শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45236
ডাউনলোড: 4001

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45236 / ডাউনলোড: 4001
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

আব্বাস বিন আলী (আ.) এর কাছে নিরাপত্তা দানের প্রস্তাব

শিমর এলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের দিকে ফিরে দাঁড়ালো এবং উচ্চ কণ্ঠে বললো , আমাদের বোনের (গোত্রের) পুত্র সন্তানরা কোথায় ?

এ কথা শুনে হযরত আব্বাস , আব্দুল্লাহ , জাফর এবং উসমান বের হয়ে এলেন এবং জানতে চাইলেন সে কী চায়। শিমর বললো , হে আমার বোনের সন্তানরা , তোমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। তারা বললেন , তোমার ও তোমার নিরাপত্তার উপর অভিশাপ , তুমি আমাদের নিরাপত্তার প্রস্তাব দিচ্ছো আর রাসূলের সন্তানের তা নেই ?

[ মালহুফ গ্রন্থে আছে] অন্য এক বর্ণনায় এরকম বর্ণিত আছে যে: হযরত আব্বাস (আ.) উচ্চ কণ্ঠে বললেন , তোমার হাত কাটা যাক , কী খারাপ নিরাপত্তাই না তুমি আমাদের জন্য এনেছো। হে আল্লাহর শত্রু , তুমি কি চাও আমরা আমাদের ভাই ও আমাদের অভিভাবক ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি এবং অভিশপ্ত পিতাদের অভিশপ্ত সন্তানদের আনুগত্য করি ?

তখন উমর বিন সা আদ তার সৈন্যদলের উদ্দেশ্যে বললো , প্রস্তুত হও , হে আল্লাহর সেনাবাহিনী , আর জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তখন সবাই ঘোড়ায় চড়লো এবং আসরের নামাযের পর ইমাম হোসেইন (আ.) কে আক্রমণ করতে এগিয়ে গেলো।

[ কামিল গ্রন্থে আছে] ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , মহররমের তাসূআহতে (নবম দিনে) , ইমাম হোসেইন (আ.) এবং তার সাথীরা কারবালায় সিরিয়া থেকে আসা সৈন্যদল কর্তৃক সবদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেন এবং তারা তাদের মালপত্র নামিয়ে নিলেন। মারজানাহর সন্তান (উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ) এবং উমর বিন সা আদ তাদের সৈন্যদলের বিশালত্বে খুশী ছিলো এবং ইমাম হোসেইন এবং তার সাথীদেরকে দুর্বল ভাবলো। তারা জানতো যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর কোন সাহায্যকারী ও সহযোগিতাকারী ইরাকে ছিলো না। আমার পিতা সেই নির্যাতিত ভ্রমণকারীর জন্য কোরবান হোক।

যখন উমর বিন সা আদ তার সৈন্যদের ঘোড়ায় চড়ার আদেশ দিল তারা মান্য করলো এবং অগ্রসর হলো যতক্ষণ না ইমাম হোসেইন (আ.) এর তাঁবুগুলোর নিকটবর্তী হলো। [ইরশাদ , কামিল ,তাবারি] ইমাম তার তাবুর সামনে বসে ছিলেন তার তরবারির উপর ঠেস দিয়ে এবং তার মাথা ছিলো তার হাঁটুর উপর এবং তন্দ্রা গিয়েছিলেন। যখন হযরত যায়নাব (আ.) সৈন্যদের হৈচৈ শুনলেন তিনি দৌড়ে গেলেন ইমামের দিকে এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন , ভাইজান , আপনি কি হৈচৈ শুনতে পাচ্ছেন যা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ? ইমাম তার মাথা উঠিয়ে বললেন , আমি এইমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) কে স্বপ্নে দেখলাম এবং তিনি আমাকে বললেন যে , আগামীকাল আমি তার সাথে মিলিত হবো। তা শুনে হযরত যায়নাব (আ.) নিজের চেহারায় আঘাত করতে লাগলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন , তুমি কেঁদো না , হে প্রিয় বোন , চুপ থাকো , তোমার উপর আল্লাহর রহমত হোক।

[তাবারি , ইরশাদ গ্রন্থে আছে] হযরত আব্বাস (আ.) ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে এলেন এবং বললেন , হে ইমাম , সৈন্যরা আমাদের দিকে এসেছে। ইমাম উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন , [ইরশাদ , তাবারি] হে আব্বাস , তোমার জন্য আমার জীবন কোরবান হোক , হে প্রিয় ভাই , ঘোড়ায় চড় এবং তাদের কাছে যাও এবং জিজ্ঞেস করো কী হয়েছে। তারা কী চায় এবং কেন তারা আমাদের দিকে এসেছে।

হযরত আব্বাস , যুহাইর বিন ক্বাইন এবং হাবীব বিন মুযাহির সহ বিশ জনের একটি সৈন্যদল নিয়ে তাদের দিকে গেলেন এবং বললেন , নতুন করে কী হয়েছে এবং তোমরা কী চাও ? তারা বললো , সেনাপতির কাছ থেকে আদেশ এসেছে যে আমরা তোমাদের যেন আদেশ দেই আত্মসমর্পণ করতে অথবা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। আব্বাস উত্তর দিলেন , তাহলে অপেক্ষা করো যেন আমি আবু আব্দুল্লাহকে জানাতে পারি তোমরা যা বলেছো। তারা থামলো এবং বললো , তার কাছে যাও এবং আমরা যা তোমাদের বলেছি জানিয়ে দাও এবং ফিরে আসো তার উত্তর নিয়ে। হযরত আব্বাস (আ.) দ্রুত ঘোড়া চালিয়ে ইমামের কাছে গেলেন এবং তাদের সংবাদ পৌঁছে দিলেন , আর তার সাথীরা সেখানে দাঁড়িয়ে সৈন্যদের সাথে কথা বলতে লাগলেন।

যুহাইর বিন ক্বাইনকে হাবীব বিন মুযাহির বললেন , তুমি যদি তাদের সাথে কথা বলতে চাও , বলো , এবং যদি চাও , আমি তাদের সাথে কথা বলবো। যুহাইর বললেন , যেহেতু আপনি কথা বলা শুরু করেছেন , আপনি বলতে পারেন। তখন হাবীব বিন মুযাহির বললেন , আল্লাহর শপথ , আগামীকাল , কিয়ামতের দিন , আল্লাহর সামনে নিকৃষ্ট যে ব্যক্তি দাঁড়াবে সে হলো যে রাসূল (সা.) এর সন্তান ও তার পরিবারকে এবং তার আহলুল বাইত এবং তার শহরের ধার্মিক লোকদের , যারা মধ্যরাতের নামাযের জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে প্রচুর স্মরণ করে , তাদেরকে হত্যা করবে। উরওয়াহ বিন ক্বায়েস বললো , নিজেকে যত খুশী কষ্ট দাও। এ কথা শুনে যুহাইর বললেন , হে উরওয়াহ , আল্লাহকে ভয় করো , কারণ আমি হিতাকাঙ্ক্ষী , আমি তোমাকে আল্লাহর নামে অনুরোধ করছি হে উরওয়াহ , কারণ তুমি পথভ্রষ্টদের সাহায্যকারী হবে এবং ধার্মিকদের হত্যা করবে। উরওয়াহ বললো , তুমি ঐ পরিবারের শিয়াদের (অনুসারীদের) অন্ত র্ভুক্ত ছিলে না বরং খলিফা উসমানের শিয়া ছিলে। যুহাইর বললেন , এখানে আমার উপস্থিতি কি তোমাকে বুঝাচ্ছে না যে আমি তাদের শিয়াদের একজন ? আল্লাহর শপথ , আমি তাদের একজন নই যারা ইমামকে চিঠি লিখেছে এবং আমি তার কাছে আমার দূত পাঠাই নি এবং না আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বরং আমি পথে ইমামের দেখা পেয়েছি এবং রাসূলকে স্মরণ করেছি এবং তার দিকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। এরপর আমি বুঝতে পারলাম যে তিনি তার শত্রুদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমি তার দলে প্রবেশ করেছি এবং সিদ্ধান্তনিয়েছি তাকে সাহায্য করার জন্য এবং তার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য এবং আমি তার জন্য আমার জীবন কোরবান করবো , এভাবে আমি আল্লাহর ও তার রাসূলের অধিকার পাহারা দিব যা তোমরা পরিত্যাগ করেছো।

আর হযরত আব্বাস (আ.) , তিনি ফিরে এলেন এবং যা তারা তাকে বলেছে , পৌঁছে দিলেন। ইমাম উত্তর দিলেন , যাও যদি পারো তাদের বলো আগামীকাল পর্যন্ততা পিছিয়ে দিতে , যেন আমরা আজ রাতে আমাদের রবের ইবাদত করতে এবং দোআ করতে এবং তওবা করতে পারি , কারণ আল্লাহ জানেন যে আমি নামায , কোরআন তেলাওয়াত ,প্রচুর দোআ করতে এবং ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করতে ভালোবাসি।

হযরত আব্বাস তাদের দিকে গেলেন এবং যখন তিনি ইমামের কাছে ফিরে এলেন তখন উমর বিন সা আদের একজন দূত তার সাথে ছিলো। দূত সেখানে থামলো যেখান থেকে তার কণ্ঠের আওয়াজ শোনা যায় এবং বললো , [ইরশাদ] আমরা আপনাকে আগামীকাল পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এরপর যদি আপনি আত্মসমর্পণ করেন , আমরা আপনাকে সেনাপতি উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে নিয়ে যাবো এবং যদি আপনি প্রত্যাখ্যান করেন আমরা আপনাকে ছাড়বো না। একথা বলে সে ফিরে গেল।

পরিচ্ছেদ - ১৭