শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45436
ডাউনলোড: 4015

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45436 / ডাউনলোড: 4015
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

কুফাবাসীদের প্রতি ইমাম হোসেইন (আ.) এর বক্তব্য

সাইয়েদ ইবনে তাউস বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তার উটে চড়লেন (অন্যরা বলেন তার ঘোড়ায়) এবং তাদের ইশারা করলেন চুপ করার জন্য। এরপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ ও মর্যাদা বর্ণনা করলেন যা তার প্রাপ্য। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় সালাম পাঠালেন ফেরেশতা , নবী ও রাসূলদের উপর। তারপর বললেন , হে জনতা , তোমরা যেন ধ্বংস হও , দুর্দশাগ্রস্ত হও। তোমরা উৎসাহের সাথে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলে তোমাদের সাহায্য করার জন্য এবং আমরা তা করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হয়েছি। কিন্তু তোমরা এখন সে তরবারিগুলো কোষমুক্ত করেছো যা আমরা তোমাদের দিয়েছি এবং তোমরা আমাদের জন্য আগুন জ্বালিয়েছো যা আমরা তোমাদের ও আমাদের শত্রুদের জন্য জ্বালিয়েছিলাম। তোমরা তোমাদের শত্রুদের পক্ষ নিয়েছো এবং তাদের সাথে থেকে তোমাদের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অগ্রসর হয়েছো , যদিও তারা তোমাদের সাথে ন্যায়পরায়ণ আচরণ করে নি , না তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন দয়া ও সদয় আচরণ আশা কর। তোমাদের উপর শত দুর্ভোগ আসুক। তোমরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো যখন তরবারিগুলো এখনও তাদের খাপে রয়েছে , হৃদয়গুলো শান্তিতে আছে , মতামতগুলো যথাযথভাবে স্পষ্ট এবং ভুল থেকে মুক্ত। কিন্তু তোমরা পঙ্গপালের মত , যারা যুদ্ধের দিকে ” দ্রুত অগ্রসর হয়েছে এবং মথের (প্রজাপতি) মত , একজনের উপর আরেকজন যেমন পড়ে। তোমরা ধ্বংস হও , হে যারা দাসীদের প্রেমিক , যারা দলত্যাগ করেছো , যারা কোরআন পরিত্যাগ করেছো , যারা সঠিক বক্তব্যকে বদলে নিয়েছো , যারা খারাপের স্তম্ভ , হে যারা শয়তানদের দ্বারা উস্কানি পাচ্ছো এবং যারা আসমানী আদেশ ছিন্নকারী , তোমরা তাদের পক্ষ নিচ্ছো এবং আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো ? হ্যাঁ , নিশ্চয়ই প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করা তোমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য , যা তোমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তা থেকে শাখা বেরিয়েছে। তোমরা নোংরা এবং এর বিস্বাদ ফল এর বপনকারীর গলায় আটকে যায় এবং তা অত্যাচারীদের কাছে আনন্দের। সাবধান , এখন অবৈধ পিতার অবৈধ সন্তান (উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ) আমাকে তরবারি কোষমুক্ত করা ও অপমান সহ্য করার মাঝে স্থাপন করেছে এবং আমরা অপমান গ্রহণ করবো তা কখনোই হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার রাসূল এবং পবিত্র কোলগুলো যা আমাদের দুধ খাইয়েছে , যারা ভদ্র ও যারা অপমান ঘৃণা করে তারা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করে যে , আমরা ঘৃণ্য মানুষদের কাছে মাথা নোয়াবো এবং তারা আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এ বিষয়ে যুদ্ধের ময়দানে পৌরুষের সাথে নিহত হতে। জেনে রাখো , আমি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো যদিও আমার সাথে রয়েছে অল্প কয়েকজন মানুষ এবং যদিও কিছু ব্যক্তি আমাকে পরিত্যাগ করে চলে গেছে। ”

ইবনে আবিল হাদীদ মুতাযিলি তার শরহে নাহজুল বালাগা ’ তে যা উল্লেখ করেছেন তা এখানে উদ্ধৃতি দেয়া যথাযথ হবে। যারা অত্যাচার ও অপমানের মুখে মাথা নোয়াতে অস্বীকার করে তাদের বিষয়ে তিনি বলেছেন , সম্মানিত অভিভাবক , যিনি যুদ্ধের আবেগ শিক্ষা দিয়েছেন এবং উচ্চ স্থান অধিকার করেছেন , অপমানিত হওয়ার বদলে তরবারির নিচে সম্মানের সাথে জীবন দিয়েছেন , তিনি হলেন আবু আব্দুল্লাহ হোসেইন বিন আলী বিন আবি তালিব (আ.) তাকে ও তার সাথীদেরকে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল , কিন্তু তিনি অপমান গ্রহণ করেন নি , (তারপর তিনি আগের খোতবাটি উল্লেখ করেছেন) । তিনি (ইবনে আবিল হাদীদ) আরও বলেন যে , আমি বসরার নেতা আবু যাইদ ইয়াইয়া বিন যাইদ আলাউইকে বলতে শুনেছি যে , মুহাম্মাদ বিন হামীদ তাঈ ’ র যে কবিতা আবু তাম্মায সংকলন করেছেন তা ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য যথাযথ হয়: মৃত্যুকে এড়িয়ে যাওয়া সহজ ছিলো , কিন্তু তার প্রাণ তাকে এদিকে ফেরত পাঠিয়ে দিলো , যিনি অত্যাচারকে ঘৃণা করতেন , যেন ভয় হলো ধর্মদ্রোহিতা , তাই তিনি মৃত্যুর ঘূর্ণিবায়ুতে দৃঢ় ছিলেন , তিনি মৃত্যুকে বললেন , তোমার তরবারির নিচে রয়েছে পুনরুত্থান , তিনি মৃত্যুর পোষাক পড়লেন , রাত্র তখনও আসে নি যখন তা সবুজ রেশমের পোষাকে পরিণত হল।

সিবতে ইবনে জাওযি বলেন যে , আমার দাদা তাবসিরাহ ’ তে বলেছেন যে ইমাম হোসেইন (আ.) কুফার দিকে গেলেন , কারণ তিনি দেখতে পেয়েছিলেন ইসলামের খোদায়ী আইন ভঙ্গ করা হচ্ছিলো , তাই তিনি এর মূলনীতিগুলোকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। যখন তারা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো এবং তাকে (উবায়দুল্লাহ বিন) যিয়াদের আদেশের সামনে মাথা নত করতে বললো , তিনি তা করতে অস্বীকার করলেন এবং অপমান ও অসম্মানের ওপরে শহীদ হওয়াকে মর্যাদা দিলেন এবং উদগ্রীব সত্তাগুলো এরকমই হয়। তারপর তিনি কিছু কবিতা উল্লেখ করেছেন , যখন তারা দেখলেন জীবন তাদের জন্য অপমানকর এবং সম্মানিত মৃত্যু অবৈধ নয় , তারা সে ধরনের জীবনের স্বাদ নিতে অস্বীকার করলেন যে জীবনে অপমান নিহিত রয়েছে। তখন তারা এমন মৃত্যুবরণ করলেন যাতে কোন তিরস্কার ছিলো না। এটি আশ্চর্য কিছু নয় যে অভিশপ্ত আরব ও অনারব কুকুরগুলো এক পুরুষ সিংহকে খেয়ে ফেলেছে , কারণ ওয়াহশি প্রতারণা ছিলো হাম্মাহর মৃত্যুর কারণ এবং আলী খুন হয়েছিলেন ইবনে মুলজিমের তরবারিতে।

এখানে আমরা কিছু উক্তি উল্লেখ করছি আহলুল বাইতের (আ.) এর প্রশংসায়। ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য বিলাপ করেছেন লেখক সাইয়েদ হায়দার: জাতি চেয়েছিলো যে তিনি অত্যাচারিত হন , কিন্তু আল্লাহ এবং বিদ্যুৎগতি তরবারি তা অস্বীকার করলো , কিভাবে তিনি তার মাথা নত করবেন অপমান ও অসম্মানের সামনে যিনি আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে নত হন নি , তিনি মেনে নিতে অস্বীকার করলেন , বরং চাইলেন একটি সম্মানের জীবন এবং চাইলেন যুদ্ধক্ষেত্রকে পরিষ্কার করতে যেন এর ওপরে তাকে ছুড়ে ফেলা হয় এবং তিনি শুয়ে পড়তে পারেন ; তিনি একটি সেনাবাহিনীর সাথে লড়লেন , তার সত্ত্বার প্রতিটি অংশ এক একটি বিরাট সেনাবাহিনী ছিলো। তিনি লোকদের আত্মাগুলোকে তরবারির সাথে বিয়ে দিলেন যার মোহরানা ছিলো মৃত্যু এবং মেহদি ছিলো রক্ত। ”

এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) ফারওয়া বিন মাসীক মুরাদির কবিতা আবৃত্তি করেন:

আমরা আমাদের শত্রুদের যদি পরাজিত করি , আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে থাকবো , যদি আমরা পরাজিত হই , তা হবে শুধু একবার , যারা আমাদের দুঃখ কষ্টে উল্লাস করে তাদের বলো , জেগে ওঠো , কারণ তোমরাও শেষ পর্যন্ত আমাদের মত হবে , যখন মৃত্যু এর থাবা কারো ঘাড় থেকে সরিয়ে নেয় , তা অবশ্যই অন্যদের সাথে লেগে থাকবে , তাই আল্লাহর শপথ , তোমরা পৃথিবীতে একটি ঘোড়ায় চড়ার মত সময়ের চাইতে বেশী আর থাকবে না , তখন পৃথিবী তোমাদের যাতার মত ঘোরাবে এবং ঘুরবে এর অক্ষকে কেন্দ্র করে , এটি আমার বাবা (আ.) আমাকে দিয়েছেন , যিনি তা পেয়েছেন আমারা নানা (সা.) থেকে।

) فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُون(

তোমাদের পরিকল্পনা ও তোমাদের সাথীদেরকে জড় করো এবং তোমাদের পরিকল্পনা যেন দ্বৈত অর্থ বহন না করে , তারপর তা আমার উপর প্রয়োগ করো এবং (আমাকে) কোন সময় দিও না। [সূরা ইউনূস: ৭১]

) إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ(

“ নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করি , আমার রব এবং তোমাদের রব , কোন জীবিত প্রাণী নেই , যার কপালের চুল তার হাতে নেই। নিশ্চয়ই আমার রব সঠিক পথের ওপরে আছেন। ” [সূরা হুদ: ৫৬]

হে আল্লাহ , তাদের কাছ থেকে আকাশের বৃষ্টি তুলে নিন এবং তাদেরকে অনাবৃষ্টিতে জড়িয়ে যেতে দিন ইউসুফ (আ.) এর সময়ের মত এবং বনি সাকীহর এক ব্যক্তিকে (মুখতার বিন আবু উবায়দা সাক্বাফীকে) তাদের উপর নিয়োগ দিন , যে তাদের গলায় তিক্ত পেয়ালা ঢেলে দিবে। কারণ তারা মিথ্যা বলেছে এবং আমাদের পরিত্যাগ করেছে। আপনি আমাদের রব , আপনার ওপরে আমরা নির্ভর করি এবং আপনার দিকেই আমরা ফিরি এবং আপনার সামনেই (সবকিছুর) শেষ।

এরপর তিনি তার উট থেকে নামলেন এবং রাসূল (সা.) এর ঘোড়ায় চড়লেন , যার নাম ছিলো মুরতাজায এবং তার সাথীদেরকে সাজাতে শুরু করলেন ।

[ মালহুফ ’ গ্রন্থে আছে] উমর বিন সা আদ সামনে এগিয়ে এলো এবং ইমামের সেনাদলের দিকে একটি তীর ছুঁড়লো এবং বললো , সেনাপতির সামনে সাক্ষী থেকো যে আমিই ছিলাম প্রথম যে তীর ছুঁড়েছিলো। ” তখন তার অধীনে যারা ছিলো তারা তীর ছুঁড়তে লাগলো বিরাট সংখ্যায় যা পাখির মত দেখাতে লাগলো। ইমাম তার সাথীদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন ,

আল্লাহ তাঁর রহমত তোমাদের উপর বর্ষণ করুন , জাগো অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর মুখোমুখি হতে এবং এই তীরগুলো সেনাবাহিনীর দূত যা আমাদের দিকে আসছে। ”

এরপর তারা দিনের এক অংশে আক্রমণ করে এবং ইমামের একদল সাথী নিহত হন। বর্ণনাকারী বলেন যে ইমাম হোসেইন (আ.) নিজের দাড়ি ধরে বললেন ,

আল্লাহর ক্রোধ চরম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ইহুদীদের উপর যখন তারা বলেছিলো তাঁর একটি ছেলে আছে এবং তাঁর রাগ খৃস্টানদের উপর পরে যখন তারা তাঁকে তিন জনের একজন বানিয়েছিলো এবং তাঁর ক্রোধ গিয়ে অগ্নি উপাসকদের (মাজুসদের) উপর পড়েছিলো যখন তারা তাঁর পরিবর্তে সূর্য ও চাঁদের ইবাদত করতে শুরু করেছিলো এবং এখন আল্লাহর ক্রোধ পড়বে এ সম্প্রদায়ের উপর যারা একত্রিত হয়েছে নবীর নাতিকে হত্যার জন্য। সাবধান , আল্লাহর শপথ , আমি তাদের আশার সাথে একমত হবো না যতক্ষণ না আমি আমার রবের সাথে মিলিত হই আমার রক্তে ভিজে। ”

আমাদের অভিভাবক ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) বর্ণনা করেন যে , আমি আমার বাবা ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) কে বলতে শুনেছি যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এবং উমর বিন সা আদ (তার উপর আল্লাহর অভিশাপ)-এর মুখোমুখি হলো এবং যুদ্ধ শুরু হলো। আল্লাহ বিজয়কে পাঠালেন (ফেরেশতার আকার দিয়ে) ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য , যারা তাদের পাখা নাড়ছিলো তার মাথার উপর। তারা তাকে শত্রুর ওপরে বিজয় অথবা আল্লাহর সাক্ষাত বেছে নিতে বললেন এবং তিনি আল্লাহর সাক্ষাতকে প্রাধান্য দিলেন।

সম্মানিত উস্তাদ এবং অনেক বইয়ের লেখক , সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বিন শুব্বার হাসানী কাযমী তার বই জালাউল উয়ুন ’ -এ লিখেছেন যে , সে মুহূর্তে একদল জিন উপস্থিত হলো ইমাম হোসেইন (আ.) কে সাহায্য করার জন্য এবং অনুমতি চেয়েছিলো যুদ্ধ করার জন্য , কিন্তু তিনি তাদের অনুমতি দিলেন না এবং এ পৃথিবীতে অপমানকর জীবনের চাইতে সম্মানের সাথে শাহাদাতকে বেছে নিলেন। তার ওপরে সালাম।

পরিচ্ছেদ - ১৯