কোরআনের পরিচয়

কোরআনের পরিচয়0%

কোরআনের পরিচয় লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের পরিচয়

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 20342
ডাউনলোড: 2833

কোরআনের পরিচয়
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 33 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 20342 / ডাউনলোড: 2833
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের পরিচয়

কোরআনের পরিচয়

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

অত্র গ্রন্থে কোরআন মজীদের বেশ কিছু আয়াত উদ্ধৃত হয়েছে এবং এ সব আয়াতের মধ্যে এমন আয়াতও রয়েছে যাতে আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য উত্তম পুরুষে বহুবচন অর্থাৎ আমরা শব্দ ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন আরবী বাকরীতিতে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বশালীদের মুখে নিজের জন্য এক বচন অর্থেই আমরা ব্যবহারের প্রচলন ছিলো , এ কারণে তৎকালীন আরবের মোশরেকরা কোরআন মজীদে আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য আমরা ব্যবহার করায় এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে নি তথা একে বহু ঈশ্বরবাদের সপক্ষে প্রমাণ বলে দাবী করে নি। কিন্তু যদিও বাংলা সহ আরো অনেক ভাষায় সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বা বিনয় প্রকাশের জন্য এর প্রচলন রয়েছে তথাপি বাংলা বাকরীতিতে অনেক ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিনয়স্বরূপ আমরা এবং কর্তৃত্বভাব প্রকাশের জন্য আমি ব্যবহারেরও প্রচলন আছে। এ কারণে বাংলা ভাষায় আল্লাহ্ তা আলার জন্য আমরা ব্যবহার বেখাপ্পা শুনায় বিধায় আমরা এক বচনে এর অনুবাদ করেছি। অত্র গ্রন্থে এ ধরনের সকল আয়াতের ক্ষেত্রেই আমরা এ রীতি অনুসরণ করেছি।

প্রসঙ্গ : শা নে নুযূল্

আমরা উল্লেখ করেছি যে , পুরো কোরআন মজীদ প্রথমে ইল্মে হুযূরী আকারে একবারে রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পবিত্র হৃদয়ে নাযিল্ হয়। এর পর তা আল্লাহ্ তা আলার নির্দেশে আল্লাহরই সৃষ্ট ভাষার আবরণে জিবরাঈল ( আঃ) কর্তৃক দীর্ঘ তেইশ বছর যাবত বিভিন্ন উপলক্ষ্যে অল্প অল্প করে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর কণ্ঠে লোকদের সামনে পেশ করা হয়। অবশ্য যেভাবে তা লোকদের সামনে পেশ (বা নাযিল্) করা হয় সে ক্রম অনুযায়ী বিন্যস্ত হয় নি। বরং নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী বিন্যস্ত হয় - যে বিন্যাসে আমরা হস্তলিখিত বা মুদ্রিত কোরআন মজীদ দেখতে পাচ্ছি।

যে উপলক্ষ্যে কোরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত ও সূরাহ সমূহ ভাষার আবরণে জনগণের মাঝে নাযিল্ হয় সে সব ঘটনা সংশ্লিষ্ট আয়াত বা সূরাহর শা নে নুযূল্ বা নাযিলের উপলক্ষ্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু প্রচলিত অর্থে শা নে নুযূল্ বলতে যা বুঝায় সে সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া অপরিহার্য।

বর্ণিত অনেক শা নে নুযূল অর্থাৎ অনেক আয়াত ও সূরাহ্ নাযিলের উপলক্ষ্যসমূহ থেকে প্রচলিত সংজ্ঞার অনেক ছ্বাহাবীর মর্যাদা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়। অবশ্য অনেক শা নে নুযূলে বর্ণিত উপলক্ষ্যগুলো এমন যে , সেগুলো থেকে অনেক কাফের-মুশরিক ব্যক্তিত্ব ও মুনাফিক্বের অন্যায়-অপরাধ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এগুলো অবশ্য কেবল তথ্য হিসেবেই গুরুত্ব বহন করে , নচেৎ ইসলাম ও মুসলমানদের ভাগ্যের ওপরে এ সব তথ্যের তেমন একটা প্রভাব নেই। কিন্তু প্রথমোক্ত তথ্যগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের ভাগ্যের ওপরে অতীতে যেমন প্রভাব ফেলেছে তেমনি বর্তমানেও ফেলছে। তা-ই শা নে নুযূল্ সমূহের সত্যাসত্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে এবং তার চেয়েও বেশী প্রয়োজন হচ্ছে শা নে নুযূলের স্বরূপ সম্বন্ধে অকাট্য ধারণা লাভ করা।

বেশীর ভাগ শা নে নুযূলেরই তথ্যসূত্র হচ্ছে অন্ততঃ প্রথম স্তরে স্বল্পসংখ্যক সূত্রে বর্ণিত হাদীছ - পারিভাষিকভাবে যেগুলোকে খবরে ওয়াহেদ্ বলা হয় - যা ইয়াক্বীন্ সৃষ্টিকারী নয়। কারণ , ইসলামী পণ্ডিতদের ভাষায়ই এ ধরনের হাদীছ অকাট্য নয় এবং এ কারণে এগুলো থেকে অকাট্য তথ্য হাছ্বিল্ হয় না , কেবল এমন ধারণা সৃষ্টি হয় পাঠক সাধারণতঃ যাকে সঠিক হওয়ার সম্ভাবনাযুক্ত বলে মনে করে , কিন্তু তার সঠিক হওয়া নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে এ সব হাদীছ হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর ওফাতের দুই শতাধিক বছর পরে সংকলিত হয় এবং এর ফলে একেকটি হাদীছের প্রথম বর্ণনাকারী অর্থাৎ প্রচলিত সংজ্ঞার ছ্বাহাবী থেকে শুরু করে সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছতে অনেকগুলো বর্ণনাকারী-স্তর অতিক্রান্ত হয়। ফলে এ সব স্তরের যে কোনোটিতেই একটি মিথ্যা হাদীছ তৈরী করে কাল্পনিকভাবে পূর্ববর্তী স্তরসমূহের সাথে সম্পৃক্ত করে দেখানো হতে পারে। স্বয়ং হাদীছ সংকলকগণ ও হাদীছ-বিশেষজ্ঞগণও এ ধরনের অসংখ্য মিথ্যা হাদীছ রচিত হবার কথা স্বীকার করেছেন এবং তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেগুলোকে মিথ্যা বলে মনে করেছেন সেগুলোকে তাঁদের সংকলনে স্থানদান থেকে বিরত থাকেন। তবে হাদীছ সংকলকগণ যেহেতু গুনাহ্ , ভুলত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে ঐশী সুরক্ষার অধিকারী ছিলেন না সেহেতু এমনকি তাঁদের অনিচ্ছা ও সাবধানতা সত্ত্বেও তাঁদের সংকলনে অনেক মিথ্যা ও বিকৃত হাদীছ অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকার সম্ভাবনা অস্বীকার করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। বিশেষ করে বিভিন্ন সংকলকের হাদীছের মধ্যে এবং এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে একই সংকলনের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অনেক হাদীছ দেখা যায়।

সুতরাং শা নে নুযূল্ সংক্রান্ত হাদীছ সহ যে কোনো খবরে ওয়াহেদ হাদীছকে আক্ব্ল্ , কোরআন মজীদ , প্রথম থেকে প্রতি স্তরে বহুল সূত্রে বর্ণিত (মুতাওয়াতির্) হাদীছ ও প্রথম যুগ থেকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর অভিন্ন মতের বিষয়সমূহ - এ চার অকাট্য দ্বীনী সূত্রের মানদণ্ডে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন ; এ চার সূত্রের কোনোটির সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন খবরে ওয়াহেদ হাদীছ সমূহ কেবল মুস্তাহাব ও মাকরূহর ন্যায় গৌণ বিষয়াদিতে , প্রায়োগিক বিষয়াদিতে এবং আক্বাএদ ও আহ্কাম্ বহির্ভূত ইল্মী বিষয়াদিতে গ্রহণযোগ্য ; আক্বাএদের শাখা-প্রশাখা অথবা ফরয বা হারাম প্রমাণের ক্ষেত্রে এ ধরনের হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়।

অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে এই যে , শা নে নুযূল সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা পোষণকারীদের বেশীর ভাগ লোকের ধারণা এই যে , যে উপলক্ষ্যে যে আয়াত বা সূরাহ্ নাযিল্ হয় ঐ উপলক্ষ্য বা ঘটনা সংঘটিত না হলে কোরআন মজীদের ঐ আয়াত বা ঐ সূরাহ্ নাযিল্ হতো না। এ ধারণার সবচেয়ে গুরুতর দিক হচ্ছে এই যে , অনেকে মনে করে যে , ইসলামের বিভিন্ন আহ্কাম যে সব উপলক্ষ্যে নাযিল্ হয়েছে বলে বলা হয় ঐ সব ঘটনা সংঘটিত না হলে ঐ সব আহ্কাম্ নাযিল্ হতো না। অথচ প্রকৃত ব্যাপার তা নয়।

উদাহরণস্বরূপ , প্রচলিত ধারণানুযায়ী মনে করা হয় যে , মদ বর্জনের নির্দেশ সম্বলিত আয়াত নাযিল্ হবার আগে মদ হারাম ছিলো না এবং তার আগ পর্যন্ত অনেক ছ্বাহাবী মদ খেতেন। এ মর্মে অনেক হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। অথচ প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। কারণ , মদ হচ্ছে এমন জিনিস যা প্রকৃতিগতভাবেই মানুষের জন্য শারীরিক , মানসিক , নৈতিক ও চারিত্রিক ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসে। সুতরাং সুস্থ বিচারবুদ্ধির রায় হচ্ছে এই যে , মানব সৃষ্টির পর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর বিধানে এ বস্তু হালাল থাকতে পারে না। তাছাড়া যেহেতু তাওরাতে মদ হারাম ছিলো সেহেতু রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) শরী আতে তা প্রথম দিকে মোবাহ হিসেবে গণ্য হলে একে ইয়াহূদীরা নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর ভণ্ড নবী হওয়ার ও কোরআনের তাঁর নিজের রচিত কিতাব্ হওয়ার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতো এবং সুস্থ বিচারবুদ্ধির কাছে তা গ্রহণযোগ্য হতো। ফলে ইসলামের অকাল সমাধি ঘটতো। কিন্তু কোরআন ও নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তোলার ও প্রচার চালাবার কোনো প্রমাণ নেই।

শা নে নুযূল সম্পর্কে প্রচলিত এ ধরনের ধারণাকে সঠিক বলে গ্রহণ করলে ধরে নিতে হয় যে , কোরআন মজীদে যেনা-ব্যভিচার থেকে নিষেধ করে আয়াত নাযিলের আগে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর শরী আতে যেনা-ব্যভিচার মোবাহ্ ছিলো। নিঃসন্দেহে সামান্যতম বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো মানুষও এটা মনে করতে পারে না।

প্রকৃত ব্যাপার এই যে , কোরআন মজীদ যেহেতু লাওহে মাহ্ফূযে সংরক্ষিত ছিলো - তা লাওহে মাহ্ফূয্ স্বয়ং নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়পটই হোক বা আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্ট অন্য কোনো অবস্তুগত সৃষ্টিই হোক - সেহেতু পুরো কোরআন মজীদই শুরু থেকেই একই অবস্থায় ছিলো এবং তা ইল্মে হুযূরী আকারে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়পটে প্রবেশের সময় থকেই সমস্ত বিধিবিধান তাতে একভাবেই বিদ্যমান (মাহ্ফূয্ - সংরক্ষিত) ছিলো। অতঃপর বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতি দৃষ্টে যখন যে বিষয় সম্পর্কিত আয়াত বা সূরাহ্ মানুষের সামনে পেশ করাকে অধিকতর উপযোগী গণ্য করা হয় তখন সে আয়াত্ বা সূরাহ্ ভাষার আবরণে লোকদের সামনে নাযিল্ করা হয়।

এ বিষয়টি বর্তমানে আমরা যেভাবে কোরআন মজীদ ব্যবহার করি তদ্রুপ। অর্থাৎ একজন প্রকৃত আলেমের ঘরে কোরআন মজীদ থাকা এবং তাঁর পুরো কোরআনের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তিনি যখন , ধরুন কোনো মসজিদের মুছুল্লীদের সামনে , কোরআনের ভিত্তিতে ওয়ায-নছ্বীহত্ করেন তখন তিনি সংশ্লিষ্ট সময়ের উপলক্ষ্য (যেমন : রোযা , হজ্ব ইত্যাদি) ও সমাজ পরিবেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে বা যে সব ঘটনা ঘটছে সেগুলো সামনে রেখে কোরআন মজীদের এতদসংশ্লিষ্ট আয়াত বা সূরাহ্ পাঠ করে লোকদেরকে সতর্ক করেন ও শিক্ষা দান করেন ; তিনি কোরআন মজীদের আয়াতসমূহ সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহ্ থেকে শুরু করে সূরাহ্ আন্-নাস্ পর্যন্ত যেভাবে লিপিবদ্ধ ও মুদ্রিত আছে সে বিন্যাস অনুযায়ী লোকদের সামনে উপস্থাপন করেন না , অথচ তা সেভাবেই আছে এবং তিনি যে সব আয়াত উপস্থাপন করেন নি তা-ও যথাস্থানেই আছে। বিশেষ করে তিনি আহ্কাম্ সম্বলিত আয়াত্ উদ্ধৃত করার ক্ষেত্রে যে সব আহ্কাম্ লোকেরা মেনে চলছে সে সংক্রান্ত আয়াত উল্লেখ না করে যে সব আহ্কাম্ লঙ্ঘিত হচ্ছে সে সব উদ্ধৃত করে লোকদেরকে নছ্বীহত্ করেন।

অবশ্য এ প্রসঙ্গে উল্লেখ না করলেও সুস্পষ্ট যে , মদ বা অপর কতক খাদ্যবস্তু হারাম হওয়ার ন্যায় যে সব আহ্কামের প্রাকৃতিক মানদণ্ড আছে সেগুলো আল্লাহর শরী আতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিন্ন থাকলেও অন্যান্য ধরনের বিষয়াদির ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পরিবেশের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহ্ তা আলা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিধান দিয়েছেন এবং কতক ক্ষেত্রে বান্দাহ্দের আনুগত্য পরীক্ষা করার জন্য বা কোনো গেষ্ঠীকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিভিন্ন বিধান দিয়েছেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে এ ধরনের বিধানে পরিবর্তন সাধন করেছেন। আর সর্বশেষ গ্রন্থ কোরআন মজীদে এগুলো শুরু থেকেই এরূপ ছিলো। উদাহরণস্বরূপ , ইসলামে সব সময়ই মুসলমানদের জন্য নামায ফরয ছিলো , তবে এক সময় দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তে সতর রাক্ আত্ নামায আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয় এবং লাওহে মাহ্ফুযস্থ কোরআন মজীদে শুরু থেকেই তা এভাবে নির্ধারিত ছিলো যে , এক সময় দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তে সতর রাক্ আত্ নামায আদায়ের নির্দেশ দেয়া হবে।

শা নে নুযূল সম্বন্ধে কখনো কখনো এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় যে , যে সব আয়াতে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির কোনো ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং পরে তা সংঘটিত হয়েছে তা কি এটাই প্রমাণ করে না যে , ঐ বিষয়টি আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত ছিলো ?

এ বিষয়টি অবশ্য অদৃষ্টবাদ প্রসঙ্গে আলোচিত হতে পারে। তবে শা নে নুযূল প্রসঙ্গে এ ব্যাপারে বলতে হয় যে , আল্লাহ্ তা আলা কোরআন মজীদ যেভাবে নাযিল্ করেছেন তথা বর্তমানে আমরা তা যেভাবে পাঠ করছি তা লাওহে মাহ্ফূযে থাকার মানে এ নয় যে , (অনেক লোক যেমন মনে করে থাকে ,) তা অনাদি কালেই এভাবে সংরক্ষিত ছিলো , বরং বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে এটাই গ্রহণযোগ্য যে , আল্লাহ্ তা আলা তা নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়ে ইল্মে হুযূরী আকারে নাযিল্ করার সময় পর্যন্ত যা কিছু আগেই সংঘটিত হয়েছিলো তা সে অবস্থায়ই এবং ঐ সময় পর্যন্তকার সামগ্রিক কার্যকারণের প্রভাবে তখন থেকে ভবিষ্যতে যা কিছু সংঘটিত হওয়া অনিবার্য তা সেভাবেই এবং যা কিছু দুই বা ততোধিক সম্ভাবনাযুক্ত তা সেভাবেই , আর ভবিষ্যতের অনিশ্চিত সম্ভাবনার বিশাল ক্ষেত্র সেভাবেই ইল্মে হুযূরী আকারে সংরক্ষিত হয়ে যায়।

এতদসংক্রান্ত দ্বিতীয় সংশয় এই যে , উদাহরণস্বরূপ , সূরাহ্ লাহাবে আবূ লাহাবের নামোল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে কি নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়ে কোরআন প্রবেশের সময়ই নিশ্চিত ছিলো যে , আবূ লাহাব ইসলামের বিরুদ্ধে দুশমনীর পথ অবলম্বন করবে এবং তার জন্য ইচ্ছা করলেও ইসলাম গ্রহণের সামান্যতম সম্ভাবনাও ছিলো না ? এ প্রশ্নের দু টি সম্ভাব্য জবাব হতে পারে। একটি হচ্ছে এই যে , কোরআন নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়ে নাযিল্ হবার পূর্বেই আবূ লাহাব্ নিজেকে যে পথে এগিয়ে নেয় তাতে সে স্বেচ্ছায় নিজের জন্য সত্যের পথে ফিরে আসার সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে দিয়েছিলো - ঠিক যেভাবে যে সব গাছের গোড়া কেটে ফেললে তা থেকে পুনরায় নতুন করে গাছ জন্ম নেয় সে সব গাছের মধ্য থেকে কোনো কোনোটি থেকে গজানো নতুন গাছ যখন বার বার খুব ছোট থাকতেই ভেঙ্গে ফেলা হয় এক সময় সেগুলোতে আর নতুন করে গাছ গজাবার সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে কোনো ব্যক্তি তার নিজের আমল দ্বারা তার হেদায়াতের পথ সে নিজেই চিরতরে রুদ্ধ করে দিয়ে থাকতে পারে।

দ্বিতীয় জবাবটি হচ্ছে এই যে , যেহেতু আল্লাহ্ তা আলা মানুষকে ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেহেতু তিনি মানুষ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় থেকেই জানেন যে , কতক মানুষ স্বেচ্ছায় আল্লাহ্ তা আলার নাফরমানীর পথ বেছে নেবে এবং কেউ কেউ এ কাজে তাদের নেতৃত্ব দেবে। এ ধরনের লোকদের পরিচয় সংশ্লিষ্ট গুণবৈশিষ্ট্য আকারে সংরক্ষিত ছিলো এবং কালক্রমে যথাসময়ে লোকদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত ও এতদভিত্তিক কর্মের পরিণতিতে ঐ সব গুণবৈশিষ্ট্য কোনো কোনো লোকের জন্য প্রযোজ্য হয়ে যায় এবং ইল্মে হুযূরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্তুগত শরীরে ঐ সব গুণবৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়ে যায়। তখন থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ ঐ সব গুণবৈশিষ্ট্যের বাস্তব দৃষ্টান্তে পরিণত হয় এবং এ কারণে ঐ সব ব্যক্তিতে সংশ্লিষ্ট গুণবৈশিষ্ট্য প্রযোজ্য হয়ে যাবার পরে ঐ সব আয়াত নাযিলের সময় তাদের নাম-ধাম যুক্ত হয়ে যায় এবং তাদের নাম সহযোগে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর যবানে জারী করা হয়। আর এ বিষয়টি কেবল কোরআন মজীদের বেলায়ই নয় সমস্ত ঐশী গ্রন্থ নাযিলের বেলায়ই এরূপ হয়ে থাকার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।