শাফাআত গুনাহগারদের আজাব অপনোদের কারন
শিয়া ও মাযহাবের বিভিন্ন সম্প্রদায় (শুধুমাত্র মোতাজিলা সম্প্রদায় ব্যতীত)এর বিশ্বাস হল শাফাআত গুনাহগার ব্যক্তিদের দোযখের আযাব থেকে মুক্তির কারন হবে । তবে কিছু কিছু রেওয়ায়েত থেকে বুঝা যায় যে ,শাফাআতের কারনে গুনাহ গুনাহ ও মাফ হয়ে থাকে উদাহরন স্বরূপ নিম্নোক্ত হাদীস প্রনিধান যোগ্য ।
1। শাফাআত যে সব গুনাহগারদের জন্য প্রযোজ্য হবে যারা শিরক ও জুলুম করেনি ।
2। কেয়ামতের দিন (সব নারীরাই শাফাআত করতে পারবেন)আমার গর্বের বিষয় হল সেদিন আমি আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য শাফাআত করব ।
3।আমার শাফাআত আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য ।
এ ধরনের প্রচুর রেওয়ায়েত রয়েছে যেগুলো গুনাহগার ব্যক্তিদের দোযখের আগুন থেকে মুক্তির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে । আর সে কারনে কিছু কিছু আলেমগন দাবী করেছেন যে এই রেওয়ায়েত তাওয়াতোরের পর্যায়ে পৌঁছেছে । এ প্রসঙ্গে মহান মোফাসসেরে কোরআন ফখরুদ্দীন রাবী লিখেছেন ,যদি ও এ ধরনের প্রত্যেকটি রেওয়ায়েত এককভাবে একক খবর হিসেবে এসেছে তথাপি এত অধিক এবং তাদের সবগুলোর অর্থ প্রায় একইরূপ । ফরে বলা যায় যে এই হাদীস তাত্তাতোরের পর্যায়ে পৌঁছেছে (শাফাআত গুনাহ মাফের কারন ) । অতএব শাফাআত সম্পর্কিত হাদীস একটি হুজ্জাত ও দলীল ।
শেখ তানভীর ( আহলে সুন্নাতের এক বড় আলেম ) বলেন ,“
জেনে নাও! শাফাআত সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস হল যে , তাদের ভাষায়: শাফাআতের কারনে গুনাহগারদের প্রাপ্য আজাব ক্ষমা করা হয় । এটা এভাবে হবে যে ,মহা মুসিবতের সেই কেয়ামতের দিনে যখন গুনাহগারদের জাহান্নামে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হবে তখন শাফাআতের কারনে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে এবং জাহান্নমের পরিবর্তে বেহেশতে পাঠানো হবে ।
এ প্রসঙ্গে সুন্নী ও শিয়াদের আলেমগন এজমা করেছেন যে , তাদের কিছু কিছু মতামত নিম্নরূপ :
1 । শেখ মুফিদ: ইমামিয়াগন একমত প্রকাশ করেছেন যে ,কেয়ামতের দিন গুনাহগারদেরকে শাফাআত করা হবে ।
2 ।কাজী আইয়াজ: আহলে সুন্নাতের ভূতপূর্ব ও সাম্প্রতিক কালের সকল আলেমগন ,মুমিনদের গুনাহ মাফের জন্য কেয়ামতের দিন শাফাআত করা হবে বলে মনে করেন ।
3 ।ফখরুদ্দীন রাযী: উম্মতে ইসলামীর এজমা হল যে , হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের দিন শাফাআত করবেন এবং অত:পর বলেন , শাফাআতের ফলে আজাব ভোগের উপযোগী ব্যক্তিদের আজাব মাফ করা হবে ।
মোতাজিলা সম্প্রদায় এ ব্যপারে দ্বিমত প্রকাশ করে থাকে এবং নিম্নোক্ত আয়াত সমূহের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে ।
)
و
َاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(
অর্থ: সেদিনকে ভয় কর , যখন কেউ কারও সামান্যতম উপকারেও আসবেনা এবং তার পক্ষে কোন শাফাআত ও কবুল করা হবেনা , কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণও নেয়া হবেনা এবং তারা কোন প্রকার সাহা্য্য ও পাবেনা ।
আমাদের মতে এই আয়াত বনি ইসরাঈল সম্প্রদায় এর জন্য নাযিল হয়েছে , তবে অন্য যে কোন লোকই বাতিল ও ভ্রান্ত ধারনায় বিশাসী তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ তাদের জন্য শাফাআত প্রযোজ্য হবে না এবং এই আয়াত তাদেরকে নিরাশ করেছে। অতএব গুনাহগার ব্যক্তিদের গুনাহ মাফের বিষয়কে এই আয়াত পত্যাখ্যান করেনা।
আল্লামা হিল্লি এ সকল আয়াত সমূহ -প্রসঙ্গে বলেন ,
وَلَا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ - يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا- فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ
এ সকল আয়াত বিশেষ করে কাফের ও মুশরিদের জন্য প্রযোজ্য ,
কারণ তারা শাফাআতের মাধ্যমে কোনরূপ উপকৃত হবেনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে বলেন ,
আমার শাফাআত সে সব গুনাহগার ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য ,যারা মুশরিক ও কাফের নয় ।
.
(
وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ)
এই আয়াতেরهم
অর্থাৎ সে সব কাফেরগণ ।
মোতাজিলা সম্প্রদায়ও এ আয়াত সম্পর্কে ধারণা করে থাকেন যে , আল্লাহ তালা এ আয়াতের মাধ্যমে খবর দেন যে , ফেরেশতারা সেদিন কোন ব্যক্তিকে শাফাআত করবেনা কিন্তু যদি আল্লাহ তালা কারও উপর সন্তুষ্ট থাকে তাহলে সে ব্যক্তি শাফাআত করতে পারবে। এবং এটা স্পষ্ট যে , ফাসেক ও গুনাহগার ব্যক্তিদের উপর আল্লাহ তালা সন্তুষ্ট নন , অতএব ফেরেশতারা তাদের জন্য এবং শাফাআত করবেনা নবী রাসূলগণও তাদের জন্য শাফাআত করবেনা , কারণ শাফাআত কারীদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই ।
তাদের আপত্তির জবাব
প্রথম জবাব :
আল্লাহ তালা কোন দিক দিয়েই ফাসেক ব্যক্তিদের উপর সন্তুষ্ট নন। কিন্তু যদি আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাসী থাকে এবং ঈমান এনে থাকে তাহলে তার ব্যাপারে শাফাআত প্রযোজ্য হবে কারণ তার ব্যাপারে আল্লাহ সম্মত থাকবেন , যদিও সে ব্যক্তি গুনাহগার হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,
“
ফেরেশতাগণ,নব
ী রাসূল ও শহিদদেরকে শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে , তারা শাফাআত করবেন এবং যাদের অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে তারা শাফাআতের মাধ্যমে দোযেখের আগুন থেকে মুক্তি পাবে।
এই হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,“
যদিও মানুষ পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী না হয় তবও আল্লাহ তালা তাকে শাফাআত করার জন্য সন্তুষ্ট থাকবে এবং শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।”
দ্বিতীয় জবাব :
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ
.এই আয়াত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইমাম রেজা বলেন ,.শাফাআত কারীগণ সে সব ব্যক্তিদের জন্য শাফাআত করবেন আল্লাহ তালা যাদের দীন ও ধর্ম সম্পর্কে সন্তুষ্ট থাকবেন।
অতএব , ফাসেক ও গুনাহগার ব্যক্তির দীন ও ধর্ম যদি খোদা সম্মত থাকে তবে তাদেরকে শাফাআত করা হবে।
শাফাআত সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস হল কোন ব্যক্তি ছোট বড় যত গুনাহই করে থাকুক যদি আল্লাহ তার ধর্মের উপর সন্তুষ্ট থাকে তাহলে সে শাফাআত পাবে।
فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ
উল্লেখিত আয়াত সম্পর্কে মোতাজিলা সম্প্রদায় বলে থাকেন ,যদি শাফাআতের ফলে আজাব থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় এবং তারা এর মাধ্যমে উপকৃত হয় তাহলে তা উক্ত আয়াতের পরিপন্থি ।
জবাব: ফখরুদ্দীন রাযী এ যুক্তির মোকাবেলায় বলেন , তার মতে এ আয়াতটি শাফাআতের বিরুদ্ধে নয় বরং তা শাফাআতের পক্ষেরই একটি দলিল স্বরূপ। কারণ কাফের মুশরিকরা শাফাআত থেকে কোন সুবিধা ভোগ করবেনা আর এর কারণ হল তাদের কফরী কাজ সমূহ। নতুবা উক্ত আয়াতের মাধ্যমে শাফাআত প্রমাণিত হয় কারণ উক্ত আয়াতে শাফাআত শব্দটি শাফিয়িণ এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরবী ভাষামতে তা শাফাআতের প্রমাণ বহন করে। কারণ যুক্ত শব্দটি বহুবচন আর আল্লাহর সম্বোধন হল কাফেরদের প্রতি কিন্তু মুসলমানরা কাফের নয়। অতএব শাফাআত মুসলমানদের জন্য যুক্তিযুক্তভাবে প্রমানিত হয়।
)
و
َإِنَّ الْفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ يَصْلَوْنَهَا يَوْمَ الدِّينِ وَمَا هُمْ عَنْهَا بِغَائِبِينَ(
.
নিশ্চয় পাপাচারীরা থাকবে দোযখের আগুনে। তারা বিচার দিবসে তথায় প্রবেশ করবে। তারা সেখান থেকে পৃথক হবেনা।
মোতাজিলা সম্প্রদায় বিশ্বাস করে থাকে , উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে , পাপাচারীরা দোযখে অনন্তুকাল ধরে থাকবে ও সেখান থেকে কোন দিন বের হতে পারবেনা। অতএব গুনাহগারা যদি জাহান্নামে প্রবেশ করে থাকে তাহলে আর বের হওয়ার উপায় থাকবেনা। অতএব এ অবস্থায় শাফাআতের কারণে কবিরা গুনাহ সমূহ ক্ষমা হতে পারেনা।
আমাদের মতে তাদের এ ধারনার কারণ হল যে তারা কবিরা গুনাহকারী ব্যক্তিদের কাফের মনে করে থাকে যদিও তারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে।
ওমর আবু নাসের এ ব্যাপারে বলেন , মোতাজিলা সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন যে , যারা কবিরা গুনাহ করে তারা নবী রাসুলদের প্রতি ঈমান আনলেও কাফের বলে পর্যবসিত হবে কিন্তু আমাদের মতে (আক্কল ও কোরআন হাদীসের যুক্তি মোতাবেক) কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহ ও তার রাসুলকে স্বীকার করে নেয় কিন্তু গুনাহ করে থাকে তাহলে সে কাফের নয়।
এবং চির দিনের জন্য জাহান্নামে থাকবেনা ।