শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45281
ডাউনলোড: 4001

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45281 / ডাউনলোড: 4001
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

আশুরার দিনে ইমাম হোসেইন (আ.) এর খোতবা

আম্মা বা আদ , বিবেচনা করো আমার পরিবার সম্পর্কে এবং গভীরভাবে ভাবো আমি কে , এরপর নিজেরদের তিরস্কার করো। তোমরা কি মনে করো যে আমাকে হত্যা করা এবং আমার পবিত্রতা ও সম্মান লুট করা তোমাদের জন্য বৈধ ? আমি কি তোমাদের নবীর নাতি , তার ওয়াসী ও তার চাচাতো ভাইয়ের সন্তান নই , যিনি ছিলেন বিশ্বাস গ্রহণে সবার আগে এবং সাক্ষী ছিলেন সে সব কিছুর ওপরে যা নবী আল্লাহর কাছ থেকে এনেছেন ? শহীদদের সর্দার হামযা কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না ? জাফর , যিনি বেহেশতে দুপাখা নিয়ে উড়েন , তিনি কি আমার চাচা নন ? নবীর হাদীস কি তোমাদের কাছে পৌঁছে নি যেখানে তিনি আমার সম্পর্কে ও আমার ভাই সম্পর্কে বলেছেন আমরা দুজন জান্নাতের যুবকদের সর্দার ? তাই যদি আমি যা বলছি তার সাথে একমত হও , এবং নিশ্চয়ই আমি যা বলেছি তা সত্য ছাড়া কিছু নয় , তাহলে তা উত্তম , কারণ আল্লাহর শপথ , যে সময় থেকে আমি বুঝেছি আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের অপছন্দ করেন তখন থেকে আমি কখনোই কোন মিথ্যা বলিনি। আর যদি তোমরা আমি যা বলছি তা বিশ্বাস না করো , তাহলে তোমাদের মাঝে নবীর জীবিত সাহাবীগণ আছে , তাদের কাছে যাও এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করো এবং তারা আমার বক্তব্যের সত্যতার সাক্ষী দিবে। জাবির বিন আব্দুল্লাহ আনসারি , আবু সাঈদ খুদরি , সাহল বিন সাদ সা য়েদি , যায়েদ বিন আরক্বাম এবং আনাস বিন মালিককে জিজ্ঞেস করো , তারা তোমাদের বলবে যে তারা আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে আমার ও আমার ভাই সম্পর্কে এই হাদীস শুনেছে। এটি কি তোমাদের জন্য আমার রক্ত ঝরানোর চাইতে যথেষ্ট নয় ?

তখন অভিশপ্ত শিমর বিন যিলজাওশান বললো , আমি আল্লাহর ইবাদত করি ঠোঁট দিয়ে এবং তুমি যা বলছো তা আমি বুঝি না। ” এ কথা শুনে হাবীব বিন মুযাহির বললেন , আমি দেখছি তুমি আল্লাহর ইবাদত করো সত্তুর ধরনের সন্দেহ নিয়ে এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি সত্য কথা বলেছো এবং তুমি বুঝতে পারো না ইমাম যা বলেন , কারণ আল্লাহ একটিতখা(মর্র ) মোহর তোমার হৃদয়ের ওপরে মেরে দিয়েছেন। ”

ইমাম বললেন , যদি তোমরা এতে সন্দেহ পোষণ করো , তোমরা কি এতেও সন্দেহ করো যে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাতি ? আল্লাহর শপথ , পূর্বে ও পশ্চিমে , আমি ছাড়া নবীর কোন নাতি নেই তোমাদের মধ্যে অথবা অন্যদের মধ্যে। দুর্ভোগ তোমাদের জন্য , আমি কি তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে হত্যা করেছি যে তোমরা তার প্রতিশোধ নিতে চাও ? অথবা আমি কি কারো সম্পদ বেদখল করেছি অথবা কাউকে আহত করেছি যার প্রতিশোধ তোমরা আমার উপর নিতে চাও ?

যখন কেউ তাকে উত্তর দিলো না , তিনি উচ্চ কণ্ঠে বললেন , হে শাবাস বিন রাব ’ ঈ , হে হাজ্জার বিন আবজার , হে ক্বায়েস বিন আল আশআস , হে ইয়াযীদ বিন হুরেইস , তোমরা কি আমার কাছে চিঠি লিখো নি যে , ফল পেকেছে এবং আশপাশের ভূমিতে ফুল ফুটেছে এবং একটি বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে আসুন , যা আমার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ?

তারা উত্তর দিলো যে তারা এ ধরনের কোন চিঠি লিখে নি। ইমাম বললেন , সুবহানাল্লাহ , আল্লাহর শপথ অবশ্যই তোমরা তা লিখেছিলে। ”

এরপর তিনি বললেন , হে জনতা , এখন যদি তোমরা আমার আগমনকে পছন্দ না করো তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও যেন আমি কোন আশ্রয়ের জায়গায় চলে যেতে পারি। ”

ক্বায়েস বিন আল আশআস বললো , তুমি যা বলছো তা আমরা জানি না , আমার চাচাতো ভাইদের (বনি উমাইয়ার) কাছে আত্মসমর্পণ করো , তারা তোমার সাথে সেভাবে আচরণ করবে যেভাবে তুমি চাও। ” ইমাম বললেন , আল্লাহর শপথ , নিকৃষ্ট মানুষের মত আমি তোমাদের হাতে হাত দিবো না , না আমি পালিয়ে যাবো কোন দাসের মত। ”

এরপর তিনি উচ্চকণ্ঠে বললেন , হে আল্লাহর দাসেরা ,

) وَإِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ أَنْ تَرْجُمُونِ(

নিশ্চয়ই আমি আমার ও তোমাদের রবের কাছে আশ্রয় নিচ্ছি , পাছে তোমরা আমাকে পাথর মারো (হত্যা করো) । [সূরা দুখান: ২০]

) إِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ مِنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ(

আমি আশ্রয় নিই আমার ও তোমাদের রবের কাছে , প্রত্যেক দাম্ভিক থেকে , যে হিসাব দিনে বিশ্বাস করে না। [সূরা মু ’ মিন: ২৭]

এরপর ইমাম তার উট থেকে নেমে পড়লেন এবং উক্ববাহ বিন সাম ’ আনকে বললেন এর পাগুলো বাঁধতে।

যুহাইর বিন ক্বাইন কুফার লোকদের মাঝে বক্তব্য রাখলেন

[তাবারির গ্রন্থে] আযদি বলেন যে , আসাদ শামি আমাকে তার গোত্রের কাসির বিন আব্দুল্লাহ শা ’ আবির কাছ থেকে , যে কারবালায় উপস্থিত ছিল , বর্ণনা করেছে যে , যখন আমরা ইমাম হোসেইন (আ.) এর উপর অবরোধ আরোপ করলাম , মোটা লেজ বিশিষ্ট একটি ঘোড়ায় চড়ে যুহাইর বিন ক্বাইন আমাদের দিকে এলো , সে অস্ত্রে সুসজ্জিত ছিলো। সে বললো , আল্লাহর ক্রোধ সম্পর্কে সচেতন হও। একজন মুসলিমের উপর বাধ্যতামূলক যে সে তার মুসলমান ভাইকে সতর্ক করবে। আমরা এখনও ভাই এবং একই ধর্মের অনুসারী। যতক্ষণ পর্যন্তনা তরবারি আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয় ততক্ষণ আমরা একই বিশ্বাসের অধিকারী , তাই তোমাদের উপদেশ দেয়া আমার উপর বাধ্যতামূলক কিন্তু যখন তরবারি আমাদের মাঝে চলে আসবে তখন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে এবং তখন আমরা হবো আরেক জাতি এবং তোমরা অন্য এক। আল্লাহ আমাদেরকে পরীক্ষা করেছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বংশধর দিয়ে , যেন তিনি জানতে পারেন তোমরা এবং আমরা কী করি। আমরা এখন তোমাদের আহ্বান করছি তাকে (ইমাম হোসেইনকে) সাহায্য করার জন্য এবং তোমাদেরকে আহ্বান করছি উচ্ছৃঙ্খল পিতার উচ্ছৃঙ্খল সন্তান উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে পরিত্যাগ করার জন্য , যার কাছ থেকে তোমরা খারাপ ছাড়া আর কিছু দেখোনি। তারা তোমাদের চোখে লোহার রড বিদ্ধ করে , তোমাদের হাত ও পা কেটে ফেলে , তারা তোমাদেরকে ক্রুশ বিদ্ধ করে এবং তোমাদের কান ও নাক কেটে ফেলে। তারা তোমাদের মাঝে ধামিক ও বুদ্ধিমানদের হত্যা করে যেমন , হুজর বিন আদি ও তার সাথী হানি বিন উরওয়াহ এবং তার মতো অন্যদের। ” বর্ণনাকারী বলে যে , যখন তারা তার বক্তব্য শুনলো তারা যুহাইরকে গালাগালি করতে লাগলো এবং উবায়দুল্লাহর প্রশংসা করতে লাগলো এবং বললো , আল্লাহর শপথ , আমরা এখান থেকে পিছু হটবো না যতক্ষণ পর্যন্তনা আমরা তোমার অভিভাবক ও তার সাথে যারা আছে তাদের সবাইকে হত্যা করি অথবা তাকে তার সাথীদেরসহ সেনাপতি উবায়দুল্লাহর কাছে পাঠাই যুদ্ধ ছাড়া। ”

তখন যুহাইর বললেন , হে আল্লাহর দাসেরা , ফাতিমা (আ.) এর সন্তান সুমাইয়ার সন্তানের চাইতে বন্ধুত্বের ও সাহায্যের জন্য যোগ্যতর। যদি তোমরা তাকে সাহায্য না করো , তাহলে আল্লাহর শপথ , তাকে আশ্রয় দাও এবং তাকে হত্যা করো না। তাকে তার চাচাতো ভাই ইয়াযীদের কাছে নিয়ে যাও। আমার জীবনের শপথ , ইয়াযীদ তোমাদের উপর খুশী হবে যদি তোমরা তাকে হত্যা না কর। ” তা শুনে শিমর তার দিকে একটি তীর ছুঁড়ে বললো , চুপ করো , তোমার কণ্ঠ বন্ধ হোক , নিশ্চয়ই তুমি তোমার অতিরিক্ত বক্তৃতায় আমাদের ক্লান্তকরে ফেলেছো। ” যুহাইর বললেন , হে বেদুইনের সন্তান , আমি তোমার সাথে কথা বলছি না। নিশ্চয়ই তুমি একটা পশু এবং আল্লাহর শপথ , আমি মনে করি তুমি কোরআনের দুটি আয়াতও সঠিকভাবে তেলাওয়াত করতে পারো না। তাই আমি তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি কিয়ামতের দিনে অপমান ও যন্ত্রনাদায়ক আযাবের। ” শিমর বললো , খুব শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে ও তোমার অভিভাবককে হত্যা করবে। ” যুহাইর বললেন , তুমি কি আমাকে মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছো ? আল্লাহর শপথ , ইমামের সাথে মৃত্যুবরণ করা আমার কাছে বেশী পছন্দনীয়। ”

এরপর যুহাইর অন্য লোকদের দিকে ফিরলো এবং বললো , হে আল্লাহর দাসেরা , সতর্ক হও , হয়তো এই ঘৃণ্য অত্যাচারীরা এবং তাদের সহযোগীরা তোমাদের ধোঁকা দিবে। আল্লাহর শপথ , মুহাম্মাদ (সা.) এর শাফায়াত তাদের কাছে পৌঁছবে না যারা তার বংশের ও পরিবারের রক্ত ঝরাবে এবং যারা তাদেরকে সাহায্য করে ও তাদের পবিত্রতা রক্ষা করে তাদেরকে হত্যা করবে। ”

তখন এক ব্যক্তি উচ্চকণ্ঠে তাকে ডেকে বললো , আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম হোসেইন) বলেছেন যে , আমার জীবনের শপথ , হে যুহাইর , ফেরত আসো। নিশ্চয়ই তুমি উপদেশ দিয়েছো এবং তিরস্কার করেছো , ফেরাউনের জাতির ভেতর ঐ বিশ্বাসীর মত , যে তার সম্প্রদায়কে উপদেশ দিয়েছিলো ও তিরস্কার করেছিলো। ”

বুরাইর বিন খুযাইরের বক্তব্য

বিহারুল আনওয়ার ’ -এ বর্ণিত আছে যে মুহাম্মাদ বিন আবু তালিব বলেছেন যে , উমর বিন সা আদের সেনাবাহিনী ঘোড়ায় চড়লো এবং সামনে অগ্রসর হলো। ইমামও তার ঘোড়ায় চড়লেন এবং তার কিছু সাথীদের নিয়ে তাদের দিকে অগ্রসর হলেন। তিনি বুরাইর বিন খুযাইরকে , যিনি তার সামনে ঘোড়ার পিঠে চলছিলেন , বললেন তুমি এ লোকগুলোর সাথে কথা বলতে পারো , তাই বুরাইর সামনে এগিয়ে গেলেন এবং বললেন , হে জনতা , আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর আমানত তোমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। তারা তার বংশধর , পরিবার , কন্যাগণ এবং আহলুল বাইত। তাই বলো তোমাদের হৃদয়ে কী আছে এবং কিভাবে তাদের সাথে আচরণ করতে চাও ? তারা বললো , আমরা চাই তাকে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের হাতে তুলে দিতে , যেন সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাকে নিয়ে কী করতে হবে। ” বুরাইর বললেন , তোমরা কি একমত নও যে তোমরা তাকে চলে যেতে দিবে যেখান থেকে তিনি এসেছেন ? হে কুফার জনগণ , তোমরা কি চিঠিগুলোর কথা ভুলে গেছো যা তোমরা তাকে লিখেছিলে এবং সেই অঙ্গীকারের কথা যা তোমরা তাকে করেছিলে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ? তোমাদের জন্য আক্ষেপ , তোমরা নবীর আহলুল বাইতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছো এবং অঙ্গীকার করেছো তার জন্য জীবন উৎসর্গ করবে এবং যখন তারা এসেছেন , তোমরা চাচ্ছো তাকে যিয়াদের সন্তানের কাছে তুলে দিতে এবং তার জন্য পানি পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছো ? নবীর ইন্তেকালের পর কত খারাপ ভাবেই না তোমরা তার বংশধরের সাথে আচরণ করেছো , তোমাদের কী হয়েছে ? আল্লাহ যেন কিয়ামতের দিন তোমাদের পিপাসা না মেটান কারণ নিশ্চয়ই তোমরা একদল পরিপূর্ণ বদমাশ মানুষ। ”

কুফার লোকদের মাঝ থেকে কিছু লোক বললো , তুমি কী বলছো আমরা বুঝি না। ” বুরাইর বললেন , সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর , যে আমাকে তোমাদের মাঝে সঠিক দৃষ্টি সম্পন্ন করেছেন। হে আল্লাহ , আমি তাদের বিষয়গুলো থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে তোমার কাছে এসেছি , হে আল্লাহ তাদের ভিতরে ভীতির সৃষ্টি করো যতক্ষণ না তারা তোমার কাছে উপস্থিত হয় যেন তুমি তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হও। ” তা শুনে তারা তার দিকে তীর ছুঁড়তে লাগলো এবং বুরাইর পিছনে হটে এলেন। ইমাম আরও অগ্রসর হলেন এবং তাদের সামনে দাঁড়ালেন এবং তাদের সারিগুলো দিকে তাকালেন শান্তবৃষ্টির মত। তিনি উমর বিন সা আদকে কুফার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন এবং বললেন , ধন্যবাদ আল্লাহর প্রাপ্য , যিনি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং একে মৃত্যু ও ক্ষয়ের বাড়ি বানিয়েছেন এবং যিনি এর মানুষদেরকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করেন। সে ব্যক্তি ধোঁকা খেয়েছে যে এই পৃথিবীর প্রতারণার শিকার হয়েছে , কারণ যে এর উপর নির্ভর করে সে তাকে হতাশ করে। যে এখানে আকাঙ্ক্ষা করে সে তাকে রিক্ত হস্তকরে। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমরা জড়ো হয়েছো এমন একটি কাজের জন্য যা তোমাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ আনবে। তিনি তোমাদের দিক থেকে তার চেহারা ঘুরিয়ে নিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তার ক্রোধে ঢেকে দিয়েছেন এবং তোমাদের কাছ থেকে তার রহমত সরিয়ে নিয়েছেন। তাই আমাদের রব হলেন শ্রেষ্ঠ রব ও আর তোমরা হচ্ছো নিকৃষ্টতম দাস। তোমরা আল্লাহকে মেনে চলার অঙ্গীকার করেছো এবং তার রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) কে বিশ্বাস করেছো। এরপরও তোমার তার পরিবারকে এবং বংশধরকে আক্রমণ করেছো এবং তাদেরকে হত্যা করতে চাও। [ইরশাদ] শয়তান তোমাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং তোমাদেরকে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভুলিয়ে দিয়েছে। দুর্ভোগ তোমাদের জন্য , তোমাদের পথ ও লক্ষ্যের উপর। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তার কাছে ফেরত যাবো। এ এক জাতি যারা বিশ্বাস গ্রহণের পর কুফুরী গ্রহণ করেছে , তাই বিদায় হে অত্যাচারী জাতি। ”

তখন উমর বিন সা আদ বললো , তোমাদের জন্য আক্ষেপ , তাকে উত্তর দাও , কারণ সে আলীর সন্তান। সে যদি সারা দিন তোমাদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে তার বক্তব্য শেষ হবে না , না সে ক্লান্ত হবে । ” তখন শিমর এগিয়ে এলো এবং বললো , হে হোসেইন , তুমি কী বলছো ব্যাখ্যা কর যেন আমরা বুঝতে পারি। ” ইমাম বললেন , আমার বক্তব্যের মূল কথা হল যে আমি তোমাদের বলছি আল্লাহকে ভয় করার জন্য এবং আমাকে হত্যা করো না। কারণ আমাকে হত্যা ও আমার পবিত্রতা ধ্বংস করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। কারণ আমি তোমাদের নবী (সা.) এর কন্যার সন্তান এবং আমার নানী খাদিজা (আ.) , তোমাদের নবীর স্ত্রী। তোমরা হয়তো আমার নানাকে বলতে শুনে থাকবে যে , হাসান এবং হোসেইন বেহেশতের যুবকদের সর্দার। ”

বিহারুল আনওয়ার ’ -এ আছে যে মানাক্বিব ’ -এ বর্ণনার ক্রমধারাসহ বর্ণিত আছে যে , আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসান তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন , তিনি তার বাবা থেকে , তিনি আব্দুল্লাহ থেকে যে , তিনি বলেছেন যে , উমর বিন সা আদ তার সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত করলো ইমাম হোসেইন (আ.) কে আক্রমণ করার জন্য এবং সারিবদ্ধ করলো এবং তাদের সাজালো এবং যথাযথ জায়গায় পতাকা উড়ালো এবং ডান ও বাম শাখার নেতৃত্বে অধিনায়ক নির্বাচন করার পর সে তার সেনাবাহিনীর দিকে ফিরলো এবং তাদেরকে তাদের যার যার জায়গায় দৃঢ়ভাবে অবস্থান করতে বললো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) কে ধরতে বললো। এরপর তারা ইমাম হোসেইন (আ.) কে সবদিক থেকে ঘেরাও করে ফেললো। তিনি বের হয়ে এলেন এবং তাদের কাছে এগিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে চুপ থাকার ইঙ্গিত করলেন , কিন্তু তারা তা শুনতে অস্বীকার করলো। তখন ইমাম বললেন , তোমাদের জন্য দুর্ভোগ , তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা চুপ করছো না এবং আমি যা বলছি তা শুনছো না ? আমি তোমাদেরকে ধার্মিকতার পথে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যে আমাকে মান্য করবে সে প্রজ্ঞাবান হবে। আর যে আমাকে মান্য করবে না সে ধ্বংস হবে। তোমরা সবাই আমার অবাধ্য হচ্ছো এবং আমার কথায় কান দিচ্ছো না। এর কারণ হলো তোমরা তোমাদের পেট হারামে পূর্ণ করেছো এবং তোমাদের হৃদয়গুলোতে মোহর মারা হয়েছে। আক্ষেপ তোমাদের জন্য। তোমরা কি ন্যায়পরায়ণ নও এবং শুনতে অক্ষম ?

এ কথা শুনে লোকেরা পরস্পরকে চুপ না থাকার জন্য বকাঝকা করতে লাগলো। তখন ইমাম এক খোতবা দিলেন যা , ইনশাআল্লাহ এর পরে উল্লেখ করা হবে (যেভাবে সাইয়েদ ইবনে তাউস ‘ মালহুফ ’ -এ উল্লেখ করেছেন) ।

এরপর তিনি ডাকলেন , উমর বিন সা আদ কোথায় ? কেউ তাকে ডাকলো , কিন্তু সে ইমামের মুখোমুখি হতে অপছন্দ করলো , ইমাম তাকে বললেন , হে উমর , তুমি কি আমাকে হত্যা করতে চাও যেন অবৈধ পিতার অবৈধ সন্তান তোমাকে রেই ও জুরজানের শাসনভার দেয় ? আল্লাহর শপথ , তোমার এই চাওয়া কখনোই পূরণ হবে না , কারণ আমার (হত্যার) পর তুমি কখনো আনন্দ পাবে না , না এ পৃথিবীতে না আখেরাতে। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি কুফাতে একটি তরবারির মাথায় তোমার মাথা এবং শিশুরা এর দিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছে। ”

উমর ইমামের কথায় খুবই ক্রোধান্বিত হল। সে তখন তার চেহারা তার দিক থেকে ফিরিয়ে তার সেনাবাহিনীকে বললো , তোমরা কিসের জন্য অপেক্ষা করছো ? তাদের আক্রমণ করো , কারণ তারা এক লোকমা খাবার ছাড়া কিছু নয়। ”