শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 45431
ডাউনলোড: 4014

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45431 / ডাউনলোড: 4014
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মুসলিম বিন আক্বীল (আ.) উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের দরবারে

আর মুসলিমের বিষয়ে , মুহাম্মাদ বিন আল আশআস তাকে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের প্রাসাদে নিয়ে গেলো। মুহাম্মাদ একা সেখানে প্রবেশ করলো এবং তাকে বললো যে সে মুসলিমকে বন্দী করেছে কিন্তু তাকে নিরাপত্তার আঙ্গীকারও দিয়েছে। উবায়দুল্লাহ বললো , তোমার সেই অধিকার নেই বরং আমি তোমাকে পাঠিয়েছিলাম তাকে আমার কাছে ধরে আনার জন্য। ” মুহাম্মাদ তা শুনে চুপ হয়ে গেলো। যখন মুসলিম প্রাসাদের দরজায় বসে ছিলেন তিনি একটি জগ দেখলেন ঠাণ্ডা পানিতে পূর্ণ এবং সামান্য একটু চাইলেন। মুসলিম বিন আমর বাহিলি বললো , তুমি কি দেখছো এ পানি কত ঠাণ্ডা ? আল্লাহর শপথ , তুমি এ থেকে এক ফোঁটাও পাবে না যতক্ষণ না তুমি জাহান্নামের ফুটন্ত পানি পান করবে। ” মুসলিম তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার পরিচয় কী। সে উত্তর দিলো , আমি সত্যকে স্বীকৃতি দিয়েছি আর তুমি তা পরিত্যাগ করেছো। আমি হলাম সেই ব্যক্তি যে জাতির ও ইমামের কল্যাণকামী অথচ তুমি তার জন্য অকল্যাণ কামনা করেছো এবং আমি তার প্রতি অনুগত আর তুমি তাকে অমান্য করেছো। আমি মুসলিম বিন আমর বাহিলি। ” মুসলিম উত্তর দিলেন , তোমার মা তোমার জন্য কাঁদুক , কী নিষ্ঠুর ও সহানুভূতিহীন এবং কর্কশ ব্যক্তি তুমি। হে বাহিলার সন্তান , নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামের ফুটন্ত পানি পান করার বিষয়ে এবং জাহান্নামে চিরদিন থাকার বিষয়ে আমার চেয়ে বেশী যোগ্য। ” তখন আমারাহ বিন আতবাহ তাকে পানি দিতে বললো।

ইরশাদ ও ইবনে আসীরের কামিল ’ -এ বর্ণিত হয়েছে যে আমর বিন হুরেইস তার পরামর্শককে পানি আনতে পাঠালো। পরামর্শক একটি পানির জগ , একটি মুখ মোছার রুমাল ও একটি পেয়ালা আনলো এবং মুসলিমকে পানি পান করতে দিলো। [কামিল] যখন মুসলিম পেয়ালাটি নিলেন পানি পান করার জন্য তখন তা তার নিজের রক্তে ভরে গেলো , তাই তিনি তা পান করতে পারলেন না। তিন বার তার কাপ পানিতে পূর্ণ করা হলো এবং যখন তৃতীয় বারের মত পানি ভরা হলো তখন তার সামনের দাঁত এর ভিতরে পড়লো। মুসলিম বললেন , আলহামদুলিল্লাহ , এ পানি যদি আমার জন্য হতো তাহলে আমি তা পান করতে পারতাম। ”

এরপর মুসলিমকে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের সামনে নেয়া হলো এবং তিনি তাকে সালাম বললেন না। একজন প্রহরী বললো , কেন তুমি সেনাপতিকে সালাম বললে না ? মুসলিম উত্তর দিলেন , কেন তাকে আমি সালাম বলবো যখন সে আমাকে হত্যা করতে চায় এবং যদি সে আমার মৃত্যু না চায় তাহলে তার জন্য আমার প্রচুর সালাম রয়েছে। ” উবায়দুল্লাহ বললো , আমার জীবনের শপথ , তুমি অবশ্যই মরবে। ” মুসলিম বললেন , তাই কি হবে ? এতে উবায়দুল্লাহ আবার হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলো। তখন মুসলিম বললেন , যদি তাই হয় তাহলে আমাকে কিছু সময় দাও যেন আমি আমার আত্মীয়দের কারো কাছে আমার অসিয়ত করে যেতে পারি। ” উবায়দুল্লাহ তাতে সায় দিলো। মুসলিম উমর বিন সা আদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন , আমাদের মাঝে আত্নীয়তা রয়েছে। আমি চাই তোমার কাছে একান্তে কিছু বলতে। ” উমর রাজী হলো না। এতে উবায়দুল্লাহ বললো , তোমার চাচাতো ভাইয়ের আশা পূরণ করতে অস্বীকার করো না। ” তা শুনে উমর উঠে দাঁড়ালো [ইরশাদ] এবং মুসলিমের সাথে এমন এক জায়গায় বসলো যেখানে উবায়দুল্লাহ তাদের দেখতে পারে [কামিল] ।

মুসলিম বললেন , আমি কুফাতে প্রায় সাত শত দিরহাম ঋণী হয়েছি , তাই তা শোধ করো মদিনাতে আমার যে সম্পত্তি আছে তা বিক্রয় করে। ” [কামিল] এবং আমার মৃত্যুর পর আমার লাশ উবায়দুল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে দাফন করো। এছাড়া কাউকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে পাঠাও যে তাকে ফেরত পাঠাবে। ” উমর উবায়দুল্লাহর কাছে গেলো এবং বললো , যা মুসলিম তাকে বলেছে। উবায়দুল্লাহ বললো , একজন বিশ্বস্ত লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে না কিন্তু কোন কোন সময় একজন বিশ্বাসঘাতক একটি বিশ্বস্ততা পূরণ করে। আর (মুসলিমের) সম্পদের বিষয়ে তুমি যা করতে চাও কর এবং হোসেইনের বিষয়ে , যদি সে আমাদের দিকে না আসে আমরা তার দিকে যাবো না। কিন্তু সে যদি আমাদের মোকাবিলা করে তাহলে আমরা তার (ক্ষতি করা) থেকে নিজেদের বিরত রাখবো না। তার (মুসলিমের) লাশ সম্পর্কে , আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে তোমার হস্তক্ষেপ গ্রহণ করবো না। ” অন্যরা বলে যে , সে বলেছিলো , আর লাশের বিষয়ে , আমরা তাকে হত্যা করার পর এটি আমাদের মাথা ব্যথা নয় , তা নিয়ে তোমার যা ইচ্ছা করতে পারো। ” এরপর সে মুসলিমের দিকে ফিরলো এবং বললো , হে আক্বীলের সন্তান , জনগণ ঐক্যবদ্ধ ছিলো এবং পরস্পর একমত ছিলো , কিন্তু তুমি এলে এবং তাদের বিভক্ত করলে এবং বিভেদ সৃষ্টি করলে। ” মুসলিম উত্তর দিলেন , তা ঠিক নয় , এ শহরের লোকদের অভিমত হচ্ছে যে তোমার পিতা (যিয়াদ) অনেক ধার্মিক লোককে হত্যা করেছে। সে তাদের রক্ত ঝরিয়েছে এবং খোসরো (প্রাচীন ইরানের শাসক) ও সিযারদের (রোমের শাসক) অনুসরণ করেছে। আমরা এসেছি ন্যায়বিচারের আদেশ দিতে এবং পবিত্র কোরআন ও (নবীর) সুন্নাহর দিকে আমন্ত্রণ জানাতে। ” উবায়দুল্লাহ বললো , হে সীমালঙ্ঘনকারী , এগুলোর সাথে তোমার সম্পকর্কী ? কেন তুমি তা জনগণের ভিতরে করো নি যখন তুমি মদীনায় মদপানে ব্যস্ত ছিলে ? (আউযুবিল্লাহ) মুসলিম বললেন , আমি মদ পান করেছি ? আল্লাহর শপথ , তিনি জানেন যে তুমি সত্য কথা বলছো না , না আমি সেরকম যেরকম তুমি আমাকে বর্ণনা করছো , অথচ মদপান হচ্ছে তাদের অভ্যাস যারা ক্রোধ ও শত্রুতায় (উবায়দুল্লাহ ও তার পিতা) মুসলমানদের রক্ত ঝরায় এবং যে উল্লাস ও আনন্দ প্রকাশ করে যেন সে কখনোই কোন অশ্লীল কাজ করে নি (ইয়াযীদের কথা ইঙ্গিত করে) । ” উবায়দুল্লাহ প্রচণ্ড রাগান্বিত হলো এবং বললো , আল্লাহ আমাকে হত্যা করুক যদি আমি তোমাকে হত্যা না করি এমনভাবে যেভাবে ইসলামে কাউকে কোন দিন হত্যা করা হয় নি। ” মুসলিম বললেন , এটি তোমার জন্যই শোভা পায় যে তুমি ইসলামে নতুন কিছু আবিষ্কার (বিদ ’ আত) চালু করবে যা কোন দিন ঘটে নি। তুমি একজন জঘন্য খুনী , নির্যাতনকারী বদমাশ , খারা প্রকৃতির এবং নীচ শ্রেণীর মানুষ , তাদের সবার চাইতে যারা তোমার আগে চলে গেছে। ” তখন উবায়দুল্লাহ তাকে , ইমাম হোসেইন (আ.) কে ও ইমাম আলী (আ.) ও হযরত আক্বীল (আ.) কে গালিগালাজ করতে লাগলো এবং এ সময় মুসলিম তার সাথে কথা বললেন না।

মুসলিম বিন আক্বীল বিন আবি তালিব (আ.) কে হত্যা

মাসউদী বলেন , যখন তাদের কথা শেষ হলো এবং মুসলিম উবায়দুল্লাহর সাথে কঠোর ভাষায় কথা বললেন , সে আদেশ করলো মুসলিমকে প্রাসাদের ছাদে নিয়ে যেতে এবং বুকাইর বিন আহমারিকে বলা হলো তার মাথা কেটে ফেলতে ও তার প্রতিশোধ নিতে।

জাযারি বলেন যে , মুসলিম (আ.) মুহাম্মাদ বিন আল আশআসকে বলেছিলেন , আল্লাহর শপথ , আমি কখনই আত্মসমর্পণ করতাম না যদি না তুমি আমাকে নিরাপত্তার অঙ্গীকার দিতে। তাই আমাকে নিরাপত্তা দাও তোমার তরবারিটি দিয়ে যেহেতু তোমার অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়েছে। এরপর তারা তাকে প্রাসাদের ছাদে নিয়ে গেলো এবং তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছিলেন এবং তাঁর প্রশংসা ও তাসবীহ করছিলেন। তখন তারা তাকে সে জায়গায় নিলো যেখান থেকে মুচিদের দেখা যায় এবং তার পবিত্র মাথাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো যা নিচে পড়ে গেলো (আল্লাহর রহমত ও করুণা তার উপর বর্ষিত হোক) । তার হত্যাকারী ছিলো বুকাইর বিন হুমরান যাকে মুসলিম এর আগে আহত করেছিলো। এরপর তার দেহটিও নিচে ফেলে দেয়া হলো। যখন বুকাইর নিচে নেমে এলো উবায়দুল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলো , মুসলিম কী বলছিলো যখন তুমি তাকে ছাদে নিয়ে গেলে ? সে বললো যে , মুসলিম আল্লাহর প্রশংসা করছিলো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছিলো। আমি যখন তাকে হত্যা করতে চাইলাম আমি তাকে বললাম আমার কাছে আসতে এবং বললাম , সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে তোমার উপর ক্ষমতা দিয়েছেন আর এভাবে আমি তোমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছি। এরপর তাকে আঘাত করলাম কিন্তু তা ব্যর্থ হলো। তখন মুসলিম বললো , হে কৃতদাস , তুমি কি তোমার প্রতিশোধ নাও নি আমাকে আহত করে ? উবায়দুল্লাহ বললো , মৃত্যুর কিনারায় দাঁড়িয়েও এ রকম মর্যাদাবোধ ? বুকাইর বললো , এরপর আমি তাকে দ্বিতীয় আঘাত করলাম এবং তাকে হত্যা করলাম। ”

তাবারি বলেন যে , মুসলিমকে প্রাসাদের ছাদে নিয়ে যাওয়া হলো এবং তার মাথা বিচ্ছিন্ন করা হলো এবং দেহটি নিচে জনতার দিকে ছুঁড়ে দেয়া হলো। আদেশ দেয়া হলো যে তার লাশ ময়লা ফেলার জায়গার নিয়ে যাওয়া হোক এবং সেখানে ঝুলিয়ে রাখা হোক।