হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান16%

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান লেখক:
: মুহাম্মদ মতিউর রহমান
প্রকাশক: ইসলামী শিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র
বিভাগ: হাদীস

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 19 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 14571 / ডাউনলোড: 3330
সাইজ সাইজ সাইজ
হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী শিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র
বাংলা

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

মুলঃ আল্লামা সাইয়েদ মুরতাজা আসকারী

অনুবাদঃ মুহাম্মদ মতিউর রহমান

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

মুলঃ আল্লামা সাইয়েদ মুরতাজা আসকারী

অনুবাদঃ মুহাম্মদ মতিউর রহমান

সম্পাদনাঃ হাজি মোঃ সামিউল হক

প্রথম প্রকাশনাঃ ইসলামী সেমিনারী পাবলিকেশন্স , পাকিস্তান , ১৯৭৯ সাল ।

পূণঃ প্রকাশনাঃ ফরেন ডিপার্টমেন্ট অব বোনিয়াদ বা দাতঃ ১৯৮৪ সাল । সোমায়ে এভিনিউ , তেহরান , ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ।

বাংলা অনুবাদ প্রকাশকঃ ইসলামী শিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র ।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

উৎসর্গ

ইসলামের অগ্রযাত্রার লক্ষে চিরস্মরণীয় গবেষণা কর্মের জন্য তার প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধার নিবেদন স্বরূপ এই অনুবাদ গ্রন্থটি উৎসর্গিত হলো গ্রন্থটির সম্মানিত লেখক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর উত্তর পুরুষ আল্লামা সাইয়্যেদ মুরতাজা আল-আসকারীর প্রতি ।

উপক্রমণিকা

কোরআনী বিধি-বিধানের মূল স্পিরিট পূর্ণরূপে আয়ত্ব করার জন্য এবং ইসলামের শিক্ষাকে পরিপূর্ণ রূপে অনুধাবন ও তা আমলে রূপান্তর করার উপলদ্ধির জন্য অবশ্যই কোরআন ও সুন্নাহর সাহায্য গ্রহণ আবশ্যক । ইসলামের কোন বিধান কোরআন ও মহানবীর হাদীসের আলোকে উপস্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত এর প্রকৃত উদ্দেশ্য এর সত্যিকার স্পিরিট এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত খুটিনাটি বিষয়াদি সত্যিকার অর্থে জানা সম্ভব হবে না ।

ইসলামী বিধি-বিধানের ব্যাখ্যার জন্য হাদীসের বিধান অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দলিল । এই দলিল ব্যতিরেকে ইসলামের শিক্ষাকে উপলদ্ধি বা অনুধাবন করতে পারার যে কোন দাবী একটি অন্তঃসারশূন্য শ্লোগান বা অসার্থক প্রয়াস বৈ আর কিছু নয় । এই দাবীর সঠিকতা সম্পর্কে ইতিহাসই কেবল সাক্ষ্য হয়ে দাড়াতে পারে ।

দুর্ভাগ্যজনক হলো , মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর ওফাতের পরপরই মুসলমানদের তথাকথিত শাসকবর্গ এই শক্তিশালী দলিলের (হাদীস) ব্যাপারে অত্যন্ত নির্মম আচরণ প্রদর্শন করেছেন । শাসকবর্গ অত্যন্ত সঙ্গত কারণে হাদীসের বর্ণনাকারীগণকে দমন ও নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রেখেছেন ,এমন কি মহানবীর সাহাবীদেরকে শুধুমাত্র হাদীসের উদ্ধৃতি প্রদান ও বর্ণনা করার অভিযোগে শাস্তির মুখোমুখি করেছেন । কোন নির্দিষ্ট শাসক বা খলিফার নাম উল্লেখ এখানে অপ্রয়োজনীয় । তবে স্রোতধারা যখন এই নির্মম রীতির বিরুদ্ধে ঘুরে দাড়ালো মুয়াবিয়া তখন নিকৃষ্টতম বিশ্বাস ঘাতকের ভূমিকায় অবতির্ণ হয়েছিলেন । তার নিয়োজিত ও বৃত্তিলাভকারী অনুগ্রহভাজন হাদীস বর্ণনাকারীরা তাদের কারখানায় তৈরী করতে থাকলো এক বিশাল সংখ্যক জাল ও বানোয়াট হাদীস ; আর হাদীসের ভাষ্য প্রচলনের পবিত্র লেবাসের আড়ালে ঐ সকল জাল-বানোয়াট হাদীস অবৈধভাবে প্রবর্তন বা চালু করে দয়া হলো । এভাবে মুয়াবিয়ার পরোক্ষ সম্মতি ও প্রত্যক্ষ সহায়তায় ভরি ভরি (জাল) হাদীস স্তুপীকৃত হতে থাকলো । আর তিনি (মুয়াবিয়া) সর্বোতভাবে সচেষ্ট ছিলেন এই সকল জাল হাদীসের সাহায্যে ইসলামের প্রকৃত অফিসিয়াল ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য । ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ,হাদীস সংকলনকারীগণ এমন খারেজীদের নিকট হতেও হাদীস সংগ্রহ করেছেন কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণাদিত হয়ে সুচিন্তিতভাবে ইমাম আলী (আঃ) বা মহানবীর পরবর্তী বংশধর বা তাদের কোন সুহৃদের নিকট হতে হাদীস সংগ্রহ এড়িয়ে গিয়েছেন অনায়াসে । এই স্বাভাবিক পক্রিয়ার মাধ্যমে মুয়াবিয়া ও তার উত্তরসূরী খলিফাদের তত্ত্বাবধানের সাহায্যে একটি সম্পূর্ণ মেকী ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে । শিয়ারা এই ধরণের সকল জাল হাদীস প্রত্যাখ্যান করলেন , ফলে চিহ্নিত হলেন রাফেজী হিসেবে । সময়ের পরিক্রমায় চমে ত্যাগ-কোরবানী ও অতুলণীয় বিশাল শ্মে-প্রচেষ্টার মাধ্যমে , অবশ্য অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর উত্তরসূরী আহলুল বাইতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে , তারা (শিয়া) ও তাদের শুভানুধ্যায়ীরা সহীহ্ হাদীস সংগ্রহ ও সংকলন করেছেন এবং সত্যিকার ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথকে সুবিন্যস্ত করেছেন ।

এই বিষয়ের প্রখ্যাত পণ্ডিত সাইয়্যেদ মুরতাজা আল-আসকারী হাদীস সংকলনের এই স্পর্শকাতর বিষয়টির একটি সফল তথ্যানুসন্ধানী কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং অত্যন্ত সফলভাবে হাদীস সংকলনের এই প্রতিচ্ছবি এত চমৎকারভাবে উম্মেচন করেছেন যে , এর প্রতিটি বাক্য ও বক্তব্যের বিষয়াবলী সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে । এই বিষয়ের উপর তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এই বিষয়টিকে আবেগমুক্তভাবে অবলোকন করার জন্য এবং সহীহ হাদীস হতে মিথ্যা ও জাল হাদীসকে পৃথকী করণের জন্য বিশ্বের সকল মুসলমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । এই অনুসারে সঠিক রূপ ও অবয়বে ইসলামের পরিচিতি নির্ভরযোগ্য ও সঠিক হাদীসের সাহায্যে স্পষ্টায়নের কারণে তার এই উদ্দ্যোগ ইসলামের জন্যএকটি অত্যন্ত মহৎ সেবা হিসেবে পরিগণিত হবে ।

গ্রন্থকার পরিচিতি

সাইয়্যেদ মুরতাজা আল আসকারী ফার্সী ও আরবী ভাষার প্রখ্যাত একজন পণ্ডিত । শিয়াদের একজন প্রথিতযশা লেখক হিসেবে তিনি সাহিত্য অঙ্গনে সুপরিচিত হয়ে উঠেন ।

হাদীসের বাস্তবতা সম্পর্কিত গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধান সাইয়্যেদ মুরতাজা আল-আসকারীর একটি বিশেষ পছন্দের বিষয় । তিনি অত্যন্ত গভীরভাবে এই বিষয়টির উপর গবেষণা করেছেন এবং এক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রেখেছেন ।

ইসলামের অনুধাবন ও প্রসার আল্লামা আল আসকারীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করে দি ইসলামিক সেমিনারী তার মূল্যবান গ্রন্থকর্মের সাথে মুসলিম বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দেয়াকে দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করেছে ।

আলোচ্য গ্রন্থটি হাদীস সংক্রান্ত ইতিহাসের একটি শক্তিশালী অনুসন্ধানী প্রয়াস । গ্রন্থকার তার যত্নশীল পরিশ্মে ও চিন্তাশীল এই কর্মের জন্য সর্বোতভাবে প্রশংসার দাবী করতে পারেন ।

বাংলা অনুবাদকের কথা

আল্ হামদুলিল্লাহ গ্রন্থটি হাদীসের ইতিহাসের বিবর্তন সংক্রান্ত একটি অকাট্য দলিল । ইসলামী অনুশাসন প্রতিপালনের ক্ষেত্রে মুসলিম সমাজ আজ বহু ফেরকায় বিভক্ত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) - এর হাদীস অনুসারে , মুসলিম উম্মাহ্ তেহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত থাকবে যার মধ্যে কেবলমাত্র একটি জামাত হবে জান্নাতী , বাকী সব ক টি জাহান্নামী । যারা পরকালের প্রতি স্থির বিশ্বাসী এবং দুনিয়ার জীবনকে পরকালীন জীবনের আলোকে পরিচালনার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ,তাদের জন্য তেহাত্তর ফেরকার মধ্য হতে জান্নাতী জামাত খুজে বের করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই । কোরআন মানবজাতির জন্য হেদায়েতের পথনির্দেশিকা । কোরআন অটটু অবস্থায় মুসলমানদের মাঝে থাকার পরও তাদের আকিদা-বিশ্বাস ও কোরআনী অনুশাসন প্রতিপালনে তাদের মধ্যে বিরাজিত বহু মত পথের উপস্থিতির বাস্তব কারণ হল জাল হাদীসের উপস্থিতি । যে কোন সুস্থ্য ব্যক্তি বিশ্বাস করতে বাধ্য যে , আকিদা-বিশ্বাস বা অনুশাসন প্রতিপালন যাই হাক না কেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শুধুমাত্র একটি নির্দেশই উপস্থাপন করেছেন । মতদ্বৈত্বতার উদ্ভব হয়েছে তার পরবর্তী সময়ের শাসকবর্গের কারণে । তবে , একনিষ্ট অনুসারী যারা তারা সঠিক সুন্নাহকেই্ অনুসরণ করেছেন ।

তাই সঠিক সুন্নাহ চিহ্নিত করণের জন্য সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হাদীস চিহ্নিত করণ অত্যাবশ্যক । এর মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ্ বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি হতে নিস্কৃতি পাওয়ার প্রত্যাশা করতে পারে । বাংলা ভাষা-ভাষী যেসব পাঠক পরকালীন জীবনের আলোকে দনিয়ার জীবন গঠন করতে চায় সেসব পাঠকের জন্যেই আল্লামা আসকারীর এই মূল্যবাণ গ্রন্থটি বাংলায় রূপান্তর করার আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস । মহামহিম আল্লাহ তা য়ালা আমাদের সকলের প্রচেষ্টা কবুল করে নিন । আমীন ।

প্রথম খণ্ড

সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মত অতঃপর আল্লাহ নবীগনকে সুসংবাদদাতা সতর্ককারীরূপে প্রেরন করেন মানুষেরা যে বিষয়ে মতবিরোধ করতো তাদের মধ্যে সে বিষয়ে মীমাংসার জন্য তিনি তাদের সহিত সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেন এবং যাহাদিগকে তাহা দেয়া হয়েছিল ,স্পষ্ট নিদর্শন তাদের নিকট আসবার পরে ,তারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত সেই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতো ,আল্লাহ তাদেরকে সে বিষয়ে নিজ অনুগ্রহে সত্য পথে পরিচালিত করেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সহজ -সরল পথে পরিচালিত করেন । ( সুরা বাকারাঃ২১৩ )

তোমরা কি আশা এই কর যে ,ইহুদীরা তোমাদের কথায় ইমান আনবে ? যখন তাদের একদল আল্লাহর বানী শ্রবন করে ,অতঃপর তারা উহা বিকৃত করে ,অথচ তারা তা জানে । (সুরা বাকারাঃ৭৫ )

সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্যপ্রাপ্তির জন্য বলে , ইহা আল্লাহর নিকট হতে । তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্য শাস্তি তাদের । (সুরা বাকারাঃ৭৯)

ঐশী ধর্ম কেন সনাতন করা হয় ?

মানব জাতির অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ,মানুষের সাধারন রীতি-প্রবণতা হলো ,তারা প্রত্যেক নবীর শিক্ষাকে নাটকীয়ভাবে রদ-বদল করেছে ,এমনকি তাদের ঐশীগ্রন্থেও নতুন কিছু সংযোজন করেছে বা তাতে পরিবর্তন এনেছে । আল্লাহ পরবর্তী সময়ে তাঁর নির্ভেজাল বিধানাবলীসহ অন্য একজন নবী প্রেরণ করেছেন ,এবং এইভাবে তিনি তাঁর প্রেরিত ঐশী ধর্মকে সনাতনরূপে উপস্থাপন করেছেন ।

এই ঐশীবিধান প্রেরনের বিষয়টি অবশেষে রাসূল (সাঃ) এর আবির্ভাবের পর শেষ হয় ,এবং পুর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে । এই পর্যায়ে আল্লাহ আগের সকল ঐশী ধর্মীয় বিধি-বিধানের বিপরীতে ইসলামের ধর্মীয় বিধি-বিধানকে চুড়ান্ত হিসাবে ঘোষনা করেছেন । আর এই কারনে যে কোন ধরনের পরিবর্তন বা বিচ্যুতির হাত হতে ইসলামের এই ঐশীগ্রন্থ আল-কোরআনকে নিরাপত্তা প্রদান ও সংরক্ষনের দায়-দায়িত্ব তিনি নিজের হাতে রেখেছেনঃ আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্য আমিই উহার সংরক্ষক (সুরা হিজরঃ৯) ।


2

3

4

5

6