হযরত ফাতিমা (আ.)

হযরত ফাতিমা (আ.)0%

হযরত ফাতিমা (আ.) লেখক:
: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: হযরত ফাতেমা (সা.আ.)

হযরত ফাতিমা (আ.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 11901
ডাউনলোড: 3708

পাঠকের মতামত:

হযরত ফাতিমা (আ.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 38 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11901 / ডাউনলোড: 3708
সাইজ সাইজ সাইজ
হযরত ফাতিমা (আ.)

হযরত ফাতিমা (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

হযরত ফাতেমার প্রতি নবী (সা.)-এর মহব্বত ও ভালবাসা

যে সমস্ত বিস্ময়কর বস্তু হযরত ফাতেমার আলোকজ্জ্বল জীবনকে আরো অধিক মর্যদার করে তোলে তা হচ্ছে তাঁর প্রতি মহানবীর অত্যধিক স্নেহ ও ভালবাসা। এই ভালবাসা ও স্নেহ এতই অধিক ও প্রচণ্ড আকারে ছিল যে এটাকে রাসূলে আকরামের জীবনের অন্যতম বিষয় বলে গণ্য। যদি আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগের সাথে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তবে দেখবো যে,যেহেতু ইসলামের সুমহান নবী (সা.) মহান আল্লাহর নিকট তাঁর বান্দাদের মাঝে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও নৈকট্য লাভের অধিকারী এবং সকল বিষয়ে ন্যায় ও সত্যের মাপকাঠি ছিলেন সেহেতু নবীর সুন্নাত অর্থাৎ তাঁর কথা ও কাজ এমনকি তাঁর নীরবতাও দীন ও শরীয়তের সনদ হিসেবে পরিগণিত যা সমানভাবে আল্লাহর কিতাবের পাশাপাশি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত উম্মতের প্রতিটি ব্যক্তির কাজে-কর্মে আদর্শ হিসেবে গণ্য। কোরআনুল কারিমের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে :

) وَ مَا يَنْطِقُ  عَنِ اْلْهَوَى  إِنْ هُوَ  إِلاَّ وَحْىٌ يُوْحَى (

অর্থাৎকোন কিছুই তিনি আপন প্রবৃত্তির তাড়নায় বলেন না , তার প্রতিটি কথাই ওহী বলে গণ্য যা তার প্রতি অবতীর্ণ হয় 55

এ সমস্ত বিষয় বিশ্লেষণ করলে হযরত ফাতেমার আধ্যাত্মিক মাকাম ও সুমহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারি এবং এই ব্যাপারে নিঃসন্দেহে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি,যে নিষ্পাপ ইমামগণ সত্যই বলেছেন : ফাতেমা পবিত্র এবং স্বর্গীয় ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য।

হযরত ফাতেমা ছাড়া মহানবী (সা.)-এর আরো কন্যা সন্তান ছিল। যদিও তিনি তাঁর পরিবার,আত্মীয়-স্বজন,সন্তানগণ এমনকি প্রতিবেশী ও অন্যদের প্রতিও দয়াপরবশ ছিলেন তবুও হযরত ফাতেমার প্রতি তাঁর বিশেষ ভালবাসা স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে,তিনি বিভিন্ন সময়ে সুযোগমত এ ভালবাসার কথাটা সরাসরি ঘোষণা করেছেন এবং সাহাবাদের সামনে এ ব্যাপারে  গুরুত্বারোপ করেছেন।

আর উপরোক্ত বিষয়টি এ ব্যাপারে দলীল যে,হযরত ফাতেমা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জীবন ইসলামের ভাগ্যের সাথে সংযুক্ত। নবী (সা.)-এর সাথে হযরত ফাতেমার সম্পর্ক শুধুমাত্র একজন পিতার সাথে কন্যার সম্পর্কের ন্যায় ছিল না বরং তা একটি সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যত এবং মুসলমানদের ইমামত ও নেতৃত্ব সম্বন্ধে খোদায়ী নির্দেশাবলীর সাথে পরিপূর্ণ সম্পর্কিত ।

এখন আমরা হযরত ফাতেমার প্রতি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অসীম মহব্বত ও ভালবাসার কিছু নমুনার সাথে পরিচয় হবো এবং সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবো :

   হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর রীতি এরূপ ছিল যে,যখনই কোন সফরের জন্যে প্রস্তুত হতেন তখন সর্বশেষ যার কাছ থেকে বিদায় নিতেন তিনি হলেন হযরত ফাতেমা (আ.)। আবার যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন সর্বপ্রথম যার সাথে সাক্ষাত করার জন্যে গমন করতেন  তিনি হলেন হযরত ফাতেমা (আ.)।56

   ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক (আ.) বর্ণনা করেছেন : রাসূলে খোদা (সা.) সর্বদা নিদ্রার পূর্বে ফাতেমার গালে চুম্বন দিতেন এবং তাঁর মুখমণ্ডল ফাতেমার বক্ষের উপর স্থাপন করে দোয়া করতেন। 57

   ইমাম সাদেক (আ.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত যে,হযরত ফাতেমা (আ.) বলেছেন : যখন

) لآ تَجْعَلُوْاْ دُعَاءَ اْلْرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا(

অর্থাৎরাসূলকে (আহবান করার সময়) তোমরা তোমাদের মধ্যে পরস্পরকে যেভাবে আহবান কর সেভাবে আহবান করো না (তাকে ইয়া রাসূলুল্লাহ্ বলে আহবান করবে) 58  

এ আয়াতটি নাযিল হয় তখন আমি ভীত সন্ত্রস্থ হলাম যে কখনো যেন আমি ইয়া রাসূলুল্লাহ্ এর স্থানে হে পিতা বলে আহবান না করে বসি। অতএব,তখন থেকে আমি আমার পিতাকে ইয়া রাসূলুল্লাহ্ বলে সম্বোধন করা শুরু করলাম। প্রথম দুই অথবা তিনবার এরূপ আহবান শ্রবণ করার পর নবী (সা.) আমাকে কিছু না বললেও এরপর আমার দিকে ফিরে বললেন : হে ফাতেমা! উক্ত আয়াতটি তোমার উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয় নি। আর তোমার পরিবার ও বংশের জন্যেও অবতীর্ণ হয় নি। তুমি আমা থেকে আর আমিও তোমা থেকে। এ আয়াতটি কোরাইশ গোত্রের মন্দ ও অনধিকার চর্চাকারী লোকদের জন্যে অবতীর্ণ হয়েছে যারা বিদ্রোহী ও অহংকারী। তুমি পূর্বের ন্যায় আমাকে হে পিতা বলে আহবান করো। তোমার এরূপ আহবান আমার হৃদয়কে পূর্বের  চেয়ে অধিক জীবন্ত এবং মহান আল্লাহকে অধিক সন্তুষ্ট করে। 59

   রাসূল (সা.) বলেছেন : ফাতেমা আমার দেহের অংশ। যে তাকে আনন্দ দেবে সে আমাকে আনন্দিত করবে আর যে তাকে দুঃখ দেবে সে আমাকে দুঃখিত করবে। ফাতেমা আমার কাছে সবার চেয়ে বেশী প্রিয় ও সম্মানিত। 60

   তিনি আরো বলেছেন : ফাতেমা আমার দেহের অংশ,আমার অন্তরাত্মা। যে তাকে অসন্তুষ্ট করে সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করলো। আর যে আমাকে অসন্তুষ্ট করলো সে আল্লাহকেই অসন্তুষ্ট করলো। 61

   হযরত আমির শা বি,হযরত হাসান বাসরী,হযরত সুফিয়ান ছাওরী,মুজাহিদ,ইবনে জাবির,হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারী এবং  ইমাম বাকির (আ.) ও ইমাম সাদেক (আ.) সকলে রাসূলে আকরাম (সা.) থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন : নিশ্চয়ই ফাতেমা আমার দেহের অংশ। যে তাকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে।

ইমাম বুখারীও এরূপ একটি হাদীস হযরত মাসুর ইবনে  মুখরিমাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারী  থেকে এরূপ বর্ণিত আছে যে রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ফাতেমাকে কষ্ট দেয় সে যেন আমাকে কষ্ট দেয় আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করলো।

সহীহ মুসলিম ও হাফেজ আবু নাঈম রচিত হিলইয়াতুল আউলিয়া গ্রন্থদ্বয় ছাড়াও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মনীষীদের রচিত অনেক গ্রন্থে অনুরূপ বর্ণনার হাদীস বর্ণিত আছে।62

   একদা রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে আসলেন এবং (উপস্থিত জনসাধারণকে উদ্দেশ্য করে) বললেন : যে ফাতিমাকে চেনে সে তো চিনেছেই। আর যে তাকে চেনে না তার জেনে রাখা উচিত যে ফাতেমা মুহাম্মদের কন্যা। সে আমার শরীরের অংশ,আমার হৃদয়,আমার অন্তরাত্মা। সুতরাং যে তাকে কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দিল। আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে কষ্ট দিল। 63

   রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন : আমার কন্যা ফাতিমা পৃথিবীর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী। সে আমার দেহের অংশ এবং আমার নয়নের মণি। ফাতেমা আমার হৃদয়ের ফসল এবং দেহের মধ্যে আমার অন্তর সমতুল্য। ফাতেমা মানুষরূপী একটি হুর। যখন সে ইবাদতে দণ্ডায়মান হয় তখন পৃথিবীর বুকে নক্ষত্রসমূহের মত তাঁর জ্যোতি আসমানের ফেরেশতাদের জন্যে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। আর তখন মহান স্রষ্টা তাঁর ফেরেশতাদের বলেন : হে আমার ফেরেশতাকুল! আমার দাসী ফাতেমা,আমার অন্যান্য দাসীদের নেত্রী। তাঁর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ কর,দেখ সে আমার ইবাদতে দণ্ডায়মান এবং আমার ভয়ে তাঁর দেহ কম্পিত। সে মন দিয়ে আমার ইবাদতে মশগুল। তোমরা সাক্ষী থাক,আমি তাঁর অনুসারীদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করবো। 64

ঐশী বিবাহ

হিজরী দ্বিতীয় বৎসরে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) হযরত ফাতেমাকে আমিরুল মু মিনীন হযরত আলীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন।65

আর সত্যিকার অর্থে এই বন্ধন তাদের জন্যেই উপযুক্ত ছিল। কেননা নিষ্পাপ ইমামদের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,আলী ব্যতীত ফাতেমার সমকক্ষ ও উপযুক্ত স্বামী অন্য কেউ হতে পারতো না।66

এ বিষয়টি সম্মানিত এ ব্যক্তিদ্বয়ের উচ্চ মর্যাদারই সাক্ষ্য বহন করছে। আর এ বিয়ের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে,মহানবী (সা.) আরব ও কোরাইশের অনেক শীর্ষস্থানীয় ও ধনবান ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে আসা বিয়ের প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন : ফাতেমার বিয়ে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সংঘটিত হবে। 67

অবশেষে যখন হযরত আলী (আ.) বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন তখন নবী করীম (সা.) তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং বললেন : হে আলী,তোমার আগমনের পূর্বে ঐশী দূতের মাধ্যমে আমি সংবাদ প্রাপ্ত হই যে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন ফাতেমাকে আলীর সাথে বিয়ে দাও। 68

অতঃপর তিনি হযরত আমিরুল মু মিনীন আলী (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলেন : বিয়ের খরচের জন্যে তোমার কাছে কি আছে? তখন হযরত আলী (আ.) জানালেন :  একটি বর্ম,একটি তলোয়ার ও একটি উট (যা দিয়ে তিনি পানি আনতেন) ছাড়া আর কিছু নেই। নবী (সা.) বর্মটি বিক্রির জন্যে হযরত আলী (আ.) কে নির্দেশ দিলেন। হযরত আলী তা বিক্রি করে প্রায় পাঁচশত দেরহাম পেয়েছিলেন আর তা দিয়ে কিছু আসবাবপত্র এবং হযরত ফাতেমার জন্যে উপহার হিসেবে সাদামাটা কিছু জিনিস ক্রয় করলেন। আর বিক্রয়লব্ধ কিছু অর্থ দিয়ে মুসলিম মেহমানদের জন্যে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। এভাবে আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে নবী (সা.)-এর দোয়ার মাধ্যমে হযরত ফাতেমার সাথে হযরত আলীর বিবাহ সম্পন্ন হয়।69

এ জ্যোতির্ময় ও ঐশী বিবাহের প্রতিটি অংশই রাসূলে খোদ ও তাঁর আহলে বাইতের পদাঙ্ক অনুসরণকারীদের জন্যে ইমামত ও নবী বংশের উপর বিশেষ ঐশী সমর্থনের সপক্ষে দলিল। এর মাধ্যমে বিয়ের ক্ষেত্রে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যেই যে ইসলামের আলোকিত শিক্ষার প্রকাশ ঘটে তা প্রমাণিত হয়।

এখন আমরা এ ঐতিহাসিক ঘটনার কিছু আকর্ষণীয় অংশের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবো :

   যখন হযরত আলী (আ.) বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আগমন করেন তখন রাসূল (সা.) বলেছিলেন : তোমার আগমনের পূর্বে অনেক পুরুষ ফাতেমার জন্যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। প্রতিটি প্রস্তাবের বিষয়ে ফাতেমার সাথে আলোচনা করেছি। তখন ফাতেমার চেহারায় স্পষ্ট অনীহা ও বিরক্তিভাব লক্ষ্য করেছি। এখন তুমি আমার ফিরে আসা পর্যন্ত এখানেই অপেক্ষা কর। তখন রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমার নিকট গমন করেন। তিনি হযরত আলীর প্রস্তাবের কথা হযরত ফাতেমাকে বলেন। প্রস্তাব শুনে হযরত ফাতেমা নিশ্চুপ রইলেন কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিলেন না। অতঃপর রাসূল (সা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন : আল্লাহু আকবার,তাঁর নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। 70

   হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতেমা (আ.)-এর বিয়ের মোহরানা ছিল শুধুমাত্র একটি বর্ম,যা বিক্রি করা হয়েছিল। আর তার কিছু অর্থ দিয়ে উপহার হিসেবে নিম্নলিখিত কিছু জিনিস হযরত ফাতেমার জন্যে ক্রয় করেছিলেন :

একটি পোশাক।

একটি বড় স্কার্ট।

একটি খায়বরী কালো তোয়ালে।

একটি বিছানা।

দু টি তোষক,যার একটি দুম্বার পশম আর অপরটি খেজুর গাছের আঁশ দ্বারা ভর্তি ছিল।

চারটি বালিশ।

একটি পশমের তৈরী পর্দা।

একটি পাটি এবং চাটাই।

একটি হস্তচালিত যাঁতাকল।

একটি তামার গামলা।

একটি চর্মের পাত্র।

পানি বহনের জন্যে একটি মশক।

দুধের জন্যে একটি পেয়ালা।

একটি বদনা।

সবুজ রংয়ের একটি পাত্র।

কয়েকটি মাটির জগ।71

   হযরত আলী (আ.)ও বিয়ের জন্যে নিম্ন বর্ণিত কিছু জিনিসের ব্যবস্থা করেছিলেন :

   গৃহের মেঝেকে সামান্য কিছু বালি দিয়ে নরম করেন।

   ঘরের দু দেয়ালের মাঝখানে কাপড় ঝুলানোর জন্যে একটি লাঠি  স্থাপন করেছিলেন।

   একটি দুম্বার চামড়া এবং হেলান দিয়ে বসার জন্যে একটি বালিশের যা খেজুর গাছের আঁশ দিয়ে ভরা ছিল-ব্যবস্থা করেছিলেন।72

হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি

যুহ্দ বা দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ততা

ইমাম জা ফর আস সাদেক (আ.) এবং হযরত জাবের আনসারী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,একদিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত ফাতেমাকে দেখলেন যে,তিনি একটি মোটা ও শক্ত কাপড় পরিধান করে নিজ হস্তে যাঁতাকল চালিয়ে আটা তৈরী করছেন। আর সে অবস্থায় নিজের কোলের সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। এহেন অবস্থা পরিদর্শনে হযরতের চোখে পানি ছল ছল করে উঠলো। তখন তিনি বলেন : আমার হে প্রিয় কন্যা! এ দুনিয়ার তিক্ততা আখেরাতের মিষ্টি স্বাদেরই পূর্ব প্রস্তুতি মনে করে সহ্য করে যাও। প্রত্যুত্তরে হযরত ফাতেমা বলেন :

হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আল্লাহ্ প্রদত্ত এতসব নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই এবং এ জন্যে তাঁর অশেষ প্রশংসাও করছি। তখন আল্লাহ্ নিম্নোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন :

) وَ لَسَوْفَ يُعْطِيْكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى(

অর্থাৎতোমার প্রভু অতি শীঘ্রই তোমাকে এতসব কিছু দেবেন যার ফলে তুমি সন্তুষ্ট হবে 73

গৃহাভ্যন্তরে কাজ

   ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেন : ইমাম আলী (আ.) পানি ও কাঠ জোগাড় করে আনতেন আর হযরত ফাতেমা (আ.) আটা তৈরী করে খামির বানাতেন আর তা দিয়ে রুটি তৈরী করতেন। তিনি কাপড়ে তালি লাগানোর কাজও করতেন। এ মহিয়সী রমণী সকলের চেয়ে বেশী রূপসী ছিলেন এবং তাঁর পবিত্র গাল দু টি সৌন্দর্যে পুষ্পের ন্যায় ফুটে ছিল। আল্লাহর দরূদ তিনি সহ তাঁর পিতা,স্বামী ও সন্তানদের উপর বর্ষিত হোক। 74

   হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ফাতেমা মশক দিয়ে এতই পানি উত্তোলন করেছেন যার ফলে তাঁর বক্ষে ক্ষতের ছাপ পড়ে যায়,তিনি হস্তচালিত যাতাকলের মাধ্যমে এত পরিমান আটা তৈরী করেছেন যার কারণে তাঁর হাত ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়,তিনি এত পরিমান ঘর রান্না-বান্নার কাজ করেছেন যে তাঁর পোশাক ধুলি  ধোঁয়া মাখা হয়ে যেত। এ ব্যাপারে তিনি প্রচুর কষ্ট স্বীকার করেছেন। 75 (উল্লেখ্য যে তিনি মদীনার দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রতিদিনই রুটি প্রস্তুত করতেন।)

রাসূলে খোদা (সা.) হযরত ফাতেমাকে সাহায্য করতেন

একদা রাসূলে খোদা (সা.) হযরত আলীর গৃহে প্রবেশ করেন। তিনি দেখতে পেলেন যে হযরত আলী হযরত ফাতেমার সাথে যাঁতা পিষে আটা বানানোর কাজে ব্যস্ত। তখন নবী (সা.) বলেন : তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশী ক্লান্ত? হযরত আলী বলেন : ফাতেমা,হে আল্লাহর রাসূল। নবী (সা.) হযরত ফাতেমাকে সম্বোধন করে বলেন : মেয়ে আমার ওঠ! হযরত ফাতেমা উঠে দাঁড়ালেন আর মহানবী (সা.) তাঁর স্থানে গিয়ে বসলেন এবং হযরত আলীর সাথে আটা তৈরীর কাজে সাহায্য করলেন।76

যে রমণী তাঁর স্বামীর কাছে কিছু চায় না

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন : হযরত ফাতেমা হযরত আলীর নিকট ঘরের কাজ যেমন খামির করা,রুটি তৈরী করা,গৃহ পরিচ্ছন্ন ইত্যাদি কাজের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন আর হযরত আলী গৃহের বাহিরের কাজ যেমন কাষ্ঠ ও খাদ্য সংগ্রহের ব্যাপারে হযরত ফাতেমার নিকট ওয়াদাবদ্ধ ছিলেন। একদিন ইমাম আলী হযরত ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করেন : ঘরে কি খাবার আছে? উত্তরে হযরত ফাতেমা বলেন : যিনি তোমাকে মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর শপথ,তিন দিন যাবৎ ঘরে কিছু নেই।

ইমাম বলেন : কেন আমাকে একথা বল নি? তখন হযরত ফাতেমা বলেন : আল্লাহর রাসূল (সা.) তোমার কাছে কিছু চাওয়ার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন : তুমি আলীর কাছে কিছু চেয়ো না। সে স্বেচ্ছায় কিছু আনলে নিও,নতুবা তাঁর কাছে কিছু চেয়ো না। 77   

দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সমঝোতা

আমিরুল মু মিনীন আলী (আ.) বলেন : আল্লাহর শপথ,আমার দাম্পত্য জীবনে ফাতেমাকে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কখনো রাগাইনি আর কোন কাজে তাকে বাধ্য করি নি। সেও আমাকে কখনো রাগান্বিত করে নি এবং কখনো আমার অবাধ্য হয় নি। যখনি তাঁর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতাম তখনি আমার দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যেত। 78

সর্বাপেক্ষা সত্যবাদী রমণী

হযরত আয়েশা বলেছেন : ফাতেমার পিতা ব্যতীত ফাতেমার চেয়ে সত্যবাদী কাউকে আমি দেখিনি। 79  

ইবাদত

হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন : নবী (সা.)-এর উম্মতের মধ্যে হযরত ফাতেমার ন্যায় ইবাদতকারী পৃথিবীতে আর আসেনি। তিনি নামাজ ও ইবাদতে এতবেশী দণ্ডায়মান থাকতেন যে,ফলে তাঁর পদযুগল ফুলে গিয়েছিল। 80

ইবাদত ও অপরের জন্যে দোয়া

ইমাম হাসান (আ.) বলেন : এক বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে আমার মাকে ইবাদতে দণ্ডায়মান দেখতে পেলাম। তিনি সুবহে সাদেক পর্যন্ত নামাজ ও মুনাজাতরত ছিলেন। আমি শুনতে পেলাম যে,তিনি মু মিন ভাই-বোনদের জন্যে তাদের নাম ধরে দোয়া করলেন কিন্তু নিজের জন্যে কোন দোয়াই করলেন না। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম,মা! আপনি যেভাবে অন্যের জন্যে দোয়া করলেন সেভাবে কেন নিজের জন্যে দোয়া করলেন না? উত্তরে তিনি বলেন : হে বৎস! প্রথমে প্রতিবেশীদের জন্যে তারপর নিজেদের জন্যে। 81

পর্দা

ইমাম মুসা কাযেম (আ.) তাঁর পিতা ও পিতামহদের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে হযরত আমিরুল মু মিনীন আলী (আ.) বলেছেন : একদিন এক অন্ধ ব্যক্তি ফাতেমার গৃহে প্রবেশের জন্যে অনুমতি চাইলে তিনি ঐ অন্ধ ব্যক্তি থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখলেন । রাসূল (সা.) বললেন : হে ফাতেমা! কেন তুমি এই ব্যক্তি থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখছো,সে তো অন্ধ,তোমাকে দেখছে না।? প্রতি উত্তরে ফাতেমা বলেন : যদিও ঐ অন্ধ লোকটি আমাকে দেখছেন না কিন্তু আমি তো তাকে দেখছি। এ অন্ধ ব্যক্তিটির নাসিকা গ্রন্থি তো কাজ করছে। তিনি তো ঘ্রান নিতে পারেন। এ কথা শুনে রাসূল (সা.) বলেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,তুমি আমার দেহের অংশ। 82

সতীত্ব এবং বেগানা পুরুষ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা

হযরত ফাতেমা (আ.)-কে প্রশ্ন করা হয়, একজন নারীর জন্য সর্বোত্তম জিনিস কোনটি? তিনি এর উত্তরে বলেন : নারীদের জন্যে সর্বোত্তম জিনিস হলো তারা যেন কোন পুরুষকে না দেখে আর পুরুষরাও যেন তাদেরকে দেখতে না পায়। 83

তদ্রুপ মহানবী (সা.) যখন তাঁর সাহাবীদের সামনে প্রশ্ন রাখেন যে, একজন নারী কখন মহান আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভে সক্ষম হন? তখন হযরত ফাতেমা বলেন : নারী যখন বাড়ীর সর্বাপেক্ষা গোপন অংশে অবস্থান গ্রহণ করে তখন তার প্রভুর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত ফাতেমার উত্তর শ্রবন করে বলেন : ফাতেমা আমার শরীরের অংশ। 84

হ্যাঁ,এটা সুস্পষ্ট যে যতক্ষণ পর্যন্ত একজন নারীর গৃহের বাইরে আসার কারণে কোন হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত না হয় ততক্ষণ তার বহিরাগমনে কোন আপত্তি নেই। কখনো কোন কাজের জন্যে নারীর বহিরাগমনের দিকটা কল্যাণকর হয়ে থাকে আবার কখনো অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। উপরোল্লিখিত রেওয়ায়েতগুলোর অর্থ হচ্ছে কোন প্রয়োজনীয় কাজ ব্যতীত একজন নারীর গৃহের বাইরে পর-পুরুষের দৃষ্টির সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা অনুচিত।

গৃহভৃত্যের সাথে কাজের ভাগাভাগি

হযরত সালমান ফারসী বলেন : একবার হযরত ফাতেমা হস্তচালিত যাঁতাকল দিয়ে আটা তৈরী করছিলেন। আর যাঁতাকলের হাতল ফাতেমার হাতের ক্ষতস্থান দ্বারা রক্তরঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তখন শিশু হুসাইন তাঁর পার্শ্বে ক্ষুধার জ্বালায় ক্রন্দন করছিল। আমি তাকে বললাম : হে রাসূলের দুহিতা! আপনার হাত ক্ষত হয়ে গেছে, ফিদ্দা (হযরত ফাতেমার গৃহপরিচারিকার নাম)85 তো আপনার ঘরেই আছে। তখন তিনি বলেন : রাসূল (সা.) আমাকে আদেশ করেছেন যে পালাক্রমে একদিন ফিদ্দা ঘরের কাজ করবে আর আমি অন্য একদিন। তার পালা গতকাল শেষ হয়ে গেছে আর আজকে আমার পালা। 86