাবে আমি আল্লাহর ওহীর জন্য যুদ্ধ করেছি।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখর 445 পৃষ্ঠায় হামুইনী থেকে বর্ণনা করেন , তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :

নিশ্চয়ই আল্লাহ এ ধমর্কে শক্তিশালী করেছেন আলীর হাত দিয়ে। এরপর যখন তাকে হত্যা করা হবে ধর্ম নীচের দিকে নামতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না মাহদী আসে এবং একে শুদ্ধ করে।

এ বইয়ের লেখক বলতে চান , মাহদী (আঃ) পৃথিবীকে ইসনাফ ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর। এ ধরনের হাদীস মুস্তাফিযা পর্যায়ের , ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আপনারা এরকম ও অন্যান্য হাদীসগুলো দেখতে পাবেন।

মাহদী (আঃ) ও তার জ্ঞান

ইকদুদ দুরার -এর তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক হারিস ইবনে মুগাইরা আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি আবু আব্দুল্লাহ হোসেইন ইবনে আলীকে জিজ্ঞেস করেন , কী নিদর্শনের ভিত্তিতে আমরা মাহদীকে চিনবো ?

তিনি বললেন : তার শান্তভাব ও ভাবগাম্ভীর্য থেকে।

আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম , কোন নিদর্শনের মাধ্যমে ?

তিনি বললেন , নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে এবং তার প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা দেখে ও অন্যদের কাছে তার পয়োজনীয়ত্রা দেখে।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 801 পৃষ্ঠায় দুররাতুল মাআরেফ থেকে বর্ণনা করেছেন : মাহদী আনথাকিয়ার গুহা থেকে কিতাব (তাওরাত ও ইঞ্জিল) বের করে আনবেন এবং তাবারিয়া হৃদ থেকে যবুর বের করে আনবেন যা মুসা ও হারুনের পরিবার রেখে গেছে এবং যা ফেরেস্তারা বহন করেছিলো এবং ফলকসমূহ (পাথর ও কাঠের ফলক যেখানে ঐশী বাণী লেখা হয়েছিলো) এবং মূসা (আঃ)-এর লাঠি। এছাড়া মাহদী সব মানুষ থেকে জ্ঞানে ও অন্তরদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠতর।

উল্লেখিত বইয়ে লেখক খাওয়ারাযমী থেকে , যার বর্ণনা ধারা আবু জাফর বাক্বির (আঃ)-পর্যন্ত পৌঁছেছে , যিনি মাহদীর বিষয়ে নবীর (সাঃ) অনুরূপ দেখতে হওয়া নিয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বললেন , এবং সেসব নবীরা যা জমা রেখে গেছে তা বের করে আনবে।

ইকদুদ দুরার -এর লেখক (3য় অধ্যায় , 9ম অংশে) আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেন , আমি হযরত আবু জাফর (বাক্বির)-কে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী সম্পর্কে আমাকে জানানোর জন্য , এবং তিনি উত্তর দিলেন : আমি ক্বায়েম নই এবং সেও নয় যাকে তোমরা তাওয়াফ করেছো। আমি তাকে মাহদীর আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি উত্তরে বললেন , যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আচরণ করতেন।

মাহদী (আঃ) ও তার ন্যায়পরায়নতা

ইকদুদ দুরার -এর তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক কাবুল আখবার থেকে বর্ণনা করেন যে , আমি নবীদের বইতে মাহদীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি যে তার আদেশসমূহ নীপিড়নমূলক ও সীমালংঘনমূলক নয়।

এরপর তিনি লিখেছেন : ইমাম আবু উমার ও মুক্কারী তাদের সুনান -এ এবং হাফেজ আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ইবনে হেমাদও এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

মাহদীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ফুতুহাতুল মাক্কীয়াহ র লেখক 363 নং অধ্যায়ে লিখেছেন : তিনি সম্পদ সমানভাবে বন্টন করবেন , জনগণের মাঝে ন্যায়বিচার করবেন এবং ঝগড়া বিবাদকে বন্ধু করবেন।

ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 161 পৃষ্ঠায় ফুতুহাতুল মাক্কিয়াহ থেকে বলেন : গবেষণায় দেখা যায় হযরত মাহদী সেই আদেশ দিবেন যা ফেরেশতারা দিবে এবং নিশ্চয়ই তার কাছে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বিশ্বাসকে প্রকাশ করা হবে।

একই বিষয় দেখা যায় অন্য একটি হাদীসে যেখানে রাসূল (সাঃ) বলেছেন : মাহদী আমাকে অনুসরণ করবে এবং সব ভুলের উর্ধ্বে থাকবে।

এভাবে রাসূল (সাঃ) আমাদের বুঝতে শিখিয়েছেন যে মাহদীর (আঃ) আদেশগুলো রাসূল (সাঃ) এরই আদেশ। কোন নতুন আবিষ্কার নয়। এছাড়া এটি প্রমাণ করে যে তিনি নির্ভূল বা মাসুম এবং সত্য ছাড়া কোন আদেশ দিবেন না।

এরপর লেখক বলেছেন : আল্লাহ তাকে ওহীর মাধ্যমে শুধু সত্যই জানাবেন তা নয় বরং তাকে কারও সাথে তুলনা করাও নিষিদ্ধ।

মাহদী (আঃ) ও তার উদারতা

হুদাল ইসলামের 25তম সংখ্যায় ইবনে মাজাহ থেকে একটি হাদীস যা আবু সাঈদ খদরী রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন :

নিশ্চয়ই মাহদী আমার উম্মাহ থেকে। এরপর তিনি বলেছেন , একজন ব্যক্তি তার কাছে যাবে এবং বলবে মাহদী আমাকে দিছু দান করুন। তখন সে তাকে সম্পদ ঢেলে দিবে এমন পরিমাণ যা সে বহন করতে পারে।

ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 149 পৃষ্ঠায় আবু দাউদ এবং আবু আব্দুল্লাহ হাকেম নিশাবুরী থেকে ; ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 431 পৃষ্ঠায় তিরমিযী থেকে এবং তিনজনই আবু সাঈদ খুদরী থেকে রাসূল (সাঃ)-এর একই হাদীস হুবহু বর্ণনা করেছেন।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব -এর 98 পৃষ্ঠায় আবু নাঈম থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেন : আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন। এরপর তিনি বললেন : সে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ দান করবে। একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে ইসাফুর রাগেবীনের 149 পৃষ্ঠায়।

এছাড়া ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব -এর 98 পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে আহমাদ এবং মুসলিম রাসূল (সাঃ) থেকে একটি হাদীস এনেছেন যেঃ সময়ের শেষে একজন খলিফা আসবে যে সম্পদ দান করবে প্রচুর পরিমাণে কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়া।

একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে ইসাফুর রাগেবীন -এর 149 পৃষ্ঠায়।