শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45454
ডাউনলোড: 4015

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45454 / ডাউনলোড: 4015
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

আব্বাস বিন আলী বিন আবি তালিব (আ.) এর শাহাদাত

শেইখ মুফীদ তার ইরশাদ ’ -এ এবং শেইখ তাবারসি তার আ ’ লামুল ওয়ারা ’ -তে বলেছেন যে , সেনাবাহিনী ইমাম হোসেইন (আ.) কে আক্রমণ করলো এবং তার সৈন্যদের ছড়িয়ে দিলো এবং তাদের পিপাসা বৃদ্ধি পেলে ইমাম তার ভাই আব্বাস (আ.) কে নিয়ে ফোরাতের দিকে ঘোড়া ছোটালেন। উমর বিন সা আদের বাহিনী তাদের পথ আটকে দিলো এবং বনি দারিম থেকে এক ব্যক্তি তাদের উদ্দেশ্যে বললো , আক্ষেপ তোমাদের জন্য , ফোরাতের দিকে তাদের রাস্তা বন্ধ করে দাও যেন তারা সেখানে পৌঁছতে না পারে। ” ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন , হে আল্লাহ , তাকে পিপাসার্ত করুন। ” সে ক্রোধান্বিত হলো এবং ইমামের দিকে একটি তীর ছুঁড়ে মারলো যা তার থুতনি ভেদ করলো। ইমাম তীরটি টেনে বের করলেন এবং নিজের তালু দিয়ে তার নিচে চেপে ধরলেন। এতে তার হাত রক্তে পূর্ণ হয়ে গেলো। তখন তিনি বললেন , হে আল্লাহ , আমি তোমার কাছে অভিযোগ করছি তারা কী আরচণ করছে তোমার রাসূল (সা.) এর কন্যার সন্তানের সাথে। ”

এরপর তারা তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ফিরে এলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী হযরত আব্বাস (আ.) কে ঘেরাও করে ফেললো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। আব্বাস একা একা যুদ্ধ করলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন। যায়েদ বিন ওয়ারখা হানাফি এবং হাকীম বিন তুফাইল তাঈ ’ যৌথভাবে তাকে হত্যা করে তাকে বেশ কিছু আঘাতে আহত করার পর এবং তার নড়াচড়া করার মত শক্তি আর ছিলো না। সাইয়েদ ইবনে তাউস কিছুটা একই রকম বর্ণনা দিয়েছেন।

হাসান বিন আলী তাবারসি বর্ণনা করেন যে , (বনি দারিম গোত্রের) অভিশপ্তের তীরটি ইমাম হোসেইন (আ.) এর কপালে বিদ্ধ হয় এবং আব্বাস তা তুলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী বর্ণনাটিই বেশী পরিচিত।

তাবারি বর্ণনা করেন হিশাম থেকে , তিনি তার পিতা মুহাম্মাদ বিন সায়েব থেকে , তিনি ক্বাসিম বিন আল আসবাগ বিন নাবাতাহ থেকে যিনি বলেছেন , (কারবালায়) ইমাম হোসেইন (আ.) শহীদ হওয়ার সময় উপস্থিত ছিলো এমন একজন আমাকে বলেছে যে , যখন হোসেইনের সেনাদল প্রাণ হারালো তিনি তার ঘোড়ায় চড়লেন এবং ফোরাত নদীর দিকে গেলেন। বনি আবান বিন দারিম গোত্রের এক লোক বললো , আক্ষেপ তোমাদের জন্য , তার এবং ফোরাত নদীর মাঝখানে অবস্থান নাও যেন তার শিয়ারা (অনুসারীরা) তার সাথে যুক্ত হতে না পারে। ” তিনি ঘোড়া ছোটালেন এবং সেনাবাহিনীও তাকে অনুসরণ করলো এবং ফোরাত নদীতে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিলো। ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন , হে আল্লাহ , তাকে পিপাসার্ত করুন। ” আবানি লোকটি একটি তীর ছুঁড়লো যা ইমামের থুতনি ভেদ করলো , ইমাম তীরটি টেনে বের করলেন এবং তার হাতের তালু দিয়ে তার নিচে চেপে ধরলেন , যা রক্তে পূর্ণ হয়ে গেলো এবং তিনি বললেন , হে আল্লাহ , আমি আপনার কাছে অভিযোগ করি কী আচরণ তারা করছে আপনার রাসূল (সা.) এর কন্যার সন্তানের সাথে। ”

আল্লাহর শপথ , বেশী সময় যায় নি যখন আমি দেখলাম তার (আবানি লোকটির) প্রচণ্ডতৃষ্ণা পেয়ে বসলো এবং কখনোই নিবারণ হলো না।

ক্বাসিম বিন আল আসবাগ আরও বলেন যে , আমি তার সাথে ছিলাম যে বাতাস করছিলো তাকে (আবানি লোকটিকে) এবং একটি মিষ্টি শরবত , এক জগ দুধ ও পানি রাখা ছিলো। সে বলছিলো , দুর্ভোগ তোমাদের উপর। তৃষ্ণা আমাকে মেরে ফেলছে। ” এক জগ অথবা এক কাপ পানি যা তার পরিবারের তৃষ্ণা মিটাচ্ছিলো , তাকে দেয়া হলো , সে তা পান করলো ও বমি করলো। এরপর কিছু সময় ঘুমালো। এরপর আবার সে বলতে শুরু করলো , দুর্ভোগ তোমাদের উপর , আমাকে পানি দাও , তৃষ্ণা আমাকে মেরে ফেলছে। ” আল্লাহর শপথ এ রকম কোন দৃশ্য এর আগে দেখা যায় নি এবং তার পেট উটের মত ফেটে গেলো।

আমরা (লেখক) বলি যে , ইবনে নিমার বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে এই লোকটির নাম ছিলো যারাআহ বিন আবান বিন দারিম।

ক্বাসিম বিন আল আসবাগ বর্ণনা করেছেন এক ব্যক্তি থেকে যে কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.) কে দেখেছিলো , তিনি একটি খাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নদীর তীরের কাছেই , ফোরাত নদীতে যাওয়ার জন্য এবং আব্বাস ছিলেন তার সাথে। সে সময় উমর বিন সা আদের জন্য উবায়দুল্লাহর চিঠি এসে পৌঁছায় যাতে লেখা ছিলো , হোসেইন ও তার সাথীদের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ করে দাও এবং তাদেরকে এক ফোটাও স্বাদ নিতে দিও না। ” উমর বিন সা আদ পাঁচশত লোক দিয়ে আমর বিন হাজ্জাজকে পানির কাছে পাঠালো। আব্দুল্লাহ বিন হাসীন আযদি উচ্চকণ্ঠে বললো , হে হোসেইন , তুমি কি দেখছো পানি বইছে বেহেশতের মত ? আল্লাহর শপথ , তুমি এ থেকে এক ফোঁটাও পাবে না যতক্ষণ না তুমি ও তোমার সাথীরা তৃষ্ণায় ধ্বংস হয়ে যাও। ” যারা ’ আহ বিন আবান বিন দারিম বললো , তার ও ফোরাত নদীর মাঝে অবস্থান নাও। ” এরপর সে একটি তীর ছোঁড়ে ইমামের দিকে যা তার থুতনিতে বিদ্ধ হয় এবং তিনি বললেন , হে আল্লাহ তাকে তৃষ্ণায় মরতে দাও এবং কখনোই তাকে ক্ষমা করো না। ” ইমাম (আ.) এর জন্য এক পেয়ালা পানীয় আনা হলো কিন্তু তিনি তা পান করতে পারলেন না অনবরত রক্ত ঝরার কারণে। তিনি রক্তকে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলেন এবং বললেন , একইভাবে আকাশের দিকে। ”

শেইখ আব্দুস সামাদ বর্ণনা করেন আবুল ফারাজ থেকে , তিনি আব্দুর রহমান বিন জওযি থেকে যে , এর পরে আবানি ব্যক্তিটি (যারআহ) পাকস্থলি পোড়া এবং ঠাণ্ডা পিঠের রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো এবং চিৎকার করতো।

‘ উমদাতুত তালিব ’ -এর লেখক আব্বাস (আ.) এর সন্তানদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন যে , তার (আব্বাসের) কুনিয়া ছিলো আবুল ফযল এবং উপাধি ছিলো সাক্কা (পানি বহনকারী) । তাকে এ উপাধি দেয়া হয়েছিলো কারণ তিনি তার ভাইয়ের জন্য আশুরার দিন পানি আনতে গিয়েছিলেন , কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছানোর আগেই শহীদ হয়ে যান। তার কবরটি (ফোরাত) নদীর তীরে তার শাহাদাতের স্থানেই আছে। সে দিন তিনি ছিলেন ইমাম হোসেইন (আ.) এর পতাকাবাহী।

আবু নসর বুখারি বর্ণনা করেছেন মুফাযযাল বিন উমার থেকে যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) বলেছেন , আমার চাচা আব্বাস ছিলেন বুদ্ধিমান এবং তার ছিলো দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি আবু আব্দুল্লাহর (ইমাম হোসেইনের) সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং মুসিবতের ভিতর দিয়ে গেছেন শহীদ হওয়া পর্যন্ত। বনি হানিফা তার রক্তের দায়ভার বইছে। তিনি ছিলেন চৌত্রিশ বছর বয়েসী যখন তাকে হত্যা করা হয়। তার এবং উসমান , জাফর এবং আব্দুল্লাহরও মা ছিলেন উম্মুল বানীন , যিনি ছিলেন হিযাম বিন খালিদ বিন রাবি ’ আর কন্যা। ”

এরপর তিনি আরও বলেন যে , বর্ণিত আছে যে আমিরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.) তার ভাই আক্বীলকে , যিনি ছিলেন বংশধারা বিশেষজ্ঞ এবং আরবের পরিবারগুলোকে ভালো জানতেন , একজন নারীর খোঁজ দেয়ার জন্য বললেন যে সাহসী আরব পরিবারের হবে , যেন তিনি তাকে বিয়ে করতে পারেন এবং তিনি বদলে তার জন্য একজন বীর সন্তান গর্ভে ধারণ করবেন। আক্বীল বললেন , তাহলে উম্মুল বানীন কিলাবিয়াহকে বিয়ে করুন , কারণ তার বাবার মত কোন সাহসী বীর আরবদের মাঝে নেই। ” এভাবে তিনি তাকে বিয়ে করলেন। দশই মহররমে শিমর যিলজওশান কিলাবি এলো এবং আব্বাসকে ও তার ভাইদেরকে ডাকলো এ বলে , আমার ভাগ্নেরা কাথায় ? তারা তার কথার উত্তর দিলেন না। ইমাম হোসেইন (আ.) তার ভাইদের বললেন , তাকে উত্তর দাও , যদিও সে একজন কামুক ব্যক্তি , কারণ সে তোমাদের মামাদের একজন (একই গোত্রের) । ”

তারা জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কী চাও ? শিমর বললো , আমার কাছে আসো , কারণ তোমরা নিরাপত্তার মাঝে আছো , নিজেদেরকে হত্যা করো না তোমাদের ভাইয়ের সাথে। ” এ কথা শুনে তারা তার তীব্র নিন্দা করলো এবং বললো , তুমি কুৎসিত হয়ে যাও এবং যা তুমি এনেছো (নিরাপত্তার দলিল) তাও কুৎসিত হোক , আমরা কি আমাদের অভিভাবক ও সর্দারকে পরিত্যাগ করে তোমার নিরাপত্তায় প্রবেশ করবো ? তিনি (আব্বাস) তার তিন ভাইয়ের সাথে সেদিন শহীদ হন।

শেইখ সাদুক্ব ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) থেকে বর্ণনা করেন যে , আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক আব্বাসের উপর , তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন এবং কষ্ট ভোগ করেছেন। তিনি তার জীবনকে উপহার দিয়েছেন তার ভাইয়ের জন্য এবং তার দুটো হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো এবং মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন দুটো পাখার মাধ্যমে যা দিয়ে তিনি উড়েন বেহেশতে ফেরেশতাদের সাথে। যেভাবে তিনি (আল্লাহ) জাফর বিন আবি তালিব (আ.) কে উপহার দিয়েছিলেন এবং আব্বাস (আ.) এমন মর্যাদা পেয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে যে কিয়ামতের দিনে সব শহীদ এর জন্য ঈর্ষান্বিত হবে। ”

আবুল ফারাজ (ইসফাহানি) বলেন যে , আব্বাস বিন আবি তালিব (আ.) এর কুনিয়্যাহ ছিলো আবুল ফযল , এবং তার মা ছিলেন উম্মুল বানীন (আ.) । তিনি ছিলেন তার বড় ছেলে। তিনি ছিলেন আপন ভাইদের মধ্যে শহীদ হওয়ার জন্য শেষ জন যেহেতু তার সন্তান ছিলো , কিন্তু তার অন্য ভাইদের কোন সন্তান ছিলো না। তিনি তাদের সবাইকে তার নিজের আগে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠান এবং সবাই শাহাদাত বরণ করেন এবং তাদের উত্তরাধিকার তার উপর বর্তায়। এরপর তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন এবং শহীদ হয়ে যান। উবায়দুল্লাহ (আব্বাসের সন্তান) তাদের সবার উত্তরাধিকার লাভ করেন এবং তার চাচা উমার বিন আলী এ বিষয়ে তার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। তখন তিনি তাকে সম্পদ দানের মাধ্যমে তার সাথে সমঝোতা করেন এবং এতে তিনি রাজী হন।

জারমি বিন আবুল আলা যুবাইর থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি তার চাচা থেকে যে , আব্বাস (আ.) এর বংশধর তাকে সাক্কা নামে উল্লেখ করেছেন এবং তাকে কুনিয়্যাহ দিয়েছেন আবুল ক্বিরবাহ (অর্থাৎ মশকের পিতা , কারণ তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) ও তার পরিবারের জন্য পানি আনতে প্রচণ্ড সংগ্রাম করেছিলেন) । কিন্তু আমি তার কোন ছেলেকে এরকম কিছু বলতে কখনো শুনি নি।

আব্বাসের প্রশংসায় একজন বলেন , এই যুবকের উপর কান্নাকাটি করা অধিকতর উপযুক্ত যার মৃত্যুতে কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.) কেঁদেছিলেন , তিনি ছিলেন তার ভাই ও তার পিতা আলীর সন্তান। আবুল ফযল রক্তে ভিজে ছিলেন এবং তার ভাইকে সাহায্য করেছিলেন , তিনি নিজে ছিলেন তৃষ্ণার্ত কিন্তু তার জন্য পানি আনতে সংগ্রাম করেছিলেন ” ।

তার বিষয়ে কুমাইত (আসাদি) বলেন , আবুল ফযলের স্মরণ একটি আনন্দ ও অন্তরের রোগের শিফা , যিনি অবৈধ জন্মের লোকদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন , আর তারা যুদ্ধ করেছিলো তার বিরুদ্ধে , যিনি ছিলেন বৃষ্টির পানি যারা পান করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত। ”

আব্বাস (আ.) এর ছিলো সুন্দর চেহারা , তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন অনেক লম্বা যখন তিনি কোন শক্তিশালী ঘোড়ায় উঠতেন তার পা দুটো মাটি স্পর্শ করতো। আশুরার দিন তিনি ছিলেন ইমাম হোসেইন (আ.) এর পতাকাবাহী।

ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত আছে যে , ইমাম হোসইেন (আ.) তার সৈন্যদলকে সারিবদ্ধ করলেন এবং তার পতাকা তুলে দিলেন আব্বাস (আ.) এর হাতে। ”

ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) বলেন যে , যায়েদ বিন ওয়াক্বাদ জাহামি (অথবা বিন ওয়ারক্বা ’ হানাফি) এবং হাকীম বিন তুফাইল তাঈ ’ আব্বাসকে হত্যা করেছিলো।

মুয়াবিয়া বিন আম্মার থেকে বর্ণিত , যিনি বর্ণনা করেছেন ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) থেকে যে , চার জন শহীদ ভাইয়ের মা উম্মুল বানীন বাক্বীতে (মদীনার কবরস্থানে) যেতেন এবং কান্নাকাটি করতেন তার ছেলেদের জন্য হৃদয় ছেঁড়া ও দুঃখ ভরা কথার মাধ্যমে। লোকেরা জমায়েত হতো এবং তার কথাগুলো শুনতো। একদিন মারওয়ান (বিন হাকাম) আসলো এবং তার বিলাপ শুনে কাঁদতে লাগলো (যদিও সে ছিলো নিজে দয়ামায়াহীন) ।

ইবনে শাহর আশোব তার মানাক্বিব ’ -এ বলেছেন যে , সাক্কা (পানি বহনকারী) , হাশেমীদের চাঁদ , হোসেইনের পতাকাবাহক এবং তার আপন ভাইদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আব্বাস পানির খোজে গেলেন। তারা তাকে আক্রমণ করলো এবং তিনিও জবাব দিলেন এবং বললেন , আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না যখন সে আমাকে উচ্চকণ্ঠে ডাকে , অথবা যতক্ষণ না আমি পরীক্ষিত যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করি এবং মাটিতে পড়ে যাই , আমার জীবন কোরবান হোক তার উপর যিনি মুসতাফার জীবন , নিশ্চয়ই আমি আব্বাস , যে পানি আনে , আর আমি যুদ্ধের দিনে ভয় পাইনা। ”

তিনি শত্রুসৈন্যদের ছত্রভঙ্গ করে দিলেন , কিন্তু যায়েদ বিন ওয়ারক্বা ’ জাহনি যে একটি গাছের পিছনে ওঁৎ পেতে ছিলো , সে তার ডান হাতকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো হাকীম বিন তুফাইল সমবোসির সহে যাগিতায়। এরপর তিনি তরবারি বাম হাতে নিলেন এবং যুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন , আল্লাহর শপথ , তোমরা আমার ডান হাত কেটে ফেলেছো , আমি আমার ধর্মকে প্রতিরক্ষা করতেই থাকবো যেমন করবে আমার সত্যবাদী ইমাম , পবিত্র ও বিশ্বস্ত নবীর সন্তান। ”

তিনি যুদ্ধ করতে লাগলেন এবং ক্লান্তহয়ে পড়লেন এবং হাকীম বিন তুফাইল তাঈ একটি গাছের পিছনে লুকিয়ে ছিলো , সে তার বাম হাতে আঘাত করলো ও তা বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। আব্বাস বললেন , হে আমার সত্তা , কাফেরদের ভয় পেয়ো না , সর্ব ক্ষমতাবান আল্লাহর রহমতের ও ক্ষমতাপ্রাপ্তদের অভিভাবক রাসূলের সুসংবাদ তোমার কাছে আসুক , তারা আমার বাম হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে অন্যায়ভাবে , হে আল্লাহ তাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনে পোড়ান। ”

অভিশপ্ত ব্যক্তি তাকে হত্যা করলো লোহার বর্শা দিয়ে। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে দেখতে পেলেন ফোরাত নদীর তীরের কাছে , তিনি কাঁদলেন এবং বললেন , তোমরা তোমাদের কাজের মাধ্যমে অবিচার করেছো হে অভিশপ্ত জাতি এবং রাসূল (সা.) এর কথার বিরোধিতা করেছো , শ্রেষ্ঠ নবী কি আমাদেরকে তোমাদের কাছে আমানত রেখে যান নি , আমরা কি সৎকর্মশীল নবীর বংশধর নই , তোমাদের মধ্য থেকে যাহরা (আ.) কি আমার মা নন , আহমাদ (সা.) সৃষ্টির মধ্যে কি শ্রেষ্ঠ নন , অভিশাপ তোমাদের উপর পড়েছে এবং তোমরা যা করেছো তার জন্য অপমানিত হবে এবং খুব শীঘ্রই তোমরা চরম আগুনের মুখোমুখি হবে (জাহান্নামে)

আমরা বলি , যদি কেউ চায় ভাই , পরিবার এবং সাথীদের মৃত্যুতে ইমাম হোসেইন (আ.) এর অবস্থা বুঝতে তার উচিত ইমাম আলী (আ.) এর অবস্থার উপর ভাবা যখন তার সম্মানিত সাথীগণ এবং বন্ধুগণ (সিফফীনের যুদ্ধে) মৃত্যুবরণ করেন , যেমন আম্মার বিন ইয়াসির , মালিক আশতার , মুহাম্মাদ বিন আবু বকর , আবুল হাইসাম বিন তীহান , খুযাইমাহ বিন সাবীত এবং অন্যরা। বর্ণিত আছে যে , এক শুক্রবার , তার শাহাদাতের আগে , ইমাম আলী (আ.) একটি খোতবা দেন , যার মাধ্যমে তিনি তাদের স্মরণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন , কোথায় আমার ভাইয়েরা যারা সোজা রাস্তায় ছিলো এবং কোথায় তারা চলে গেছে যারা সত্যকে ভালোবাসতো ? কোথায় আম্মার ? কোথায় ইবনে তীহান ? কোথায় যুশ শাহাদাতাইন (খুযাইমাহ বিন সা বীত) ? এবং অন্যরা কোথায় , যারা ছিলো তাদের মত যারা নিজেদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলো এবং তাদের মাথাগুলো পাঠানো হয়েছিলো বদমাশ লোকের কাছে ? এরপর তিনি হাতে তার পবিত্র দাড়ি ধরলেন এবং খুব কাঁদলেন , এরপর বললেন , আফসোস ভাইদের জন্য যারা কোরআন তেলাওয়াত করতো এবং দৃঢ় ছিলো , যারা তাদের দায়িত্ব জানতো এবং সেগুলো পরিপূর্ণ করতো , তারা সুন্নাহগুলোকে জীবিত করতো এবং বিদ ’ আতকে পদদলিত করতো। তাদেরকে সংগ্রাম করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিলো এবং তারা এর দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়েছিলো। ”

বর্ণিত আছে , যখন আম্মার বিন ইয়াসির সিফফীনে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এর এক দল সাথীর সাথে শহীদ হয়েছিলেন এবং যখন রাত নেমে এলো ইমাম আলী (আ.) শহীদদের মধ্যে হেঁটে বেড়াতে লাগলেন। যখন তিনি দেখলেন আম্মার মাটিতে পড়ে আছেন , তিনি তার মাথাটি তুলে নিজের উরুর উপর রাখলেন এবং কাঁদলেন। এরপর বললেন , হে মৃত্যু , কোন সময় পর্যন্ততুমি আমার কাছ থেকে দূরে থাকবে যখনমিতআমার বেন্ধদর মাঝ থেকে কাউকে অব্যহতি দাও নি , আমি দেখছিমিততাদের বেছে নিচ্ছো যাদের আমি ভালোবাসি , মনে হয় যেন তুমি তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছো প্রমাণ সহকারে। ”

ইমাম আলী (আ.) এর পূর্ণ কাব্যকর্মের প্রথম দুই লাইন হচ্ছে , হে মৃত্যু , যে আমাকে রেহাই দেবে না। আমাকে মুক্তি দাও কারণ তুমি আমার সব বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছো। ”

‘ বিহারুল আনওয়ার ’ -এ রয়েছে যে , হযরত আব্বাস (আ.) নিজেকে একা দেখতে পেয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে এলেন এবং বললেন , আপনি কি আমাকে অনুমতি দিচ্ছেন ? ইমাম খুব কাঁদলেন এবং বললেন , হে প্রিয় ভাই , তুমি আমার পতাকাবাহক। তুমি যদি চলে যাও আমার সৈন্যদল ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে। ” আব্বাস বললেন , আমার হৃদয় সংকুচিত হয়ে আসছে এবং আমি জীবন থেকে তৃপ্ত হয়েছি এবং আমি আমার ভাইদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চাই এ মুনাফিক্বদের উপর। ” ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন , তাহলে পানি আনো এ বাচ্চাদের জন্য। ” আব্বাস এগোলেন এবং উপদেশ দিলেন এবং সতর্ক করলেন (সা আদের) সেনাবাহিনীকে , কিন্তু তাতে কোন ফল হলো না , এরপর তিনি ইমামের কাছে ফেরত এলেন এবং তাকে জানালেন। তিনি বাচ্চাদের কান্না শুনতে পেলেন , আহ , পিপাসা। ” তিনি একটি মশক নিলেন এবং তার ঘোড়ায় চড়লেন এবং ফোরাত নদীর দিকে গেলেন। চার হাজার ব্যক্তি , যারা ফোরাত নদী পাহাড়া দিচ্ছিলো তাকে সব দিক থেকে ঘেরাও করলো এবং তার দিকে তীর ছুঁড়লো। তিনি তাদের আক্রমণ করলেন এবং আশি জন ব্যক্তিকে হত্যা করলেন এবং তাদের দুভাগ করে ফেললেন , এরপর ফোরাত নদীতে প্রবেশ করলেন। তিনি পানি পান করার চেষ্টা করলেন কিন্তু হঠাৎ তার মনে হলো ইমাম ও তার পরিবারের পিপাসার কথা। তখন তিনি পানি ফেলে দিলেন এবং মশকটি ভরে নিলেন। তিনি মশকটি তার ডান কাঁধে ঝুলিয়ে তাঁবুর দিকে ফিরে চললেন। তারা তার পথ বন্ধ করে দিলো এবং সব দিক থেকে ঘেরাও করে ফেললো। তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করলেন যতক্ষণ না নওফেল তার তরবারি দিয়ে তার ডান হাত কেটে ফেললো। তখন তিনি মশকটি তার বাম কাঁধে নিলেন। নওফেল তখন তার বাম হাত কব্জি থেকে কেটে ফেললো এবং তিনি মশকটি দাঁতে ধরে রাখলেন। তখন একটি তীর এসে মশকটিতে বিদ্ধ হলো এবং পানি পড়ে গেলো। আরেকটি তীর তার হৃৎপিণ্ডেবিদ্ধ হলো এবং তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন এবং উচ্চকণ্ঠে ডাক দিলেন , হে আমার অভিভাবক , আমার কাছে আসুন। ” যখন ইমাম তার মাথার কাছে এলেন তিনি তাকে রক্তে ও বালিতে মাখামাখি দেখলেন এবং কাঁদতে লাগলেন।

তার শাহাদাতের বিষয়ে তুফাইল বলেন যে , এক ব্যক্তি তাকে আক্রমণ করে এবং তার মাথায় আঘাত করে একটি লোহার রড দিয়ে যাতে তার মাথা ফেটে যায় এবং তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন , হে আবা আবদিল্লাহ আমার সালাম আপনার উপর। ”

ইবনে নিমা বলেন যে , হাকীম বিন তুফাইল আব্বাসের জামা খুলে নেয় এবং তার দিকে একটি তীর ছুঁড়ে।

‘ বিহারুল আনওয়ার ’ -এ আছে , যখন আব্বাস (আ.) শহীদ হয়ে গেলেন ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন , এখন আমার পিঠ বাঁকা হয়ে গেলো এবং আমার গতি কমে গেলো। ”

আমি (লেখক) বলি যে , ইমাম হোসেইন (আ.) কে হযরত আব্বাস (আ.) এর সাহায্য করা আমাকে মনে করিয়ে দেয় তার (আব্বাসের) পিতা আমিরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.) এর কথা যিনি তার চাচাতো ভাই রাসূল (সা.) কে সাহায্য করেছিলেন। তাই আমি তা বইটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য উল্লেখকরবো।

জাহিয তার কিতাব উসমানিয়া ’ -তে ইবনে আবীল হাদীদ থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে , আবু বকর হিযরতের আগে মক্কায় কঠিন কষ্টের ভিতর ছিলেন। কিন্তু আলী বিন আবি তালিব (আ.) ছিলেন নিরাপদ। না কেউ তার পিছনে লেগে ছিলো , না তিনি কারো পিছে লেগেছিলেন। এর প্রতিবাদ করে আবু জাফর ইসকাফি বলেন যে , আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে একটি হাদীস উল্লেখ করেছি যে , ইমাম আলী (আ.) ইসলাম গ্রহণ করেন যখন তিনি ছিলেন একজন কিশোর এবং সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন। তিনি কুরাইশ মুশরিকদের তিরস্কার করতেন তার জিভ ও হৃদয় দিয়ে এবং তাদের জন্য তিনি ছিলেন এক বোঝা এবং তিনি উপত্যকায় (অবরোধের সময় নবীর সাথে) বন্দী ছিলেন , কিন্তু আবু বকর ছিলেন না। তিনি অবরোধের অন্ধকার ও সংকীর্ণ পরিস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিশ্বস্তসাথী ছিলেন এবং অত্যাচারের তিক্ত পেয়ালা পান করেছিলেন আবু লাহাব , আবু জাহল এবং অন্যান্যদের হাতে এবং বন্দীত্বের আগুনে পুড়েছিলেন। তিনি নবীর সাথে থেকে দুঃখ-কষ্ট বয়েছিলেন এবং বিরাট কষ্টের বোঝা নিজ কাঁধে বয়েছিলেন এবং বিপদজনক কাজগুলো পালন করতেন। তিনিই ছিলেন সে ব্যক্তি যিনি রাতে চুরি করে উপত্যকা থেকে বেরিয়ে কুরাইশদের সম্মানিত ব্যক্তি যেমন তময়েম বিন আদি এবং অন্যান্যদের সাথে দেখা করতেন আবু তালিব (আ.) এর আদেশে এবং খাদ্যসামগ্রীর বোঝা হাজার ভয় ও কাপুনির মাঝে বহন করে নিয়ে আসতেন বনি হাশিমের জন্য। যদি আবু জাহলের মত শত্রুরা তাকে দেখতে পেতো তাহলে তারা তার রক্ত ঝরাতো। নিশ্চয়ই আলী (আ.) ই ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি এ ধরনের কাজ করতেন অবরোধের দিনগুলোতে (তা কি আবু বকর ছিলেন ?)।

ইমাম আলী (আ.) তার বিখ্যাত খোতবায় সে সময়ে তার অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেন , “ তারা একত্রে শপথ করলো যে , তারা আমাদের সাথে লেনদেন করবেনা এবং বিবাহ সম্পর্ক করবে না। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আগুন জ্বালালো এবং তারা আমাদের পুরো বনি হাশিমকে কষ্টের পাহাড়ে ঠেলে দিলো। আমাদের মাঝে যারা বিশ্বাসী ছিলো তারা পুরস্কারের আশা করলো (আমাদের সাহায্য করার বিনিময়ে) এবং অবিশ্বাসীরা তাদের পরিবারকে সাহায্য করছিলো। কুরাইশদের সবগুলো গোত্র একত্র হলো তাদের বিরোধিতা করতে এবং তাদের খাদ্যসামগ্রী আটকে দিয়েছিলো। তারা সকাল সন্ধ্যা অপেক্ষা করতো অনাহারে তাদের মৃত্যুর জন্য এবং কোন পথ ছিলো না সমঝোতার ও উন্নতির। তাদের মনোবল বিদায় নিলো এবং তাদের আশা মরে গেলো। ”

আবু জাফর ইসকাফি বলেন যে , কোন সন্দেহ নেই যে আবু উসমান জাহিয মিথ্যার প্রভাবে পথ হারিয়েছে এবং ভুল ও বিশ্বাসঘাতকতার পথ অতিক্রম করেছে। শেষ পর্যন্তসে ছিলো বিভ্রান্ত এবং কিছুই বুঝে নি এবং বলেছে যা সে বলছে। সে ধারণা করেছে যে , ইমাম আলী (আ.) হিজরতের আগে কোন কষ্ট করেন নি এবং শুধু হিজরতের পর বদরের (যুদ্ধের) দিন থেকে তিনি দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হন।