শাফাআত

শাফাআত25%

শাফাআত লেখক:
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শাফাআত
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15578 / ডাউনলোড: 4303
সাইজ সাইজ সাইজ
শাফাআত

শাফাআত

লেখক:
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বাংলা

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

শাফাআত

লেখক:

উস্তাদ সাইয়েদ মোহাম্মদ কাজাভী

অনুবাদ:

মোঃ সামিউল হক

পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

শাফাআত

লেখক : উস্তাদ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ কাজাভী

অনুবাদ : মোঃ সামিউল হক

সম্পাদনা : মির আশরাফ-উল-আলম

প্রথম প্রকাশ

তারিখ: ২০০৫

প্রকাশক : খেদমতে ইসলামী সংস্থা , কোম , ইরান

প্রকাশক কর্তৃক সর্ব সত্ত সংরক্ষিত

ভূমিকা

আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনের প্রতি অশেষ শুকরিয়া যে , তিনি মানুষকে বিবেক দানের মাধ্যমে অন্যান্য পশু থেকে আলাদা করেছেন। বিবেক হচ্ছে এমন এক ঐশী সম্পদ যার গুরুত্ব পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আর মানুষ এই বিবেকের মাধ্যমেই সত্য অনুসন্ধান করতে পেরেছে এবং অসত্য বা ভুল পথকে নির্দিষ্ট করতে।

প্রকৃত পক্ষে কাল কেয়ামতের দিনেও এই বিবেক দিয়েই হিসাব-নিকাশ করা হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আ লামিন ভাল থেকে মন্দ আর নেকি থেকে ত্রুটিকে আলাদা করার জন্যেই মানুষের মাঝে তা দিয়েছেন। আর এই বিবেকই হচ্ছে সে দিনের ঐ সমস্ত কিছুর ব্যাপারে দায়িত্বশীল।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে , দ্বীন ইসলাম অন্যান্য দ্বীনের বিপরীতে পরিপূর্ণ একটি দ্বীন ও ধর্ম হওয়া সত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি তা অন্যান্য দ্বীনের মতই দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই মুসলমানগণ দুর্বল হয়ে পড়ছেন। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে একটাই আর তা হল , হাদীসে সাকালাইনের প্রতি দৃষ্টি না দেয়া। যে হাদীসটি অতি প্রসিদ্ধ ও মুতাওয়াতির সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে আমাদের কাছে এসে পৌছেছে। তাই যে কেউ এই হাদীসটির মাধ্যমে সত্য পথের ঠিকানা খুজবে , আল্লাহ রাব্বুল আ লামিন তাকে গোমরাহী থেকে রক্ষা করবেন। আর এর বিপরীতে যে কেউ এই হাদীসটির সাথে বিরোধিতা করবে বা ইজতিহাদ করবে অথবা নফসকে তার বিপরীতে স্থান দিবে তারা গোমরাহ্ হয়ে যাবে।

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

মুখবন্ধ

ইসলাম ধর্মের আকিদা বিশ্বাসের মধ্যে যে বিষয়টি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মতামত পেশ করা হয়েছে এবং যার ফলে ইসলামের মূল ভাব ধারা থেকে তার অর্থ বিচ্যুত হয়েছে তা হল শাফাআত। অথচ যদি এই বিষয়টি ইসলাম ধর্মের মূল উৎস সমূহ হতে গ্রহণ করা যায় এবং সত্যিকার অর্থ অনুধাবন করা হয় তাহলে এটা একটা উজ্জল ও স্পষ্ট বিষয়ে পরিনত হবে যা সকলের জন্যই গ্রহন যোগ্য বিষয়ে বিবেচিত হবে। স্পষ্ট ধারনা না থাকার কারণে শাফাআত আমাদের মাঝে বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আর তাই শাফাআতের বিষয়টিকে কুফর , গুনাহ ও ইত্যাদি বলেও অভিহিত করা হয়।

বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষী ভাই বোনদের মত বাংলা ভাষাভাষী ভাই বোনদের মাঝেও এ বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনার অভাব পরিলক্ষ্যিত করেছি। এ বইটি বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী ভাই বোনদের উক্ত অভাব পূরণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। শুধু তাই নয় এই বইটি মনযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্য মুসিবত থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব হবে। মূলতঃ শাফাআতের মূল বিষয়ে কোন দ্বিধা দন্দ নেই। ইসলামের সকল মাযহাবের অনুশারিগণই শাফাআতের মূল বিষয়ে একমত। যে বিষয় নিয়ে অনৈক্য পরিলক্ষিত হয় তা শুধুমাত্র শাফাআতকারীগণদের দৃষ্টান্ত , উপমা এবং খুটিনাটি ও আনুসাঙ্গিক বিষয় সমূহ।

বইটি মূলতঃ একটি ফারসী বই থেকে অনূদিত ; অন্যক ব্যস্ততার মাঝে এই গুরুদায়িত্বটি পালন করতে সক্ষম হয়েছি , ভুল ভ্রান্তি থাকাই স্বাভাবিক , আর এজন্য অধম বান্দার প্রতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি রাখার জন্য পাঠকবৃন্দের প্রতি অনুরোধ রাখছি। অধিকন্তু যদি কেহ সংশোধনিতে মতামত জানিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে থাকেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো এবং পরবর্তী সংষ্করণে তা সংশোধন করার ওয়াদা দিচ্ছি।

বইটি প্রকাশে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন , ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সলেশন এণ্ড রিসার্চ সেন্টার ইমাম আলী (আঃ) ফাউণ্ডেশন। আশা করছি ভবিষ্যতেও বাংলাভাষা ভাষী ভাইবোনদের প্রয়োজনীয়তা পূরণে নতুন নতুন বই প্রকাশে সহযোগিতা করবে। কেয়ামতের সেই মহা মুসীবতের সময় আল্লাহ তালা আমাদের জন্য তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) কে সেই মাকামে মাহমুদে অধিষ্টিত করুক এবং আমাদেরকে তার শাফাআত নসীব করুক , আমিন।

মোহাম্মদ সামিউল হক

প্রথম অধ্যায়

শাফাআতের আভিধানিক অর্থ ও পারিভাষিক অর্থ

শাফাআতের প্রভাব ও কারণ সমূহ

আমলের প্রতিচ্ছবি ও শাফাআত

পাপ মোচনের জন্য শাফাআত

শাফাআতের আভিধানিক অর্থ

শাফাআত আরবী শব্দشفع থেকে নেয়া হয়েছে এর অর্থ হল একই প্রকার কোন বস্তুর সাথে অনুরূপ বস্তুর সংযোজন। এবং এই সংযোজনের উদ্দেশ্য হল সাহায্য করা। আর এজন্য অবশ্যই দ্বিতীয় বস্তুটির আবেদন থাকা বাঞ্চনীয়। আর তাই সাধারনত ঊর্দ্ধতন মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি নিম্নস্তরের ব্যক্তির জন্য শাফাআত করে থাকে।

شفع বিপরীত শব্দ হলوتر অর্থাৎ একক। আর একটি বস্তুর সাথে অনুরূপ আরেকটি বস্তুর সংযোজন কে সহপাটি , জোড়া শাফা বলা হয়।

ইবনে ফারেস বলেন: যে ব্যক্তি শাফাআতের জন্য উদ্দোগী হয় , তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজস্ব শক্তি সামর্থ যথেষ্ট নয় ; আর তাই অন্য এক ঊর্দ্ধতম শক্তির সাথে নিজের বন্ধন সৃষ্টি করে এবং নিজস্ব উদ্দেশ্য হাসিল করে।

المشفَّع শব্দের অর্থ হল ; যে ব্যক্তি শাফাআত করলে আল্লাহর দরবারে কবুল হয় , যেমন নবী , রাসূল ও ইমাম (আঃ) গণ।

المشفِّع শব্দের অর্থ হল ; যিনি শাফাআত কবুল করেন এবং তিনি হলেন একমাত্র উপাস্য আল্লাহ তালা।شفیع শব্দের অর্থ হল ; যে ব্যক্তি শাফাআত করে থাকে (এটা সেফাতে মোশাব্বেহা যার অর্থ হবে এসমে ফায়েল)।

شفعاء শব্দটিشفیع শব্দের বহুবচন।

শাফাআতের পারিভাষিক সংজ্ঞা

ইবনে আসির বলেন: শাফাআত হল অতীতের গুনাহ খাতা ও ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করার জন্য আবেদন।

ভূতপূর্ব আলেমগণ শাফাআতের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করেছেন , এ ব্যাপারে কোন রকম গবেষণা চালাননি। আর পরবর্তী আলেমগনের বিশ্বাস হল: শাফাআত এক প্রকার দোয়া যা আল্লাহ তালা কবুল করে থাকেন।

আমাদের মতে , শাফাআত হল কোন বস্তু বা ব্যক্তি অন্য কোন গুনাহগার ব্যক্তির গুনাহ খাতা মাফ করানোর জন্য কিয়ামতের দিনে ওসিলা হওয়া।

আর এর ব্যাখ্যা হল: কোন ব্যক্তি যখন তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজেকে দুর্বল মনে করে। তখন নিজের প্রচেষ্টার সাথে সাথে অন্য এমন এক ব্যক্তির সহযোগিতা কামনা করে যার সেরূপ যোগ্যতা রয়েছে। আর তাই এমন এক ব্যক্তির শাফাআত কামনা করে যিনি আল্লাহ তালার কাছে অতি সম্মানিত এবং যার শাফাআত আল্লাহ তালা কবুল করে থাকেন।

শাফাআতের প্রকারভেদ

প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই শাফাআত সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। কিন্তু যেহেতু বিভিন্ন প্রকার শাফাআতের ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে তাই এ বিষয় স্পষ্ট করার জন্য আমরা পথেমে নানাবিধ শাফাআতের ব্যাখ্যা তুলে ধরবো , অতঃপর শাফাআতের সঠিক ধারণাটি পরিষ্কার করে তুলব।

১। বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় শাফাআত

বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় শাফাআতের প্রভাব রয়েছে।

আল্লামা তাবাতাবাই (রহঃ) এর মতে , শাফাআত নিজেই একটি কারণ এবং শাফাআত প্রার্থী ব্যক্তি ক্ষমা পাওয়ার জন্য নিকটতম উসিলা হিসেবে শাফাআতকারীর আশ্রয় নিয়ে থাকে ; এবং অন্যান্য উসিলা সমূহের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেটিই গ্রহন করে। এ বিষয়টিই শাফাআতের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

তবে আমরা শাফাআত সম্পর্কে এমন ধারণা পোষন করি যে , আল্লাহ তালা দুই ভাবে শাফাআত কবুল করে থাকেন প্রথমত বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিষয় ও দ্বিতীয়ত শরিয়তি বিষয়।

প্রথম মতে , আল্লাহ তালা সর্ব প্রকার কার্য কারণ সমূহের উৎস এবং অন্য সব কারণ সমূহ অবশেষে তার কাছেই সমাস্থি লাভ করে। পবিত্র কোরআন শরিফও এ বিষয়টির সত্যতা প্রমাণ করেছে উদাহরণস্বরূপ:

) إ ِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ(

তোমাদের সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ তা লা আসমান ও জমিনকে সাতদিনে সৃষ্টি করেছেন । অতঃপর আরশের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং সৃষ্টির ধারাবাহিকতা আনয়ন করলেন । তার অনুমতি ছাড়া কেহই উসিলা হতে পারবেনা (শাফাআত করতে পারে না)।

যদিও এ আয়াতটি আসমান ও জমিনের সৃষ্টির প্রতি নির্দেশ করে তবে আমাদের লক্ষ্যনীয় বিষয়টি হলيُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ এবং তা শাফাআতের মাধ্যমে বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে এবং এটাই সত্যিকার কারণ ও উসিলা হিসেবে গন্য হবে ।

আমাদের মতে , বিশ্ব জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় শাফাআতের আভিধানিক অর্থ হল ক্ষমা প্রাস্থির কারণ সমূহের উসিলা ।

২ । শরিয়তি শাফাআত

এর অর্থ হল যা বাস্তব জীবনের দায়িত্ব কর্তব্যের ক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য । আল্লামা তাবাতাবাই এ বিষয় সম্পর্কে বলেন: শাফায়াত কিছু সংখ্যক মানুষ ও ফেরেশতার জন্য নির্ধারিত তবে এজন্য আল্লাহর অনুমতি অত্যাবশ্যকীয় এবং আল্লাহর অনুমতিই শাফাআতের পরিপূর্ণতা দেয় । অর্থাৎ আল্লাহ তালঅ তার অনুমতি দিয়ে তার কিছু সংখ্যক বান্দাকে কবুল করে নেন , কারণ সমস্ত রাজত্ব ও কর্তৃত্ব তারই জন্য ।

অতএব আল্লাহ তালা তার সেসব বান্দাগণকে এই পদমর্যাদা দান করেছেন তারা আল্লাহ তালার রহমত , ক্ষমা , মাগফেরাত ও অন্যান্য গুনাহবলীর উসিলা ধরে কিছু সংখ্যক গুনাহগার ব্যক্তিকে তার সাথে সংযুক্ত করে এবং যে সকল আযাব ঐ সকল ব্যক্তির প্রাপ্য ছিল তা থেকে ফিরিয়ে আনে । এভাবে যে সকল ব্যক্তি আযাব থেকে মুক্তি পায় ও আযাব ভোগ করতে হয়না । তাই শাফাআতের বিষয়টি আল্লাহর রাজত্ব ও কর্তৃত্বের শামিল এটা আল্লাহর রাজত্বের বিপরীত কোন বিষয় নয় । আর এ বিষয়টি আল্লাহর বানী দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় ।

) ف َأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ(

আল্লাহ তালা উক্ত ব্যক্তিদের গুনাহ খাতাকে সওয়াবে পরিবর্তন করেন।

মূলত আল্লাহ তালা যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন ও যেকোন আদেশ বলবত করে থাকেন।

শাফাআত সম্পর্কে আল্লামা তাবাতাবাঈর উক্ত ব্যাখ্যা শাফাআত ও দোয়া করা একই শ্রেনীভূক্ত আমাদের কাছে গ্রহন যোগ্য।

শর্ত সাপেক্ষে দোয়া করলে ক্ষতির সম্ভাবনা ব্যহত করে আল্লাহ তালা তার বান্দার প্রতি কল্যান বর্ষণ করেন। এ রকম ভাবে দোয়া করাই শাফাআতের আভিধানিক অর্থ। আর শাফাআতকারী পাপী বান্দার ক্ষমার কারণ হয়ে থাকে।

৩। আমলের শাফাআত

এই প্রকার শাফাআতের ব্যাখ্যায় বলতে হয়:

মানুষ ও তার আমলের মাঝে এ দুনিয়ায় এক ধরনের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্ক কেয়ামতের দিনও বলবৎ থাকবে অর্থাৎ সেদিন এই আমল ভাষ্কর্য (প্রতিকৃতি) হয়ে উঠবে।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে তার কিছু সংখ্যকের প্রতি দৃষ্টিপাত করা শ্রেয় মনে করছি।

) ي َوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ(

মোফাসসেররগণ এ আয়াত প্রসঙ্গে বলেন: কেয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে তার নেতার সাথে পুনরুত্থান করা হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে , কেয়ামতের দিন ফেরাউন তার অনুসারীদের সাথে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে কারণ সে দুনিয়াতেও তাদের নেতা ছিল। নিম্নলিখিত আয়াত এ বিষয়ের সাক্ষ প্রদান করে।১০

) ي َقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ(

ফেরাউন কেয়ামতের দিন তার অনুসারীদেরকে জাহান্নামের আগুন নিক্ষেপ করবে।১১

এখানে আরবী শব্দأَوْرَد - এর প্রতি মনোযোগ দিলে বুঝা যাবে যে , যে ফেরাউন তার গোত্রের জন্য গোমরাহির কারণ হয়ে ছিল সেই আবার কিয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। ফলাফল এই দাড়ায় যে , যেভাবে সে দুনিয়াতে তাদের অপকর্মের কারণ হয়েছিল কেয়ামতের দিনও সেভাবে জাহান্নামের কারণ হবে।

আমলের প্রতিকৃতি (ভাষ্কর্য) সম্পর্কে কিছু সংখ্যক হাদীসও বর্ণিত আছে। উদাহরণ স্বরূপ সে সব হাদীস নামাজ পড়া , রোজা রাখা ও কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য ভাষ্কর্য হয়ে দাড়াবে ও তার জন্য শাফাআত করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , কেয়ামতের দিন কোরআন ও রোজা মানুষের জন্য শাফাআত করবে। রোজা বলবে , হে পরওয়ারদেগার! তার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দাও , কারণ আমি ওকে সারাদিনভর খাওয়া ও পানাহার থেকে বিরত রেখেছি এবং কামভাব ও আকাংখ্যা থেকে বিরত রেখেছি। কোরআন বলবে , হে আল্লাহ! তার জন্য শাফাআত করার তৌফিক দাও , কারণ আমি তাকে রাতে ঘুমাতে দেইনি । তখন রোজা ও কোরআন শাফাআত করবে এবং আল্লাহ তালা তাদের শাফাআত কবুল করবেন।১২

আহলে সুন্নাতের বড় এক আলেম শেখ তানতাভি শাফাআত সম্পর্কে বলেন , জেনে নাও , (উদাহরণস্বরূপ) , শাফাআতের বীজ , গাছ ও ফল রয়েছে। আর এগুলো হল কেয়ামতের দিনের নাযাত (আযাব থেকে মুক্তি) পাওয়ার উসিলা। আল্লাহর নবী রাসূল (আঃ) গণ মানুষকে শরিয়তের আহকাম শিক্ষা দিয়ে বীজ বপন করেন। আর মানুষ যদি সে অনুপাতে আমল করে তাহলে ফল লাভের যোগ্যতা অর্জন করে এবং কেয়ামতের দিন সেই ফল (আযাব থেকে মুক্তি) লাভ করে থাকবে। অতএব শাফাআতের শুরু হল শাফাআত সম্পর্কিত জ্ঞান , অতঃপর আমল ও সবশেষে সফলতা ও বেহেশতের উর্ধ্বতম মর্যাদা হল তার ফলাফল।১৩

আমাদের মতে , আমলের শাফাআত শাফাআতের এক রকম আভিধানিক অর্থ। আর শাফাআতের পারিভাষিক অর্থ অন্য রকম।

শাফাআত: পাপ মোচন অথবা অনুগ্রহ

এ ধরনের শাফাআতে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যস্থতায় গুনাহের ক্ষমা এবং সে ক্ষেত্রে না দেখার ভাব করার শামিল। একে পাপ মোচন অথবা অনুগ্রহ মূলক শাফাআতও বলা হয়ে থাকে। এর কারণ হল , আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যস্থতায় গুনাহগার বান্দাদের জন্য ক্ষমা অথবা অনুগ্রহ হয়ে থাকে। অর্থাৎ আল্লাহ তালা তার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের উসিলায় তার অনুগ্রহ ও রহমত পাপী বান্দাদের (যারা আযাবের উপযোগী ছিল) উপর বর্ষণ করে থাকেন।

এর ব্যাখ্যায় বলতে হয় , আল্লাহ তালা অকল্পনীয় রহমতের মালিক। পবিত্র কোরআনের আয়াত সমূহও এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে , হে পরওয়ার দেগার তোমার অসীম জ্ঞান ও রহমত বিশ্ব জাহানকে ছেয়ে ফেলেছে।১৪

আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের উসিলায় পাপী বান্দাদের জন্য শাফাআত করা এক রকমের খোদায়ী রহমত বর্ষনের উপায়। তবে এর পেছনে সুক্ষ কারণ ও কারক নিহিত রয়েছে। আর আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাগণ সে সব পাপী ব্যক্তিদের শাফাআত করতে পারেন যারা শাফাআত পাওয়ার উপযোগী। এর অন্যমত একটা কারণ হল আল্লাহর রহমত।

উল্লেখিত তিন প্রকার শাফাআতের মধ্যে কোনটি পারিভাষিক শাফাআত বলে গন্য ?

উপরোক্ত আলোচনার পর বলা যেতে পারে যে , ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে এবং কোরআন নাযিলের সময়ে আরব জাতি শাফাআত সম্পর্কে যে ধারনা রাখতো তা হল , অনুগ্রহ মূলকঃ শাফাআত ও পাপমোচন যা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যস্থতায় হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনের শাফাআত সম্পর্কিত আয়াত সমূহ (যেগুলো কেয়ামত দিবসের ইঙ্গিত বহন করে) ঠিক একই প্রকার শাফাআত আর এই আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেও মানুষের মাঝে শাফাআত সম্পর্কিত ধারণা ছিল। এবং পবিত্র কোরআনের শাফাআত সম্পর্কিত আয়াত সমূহও যেগুলো হয় শাফাআত কে সত্যায়িত করেছে অথবা পত্যাক্ষান করেছে) ঠিক একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যে ধারনা পূর্ববর্তী মানুষের মাঝে বলবত ছিল এবং কিছু কিছু আয়াত সমুহ শাফাআতের শর্ত ও সীমানা নির্ধারণ করেছে।

মূলতঃ সংক্ষিপ্তভাবে বলা যেতে পারে যে , শাফাআতের অর্থ হল সুপারিশকারীর উসিলায় পাপমোচন। ভূতপূর্ব মোফাসসের ফখরুদ্দীন রাযী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর মাকামে মাহমুদ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন , আহলে সুন্নতের মতে: পাপ মোচনের জন্য শাফাআত করা হয়ে থাকে। তিনি তার আলোচনায় বলেন যে , আজাব থেকে মুক্তির জন্য মানুষের প্রচেষ্টা উচ্চ মর্যাদা লাভের চেষ্টা ও ভাল কাজের প্রচেষ্টা চেয়ে শ্রেয়তর। কারণ মানুষ যদি পাপ মোচনের চেষ্টা না করে সফলতা ও কল্যাণ লাভের চেষ্টা করে থাকে তাহলে তাতে তার কোন লাভ হবে না সেই পাপের কারণে তাকেতো জাহান্নামে যেতে হবে।

عسی أن یبعثک ربّک مقاما محمودا

অর্থ: অতি শীঘ্রই আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। এই আয়াতের উদ্দেশ্য হল শাস্তি থেকে পরিত্রাণ।

আমাদের মতে শাফাআতের পারিভাষিক অর্থ হল ,কেয়ামতের দিন (আল্লাহ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের উসিলায়) পাপমোচন। পবিত্র মাসুমিন (আঃ) দের থেকে বর্ণিত হাদীস সমূহেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

দ্বিতীয় অধ্যায় : শাফাআতের দলিল প্রমাণ

১। কোরআনের আয়াত সমূহ

২। হাদীস সমূহ

৩। এজমা

৪। আক্বল (বিবেক)

কোরআনের আলোকে শাফাআত

ক- যে সকল আয়াত সমূহ শাফাআতকে প্রত্যাখ্যান করে সেগুলোর পর্যালোচনা।

) ي َا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(

ওহে বনি ইসরাঈলগণ স্মরণ কর , সেসব নেয়ামতের কথা যে গুলো তোমাদেরকে দান করেছি ; এবং তোমাদেরকে বিশ্ব বাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি (তোমাদেরকে রাসূল দিয়েছে এবং কিতাব) ; আর সে দিনকে ভয় কর যে দিন কাউকে অন্য কাহারো পুরষ্কার দেয়া হবে না এবং কারো জন্যে অন্য কারো শাফাআত গ্রহণ করা হবে না ; এবং কারো প্রতিদান (ক্ষতিপূরণ) অন্য কারোও জন্য গ্রহণ করা হবে না এবং সেদিন কোন সাহায্যকারীই থাকবেনা।15

) ي َا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ () وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(

উপরোক্ত দুই আয়াতে যদিও শাফাআত সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা পেশ করা হয়েছে মূলতঃ তা শাফাআতের ফলাফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । কেয়ামতে শাফাআত সংগঠিত হ্ওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । উপরোক্ত দুই আয়াতে বনি ইসরাঈলদের পোষিত ধারণা (যেহেতু তারা নবী রাসূলদের সন্তান তাই তারা অবশ্যই বেহেশতে যাবে) কে খণ্ডন করা হয়েছে আর তাই বলা হয়েছে তাদের জন্য কোন শাফায়াতকারী সে দিন থাকবেন ।16

) و َلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ(

(কেয়ামতের দিন বলা হবে) সত্য সত্য তোমরা একে একে সবাই আমার কাছে (হিসাবের জন্য) ফিরে এসেছ ঠিক যেভাবে প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছিলাম তা সবই পিছনে ফেলে রেখে এসেছ। আমিতো তোমাদের সাথে তোমাদের সেই শুপারিশ কারীদের দেখছিনা , যাদের সম্পর্কে তোমাদের ভুল ধারণা ছিল যে তারা তোমাদের সাথে (অংশীদার হয়ে) থাকবে। বাস্তবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের কল্পিত দাবী সমূহ উধাও হয়ে গেছে।17

এই আয়াতে মুশরিকদের আকিদা বিশ্বাসকে ধিক্কার দেয়া হয়েছে (তাদের ধারণা ছিল যে , তাদের এবাদতকৃত মুর্তিগুলো কেয়ামতের দিন তাদের জন্য শাফাআত করবে)।

) ي َا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ(

হে ঈমানদারগণ আমি তোমাদেরকে যে রুজি দিয়েছি , তা থেকে সেদিন আসার পূর্বেই দান কর , যে দিন না আছে কোন কেনাকাটা আর না আছে কোন বন্ধুত্ব ও সুপারিশ (শাফাআত)। আর কাফেররাই হল প্রকৃত জালিম।18

এই আয়াত সম্পর্কে কয়েক প্রকার জবাব দেয়া হয়েছে।

প্রথমত : দুনিয়া সৃষ্টির আগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত শক্তি , ক্ষমতা , সম্পদ ও নেয়ামতের সত্যিকার মালিক হল পরওয়ার দেগার আল্লাহ তালা , তিনি সেদিন সমস্ত বাকশক্তি ও কারণ সমূহ বন্ধ করে দিবেন। অতএব এই আয়াত দ্বারা যা বুঝা যায় তা হল যে , শাফাআতের মূলে যা ধারণা করা হয় যেমন , সম্পদ ও শক্তি কেয়ামতের দিন তা বাতিল হয়ে যাবে। অতএব উক্ত আয়াত শাফাআতের মূল বিষয়কে অস্বীকার করেনা বরং শাফাআতের ভুল ধারণাকৃত কারণ সমূহকে অস্বীকার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: আল্লাহ তালা যদিও এই আয়াতে শাফাআতকে অস্বীকার করেছেন তবে পরবর্তী আয়াতে শাফাআতকে প্রমাণ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে ;

) م َن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ(

এমন কে আছে আল্লাহর কাছে শাফাআত করবে তার অনুমতি ব্যতীত ।19

(তবে) আল্লাহর কাছে তারা শাফাআত করতে পারবে যাদেরকে তিনি অনুমতি দেবেন।

এই আয়াতের উল্লেখিত প্রশ্নের উদ্দেশ্য হল স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা। এবং আরবীالا এর অর্থ হল কিন্তু বা অথচ যা উল্লেখিত আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং তা দ্বারা বলা হয় যে সেদিন শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতিতেই শাফাআত কারীর সুপারিশ কবুল করা হবে।

তৃতীয়তঃ সার্বিকভাবে শাফাআতকে বাতিল করা হয়নি তবে কিছু কিছু ব্যক্তির শাফাআতকে (সুপারিশ) ব্যতিক্রম করা হয়েছে এবং তাদের জন্য শাফাআতকে বাতিল করা হয়েছে। এর প্রমাণ আয়াতের শেষ অংশে বলা হয়েছেهُمُ الظَّالِمُونَ অর্থাৎ কাফেররা নিজেদের উপর যুলুম করেছে সে কারণে তারা শাফাআতের সুফল ভোগ করবেনা।

গুনাহ খাতা শাফাআতের উসিলায় ক্ষমা করা হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস দারাও প্রমাণিত হয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আমি সে সব গুনাহগার বান্দাদের জন্য শাফাআত করব যারা জালিম ও মুশরিক নয়।20

অতএব শাফাআতের উসিলায় আল্লাহর রহমত পেতে হলে অবশ্যই শিরক ও যুলুম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

) ف َمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ(

সেদিন তাদের জন্য শাফাআত কারীদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না।21 কারো কারো মতে , এই আয়াত দ্বারা শাফাআতকে অস্বীকার করা হয়েছে কিন্তু তা ঠিক নয়। আল্লামা তাবাতাবাঈর মতে , এই আয়াত শাফাআতের জন্য একটি দলিল স্বরূপ কারণ নিম্নলিখিত দুই প্রকার বাক্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে আরবী ধাতু যদি কোন নামের সাথে যুক্ত হয় তাহলে তা সে বিষয়কে (ধাতুকে) স্বীকৃতি দেয়।22 মহান আলেম শেখ আব্দুল কাহের এ বাক্য প্রসংঙ্গে বলেন , সংযুক্ত শব্দটি বহুবচনে ব্যবহৃত হয়েছে। যদি তা অতিরিক্ত শব্দ হতো তাহলে বহু বচনে ব্যবহৃত হতোনা এবং যেহেতু এখানে বহু বচনে ব্যবহৃত হয়েছে তাই তা যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রদান করে।23

শাফাআত সম্পর্কিত নেতিবাচক (নেগেটিভ) বাক্য সমূহ পর্যালোচনার পর এই ফলাফলে পৌছতে পারি যে , উল্লেখিত আয়াত সমূহ সত্যিকার ভাবে শাফাআতকে অস্বীকার করেনি বরং সে সব আয়াত দ্বারা শাফাআত সম্পর্কে ভুল ধারণার অপনোদন করা হয়েছে এবং যারা মনে করে যে শাফাআতের জন্য আল্লাহর অনুমতির প্রয়াজন নেই তাদের ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে।

খ: যে সব আয়াত শাফাআতের স্বীকৃতি প্রদান করে।

1। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা যা করে থাকে আল্লাহ তালা সবই জানেন।24 কোন ব্যক্তিই শাফাআত করতে পারবেনা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত , আর তারা সর্বদাই আল্লাহর ভয়ে ভীত- সন্তস্ত্র ।

যদিও এই আয়াতে পথেমে সকলের জন্য শাফাআতকে অস্বীকার করা হয় কিন্তু আয়াতের ধারাবাহিকতায় বলা হয় কিন্তু তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ অনুমতি দেবেন। আরবী শব্দالا কে আরবীতে হাসর حصر হিসিবে গণ্য করা হয় আর যেহেতু এ শব্দটি না বোধক (নেগেটিভ) শব্দের পরে এসেছে তাই আরবী নিয়ম অনুযায়ী নেগেটিভকে অস্বীকার করে মূল বিষয়ের সত্যতা প্রমাণ করে । অতএব উল্লেখিত আয়াত শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে ।

وَكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّـهُ لِمَن يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ

আকাশে কতইনা ফেরেশতা রয়েছে যাদের কোন শাফাআত ফলপ্রসু হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ও যার উপর সন্তুষ্ট থাকেন।25

এই আয়াতে ও পূর্ববর্তী আয়াতের মতالا নেগেটিভের পরে ব্যবহৃত হয়েছে তাই অনুরূপ অর্থের নির্দেশনা দেয়।

) ي َوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا(

সেদিন কোন ব্যক্তির শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না। যতক্ষণ না আল্লাহ রহমান কাউকে শাফাআতের অনুমতি দেন এবং তার কথায় সন্তুষ্ট হন ।26

এই আয়াতেও পথেমে নেগেটিভ বাক্য ও পরে আরেকটি নেগেটিভ বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে ফলে মূলতঃ শাফাআতের সত্যতাই প্রকাশ করে । তবে শর্ত হল , আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টষ্টি ।

তবে উল্লেখিত আয়াতেরالشفاعة শব্দটির কারাআত দুই রকমের হতে পারেرفعنصب আমরা উপরে যে অর্থ করেছি তাرفع এর অর্থ । আল্লামা তাবারসী তার নিজস্ব তাফসীর গ্রন্থে বলেছেন , উভয় প্রকার কারাআতই বৈধ ।27 যদিرفع রাফ পড়া হয় তাহরে অর্থ হবে শাফাআতকে অস্বীকার করেনা তবে শর্ত হল আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন । অন্যদিকে যদি মানসুব পড়া হয় তাহলে অর্থ এরূপ হবে , যে প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী বলেন আল্লাহর এ বাণীতেالا শব্দ যে উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে তা শাফাআতের গুরুত্ব বহন করে ।28

আমাদের মতামতই ঠিক । তবে শাফাআতের প্রাস্থির জন্য কোন প্রকার অনুমতির প্রয়োজন নেই তবে যে ব্যক্তি শাফাআত করবে তাকে অবশ্যই আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টষ্টি হাসিল করতে হবে ।

মূলতঃ (যদি ধরে নেয়া হয় উভয়ের জন্যই আল্লাহর অনুমতি নিতে হবে তবুও) তা শাফাআতের সত্যতাই প্রমাণ করে ।

) و َلَا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ عِندَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ(

আল্লাহ পাক যাকে অনুমতি দেন তার কাচে অন্য কারো শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না ।29

এই আয়াতেও পথেমে শাফাআতের ফলাফলকে অস্বীকার করা হয়েছে কিন্তু পরক্ষণেই বলা হয়েছেإِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ কিন্তু যাদেরকে আল্লাহ পাক অনুমতি দিবেন তারা ব্যতীত। কারণ আরবী শব্দإِلَّا যদি নেগেটিভ কোন বাক্যের পরে ব্যবহৃত হয় তাহলে তা থেকে পজেটিভ ধারনা প্রমাণিত হয়। তাই এখানে সম্ভবতإِلَّا দ্বারা শাফাআত কারীদের বুঝানো হয়েছে যে , একমাত্র তখনই শাফাআত কারীদের সুপারিশ গ্রহন যোগ্য হবে যখন আল্লাহ পাক তাদেরকে অনুমতি দিবেন।

ঠিক একইভাবে এমনও হতে পারে যে , উক্ত আয়াতেإِلَّا দ্বারা শাফাআতকারীকে বুঝানো হয়েছে আর তখন আয়াতের অর্থ হবে ; সেই ব্যক্তির জন্য শাফাআত ফলপ্রসু হবে যার সম্পর্কে শাফাআত করতে আল্লাহ পাক অনুমতি দিবেন। মহান আলেম ও মোফাসসের আল্লামা জামাখশারী দ্বিতীয় মতকে প্রধান্য দিয়েছেন কিন্তু আল্লামা তাবাতাবাঈ প্রথম মতকে গ্রহন করে বলেন ,

সকল ফেরেশতারাই শাফাআতের যোগ্যতা রাখে তবে যে কোন বিষয় অথবা যে কোন ব্যক্তির জন্যই তা প্রযোজ্য হবে না শুধুমাত্র যে বিষয়ে আল্লাহ তালা অনুমতি দিবেন , অথবা শুধুমাত্র যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তালা শাফাআত করার অনুমতি দিবেন। অতএব আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের শাফাআতকে অস্বীকার করেছেন কিন্তু যাদেরকে অনুমতি দিবেন তাদের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না।

আমাদের মতেও উক্ত আয়াত শাফাআত প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য কারণ উল্লেখিত আয়াতের দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে , সে ব্যক্তি শাফাআত পাওয়ার যোগ্য নয় যদি না আল্লাহ তালা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে।

) و َنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ وِرْدًا لَّا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا(

এই আয়াতেلَّا يَمْلِكُونَ শব্দের সর্বনামمُجْرِمِينَ এর প্রতি ফিরে যায় ।30 অর্থাৎ শাফাআত প্রার্থীদের জন্য কোন শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না যদিনা তারা আল্লাহর কাছ থেকে কোন শাফাআতের প্রতিশ্রুতি নিয়েছে । এই আয়াতেإِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا হাসর শব্দটি শাফাআত প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে । অর্থাৎ যারা আল্লাহর কাছ থেকে সুপারিশের প্রতিশ্রুতি নিয়েচে তারা শাফাআতের ফলাফল ভোগ করবে । তবে আরবী শব্দعَهْدًا এর অর্থ হল , আল্লাহর প্রতি ইমান ও শেষ নবীর রেসালাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস । আমাদের মতেও এই আয়াতের উদ্দেশ্য শাফাআত প্রার্থীদের জন্য। করাণإِلَّا নেগেটিভের পরে ব্যবহৃত হয়েছে ।

) و َلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ(

যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পুজা করে তারা শাফাআতের অধিকারী হবে না।31 কিন্তু যারা স্বীকার করতো ও বিশ্বাস করতো তাদের ক্ষেত্রে শাফাআত প্রযোজ্য হবে (ঈসা , উজাইর ও ফেরেশতাগন)।

পূর্ববতী আয়াতের যুক্তির ভিত্তিতে এই আয়াতও শাফাআতের অস্তিত্ব প্রমান করে।

গ- যে সকল আয়াত শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে।

পূর্বোল্লিখিখিত ছয়টি আয়াত শাফাআতের স্পষ্ট নির্দেশনা বহন করে কিন্তু পবিত্র কোরআনে আরোও এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলো শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে। তার কয়েকটি নিম্নে আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ।32

) و َلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ(

খুব শীঘ্রই তোমার পরওয়ারদেগার তোমাকে (শাফাআতের পদাধিকার) দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট থাকবে।

শাফাআত করা এক ধরনের সাহায্য করা , আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লাম) ও পবিত্র মাসুমিন (আলাইহি সাল্লাম) দের এই ক্ষমতা প্রদান করা , হাজারো দুঃখ , কষ্টের মোকাবেলায় এক প্রকার সহমর্মিতা স্বরূপ।

নিম্নলিখিত হাদীস একথার সত্যতা স্বীকার করে । ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন , একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা (আঃ) এর ঘরে প্রবেশ করলেন। ফাতেমার গাযে ছিল উটের চামড়ার তৈরি আবা , সে অবস্থায় গম ভাঙ্গাচ্ছিলেন এবং একই সাথে তাঁর সন্তানকে দুধ পান করাচ্ছিলেন , এ অবস্থা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে দেখলেন অশ্রু শিক্ত কন্ঠে বললেন , ওহে কন্যা , আখেরাতের পুরষ্কারের আশায় দুনিয়ার এহেন কষ্ট সহ্য করে যাও , কারণ এমন সুসংবাদ আমাকে দেয়া হয়েছে।

এই আয়াত ও শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে , অর্থাৎ (শাফাআতের উসিলায়) ক্ষমা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টষ্টির উপর নির্ভর করে।

ইমাম সাদিক (আঃ) এ ব্যাপারে বলেন:33 আমার পূর্বপুরুষ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লাম) এর কামনা হল আল্লাহর ইবাদতকারী কোন ব্যক্তি যাতে জাহান্নামে অবশিষ্ট্য না থাকে।

উপরের আয়াত ক্ষমা ও দান সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয় , শাফাআত ক্ষমারই একটি দৃষ্টান্ত।34

বাশার ইবনে শারিহ বাসরি: ইমাম বাকের (আঃ) এর কাছে পশ্ন করেছিলাম ; কোরআনের কোন আয়াতটি সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক ? ইমাম প্রশ্ন করলেন: তোমার গোত্রের এ ব্যাপারে মতামত কি ? বললাম: আমার গোত্রের ধারনা আয়াতে তওবা ((ওহে লোক সকল গুনাহকারীগণ)) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা , এবং তওবা সহকারে আল্লাহর দরবারে ফিরে যাও।

ইমাম: তোমরা যা বল আমরা আহলে বাইত তা বলিনা। তাহলে আপনারা কী বলেন ?

) و َلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ(

(এই আয়াতের উদ্দেশ্যে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কে যা দান করা হয়েছে তা হল শাফাআত. আল্লাহর কসম তা হল শাফাআত , আল্লাহর কসম তা হল শাফাআত ।

এই আয়াতটি সূরা তওবার সে আয়াতের চেয়ে অধিক আশা ব্রঞ্জক কারণ সূরা তওবার সে আয়াটিতে ক্ষমার জন্য তওবার মর্ত আরোপ করা হয়েছে । কিন্তু

) و َلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ(

এ আয়াতে কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এবং দান করা হয়েছে অর্থক্কাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম যাকে খুশি শাফাআত করতে পারবেন। অতএব আল্লাহ তালা যেখানে বলেছেন আমি সার্বিক ভাবে রহমত বর্ষণ করব তা অত্যাধিক আশাব্যঞ্জনার কারণ হতে পারে।

) ع َسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا(

খুবই সন্নিকটে আল্লাহ তালা তোমাকে মাকামে মাহমুদে (শাফাআতকারীর পদে) অধিষ্টিত করবেন।35

এই আয়াতে ও স্পষ্টভাবে শাফাআতের কথা বলা হয়নি বরং তার ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। অসংখ্য রেওআত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে উক্ত আয়াতেরمَقَامًا مَّحْمُودًا দ্বারা ঠিক শাফাআতের কথাই বুঝানো হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সেটা এমন পদ যার বদৌলতে আমার উম্মতকে শাফাআত করতে পারব।36

প্রসিদ্ধ মোফাসসেরর ফখরুদ্দীন রাযী এ প্রসঙ্গে বলেন , এ আয়াত থেকে ক্ষমা পাওয়ার উসিলা হল তার শাফাআত। তিনি বলেন উক্ত আয়াত শাফাআত সম্পর্কে স্পষ্ট ও শক্তিশালী ইঙ্গিত প্রদান করে।37

অন্য এক মোফাসসের বেইজাভী বলেন , প্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত হল মাকামে মাহামুদ হল সেই মাকামে শাফাআত। কারণ আবু হুরায়রা হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছ থেকে রেওআয়াত করেছেন যে , মাকামে মাহমুদ সেই পদ যার বদৌলতে আমি আমার উম্মতকে শাফাআত করতে পারবো। হাদীসে বলা হয়েছে যে , সেদিন মানুষ লাইন ধরে দাড়িযে তাঁর (রাসূলের) প্রশংসা করবেন। এটাও শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে। এবং তা শাফাআত ব্যতীত অন্য কিছু হতে পারে না।38

শেখ তাবারসি লিখেছেন: মাকামে মাহামুদ এর ব্যাপারে সমস্ত মোফাসসেরগণ এজমা করেছেন। উপরোক্ত আয়াত সমূহ পর্যালোচনার পর আমরা যে উপসংহারে পৌছতে পারি:

1। কোরআনের আয়াত সমূহ শাফাআতের ঘোষণা প্রদান করে কিন্তু মূল শাফাআতকারী স্বয়ং আল্লাহ তালা নিজে তবে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে অন্যরাও শাফাআতের ক্ষমতা পাবেন।

2। কোরআনের আয়াত শাফাআতের স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে কিন্তু শাফাআতকারী ও শাফাআতের অধিকারী কারা হবেন সে সম্পর্কে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেনি।

হাদীসের আলোকে শাফাআত:

শাফাআত সম্পর্কিত আরেক প্রকার দলিল হল , পবিত্র ইমাম (আঃ) দের কাছ থেকে প্রাপ্ত হাদীস সমূহ শাফাআতের স্পষ্ট দিক নির্দেশনার মূল এরূপ হাদীসের সংখ্যা এত বেশি যে তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেছে।39

আল্লামা তাবাতাবাঈ এ সম্পর্কে বলেন , কেয়ামত দিবসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের অধিকার সম্পর্কিত যে সকল হাদীস (শিয়া ও সুন্নীদের হাদীস গ্রন্থ সমূহে) বর্ণিত হয়েছে সব মিলে তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেছে।

মোফাসসিরে কোরআন ফখরুদ্দীন রাযী লিখেছেন:

শাফাআত সম্পর্কিত হাদীস সমূহ যদিও এক এক জন ব্যক্তির দ্বারা বর্ণিত হয়েছে তথাপি তাদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং সেগুলোর মধ্যে মোটামুটি একই বিষয় (শাফাআত) বর্ণিত হয়েছে। অতএব সেগুলো একই বিষয়ের বর্ণনা দেয়। তাই সেগু্লোকে রেওআয়াতে মোতাওয়াতের বলা যাবে । অতএব উক্ত হাদীস সমূহ অবশ্যই হুজ্জাত (দলিল ও প্রমাণ)40

মোতাজিলা সম্প্রদায়ের আপত্তি

মোতাজিলা সম্প্রদায় উপরে বর্ণিত হাদীসের উপর আপত্তি পেশ করেছে তাদের দলিল নিম্নরূপ:

1। উক্ত হাদীস গুলো এতই দীর্ঘতম যে সত্যিকার ভাবে তা সংরক্ষণ করে এপর্যন্ত পৌছানো সম্ভব নয়। সম্ভবত রাবী উক্ত হাদীস সমূহ নিজের ইচ্ছা মত বর্ণনা করেছে। তাই সেগুলো সত্যিকার হাদীস নয়।

2। শাফাআত সকলের সম্মতিক্রমের ঘটনা কিন্তু বর্ণিত হাদীস সমূহ বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণিত হয়েছে।

3। বর্ণিত হাদীস গুলো কোরআনের আয়াতের সাথে বিরোধপূর্ণ ।

4। একক খবর যদি নিশ্চিত ফলাফল না দেয় তাহলে গ্রহন যোগ্যতা রাখেনা।

5। শাফাআত একটা গুরুতপূর্ণ ঘটনা এবং এটার উদ্দেশ্যওে অত্যধিক গুরুতপূর্ণ , অতএব যদি রেওআয়াত সঠিক হতে হয় তাহলে অবশ্যই তা তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছতে হবে। কিন্তু উক্ত হাদীস সে পর্যায়ে পৌছেনি তাই তা নির্ভুল হতে পারেনা।

মোতাজিলা সম্প্রদায়ে আপত্তি সমূহের জবাব:

চারটি পর্যায়ে তাদের আপত্তি সমূহের জবাব দেয়া যেতে পারে।

1। যদিও উক্ত রেওয়ায়াত সমূহ একক খবর হিসেবে এসেছে কিন্তু তাদের সংখ্যা অগণিত।

2। উক্ত রেওয়ায়াত সমূহের মধ্যে একটা নিখূত সম্পর্ক বিদ্যমান।

3। অতএব উক্ত রেওআয়াত সমূহ তাওয়াতুরের পর্যায়ে পরিগণিত।

4। আর যে রেওয়ায়াত তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছে হুজ্জাত ও দলিল হিসেবে উপযুক্ত ।

অধিকন্তু উক্ত রেওয়ায়াত সমূহ পবিত্র কোরআনের আয়াত সমূহের সাথে কোন বিরোধ নেই বরং কোরআনের আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ , তাদের অন্যান্য আপত্তি সমূহ যুক্তিযুক্ত নয় বলে জবাব দেয়ার প্রয়াজন মনে করছিনা।

এজমার দৃষ্টিতে শাফাআত

শিয়া ও সুন্নী সর্বপ্রকার আলেমদের ঐক্যবদ্ধ এজমার দ্বারাও শাফাআত স্বীকৃত হয়েছে। বড় বড় তিন জন আলেমের স্বীকৃতি এখানে উল্লেখ করব।

1। খাজা নাসিরউদ্দীন তুসী:

শাফাআতের জন্য আলেমগণ এজমা করেছেন। 41

2। আল্লামা হিল্লি :

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআত করার ব্যাপারে আলেমগণ ঐক্যবদ্ধ মত দিয়েছেন। 42

3। শেখ তাবারসী:

মোফাসসেরগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য যে , মাকামে মাহামুদ অর্থাৎ মাকামে শাফাআত। 43

পরিশেষে যে বিষয়টি উল্লেখ করব তা হল গোত্র , বর্ণ নির্বিশেষে সকল মাযহাবের অনুসারী মুসলমানগণ শাফাআতের মূল বিষযের ব্যাপারে একমত । মোতাজিলা সম্প্রদায়ও শাফাআতকে স্বীকার করে বলে থাকেন: শাফাআত একটি উচ্চ মর্যাদাশীল পদ । ওহাবী সম্প্রদায ও শাফাআতকে স্বীকার করে থাকে , তবে তাদের বিশ্বাস হল শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই শাফাআতের প্রার্থনা করতে হবে । আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাপাআতের প্রার্থনা করা শিরকের তুল্য ।


3

4

5

6

7

8