শাফাআত

শাফাআত0%

শাফাআত লেখক:
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শাফাআত

লেখক: উস্তাদ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ কাজাভী
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 13639
ডাউনলোড: 3047

শাফাআত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13639 / ডাউনলোড: 3047
সাইজ সাইজ সাইজ
শাফাআত

শাফাআত

লেখক:
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বাংলা

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

শাফাআত

লেখক:

উস্তাদ সাইয়েদ মোহাম্মদ কাজাভী

অনুবাদ:

মোঃ সামিউল হক

পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

শাফাআত

লেখক : উস্তাদ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ কাজাভী

অনুবাদ : মোঃ সামিউল হক

সম্পাদনা : মির আশরাফ-উল-আলম

প্রথম প্রকাশ

তারিখ: 2005

প্রকাশক : খেদমতে ইসলামী সংস্থা , কোম , ইরান

প্রকাশক কর্তৃক সর্ব সত্ত সংরক্ষিত

ভূমিকা

আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনের প্রতি অশেষ শুকরিয়া যে , তিনি মানুষকে বিবেক দানের মাধ্যমে অন্যান্য পশু থেকে আলাদা করেছেন। বিবেক হচ্ছে এমন এক ঐশী সম্পদ যার গুরুত্ব পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আর মানুষ এই বিবেকের মাধ্যমেই সত্য অনুসন্ধান করতে পেরেছে এবং অসত্য বা ভুল পথকে নির্দিষ্ট করতে।

প্রকৃত পক্ষে কাল কেয়ামতের দিনেও এই বিবেক দিয়েই হিসাব-নিকাশ করা হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আ লামিন ভাল থেকে মন্দ আর নেকি থেকে ত্রুটিকে আলাদা করার জন্যেই মানুষের মাঝে তা দিয়েছেন। আর এই বিবেকই হচ্ছে সে দিনের ঐ সমস্ত কিছুর ব্যাপারে দায়িত্বশীল।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে , দ্বীন ইসলাম অন্যান্য দ্বীনের বিপরীতে পরিপূর্ণ একটি দ্বীন ও ধর্ম হওয়া সত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি তা অন্যান্য দ্বীনের মতই দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই মুসলমানগণ দুর্বল হয়ে পড়ছেন। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে একটাই আর তা হল , হাদীসে সাকালাইনের প্রতি দৃষ্টি না দেয়া। যে হাদীসটি অতি প্রসিদ্ধ ও মুতাওয়াতির সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে আমাদের কাছে এসে পৌছেছে। তাই যে কেউ এই হাদীসটির মাধ্যমে সত্য পথের ঠিকানা খুজবে , আল্লাহ রাব্বুল আ লামিন তাকে গোমরাহী থেকে রক্ষা করবেন। আর এর বিপরীতে যে কেউ এই হাদীসটির সাথে বিরোধিতা করবে বা ইজতিহাদ করবে অথবা নফসকে তার বিপরীতে স্থান দিবে তারা গোমরাহ্ হয়ে যাবে।

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

মুখবন্ধ

ইসলাম ধর্মের আকিদা বিশ্বাসের মধ্যে যে বিষয়টি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মতামত পেশ করা হয়েছে এবং যার ফলে ইসলামের মূল ভাব ধারা থেকে তার অর্থ বিচ্যুত হয়েছে তা হল শাফাআত। অথচ যদি এই বিষয়টি ইসলাম ধর্মের মূল উৎস সমূহ হতে গ্রহণ করা যায় এবং সত্যিকার অর্থ অনুধাবন করা হয় তাহলে এটা একটা উজ্জল ও স্পষ্ট বিষয়ে পরিনত হবে যা সকলের জন্যই গ্রহন যোগ্য বিষয়ে বিবেচিত হবে। স্পষ্ট ধারনা না থাকার কারণে শাফাআত আমাদের মাঝে বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আর তাই শাফাআতের বিষয়টিকে কুফর , গুনাহ ও ইত্যাদি বলেও অভিহিত করা হয়।

বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষী ভাই বোনদের মত বাংলা ভাষাভাষী ভাই বোনদের মাঝেও এ বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনার অভাব পরিলক্ষ্যিত করেছি। এ বইটি বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী ভাই বোনদের উক্ত অভাব পূরণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। শুধু তাই নয় এই বইটি মনযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্য মুসিবত থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব হবে। মূলতঃ শাফাআতের মূল বিষয়ে কোন দ্বিধা দন্দ নেই। ইসলামের সকল মাযহাবের অনুশারিগণই শাফাআতের মূল বিষয়ে একমত। যে বিষয় নিয়ে অনৈক্য পরিলক্ষিত হয় তা শুধুমাত্র শাফাআতকারীগণদের দৃষ্টান্ত , উপমা এবং খুটিনাটি ও আনুসাঙ্গিক বিষয় সমূহ।

বইটি মূলতঃ একটি ফারসী বই থেকে অনূদিত ; অন্যক ব্যস্ততার মাঝে এই গুরুদায়িত্বটি পালন করতে সক্ষম হয়েছি , ভুল ভ্রান্তি থাকাই স্বাভাবিক , আর এজন্য অধম বান্দার প্রতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি রাখার জন্য পাঠকবৃন্দের প্রতি অনুরোধ রাখছি। অধিকন্তু যদি কেহ সংশোধনিতে মতামত জানিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে থাকেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো এবং পরবর্তী সংষ্করণে তা সংশোধন করার ওয়াদা দিচ্ছি।

বইটি প্রকাশে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন , ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সলেশন এণ্ড রিসার্চ সেন্টার ইমাম আলী (আঃ) ফাউণ্ডেশন। আশা করছি ভবিষ্যতেও বাংলাভাষা ভাষী ভাইবোনদের প্রয়োজনীয়তা পূরণে নতুন নতুন বই প্রকাশে সহযোগিতা করবে। কেয়ামতের সেই মহা মুসীবতের সময় আল্লাহ তালা আমাদের জন্য তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) কে সেই মাকামে মাহমুদে অধিষ্টিত করুক এবং আমাদেরকে তার শাফাআত নসীব করুক , আমিন।

মোহাম্মদ সামিউল হক

প্রথম অধ্যায়

শাফাআতের আভিধানিক অর্থ ও পারিভাষিক অর্থ

শাফাআতের প্রভাব ও কারণ সমূহ

আমলের প্রতিচ্ছবি ও শাফাআত

পাপ মোচনের জন্য শাফাআত

শাফাআতের আভিধানিক অর্থ

শাফাআত আরবী শব্দشفع থেকে নেয়া হয়েছে এর অর্থ হল একই প্রকার কোন বস্তুর সাথে অনুরূপ বস্তুর সংযোজন। এবং এই সংযোজনের উদ্দেশ্য হল সাহায্য করা। আর এজন্য অবশ্যই দ্বিতীয় বস্তুটির আবেদন থাকা বাঞ্চনীয়। আর তাই সাধারনত ঊর্দ্ধতন মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি নিম্নস্তরের ব্যক্তির জন্য শাফাআত করে থাকে।1

شفع বিপরীত শব্দ হলوتر অর্থাৎ একক। আর একটি বস্তুর সাথে অনুরূপ আরেকটি বস্তুর সংযোজন কে সহপাটি , জোড়া শাফা বলা হয়।2

ইবনে ফারেস বলেন: যে ব্যক্তি শাফাআতের জন্য উদ্দোগী হয় , তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজস্ব শক্তি সামর্থ যথেষ্ট নয় ; আর তাই অন্য এক ঊর্দ্ধতম শক্তির সাথে নিজের বন্ধন সৃষ্টি করে এবং নিজস্ব উদ্দেশ্য হাসিল করে।3

المشفَّع শব্দের অর্থ হল ; যে ব্যক্তি শাফাআত করলে আল্লাহর দরবারে কবুল হয় , যেমন নবী , রাসূল ও ইমাম (আঃ) গণ।

المشفِّع শব্দের অর্থ হল ; যিনি শাফাআত কবুল করেন এবং তিনি হলেন একমাত্র উপাস্য আল্লাহ তালা।شفیع শব্দের অর্থ হল ; যে ব্যক্তি শাফাআত করে থাকে (এটা সেফাতে মোশাব্বেহা যার অর্থ হবে এসমে ফায়েল)।

شفعاء শব্দটিشفیع শব্দের বহুবচন।

শাফাআতের পারিভাষিক সংজ্ঞা

ইবনে আসির বলেন: শাফাআত হল অতীতের গুনাহ খাতা ও ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করার জন্য আবেদন।4

ভূতপূর্ব আলেমগণ শাফাআতের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করেছেন ,5 এ ব্যাপারে কোন রকম গবেষণা চালাননি। আর পরবর্তী আলেমগনের বিশ্বাস হল: শাফাআত এক প্রকার দোয়া যা আল্লাহ তালা কবুল করে থাকেন।

আমাদের মতে , শাফাআত হল কোন বস্তু বা ব্যক্তি অন্য কোন গুনাহগার ব্যক্তির গুনাহ খাতা মাফ করানোর জন্য কিয়ামতের দিনে ওসিলা হওয়া।

আর এর ব্যাখ্যা হল: কোন ব্যক্তি যখন তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজেকে দুর্বল মনে করে। তখন নিজের প্রচেষ্টার সাথে সাথে অন্য এমন এক ব্যক্তির সহযোগিতা কামনা করে যার সেরূপ যোগ্যতা রয়েছে। আর তাই এমন এক ব্যক্তির শাফাআত কামনা করে যিনি আল্লাহ তালার কাছে অতি সম্মানিত এবং যার শাফাআত আল্লাহ তালা কবুল করে থাকেন।

শাফাআতের প্রকারভেদ

প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই শাফাআত সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। কিন্তু যেহেতু বিভিন্ন প্রকার শাফাআতের ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে তাই এ বিষয় স্পষ্ট করার জন্য আমরা পথেমে নানাবিধ শাফাআতের ব্যাখ্যা তুলে ধরবো , অতঃপর শাফাআতের সঠিক ধারণাটি পরিষ্কার করে তুলব।

1। বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় শাফাআত

বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় শাফাআতের প্রভাব রয়েছে।

আল্লামা তাবাতাবাই (রহঃ) এর মতে , শাফাআত নিজেই একটি কারণ এবং শাফাআত প্রার্থী ব্যক্তি ক্ষমা পাওয়ার জন্য নিকটতম উসিলা হিসেবে শাফাআতকারীর আশ্রয় নিয়ে থাকে ; এবং অন্যান্য উসিলা সমূহের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেটিই গ্রহন করে। এ বিষয়টিই শাফাআতের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।6

তবে আমরা শাফাআত সম্পর্কে এমন ধারণা পোষন করি যে , আল্লাহ তালা দুই ভাবে শাফাআত কবুল করে থাকেন প্রথমত বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিষয় ও দ্বিতীয়ত শরিয়তি বিষয়।

প্রথম মতে , আল্লাহ তালা সর্ব প্রকার কার্য কারণ সমূহের উৎস এবং অন্য সব কারণ সমূহ অবশেষে তার কাছেই সমাস্থি লাভ করে। পবিত্র কোরআন শরিফও এ বিষয়টির সত্যতা প্রমাণ করেছে উদাহরণস্বরূপ:

) إ ِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ(

তোমাদের সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ তা লা আসমান ও জমিনকে সাতদিনে সৃষ্টি করেছেন । অতঃপর আরশের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং সৃষ্টির ধারাবাহিকতা আনয়ন করলেন । তার অনুমতি ছাড়া কেহই উসিলা হতে পারবেনা (শাফাআত করতে পারে না)।7

যদিও এ আয়াতটি আসমান ও জমিনের সৃষ্টির প্রতি নির্দেশ করে তবে আমাদের লক্ষ্যনীয় বিষয়টি হলيُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ এবং তা শাফাআতের মাধ্যমে বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে এবং এটাই সত্যিকার কারণ ও উসিলা হিসেবে গন্য হবে ।

আমাদের মতে , বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় শাফাআতের আভিধানিক অর্থ হল ক্ষমা প্রাস্থির কারণ সমূহের উসিলা ।

2 । শরিয়তি শাফাআত

এর অর্থ হল যা বাস্তব জীবনের দায়িত্ব কর্তব্যের ক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য । আল্লামা তাবাতাবাই এ বিষয় সম্পর্কে বলেন: শাফায়াত কিছু সংখ্যক মানুষ ও ফেরেশতার জন্য নির্ধারিত তবে এজন্য আল্লাহর অনুমতি অত্যাবশ্যকীয় এবং আল্লাহর অনুমতিই শাফাআতের পরিপূর্ণতা দেয় । অর্থাৎ আল্লাহ তালঅ তার অনুমতি দিয়ে তার কিছু সংখ্যক বান্দাকে কবুল করে নেন , কারণ সমস্ত রাজত্ব ও কর্তৃত্ব তারই জন্য ।

অতএব আল্লাহ তালা তার সেসব বান্দাগণকে এই পদমর্যাদা দান করেছেন তারা আল্লাহ তালার রহমত , ক্ষমা , মাগফেরাত ও অন্যান্য গুনাহবলীর উসিলা ধরে কিছু সংখ্যক গুনাহগার ব্যক্তিকে তার সাথে সংযুক্ত করে এবং যে সকল আযাব ঐ সকল ব্যক্তির প্রাপ্য ছিল তা থেকে ফিরিয়ে আনে । এভাবে যে সকল ব্যক্তি আযাব থেকে মুক্তি পায় ও আযাব ভোগ করতে হয়না । তাই শাফাআতের বিষয়টি আল্লাহর রাজত্ব ও কর্তৃত্বের শামিল এটা আল্লাহর রাজত্বের বিপরীত কোন বিষয় নয় । আর এ বিষয়টি আল্লাহর বানী দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় ।

) ف َأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ(

আল্লাহ তালা উক্ত ব্যক্তিদের গুনাহ খাতাকে সওয়াবে পরিবর্তন করেন।8

মূলত আল্লাহ তালা যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন ও যেকোন আদেশ বলবত করে থাকেন।9

শাফাআত সম্পর্কে আল্লামা তাবাতাবাঈর উক্ত ব্যাখ্যা শাফাআত ও দোয়া করা একই শ্রেনীভূক্ত আমাদের কাছে গ্রহন যোগ্য।

শর্ত সাপেক্ষে দোয়া করলে ক্ষতির সম্ভাবনা ব্যহত করে আল্লাহ তালা তার বান্দার প্রতি কল্যান বর্ষণ করেন। এ রকম ভাবে দোয়া করাই শাফাআতের আভিধানিক অর্থ। আর শাফাআতকারী পাপী বান্দার ক্ষমার কারণ হয়ে থাকে।

3। আমলের শাফাআত

এই প্রকার শাফাআতের ব্যাখ্যায় বলতে হয়:

মানুষ ও তার আমলের মাঝে এ দুনিয়ায় এক ধরনের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্ক কেয়ামতের দিনও বলবৎ থাকবে অর্থাৎ সেদিন এই আমল ভাষ্কর্য (প্রতিকৃতি) হয়ে উঠবে।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে তার কিছু সংখ্যকের প্রতি দৃষ্টিপাত করা শ্রেয় মনে করছি।

) ي َوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ(

মোফাসসেররগণ এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেন: কেয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে তার নেতার সাথে পুনরুত্থান করা হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে , কেয়ামতের দিন ফেরাউন তার অনুসারীদের সাথে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে কারণ সে দুনিয়াতেও তাদের নেতা ছিল। নিম্নলিখিত আয়াত এ বিষয়ের সাক্ষ প্রদান করে।10

) ي َقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ(

ফেরাউন কেয়ামতের দিন তার অনুসারীদেরকে জাহান্নামের আগুন নিক্ষেপ করবে।11

এখানে আরবী শব্দأَوْرَد - এর প্রতি মনোযোগ দিলে বুঝা যাবে যে , যে ফেরাউন তার গোত্রের জন্য গোমরাহির কারণ হয়ে ছিল সেই আবার কিয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। ফলাফল এই দাড়ায় যে , যেভাবে সে দুনিয়াতে তাদের অপকর্মের কারণ হয়েছিল কেয়ামতের দিনও সেভাবে জাহান্নামের কারণ হবে।

আমলের প্রতিকৃতি (ভাষ্কর্য) সম্পর্কে কিছু সংখ্যক হাদীসও বর্ণিত আছে। উদাহরণ স্বরূপ সে সব হাদীস নামাজ পড়া , রোজা রাখা ও কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য ভাষ্কর্য হয়ে দাড়াবে ও তার জন্য শাফাআত করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , কেয়ামতের দিন কোরআন ও রোজা মানুষের জন্য শাফাআত করবে। রোজা বলবে , হে পরওয়ারদেগার! তার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দাও , কারণ আমি ওকে সারাদিনভর খাওয়া ও পানাহার থেকে বিরত রেখেছি এবং কামভাব ও আকাংখ্যা থেকে বিরত রেখেছি। কোরআন বলবে , হে আল্লাহ! তার জন্য শাফাআত করার তৌফিক দাও , কারণ আমি তাকে রাতে ঘুমাতে দেইনি । তখন রোজা ও কোরআন শাফাআত করবে এবং আল্লাহ তালা তাদের শাফাআত কবুল করবেন।12

আহলে সুন্নাতের বড় এক আলেম শেখ তানতাভি শাফাআত সম্পর্কে বলেন , জেনে নাও , (উদাহরণস্বরূপ) , শাফাআতের বীজ , গাছ ও ফল রয়েছে। আর এগুলো হল কেয়ামতের দিনের নাযাত (আযাব থেকে মুক্তি) পাওয়ার উসিলা। আল্লাহর নবী রাসূল (আঃ) গণ মানুষকে শরিয়তের আহকাম শিক্ষা দিয়ে বীজ বপন করেন। আর মানুষ যদি সে অনুপাতে আমল করে তাহলে ফল লাভের যোগ্যতা অর্জন করে এবং কেয়ামতের দিন সেই ফল (আযাব থেকে মুক্তি) লাভ করে থাকবে। অতএব শাফাআতের শুরু হল শাফাআত সম্পর্কিত জ্ঞান , অতঃপর আমল ও সবশেষে সফলতা ও বেহেশতের উর্ধ্বতম মর্যাদা হল তার ফলাফল।13

আমাদের মতে , আমলের শাফাআত শাফাআতের এক রকম আভিধানিক অর্থ। আর শাফাআতের পারিভাষিক অর্থ অন্য রকম।

শাফাআত: পাপ মোচন অথবা অনুগ্রহ

এ ধরনের শাফাআতে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যস্থতায় গুনাহের ক্ষমা এবং সে ক্ষেত্রে না দেখার ভাব করার শামিল। একে পাপ মোচন অথবা অনুগ্রহ মূলক শাফাআতও বলা হয়ে থাকে। এর কারণ হল , আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যস্থতায় গুনাহগার বান্দাদের জন্য ক্ষমা অথবা অনুগ্রহ হয়ে থাকে। অর্থাৎ আল্লাহ তালা তার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের উসিলায় তার অনুগ্রহ ও রহমত পাপী বান্দাদের (যারা আযাবের উপযোগী ছিল) উপর বর্ষণ করে থাকেন।

এর ব্যাখ্যায় বলতে হয় , আল্লাহ তালা অকল্পনীয় রহমতের মালিক। পবিত্র কোরআনের আয়াত সমূহও এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে , হে পরওয়ার দেগার তোমার অসীম জ্ঞান ও রহমত বিশ্ব জাহানকে ছেয়ে ফেলেছে।14

আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের উসিলায় পাপী বান্দাদের জন্য শাফাআত করা এক রকমের খোদায়ী রহমত বর্ষনের উপায়। তবে এর পেছনে সুক্ষ কারণ ও কারক নিহিত রয়েছে। আর আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাগণ সে সব পাপী ব্যক্তিদের শাফাআত করতে পারেন যারা শাফাআত পাওয়ার উপযোগী। এর অন্যমত একটা কারণ হল আল্লাহর রহমত।

উল্লেখিত তিন প্রকার শাফাআতের মধ্যে কোনটি পারিভাষিক শাফাআত বলে গন্য ?

উপরোক্ত আলোচনার পর বলা যেতে পারে যে , ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে এবং কোরআন নাযিলের সময়ে আরব জাতি শাফাআত সম্পর্কে যে ধারনা রাখতো তা হল , অনুগ্রহ মূলকঃ শাফাআত ও পাপমোচন যা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যস্থতায় হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনের শাফাআত সম্পর্কিত আয়াত সমূহ (যেগুলো কেয়ামত দিবসের ইঙ্গিত বহন করে) ঠিক একই প্রকার শাফাআত আর এই আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেও মানুষের মাঝে শাফাআত সম্পর্কিত ধারণা ছিল। এবং পবিত্র কোরআনের শাফাআত সম্পর্কিত আয়াত সমূহও যেগুলো হয় শাফাআত কে সত্যায়িত করেছে অথবা পত্যাক্ষান করেছে) ঠিক একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যে ধারনা পূর্ববর্তী মানুষের মাঝে বলবত ছিল এবং কিছু কিছু আয়াত সমুহ শাফাআতের শর্ত ও সীমানা নির্ধারণ করেছে।

মূলতঃ সংক্ষিপ্তভাবে বলা যেতে পারে যে , শাফাআতের অর্থ হল সুপারিশকারীর উসিলায় পাপমোচন। ভূতপূর্ব মোফাসসের ফখরুদ্দীন রাযী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর মাকামে মাহমুদ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন , আহলে সুন্নতের মতে: পাপ মোচনের জন্য শাফাআত করা হয়ে থাকে। তিনি তার আলোচনায় বলেন যে , আজাব থেকে মুক্তির জন্য মানুষের প্রচেষ্টা উচ্চ মর্যাদা লাভের চেষ্টা ও ভাল কাজের প্রচেষ্টা চেয়ে শ্রেয়তর। কারণ মানুষ যদি পাপ মোচনের চেষ্টা না করে সফলতা ও কল্যাণ লাভের চেষ্টা করে থাকে তাহলে তাতে তার কোন লাভ হবে না সেই পাপের কারণে তাকেতো জাহান্নামে যেতে হবে।

عسی أن یبعثک ربّک مقاما محمودا

অর্থ: অতি শীঘ্রই আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। এই আয়াতের উদ্দেশ্য হল শাস্তি থেকে পরিত্রাণ।

আমাদের মতে শাফাআতের পারিভাষিক অর্থ হল ,কেয়ামতের দিন (আল্লাহ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের উসিলায়) পাপমোচন। পবিত্র মাসুমিন (আঃ) দের থেকে বর্ণিত হাদীস সমূহেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায় : শাফাআতের দলিল প্রমাণ

1। কোরআনের আয়াত সমূহ

2। হাদীস সমূহ

3। এজমা

4। আক্বল (বিবেক)