শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45276
ডাউনলোড: 4001

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45276 / ডাউনলোড: 4001
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

আশুরার দিনের ঘটনাবলী

দুই বাহিনীর সমর সজ্জা এবং কুফার জনগণের মাঝে ইমামের প্রতিবাদ ও যুক্তিতর্ক পেশ

ইমাম হোসেইন (আ.) তার সাথীদের নিয়ে ফজরের নামায পড়লেন। নামায শেষে তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং একটি সংক্ষিপ্ত খোতবা দিলেন। তিনি আল্লাহর হামদ ও তাসবীহ করার পর বললেন , নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান ও মহান আল্লাহ চেয়েছেন যেন তোমরাও আমার মত শহীদ হও , অতএব সহ্য করো। ”

এ বর্ণনাটি ইসবাত আল ওয়াসিইয়াহ ’ তে মাসউদী উল্লেখ করেছেন।

[ মালহুফ ’ গ্রন্থে আছে] এরপর ইমাম নবী (সা.) এর ঘোড়া মুরতাজায ’ কে আনতে বললেন এবং এর পিঠে সওয়ার হলেন এবং তার সাথীদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলেন এবং তারা যার যার অবস্থান নিলেন।

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] তার সাথে ছিলো বত্রিশ জন অশ্বারোহী এবং চল্লিশ জন পদাতিক সৈন্য।

ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) থেকে বর্ণিত আছে যে , তার সাথে ছিলো পঁয়তাল্লিশ জন অশ্বারোহী এবং একশত পদাতিক সৈন্য। এছাড়াও এ সম্পর্কে অন্যান্য সংবাদ পাওয়া যায়।

ইসবাত আল ওয়াসিইয়াহ ’ তে বর্ণিত আছে যে , সেদিন ইমামের সাথে লোকজনের সংখ্যা ছিলো একষট্টি জন। সর্বশক্তিমান ও মহান আল্লাহ তার ধর্মকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাহায্য করেছিলেন এক হাজার ব্যক্তি দিয়ে। ” যখন ইমাম (আ.) কে জিজ্ঞেস করা হলো এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে , তিনি বললেন যে , এক হাজারের মধ্যে ছিলেন তালুতের সাহাবী তিনশত তের জন। বদরের যুদ্ধে নবী (সা.) এর সাথী ছিলো তিনশত তেরজন এবং তিনশত তেরজন হবে ইমাম আল মাহদী (আ.) এর সাথী। আর বাকী একষট্টি জন কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে শহীদ হন।

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] ইমাম হোসেইন (আ.) যুহাইর বিন ক্বাইনকে ডান দিকের বাহিনীর দায়িত্ব দেন এবং হাবীব বিন মুযাহিরকে বাম দিকের এবং সেনাবাহিনীর মূল পতাকা দেন তার ভাই আব্বাস (আ.) কে। তারা তাঁবুর সামনে তাঁবুর দিকে তাদের পিঠ রেখে অবস্থান নিলেন। এরপর ইমাম আদেশ দিলেন যেন তাঁবুর পিছনে রাখা জ্বালানী কাঠ গর্তে রাখা হয় যা রাতে খোঁড়া হয়েছিলো এবং এতে আগুন লাগাতে বললেন , পাছে শত্রুরা পিছন দিক থেকে আক্রমণ করে।

দশ তারিখ সকালে উমর বিন সা আদ তার সৈন্যদের সাজালো। [কামিল , তাবারি] সে আব্দুল্লাহ বিন যুহাইর আযদিকে মদীনা বাহিনীর দায়িত্ব দিল। এছাড়া সে ক্বায়েস বিন আল আশআসকে রাবীয়াহ ও কিনদা গোত্রের বাহিনীর দায়িত্ব দিল এবং রাবা ’ , মাযহাজ ও আসাদ গোত্রের দায়িত্ব দিলো আব্দুর রহমান বিন আবু সাবারাহ হানাফিকে এবং তামীম ও হামাদান গোত্রের দায়িত্ব দিল আল হুর বিন ইয়াযীদ রিয়াহিকে। আল হুর ছাড়া তাদের সবাই উমর বিন সা আদের সাথে ছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাত পর্যন্ত। তবে তিনি (হুর) ইমামের কাছে চলে গিয়েছিলেন এবং তার সাথে থেকে শাহাদাত অর্জন করেছিলেন। আমর বিন হাজ্জাজ যুবাইদিকে উমর ডান শাখার দায়িত্ব দিলো , শিমর বিন যিলজাওশানকে বাম শাখার এবং উরওয়াহ বিন ক্বায়েস আহমাসিকে অশ্বারোহীদলের প্রধান , শাম বিন রাব ’ ঈ ইয়ারবুঈকে পদাতিক সৈন্যদের প্রধান এবং সেনাদলের পতাকা দিলো তার দাস দুরাইদকে।

আবু মাখনাফ বর্ণনা করেন আমর বিন মুররাহ জামালি থেকে , তিনি বলেন আবু সালাহ হানাফি তাকে বলেছেন যে: আব্দুর রাহমান বিন আবদ রাব্বাহ আনসারির এক দাস তাকে বলেছে যে , আমি আমার মালিকের সাথে ছিলাম , যখন সেনাদল যুদ্ধের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে ফিরলো , তখন ইমাম একটি তাঁবু গাড়ার আদেশ দিলেন এবং একটি পানির মশক আনতে বললেন এবং বড় একটি পেয়ালা পানিতে ভর্তি করতে বললেন। তিনি তাঁবুতে প্রবেশ করলেন এবং নূরাহ ব্যবহার করলেন (প্রাচীন দিনের চুন ও পানির মিশ্রন , চুল উঠিয়ে ফেলার জন্য) । আমার মালিক আব্দুর রাহমান এবং বুরাইর বিন খুযাইর হামাদানি ইমামের তাঁবুর দরজায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং প্রত্যেকেই চাইলেন যে তারা ইমামের পরে সুযোগ পেলে নূরাহ ব্যবহার করবেন। আব্দুর রহমানের সাথে বুরাইর কৌতুক করলেন। এতে তিনি বললেন , আমাকে বিরক্ত করো না , কারণ এখন অনর্থক কথা বলার সময় নয়। ” বুরাইর বললেন , “ যারা আমাকে জানে তারা ভালোভাবে জানে যে আল্লাহর শপথ আমি কখনো ফালতু আড্ডা দেই নি আমার যুবক বয়সে এবং না আমার বৃদ্ধ বয়সে । বরং আমি আনন্দ অনুভব করছি তা ভেবে যা আমার জন্য আসছে। আল্লাহর শপথ , সেনাদল তাদের তরবারিগুলো দিয়ে আমাদের বিদ্ধ করবে এবং আমি তাদের তরবারির মাধ্যমে নিহত হওয়াকে পছন্দ করছি। ” এরপর ইমাম তার নূরাহ ব্যবহার শেষ করলেন , আমরা গেলাম এবং নূরাহ ব্যবহার করলাম , এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) তার ঘোড়ায় চড়লেন এবং কোরআন আনতে বললেন এবং তা ইমাম নিজের সামনে রাখলেন। ইমামের সাথীরা তার সামনে থেকে কঠিন যুদ্ধ করলেন এবং যখন আমি তাদেরকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখলাম তখন (ভয়ে) তাদেরকে পিছনে ফেলে পালিয়ে গেলাম।

আবু মাখনাফ বর্ণনা করেছেন আবু খালিদ কাবেলি থেকে এবং শেইখ মুফীদ বর্ণনা করেছেন আমাদের অভিভাবক ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) থেকে যে: যখন সকালে সেনাদল ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে অগ্রসর হলো তখন তিনি তার দুহাত আকাশের দিকে তুললেন এবং বললেন , হে আল্লাহ , তুমি আমার শক্তি সব কঠিন অবস্থায় এবং আমার আশা সব দুর্যোগে এবং তুমি আমার সাহায্যকারী এবং মজুদ শক্তি সব অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে যা আমার ওপরে আপতিত হয়। যত দুঃখ হৃদয়ে আসে , সমাধানের পথ বন্ধ হয় এবং বন্ধুরা চলে যায় এবং শত্রুরা উল্লাস করে , আমি সেগুলো আপনার কাছে এনেছি এবং আপনার কাছে সেসব বিষয়ে অভিযোগ করছি এবং আপনি ছাড়া আমি কারও দিকে ফিরি না। আপনি সেগুলো দূর করে দিয়েছেন এবং তা যথেষ্ট। আপনি সব রহমতের মালিক এবং সব গুণাবলীর অধিকারী , আপনি সব আশার শেষ আশা। ”

এরপর সৈন্যবাহিনী ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে অগ্রসর হলো এবং তার তাবুগুলো ঘেরাও করে ফেললো।

[তাবারি বর্ণনা করেছেন] আযদি বলেন যে , আব্দুল্লাহ বিন আসিম বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন যাহহাক মাশরিকি থেকে যে , তিনি বলেছেন : যখন সৈন্যবাহিনী আমাদের দিকে অগ্রসর হল এবং গর্তটি দেখতে পেলো যা আমরা খুঁড়েছিলাম ও আগুন দিয়ে ভর্তি করেছিলাম , তখন তারা আমাদেরকে পিছন দিয়ে আর আক্রমণ করতে পারলো না। হঠাৎ এক ব্যক্তি একটি ঘোড়ায় চড়ে অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় আমাদের দিকে এলো এবং কোন কথা না বলে তাঁবুগুলো পর্যবেক্ষণ করলো। এরপর সে পিছনে ফিরে গেলো এবং চিৎকার করে বললো , হে হোসেইন , কিয়ামতের আগেই তুমি আগুনের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়েছো। ” (আউযুবিল্লাহ) । ইমাম বললেন , সে কি শিমর বিন যিলজাওশান ?

সাথীরা হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলেন। [ইরশাদ] ইমাম বললেন , হে ছাগল চড়ানো মহিলার সন্তান , তুমি এর জন্য আরও বেশী যোগ্য। ”

মুসলিম বিন আওসাজা তার দিকে একটি তীর ছোঁড়ার চেষ্টা করলেন কিন্তু ইমাম তাকে থামালেন। মুসলিম বললেন , দয়া করে তার দিকে তীর ছুঁড়তে দিন কারণ এ বদমাশটি সবচেয়ে বেশী অত্যাচারীদের একজন , আল্লাহ তাকে হত্যা করা আমার জন্য সম্ভব করেছেন। ”

ইমাম বললেন , তোমার তীর ছুঁড়ো না , আমি পছন্দ করি না যে যুদ্ধ আমার দিক থেকে শুরু হোক। ”

[তাবারি বর্ণনা করেছেন] ইমাম হোসেইনের একটি ঘোড়া ছিল , যার নাম ছিলো লাহিক্ব , সেটি তিনি তার ছেলে আলীকে (আকবারকে) দিয়েছিলেন। যখন পদাতিক বাহিনী নিকটবর্তী হল , ইমাম তার উট চেয়ে পাঠালেন এবং তাতে চড়ে উচ্চ কণ্ঠে বললেন , যা বেশীরভাগ মানুষ শুনতে পেলো , হে জনতা , আমি যা বলছি তা শোন এবং তাড়াহুড়ো করো না , যেন আমি (উপদেশ দেয়ার) দায়িত্ব পালন করতে পারি যা আমার কর্তব্য এবং যেন আমি তোমাদের দিকে আমার আগমন সম্পর্কে আমার যুক্তি পেশ করতে পারি। এরপর যদি তোমরা আমার যুক্তি গ্রহণ করো এবং আমার কথা বিশ্বাস করো এবং আমার প্রতি ন্যায়বিচার করো তাহলে তোমরা সৌভাগ্যবান হবে এবং আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তোমাদের কোন ওজর থাকবেনা এবং যদি তোমরা আমার কথা গহর ণ না করো এবং আমার সাথে অন্যায় আচরণ করো তাহলে

) فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُونِ(

তোমাদের পরিকল্পনা ও তোমাদের সাথীদেরকে জড় করো এবং তোমাদের পরিকল্পনা যেন দ্বৈত অর্থ বহন না করে , তারপর তা আমার উপর প্রয়োগ করো এবং (আমাকে) কোন সময় দিও না। [সূরা ইউনূস: ৭১]

) إِنَّ وَلِيِّيَ اللَّهُ الَّذِي نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِين(

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার ওয়ালি যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং তিনিই সৎকর্মশীলদের দেখাশোনা করেন। [সূরা আ ’ রাফ: ১৯৬]

যখন তার বোনরা তার কথা শুনতে পেলেন তারা তার কন্যাদের সাথে কাঁদতে ও বিলাপ করতে লাগলেন। ইমাম তার ভাই আব্বাস বিন আলী (আ.) এবং তার সাথে তার সন্তান আলী আকবারকে পাঠালেন তাদের সান্ত্বনা দিতে ও শান্ত করতে। এরপর তিনি বললেন , আমার জীবনের শপথ , তাদের আরও অনেক কান্না বাকী আছে। ”

যখন তারা চুপ করলেন [ইরশাদ] ইমাম আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ করলেন এবং তাঁকে স্মরণ করলেন যেভাবে তাঁকে স্মরণ করা উচিত। এরপর তিনি সালাম পাঠালেন রাসূলুল্লাহ (সা.) , ফেরেশতাদের ও নবী (আ.) দের কাছে। তিনি এমন সুন্দর ভাবে কথা বললেন যে কেউ তার আগে তা করে নি এবং তার পরেও নয়। এরপর তিনি বললেন: