ইমাম হাসান রা: এর দৃষ্টিতে লাইফ স্টাইল

ইমাম হাসান রা: এর দৃষ্টিতে লাইফ স্টাইল0%

ইমাম হাসান রা: এর দৃষ্টিতে লাইফ স্টাইল লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ: ইমাম হাসান (আ.)

ইমাম হাসান রা: এর দৃষ্টিতে লাইফ স্টাইল

লেখক: আবদুল্লাহ
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 5198
ডাউনলোড: 2190

পাঠকের মতামত:

ইমাম হাসান রা: এর দৃষ্টিতে লাইফ স্টাইল
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 57 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 5198 / ডাউনলোড: 2190
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম হাসান রা: এর দৃষ্টিতে লাইফ স্টাইল

ইমাম হাসান রা: এর দৃষ্টিতে লাইফ স্টাইল

লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বাংলা

16) আল্লাহর প্রেমিক

যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে , সে তার প্রতিপালককে চিনেছে।29 আর যে তার প্রতিপালককে চিনেছে সে তাকে ভালবাসে। অতএব আল্লাহকে ভালবাসার পূর্বশর্ত হলো তাকে ভালোভাবে চিনতে হবে। তাই ইমাম হাসান রা: বলেন

من عرف الله أحبه

অর্থ

যে ব্যক্তি আল্লাহকে চিনতে পেরেছে সে তাকে ভালবাসে।30

যারা আল্লাহকে ভালবাসে তারা কখনো তার নির্দেশের বিরোধীতা করে না। এ ভালবাসার পরিমাণ যার যত বেশী হবে সে তত বেশী আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে।

মহানবী স. বলেন: যেহেতু আল্লাহ তোমাদেরকে নেয়ামত দান করেন সেহেতু তাকে ভালবাস , আর আল্লাহর কারণে আমাকে ভালবাস , আর আমার কারণে আমার আহলে বাইতকে ভালবাস।31

আল্লাহ তাআলা মূসা আ: কে বলেন , হে মূসা! যে দাবী করে যে , আমাকে ভালবাসে অথচ রাত্রিবেলায় আমাকে স্মরণ না করে শুধু ঘুম পাড়ে , ঐ ব্যক্তি মিথ্যা বলে।32

17) পবিত্র মন

কিয়ামতের দিন ধন সম্পদ এবং সন্তান সন্ততি মানুষের কোন উপকারে আসবে না। সেদিন যারা পাক পবিত্র মন নিয়ে আল্লাহর সাথে মোলাকত করবে তারাই রক্ষা পাবে।33 আর মনকে পাক পবিত্র রাখতে হলে সর্বপ্রথম যা করা দরকার সে সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

أَسْلَمُ الْقُلُوبِ مَا طَهُرَ مِنَ الشُّبُهَاتِ

অর্থ

সন্দেহ সংশয় থেকে যে অন্তর পবিত্র থাকে তা হলো সবচেয়ে বেশী পবিত্র অন্তর।34

পবিত্র অন্তর নিয়ে আল্লাহর সাথে মোলাকাত করতে হলে সে অন্তরকে জীবিত রাখতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে , 4 টি কাজ মানুষের অন্তরকে মেরে ফেলে:

1. একের পর এক গুনাহ করা ,

2. মহিলাদের সাথে বেশী কথা বলা ,

3. নির্বোধ ব্যক্তির সাথে কথা কাটাকাটি করা ,

4. মৃত ব্যক্তিদের সাথে উঠাবসা করা। এখানে মৃত ব্যক্তি বলতে ঐসব ধনী ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা ভোগ বিলাসিতায় মগ্ন এবং স্বীয় কামনা পূরণে ব্যস্ত।35

18) অসচেতনতা

অসচেতনতা ও অসাবধানতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অসচেতন মানুষ সবসময় ক্ষতির সম্মুখিন হয়। অসচেতন ও গাফেল মানুষের চেতনা অনেক দেরীতে ফিরে , কারণ সে জাগ্রত থাকা সত্বেও ঘুমন্ত ব্যক্তির ন্যায়। সে এ লম্বা ঘুম থেকে যখন জাগ্রত হয় তখন দেখে যে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাফলতির ঘুম থেকে জাগ্রত হতে হবে। মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান যখন 24 ঘন্টা সবাইকে পথভ্রষ্ট করার জন্য জাগ্রত তখন এক মূহুর্তের ঘুমই ধ্বংসের দারপ্রান্তে উপনীত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। গাফলতি ও অসচেতনতা সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

الْغَفْلَةُ تَرْكُكَ الْمَسْجِدَ وَ طَاعَتُكَ الْمُفْسِدَ

অর্থ

অসচেতনতা হলো মসজিদ যাওয়া পরিত্যাগ করা এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের আনুগত্য করা।36

অতএব গাফলতির ঘুম জাগ্রত হতে হলে আমাদেরকে নিয়মিত মসজিদ যেতে হবে এবং যারা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত তাদের আনুগত্য পরিহার করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসতে হবে।

19) বিবেকবুদ্ধির গুরুত্ব

বিবেকবুদ্ধি হলো আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি যা দ্বারা মানুষ মহান আল্লাহর ইবাদত করে। বিবেকবুদ্ধি হলো মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত আভ্যন্তরিণ দলীল যা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের পথ দেখায়। তাই ইমাম হাসান রা: বলেন

بِالْعَقْلِ تُدْرَكُ الدَّارَانِ جَمِيعاً وَ مَنْ حَرُمَ مِنَ الْعَقْلِ حَرُمَهُمَا جَمِيعاً

অর্থ

বিবেকবুদ্ধির দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাত অর্জন করা যায়। অতএব যে ব্যক্তি বিবেকবুদ্ধি থেকে বঞ্চিত সে উভয় জগতকে হাতছাড়া করে।37

বিবেকবুদ্ধি দুধরনের:

1. এক ধরনের বিবেকবুদ্ধি মানুষের স্বভাবের সাথে সংশ্লিষ্ট।

2. আরেক ধরনের বিবেকবুদ্ধি হলো যা মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে অর্জন করে।

যে ব্যক্তির স্বাভাবিক বিবেকবুদ্ধি নাই সে জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে কোন বিবেকবুদ্ধি অর্জন করতে পারে না।

বিবেকবুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে আরেকটি হাদীসে ইমাম হাসান রা: বলেন

لَا أَدَبَ لِمَنْ لَا عَقْلَ لَهُ

অর্থ

যে ব্যক্তির কোন বিবেকবুদ্ধি নাই তার কোন আদব নাই।38

20) মুসিবতের গুরুত্ব

বিপদ-আপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরনের নেয়ামত। যখন আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে ভালবাসেন তখন তাকে বিভিন্ন মুসিবতে আক্রান্ত করেন। ঐ সময় যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করবে এবং মুসিবতকে নেয়ামত মনে করবে তার স্থান হবে বেহেশত। আল্লাহর নিকট যার মর্যাদা যত বেশী হবে এ দুনিয়ায় তার বিপদ-আপদও বেশী হবে।

আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ স. যেহেতু আল্লাহর খুব প্রিয় বান্দা ছিলেন সেহেতু তাকে পূর্বের নবীদের থেকে বেশী কষ্ট স্বীকার করতে হয়। মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতও অনেক দূ:খ-কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন।

অতএব বালা-মুসিবতকে শাস্তি মনে না করে আল্লাহ প্রদত্ত একটি বড় নেয়ামত এবং অনুগ্রহের সূচনা মনে করতে হবে। আর এ সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

المصائب مفاتيح الأجر

অর্থ

বালা-মুসিবত প্রতিদানের চাবি স্বরূপ।39

অতএব মুসিবতে আক্রান্ত হলে ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য হলো আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং আনন্দ ও কষ্ট উভয় অবস্থায় আল্লাহর প্রতি রাজি থাকা।

21) চুপ থাকার গুরুত্ব

যে ব্যক্তি বেশী অপ্রয়োজনীয় কথা বলে , তার বেশী ভুল হয়। আর যে ব্যক্তির বেশী ভুল হয় তার লজ্জা কমে যায়। যার লজ্জা কমে যায় তার পরহেযগারীতাও কমে যায়। আর যার পরহেযগারীতা কমে যায় তার অন্তর মরে যায়। যার অন্তর মরে যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।40 এজন্য প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা উচিত নয়। চুপ থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

نِعْمَ الْعَوْنُ الصَّمْتُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ وَ إِنْ كُنْتَ فَصِيحا

অর্থ

যতই বাকপটু হও না কেন , অনেক ক্ষেত্রে চুপ থাকাটাই বেশী ভাল।41

স্বীয় জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে অনেক সময় মানুষ বিপদে আক্রান্ত হয় , আবার কখনো আল্লাহর গজবে নিপতিত হয়। অতএব আমাদেরকে অনর্থক কথা বলা পরিহার করতে হবে।

22) কোন জিনিস কার অর্ধেক

ইমাম হাসান রা: বলেন

حسن السؤال نصف العلم و مداراة الناس نصف العقل و القصد في المعيشة نصف المئونة

অর্থ

1. ভালো প্রশ্ন করা জ্ঞানের অর্ধেক।

2. মানুষের সাথে সমঝোতা করা বিবেকবুদ্ধির অর্ধেক।

3. আর জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা জীবিকা নির্বাহের খরচকে অর্ধেকে নিয়ে আসে।42

23) খাওয়ার সময় হাত ধুয়ার গুরুত্ব

আজকাল অধিকাংশ মানুষের দুটি বড় সমস্যা হলো দারিদ্র্য ও দুশ্চিন্তা। সম্ভবতঃ এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার কোন দুশ্চিন্তা নাই। দুশ্চিন্তার কারণে অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এ দুটি সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে ইমাম হাসান রা: বলেন

غسل اليدين قبل الطّعام ينفي الفقر، و بعده ينفي الهمّ

অর্থ

খাওয়ার আগে দুহাত ধৌত করলে দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়। আর খাওয়ার পর দুহাত ধৌত করলে দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়।43

24) ভীতু ব্যক্তির পরিচয়

যে আল্লাহকে ভয় করবে , দুনিয়ার সবাই তাকে দেখে ভয় পাবে। আর যে আল্লাহকে ভয় করবে না সে দুনিয়ার সবাইকে দেখে ভয় পাবে। এরকম ভীতু ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

قِيلَ فَمَا الْجُبْنُ قَالَ الْجُرْأَةُ عَلَى الصَّدِيقِ وَ النُّكُولُ عَنِ الْعَدُوِّ

অর্থ

ভীতু হলো ঐ ব্যক্তি যে বন্ধুর নিকট খুব সাহসিকতার ভান করে , কিন্তু দুশমন দেখলে পালিয়ে যায়।44

25) যাকাতের ফল

ইসলামের 5টি ভিত্তির মধ্যে একটি হলো যাকাত। যাকাত ইসলামের সেতু। ধনী ও গরীবের ব্যবধান কমাতে এবং বেকারত্ব দূরীকরণে যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। ইসলামী অর্থনীতির প্রধান উৎস হলো যাকাত।

যে ব্যক্তি যাকাত দেয়া থেকে বিরত থাকবে কিয়ামতের দিন তার ঐ সম্পদকে বিরাট অজগর সাপের আকৃতিতে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। আর ঐ অজগর তার গোশত ছিড়ে ছিড়ে খাবে , যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির হিসাব নিকাশ শেষ না হবে।45

যাকাত দিলে সম্পদ কমে না , বরং তার বৃদ্ধি ঘটে। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

مَا نَقَصَتْ زَكَاةٌ مِنْ مَالٍ قَطُّ

অর্থ

যাকাত কখনো সম্পদকে কম করে না।46

26) কুরআন শরীফ পাঠের ফজিলত

কুরআন শরীফ এমন এক গ্রন্থ যা মানুষকে সৎপথ দেখায় এবং অসৎ পথ থেকে বিরত রাখে। এ কুরআন শরীফ পাঠের অনেক ফজীলত রয়েছে , তার মধ্যে একটি ফজীলত সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ كَانَتْ لَهُ دَعْوَةٌ مُجَابَةٌ إِمَّا مُعَجَّلَةٌ وَ إِمَّا مُؤَجَّلَةٌ

অর্থ

যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পাঠ করে তার দোয়া তাড়াতাড়ি হোক আর দেরী করে হোক কবুল হবেই।47

অন্য একটি হাদীসে এসেছে , ইমাম জাফর সাদেক রা: বলেন

আমাদের অনুসারীদের মধ্যে যে ব্যক্তি নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় কুরআন শরীফ পাঠ করবে সে প্রতিটি শব্দের বিনিময়ে 100 টি সওয়াব লাভ করবে। আর যে নামাজে বসা অবস্থায় কুরআন শরীফ পাঠ করবে সে প্রতিটি শব্দের বিনিময়ে 50 টি সওয়াব লাভ করবে। আর যে নামাজের বাইরে কুরআন শরীফ পাঠ করবে সে প্রতিটি শব্দের বিনিময়ে 10 টি সওয়াব লাভ করবে।48

27) জ্ঞান বিজ্ঞানের রাস্তা

ইসলামে চিন্তা-ভাবনার উপর খুব গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যাদের বিবেকবুদ্ধি , চোখ ও কান থাকা সত্বেও চিন্তা-ভাবনা করে না তাদের নিন্দা করা হয়েছে। কারণ চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে মানুষ সত্যকে অসত্য থেকে আলাদা করতে পারে।

ইবাদত মানে শুধু নামাজ ও রোজা নয় , বরং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করাও একটি বড় ইবাদত। কারণ চিন্তা-ভাবনা মানুষকে সৎকাজের দিকে আহবান করে এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিকে সৎকাজে বাধ্য করে , আর তার জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

عَلَيْكُمْ بِالْفِكْرِ فَإِنَّهُ حَيَاةُ قَلْبِ الْبَصِيرِ وَ مَفَاتِيحُ أَبْوَابِ الحِكْمَةِ

অর্থ

তোমাদের উচিত চিন্তা-ভাবনা করা। কেননা চিন্তা-ভাবনা দূরদর্শী ব্যক্তিদের বিবেককে জীবিত রাখে এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের দরজা খুলে দেয়।49

অন্য একটি হাদীসে ইমাম হাসান রা: চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন

আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ভীতি এবং সবসময় চিন্তা ভাবনা করার ব্যপারে ওসিয়ত করছি। কেননা চিন্তা ভাবনা হলো প্রতিটি কল্যাণের পিতা মাতা। 50

28) রমজান মাসে করণীয়

পবিত্র রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। প্রতিটি জিনিসের বসন্তকাল রয়েছে , কুরআন শরীফের বসন্তকাল হলো মাহে রমজান। কারণ এ মাসে যতবার কুরআন শরীফ খতম দেয়া হয় অন্য মাসে ততবার খতম দেয়া হয় না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ মাসে তার বান্দাদের উপর রোজাকে ফরজ করেছেন। রমজান মাস আগমন করলেই জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় , আর বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। এ মাসে এক রাতের মুস্তাহাব নামাজের সওয়াব অন্য মাসের 70 রাতের মুস্তাহাব নামাজের সওয়াবের সমান। এ মাসে রোজাদার ব্যক্তিদের ঘুম ইবাদতের সমতুল্য , আর তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস তসবীহ সমতুল্য।

রমজান মাস ইবাদত-বন্দেগীর মাস। এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগীতা সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

إِنَّ اللَّهَ جَعَلَ شَهْرَ رَمَضَانَ مِضْمَاراً لِخَلْقِهِ فَيَسْتَبِقُونَ فِيهِ بِطَاعَتِهِ إِلَى مَرْضَاتِهِ

অর্থ

মহান আল্লাহ রমজান মাসকে তার বান্দাদের জন্য প্রতিযোগীতার ময়দান বানিয়েছেন যাতে তারা এ মাসে আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য পরস্পর প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়।51

29) কৃপণতার সংজ্ঞা

সকল দোষ-ত্রুটির মূল হলো কৃপণতা। কৃপণতা মানুষকে অন্যায় কাজের দিকে আহ্বান করে। কৃপণতার কারণে অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।

কৃপণতা কারণে মানুষ মিথ্যা কথা বলে , অন্যের উপর জুলুম করে এবং এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে।52

আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা থেকে কৃপণতার সূত্রপাত ঘটে।

সবচেয়ে বেশী কৃপণ হলো ঐ ব্যক্তি যে ফরজ এবং ওয়াজিব কাজ আদায় করতে কৃপণতা করে। কৃপণ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে।

ইমাম হাসানকে কৃপণতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন ,

قَالَ لَهُ مَا الشُّحُّ قَالَ أَنْ تَرَى مَا فِي يَدَيْكَ شَرَفاً وَ مَا أَنْفَقْتَ تَلَفاً

অর্থ

কৃপণতা হলো তোমার কাছে যে সম্পদ আছে সেটাকে সম্মানের কারণ আর আল্লাহর রাস্তায় যা খরচ কর সেটাকে ক্ষতির কারণ মনে করা।53

30) মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কারণ

প্রত্যেকটা নফস্কে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য মৃত্যু আসার আগেই সবার উচিত মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং প্রস্তুত থাকা।

এক ব্যক্তি ইমাম হাসানকে জিজ্ঞাসা করল যে , কেন আমরা মৃত্যুকে পছন্দ করি না। উত্তরে তিনি বলেন

قام إليه رجل فقال يا ابن رسول الله ما بالنا نكره الموت و لا نحبه قال فقال الحسن ع لأنكم أخربتم آخرتكم و عمرتم دنياكم و أنتم تكرهون النقلة من العمران إلى الخراب

অর্থ

মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কারণ হলো তোমরা তোমাদের আখেরাতকে ধ্বংস করে দিয়েছ আর তোমাদের দুনিয়াকে আবাদ করেছ। তাই তোমরা আবাদ করা জায়গা থেকে ধ্বংসের জায়গায় যেতে অপছন্দ করছ।54

31) মহানুভবতা

ইসলামে মহানুভবতা ও দয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে , অর্ধেক খেজুর হলেও তা দান করে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।55

সমাজে কিছু লোক আছে যাদের চেহারা দেখে বুঝা যায় যে তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ , কিন্তু লজ্জার কারণে কারো কাছে হাত পাতে না , সেক্ষেত্রে ধনী ব্যক্তিদের উচিত তাদেরকে গোপনে সাহায্য সহযোগীতা করা।

ইমাম হাসান রা: মহানুভবতা সম্পর্কে বলেন

أَمَّا الْكَرَمُ فَالتَّبَرُّعُ بِالْمَعْرُوفِ وَ الْإِعْطَاءُ قَبْلَ السُّؤَالِ

অর্থ

মহানুভবতা হলো স্বেচ্ছায় সৎকাজ করা এবং চাওয়ার আগে দান করা।56

32) রূহের খাবারের প্রতি নজর দেয়া

মানুষ যেহেতু দেহ ও রূহের সমন্বয়ে গঠিত সেহেতু দেহের যেমন খাবারের প্রয়োজন রূহেরও তেমন খাবারের প্রয়োজন। দেহের জন্য যেসব খাবার দরকার তা সবারই জানা আছে , কিন্তু রূহের খাবার সম্পর্কে অনেকেই জানে না বা জানলেও গুরুত্ব দেয় না। অথচ রূহের খাবারের প্রতি নজর দেয়া সকলের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। রূহের প্রধান খাবার হলো ঈমান বা বিশ্বাস। ঈমানের মাধ্যমে রূহ পরিপূর্ণতা লাভ করে। রূহের আরেকটি খাবার হলো দেহকে রোজার মাধ্যমে ক্ষুধার্ত রাখা। এ ক্ষুধার্ত অবস্থা রূহকে শক্তিশালী করে।

রূহের খাবারের গুরুত্ব সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

قال الحسن بن علىّ (ع) عجبت لمن يتفكّر في مأكوله كيف لا يتفكّر في معقوله فيجنّب بطنه ما يؤذيه و يودع صدره ما يرديه

অর্থ

আমি ঐ ব্যক্তিকে দেখে আশ্চর্য হই , যে তার দেহের খাবারের জন্য চিন্তা-ভাবনা করে কিন্তু তার রূহের খাবারের জন্য কোন চিন্তা করে দেখে না। এর ফলে সে কষ্টদায়ক খাবার থেকে নিজের পেটকে হেফাজত করে কিন্তু আজেবাজে জিনিস দিয়ে তার রূহ ও আত্মাকে পরিপূর্ণ করে ফেলে।57

33) কারা আহলে বাইতের অনুসারী ?

قَالَ رَجُلٌ لِلْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ ع إِنِّي مِنْ شِيعَتِكُمْ فَقَالَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ ع يَا عَبْدَ اللَّهِ إِنْ كُنْتَ لَنَا فِي أَوَامِرِنَا وَ زَوَاجِرِنَا مُطِيعاً فَقَدْ صَدَقْتَ وَ إِنْ كُنْتَ بِخِلَافِ ذَلِكَ فَلَا تَزِدْ فِي ذُنُوبِكَ بِدَعْوَاكَ مَرْتَبَةً شَرِيفَةً لَسْتَ مِنْ أَهْلِهَا لَا تَقُلْ لَنَا أَنَا مِنْ شِيعَتِكُمْ وَ لَكِنْ قُلْ أَنَا مِنْ مُوَالِيكُمْ وَ مُحِبِّيكُمْ وَ مُعَادِي أَعْدَائِكُمْ وَ أَنْتَ فِي خَيْرٍ وَ إِلَى خَيْرٍ

অর্থ

এক ব্যক্তি ইমাম হাসানকে বলল , হে ইমাম আমি আপনাদের অনুসারী। ইমাম তখন বললেন , তুমি যদি আমাদের আদেশ ও নিষেধসমূহের ব্যপারে আমাদের অনুগত হও তাহলে তুমি সত্য বলছ , আর যদি তা না হয় তাহলে তুমি যে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নও তার দাবী করে তোমার গুনাহের বোঝাকে বৃদ্ধি করছ।

তুমি একথা বল না যে , আমি আপনাদের অনুসারী। বরং একথা বল যে , আমি আপনাদের বন্ধু এবং আপনাদেরকে ভালবাসি , আর আপনাদের দুশমনকে আমার দ্শুমন মনে করি। এভাবে তুমি কল্যাণের উপর থাকবে এবং ভালো কাজের প্রতি তোমার আগ্রহ থাকবে।58

34) খাওয়ার আদব

খাওয়ার আদব সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

و قال الحسن بن علي ع في المائدة اثنتي عشرة خصلة يجب على كل مسلم أن يعرفها أربع منها فرض و أربع منها سنة و أربع منها تأديب فأما الفرض فالمعرفة و الرضا فالتسمية و الشكر و أما السنة فالوضوء قبل الطعام و الجلوس على الجانب الأيسر و الأكل بثلاثة أصابع و لعق الأصابع فأما التأديب فالأكل مما يليك و تصغير اللقمة و المضغ الشديد و قلة النظر في وجوه الناس

প্রতিটি মুসলমানের উচিত খাদ্য খাওয়ার সময় 12 টি সুন্নাত পালন করা। এর মধ্যে 4 টি পালন করা ফরজ , 4টি পালন করা মুস্তাহাব , আর 4টি পালন করা আদবের অন্তর্ভুক্ত।

ফরজ 4টি হলো

1। খাদ্য পরিচিতি ,

2। আল্লাহর দেয়া রিজকের প্রতি রাজি থাকা ,

3। খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ,

4। শুকরিয়া আদায় করা।

মুস্তাহাব 4টি হলো

1। খাওয়ার আগে ওজু করা ,

2। বাম পায়ের ভরে বসা ,

3। তিন আঙ্গুলে খাওয়া ,

4। আঙ্গুল চেঁটে খাওয়া।

যে 4টি আদবের অন্তর্ভুক্ত সেগুলো হলো

1। যে খাবার নিকটে আছে সেখান থেকে খাওয়া ,

2। ছোট ছোট লকমা করা ,

3। ভালো করে চাবানো ,

4। খাওয়ার সময় অন্যদের দিকে কম তাকানো।59

35) পৌরুষত্বের পরিচয়

পৌরুষত্ব সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

قِيلَ فَمَا الْمُرُوَّةُ قَالَ حِفْظُ الدِّينِ وَ إِعْزَازُ النَّفْسِ وَ لِينُ الْكَنَفِ وَ تَعَهُّدُ الصَّنِيعَةِ وَ أَدَاءُ الْحُقُوقِ وَ التَّحَبُّبُ إِلَى النَّاسِ

অর্থ

পৌরুষত্ব হলো

1। দ্বীন ইসলামকে রক্ষা করা ,

2। আত্মসম্মানবোধ ,

3। সৎকাজের ব্যপারে ন ¤্রতা ,

4। অনুগ্রহ প্রদর্শন ,

5। অন্যদের হক আদায় করা ,

6। মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা।60

36) দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত

আমরা অনেক সময় দুয়া করি কিন্তু আমাদের দুয়া কবুল হয় না। এর মূল কারণ হলো দুয়ার শর্তগুলো আমরা পালন করি না। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

أَنَا الضَّامِنُ لِمَنْ لَمْ يَهْجُسْ فِي قَلْبِهِ إِلَّا الرِّضَا أَنْ يَدْعُوَ اللَّهَ فَيُسْتَجَابَ لَهُ

অর্থ

যে ব্যক্তির মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করা ছাড়া অন্য কিছু নাই সে যদি দোয়া করে তাহলে তার দোয়া অবশ্যই কবুল হবে। আর এ ব্যপারে আমি হলাম তার জামিন।61

দোয়া কবুলের অন্যান্য শর্তসমূহ

1. আল্লাহর আনুগত্য করা ,

2. আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে স্মরণ করে তার প্রশংসা করা ,

3. দুরুদ শরীফ পাঠ করা ,

4. গুনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া ,

5. খাদ্য ও পোশাক হালাল পথে অর্জন করা ,

6. মানুষের হক আদায় করা ,

7. নিয়্যাত ভালো থাকা।

37) সহনশীলতার পরিচয়

পারিবারিক , সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ধৈর্য ও সহনশীলতার গুরুত্ব অপরিসীম। সহনশীলতার অভাবে আজকে অনেক পরিবার অশান্তির আগুনে জলছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সহনশীল হতে হবে।

ক্রোধের শিকার হয়ে আজকে অনেকে আইন কানুন লঙ্ঘন করে প্রতিপক্ষের উপর হামলা করছে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে দেশ ও সমাজের শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট করছে। অতএব দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে।

এ সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

قِيلَ فَمَا الْحِلْمُ قَالَ كَظْمُ الْغَيْظِ وَ مِلْكُ النَّفْس ‏

অর্থ

সহনশীলতা হলো ক্রোধ সংবরণ করা এবং স্বীয় নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা।62

38) কুরআনকে পথ প্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ

ইমাম হাসান রা: বলেন

ما بقي في الدنيا بقية غير هذا القرآن فاتخذوه إماما يدلكم على هداكم و إن أحق الناس بالقرآن من عمل به و إن لم يحفظه و أبعدهم منه من لم يعمل به و إن كان يقرؤه

অর্থ

এ দুনিয়ায় কুরআন ছাড়া অন্য কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। অতএব তোমরা কুরআনকে পথ প্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করলে সে তোমাদেরকে সত্যপথ দেখাবে। যে কুরআন শরীফের বিধান অনুযায়ী আমল করবে সে কুরআনের বেশী নিকটে থাকবে যদিও সে কুরআনের হাফেজ নাও হতে পারে , পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কুরআনের বিধান অনুযায়ী আমল না করবে সে কুরআন থেকে অনেক দূরে থাকবে যদিও সে কুরআন তেলাওয়াত করে।63

39) বেহেশতী ব্যক্তিদের পরিচয়

যারা দুনিয়ায় কুরআন শরীফের বিধি-বিধান অনুযায়ী স্বীয় জীবনকে পরিচালিত করবে তারাই কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান রা: বলেন

إن هذا القرآن يجي‏ء يوم القيامة قائدا و سائقا يقود قوما إلى الجنة أحلوا حلاله و حرموا حرامه و آمنوا بمتشابهه و يسوق قوما إلى النار ضيعوا حدوده و أحكامه و استحلوا محارمه

অর্থ

কুরআন মজিদ কিয়ামতের দিন নেতা ও পথ প্রদর্শক হিসেবে আগমন করবে। অতঃপর ঐ জাতিকে বেহেশতের দিকে নিয়ে যাবে যারা কুরআন শরীফে বর্ণিত হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম হিসেবে মেনে চলেছে এবং মুতাশাবেহ্ আয়াতসমূহের উপর ঈমান এনেছে। পক্ষান্তরে ঐ জাতিকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে যারা কুরআন শরীফের বিধি-বিধানকে ধ্বংস করেছে এবং কুরআনে বর্ণিত হারামসমূহকে হালাল মনে করেছে।64

40) উন্নত নৈতিক চরিত্র

নৈতিক চরিত্র ভালো না হলে কোন জ্ঞানই মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। জ্ঞান-বিজ্ঞান তখনই মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে যখন তার পাশাপাশি উন্নত নৈতিক চরিত্রের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে।

ইমাম হাসান রা: এ সম্পর্কে বলেন

مكارم الأخلاق عشر: صدق اللسان، و صدق البأس، و إعطاء السائل، و حسن الخلق، و المكافاة بالصنائع، و صلة الرحم، و التذمم على الجار، و معرفة الحق للصاحب، و قرى الضيف، و رأسهن الحياء

অর্থ

উন্নত নৈতিক চরিত্র 10 টি

সত্য কথা বলা , সত্যিকার অর্থে সাহসিকতা , আবেদনকারীকে দান করা , উত্তম চরিত্র , ভালো কাজের পুরষ্কার দান করা , আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা , প্রতিবেশীর পৃষ্ঠপোষকতা করা , অন্যের অধিকারের প্রতি খেয়াল রাখা , মেহমানদারী করা , আর এসব কিছুর মূল হলো লজ্জাশীলতা।65