কোরআনের আলোকে শাফাআত
ক- যে সকল আয়াত সমূহ শাফাআতকে প্রত্যাখ্যান করে সেগুলোর পর্যালোচনা।
)
ي
َا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(
ওহে বনি ইসরাঈলগণ স্মরণ কর , সেসব নেয়ামতের কথা যে গুলো তোমাদেরকে দান করেছি ; এবং তোমাদেরকে বিশ্ব বাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি (তোমাদেরকে রাসূল দিয়েছে এবং কিতাব) ; আর সে দিনকে ভয় কর যে দিন কাউকে অন্য কাহারো পুরষ্কার দেয়া হবে না এবং কারো জন্যে অন্য কারো শাফাআত গ্রহণ করা হবে না ; এবং কারো প্রতিদান (ক্ষতিপূরণ) অন্য কারোও জন্য গ্রহণ করা হবে না এবং সেদিন কোন সাহায্যকারীই থাকবেনা।
)
ي
َا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ () وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(
উপরোক্ত দুই আয়াতে যদিও শাফাআত সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা পেশ করা হয়েছে মূলতঃ তা শাফাআতের ফলাফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । কেয়ামতে শাফাআত সংগঠিত হ্ওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । উপরোক্ত দুই আয়াতে বনি ইসরাঈলদের পোষিত ধারণা (যেহেতু তারা নবী রাসূলদের সন্তান তাই তারা অবশ্যই বেহেশতে যাবে) কে খণ্ডন করা হয়েছে আর তাই বলা হয়েছে তাদের জন্য কোন শাফায়াতকারী সে দিন থাকবেন ।
)
و
َلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ(
(কেয়ামতের দিন বলা হবে) সত্য সত্য তোমরা একে একে সবাই আমার কাছে (হিসাবের জন্য) ফিরে এসেছ ঠিক যেভাবে প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছিলাম তা সবই পিছনে ফেলে রেখে এসেছ। আমিতো তোমাদের সাথে তোমাদের সেই শুপারিশ কারীদের দেখছিনা , যাদের সম্পর্কে তোমাদের ভুল ধারণা ছিল যে তারা তোমাদের সাথে (অংশীদার হয়ে) থাকবে। বাস্তবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের কল্পিত দাবী সমূহ উধাও হয়ে গেছে।
এই আয়াতে মুশরিকদের আকিদা বিশ্বাসকে ধিক্কার দেয়া হয়েছে (তাদের ধারণা ছিল যে , তাদের এবাদতকৃত মুর্তিগুলো কেয়ামতের দিন তাদের জন্য শাফাআত করবে)।
)
ي
َا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ(
হে ঈমানদারগণ আমি তোমাদেরকে যে রুজি দিয়েছি , তা থেকে সেদিন আসার পূর্বেই দান কর , যে দিন না আছে কোন কেনাকাটা আর না আছে কোন বন্ধুত্ব ও সুপারিশ (শাফাআত)। আর কাফেররাই হল প্রকৃত জালিম।
এই আয়াত সম্পর্কে কয়েক প্রকার জবাব দেয়া হয়েছে।
প্রথমত :
দুনিয়া সৃষ্টির আগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত শক্তি , ক্ষমতা , সম্পদ ও নেয়ামতের সত্যিকার মালিক হল পরওয়ার দেগার আল্লাহ তালা , তিনি সেদিন সমস্ত বাকশক্তি ও কারণ সমূহ বন্ধ করে দিবেন। অতএব এই আয়াত দ্বারা যা বুঝা যায় তা হল যে , শাফাআতের মূলে যা ধারণা করা হয় যেমন , সম্পদ ও শক্তি কেয়ামতের দিন তা বাতিল হয়ে যাবে। অতএব উক্ত আয়াত শাফাআতের মূল বিষয়কে অস্বীকার করেনা বরং শাফাআতের ভুল ধারণাকৃত কারণ সমূহকে অস্বীকার করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহ তালা যদিও এই আয়াতে শাফাআতকে অস্বীকার করেছেন তবে পরবর্তী আয়াতে শাফাআতকে প্রমাণ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে ;
)
م
َن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ(
এমন কে আছে আল্লাহর কাছে শাফাআত করবে তার অনুমতি ব্যতীত ।
(তবে) আল্লাহর কাছে তারা শাফাআত করতে পারবে যাদেরকে তিনি অনুমতি দেবেন।
এই আয়াতের উল্লেখিত প্রশ্নের উদ্দেশ্য হল স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা। এবং আরবীالا
এর অর্থ হল কিন্তু বা অথচ যা উল্লেখিত আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং তা দ্বারা বলা হয় যে সেদিন শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতিতেই শাফাআত কারীর সুপারিশ কবুল করা হবে।
তৃতীয়তঃ সার্বিকভাবে শাফাআতকে বাতিল করা হয়নি তবে কিছু কিছু ব্যক্তির শাফাআতকে (সুপারিশ) ব্যতিক্রম করা হয়েছে এবং তাদের জন্য শাফাআতকে বাতিল করা হয়েছে। এর প্রমাণ আয়াতের শেষ অংশে বলা হয়েছেهُمُ الظَّالِمُونَ
অর্থাৎ কাফেররা নিজেদের উপর যুলুম করেছে সে কারণে তারা শাফাআতের সুফল ভোগ করবেনা।
গুনাহ খাতা শাফাআতের উসিলায় ক্ষমা করা হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস দারাও প্রমাণিত হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আমি সে সব গুনাহগার বান্দাদের জন্য শাফাআত করব যারা জালিম ও মুশরিক নয়।
অতএব শাফাআতের উসিলায় আল্লাহর রহমত পেতে হলে অবশ্যই শিরক ও যুলুম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
)
ف
َمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ(
সেদিন তাদের জন্য শাফাআত কারীদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না।
কারো কারো মতে , এই আয়াত দ্বারা শাফাআতকে অস্বীকার করা হয়েছে কিন্তু তা ঠিক নয়। আল্লামা তাবাতাবাঈর মতে , এই আয়াত শাফাআতের জন্য একটি দলিল স্বরূপ কারণ নিম্নলিখিত দুই প্রকার বাক্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে আরবী ধাতু যদি কোন নামের সাথে যুক্ত হয় তাহলে তা সে বিষয়কে (ধাতুকে) স্বীকৃতি দেয়।
মহান আলেম শেখ আব্দুল কাহের এ বাক্য প্রসংঙ্গে বলেন , সংযুক্ত শব্দটি বহুবচনে ব্যবহৃত হয়েছে। যদি তা অতিরিক্ত শব্দ হতো তাহলে বহু বচনে ব্যবহৃত হতোনা এবং যেহেতু এখানে বহু বচনে ব্যবহৃত হয়েছে তাই তা যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রদান করে।
শাফাআত সম্পর্কিত নেতিবাচক (নেগেটিভ) বাক্য সমূহ পর্যালোচনার পর এই ফলাফলে পৌছতে পারি যে , উল্লেখিত আয়াত সমূহ সত্যিকার ভাবে শাফাআতকে অস্বীকার করেনি বরং সে সব আয়াত দ্বারা শাফাআত সম্পর্কে ভুল ধারণার অপনোদন করা হয়েছে এবং যারা মনে করে যে শাফাআতের জন্য আল্লাহর অনুমতির প্রয়াজন নেই তাদের ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে।