কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 60447
ডাউনলোড: 3147

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 60447 / ডাউনলোড: 3147
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী (আঃ) ও তার শাসন

ইকদুদ দুরার -এর লেখক আবু আব্দুল্লাহ ইবনে জওযীর তারিখ থেকে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন :

পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলো 4 জন। দু জন বিশ্বাসী ও দু জন অবিশ্বাসী। দু জন বিশ্বাসী হলো যুলক্বারনাইন এবং সোলাইমান আর অবিশ্বাসী দু জন হলো বাখতুন নাসর (নেবুযাদ নেযযার) এবং নমরুদ। শীঘ্রই আমার বংশ থেকে একজন এর (পৃথিবীর) নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে।

ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 152 পৃষ্ঠায় বলেছেন : হাদীসে এসেছে মাহদী পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত মালিক হবেন।

লেখক বলেছেন : কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে তার শাসন পূর্ব ও পশ্চিমকে ঢেকে ফেলবে।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক জওহারুল আক্বদাইন থেকে এবং তিনি আলী থেকে বর্ণনা করেন :

যখন মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশ থেকে ক্বায়েম আত্মপ্রকাশ করবে আল্লাহ তার জন্য পূর্ব ও পশ্চিমের অধিবাসীদের একত্র করবেন।

মাহদী (আঃ) ও তার সংস্কার

আবু দাউদ তার সহীহ -তে 4র্থ খণ্ডের 87 পৃষ্ঠায় আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , মাহদী (আঃ) ও তার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ)

যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনও বাকী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন। সে পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

নুরুল আবসার -এর লেখক 231 পৃষ্ঠায় আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম , মাহদী কি মুহাম্মাদের বংশ থেকে আসবে নাকি অন্য কোন বংশে ?

তিনি উত্তর দিলেন : না সে আসবে আমাদের থেকে। আল্লাহ ধর্মকে সম্পর্ণতা দিবেন তার হাতে ঠিক যেভাবে তিনি আমাদের দিয়ে তার প্রসার ঘটিয়েছেন। আমাদের বরকতে তারা (জনগণ) দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাবে যেভাবে তারা মূর্তিপূজা থেকে মুক্তি পেয়েছিলো। আমাদের বরকতে তাদের হৃদয়গুলোকে একতাবদ্ধ করবেন ষড়যন্ত্রমূলক শত্রুতার পর যেভাবে তিনি তাদের হৃদয়গুলোকে মূর্তিপূজার শত্রুতার পর একতাবদ্ধ করেছিলেন। আমাদের বরকতে তারা বিশ্বাসে ভাই হয়ে যাবে , পরস্পরের প্রতি শত্রু হওয়ার পর।

কিছু আলেম এ হাদীসটিকে হাসান (গ্রহণযোগ্য) এবং বর্ণনা ধারায় শ্রেষ্ঠতর বলে মনে করেছেন এবং হাদীসের বিশেষজ্ঞরা তাদের নিজ নিজ কিতাবে তা লিখেছেন। কিন্তু তাবরানী এটিকে শুধু উল্লেখ করেছেন তার আজাম (আউসাথ)-এ , আবু নাইম শুধু বর্ণনা করেছেন তার হুলিয়াতুল আউলিয়াতে এবং আব্দুর রহমান শুধু তার আওয়ালী তে।

মাহদী (আঃ ) ও তার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ )

ইকদুদ দুরারের লেখক 1ম অধ্যায়ের 4র্থ অংশে আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী থেকে বর্ণনা করেন :

মাহদী আশুরা -র দিন আবির্ভূত হবেন (আর সেদিন ইমাম হোসেইন (আঃ) শহীদ হন কারবালাতে , সম্ভবত শনিবার দিন) রুকন ও মাক্বামের মাঝে এবং তার ডান দিকে থাকবে জিবরাইল ও তার বায়ে থাকবে মিকাইল। আল্লাহ তার শিয়াদের (অনুসারীদের) সব জায়গা থেকে তার চারদিকে জড়ো করবেন এবং পৃথিবী তাদের জন্য গুটিয়ে যাবে।

উল্লেখিত বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ অংশে লেখক আবু আব্দুল্লাহ হাকেম এর মুসতাদয়াক থেকে এবং তিনি উম্মে সালামা থেকে বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :

জনগণ রুকন ও মাকামের মাঝে ঐ ব্যক্তির বাইয়াত করবে যে আমার অনুসারীদের একজন এবং তাদের সংখ্যা বদর -এর লোকদের সংখ্যার সমান হবে।

আবার একই বইয়ের 7ম অধ্যায়ে এর লেখক নাইম ইবনে হেমাদ এর আল ফাতান থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন :

মাহদীর কাছে বাইয়াত করা হবে কোন মানুষকে তার ঘমু থেকে না জাগিয়েই এবং এক ফোটা রক্ত ঝরানো ছাড়াই।

ফুতুহাতলু মাক্কীয়্যাহ -র লেখক (366 অধ্যায়) মাহদীর কথা উল্লেখ করেন যে তিনি ফাতেমার বংশধর ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে তার নাম এবং তার প্রপিতামহ হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব এবং বলেন : জনগণ তার কাছে বাইয়াত করবে রুকন ও মাকামের মাঝে।

প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) অদ্বিতীয়

আমরা এ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে (মাহদী (আঃ) সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মন্তব্য উল্লেখ করার সময় ইবনে হাজার এর আল কুয়্যাল উল মুখতাসার ফী আলামাত মাহদী আল মুনতাযার -এর মন্তব্য উল্লেখ করেছি :

প্রতীক্ষিত মাহদী একজনই এবং অনেক নয় ইবনে হাজারের কথা মূল্যবান মন্তব্য। নিশ্চয়ই তা উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছে এবং বাস্তবতাকে জানিয়ে দিয়েছে।

নিশ্চয়ই প্রতীক্ষিত মাহদী এবং ক্বায়েম মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশ থেকে এবং তিনিই সে ব্যক্তি যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। সম্মানিত নবী ও তার আহলে বায়েত তার আগমন সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন , সাহাবীরা এবং তাবেঈন ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে তিনি (মাহদী) একজনই এবং অদ্বিতীয়। তিনি অনেকজন নন যদিও তার উপাধি বেশ ক টি।

যে হাদীসগুলো আমরা আগে উল্লেখ করেছি এবং যা আমরা আগামীতে উল্লেখ করবো তা সামনের অধ্যায়গুলোতে বিষয়টির সত্যতার ইঙ্গিত করে। নিশ্চিতভাবে এ হাদীসগুলো সব ভুল বুঝাবুঝি দূর করবে এবং মাহদী সম্পর্কে কোন সন্দেহকারীর মনে কোন সন্দেহ থাকবে না যে তিনি একজন ও অদ্বিতীয়।

আমরা যে হাদীসগুলো লিখেছি এবং যে হাদীসগুলো আমরা উল্লেখ করবো সেগুলো মাহদীকে (আঃ) পরিচয় করিয়ে দিবে , সত্যায়ন করবে ও আলাদা করে চিনিয়ে দিবে ; আর তাই মাহদীর (আঃ) সংখ্যা একের অধিক বলে বিবেচনা করা হবে অযৌক্তিক। এখন আমরা সেসব চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করবোঃ

প্রথম : তার বাড়ি ও পরিবারের সুনির্দিষ্ট পরিচয়।

দ্বিতীয় : তার পিতা ও পিতামহদের পরিচয়।

তৃতীয় : তার পিতা ও মাতার নাম।

চতুর্থ : তার নাম , ডাকনাম ও উপাধি।

পঞ্চম : তার গুণাবলী ও নিদর্শনসমূহ।

ষষ্ঠ : তার নৈতিকতা ও আচার-ব্যাবহার।

সপ্তম : তার আত্মগোপন ও তার দীর্ঘ সময়।

অষ্টম : তার আগমন সময়ের শেষে।

নবম : সেসব ঘটনা যা তার পুনরাগমনে ঘটবে।

দশম : তার পুনরাগমনের সময় দাজ্জাল ও সুফিয়ানীর আগমন।

এগারতম : তার কাছে রুকন ও মাক্বামের মাঝে বাইয়াত।

বারোতম : ঈসার (আঃ) অবতরণ ও তার পিছনে নামাজ।

তেরতম : তার সংস্কার কার্যক্রম।

চোদ্দমত : তার আবির্ভাবে বরকত।

পনেরতম : যেসব বিষয়ে জনগণকে আদেশ করবেন।

ষোলতম : তার যদ্ধসমূহ ও বিজয়সমূহ।

সতেরোতম : তার সরকারের প্রসার ও শাসন।

আঠারোতম : তার খিলাফত ও নেতৃত্বের সময়কাল।

উনিশতম : তার ইন্তেকাল বা গুপ্ত হত্যার পরিবেশ পরিস্থিতি।

বিশতম : তার পুনরাগমনের পর কিছু মতৃ ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন।

তাওরাত ও বাইবেলে নবী (সাঃ)-এর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তার পন্থা , আচার-ব্যবহার , অন্তর্দৃষ্টি , বংশধারা এবং পরিবার রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমের কেউই এসব বৈশিষ্ট্যকে বিভিন্ন মুহাম্মাদের বলে ভাবে নি।

লেখক বলতে চান , আমার মনে হয় (যদিও মনে হওয়াটা সত্য চাওয়া থেকে কাউকে মুক্ত করে দেয় না) বিভিন্ন মাহদী আসবেন এ ধারনার উৎস তিনটি :

প্রথমতঃ শাসন কতর্তৃ , সরকার গঠনে এবং রাজ্য ও খিলাফতের আকর্ষণে হয়তো কেউ কেউ এ দাবী করতে পারে।

দ্বিতীয়তঃ এটি হয়তো কোন সুফী তরিকায় প্রথম আবির্ভার্ব হয়েছে যেখানে বিশেষ খিলাফত লাভে ব্যর্থ হয়ে তারা বিভিন্ন মাহদী আবিষ্কার করেছে।

তৃতীয়তঃ বনি উমাইয়্যার কিছু অনুসারী যখন এমন কিছু হাদীস লক্ষ্য করেছে যেখানে মাহদীর কথা বলা হয়েছে এবং তারা ভেবেছে মাহদী মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর বংশ থেকে এবং ফাতেমার বংশ ও হোসেইনের বংশ থেকে এবং হযরত হাসান আসকারীর সন্তান- একথা তারা ঘোষণা করতে বাধ্য হবে যা ছিলো তাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং তাদের লক্ষ্য পরিপন্থী। তখন তারা বিভিন্ন মাহদীতে বিশ্বাস করা শুরু করেছে।

এ বিষয়ে অন্য কথাও পাওয়া যায় যা যুক্তিহীন যেমন , মাহদী আব্বাস- এর বংশধর এবং হাসান আল মুজতবার সন্তান থেকে অথবা তার জন্ম হবে পরে। এগুলোর সবগুলোর মূল কারণ হচ্ছে উপরের তিনটি কারণের একটি।

চতুর্থ অধ্যায়

মাহদী (আঃ) ও তার সম্মান

ইকদুদ-দুরার -এর প্রথম অধ্যায়ে লেখক আবু আইউব আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফাতিমা (আঃ)- কে বলেছেনঃ

আমাদের নবী নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সে তোমার পিতা। আমাদের শহীদ শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সে হলো হামযা , তোমার পিতার চাচা এবং আমাদের কাছ থেকে সে যার দু টো পাখা আছে এবং তাদের (ফেরেশতাদের) সাথে উড়ে বেড়াবে বেহেশতের যে জায়গায় তার ইচ্ছা এবং আমাদের কাছ থেকে এ উম্মতের দুই সেব্ত (সন্তান) হাসান ও হোসেইন এবং তারা তোমার সন্তান এবং আমাদের কাছ থেকে আসবে মাহদী।

এরপর তিনি লিখেছেনঃ হাফেয আবুল ক্বাসিম তাবরানী এ হাদীসটি তার মু আজাম-এ সগীর এ বর্ণনা করেছেন।

এ বইয়ের লেখক বলতে চান - কী সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বই না আল্লাহ প্রতীক্ষিত মাহদীকে দান করেছেন যে তার সত্যবাদী ও মহান প্রপিতামহের ভাষায় তিনি এমন এক পরিবারের একজন যাদের কাছ থেকে আল্লাহ অপবিত্রতা দূর করেছেন এবং তাদেরকে পুতঃপবিত্র করেছেন।

মাহদী (আঃ) ও তার উচ্চ মর্যাদা

ইকদুদ দুরার -এর লেখক (প্রথম অধ্যায়) আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন- ঈসা ইবনে মারইয়াম তার দৃষ্টিতে যখন প্রথম দেখলেন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশধর ক্বায়েমকে কী দান করা হবে তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাব , আলে মুহাম্মাদের ক্বায়েমের মর্যাদা আমাকে দান করুন। তাকে বলা হলো- সে আসবে আহমাদের সন্তান থেকে। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার দেখলেন এবং প্রথমে যা দেখেছিলেন তা-ই দেখলেন। তিনি আবারও একই জিনিস চাইলেন এবং একই উত্তর শুনলেন। তিনি তৃতীয়বারের মত তাকালেন এবং আগের মতই সব দেখলেন। তিনি আবারও অনুরোধ করলেন এবং একই উত্তর পেলেন।

এছাড়া ইকদুদ দুরার - এর লেখক সালেম আশাল থেকে বর্ণনা করেন- আমি ঠিক এ ধরনের একটি হাদীস শুনেছি যে আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ) বলতেন-

হে মাহদী , হে প্রতীক্ষিতজন , হে আলে মুহাম্মাদের ক্বায়েম , তোমার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। কী ঐশী মর্যাদাই না আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন এবং নির্ধারিত করেছেন ; আর এটিকে শ্রেষ্ঠতর করেছেন তোমার মর্যাদার জন্য ঐ পর্যন্ত যখন আল্লাহর সাথে নিভৃতে আলাপকারী দু জন মূসা ইবনে ইমরান এবং রুহুল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়ম চেয়েছিলেন তোমার এ উচ্চ মর্যাদা পেতে যদিও তাদের ছিলো উচ্চ ঐশী মর্যাদা । যাহোক , আল্লাহ তাদের ইচ্ছাকে গ্রহণ করেন নি। যখন তারা দু জনই তাকিয়েছিলো তোমার ঐশী মর্যাদার দিকে , যা তোমাকে আল্লাহ দান করেছেন , তখন তারা মগ্ধু হয়ে গেলো এবং এ মর্যাদা তাদেরকেও দানের জন্য আল্লাহকে অনুরোধ জানালো। কিন্তু তারা যে উত্তর পেলো তা হলো- একমাত্র আলে মুহাম্মাদের ক্বায়েম ছাড়া এ মর্যাদা কেউ পাবে না।

তখন তারা মাহদীর অস্তিত্ব ও আবির্ভাবের কারণে যে প্রতিক্রিয়া ঘটবে (অথার্ৎ সত্য বিশ্বাস পূর্ব ও পশ্চিমে বিজয় লাভ করবে , সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং নৃশংসতা ও অত্যাচার ধ্বংস হবে) , তার দিকে তাকালেন , তারা আল্লাহকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন এর প্রতিক্রিয়া তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আসুক এবং তাদের প্রচার কাজের ফলাফল হিসাবে আসুক। কিন্তু তাদেরকে বলা হয়েছিলো এ উচ্চ মর্যাদা শুধু আলে মুহাম্মাদের কায়েমের জন্য নিধারিত

মাহদী (আঃ) ও ঈসা (আঃ)

বোখারী তার সহীহ র 2য় খণ্ডে 158 পৃষ্ঠায় আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের অবস্থান তখন কী হবে যখন মারইয়ামের পুত্র তোমাদের মাঝে অবতরণ করবে এবং তোমাদের ইমাম তোমাদের মাঝ থেকে আসবে ?

একই হাদীস একই সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন মুসলিম।

ইকদুদ দুরার - এর লেখক (প্রথম অধ্যায়ে) হাফেজ আবু নাঈম ইসফাহানীর মানাক্বেবুল মাহদী থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে , তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ আমাদের কাছ থেকেই সেই ব্যক্তি যার পিছনে ঈসা নামাজ পড়বেন।

এ বিষয়ে হাদীস অনেক রয়েছে এবং তার ইমামত , মর্যাদা ও নেতৃত্ব সম্পর্কে যা বর্ণনা করেছি তা যথেষ্ট।

গাঞ্জী তার কিতাব বায়ান - এ নামাজ সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন- যদি কেউ বলেঃ এ হাদীসের সত্যতা যে ঈসা (আঃ) মাহদী (আঃ)- এর পিছনে নামাজ পড়বেন এবং তার পাশে থেকে যুদ্ধ করবেন এবং ঈসা মাহদীর উপস্থিতিতে দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং নামাজের সময় ঈসার উপরে মাহদীর অগ্রাধিকার থাকবে এগুলো সবই সুপরিচিত , তাহলো একইভাবে জিহাদ এর সময়ও তার মর্যাদা ঈসার চাইতে বেশী হবে।

এ হাদীসসমূহের সত্যতা আহলে সূন্নাতের কাছে দৃঢ় এবং একইভাবে শিয়ারাও তা বর্ণনা করেছে।

মাহদী (আঃ) ও উম্মাহ

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণনা করেন আবু উমার মুক্কারী থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে , যিনি সুফিয়ানী ও তার খারাপ কাজের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেনঃ

একটি উচ্চ কন্ঠ শোনা যাবে আকাশ থেকে - এক ধমকের কন্ঠ- হে জনগণ , নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে অত্যাচারী , মোনাফেক ও তাদের অনুসারীদের হাত কেটে ফেলেছেন এবং মুহাম্মাদ-এর উম্মাহ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠকে তোমাদের পথ প্রদর্শক বানিয়েছেন , তাকে মক্কায় খোজঁ কর। নিশ্চয়ই সেই হলো মাহদী।

ইকদুদ দুরার - এর লেখক (7ম অধ্যায়) ইমাম আহমদের মুসনাদ ও হাফেয আবু নাঈমের আওয়ালী থেকে এবং এ দু জন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন- রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

ধ্বংস সে উম্মাহর জন্য নয় যার প্রথম হচ্ছি আমি , এর শেষ হচ্ছে ঈসা এবং মধ্যবর্তী হচ্ছে মাহদী।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক - এ আবু নাঈম- এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে যে , রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ এক জাতি যার প্রথম জন আমি। যার শেষ জন ঈসা ইবনে মরিয়ম এবং মধ্যবর্তী জন মাহদী তা কখনোই ধ্বংস হবে না।

একই হাদীস পাওয়া যায় ইসাফুর রাগেবীনের 151 পৃষ্ঠায়।

ইকদুদ দুরার - এর লেখক (7ম অধ্যায়) নাসাঈ-র সূনান থেকে এবং তিনি আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

ধ্বংস সে জাতির নেই যার প্রথম জন হচ্ছি আমি , মাহদী হচ্ছে মধ্যবর্তী জন ও মসিহ হচ্ছে শেষ জন।

মাহদী (আঃ) ও বেহেশত

ইকদুদ দুরার -এর লেখক (7ম অধ্যায়) ইবনে মাজাহ , তাবরানী , আবু নাঈম এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে , তারা আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

আমরা আব্দুল মোত্তালিবের সাত জন সন্তান- আমার ভাই আলী , জাফর , হাসান , হোসেইন , মাহদী এবং আমি বেহেশতের মানুষদের সর্দার।

নাহাজুল বালাগাতে আলী (আঃ) বলেছেনঃ জেনে রাখো , হে আল্লাহর সৃষ্ট জীবেরা , যে আল্লাহকে ভয় করে তাকে অবশ্যই ফিতনা থেকে বের হওয়ার পথ দেখানো হবে এবং তার অন্ধকারে তাকে একটি নূর দান করা হবে। সে যা চাইবে তা তাকে দেয়া হবে। এছাড়া আল্লাহ তাকে প্রাসাদ দেবেন তার কাছে এক সুন্দর জায়গায় , একটি প্রাসাদ যা সে নিজেই নির্মাণ করেছে। তার ছাদ হবে তাঁর আরশ এবং এর উজ্জ্বলতা হবে তার নিজের সত্তা। ফেরেশতারা তার দর্শনার্থী হবে এবং নবীরা তার বন্ধু হবে।

এ বইয়ের লেখক বলতে চান - বেহেশত হচ্ছে একটি জায়গা যা আল্লাহ তাঁর অনুগত দাসদের জন্য তৈরী করেছেন। তাই এর অধিবাসীরা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে পরহেযগার। সেখানে থাকবে নবীরা , রাসূলরা , বিভিন্ন বিশ্বাসী ও শহীদরা , এদের সাথে মাহদী হবে বেহেশতের সাত জন সর্দারের একজন। আর বড় সর্দার বলতে এখানে বয়সের কথা বলা হয় নি বলা হয়েছে আধ্যাত্মিকতার কথা।

নুরুল আবসার - এর লেখক 229 পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ ইবনে শিরউইয়্যাহ তার ফিরদাউস কিতাবে লিখেছেন- ইবনে আব্বাস বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী হচ্ছে বেহেশতের বাসিন্দাদের মাঝে ময়ুরের মত।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা র লেখক এ ধরনের একটি হাদীস কানযুল দাক্বায়েক্ব থেকে এবং তা আহমাদ ইবনে হাম্বাল থেকে বর্ণিত হয়েছে।

মাহদী (আঃ) ও আত্মসমপর্ণ

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়তে আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে যিনি বলেছেন- এক ব্যক্তি একবার আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলীর সাথে সাক্ষাত করলো এবং বললো- এ 500 দিরহাম আমার কাছ থেকে আমার সম্পদের যাকাত হিসেবে নিন। আবু জাফর বললেন ওগুলো তুলে নাও এবং সেগুলোকে তোমার মুসলিম প্রতিবেশী ভাইদের দাও যারা খুব অভাবে আছে। এরপর তিনি বললেন , যখন আমাদের বংশ থেকে মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে সে সমানভাবে সম্পদ বন্টন করবে এবং জনগণের সাথে ন্যায়পরায়ণ আচরণ করবে। অতএব যে তাকে মেনে চলবে সে আল্লাহকে মেনে চললো এবং যে তার অবাধ্য হলো সে আল্লাহর অবাধ্য হলো।

ইকদুদ দুরার এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ে হাফেজ আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ

এক আহবানকারী আকাশ থেকে ডাক দিবে এভাবে- জেনে রাখো , আল্লাহর দাসদের মাঝে তাঁর বাছাইকৃত হচ্ছে অমুক। তাই তার কথা শোন ও তাকে মেনে চলো।

একই হাদীস এসেছে উক্ত বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে এবং এর লেখক বলেছেন অমুক বলতে মাহদী -কে বোঝানো হয়েছে।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক (435 পৃষ্ঠায়) ইবনে মাজাহ থেকে , যিনি ইবনে উমার থেকে , যিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ

ফেরেশতারা আকাশ থেকে ডেকে উঠবে এবং জনগণকে তার প্রতি উৎসাহিত করবে এবং বলবে- নিশ্চয়ই মাহদী আত্মপ্রকাশ করেছে। তাকে মেনে চলো।

মাহদী (আঃ) ও সত্য

ইকদুদ দুরার -এর লেখক (সপ্তম অধ্যায়ে) বর্ণনা করেছেন আবুল কাসেম তাবরানীর মুয়াজাম , আবু নাঈম ইসফাহানীর মানাকিবুল মাহদী এবং হাফেয আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে , যারা আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে , যিনি বলেছেনঃ

যখন আহবানকারী আকাশ থেকে ডাকবে যে , সত্য পাওয়া যাবে মুহাম্মাদের পরিবারে , মাহদী সেই মুহূর্তে আত্মপ্রকাশ করবে।

উল্লেখিত বইয়ের (অংশ 3 , অধ্যায় 7) লেখক বর্ণনা করেন আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে যে- যখনই আহবানকারী আকাশ থেকে ডেকে উঠবে যে মুহাম্মাদের পরিবারের সাথে সত্য রয়েছে , মাহদী তখন আসবে।

আল মূসাউইয়্যাহ -র লেখক লিখেছেন- আহমাদ ইবনে মূসা ইবনে মারদুইয়্যা বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্র থেকে , রাসূল (সাঃ)- এর স্ত্রী আয়শা থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকেঃ

সত্য আলীর সাথে এবং আলী সত্যের সাথে। এ দু য়ের মাঝে কখনোই বিচ্ছেদ ঘটবে না যতক্ষণ না তারা আমার সাথে হাউযে কাউসারে সাক্ষাত করে।