হযরত ফাতিমা (আ.)

হযরত ফাতিমা (আ.)0%

হযরত ফাতিমা (আ.) লেখক:
: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: হযরত ফাতেমা (সা.আ.)

হযরত ফাতিমা (আ.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 11899
ডাউনলোড: 3705

পাঠকের মতামত:

হযরত ফাতিমা (আ.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 38 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11899 / ডাউনলোড: 3705
সাইজ সাইজ সাইজ
হযরত ফাতিমা (আ.)

হযরত ফাতিমা (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

অলংকার বর্জন

   ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ.) বলেন : আসমা বিনতে উমাইস আমার নিকট এভাবে বর্ণনা করেছেন : একদা আমি হযরত ফাতেমার পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলাম। যখন হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ফাতেমার গৃহে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে,ফাতেমা স্বর্ণের একটি গলার হার পড়ে আছে যা আমিরুল মু মিনীন আলীর (আ.) গণীমতের অর্থ থেকে ক্রয় করেছিলেন। তৎক্ষণাৎ মহানবী (সা.) বলেন : হে ফাতেমা! মানুষ যেন বলতে না পারে মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমা প্রতাপশালী বাদশাহ্দের পোশাক পরিধান করেছে। তখন হযরত ফাতেমা গলার হার খুলে বিক্রি করে দিলেন। আর বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে একজন দাস ক্রয় করে তাকে মুক্ত করে দিলেন। রাসূল (সা.) তাঁর একাজে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন।87

   ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন : রাসূল (সা.) সফরে বের হওয়ার পূর্বে তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করতেন। সর্বশেষ যার কাছ থেকে তিনি বিদায় নিতেন তিনি হলেন হযরত ফাতেমা এবং তাঁর গৃহ থেকে সফরের যাত্রা শুরু করতেন। আর যখন সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন সর্বপ্রথম হযরত ফাতেমার সাথে সাক্ষাৎ করতেন অতঃপর অন্যান্য লোকজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতেন। একবার হযরত মুহাম্মদ (সা.) সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে যুদ্ধের গণিমতের কিছু অংশ হযরত আলীর ভাগে পড়েছিল। তিনি সেই অংশটুকু হযরত ফাতেমাকে দিয়ে চলে গেলেন। নবীকন্যা তা দিয়ে দু টি রূপার চুড়ি এবং একটি পর্দার কাপড়ের ব্যবস্থা করলেন। তিনি সেই পর্দা গৃহের দ্বারে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। রাসূল (সা.) সফর থেকে ফিরে এসে মসজিদে প্রবেশ করেন এবং অন্যান্য বারের ন্যায় এবারো সর্বপ্রথম হযরত ফাতেমার গৃহে প্রবেশ করেন। হযরত ফাতেমা আনন্দভরে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পিতাকে সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্যে এগিয়ে আসেন। তখন মহানবী (সা.) হযরত ফাতেমার হাতে চুড়ি আর গৃহের দ্বারে ঝুলানো পর্দা অবলোকন করেন।

রাসূল (সা.) গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ না করে দরজার পার্শ্বে বসে গেলেন। সেখান থেকে হযরত ফাতেমাকে দেখা যাচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে হযরত ফাতেমা ক্রন্দন শুরু করে দেন। তিনি অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি মনে মনে বলেন এর পূর্বে তো আমার পিতাকে কখনো আমার সাথে এমন আচরণ করতে দেখি নি।

অতঃপর তিনি তাঁর দু পুত্রকে (ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন) ডাকলেন এবং একজনের হাতে দরজার পর্দা খুলে আর অপরজনের হাতের চুড়ি খুলে অন্যজনকে দিয়ে বললেন : এগুলো আমার বাবার কাছে নিয়ে যাও। তাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম দিয়ে বলবে : আপনি সফরে যাওয়ার পর এগুলো ছাড়া অন্য কিছুর ব্যবস্থা করি নি। এখন এগুলো দিয়ে আপনার যা খুশী তা করুন,আপনি যে পথে খরচ করতে চান করুন।

হযরত ফাতেমার দু সন্তান মায়ের পক্ষ থেকে মহানবী (সা.)-এর কাছে সব কথা খুলে বললেন। রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমার দু সন্তানকে চুম্বন দিয়ে তাদেরকে কোলে তুলে নিলেন। তাদের দু জনকে নিজের দু হাটুর উপর বসিয়ে নির্দেশ দিলেন,ঐ দু'টি চুড়ি ভেঙ্গে যেন টুকরো করা  হয়। তিনি সুফফার (صُفَّة ) বাসিন্দাদের মাঝে টুকরো চুড়িগুলো বিতরণ করে দিলেন। তারা এমন একদল লোক ছিলেন যাদের না কোন বাড়ী-ঘর ছিল,না কোন সম্পদ ছিল। অতঃপর দরজার পর্দার কাপড় -যা দৈর্ঘে ছিল লম্বা কিন্তু প্রস্থে কম ছিল-তাদের মধ্যকার বস্ত্রহীন লোকদের মধ্যে ভাগ করে দেন।

অতঃপর রাসূল (সা.) বলেন : আল্লাহ্ যেন ফাতেমার উপর রহম করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এ পর্দার পরিবর্তে বেহেশতী বস্ত্র তাকে দান করবেন এবং এ চুড়িগুলোর পরিবর্তে তাকে বেহেশতের অলংকার দান করবেন। 88

বিয়ের পোশাক 

হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত ফাতেমার বিয়ের রাত্রির জন্যে একটি পোশাকের ব্যবস্থা করেন। কেননা হযরত ফাতেমার পরনের পোশাকে তালি দেয়া ছিল। এমন সময় একজন ভিক্ষুক দ্বারে কড়া নাড়ে। ভিক্ষুকটি পরিধানের জন্যে একখানা বস্ত্র প্রার্থনা করে। হযরত ফাতেমা তাঁর পরনের তালি দেয়া কাপড়টি দান করতে মনস্থ করলে মনে পড়ে যায় যে আল্লাহ্ বলেছেন :

) لَنْ تَنَالُوْا اْلْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ(

অর্থাৎতোমরা যা ভালবাস তা থেকে দান না করা পর্যন্ত কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। 89

আর এ জন্যেই হযরত ফাতেমা তাঁর বিয়ের নতুন পোশাক ভিক্ষুককে দান করে দেন।90  

দুনিয়া ত্যাগ ও আল্লাহর ভয়

যখন,

) وَ إِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِيْنَ  لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَقْسُوْمٌ (

অর্থাৎএবং নিশ্চয়ই জাহান্নাম তাদের সকলের জন্যে প্রতিশ্রুত স্থান। তার সাতটি দ্বার আছে। যার প্রত্যেক দ্বারের জন্যে তাদের অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র দল থাকবে। 91

এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) উচ্চস্বরে ক্রন্দন করেছিলেন। আর তাঁর সাহাবীরাও তাঁর কান্না দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কিন্তু তারা জানতেন না যে হযরত জিবরাঈল (আ.) রাসূল (সা.) উপর কি অবতীর্ণ করেছেন। মহানবী (সা.) ভাবগম্ভীর অবস্থা দেখে তাকে কেউ কিছু প্রশ্ন করার সাহস পায় নি। হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখনি হযরত ফাতিমাকে দেখতেন তখনি আনন্দিত হয়ে উঠতেন। তাই হযরত সালমান ফারসী মহানবী (সা.)-এর এহেন অবস্থার সংবাদ হযরত ফাতেমাকে প্রদান করার জন্যে তাঁর গৃহাভিমুখে যাত্রা করেন। হযরত সালমান ফারসী তাঁর গৃহে পৌঁছে দেখেন যে হযরত ফাতেমা যাঁতায় আটা তৈরী করছেন,আর

) وَ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ وَ أَبْقَى (

অর্থাৎআল্লাহর নিকট যা আছে তা কল্যাণকর এবং তাই অবশিষ্ট থাকবে92

এ আয়াতটি পাঠ করছেন। তাঁর পরনে একটি পশমী আবা,যার বার জায়গায় খেজুরের আঁশ দ্বারা তালি লাগানো ছিল।

হযরত সালমান ফারসী হযরত ফাতেমার কাছে নবী (সা.)-এর অবস্থা এবং হযরত জিবরাঈল (আ.) যে কিছু নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন-তা খুলে বললেন। হযরত ফাতেমা উঠে দাঁড়ালেন এবং সেই তালি দেয়া আবা পড়েই বাবার কাছে রওয়ানা হলেন। হযরত সালমান ফারসী হযরত ফাতেমার পরনে এ ধরনের কাপড় দেখে ভীষণ কষ্ট পেলেন। তিনি বলেন : হায়! রোমান ও পারস্য সম্রাটদের কন্যারা রেশমী কাপড় পরিধান করে আর মুহাম্মদ (সা.) কন্যার পরনে পশমী আবা,যার বারো স্থানে তালি লাগানো আছে! হযরত ফাতেমা (আ.) বাবার কাছে পৌঁছে সালাম দিয়ে বললেন : হে পিতা! সালমান আমার পোশাক দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। সেই আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে নবুওয়াত প্রদান করেছেন,পাঁচ বৎসর যাবৎ এই একটি দুম্বার চর্ম ছাড়া আমাদের অন্য কিছু নেই-যার উপর দিনের বেলা উটের খাবার রাখি আর রাত্রিতে এটাই আমাদের বিছানা। আমাদের বালিশ একটি চামড়া দ্বারা তৈরী যার ভিতরে খেজুরের আঁশ দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন : হে সালমান! আমার মেয়ে আল্লাহর পথে অগ্রগামীদের অন্তর্ভূক্ত। হযরত ফাতেমা পিতাকে প্রশ্ন করেন : বাবা আপনার জন্যে আমার জীবন উৎসর্গ হোক! বলুন,কি কারণে আপনি ক্রন্দন করেছিলেন? তখন রাসূল (সা.) হযরত জিবরাঈল কর্তৃক অবতীর্ণ আয়াতটি পাঠ করেন। হযরত ফাতেমা আয়াতটি শ্রবণ করে এমনভাবে ক্রন্দন করেন যে মাটিতে পড়ে যান। তখন থেকে অনবরত তিনি বলতেন : হায়! হায়! যার জন্যে জাহান্নামের আগুন  নির্দ্ধারিত হবে তার অবস্থা কেমন হবে..।93

ক্ষুধা এবং আসমানী খাদ্য

হযরত আবু সাঈদ খুদরী বলেন : একদা আলী ইবনে আবি তালিব ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিলেন। তিনি হযরত ফাতেমাকে বলেন : তোমার কাছে কি আমাকে দেবার মত কোন খাবার আছে? হযরত ফাতেমা বলেন : না। সেই আল্লাহর কসম! যিনি আমার পিতাকে নবুওয়াত এবং তোমাকে তাঁর উত্তরাধিকারীত্ব দানে সম্মানিত করেছেন,কোন খাবার আমার কাছে নেই। কোন খাবার ছাড়াই দু দিন গত হয়ে গেছে। যৎসামান্য খাবার ছিল তা তোমাকে দিয়েছিলাম। তোমাকে আমি এবং আমার আদুরে দুই সন্তানের উপর স্থান দিয়েছি।

উত্তর শুনে হযরত আলী বলেন : কেন তুমি আমাকে আগে অবহিত করোনি,তাহলে তো আমি তোমাদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করতাম। হযরত ফাতেমা বলেন : হে আবুল হাসান! আমি যে জিনিস তোমার কাছে নেই তা চাপিয়ে দিতে আল্লাহর কাছে লজ্জা পাই।

হযরত আলী হযরত ফাতেমার কাছ থেকে বিশ্বাস ও আল্লাহর উপর নির্ভর করে ঘরের বাইরে চলে গেলেন এবং পরে তিনি কারো কাছ থেকে এক দিনার ঋণ নিয়েছিলেন।

তিনি তা দিয়ে তাঁর পরিবারের জন্যে কিছু ক্রয় করার মনস্থ করেন কিন্তু তখন হযরত মেকদাদ বিন আল্ আসওয়াদের সাথে তাঁর দেখা হয়। তিনি মেকদাদকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় দেখতে পান। সেদিনের আবহাওয়া প্রচন্ড গরম ছিল। সূর্যের উত্তাপে তাঁর ছাতি ফেটে যাচ্ছিল আর পায়ের নিচের মাটিও ছিল ভীষণ উত্তপ্ত। এহেন অবস্থা তাকে বেশ কষ্ট দিচ্ছিল। তিনি মেকদাদকে জিজ্ঞেস করেন : হে মেকদাদ,তোমার এমন কি ঘটেছে যার কারণে এ সময়ে তুমি বাড়ী ও পরিবার ছেড়ে বাইরে আসতে বাধ্য হয়েছো? হযরত মেকদাদ বলেন : হে আবুল হাসান! আমাকে আমার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিন,আমার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করবেন না। তখন হযরত আলী (আ.) বললেন : ভাই,তুমি না বলে আমার কাছ থেকে চলে যেতে পারবে না। মেকদাদ বলেন : ভাই,আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ছেড়ে দিন। আমার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইবেন না।

হযরত আলী বললেন : ভাই,এটা অসম্ভব। তুমি কোনক্রমে আমার কাছ থেকে লুকাতে পারবে না।

তখন হযরত মেকদাদ বলেন : হে আবুল হাসান! যেহেতু আপনি জোর করে ধরেছেন তাই বলছি। আমি সেই আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি যিনি হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নবুওয়াত এবং আপনাকে ইমামত দানে সম্মানিত করেছেন,আমি আমার পরিবারের জন্যে রোজগারের উদ্দেশ্যে কাজের সন্ধানে বের হয়েছি। কেননা আমি যখন আমার পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের বাইরে চলে আসছিলাম তখন তারা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছিল। আর আমার পরিবারের কান্না শুনে সহ্য করতে না পেরে চিন্তিত মন নিয়ে ঘরের বাইরে চলে এসেছি। আমার এই হলো অবস্থা।

হযরত আলীর চোখে এমনভাবে অশ্রু ভরে গেল যে তাঁর দাড়ি মোবারক পর্যন্ত অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো। তিনি মেকদাদকে বললেন : তুমি যার কসম দিয়েছ আমিও তার কসম দিয়ে বলছি যে আমিও  ঠিক তোমার মত একই কারণে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি একটি দিনার ঋণ করেছিলাম। এক্ষনে আমি তোমাকে আমার উপর অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ বলে তিনি দিনারটি তাকে দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি যোহর,আসর এবং মাগরিব নামাজ আদায় করলেন। মহানবী (সা.) মাগরিব নামাজ সমাপ্ত করে আলীর কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ইশারা করলেন। আলী প্রথম কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন। আলী উঠে দাঁড়ালেন এবং রাসূল (সা.)-এর পিছনে পিছনে হাঁটা শুরু করলেন।

অবশেষে মসজিদের দরজার নিকট মহানবীর সাথে মিলিত হয়ে তাঁকে সালাম করেন এবং রাসূল (সা.) তাঁর সালামের উত্তর দিলেন। মহানবী (সা.) বলেন : হে আবুল হাসান ! আমি কি রাত্রের খাবারের জন্যে তোমার সাথে আসতে পারি?

হযরত আলী মাথা নিচু করে চুপিসারে দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনি লজ্জায় হতবাক। মহানবী (সা.)-এর সামনে কি উত্তর দিবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। মহানবী (সা.) দিনারের ঘটনা এবং এটা কোথা থেকে ব্যবস্থা করেছে আর তা কাকে দান করেছে- এসব কিছু সম্পর্কে অবগত ছিলেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিন তাঁর রাসূলকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে সেই রাত্রিতে যেন তিনি আলীর কাছে যান। রাসূল (সা.) আলীর নিস্তব্ধতা লক্ষ্য করে বললেন : হে আবুল হাসান! কেন তুমি না বলে আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ না অথবা হ্যাঁ বলে তোমার সাথে যাওয়ার জন্যে বলছো না?

আলী লজ্জায় নবী (সা.)-এর সম্মানে বললেন : চলুন! আমি আপনার খেদমতে আছি। নবী করীম (সা.) আলীর হাত ধরে ফাতেমার গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন ফাতেমা নামাজ শেষে তাঁর মেহরাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁর পিছনে একটি বড় হাড়ি রাখা ছিল। সেখান থেকে অনবরত বাষ্প বের হচ্ছিল। ফাতেমা পিতার গলার কণ্ঠ শুনে নামাজেন স্থান ত্যাগ করে তাকে সালাম দিলেন। ফাতেমা (আ.) নবী (সা.)-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। নবী (সা.) তাঁর সালামের উত্তর দিলেন। তিনি তাঁর পবিত্র হাত দ্বারা ফাতেমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। নবী (সা.) ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করেন : তোমার দিনকাল কেমন কাটছে? আল্লাহ তায়ালা তোমার উপর কৃপা করুক। আমাদের রাতের খাবার দাও। আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে ক্ষমা করেছেন। ফাতেমা খাবারের পাতিল নবী (সা.) এবং হযরত আলীর সামনে রাখলেন। আলী খাবারের প্রতি দৃষ্টি দিলেন এবং তার সুঘ্রান পেয়ে অবাক কণ্ঠে ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করেন : হে ফাতেমা! এ খাবার তোমার কাছে কোথা থেকে পৌঁছেছে- যা কোনদিন দেখিনি? এরকম সুস্বাদু খাবার তো আগে কোনদিন খাইনি?

মহানবী (সা.) হযরত আলীর স্কন্ধে হস্ত মোবারক রেখে ইশারা করে বললেন : হে আলী! এ খাবার তোমার সেই দিনারের পুরস্কার ও প্রতিদান। মহান আল্লাহ্ কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেন :

) إِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَشَآءُ بِغَيْرِحِسَابٍ(

অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে অফুরন্ত রিজিক দান করেন। 94

অতঃপর আনন্দে আল্লাহর শোকর গুজারিতে উদ্বেলিত অবস্থায় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চক্ষুযুগল থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন : সেই আল্লাহকে ধন্যবাদ যিনি এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বেই তোমাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন। হে আলী,আল্লাহ্ তোমাকে হযরত যাকারিয়া (আ.) এবং ফাতেমা (আ.)-কে হযরত মারিয়ামের অবস্থার ন্যায় করেছেন।95

আল্লাহ্ বলেন :

) كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا اْلْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًا(

অর্থাৎ যখনি যাকারিয়া (মারিয়ামের) মেহরাবের স্থানে প্রবেশ করতো তখনি তাঁর নিকট রিযিক (খাবার) দেখতে পেতো।96

অভাবগ্রস্তদের দান এবং অত্যন্ত বরকতময় গলার হার

হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী বলেন : একদিন রাসূলে আকরাম (সা.) আসরের নামাজ আমাদের সাথে আদায় করেন। নামাজ শেষে তিনি কেবলামুখী হয়ে বসেছিলেন এবং লোকজন তাঁর চারপাশে জড় হয়েছিল। তখন একজন আরব বৃদ্ধ মুহাজির (যার পরনে অত্যন্ত পুরনো কাপড় ছিল) মহানবীর নিকট আসেন। সে লোকটি বার্ধক্যের কারণে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না। রাসূলে খোদা (সা.) লোকটির সাথে কুশলাদি বিনিময় করেন। ঐ বৃদ্ধ লোকটি বলেন : ইয়া রাসুলুল্লাহ্,আমি ক্ষুধার্ত,আমাকে অন্ন দান করুন। আমার পরনের কাপড় নেই,আমাকে পরিধেয় বস্ত্র দান করুন। আমি নিঃস্ব,দরিদ্র,আমাকে দয়া করে কিছু দিন।

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : আমার দেয়ার মত কিছু নেই। তবে কোন ভাল কাজের দিক-নির্দেশনা দান তা সম্পাদন করার অনুরূপ। তুমি ফাতেমার বাড়িতে যাও। সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসে। সে আল্লাহর পথে দান করে থাকে।

হযরত ফাতেমার গৃহ রাসূল (সা.)-এর গৃহ সংলগ্ন ছিল এবং ঐ বাড়ীটি নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের থেকে পৃথক ছিল।

রাসূল (সা.) হযরত বেলালকে ডেকে বললেন : হে বেলাল,তুমি এই বৃদ্ধ লোকটিকে ফাতেমার বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দিয়ে আস। বৃদ্ধ লোকটি হযরত বেলালের সাথে হযরত ফাতেমার গৃহের দ্বারে পৌঁছেন। সেখান থেকেই বৃদ্ধ উচ্চৈঃস্বরে বললেন : আসসালামু আলাইকুম,হে নবুওয়াতের পরিবার,ফেরেশতাদের গমনাগমনের স্থল,আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিলের জন্যে হযরত জিবরাঈল আমিনের অবতীর্ণ হওয়ার স্থান। হযরত ফাতেমা উত্তরে বললেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম,আপনি কে?

বৃদ্ধ লোকটি বললেন : আমি একজন বৃদ্ধ আরব,যে কষ্ট ও দুরাবস্থা থেকে (মুক্তি পাবার লক্ষ্যে) হিজরত করেছে এবং মানবকুলের মুক্তিদাতা আপনার পিতার পানে ছুটে এসেছে। এখন হে মুহাম্মদ (সা.)-এর দুহিতা! আমি ক্ষুধার্ত ও বস্ত্রহীন। আমাকে দয়া ও অনুগ্রহ দানে ধন্য করুন। আল্লাহ্ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন।

এ সময়ে হযরত ফাতেমা,হযরত আলী ও রাসূল (সা.) তিন দিন যাবৎ কিছু খান নি। নবী করীম (সা.) তাদের অবস্থা ভাল করেই জানতেন। হযরত ফাতেমা দুম্বার চামড়া বিশিষ্ট হাসান ও হুসাইনের বিছানাটি হাতে তুলে নিয়ে বললেন : হে দরজার বাইরে দন্ডায়মান ব্যক্তি! এটা নিয়ে যাও। আশা করি আল্লাহ্ তোমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন।

আরব বৃদ্ধটি বললেন : হে মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা! আপনার কাছে আমি ক্ষুধা নিবৃত্তির কথা বলেছি আর আপনি আমাকে পশুর চামড়া  দিচ্ছেন। আমি এ চামড়া দিয়ে কি করবো?

হযরত ফাতেমা বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে হযরত হামযার কন্যা ফাতেমার উপহার তার গলার হারটি খুলে বৃদ্ধ লোকটিকে দান করে দিলেন আর বললেন,এটাকে নিয়ে বিক্রি কর। আশা করি আল্লাহ্ তোমাকে এর চেয়ে আরো উত্তম কিছু দান করবেন।

আরব মুহাজির গলার হারটি নিয়ে মসজিদে নববীতে পৌঁছলেন। তখন নবী (সা.) তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে বসে ছিলেন। বৃদ্ধ আরব বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এই গলার হারটি হযরত ফাতেমা আমাকে দান করেছেন। আর তিনি বলেছেন : এ গলার হারটি বিক্রি করো। আশা করি আল্লাহ্ তোমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন।

রাসূলুল্লাহ্ আর চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন : যে জিনিস সমগ্র নারীকুলের নেত্রী ফাতেমা তোমাকে দিয়েছে কি করে সম্ভব তার দ্বারা আল্লাহ্ তোমার প্রয়োজন মিটাবেন না?

হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাকে কি এই গলার হারটি কেনার অনুমতি দেবেন? রাসূল (সা.) জবাবে বললেন : হে আম্মার! এটা ক্রয় কর। যদি সমস্ত জিন ও ইনসান এটা ক্রয়ের মধ্যে অংশগ্রহণ করে আল্লাহ্ তাদের সকলের উপর থেকে দোজখের আগুন উঠিয়ে নিবেন। হযরত আম্মার জিজ্ঞেস করেন : হে আরব বৃদ্ধ! এ গলার হারটি কত বিক্রি করবে? বৃদ্ধ লোকটি জবাবে বললেন :

এ গলার হারের পরিবর্তে আমার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট যে,আমি যেন তা দিয়ে কিছু রুটি ও মাংস কিনে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারি এবং একটা কাপড় কিনে আমার দেহ আবৃত করতে পারি যেন সে কাপড় দিয়ে আল্লাহর দরবারে নামাজে দাঁড়াতে পারি। আর কয়েকটি দিনারই যথেষ্ট যা আমি আমার পরিবারকে দিতে পারি। হযরত আম্মারের কাছে নবী (সা.) কর্তৃক প্রাপ্ত খায়বরের যুদ্ধের গণিমতের কিছু মাল অবশিষ্ট ছিল। তিনি বলেন : এ গলার হারের বিনিময়ে আমি তোমাকে বিশ দিনার ও দু শ দেরহাম,একটি ইয়েমানী পোশাক এবং একটি উট দিবো যার মাধ্যমে তুমি তোমার পরিবারের নিকট পৌঁছতে পার। আর তাতে তোমার ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থাও হবে।

বৃদ্ধ লোকটি বললেন : হে পুরুষ! তুমি অত্যন্ত দানশীল। অতঃপর সে লোকটি হযরত আম্মারের সাথে তাঁর গৃহে গেল। হযরত আম্মার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সব কিছু সে লোকটিকে দিলেন। বৃদ্ধ লোকটি মালামাল নিয়ে রাসূল (সা.)-এর কাছে এলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন : এখন তোমার ক্ষুধা মিটেছে? তোমার পরিধেয় বস্ত্র পেয়েছো?

উত্তরে লোকটি বললেন। জি,হ্যাঁ! আমার প্রয়োজন মিটেছে।  আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে উৎসর্গ হোক।

রাসূল (সা.) বললেন : তাহলে ফাতেমার জন্যে তাঁর অনুগ্রহের কারণে দোয়া কর।

তখন আরব মুহাজির লোকটি এভাবে দোয়া করলেন : হে আল্লাহ্! তুমি সর্বদাই আমার প্রভু। তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্যের আমি ইবাদত করি না। তুমি সকল ক্ষেত্রে থেকে আমার রিযিকদাতা। হে পরোয়ারদিগার! ফাতেমাকে এমন সব কিছু দাও যা চক্ষু কখনো অবলোকন করে নি আর কোন কর্ণ কখনো শ্রবণ করে নি।

প্রিয় নবী (সা.) তার দোয়ার শেষে আমিন বললেন এবং তাঁর সাহাবীদের প্রতি তাকিয়ে বলেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এ পৃথিবীতে ফাতেমাকে এই দোয়ার ফল দান  করেছেন।  কেননা  আমি  তাঁর  পিতা,আমার সমকক্ষ পৃথিবীতে অন্য কেউ নেই। আর আলী তাঁর স্বামী। যদি আলী না থাকতো তাহলে কখনো তাঁর সমকক্ষ স্বামী খুঁজে পাওয়া যেত না। আল্লাহ্ ফাতেমাকে হাসান ও হুসাইনকে দান করেছেন। বিশ্বের বুকে মানবকুলের মাঝে তাদের ন্যায় আর কেউ নেই। কেননা তাঁরা বেহেশতের যুবকদের সর্দার। রাসূল (সা.)-এর সামনে হযরত মেকদাদ,হযরত আম্মার ও হযরত সালমান ফারসী দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন : ফাতেমার মর্তবা ও মর্যাদার ব্যাপারে আরো কিছু বলবো?

বলুন,ইয়া রাসূলুল্লাহ্! -তারা উত্তর দিলেন।

তখন রাসূল (সা.) বললেন : জিবরাঈল আমাকে সংবাদ দিয়েছে যে ফাতেমার দাফন সম্পন্ন হবার পর কবরে প্রশ্নকারী দু জন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করবে : তোমার প্রভু কে?

জবাব দিবে : আল্লাহ্। অতঃপর জিজ্ঞেস করবে : তোমার নবী কে?

জবাবে বলবে : আমার পিতা। আরো জিজ্ঞেস করবে, তোমার যুগের ইমাম ও নেতা কে ছিল?

জবাব দিবে : এই যে আমার কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে আছে,আলী ইবনে আবি তালিব।

নবী করীম (সা.) আরো বলেন,তোমরা জেনে রাখো,আমি তোমাদের নিকট ফাতেমার আরো যোগ্যতা ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করতে চাই। ফাতেমাকে রক্ষা করার জন্যে আল্লাহ্ ফেরেশতাদের একটা বড় দলকে দায়িত্ব দিয়েছেন যেন তারা ফাতেমাকে সামনে-পিছনে,ডানে-বায়ে থেকে হেফাজত করতে পারে এবং তারা তাঁর সারা জীবন তাঁর সাথেই রয়েছেন। আর কবরে এবং কবরে মৃত্যুর পরেও তাঁর সাথে আছেন। তারা তাঁর এবং তাঁর পিতা,স্বামী ও সন্তানদের উপর অসংখ্য দরুদ পাঠ করছেন। অতঃপর যারা আমার ওফাতের পর আমার কবর যিয়ারত করবে তারা যেন আমার জীবদ্দশাতেই আমাকে যিয়ারত করলো। আর যারা ফাতেমার সাক্ষাত লাভ করে তারা আমার জীবদ্দশায়ই আমাকে দেখার  সৌভাগ্য অর্জন করলো। যারা আলী বিন আবি তালিবের সাথে সাক্ষাৎ করলো মনে করতে হবে ফাতেমারই সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছে। যারা হাসান ও হুসাইনকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করলো তারা আলী বিন আবি তালিবেরই সাক্ষাৎ লাভ করলো। আর যারা হাসান ও হুসাইনের বংশের সন্তানদের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করলো তারা ঐ দুই মহান ব্যক্তির সাক্ষাতেই সৌভাগ্যবান হলো।

পরক্ষণে হযরত আম্মার গলার হারটি নিয়ে মেশক দ্বারা সুগন্ধযুক্ত করলেন এবং ওটাকে ইয়েমেনী কাপড়ে মোড়ালেন। তার একটা দাস ছিল। তার নাম ছিল সাহম। খায়বরের যুদ্ধের গণিমতের মালের যে অংশ তাঁর ভাগে পড়েছিল তা দিয়ে তিনি এই গোলামকে ক্রয় করেছিলেন। তিনি গলার হারটিকে তাঁর এ গোলামের হাতে দিয়ে বললেন : এটা রাসূল (সা.)-কে দিও আর তুমিও এখন থেকে তাঁর হয়ে গেলে।

গোলাম গলার হারটি নিয়ে রাসূল (সা.) খেদমতে পৌঁছে আম্মারের বক্তব্য তাঁর কাছে বলল। হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) বললেন : তুমি ফাতেমার কাছে চলে যাও। তাকে গলার হারটি দিয়ে দাও আর তুমিও এখন থেকে তাঁর হয়ে কাজ করবে। লোকটি হযরত ফাতেমার কাছে গলার হারটি নিয়ে গেল এবং নবী (সা.)-এর কথা তাঁর কাছে পৌঁছালো। হযরত ফাতেমা গলার হারটি গ্রহণ করলেন আর দাসটিকে মুক্ত করে দিলেন। দাসটি হাসি ধরে রাখতে পারলো না। হযরত ফাতেমা প্রশ্ন করলেন : তোমার হাসির কারণ কি?

সদ্য মুক্ত দাসটি বলল : এই গলার হারের অভাবনীয় বরকত  আমার মুখে হাসি ফোটাতে বাধ্য করেছে। যা ক্ষুধার্তকে অন্ন দিয়ে পেট ভর্তি করেছে,বস্ত্রহীন ব্যক্তিকে বস্ত্র পরিধান করিয়েছে এবং অভাবীর অভাব পূরণ করেছে আর একজন দাসকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছে। অবশেষে গলার হার আবার তার মালিকের কাছে ফিরে এসেছে। 97