শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45382
ডাউনলোড: 4010

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45382 / ডাউনলোড: 4010
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের অবস্থা সম্পর্কে পুনরায় আলোচনা

শাহাদাতের বইগুলোতে আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীরা তার কাছে একের পর এক আসতে থাকলেন এবং বললেন , শান্তিবর্ষিত হোক আপনার উপর হে রাসূলুল্লাহর সন্তান। ইমাম তাদের সালামের উত্তর দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন , শীঘ্রই আমরাও তোমাদের অনুসরণ করবো। ” এরপর তিনি কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন ,

) مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا(

“ বিশ্বাসীদের মাঝে এমন ব্যক্তিরা আছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারে বিশ্বস্ত আছে ; তাদের কেউ তার অঙ্গীকার পূরণ করেছে এবং তাদের কেউ অপেক্ষা করছে (অঙ্গীকার পূরণের জন্য) এবং তারা একটুও বদলায়নি। ” [সূরা আহযাব: ২৩]

“ মৃত্যুর পেয়ালা তাদের উপর ঘুরছে এবং তারা পৃথিবীর উপর চোখ বন্ধ করে নিয়েছে মাতালের মত , তাদের দেহগুলো তাঁর ভালোবাসায় মৃত্যুর কাছে পৌঁছেছে এবং তাদের আত্মা উচ্চ আকাশের উপর পর্দাতে আরোহণ করেছে এবং তারা তাদের বন্ধুর কাছে ছাড়া অন্য কোন স্থান দখল করে নি , কিন্তু তারা দুশ্চিন্তার কারণে ওপরে উঠেনি। ”

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন , ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীরা তার জন্য জীবন কোরবান করতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করেছিলেন। তারা তেমনি ছিলেন যেমনটি তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে , তারা একদল যাদেরকে দুশ্চিন্তার সময় প্রতিরক্ষার কাজে ডাকা হয় এবং সৈন্যদের কিছু ব্যস্তআছে তাদের বর্শা দিয়ে আঘাত করাতে এবং কিছু আছে সাহস যোগাতে , তারা তাদের হৃদয়কে পরেছে বর্মের ওপরে , যেন তারা জীবন উৎসর্গ করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ”

শেইখ ইবনে নিমা তাদের বীরত্ব , আত্মত্যাগ ও (নবীর সন্তানের) প্রতিরক্ষা সম্পর্কে বলেন , “ যখন তারা গমের রঙের বর্শা তুলে নেয় এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয় , তখন জঙ্গলের সিংহ ভয়ে পালিয়ে যায় , ভয়ানক যুদ্ধের যাঁতাকলে তারা যুদ্ধের অস্ত্র , যখন তারা ঘেরাও করে , শত্রুরা তখন ক্ষতির সম্মুখীন হয় , যখন তারা তাদের পাগুলোকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে গেড়ে দেয় তখন তাদের প্রতিশ্রুত স্থান হচ্ছে কিয়ামতের দিন। ”

ইবনে আবিল হাদীদ তার শারহে নাহজুল বালাগাতে বলেন যে , কারবালায় উমর বিন সা আদের বাহিনীর এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো , দুর্ভোগ হোক তোমার , তোমরা আল্লাহর রাসূলের সন্তানকে হত্যা করছো ? এতে সে উত্তর দিয়েছিলো , তোমাদের দাঁতের মাঝে পাথর রাখো (অর্থাৎ চুপ থাকো) । যদি তুমি (সেই দিনটি) দেখতে যা আমরা দেখেছি , তুমিও তা- ই করতে আমরা যা করেছি। সাহসী ব্যক্তিরা তরবারিতে সজ্জিত হয়ে ছিলো , যারা পুরুষ সিংহের মত ছিলো , আমাদের আক্রমণ করেছিলো , তারা সাহসীদের ছুঁড়ে দিয়েছিলো ডানে ও বামে এবং মৃত্যুর উপর পড়ছিলো। তারা নিরাপত্তা গ্রহণ করে নি , না সম্পদের জন্য লোভাতুর ছিলো। তাদের জন্য কিছুই ছিলো না শুধু ছিলো রাজত্ব লাভ অথবা মৃত্যু। আমরা যদি অল্প সময়ের জন্যও তাদের উপর থেকে হাত সরিয়ে রাখতাম তারা আমাদের পুরো সেনাবাহিনীকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতো , আমরা তখন কী করতাম ?

শেইখ আবু আমর কাশশি বলেন যে , হাবীব ছিলেন ঐ সত্তর জন লোকের একজন যারা ইমাম হোসেইন (আ.) কে সাহায্য করেছিলেন। তারা এগিয়ে দিচ্ছিলেন তাদের বুক বর্শার দিকে এবং চেহারাগুলোকে তরবারির ধারালো কিনারার দিকে , তাদেরকে নিরাপত্তার আশ্বাস ও প্রচুর সম্পদ দেয়ার কথা বলা হয়েছিলো , কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এ বলে , রাসূল (সা.) এর কাছে কোন ওজর পেশ করার মত আমাদের কিছুই থাকবে না যদি আমরা বেঁচে থাকি ও ইমাম হোসেইন (আ.) কে হত্যা করা হয় , যতক্ষণ না আমরা সকলেই নিহত হই। ”

আমি (লেখক) বলি যে , আমাদের অভিভাবক ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীরা সব মুসলমানের উপর এক বিরাট অধিকার রাখেন।

পরিচ্ছেদ - ২০

ইমাম হোসেইন (আ.) এর পরিবারের (আহলুল বাইতের) সদস্যদের যুদ্ধ এবং তাদের শাহাদাত (আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হোন)

আবুল হাসান আলী বিন হোসেইন আল আকবার (আ.) এর শাহাদাত

যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীরা শহীদ হয়ে গেলেন এবং কেউ ছিলো না তার পরিবার ছাড়া , যারা ছিলেন ইমাম আলী (আ.) , জাফর বিন আবি তালিব (আ.) , আক্বীল বিন আবি তালিব (আ.) ও ইমাম হাসান (আ.) এর সন্তানেরা , তারা একত্রিত হলেন এবং পরস্পরকে বিদায় জানালেন এবং যুদ্ধ করতে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন। তারা সে রকম ছিলেন যাদের সম্পর্কে বলা হয় , তারা একদল , যখন যুদ্ধের ভিতর প্রবেশ করে তোমরা ভুল করে মনে কর তারা সূর্য কিন্তু তাদের চেহারা হচ্ছে চাঁদ , তারা কোন অবস্থাতেই দয়ালু হওয়া থেকে বিরত হন না , পৃথিবী তাদের সাথে ন্যায়পূর্ণ অচরণ করলেও অথবা তাদেরকে অত্যাচার করলেও , তাই যখন কোন আবেদনকারী দুঃসময়ে সাহায্যের জন্য ডাকে , তারা নিজেদেরকে এগিয়ে দেন এবং জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকেন। ”

অন্যরা বলে , তাদের চেহারা উজ্জ্বল , বশংধারা সম্মানিত , ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা , সর্বোচ্চ মর্যাদার , যখন মেহমান হঠাৎ করে এসে যায় তাদের কাছে , তাদের কুকুরগুলো চিৎকার করে না , না তারা প্রশ্ন করে ঘনিয়ে আসা অন্ধকারের বিষয়ে। ”

কা আব বিন মালিক বলেন , তারা একদল , বনি হাশিম গোত্র থেকে , যার ভিত্তিতে আছে এক শক্তিশালী দেয়াল এবং তা এমন এক ক্ষমতা যা হস্তান্তর করা যায় না , তারা এক দল যাদের কারণে আল্লাহ সৃষ্টিকুলের প্রতি করুণাময় এবং যার দাদার (ইমাম আলীর) মাধ্যমে রাসূল (সা.) কে সাহায্য করা হয়েছিলো , যাদের চেহারা আলোকিত , যাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় উদারতা তাদের হাত থেকে বইছে , যখন ফাঁকিবাজ পৃথিবী তা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় খোঁজে। ”

সম্মানিত শেইখ আলী বিন ঈসা ইরবিলি তার কাশফুল গুম্মাহ ’ -তে বর্ণনা করেছেন আওয়াম বিন হাওশাবের ইতরাতুত তাহেরা ’ কিতাব থেকে যে , তিনি বলেছেন , আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে , একবার রাসল (সা.) একদল কুরাইশা যুবকের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন যাদের চেহারা তরবারির মত উজ্জ্বল ছিলো , যতক্ষণ পর্যন্তনা দুঃখ তাঁর চেহারায় দৃশ্যমান হলো। তাকে বলা হলো , ইয়া রাসূলুল্লাহ , আপনার কী হয়েছে ? তিনি বললেন , আমরা এক পরিবার যাদের জন্য আল্লাহ আখেরাতকে এ পৃথিবীর উপর স্থান দিয়েছেন , আমি এই মাত্র মনে করলাম কিভাবে আমার পরিবারকে হত্যা ও নির্বাসনের মুখোমুখি হতে হবে আমার উম্মতের হাতে। ”

[ ইরশাদ ’ -এ বর্ণিত আছে] আলী আকবার (আ.) , যার মা ছিলেন আবি মুররাহ বিন উরওয়াহ বিন মাসউদ সাক্বাফির কন্যা লায়লা , যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন।

আলী আকবার (আ.) এর নানা উরওয়াহ বিন মাসউদ সম্পর্কে বর্ণনা

উরওয়াহ বিন মাসউদ ছিলেন ইসলামি দুনিয়ার চারজন সম্মানিত ব্যক্তির একজন এবং এর আগে কাফেরদের মধ্যে দুই জন সর্দারের একজন , যার সম্পর্কে কোরআন বলেছে যে সে বলেছিলো ,

) لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ(

“ কেন কোরআন দুই শহরের কোন ব্যক্তির ওপরে নাযিল হলো না , (যে) বিখ্যাত ? [সূরা যুখরুফ: ৩১]

তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যাকে কুরাইশরা পাঠিয়েছিলো হোদায়বিয়াতে শান্তিচুক্তি করার জন্য তাদের ও রাসূল (সা.) এর শান্তিচুক্তি করার জন্য , তখন পর্যন্ততিনি অবিশ্বাসী ছিলেন। হিজরি নবম বছরে যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফ থেকে ফেরত এলেন , তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং অনুমতি চাইলেন নিজের শহরে ফেরত গিয়ে জন গণের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য। তিনি ফেরত গেলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানালেন এবং যখন তিনি নামাযের জন্য আযান দিচ্ছিলেন তখন তার গোত্রের এক ব্যক্তি তার দিকে তীর ছুঁড়ে এবং তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার শাহাদাতের খবর পেলেন তিনি বললেন , উরওয়াহর উদাহরণ হচ্ছে ইয়াসীনের সেই বিশ্বাসীর মত , যে তার গোত্রকে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো এবং তারা তাকে হত্যা করেছিলো। ”

শারহে শামায়েলে মুহাম্মাদিয়া ’ তে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে , তিনি বলেছেন , যদি কেউ ঈসা বিন মারইয়াম (আ.) এর দিকে তাকায় সে উরওয়াহ বিন মাসউদের সাথে তার সবচেয়ে বেশী মিল পাবে। ”

জাযারি বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস থেকে আসাদুল গাবাহ ’ তে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন , ইসলামে চার জন সর্দার রয়েছে , বুশর বিন বিলাল আবাদি , আদি বিন হাতিম , সুরাক্বাহ বিন মালিক মাদালজি এবং উরওয়াহ বিন মাসউদ সাক্বাফি। ”

[ মালহুফ ’ -এ বর্ণিত আছে] আলী বিন হোসেইন ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে যুদ্ধের জন্য অনুমতি চাইলেন। ইমাম (আ.) তাকে অনুমতি দিলেন এবং এরপর তার দিকে ভগ্ন হৃদয়ে তাকালেন এবং তার চোখ থেকে অশ্রুবইতে লাগলো এবং তিনি কাঁদলেন।

[ তাসলিয়াতুল মাজালিস গ্রন্থে] বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি তার দাড়ি আকাশের দিকে তুললেন এবং বললেন , হে আল্লাহ , এ লোকগুলোর উপর সাক্ষী থাকো , যে যুবক চরিত্রে ও বক্তব্যে তোমার রাসূলের সবচেয়ে নিকটবর্তী , সে তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যখনই আমরা চাইতাম তোমার রাসূলের চেহারা দেখতে আমরা তার দিকে তাকাতাম। হে আল্লাহ , তাদের কাছ থেকে পৃথিবীর নেয়ামতগুলো ফিরিয়ে নাও এবং তাদের মধ্যে বিভেদষ্টিসকরে দাও এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করে দাও। তাদের নীতিকে হেয় করো এবং তাদেরকে তাদের সর্দারদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে দিও না , কারণ তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো আমাদের সাহায্য করার জন্য। এরপর তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। ”

এরপর তিনি উমর বিন সা আদকে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলেন , তোমার কী হয়েছে ? আল্লাহ তোমার বংশ শেষ করুন , আল্লাহ তোমার কাজকে ব্যর্থ করে দিন এবং তিনি যেন কাউকে তোমাদের উপর শক্তিশালী করেন , যে তোমাদের বিছানায় তোমাদের মাথা কেটে ফেলবে যেভাবে তোমরা আমাদের গর্ভ চিরেছো এবং আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্রতা বিবেচনা করো নি। ”

এরপর তিনি একটি আওয়াজ তুললেন এবং কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন ,

) إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ(

“ নিশ্চয়ই আল্লাহ বাছাই করেছিলেন আদম ও নূহ ও ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদের , বিশ্ব জগতের ওপরে। ” [সূরা আল ইমরান: ৩৩]

আলী বিন হুসেইন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন এ কথা বলে , আমি আলী বিন হোসেইন বিন আলী , আল্লাহর ঘরের ক্বসম , আমরা রাসূল (সা.) এর সাথে আত্মীয়তা রাখি এবং শাবাস (বিন রাব ’ ঈ) এবং নীচ ও হীন শিমরের ওপরে শ্রেষ্ঠত্ব রাখি । আমি তরবারি দিয়ে তোমাদের আঘাত করবো যতক্ষণ না তা বাঁকা হয়ে যায় , হাশেমী আলাউই (আলীর রক্তজ) যুবকের তরবারি , আমি আমার বাবার প্রতিরক্ষা করতেই থাকবো এবং আল্লাহর শপথ , অবৈধ সন্তানের সন্তান আমাদের ওপরে কর্তৃত্ব করবে না। ”

তিনি শত্রুদের বার বার আক্রমণ করলেন এবং তাদের অনেককে হত্যা করলেন।

[ তাসলিয়াতুল মাজালিস গ্রন্থে উল্লেখ আছে] তিনি এতো বিরাট সংখ্যককে হত্যা করলেন যে শত্রুবাহিনী কাঁদতে শুরু করলো । বর্ণিত আছে যদিও তিনিষ্ণতাতর্ছিলেন তারপরও তিনি একশ বিশ জনকে হত্যা করেছিলেন। মানাক্বিব ’ -এ বর্ণিত আছে তিনি সত্তর জনকে হত্যা করার পর তার বাবার কাছে ফিরলেন অনেকগুলো আঘাত নিয়ে।

[ তাসলিয়াতুল মাজালিস , মালহুফ ’ গ্রন্থে আছে] তিনি বললেন , হে বাবা , পিপাসা আমাকে মেরে ফেলছে এবং লোহার (অস্ত্রের ও বর্মের) ওজন আমার শক্তি শেষ করে দিয়েছে। কোন পানি আছে কি যাতে আমি শক্তি ফিরে পাই এবং শত্রুদের উপর আঘাত করি ?

[ মালহুফ ’ গ্রন্থে আছে] তা শুনে ইমাম হোসেইন (আ.) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন , হে সাহায্যকারী , হে প্রিয় সন্তান , অল্প সময়ের জন্য যুদ্ধ করো এবং খুব শীঘ্রই তুমি তোমার নানা মুহাম্মাদ (সা.) এর সাক্ষাত পাবে। তুমি তার উপচে পড়া পেয়ালা থেকে পান করবে এবং আর কখনোই পিপাসার্ত হবে না। ”

[ তাসলিয়াতুল মাজালিস গ্রন্থে আছে] ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে বললেন , হে আমার প্রিয় সন্তান , তোমার জিভ বের করো। ”

এ কথা বলে ইমাম (আ.) তার জিভ তার মুখে দিলেন এবং তা চুষতে দিলেন। এরপর তিনি তাঁর আংটি আলীর মুখে দিলেন এবং বললেন , যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত যাও এবং আমি আশা করি রাত আসার আগেই তোমার দাদা তোমার হাতে পেয়ালা উপচে পড়া একটি পানীয় দিবেন যা পান করার পর তুমি আর কখনো পিপাসা অনুভব করবেনা। ”

আলী আকবার যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত গেলেন এবং বললেন , যুদ্ধের জন্য বাস্তবতাগুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে এবং তারপর এর প্রমাণগুলো , আকাশের রবের শপথ , আমরা তোমাদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হবো না যতক্ষণ না তরবারি খাপে প্রবেশ করে। ” এরপর তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান যতক্ষণ পর্যন্তনা দুইশত লোককে হত্যা করেন।

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] কুফার সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করা থেকে দূরে সরে রইলো , মুররাহ বিন মুনক্বিয আবাদি লেইসির দৃষ্টি তার উপর পড়লো এবং সে বললো , আরবদের গুনাহ আমার উপর পড় – ক যদি সে আমার পাশ দিয়ে যায় এবং তা করে যা সে করছে এবং আমি তার মাকে তার জন্য শোকার্ত করি না।

যখন তিনি সেনাবাহিনীকে আক্রমণে ব্যস্তছিলেন , মুররাহ বিন মুনক্বিয তার সামনে গেলো এবং একটি বর্শা ছুঁড়ে দিলো তার দিকে যা তাকে মাটিতে ফেলে দিলো। তা দেখে সেনাবাহিনী তাকে সব দিক থেকে ঘিরে ফেললো এবং তাকে টুকরো টুকরো করে ফেললো তাদের তরবারি দিয়ে। যদি ভারতীয় তরবারিগুলো তাদের মাংস খেয়ে থাকে তাহলে সম্মানিত লোকদের মাংস সব সময়ই এর শিকার ছিলো। ১০

‘ মানাক্বিব ’ -এ উল্লেখ করা হয়েছে যে , মুররাহ বনি মুনক্বিয আবাদি হঠাৎ তার বর্শা আলী আকবারের পিঠে ঢুকিয়ে দেয় এবং অন্যরা তাকে তাদের তরবারি দিয়ে আক্রমণ করে। আবুল ফারাজ বলেন তিনি অবিরাম আক্রমণ করলেন যতক্ষণ না একটি তীর তার কণ্ঠ ভেদ করলো। তিনি রক্তে ভিজে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন , হে প্রিয় বাবা , আপনার উপর সালাম , এই

যে আমার দাদা আল্লাহর রাসূল আমাকে ডাকছেন তাড়াতাড়ি করার জন্য। ” এরপর তিনি একটি আওয়াজ তুললেন এবং মৃত্যুবরণ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , তখন ইমাম হোসেইন (আ.) আলী আকবারের পাশে এলেন এবং তার নিজের গাল রাখলেন তার গালের উপর। [তাবারির , তাসলিয়াতুল মাজালিস গ্রন্থে] হামিদ বিন মুসলিম বর্ণনা করেছে যে , আমি আশুরার দিন নিজে ইমাম হোসেইন (আ.) কে বলতে শুনেছি , হে আমার প্রিয় সন্তান , আল্লাহ যেন তাকে হত্যা করেন যে তোমাকে হত্যা করেছে , তারা দয়ালু আল্লাহর বিরুদ্ধে কী সাহস-ই না সঞ্চয় করেছে এবং রাসূলের পবিত্রতা লংঘন করেছে। ”

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] ইমাম হোসেইন (আ.) এর চোখ থেকে অনেক অশ্রুঝরতে লাগলো এবং তিনি বললেন , দুর্ভোগ এ পৃথিবীর উপর , তোমার (শাহাদতের) পরে। ” রওযাতুস সাফা ’ - তে আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তার পাশে বসে অনেক কাঁদতে লাগলেন যা কেউ এর আগে তাকে করতে দেখে নি।১১

আলী আকবার (আ.) এর যিয়ারত যেভাবে ইমাম সাদিক্ব (আ.) উল্লেখ করেছেন তাতে আছে , আমার বাবা মা কোরবান হোক তার জন্য যার মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো , যাকে হত্যা করা হয়েছিলো কোন অপরাধ ছাড়াই , আমার বাবা মা কোরবান হোক ঐ রক্তের জন্য যা আকাশে আল্লাহর বন্ধুর কাছে পৌঁছেছিলো , আমার বাবা মা কোরবান হোক আপনার উপর যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে দত্রুএগিয়েছিলেন তার বাবার উপস্থিতিতে যিনি আপনাকে উৎসর্গ করেছেন আল্লাহর পথে , এরপর তিনি আপনার জন্য কাঁদলেন এবং তার হৃদয় পোড়া মাটি হয়ে গেলো। তিনি আপনার রক্ত আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলেন , যার এক ফোঁটাও ফেরত আসে নি এবং আপনার জন্য তার চিৎকার কখনো বিলীন হবে না। ”

[ মাকাতিলাত তালিবিইন ’ , মালহুফ ’ , তাবারির গ্রন্থে আছে] শেইখ মুফীদ বলেন যে , সাইয়েদা যায়নাব (আ.) , যিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর বোন ছিলেন , ছুটে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন , হায় আমার ভাই , হায় আমার ভাতিজা। ” তিনি এলেন এবং নিজেকে আলী আকবার (আ.) এর লাশের উপর ছুঁড়ে দিলেন। ইমাম হোসেইন (আ.) তার মাথালেত ধরলেন এবং তাকে (বোনকে) তাঁবুতে ফেরত আনলেন। এরপর তিনি যুবকদেরকে ডাকলেন , বললেন , তোমাদের ভাইকে নিয়ে যাও। ” [তাবারির গ্রন্থে , মাকাতিলাত তালিবিঈন ’ -এ আছে] তারা তাকে শাহাদাতের স্থান থেকে আনলেন এবং ঐ তাঁবুর সামনে এনে রাখলেন যার সামনে থেকে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন।

পণ্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে আহলুল বাইত (আ.) এর মধ্যে প্রথম কোন ব্যক্তি শহীদ হয়েছিলেন তা নিয়ে। কেউ বলেন প্রথম শহীদ ছিলেন আলী আকবার , অন্যরা বলেন যে , তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আক্বীল এবং তাবারি , জাযারি (ইবনে আসীর) আবুল ফারাজ ইসফাহানি , দাইনূরী , শেইখ মুফীদ , সাইয়েদ ইবনে তাউস এবং অন্যদের সাথে আমরা একমত যে , আলী আকবার (আ.) ছিলেন প্রথম শহীদ (আহলুল বাইতের মাঝ থেকে) , এবং শহীদদের নামসহ সালামে (যিয়ারতে) এর প্রমাণ রয়েছে , যার কথাগুলো এরকম , শান্তি বর্ষিত হোক যিনি প্রথম শহীদ , যিনি ছিলেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বন্ধুর বংশ থেকে। ”

শেইখ নাজিমুদ্দিন ইবনে নিমা বলেন যে , আহলুল বাইত (আ.) এর মাঝ থেকে বেশ কিছু ব্যক্তি বেঁচে ছিলেন যখন আলী আকবার (আ.) যুদ্ধক্ষেত্রে গেলেন। ” তার এ কথা দুর্বল এবং তিনি যা ইচ্ছা করেছিলেন তা হয়তো ওপরের বর্ণনার মতই কিন্তু তার বক্তব্যের ধারা তা নিশ্চিত করে বলে না।

আলী আকবার (আ.) এর বয়স নিয়েও মতভেদ রয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে শাহর আশোব এবং মুহাম্মাদ বিন আবি তালিবের অভিমত যে , তিনি আঠারো বছর বয়সী ছিলেন , কিন্তু শেইখ মুফীদ বলেন , তার বয়স ছিলো উনিশ বছর। তাই এ বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) এর চাইতে কম বয়সী ছিলেন। কেউ কেউ বলেন যে , তিনি পঁচিশ বছর বয়সের ছিলেন অথবা তার কম এবং তাই ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এর চাইতে বয়সে বড় ছিলেন এবং এটিই সঠিক ও বেশী পরিচিত।

বিশিষ্ট গবেষক ও ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ বিন ইদ্রিস হিল্লি হাজ্ব ’ কিতাবের শেষে আবু আব্দুল্লাহ ইমাম হোসেইন (আ.) এর প্রতি সালাম সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলেন , এরপর তার ছেলে আলী আকবার (আ.) এর প্রতি সালাম উচ্চারণ করতে হবে যার মা ছিলেন লায়লা , আবি মুররাহ বিন উরওয়াহ সাক্বাফির কন্যা। তিনি ছিলেন আশুরার দিন হযরত আবু তালিব (আ.) এর পরিবারের মধ্য থেকে প্রথম শহীদ। তিনি উসমানের খিলাফত কালে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার দাদা ইমাম আলী (আ.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবি উবাইদাহ এবং খালাফ আল আহমার তার প্রশংসার কবিতা লিখেছেন। ”

শেইখ মুফীদ তার ইরশাদ গ্রন্থে বলেন , কারবালায় যিনি শহীদ হয়েছেন তিনি ছিলেন আলী আসগার (ছোট) যার মা ছিলেন বনি সাক্বিফ থেকে এবং আলী আকবার (বড়) ছিলেন ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) , যার মা ছিলেন শাহযানান , যিনি ছিলেন খুসরুপারভিজের কন্যা অথবা একজন দাসী।১২

আবুল ফারাজ বর্ণনা করেন মুগীরা থেকে যে , মুয়াবিয়া একবার জিজ্ঞেস করেছিলো , কে খেলাফতের জন্য বেশী যোগ্য ? তাকে বলা হলো , আপনি ” । সে বললো , না , মানুষের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে এ পদের জন্য আলী বিন হোসেইন বিন আলী , যে নিজের মাঝে একত্র করেছে বনি হাশিমের সাহস , বনি উমাইয়ার উদারতা এবং (বনি) সাক্বিফের মর্যাদা। ”

মনে রাখা দরকার যে , কিছু কিছু বর্ণনা ও যিয়ারত অনুযায়ী তার একটি সন্তান ও একটি পরিবার ছিলো। ইসলামের বিস্বস্ত ব্যক্তিত্ব শেইখ কুলাইনি বর্ণনা করেছেন আলী বিন ইবরাহীম কুম্মি থেকে , তিনি তার পিতা থেকে , তিনি আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আবি নসর বাযানতি থেকে যিনি বলেছেন , আমি ইমাম আলী আল রিদা (আ.) কে জিজ্ঞেস করলাম , যদি কোন ব্যক্তি কোন মহিলাকে বিয়ে করে এবং তার পিতার দাসীকেও বিয়ে করে ? ইমাম বললেন , এতে কোন ক্ষতি নেই। ” আমি বললাম , আমার কাছে আপনার পিতা থেকে খবর পৌঁছেছে যে , যে ইমাম আলী বিন হোসেইন (যায়নুল আবেদীন) (আ.) বিয়ে করেছিলেন (ইমাম) হাসান বিন আলী (আ.) এর কন্যাকে এবং তার দাসীকে এবং আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে এ সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে। ” ইমাম বললেন , বিষয়টি এরকম নয়। নিশ্চয়ই ইমাম আলী বিন হোসেইন (যায়নুল আবেদীন) (আ.) বিয়ে করেছিলেন ইমাম হাসান বিন আলী (আ.) এর কন্যাকে এবং আলী বিন হোসেইন (আ.) (আলী আকবার)-এর দাসীকে , যিনি কারবালায় শহীদ হয়েছিলেন। ”

হামিরিও তার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে তা উল্লেখ করেছেন।

(আবু হামযা) সুমালি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে একটি দীর্ঘ যিয়ারত বর্ণনা করেছেন কারবালার শহীদ আলী বিন হোসেইন সম্পর্কে , এতে বলা হয়েছে , আল্লাহর সালাম আপনার ওপরে এবং আপনার বংশধরের ওপরে এবং আপনার পরিবারের ওপরে এবং আপনার পূর্ব পুরুষদের ওপরে এবং আপনার সন্তানদের ওপরে। ” তার মা কারবালায় উপস্থিত ছিলেন কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোন সংবাদ আমরা পাই নি এবং আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।