শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45280
ডাউনলোড: 4001

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45280 / ডাউনলোড: 4001
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

তৃতীয় অধ্যায়

শাহাদাতের পরের ঘটনাবলী সম্পর্কে

পরিচ্ছেদ - ১

শাহাদাতের পরের ঘটনাবলী

বর্ণনাকারী বলে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাতের পর তারা তার পোশাক লুট করে নিয়ে যায়। তার গায়ের জামা নিয়ে যায় ইসহাক বিন হেইওয়াহ হাযরামি , সে তা পরার পর তার কুষ্ঠ রোগ দেখা দেয় এবং তার চুল পড়ে যায়।

বর্ণিত আছে যে , তার জামা একশত বা তার বেশী তীর , বর্শা এবং তরবারির আঘাতের চিহ্ন বহন করছিলো।

ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর দেহতে তেত্রিশটি বর্শার আঘাত ও চৌত্রিশটি তরবারির আঘাত ছিলো। তার পাজামা নিয়ে যায় বাহর বিন কা আব তামিমি এবং বর্ণিত আছে যে সে শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলো এবং তার পাগুলো অবশ হয়ে গিয়েছিলো। তার পাগড়ি কেড়ে নেয় আখনাস বিন মুরসিদ হাযরামি যে তা মাথায় পড়েছিলো এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তার স্যান্ডেলগুলো কেড়ে নেয় আসাদ বিন খালিদ এবং তার আংটি নেয় বাজদুল বিন সালীম কালবি যে তার আঙ্গুল কেটে তা নিয়ে যায় (আল্লাহর অভিশাপ তার ওপরে) । যখন মুখতার তাকে (বাজদুলকে) গ্রেফতার করলো সে তার হাত ও পা কেটে ফেলেছিলো , সে তার রক্ত প্রবাহিত হতে দিয়েছিলো যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়। ইমামের গোসলের পর পড়ার জন্য পশমের তৈরী লম্বা জামা ছিলো তা লুট করে নিয়ে যায় ক্বায়েস বিন আল আশআস। তার বর্ম নিয়ে যায় উমর বিন সা আদ এবং যখন তাকে হত্যা করা হয় মুখতার তা উপহার দেয় তার হত্যাকারী আবি উমরোহকে। তার তরবারি নিয়ে যায় জামী ’ বিন খালক আউদী , আবার এও বর্ণিত হয়েছে যে , এক তামিমি ব্যক্তি আসাদ বিন হানযালাহ অথবা ফালাফিস মুনশালি তা নিয়ে যায়। তার বিদ্যুৎগতি তরবারিটি যুলফিক্বার ছিলো না , ছিলো অন্য একটি যা ছিলো নবুয়ত ও ইমামতের একটি আমানত এবং তার বিশেষ আংটিও যা তার পরিবারের নিরাপত্তা হেফাযতে ছিলো।

শেইখ সাদুক্ব থেকে মুহাম্মাদ বিন মুসলিম বর্ণনা করেন যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর আংটি সম্পর্কে যে , কে তা নিয়েছে যখন তার পোশাক লুট করা হয়েছে। ইমাম (আ.) উত্তর দিলেন , যে রকম বলা হয় তেমন নয়। ইমাম হোসেইন (আ.) ওসিয়ত করে দিয়ে যান তার সন্তান ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) এর কাছে এবং হস্তান্তর করে গিয়েছিলেন তার আংটি এবং ইমামতের জিনিসপত্র যা এসেছিলো আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এর কাছে। ইমাম আলী (আ.) তা ইমাম হাসান (আ.) এর কাছে হস্তান্তর করেন এবং ইমাম হাসান (আ.) তা ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে দিয়ে যান , যা পরবর্তীতে আমার পিতা (ইমাম মুহাম্মাদ আল বাকির (আ.)-এর কাছে আসে এবং তা আমার কাছে পৌঁছেছে। এটি আমার কাছে আছে এবং আমি জুম ’ আর দিন পড়ি এবং তা পড়ে নামায পড়ি। ” মুহাম্মাদ বিন মুসলিম বলেন যে , আমি শুক্রবার দিন তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলাম এবং তার সাথে নামায পড়লাম। যখন তিনি নামায শেষ করলেন তিনি তার হাত আমার দিকে লম্বা করলেন এবং আমি আংটিটি দেখলাম তার আঙ্গুলে যাতে খোদাই করে লেখা আছে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই , আল্লাহ সাথে সাক্ষাতে প্রস্তুত আছি । তখন ইমাম বললেন , এটি হলো আমার প্রপিতামহ আবু আব্দুল্লাহ হোসেইন (আ.) এর আংটি ।

শেইখ সাদুক্বের আমালি ’ ও রাওযাতুল ওয়ায়েযীন ’ -এ বর্ণিত আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর ঘোড়া তার কেশর ও কপালকে তার রক্তে রঞ্জিত করে নেয় এবং দৌঁড়াতে শুরু করে ও চিৎকার করতে থাকে। যখন নবীর নাতনীরা তার চিৎকার শুনতে পেলেন তারা তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন এবং ঘোড়াটিকে দেখলেন তার আরোহী ছাড়া , এভাবে তারা জানতে পারলেন ইমাম হোসেইন (আ.) শহীদ হয়ে গেছেন।

ইবনে শহর আশোব তার মানাক্বিব ’ -এ এবং মুহাম্মাদ বিন আবি তালিব বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর ঘোড়া সেনাবাহিনীর ঘেরাও থেকে পালিয়ে এলো এবং তার কপালের চুল রক্তে ভেজালো। সে দ্রুত নারীদের তাঁবুর দিকে ছুটে গেলো এবং চিৎকার করতে লাগলো। এরপর সে তাঁবুর পিছনে গেলো এবং তার মাথাকে মাটিতে আঘাত করতে লাগলো যতক্ষণ না মৃত্যুবরণ করলো। যখন সম্মানিতা নারীরা দেখলেন ঘোড়াটিতে আরোহী নেই তারা বিলাপ শুরু করলেন এবং সাইয়েদা উম্মে কুলসুম (আ.) তার মাথাতে হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন এবং উচ্চ কণ্ঠে বললেন , হে মুহাম্মাদ , হে নানা , হে নবী , হে আবুল ক্বাসিম , ও আলী , ও জাফর , ও হামযা , ও হাসান , এই হলো হোসেইন , যে মরুভূমিতে পড়ে গেছে এবং তার মাথা ঘাড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তার পাগড়ী ও পোষাক লুট করে নিয়ে গেছে। ” এ কথা বলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।

সুপরিচিত যিয়ারতে নাহিয়াতে আছে , এবং আপনার ঘোড়া তাঁবুর দিকে চলে গেলো , ডাক দিতে দিতে এবং কাঁদতে কাঁদতে , এরপর যখন আপনার পরিবারের নারী সদস্যরা আপনার ঘোড়াকে আরোহী ছাড়া দেখলেন এবং ঘোড়ার জিনকে বাঁকা দেখলেন , তারা তাঁবু থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন , আগোছালো চুল নিয়ে , তাদের চেহারাতে আঘাত করে মাথার চাদর ছাড়া , বিলাপ করে , কাঁদতে কাঁদতে , সম্মানিত হওয়ার পর হতাশ অবস্থায় , তারা শাহাদাতের জায়গাটিতে দৌঁড়ে গেলেন এবং শিমর (অভিশপ্ত) আপনার বুকের উপর বসেছিলো , তার তরবারি চালাচ্ছিলো (আপনার ঘাড়ে) আপনাকে জবাই করার জন্য এবং আপনার চুল তার মুঠিতে ধরা ছিলো , সে আপনাকে জবাই করছিলো তার ভারতীয় তরবারি দিয়ে , আপনার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলো এবং আপনার শ্বাস প্রশ্বাস থেমে গেলো (আপনার মাথা বিচ্ছিন্ন করা হলো) এবং আপনার মাথা বর্শার আগায় তোলা হল । ১৭

পরিচ্ছেদ-

ইমাম হোসেইন (আ.) এর জিনিসপত্র লুট ও তার আহলুল বাইতের কান্না ও বিলাপ

সাইয়েদ ইবনে তাউস বর্ণনা করেন যে , একজন নারী গৃহকর্মী ইমাম হোসেইন (আ.) এর তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলো এবং এক ব্যক্তি তাকে বললো , হে আল্লাহর দাসী , তোমার সর্দারকে হত্যা করা হয়েছে। ” সে বলে যে , আমি আমার গৃহকর্তার কাছে দৌঁড়ে গেলাম এবং কাঁদতে শুরু করলাম , এ দেখে সব নারীরা উঠে দাঁড়ালেন এবং বিলাপ শুরু করলেন । বলা হয়েছে যে , তখন সেনাবাহিনী একত্রে এগিয়ে আসে রাসূলুল্লাহর (সা.) বংশধর ও যাহরা (আ.) এর চোখের আলো হোসেইন (আ.) এর তাঁবু লুট করার জন্য এবং নারীদের কাঁধ থেকে চাদর ছিনিয়ে নেয়ার জন্য। রাসূলুল্লাহর (সা.) পরিবারের কন্যারা এবং তার আহলুল বাইত একত্রে বিলাপ শুরু করলেন এবং কাঁদলেন তাদের সাথী ও বন্ধুদের হারিয়ে।

হামীদ বিন মুসলিম বলে যে , বকর বিন ওয়ায়েলের পরিবারের এক নারী , যে তার স্বামীর সাথে ছিলো , যে উমর বিন সা আদের সঙ্গে ছিলো , দেখলো যে , সেনাবাহিনী নারীদের তাঁবুগুলোর দিকে এগিয়েছে এবং তাদের বোরখা ছিনিয়ে নিচ্ছে , সে একটি তরবারি তুলে নিলো এবং তাঁবুগুলোর দিকে ফিরে চিৎকার করে বললো , হে বকরের পরিবার , তারা রাসূলুল্লাহর (সা.) কন্যাদের লুট করছে , কোন বিচার ও কোন রায় নেই আল্লাহর কাছে ছাড়া , উঠে দাঁড়াও এবং আল্লাহর নবীর রক্তের প্রতিশোধ নাও। ” তা শুনে তার স্বামী তাকে ধরে নিয়ে গেলো।

বর্ণিত আছে যে , নারীদের তাঁবু থেকে টেনে বের করে তাঁবুগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। নবী পরিবারের নারীদের মাথার চাদর ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো , তারা ছিলেন খালি পায়ে এবং বন্দীদের মত সারি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তারা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং তারা বলেছিলেন , আল্লাহর শপথ , আমাদেরকে হোসেইনের শাহাদাতের জায়গাটিতে নিয়ে চলো । যখন তাদের দৃষ্টি শহীদদের উপর পড়লো তারা বিলাপ করতে শুরু করলেন এবং তাদের চেহারায় আঘাত করতে লাগলেন। বলা হয়েছে , আল্লাহর শপথ আমি আলী (আ.) এর কন্যা যায়নাব (আ.) কে ভুলতে পারি না যিনি হোসেইনের (আ.) জন্য কাঁদছিলেন এবং শোকাহত কণ্ঠে বলেছিলেন , হে মুহাম্মাদ , আকাশের ফেরেশতাদের সালাম আপনার উপর , এ হলো হোসেইন , যে পড়ে গেছে (নিহত হয়েছে) , যার শরীর রক্তে ভিজে গেছে এবং তার শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে এবং আপনার কন্যারা বন্দী হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে অভিযোগ করি এবং মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.) এর কাছে এবং আলী মুরতাযা (আ.) ও ফাতিমা যাহরা (আ.) ও শহীদদের নেতা হামযার কাছে , হে মুহাম্মাদ (সা.) , এই হলো হোসেইন , যে মরুভূমিতে গড়িয়ে পড়েছে এবং বাতাস তার উপর শ্বাসকষ্ট পাচ্ছে এবং সে নিহত হয়েছে অবৈধ সন্তানদের হাতে , আহ শোক , ওহ মুসিবত , আজ আমার নানা রাসূল (সা.) পৃথিবী থেকে চলে গেছেন , হে মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথীরা , আসুন , দেখুন মুস্তাফার (সা.) বংশকে কিভাবে কয়েদিদের মত বন্দী করা হয়েছে। ”

অন্য আরেক বর্ণনায় নিচের কথাগুলি এসেছে , হে মুহাম্মাদ (সা.) , আপনার কন্যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আপনার বংশকে হত্যা করা হয়েছে। বাতাস তাদের উপর ধুলো ফেলছে। এ হলো হোসেইন , তার মাথা ঘাড় থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং তার পোষাক ও চাদর লটু করা হয়েছে। আমার বাবা কোরবান হোক তার জন্য যার দলকে সোমবার দিন হামলা করা হয়েছে। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার তাঁবুর দড়ি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার সাথে সাক্ষাত এখন আর সম্ভব নয় এবং তার আঘাতগুলো সুস্থ হবার নয়। আমার পিতার জীবন তার জন্য কোরবান হোক যার জন্য আমার জীবন কোরবান। আমার পিতা কোরবান হোক তার জন্য যিনি দুঃখের ভিতর ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নিহত হয়েছেন। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার দাড়ি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়েছে। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার নানা মুহাম্মাদ আল মুস্তাফা (সা.) , আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যারা নানা আকাশগুলোর রবের রাসূল। আমার পিতা কোরবান হোক খাদিজাতুল কুবরা (আ.) এর জন্য। আমার পিতা কোরবান হোক আলী আল মুরতাযার জন্য ; আমার পিতা কোরবান হোক ফাতিমা যাহরা (আ.) এর উপর যিনি নারীদের সর্দার । আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার জন্য সূর্য ফিরে এসেছিলো যেন তিনি নামায পড়তে পারেন। ”

বর্ণনাকারী বলেন , আল্লাহর শপথ , এ কথাগুলো শুনে প্রত্যেকেই , হোক সে বন্ধু অথবা শত্রু , কেঁদেছিলো। এরপর সাকিনা (আ.) তার পিতার দেহ জড়িয়ে ধরেন এবং বেদুইনরা চারিদিকে জমা হয় এবং তাকে তার কাছ থেকে টেনে সরিয়ে নেয়।

কাফ ’ আমির মিসবাহ ’ -তে আছে যে , সাকিনা (আ.) বলেছেন যে , যখন হোসেইন (আ.) শহীদ হয়ে যান , আমি তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম এবং আমি তাকে বলতে শুনলাম , হে আমার শিয়ারা (অনুসারীরা) আমাকে স্মরণ করো যখন পানি পান করো এবং আমার জন্য কাঁদো যখন ভ্রমণকারী অথবা শহীদের কথা শোন। ” তা শুনে আমি ভয়ে উঠে পড়ি এবং কান্নার কারণে আমার চোখ ব্যথা করছিলো এরপর আমি আমার মুখে আঘাত করতে থাকি।১৮

পরিচ্ছেদ - ৩

শহীদদের মাথা , নারীদের অলংকার এবং মজলুমদের সর্দারের উট লুট করে নেয় কুফার সেনাবাহিনী

শেইখ মুফীদ বলেন যে , তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর জিনিসপত্র এবং উটগুলো এবং তার পরিবারের নারী সদস্যদের বোরখাগুলো পর্যন্তলুট করে নিয়ে যায়।

হামীদ বনি মুসলিম বলে যে , আল্লাহর শপথ , আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি যে , তারা মহিলাদের ও কন্যাদের কাঁধ থেকে বোরখা গায়ের জোরে ছিনিয়ে নিয়েছে।

আযদি বলেন যে , সুলাইমান বিন আবি রাশিদ বর্ণনা করেছে হামীদ বিন মুসলিম থেকে যে , আমি আলী বিন হোসেইন আল আসগার (ইমাম যায়নুল আবেদীন)-এর বিছানার পাশে গেলাম , তিনি অসুস্থ ও শয্যাশায়ী ছিলেন। শিমর বিন যিলজওশান তার সাঙ্গপাঙ্গ সহ তার কাছে আক্রমণাত্মক ভাবে উপস্থিত হলো এবং বললো , আমরা কি তাকে হত্যা করবো ? আমি বললাম , সুবহানালাহ , আমরা কি বাচ্চাদেরও মারবো ? এ বাচ্চা ছেলেটি এখনই মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গেছে ” । আমি তার উপর লক্ষ্য রাখলাম এবং তাকে রক্ষা করলাম যখনই কেউ তার কাছে আসতে চাইলো , যতক্ষণ না উমর বিন সা আদ সেখানে এলো। সে বললো , কেউ যেন নারীদের তাঁবুতে না ঢোকে এবং কেউ যেন এ অসুস্থ বাচ্চাকে বিরক্ত না করে। যারা তাদের জিনিসপত্র লুট করেছে তাদের উচিত সেগুলো তাদেরকে ফেরত দেয়া। ” আল্লাহর শপথ , কেউ কিছু ফেরত দেয়নি।

কিরমানির আখবারুদ দাওল ’ -এ বর্ণিত আছে শিমর (তার উপর আল্লাহর গযব বর্ষিত হোক) সিদ্ধান্তনিলো (ইমাম) আলী আল আসগার (যায়নুল আবেদীন) কে হত্যা করবে , যিনি অসুস্থ ছিলেন। যায়নাব (আ.) বিনতে আলী বিন আবি তালিব (আ.) এলেন এবং বললেন , “ আল্লাহর শপথ , তোমরা তাকে হত্যা করবে না যতক্ষণ না আমাকে হত্যা করো। ” তা শুনে শিমর তার উপর থেকে হাত উঠিয়ে নিলো।

‘ রাওযাতুস সাফা ’ তে বর্ণিত আছে যে , শিমর অসুস্থ ইমাম (যায়নুল আবেদীন আ.)-এর তাঁবুতে প্রবেশ করলো। সে তাকে দেখলো বালিশের উপর শুয়ে আছেন। শিমর তার তরবারি বের করলো তাকে হত্যা করবে বলে , তখন হামীদ বিন মুসলিম বললো , সুবহানাল্লাহ , কিভাবে তুমি এ বাচ্চা ছেলেটিকে মারবে ? তাকে হত্যা করো না। ” কেউ বলে যে উমর বিন সা আদ শিমরের হাত ধরে ফেললো এবং বললো , তুমি কি আল্লাহর সামনে লজ্জিত নও ? তুমি এ অসুস্থ ছেলেটিকে মারতে চাও ? শিমর বললো , সেনাপতি উবায়দুল্লাহ থেকে আমাদের প্রতি আদেশ আছে হোসেইনের প্রত্যেক পুত্রসন্তানকে হত্যা করার জন্য। ” উমর তাকে বার বার থামালো এবং শেষে সে পিছু হটলো। এপর সে আদেশ করলো মুস্তাফা (সা.) এর বংশধরদের তাঁবু জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য।

ইবনে শাহর আশোবের মানাক্বিব ’ -এ বর্ণিত আছে যে , আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন যে , কারবালায় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) অসুস্থ হওয়ার কারণ ছিলো এই যে , তিনি একটি লম্বা বর্ম পরেছিলেন এবং তিনি এর অতিরিক্ত অংশ ছিঁড়ে ফেলেন খালি হাতে (এ জন্য তার জ্বর এসে যায়) ।

শেইখ মুফীদ বলেন যে , অভিশপ্ত উমর বিন সা আদ তাঁবুগুলির সামনে এলো এবং নারীরা কাঁদতে এবং বিলাপ করতে শুরু করলেন তার সামনে। সে তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিকে ফিরলো এবং বললো , কেউ যেন নারীদের তাঁবুতে না ঢোকে এবং কেউ যেন অসুস্থ বাচ্চাকে বিরক্ত না করে । নারীরা তার কাছে চাইলেন যা কিছু তাদের কাছ থেকে লুট করে নেয়া হয়েছে তা ফেরত দেয়া হোক যেন তারা নিজেদের ঢাকতে পারেন (বোরখাতে) । সে বললো , এ মহিলাদের কাছ থেকে যা কিছু লুট করা হয়েছে তা তাদের ফেরত দেয়া উচিত। ” আল্লাহর শপথ , কেউ কিছু ফেরত দেয় নি। এরপর সে কিছু পাহারাদার নিয়োগ করে নারীদের তাঁবুগুলির জন্য এবং অসুস্থ ইমামের জন্য এবং বলে , এদের পাহারা দাও , কেউ যেন এখানে প্রবেশ না করে এবং তাদের হত্যা না করে। ” এ কথা বলে সে তার তাঁবুতে ফিরে যায় এবং তার সাথীদের মাঝে উচ্চকণ্ঠে বলে , কে আছে স্বেচ্ছায় হোসেইনের উপর ঘোড়া চালাবে ?

তাবারি বলেন যে , সিনান বিন আনাস এলো উমর বিন সা আদের কাছে এবং তার তাঁবুর দরজায় দাঁড়ালো এবং বললো , আমার ঘোড়ার জিনের ব্যাগ ভর্তি করে দাও পুরস্কারে , কারণ আমি বাদশাহকে হত্যা করেছি যার দরজায় পাহারা ছিলো। আমি তাকে হত্যা করেছি যে ছিলো শ্রেষ্ঠ তার বাবা ও মায়ের দিক থেকে এবং যখন পূর্বপুরুষের আলোচনা হয়েছে তার ছিলো শ্রেষ্ঠ পূর্বপুরুষ । ১৯ উমর বিন সা আদ বললো , তুমি পাগল এবং কখনো তোমার চিন্তার সুস্থতা আসবেনা। তাকে আমার কাছে আনো। ” তাকে আনা হলো এবং উমর তার বেত দিয়ে তার হাতে আঘাত করলো এবং বললো , হে পাগল , তুমি যা উচ্চারণ করেছো তা যদি ইবনে যিয়াদ শোনে সে তোমার মাথা উড়িয়ে দিবে। ”

উক্ববাহ বিন সা মআনকে উমর বিন সা আদ গ্রেফতার করে যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর স্ত্রী রাবাবের কর্মচারী ও দাস ছিলো এবং তাকে জিজ্ঞেস করলো , তুমি কে ? সে বললো , আমি একজন দাস। ” তখন তাকে মুক্ত করে দেয়া হয় এবং আমরা তার ব্যাপারে বর্ণনা করেছি মারক্বা বিন সামামাহর সাথে , পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে।

বর্ণিত আছে উমার বিন সা আদ তার সাঙ্গপাঙ্গদের মাঝে উচ্চকণ্ঠে বললো , তোমাদের মধ্যে কে স্বেচ্ছায় হোসেইনের দেহের উপর ঘোড়া চালাবে ? তাদের মধ্যে দশ জন স্বেচ্ছায় তা করার জন্য এগিয়ে এলো। তাদের মধ্যে ছিলো ইসহাক্ব বিন হেইওয়াহ হাযরামি , যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর জামা লুটে নিয়েছিলো এবং পরে শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলো কুষ্ঠরোগে এবং আহবাস বিন মারসাদ হাযরামি। তারা এগিয়ে গেলো এবং তাদের ঘোড়া চালালো যতক্ষণ পর্যন্তনা ইমাম হোসেইন (আ.) এর পিঠ ও বুক ভেঙ্গে পিশে ফেললো। আমাকে জানানো হয়েছে যে এ ঘটনার পর আহবাশ বিন মারসাদ যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ছিলো , তখন একটি অজানা তীর এসে তাকে বিদ্ধ করলো এবং সে মৃত্যু মুখে পতিত হলো।

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , উমর বিন সা আদ তার সাঙ্গপাঙ্গদের মাঝে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে , কে চায় স্বেচ্চায় হোসেইনের পিঠ ও বুকের উপর ঘোড়া চালাতে ? দশ জন লোক তা করার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে এলো। তাদের মধ্যে ছিলো , ইসহাক বিন হেইওয়াহ হাযরামি , যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর জামা লুটে নিয়েছিল , অন্যরা ছিলো আখনাস বিন মুরসিদ , হাকীম বিন তুফাইল সুমবোসি , উমর বিন সাবীহ সাইদাউই , রাজা ’ বিন মানকায আবাদি , সালীম বিন খাইসামাহ জুফী , ওয়াহেয বিন নায়েম , সালেহ বিন ওয়াহাব জুফী , হানি বিন সাবীত হাযরামি এবং উসাইদ বিন মালিক (আল্লাহর অভিশাপ তাদের সবার উপর) । তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর দেহ ঘোড়ার খরেু পিষ্ট করে যতক্ষণ না তার বকু ও পিঠ পিষে যায়। বর্ণনাকারী বলে যে এ দশ জন উবায়দুল্লাহর কাছে আসে এবং উসাইদ বিন মালিক তাদের মধ্যে থেকে বলে যে , “ আমরা শক্তিশালী ঘোড়ার খুর দিয়ে পিঠের পরে বুক পিষেছি। ” (উবায়দুল্লাহ) ইবনে যিয়াদ বললো , তোমরা কারা ? তারা বললো , আমরা হোসেইনের পিঠ ঘোড়ার পায়ের নিচে পিষ্ট করেছি যতক্ষণ পর্যন্তনা তার বুকের হাড় গুড়ো হয়ে গেছে। ” সে (উবায়দুল্লাহ) তাদেরকে কিছু উপহার দিলো।

আবু আমর যাহিদ বলে যে , আমরা ঐ দশ জন সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছি এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে , তাদের সবাই ছিলো জারজ। (পরে) মুখতার তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেন এবং তাদের হাত ও পা লোহার বেড়ায় বাঁধেন। এরপর তিনি আদেশ দেন ঘোড়া দিয়ে তাদের পিঠ পিষ্ট করতে , যতক্ষণ পর্যন্তনা তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলো।

সমাপ্ত