শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 44855
ডাউনলোড: 3959

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 44855 / ডাউনলোড: 3959
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মুসলিম বিন আক্বীল বিন আবি তালিবের দুই শিশু সন্তানের শাহাদাত

শেইখ সাদুক্ব ¡ তার আমালি ’ তে বর্ণনা করেছেন তার পিতা (ইবনে বাবাওয়েইহ আউওয়াল) থেকে , তিনি আলী বিন ইবরাহীম থেকে , তিনি তার পিতা থেকে , তিনি ইবরাহীম বিন রাজা থেকে , তিনি আলী বিন জাফর থেকে , তিনি উসমান বিন দাউদ হাশমি থেকে , তিনি হাম্মাদ বিন মুসলিম থেকে , তিনি হুমরান বিন আইয়্যান থেকে , তিনি আবু মুহাম্মাদ থেকে যিনি কুফার একজন সম্মানিত ব্যক্তি , তিনি বলেন: যখন ইমাম হোসেইন (আ.) কে শহীদ করা হয় দুটি ছেলে শিশুকে তার শিবির থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। উবায়দুল্লাহ কারাগারের রক্ষীকে ডেকে বললো , এ বাচ্চা ছেলে দুটোকে নিয়ে যাও এবং বন্দী করে রাখো। তাদেরকে ভালো খাবার অথবা ঠাণ্ডা পানি দিও না এবং তাদেরকে হয়রানি করো। ”

বাচ্চা ছেলে দুটো দিনের বেলা রোযা রাখলো এবং যখন রাত হলো কারা রক্ষী তাদের জন্য দুটো বার্লির রুটি এবং এক জগ পানি আনলো। এভাবে যখন এক বছর পার হয়ে গেলো তাদের একজন আরেকজনকে বললো , আমরা অনেক দিন কারাগারে কাটালাম এবং আমাদের জীবন চলে যাচ্ছে , আর আমাদের শরীরও ভেঙ্গে গেছে। যখন বৃদ্ধ কারারক্ষী আমাদের কাছে আসবে আমরা তার কাছে আমাদের মর্যাদা এবং বংশের কথা খুলে বলবো যেন সে আমাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয়। ” যখন প্রতিদিনের মত রাতের বেলায় বৃদ্ধ কারারক্ষী দুটো বার্লির রুটি ও এক জগ পানি নিয়ে এলো ছোট ছেলেটি বললো , হে শেইখ , আপনি কি নবী (সা.) কে চেনেন ? সে বললো , কিভাবে আমি তাকে না জানবো , কারণ তিনি আমার নবী। ” তখন শিশুটি বললো , তাহলে আপনি কি জাফর বিন আবি তালিব (আ.) কে চেনেন ? এতে সে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলো এবং বললো , আল্লাহ তাকে দুটো পাখা দিয়েছেন বলে তিনি ফেরেশতাদের সাথে উড়েন যেখানে তার ইচ্ছা। ” শিশুটি বললো , আপনি কি আলী বিন আবি তালিব (আ.) কে চেনেন ? বৃদ্ধ লোকটি বললো , হ্যাঁ , আমি তাকে চিনি , কারণ আমার নবীর চাচাতো ভাই। ” শিশুটি বললো , হে শেইখ , আমরা আপনার নবীর বংশধর এবং আমরা মুসলিম বিন আক্বীল বিন আবি তালিব (আ.) এর সন্তান। আমরা আপনার অধীনে এ কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে আছি। আপনি আমাদের ভালো খাবার দেন না এবং কারাগারে আমাদের হয়রানি করেন। ” কারারক্ষী তাদের পায়ে পড়ে গেলো এবং বললো , আমার জীবন তোমাদের জন্য কোরবান হোক , হে আল্লাহর বাছাইকৃত নবীর বংশ , কারাগারের দরজা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত , তোমরা যেতে পারো যেখানে তোমাদের ইচ্ছা। ” যখন রাত নামলো সে দুটো বার্লির রুটি এবং এক জগ পানি আনলো এবং তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিল। এরপর বললো , রাতের বেলা ভ্রমণ করো এবং দিনের বেলা লুকিয়ে থেকো যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাদেরকে মুক্তি দেন। ”

শিশু দুটি রাতে বেরিয়ে পড়লো এবং একজন বৃদ্ধা মহিলার বাড়িতে গিয়ে বললো , আমরা দুজন ছোট মানুষ , ভ্রমণে আছি এবং রাস্তা চিনি না। আর রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। আজ রাতের জন্য আপনার বাড়িতে আমাদের আশ্রয় দিন ; আর আমরা সকাল হওয়ার সাথে সাথে চলে যাবো। ” বৃদ্ধা মহিলা বললো , হে আমার প্রিয় শিশুরা , তোমরা কারা ? আমি কখনো এরকম সুগন্ধ পাই নি যা তোমাদের শরীর থেকে বেরোচ্ছে। ” তারা বললো , হে শ্রদ্ধেয় মহিলা , আমরা নবীর বংশধর এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কারাগার থেকে পালিয়েছি মৃত্যু থেকে বেঁচে। ” মহিলা বললো , “ হে প্রিয় শিশুরা , আমার মেয়ের জামাই একজন খারাপ লোক যে কারবালায় গণহত্যায় উপস্থিত ছিলো উবায়দুল্লাহর বিশ্বস্তজন হয়ে। আমি ভয় পাচ্ছি হয়তো সে তোমাদের দেখে ফেলবে ও হত্যা করবে। ” শিশুরা উত্তর দিলো , আমরা শুধু এখানে এক রাত থাকতে চাই এবং যখনই সকাল হবে আমরা এখান থেকে চলে যাবো। ” বৃদ্ধা মহিলা একমত হলো এবং তাদের জন্য কিছু খাবার আনলো। শিশুরা খাবার খেলো ও পানি পান করলো এবং ঘুমাতে গেলো। ছোট ভাইটি বড় ভাইকে বললো , হে প্রিয় ভাই , আমি চাই এ রাতটি আমরা শান্তিতে কাটাই , কাছে আসো যেন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরতে পারি এবং ঘুমাতে যাই এবং পরস্পরকে চুমু দিতে পারি। হয়তো মৃত্যু আমাদেরকে আলাদা করে ফেলবে। ” তারা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলো এবং ঘুমিয়ে গেলো।

যখন রাত বেশী হলো বৃদ্ধা মহিলার মেয়ের বদমাশ জামাই এলো এবং দরজায় আস্তে টোকা দিলো। মহিলা জিজ্ঞেস করলো , কে ? সে বললো যে সে তার মেয়ের জামাই। মহিলা তাকে বললো , কেন তুমি এত রাতে এসেছো। ” লোকটি বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য , দরজা খোল আমি পাগল হয়ে যাওয়ার আগেই এবং তাড়া করতে গিয়ে আমার তলপেট ফেটে যাওয়ার আগেই এবং যা আমার উপর ঘটে গেছে সে জন্য। ” মহিলা বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য , কী হয়েছে তোমার ? সে বললো , উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের হাত থেকে দুটো শিশু পালিয়েছে এবং সে ঘোষণা দিয়েছে তাদের একজনের মাথা যে তাকে এনে দিবে সে তাকে এক হাজার দিরহাম পুরস্কার দিবে এবং তাদের দুজনের মাথার জন্য দুহাজার দিরহাম দিবে এবং আমি (তাদের খোঁজে) কষ্ট করেছি এবং কিছুই আমার হাতে পৌঁছে নি। ” বৃদ্ধা মহিলা বললো , কিয়ামতের দিন নবী (সা.) এর ক্রোধকে ভয় করো। ” সে বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য , এ পৃথিবীকে অবশ্যই চাইতে হবে। ” সে বললো , তুমি এ পৃথিবী দিয়ে কী করবে যদি এর সাথে পরকাল না থাকে ? লোকটি উত্তর দিলো , হঠাৎ করে তুমি তাদের পক্ষে কথা বলছো যেন তুমি জানো তারা কোথায় আছে। আসো যেন আমি তোমাকে সেনাপতির কাছে নিয়ে যেতে পারি। ” মহিলা বললো , আমার মত বৃদ্ধা মহিলার সাথে কী কাজ থাকতে পারে সেনাপতির ? সে বললো , আমি তাদের খোঁজে আছি। দরজা খোল যেন আমি একটু বিশ্রাম নিতে পারি এবং সকালে চিন্তা করবো তাদের খোঁজে আমি কী উপায় অবলম্বন করবো। ” মহিলা দরজা খুললো এবং তার জন্য খাবার আনলো। সে খাবার খেলো ও ঘুমালো।

মধ্যরাতে লোকটি বাচ্চাদের নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলো এবং এর দিকে লাগাম ছাড়া উটের মত এগিয়ে গেলো। সে নিয়ন্ত্রণহীন উটের মত চিৎকার করতে লাগলো এবং দেয়াল হাতড়াতে লাগলো এবং এক পর্যায়ে ছোট ভাইটির শরীরের একপাশে তার হাত স্পর্শ করলো। বাচ্চাটি জিজ্ঞেস করলো সে কে। সে উত্তর দিল যে সে এ বাড়ির মালিক এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো তারা কারা ? ছোট ভাইটি বড় ভাইকে ঘুম থেকে জাগালো এবং বললো , ভাই , ওঠো , কারণ আমরা তার শিকার হয়েছি যার ভয় করছিলাম। ” লোকটি আবার তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো তারা কারা। এতে তারা বললো , আপনি কি আমাদের নিরাপত্তা দিবেন যদি আমরা আমাদের পরিচয় বলি ? সে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিল। তারা বললো , আপনি কি নিরাপত্তার অঙ্গীকার এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের দায়িত্ব স্বীকার করছেন ? সে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিল। তারা আবার বললো , নবী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাক্ষী ? সে একমত হলো। তারা বললো , আল্লাহ হলেন বিচারক এবং সাক্ষী তার উপর যা এখন আমরা আপনাকে বলবো। ” সে তা গ্রহণ করলো। তখন শিশুরা বললো , আমরা আপনার নবী (সা.) এর বংশধর এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কারাগার থেকে পালিয়েছি আমাদেরকে হত্যা করা হবে এ ভয়ে। ” সে উত্তর দিলো , তোমরা মৃত্যু থেকে পালিয়েছো কিন্তু আবার এর শিকার হয়েছো। আল্লাহর প্রশংসা যিনি আমাকে তোমাদের উপর বিজয় দিয়েছেন। ” এ কথা বলে সে উঠলো এবং বাচ্চাদের হাত বেঁধে ফেললো। সকাল পর্যন্ত বাচ্চাদের হাত বাঁধা রইলো। যখন সকাল হলো লোকটি তার কালো কৃতদাস ফালীহকে ডাকলো এবং বললো , এ দুই শিশুকে ফোরাতের তীরে নিয়ে যাও এবং তাদের মাথা কেটে ফেলো এবং তা আমার কাছে আনো , যেন তা আমি উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে যেতে পারি ও দুহাজার দিরহাম পুরস্কার লাভ করতে পারি। ” দাসটি তার তরবারি তুলে নিলো এবং শিশুদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো । তারা বাড়ি থেকে দূরেও পৌঁছে নি এমন সময় একটি শিশু তাকে বললো , হে কালো কৃতদাস , তুমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মুয়ায্যিন বেলালের মত দেখতে। ” কৃতদাসটি বললো , আমার প্রভু আমাকে আদেশ করেছেন তোমাদেরকে হত্যা করতে কিন্তু আমাকে বলো , তোমরা কারা ? তারা বললো , আমরা তোমার নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর বংশধর এবং মৃত্যুর ভয়ে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কারাগার থেকে পালিয়েছি। বৃদ্ধা মহিলা আমাদেরকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন , আর তোমার প্রভু আমাদেরকে হত্যা করতে চান। ” কৃতদাস তাদের পায়ে পড়ে গেলো এবং তাদের পায়ে চুমু দিয়ে বললো , আমার জীবন তোমাদের জন্য কোরবান হোক এবং আমার চেহারা তোমাদের জন্য ঢাল হোক। হে আল্লাহর নির্বাচিত নবীর সন্তানরা , আল্লাহর শপথ , আমি এ কাজ করবো না যা কিয়ামতের দিন মুহাম্মাদ (সা.) এর ক্রোধ ডেকে আনবে। ” এ কথা বলে সে তার তরবারি ছুঁড়ে ফেলে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং অপর তীরে সাঁতরে চলে গেলো। যখন তার মালিক তা দেখলো সে চিৎকার করে বললো , তুমি আমার কথা অমান্য করেছো। ” এর উত্তরে সে বললো , আমি কখনোই তোমার অবাধ্য হই নি যতক্ষণ না তুমি আল্লাহর আবাধ্য হয়েছো এবং এখন যেহেতু তুমি আল্লাহর অবাধ্য হয়েছো আমি তোমাকে এ পৃথিবীতে ও আখেরাতে পরিত্যাগ করছি। ”

তখন লোকটি (বাড়িতে এসে) তার ছেলেকে ডাকলো এবং বললো , আমি তোমার জন্য বৈধ ও অবৈধ উপায়ে রোযগার করেছি আর এ পৃথিবী এমন যে তা অর্জন করতে হবে। তাই এ বাচ্চা দুটোকে ফোরাতের তীরে নিয়ে যাও এবং তাদের মাথা বিচ্ছিন্ন করে সেগুলো আমার কাছে আনো , যেন আমি সেগুলোকে উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে যেতে পারি এবং এর জন্য দুহাজার দিরহাম পুরস্কার পেতে পারি। ” তার ছেলে তরবারি তুলে নিলো এবং তাদের আগে আগে হাঁটতে লাগলো। তারা তখনও দূরে যায় নি এমন সময় একটি শিশু তাকে বললো , হে যুবক , আমি কতই না আশঙ্কা করছি যে তোমার যৌবন জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। ” যুবকটি জিজ্ঞেস করলো তারা কারা ? তারা বললো , আমরা নবীর বংশধর এবং তোমার বাবা চায় আমাদের হত্যা করতে। ” তা শুনে যুবকটি তাদের পায়ে পড়ে গেলো এবং তাতে চুমু দিয়ে ঠিক কৃতদাসটির কথাই বললো এবং নদীতোপিঝয়ে পড়ে সাতরে আরেক তীরে চলে গেলো। যখন তার বাবা তা দেখলো সে চিৎকার করে বললো , তুমি আমাকে অমান্য করেছো ? সে উত্তর দিলো , আল্লাহর আনুগত্য তোমার আনুগত্যের চাইতে আমার কাছে প্রিয়তর। ” তা শুনে সেই অভিশপ্ত ব্যক্তি বললো , আমি ছাড়া তোমাদেরকে হত্যা করতে কেউ প্রস্তুত নয়। ” এ কথা বলে সে তরবারি নিলো এবং তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।

যখন তারা ফোরাতের তীরে পৌঁছলো , সে তার তরবারি খাপ থেকে বের করলো। যখন শিশুরা খোলা তরবারি দেখলো তাদের চোখ অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠলো। তারা বললো , হে শেইখ , আমাদেরকে বাজারে নিয়ে যান এবং আমাদেরকে বিক্রি করে দিন এবং কিয়ামতের দিন নবীর ক্রোধকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। ”

সে বললো , না , অবশ্যই আমি তোমাদের হত্যা করবো এবং তোমাদের মাথাকে উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে যাবো এবং এর জন্য তার কাছ থেকের পুরস্কার পাবো । ” তারা বললো , হে শেইখ , আপনি কি নবীর সাথে আমাদের সম্পর্কের কথা বিবেচনা করেন না ? এতে সে বললো , অবশ্যই তোমরা নবীর সাথে এ রকম কোন সম্পর্ক রাখো না। ” তারা বললো , হে শেইখ , তাহলে আমাদেরকে উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে চলুন যেন সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমাদের নিয়ে কী করবে। ” সে বললো , আমার আর কোন পথ নেই তোমাদের রক্ত ঝরিয়ে তার নৈকট্য অর্জন করা ছাড়া। ” শিশুরা বললো , হে শেইখ , আমরা যে শিশু এর জন্যও কি কোন করুণা বোধ করেন না ? এতে সে বললো , আল্লাহ আমার অন্তরে কোন করুণা দেন নি। তখন তারা বললো , হে শেইখ , যেহেতু এখন আর কোন আশা নেই তাই আমাদের সময় দিন দুরাকাত নামায পড়ার জন্য। ” সে বললো , যত খুশী নামায পড়ো যদি এতে তোমাদের লাভ হয়। ” শিশুরা চার রাকাত নামায পড়লো। এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদে বললো , হে চিরঞ্জীব , হে প্রজ্ঞাবান , হে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক , আমাদের মাঝে ন্যায়বিচার করে দিন। ” লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং বড় ভাইয়ের মাথা কেটে ফেললো এবং মাথাটি একটি ব্যাগে রাখলো। ছোট ভাইটি , যে বড় ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো , বললো , আমি চাই রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আমার বড় ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত অবস্থায়। ” লোকটি বললো , ভয় পেয়ো না , কারণ শীঘ্রই আমি তোমাকে তোমার ভাইয়ের কাছে পাঠাবো। ” একথা বলে সে ছেলেটির মাথা কেটে ফেললো এবং তার মাথাকেও ব্যাগে রাখলো। এরপর সে তাদের দেহ দুটিকে ফোরাত নদীতে নিক্ষেপ করলো।

এরপর সে মাথাগুলো উবায়দুল্লাহর কাছে আনলো যে তখন তার সিংহাসনে বসেছিলো একটি বাঁশের লাঠি হাতে। লোকটি শিশুদের মাথাকে উবায়দুল্লাহর দিকে ফিরিয়ে রাখলো। উবায়দুল্লাহ তা দেখে উঠে দাঁড়ালো এবং বসলো , তিন বার। এরপর সে বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য , তুমি তাদের কোথায় পেলে ? সে বললো , আমাদের পরিবারের এক মহিলা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলো। ” উবায়দুল্লাহ বললো , তাহলে কি তুমি অতিথির অধিকার রক্ষা কর নি ? সে না- সূচক উত্তর দিলো। উবায়দুল্লাহ জিজ্ঞেস করলো , তারা তোমাকে কী বলেছিলো ? সে বললো , তারা বলেছিলো আমাদেরকে বাজারে নিয়ে যান এবং বিক্রি করে দিন এবং আমাদের হাত বেঁধে দিন এবং নবী (সা.) এর ক্রোধ অর্জন করবেন না কিয়ামতের দিন। ” উবায়দুল্লাহ বললো , তখন তুমি কি উত্তর দিলে ? সে বললো , আমি বললাম , না , অবশ্যই আমি তোমাদের হত্যা করবো এবং তোমাদের মাথা উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে যাবো এবং এর মাধ্যমে তার কাছ থেকে দুহাজার দিরহাম পুরস্কার লাভ করবো। ” উবায়দুল্লাহ বললো , তখন তারা কী উত্তর দিলো ? সে বললো , তারা বললো , তাহলে আমাদের উবায়দুল্লাহর কাছে জীবিত নিয়ে যান যেন সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমাদের নিয়ে কী করবে। ” তখন তুমি কী বললে ? বললো উবায়দুল্লাহ। সে বললো , আমি বললাম , না , তোমাদের রক্ত ঝরানোর মাধ্যমে বরং আমি তার নৈকট্য চাই। ” উবায়দুল্লাহ বললো , কেন তুমি তাদেরকে আমার কাছে জীবিত আনো নি , তাতে আমি তোমাকে চার হাজার দিরহাম পুরস্কার দিতে পারতাম ? সে বললো , আমার অন্তর আমাকে অন্য কোন চিন্তা করতে অবকাশ দেয় নি তাদের রক্ত ঝরানোর মাধ্যমে আপনার নৈকট্য অর্জন ছাড়া। ” উবায়দুল্লাহ তখন তাকে জিজ্ঞেস করলো তারা তখন কী বললো। সে বললো , তারা বললো , কমপক্ষে নবীর সাথে আমাদের সম্পর্ককে সম্মান করুন। আর আমি বললাম , অবশ্যই তোমরা নবীর সাথে এমন সম্পর্ক রাখো না। ” উবায়দুল্লাহ বলেছিলো , আক্ষেপ তোমার জন্য। এরপর তারা কী বললো ? সে বললো , তখন তারা বললো , আপনি কি আমাদের শিশুত্বের উপর কোন করুণা রাখেন না ? আমি বললাম , আল্লাহ আমার অন্তরে কোন করুণা রাখেন নি। ” উবায়দুল্লাহ বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য , তারা তোমাকে আর কী বললো ? সে বললো , তখন তারা বললো , আপনি আমাদের সামান্য সময় দিন যেন আমরা কিছু রাকাত নামায পড়তে পারি। ” আমি উত্তর দিলাম , যত খুশী পড় , যদি তোমাদের কোন লাভ হয়। তখন শিশুরা চার রাকাত নামায পড়লো। উবায়দুল্লাহ বললো , শিশুরা নামায শেষ করে কী বললো ? সে বললো , তারা আকাশের দিকে চোখ তুলে বললো , হে চিরঞ্জীব , হে প্রজ্ঞাবান , হে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক , আমাদের মাঝে ন্যায়বিচার করে দিন। ” এ কথা শুনে উবায়দুল্লাহ বললো , আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে বিচার করে দিয়েছেন। কে এগিয়ে আসবে এ অভিশপ্ত লোককে হত্যা করতে ? তা শুনে এক সিরিয় ব্যক্তি এগিয়ে এলো। উবায়দুল্লাহ বললো , তাকে একই জায়গায় নিয়ে যাও যেখানে সে শিশুদের হত্যা করেছে এবং তার মাথা বিচ্ছিন্ন করো এবং তার রক্ত ঝরাও তাদের রক্তের ওপরে এবং দ্রুত তার মাথা আমার কাছে নিয়ে আসো। ” লোকটি ঠিক তা-ই করলো যা তাকে বলা হলো এবং তার মাথা যখন আনা হলো তা একটি বর্শার মাথায় রাখা হলো এবং বাচ্চারা এর দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারলো বললো এ হচ্ছে নবীর বংশধরের হত্যাকারী। ”

পরিচ্ছেদ - ১০