কোরআনের পরিচয়

কোরআনের পরিচয়0%

কোরআনের পরিচয় লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের পরিচয়

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 20099
ডাউনলোড: 2766

কোরআনের পরিচয়
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 33 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 20099 / ডাউনলোড: 2766
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের পরিচয়

কোরআনের পরিচয়

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

অত্র গ্রন্থে কোরআন মজীদের বেশ কিছু আয়াত উদ্ধৃত হয়েছে এবং এ সব আয়াতের মধ্যে এমন আয়াতও রয়েছে যাতে আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য উত্তম পুরুষে বহুবচন অর্থাৎ আমরা শব্দ ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন আরবী বাকরীতিতে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বশালীদের মুখে নিজের জন্য এক বচন অর্থেই আমরা ব্যবহারের প্রচলন ছিলো , এ কারণে তৎকালীন আরবের মোশরেকরা কোরআন মজীদে আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য আমরা ব্যবহার করায় এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে নি তথা একে বহু ঈশ্বরবাদের সপক্ষে প্রমাণ বলে দাবী করে নি। কিন্তু যদিও বাংলা সহ আরো অনেক ভাষায় সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বা বিনয় প্রকাশের জন্য এর প্রচলন রয়েছে তথাপি বাংলা বাকরীতিতে অনেক ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিনয়স্বরূপ আমরা এবং কর্তৃত্বভাব প্রকাশের জন্য আমি ব্যবহারেরও প্রচলন আছে। এ কারণে বাংলা ভাষায় আল্লাহ্ তা আলার জন্য আমরা ব্যবহার বেখাপ্পা শুনায় বিধায় আমরা এক বচনে এর অনুবাদ করেছি। অত্র গ্রন্থে এ ধরনের সকল আয়াতের ক্ষেত্রেই আমরা এ রীতি অনুসরণ করেছি।

কোরআন মজীদ : কাছে থেকে জানা

কোরআন মজীদের স্বরূপের সাথে পরিচিত হতে হলে তাকে কাছে থেকে জানতে হবে। কাছে থেকে জানা মানে কোরআন মজীদের গভীরে অবগাহন করতে হবে। কোরআন মজীদ হচ্ছে সীমাহীন জ্ঞানের অতল মহাসমুদ্র। কোরআন মজীদ নিজেকেتبيانا لکل شيء (সকল কিছুর বর্ণনা/ জ্ঞান) অর্থাৎ সমস্ত জ্ঞানের আধার বলে দাবী করেছে। মানবজাতির জন্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো শাখা-প্রশাখাই এ থেকে বাদ পড়ে নি। এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে কেবল ভাষা ও বর্ণনাকৌশলের মাধ্যমে অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যত মানবপ্রজন্মসমূহের জন্যে সকল জ্ঞানবিজ্ঞান সন্নিবেশিত করা হয়েছে। জীবন ও জগতের গূঢ় রহস্য , সৃষ্টিতত্ত্ব , বস্তুগত ও অবস্তুগতজগতের রহস্যাবলী , কারণ ও ফলশ্রুতি বিধি , পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন , জোতির্বিজ্ঞান , ইতিহাস , ভূগোল , নৃতত্ত্ব , প্রাণিবিজ্ঞান , মনোবিজ্ঞান , যুক্তিবিজ্ঞান , দর্শন , রাজনীতি , সমাজবিজ্ঞান , সমাজতত্ত্ব , চিকিৎসাবিজ্ঞান , উদ্ভিদবিদ্যা , অর্থনীতি , রাষ্ট্রশাসন , বিচারব্যবস্থা , আইন , দণ্ডবিধি , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , যুদ্ধ , সন্ধি , কূটনীতি , প্রচার ও জনসংযোগ , প্রশাসন , শিক্ষা , পারিবারিক জীবন , ভবিষ্যদ্বাণী , আধ্যাত্মিকতা , অধিলোক , স্বপ্নলোক , সদৃশ জগত , পরলোক ইত্যাদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখাই এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের এতো সব শাখা-প্রশাখা সম্পর্কে ব্যক্তিগত সাধনা ও অন্যদের সহায়তায় কোনো ব্যক্তিমানুষের পক্ষেই নিখুঁত ও নির্ভুল জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। অথচ হযরত মুহম্মদ (ছ্বাঃ)-এর ন্যায় একজন নিরক্ষর ব্যক্তি এ গ্রন্থ উপস্থাপন করেছেন যার পক্ষে এ ধরনের রচনা কোনোভাবেই সম্ভব হতে পারে না। এটাই প্রমাণ করে যে , এ গ্রন্থ মহাজ্ঞানময় আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে।

কোরআন মজীদের উপর্যুপরি অধ্যয়ন থেকে নিত্য নতুন জ্ঞানভাণ্ডার বেরিয়ে আসে। অন্যদিকে , ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে , এ কিতাবের ভাষা ও রচনাশৈলী বিস্ময়কর যা তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ও বাগ্মীদেরকেও হতবাক করে দিয়েছিলো। তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলো যে , এ কোরআন মানুষের রচিত কথা নয়। এ কোরআনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে তারা একে জাদু বলে অভিহিত করে মানুষকে এ থেকে ফিরাবার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলো।

কোরআন মজীদের এ জ্ঞানসমুদ্র এবং সাহিত্যিক মান ও ভাষাশৈলীর সাথে পরিচিত না হওয়া পর্যন্ত কোরআনের সাথে সত্যিকার অর্থে পরিচিত হওয়া সম্ভব নয়। কোনো ব্যক্তি যদি এমন এক পরিবেশে বড় হয় যে , সে কোনোদিন আগুন কাছে থেকে দেখে নি তাকে আগুন সম্বন্ধে যতোই বর্ণনা দেয়া হোক এবং সূর্যের তাপের সাথে যতোই তুলনা করা হোক , তার আগুন সম্বন্ধে যথার্থ ধারণা হবে না। তেমনি যে একটি অতি সুমিষ্ট ফল কখনো দেখে নি ও খায় নি , তার নিকট ঐ ফলের ও তার স্বাদের যে বর্ণনাই দেয়া হোক না কেন , ঐ ফল সম্পর্কে তার যথার্থ ধারণা হবে না। ঠিক একইভাবে কোরআন মজীদকে জানতে হলে অনুবাদের মাধ্যমে নয় , মূল ভাষায় তার স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মূল ভাষায় জানা মানে কোনাভাবে আরবী পড়তে পারা বা বর্তমান যুগের আধুনিক আরবী ভাষা বুঝতে পারার যোগ্যতা নিয়ে কোরআন অধ্যয়ন নয় , বরং কোরআন মজীদ নাযিলের সময়কার ভাষাশৈলী ও শব্দাবলীর ব্যবহারিক তাৎপর্যের সাথে পরিচিত হয়ে কোরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কেবল তাহলেই কোরআনের স্বরূপের সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। আর তখনই কোরআন পাঠক বুঝতে পারবেন যে , কেন কোরআন-বিরোধীরা একে জাদু বলে আখ্যায়িত করেছিলো। এরূপ অবস্থায় কোরআন-পাঠকের জীবন হয়ে উঠবে কোরআন কেন্দ্রিক এবং কোরআন তাঁকে এমনভাবে দুর্বার আকর্ষণে আকৃষ্ট করবে যে , তাঁর পক্ষে কোনোদিনই তা কাটানো সম্ভব হবে না , কাটিয়ে ওঠার ইচ্ছাও জাগ্রত হবে না। তখন তিনি কোরআন নিয়েই বাঁচতে চাইবেন , কোরআন নিয়েই মরতে চাইবেন। এটাই কোরআনের অবিনশ্বর মু জিযাহ্।

প্রতিটি মুসলমানের জন্যে , বিশেষ করে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠাকে যারা জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে নিয়েছেন তাঁদের জন্যে কোরআন মজীদের সঠিক পরিচিতি অর্জন অপরিহার্য।

কোরআন মজীদের সঠিক পরিচয় জানলে একদিকে যেমন কোরআনের ওপর ঈমান শক্তিশালী (محکم ) হবে , অন্যদিকে যথাযথভাবে আল্লাহর পথে আহবানের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে। আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) اد ْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ(

ডাক তোমার রবের পথের দিকে অকাট্য পরমজ্ঞানের ও উত্তম সদুপদেশের সাহায্যে। (সূরাহ্ আন্-নাহ্ল্ : 125)

আল্লাহ্ তা আলা আমাদেরকে এরূপ অভ্রান্ত ও অকাট্য পরমজ্ঞান অর্জন করা ও উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী আমলের তাওফীক্ব্ দিন। আমীন।

কোরআন ও নুযূলে কোরআন

[অত্র অধ্যায়টি গ্রন্থকারের অপ্রকাশিত গ্রন্থ কোরআনের মু জিযাহ্ র প্রথম অধ্যায়। কোরআন মজীদের পরিচয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় সামান্য সংশোধনী সহ এখানেও উদ্ধৃত করা হলো।]

কোরআন মজীদ আল্লাহর কিতাব্। কিতাব্ বলতে আমরা সাধারণতঃ মুদ্রিত গ্রন্থ বুঝি ; অতীতে হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিকেও কিতাব্ বলা হতো। তবে কোরআন মজীদ আল্লাহর পক্ষ থেকে কাগযে মুদ্রিত বা লিখিত গ্রন্থ আকারে আসে নি। বরং তা হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর অন্তঃকরণে নাযিল্ হয়েছে এবং তিনি তা তাঁর ছ্বাহাবীদের সামনে মৌখিকভাবে পেশ করেছেন , আর সাথে সাথে , তাঁর পক্ষ হতে পূর্ব থেকে নিয়োজিত লিপিকারগণ তা লিপিবদ্ধ করেছেন এবং এর পর পরই তিনি সদ্য নাযিল্ হওয়া আয়াত বা সূরাহ্ পূর্বে নাযিলকৃত সূরাহ্ ও আয়াত সমূহের মধ্যে কোথায় স্থাপন করতে হবে তা বলে দেন এবং সেভাবেই সূরাহ্ ও আয়াত সমূহ প্রতিনিয়ত বিন্যস্ত হতে থাকে।

এভাবে হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের আগেই সমগ্র কোরআন মজীদ লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষিত হয়। অবশ্য তখন যে সব জিনিসের ওপর কোরআন লিপিবদ্ধ করা হয় তার ধরন ও আয়তন এক রকম ছিলো না। পরবর্তীকালে তৃতীয় খলীফাহ্ হযরত উছ্মানের যুগে অভিন্ন আকার ও ধরনের তৎকালে প্রাপ্ত কাগযে কোরআন মজীদ লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তা থেকে ব্যাপকভাবে কপি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , বিভিন্ন হাদীছের ভিত্তিতে সাধারণভাবে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে এই যে , প্রথম খলীফাহ্ হযরত আবূ বকরের সময় কোরআন মজীদের সংগ্রহ ও সংকলন করা হয়। কিন্তু গবেষণামূলক বিশ্লেষণে এ ধারণা সঠিক বলে প্রমাণিত হয় না। কারণ , যেহেতু কোরআন মজীদের সংকলন ও বিন্যাসের কাজ স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) সম্পাদন করে যান এবং প্রতি রামাযানে তিনি কোরআন মজীদের ঐ পর্যন্ত নাযিলকৃত অংশ গ্রন্থাবদ্ধ ক্রম অনুযায়ী (নাযিল্-কালের ক্রম অনুযায়ী নয়) নামাযে পাঠ করতেন। এমতাবস্থায় হযরত আবূ বকরের সময় নতুন করে কোরআন মজীদের সংগ্রহ ও সংকলন করার প্রশ্নই ওঠে না। [এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।]

এ বিষয়টি এমন একটি ঐতিহাসিক বিষয় যা সকলের নিকট সুস্পষ্ট। কিন্তু কোরআন মজীদের নাযিল্ পূর্ববর্তী স্বরূপ এবং হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর ওপর তা নাযিলের প্রক্রিয়ার বিষয়টি যেহেতু অন্য সকলের অভিজ্ঞতার বাইরের বিষয় ও ঘটনা তাই তা একইভাবে সুস্পষ্ট নয়।

বিরাজমান ভুল ধারণা

কোরআন মজীদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে কতোগুলো ভুল ধারণা লক্ষ্য করা যায় যা দূর করার চেষ্টা খুব কমই হয়েছে। এর মধ্যে একটা ভুল ধারণা হচ্ছে লাওহে মাহফূযে সংরক্ষিত কোরআন মজীদের স্বরূপ সম্বন্ধে এবং আরেকটি ভুল ধারণা কোরআন মজীদের নাযিল্ হবার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে। এছাড়া কোরআন মজীদ ও অন্যান্য নবী-রাসূলের ( আঃ) ওপর নাযিলকৃত কিতাব্ সমূহের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারেও ভুল ধারণা রয়েছে।

স্বয়ং কোরআন মজীদে (সূরাহ্ আল্-বুরূজ্ : 21-22) লাওহে মাহ্ফূযে (যার আক্ষরিক মানে সংরক্ষিত ফলক ) কোরআন মজীদ সংরক্ষিত থাকার কথা বলা হয়েছে। কোরআন মজীদে বস্তুজগত ও মানুষের অভিজ্ঞতা বহির্ভূত জগতের বিষয়বস্তু সম্বলিত আয়াত সমূহকে মুতাশাবেহ্ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ ধরনের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দানের ও এর বিষয়বস্তুর স্বরূপ সম্পর্কে বস্তুজাগতিক অভিজ্ঞতার আলোকে মতামত ব্যক্ত করার সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে , এ ধরনের আয়াতের প্রকৃত তাৎপর্য স্বয়ং আল্লাহ্ তা আলা ও অকাট্য জ্ঞানের অধিকারী লোকেরা ছাড়া কেউ জানে না (সূরাহ্ আালে ইমরান্ : 7)। [ মুতাশাবেহ্ (متشابه ) মানে যার অন্য কিছুর সাথে মিল রয়েছে , কিন্তু হুবহু তা নয়।]

এ সত্ত্বেও সাধারণ লোকদের মধ্যে এরূপ ধারণা বিস্তার লাভ করেছে যে , নীহারিকা লোক ছাড়িয়ে আরো উর্ধে কোথাও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরে লাওহে মাহ্ফূয্ নামক ফলক অবস্থিত এবং তাতে কোরআন মজীদ লিপিবদ্ধ রয়েছে। লোকেরা লাওহে মাহফূযকে বস্তুগত সৃষ্টি মনে করে থাকে। তাদের ধারণা , আমরা যে ধরনের পাথরের বা ধাতব নির্মিত ফলকের সাথে পরিচিত লাওহে মাহফূয্ তদ্রুপ কঠিন কোনো ভিন্ন ধরনের বস্তুনির্মিত ফলক। আর আমরা যেমন কালি দ্বারা লিখে থাকি , তেমনি সে লেখাও কালির লেখা , তবে হয়তো সে কালি ভিন্ন কোনো ও অত্যন্ত উন্নত মানের উপাদানে তৈরী।

ধারণা করা হয় , ফেরেশতা জিবরাঈল ( আঃ) লাওহে মাহ্ফূয্ থেকে কোরআন মজীদের আয়াত মুখস্থ করে এসে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর কানে কানে পড়ে যেতেন এবং তিনি তা কানে শুনে বার বার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মুখস্থ করে এরপর সবাইকে তা পড়ে শুনাতেন।

অনুরূপভাবে আরো ধারণা করা হয় যে , অন্যান্য আসমানী কিতাব্ও অন্যত্র সংরক্ষিত রয়েছে এবং সেখান থেকে অন্যান্য নবী-রাসূলের ( আঃ) ওপর নাযিল্ হয়েছিলো। এমনকি অনেকের মনে এমন ধারণাও রয়েছে যে , আমরা যে ধরনের বই-পুস্তকের সাথে পরিচিত আসমানী কিতাব্ সমূহ সে ধরনেরই , তবে আকারে বড় এবং সাধারণ কাগযের পরিবর্তে কোনো মূল্যবান পদার্থের দ্বারা তৈরী কাগযে লিখিত যা আমাদের পৃথিবীতে নেই এবং তার ওপরে অত্যন্ত মূল্যবান কোনো কালিতে লেখা রয়েছে।

অবশ্য হযরত মূসা (আঃ)-এর ওপর নাযিলকৃত কিতাব তাওরাত্-এর অংশবিশেষ দশটি ফরমান লিখিত একটি ফলক আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু এর মানে এ নয় যে , ট্রিলিয়িন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরে কঠিন বস্তুর ওপর তাওরাত লিখিত্ আছে এবং সেখান থেকে একটি অংশ হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে পাঠানো হয়। বরং আল্লাহর ইচ্ছায় এ ফলক তৈরী হয়েছিলো। কারণ , তিনি যখনই কোনো কিছু হোক বলে ইচ্ছা করেন সাথে সাথে তা হয়ে যায়। মূলতঃ এটা ছিলো হযরত মূসা (আঃ)-এর অনুকূলে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে ঘটানো একটি মু জিযাহ্ ঠিক যেভাবে হযরত ঈসা (আঃ)-এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমান হতে খাবারের খাঞ্চা পাঠানো হয়েছিলো।

এছাড়া কোরআন মজীদে পবিত্র পৃষ্ঠাসমূহ -এর কথা (সূরাহ্ আল্-বাইয়্যেনাহ্ : 2) এবং কোরআনে করীমের গোপন কিতাবে লিখিত থাকার (সূরাহ্ আল্-ওয়াক্বেয়াহ্ : 77-78) কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এতদুভয়ের কোনোটিই ইন্দিয়গ্রাহ্য বস্তুগত পৃষ্ঠা বা গ্রন্থ হবার ব্যাপারে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ বিদ্যমান নেই। এরপরও যদি ধরে নেয়া হয় যে , তা হযরত মূসা (আঃ)কে প্রদত্ত ফলকসমূহের ন্যায় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কিছু , তাহলেও তা আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে সৃষ্ট লাওহে মাহফূয্-পরবর্তী পর্যায়ের সৃষ্টি , স্বয়ং লাওহে মাহফূয্ নয়।

ভুল ধারণার কারণ

এ সব ভুল ধারণার কারণ হচ্ছে , মানুষ যে বিষয়ে অভিজ্ঞতার অধিকারী নয় সে বিষয়কে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ছকে ফেলে সে সম্পর্কে ধারণা করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে মানুষকে কোনো কিছু বুঝাতে হলে তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে আশ্রয় করে বুঝানো ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। বলতে হয় , অমুক জিনিসটি অনেকটা এই জিনিসটির মতো। কিন্তু এ থেকে ঐ জিনিস সম্পর্কে সামান্য আবছা ধারণা লাভ করা যায় মাত্র ; কখনোই পুরোপুরি সঠিক ধারণা লাভ করা যায় না।

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হতে পারে।

ইরানে এক ধরনের ফল পাওয়া যায় যার নাম হচ্ছে খোরমালু । এটি দেখতে বাংলাদেশী ফল বুনো গাবের মতো। কিন্তু বুনো গাব যেখানে পাকলে হলুদ রং ধারণ করে সেখানে খোরমালু পাকলে তার রং হয় হাল্কা লাল , পাকা বুনো গাবের বীচি যেখানে খুবই শক্ত সেখানে খোরমালুর বীচি বেশ নরম এবং পাকা বুনো গাব ফল হিসেবে তেমন একটা সুস্বাদু না হলেও খোরমালু খুবই সুস্বাদু ও অত্যন্ত দামী ফল , আর বুনো গাবের বিপরীতে খোরমালু বীচি ও খোসা শুদ্ধ খাওয়া হয় ; কেবল বোঁটাটাই ফেলে দিতে হয়।

এ বর্ণনা থেকে খোরমালু দেখেন নি ও খান নি এমন পাঠক-পাঠিকা কী ধারণা পেতে পারেন ? মোটামুটি একটা বাহ্যিক ধারণা। কিন্তু খোরমালু খুবই সুস্বাদু ফল এটা বুঝতে পারলেও এর প্রকৃত স্বাদ সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকার পক্ষে কোনোভাবেই প্রকৃত ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়। অতঃপর যদি এরূপ কোনো পাঠক-পাঠিকার জন্যে বাস্তবে খোরমালু খাবার সুযোগ আসে তখন তিনি বুঝতে পারবেন খোরমালু মানে অত্যন্ত সুস্বাদু নরম বীচিওয়ালা বুনো গাব নয় , বরং এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি ফল।

এভাবে কোনো শ্রোতা বা পাঠক-পাঠিকাকে তার অভিজ্ঞতা বহির্ভূত যে কোনো জিনিস বা বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিতে গেলে তার অভিজ্ঞতার আওতাভুক্ত কোনো জিনিস বা বিষয়ের সাথে তুলনা করে তাকে বুঝাতে হবে যে , জিনিসটি বা বিষয়টি মোটামুটি এ ধরনের বা এর কাছাকাছি ; প্রকৃত ধারণা দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ ধরনের মোটামুটি বা কাছাকাছি ধারণা থেকে শ্রোতা বা পাঠক-পাঠিকার মধ্যে ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে। কারণ , এভাবে মোটামুটি বা কাছাকাছি ধারণা পাবার পর সে তাকে নিজ অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণার ছকে ফেলে ভুলে নিক্ষিপ্ত হতে পারে।

মোশরেকরা যে আল্লাহ্ তা আলাকে বস্তুগত ও শরীরী সত্তা মনে করেছে তারও কারণ এটাই। তারা শরীর ও বস্তু ছাড়া কোনো জীবনময় সত্তার কথা ভাবতেই পারে না। তারা মনে করে , সৃষ্টিকর্তাও শরীরী ও বস্তুগত সত্তা , তবে সে বস্তু অনেক উন্নত স্তরের এবং তাঁর শরীর অনেক বেশী শক্তিশালী , অবিনাশী ও অকল্পনীয় দ্রুততম গতির অধিকারী ; তাই তিনি অমর অথবা অমৃত পান করার কারণে অমর হয়েছেন।

এ কারণেই দেখা যায় , মোশরেকদের কল্পিত দেবদেবীদের মূর্তিতে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সবই রয়েছে। কারণ , তাদের মনে হয় যে , মানুষের যখন এ ধরনের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ না থাকাটা অপূর্ণতার লক্ষণ তখন সৃষ্টিকর্তার বা দেবদেবীর তা না থাকা কী করে সম্ভব ? (অবশ্য মোশরেকদের অনেক দেবদেবীই হচ্ছে তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যকার বিভিন্ন পুরুষ ও নারী ব্যক্তিত্ব যাদের ওপরে তারা ঐশিতা আরোপ করেছে। কিন্তু তারা আদি সৃষ্টিকর্তার জন্যও ,যেমন : হিন্দু ধর্মে ব্রহ্মার জন্য , অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কল্পনা করে থাকে।)

এ প্রসঙ্গে একটি একটি চমৎকার বিখ্যাত উপমা রয়েছে - যা সম্ভবতঃ হযরত আলী ( আঃ) দিয়েছিলেন। এতে বলা হয়েছে , যেহেতু প্রতিটি প্রাণীই তার প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেই অপরিহার্য ও পূর্ণতার পরিচায়ক মনে করে এবং তার কোনো একটি না থাকাকে অপূর্ণতা মনে করে , সেহেতু কোনো দুই শিংওয়ালা ফড়িং-এর যদি ছবি আঁকার ক্ষমতা থাকতো এবং তাকে যদি সৃষ্টিকর্তার ছবি আঁকতে বলা হতো তাহলে অবশ্যই সে একটি ফড়িং-এর ছবি আঁকতো এবং তাতে দু টি শিং আঁকতেও ভুলতো না। কারণ , ফড়িংটির মনে হতো , শিং-এর মতো এতো বড় যরূরী একটা অঙ্গ সৃষ্টিকর্তার না থেকেই পারে না।

বিচারবুদ্ধির রায়

তবে মানুষ পঞ্চেন্দ্রিয়ের জালে বন্দী নয়। কারণ , তার রয়েছে বিচারবুদ্ধি ( intellect/ rationality -عقل )।আর মানুষের বিচারবুদ্ধি বস্তুবিহীন অস্তিত্ব , শরীরবিহীন জীবন , শব্দবিহীন সঙ্গীত ও বস্তুগত রং বিহীন ছবি ধারণা করতে সক্ষম।

একজন কবি বা গীতিকার কীভাবে কবিতা বা গীতি রচনা করেন ? তাঁর অন্তরকর্ণে কি সুর , ছন্দ ও কথা ধ্বনিত হয় না ? কিন্তু তাতে কী বায়ুতরঙ্গে সৃষ্ট শব্দের ন্যায় শব্দ আছে ? তাঁর কানের কাছে বায়ুতে কি শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয় ? একজন চিত্রকর ঘরে বসে কীভাবে একটি সুন্দর দৃশ্য অঙ্কন করেন ? তিনি তাঁর মনশ্চক্ষুতে শত রঙে রঙিন চমৎকার দৃশ্য দেখতে পান। কিন্তু তাতে কি বস্তু আছে ? তাতে কি বস্তুগত রং আছে ? নাকি তাঁর মস্তিষ্কের সংশ্লিষ্ট স্মৃতিকোষ বিশ্লেষণ করলে সেখানে ঐ রঙিন ছবির একটি অতি ক্ষুদ্র সংস্করণ পাওয়া যাবে ?

কেউ হয়তো বলতে পারেন যে , কবি যা শোনেন এবং শিল্পী যা দেখেন তা সত্য নয় , বরং তা হচ্ছে মিথ্যা , কল্পনা ; তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আসলে কি তাই ? হ্যা , একে মিথ্যা বলা যায় যদি দাবী করা হয় যে , কবির কানের কাছে বায়ুতে শব্দতরঙ্গ তুলে এ কবিতা আবৃত্তি করা হয়েছিলো এবং তা শুনে তিনি লিখেছেন , তেমনি যদি দাবী করা হয় যে , শিল্পী যা সৃষ্টি করেছেন অনুরূপ একটি মডেল তাঁর চর্মচক্ষুর সামনে ছিলো। কিন্তু এরূপ তো দাবী করা হয় না। অতএব , তাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করা সম্ভব নয়।

কবি যা অন্তরকর্ণে শোনেন ও শিল্পী যা অন্তর্চক্ষুতে দেখেন তাকে যদি কল্পনা বলা হয় , তো বলবো , কল্পনাও এক ধরনের সত্য ; অবস্তুগত সত্য , কাল্পনিক সত্য। যার অস্তিত্ব নেই তা কাউকে বা কোনো কিছুকে প্রভাবিত করতে পারে না। তবে হ্যা , এ সত্য বস্তুজাগতিক সত্য নয় ; ভিন্ন মাত্রার ( Dimension -بُعد )সত্য। যদিও কল্পনার অস্তিত্বসমূহ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অত্যন্ত দুর্বল , অস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী বা স্বল্পস্থায়ী হয়ে থাকে , কিন্তু অবস্তুগত অস্তিত্ব হিসেবে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

একজনের কাছ থেকে শুনে বা প্রতীকী অক্ষরে লেখা বই-পুস্তক পড়ে কারো মধ্যে যে জ্ঞান তৈরী হয় এবং একই পন্থায় যে জ্ঞান অন্যের নিকট স্থানান্তরিত হয় তার অস্তিত্ব কারো পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব কি ? কিন্তু এই জ্ঞান কি বস্তুগত অস্তিত্ব ? না , বরং এ হচ্ছে ভিন্ন মাত্রার এক অবস্তুগত অস্তিত্ব।

বর্তমান যুগে কম্পিউটার-সফ্ট্ওয়্যার্ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা আছে। এ সফ্ট্ওয়্যার্ কোনো বস্তুগত জিনিস নয় , বরং এক ধরনের প্রোগ্র্যাম বা বিন্যাস মাত্র। যদিও তা কম্পিউটারের মূল বস্তুগত উপাদানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাতে একটি বিশেষ বিন্যাস সৃষ্টি করে মাত্র , কিন্তু সে বিন্যাসটি কম্পিউটারের মূল উপাদান , আলোকসম্পাত ও বস্তুগত যন্ত্রপাতির ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে। এ সব সফ্ট্ওয়্যার্-এর কপি করা হয় , এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে স্থানান্তরিত করা হয় , এগুলো বেচাকিনা হয় , শুধু তা-ই নয় , বিভিন্ন সফ্ট্ওয়্যার্ পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই ও পরস্পরের ধ্বংস সাধন করে (যেমন : ভাইরাস্ ও এন্টি-ভাইরাস্)। এগুলো অবশ্যই এক ধরনের সৃষ্টি - এক ধরনের অস্তিত্ব , তবে অবস্তুগত অস্তিত্ব।

অস্তিত্বের প্রকারভেদ

সংক্ষেপে আমরা অস্তিত্বকে কয়েক ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমতঃ অস্তিত্ব দুই ধরনের : অপরিহার্য সত্তা বা অস্তিত্ব ( Essential Existence -واجب الوجود ) -যিনি এ জীবন ও জগতের অন্তরালে নিহিত মহাসত্য অনাদি , অনন্ত , অসীম , অব্যয় , অক্ষয় , চিরন্তন পরম জ্ঞানী প্রাণ। এর বিপরীতে আছে সৃষ্টিসত্তা বা সম্ভব অস্তিত্ব ( Possible Existence -ممکن الوجود ) -অপরিহার্য সত্তা ইচ্ছা করেছেন বলে যাদের পক্ষে অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভবপর হয়েছে ; তিনি না চাইলে তাদের পক্ষে অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভব হতো না।

সম্ভব অস্তিত্ব হয় বস্তুগত , নয়তো অবস্তুগত , নয়তো বস্তুর আংশিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সূক্ষ্ম অস্তিত্ব। পুরোপুরি অবস্তুগত অস্তিত্ব আমাদের সর্বজনীন অভিজ্ঞতা র আওতাভুক্ত নয় , কিন্তু বস্তুগত অস্তিত্ব (যার দৈর্ঘ্য , প্রস্থ ও বেধ আছে) এবং কতক সূক্ষ্ম অস্তিত্ব , যেমন : বিদ্যুত ও চৌম্বক ক্ষেত্র আমাদের অভিজ্ঞতার আওতাভুক্ত। এছাড়া নিরেট বস্তুগত অস্তিত্বের পাশাপাশি আছে বস্তুদেহধারী প্রাণশীল অস্তিত্ব - যার বিভিন্ন স্তর রয়েছে এবং এর সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে মানুষ যার ভিতরে অবস্তুগত অস্তিত্ব বিচারবুদ্ধি রয়েছে - যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই।

আমরা আমাদের বিচারবুদ্ধির দ্বারা বস্তু-উর্ধ অপরিহার্য অস্তিত্ব অর্থাৎ আল্লাহ্ তা আলার অস্তিত্ব এবং আমাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা বস্তুগত , প্রাণশীল ও সূক্ষ্ম অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারি। এছাড়া ধর্মীয় সূত্র থেকে আমরা অবস্তুগত ব্যক্তিসত্তা ফেরেশতাদের এবং সূক্ষ্ম উপাদানে সৃষ্ট প্রাণশীল অস্তিত্ব জ্বিনদের কথা জানতে পারি।

এ পর্যায়ে এসে প্রশ্ন জাগে , কোরআন মজীদ যে লাওহে মাহফূযে সংরক্ষিত রয়েছে তা কোন্ ধরনের অস্তিত্ব ? তা কি বস্তুগত অস্তিত্ব , নাকি অবস্তুগত অস্তিত্ব ?

আমরা লক্ষ্য করি , বস্তুগত সৃষ্টি - তা প্রাণশীলই হোক বা প্রাণহীনই হোক , সদাপরিবর্তনশীল ও ধ্বংসশীল , তা সে ধ্বংস যতো ধীরে ধীরে এবং যতো দীর্ঘদিনেই হোক না কেন। অন্যদিকে আমরা জানতে পারি , আল্লাহ্ তা আলার নৈকট্যের অধিকারী ফেরেশতারা অবস্তুগত সত্তা। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা আলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানব প্রজাতির জন্য তাঁর হেদায়াত-গ্রন্থ কোরআন মজীদকে যে লাওহে মাহফূযে সংরক্ষিত রেখেছেন তা ধ্বংসশীল বস্তুগত অস্তিত্ব হতে পারে না , বরং তার অবস্তুগত অস্তিত্ব হওয়া অপরিহার্য। আর যা অবস্তুগত অস্তিত্ব তাতে কালির হরফে কিছু লিপিবদ্ধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।