শাফাআত

শাফাআত37%

শাফাআত লেখক:
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শাফাআত
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15183 / ডাউনলোড: 4138
সাইজ সাইজ সাইজ
শাফাআত

শাফাআত

লেখক:
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বাংলা

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

বিবেকের বিচারে শাফাআত

বিবেকের মাধ্যমে শাফাআত প্রমাণ করার জন্য চারটি ধাপ উল্লেখযোগ্য ।

১. আল্লাহ তালা তার বান্দার প্রতি দয়াশীল এবং তার রহমত আযাবের চেয়ে অগ্রবর্তী ।

২. যেহেতু মানুষ আল্লাহর ক্ষমা (করার ক্ষমতা) কে মেনে নিয়েছে , অতএব বিবেক বলে শাফাআত ও ক্ষমা ঘটমান বিষয় ।

৩. সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর রহমত তার বান্দাদের কাছে পৌছতে হলে উসিলা থাকা আবশ্যকীয় যা উভয়ের মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টি করে । কারণ স্রষ্ট্রা ও সৃষ্টির মাঝে কোন বন্ধন বা শিকল নেই , তাই আল্লাহ তারা বলেন ,لیس کمثله شئ তার (আল্লাহর) মত অনুরূপ কোন কিছুই নেই ।

৪. আর এ দুয়ের সৃষ্ট উসিলা উভয়ের সাথে এক প্রকার সামনঞ্জস্য থাকতে হবে , কারন যদি আল্লাহর সাতে তার কোন সম্পর্ক না থাকে তাহলে তার আবেদন কবুল হওয়ার নয় অপর দিকে যদি বান্দার (শাফাআত প্রার্থীর) সাথে তার সম্পর্ক না থাকে তাহলে তাকে শাফাআত করতে পারবে না ।

আল্লাহ সৃষ্ট বিশ্ব চরাচরের নিয়ম অনুযায়ী বস্তুবাদী ও আধ্যাত্মিক সকল ক্রিয়াকর্মের জন্য এক বা একাধিক উসিলার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রেরিত হয়।

অতএব আল্লাহর ক্ষমা ও মাগফেরাত পাওযার জন্য উসিলা থাকা বাঞ্ছনীয় ।

একটি প্রশ্ন: বিবেক কি শাফাআতকে স্বীকৃতি দেয় ? এ প্রশ্নের উত্তরে হযরত আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজীর মত হল , প্রশিক্ষণ বিষয়াদীর ক্ষেত্রে বিবেকের বিচার হল , শাফাআত একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় এবং মানুষকে সফল হতে হলে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে গঠন করতে হবে এবং এ জন্য একজন শাফাআতকারী অত্যাবশ্যকীয় ।অতএব বিবেক শাফাআতকে স্বীকৃতি দেয় ।

আমাদের মতে ; বিবেক আধ্যাত্মিক ও বাস্তব জীবনে শাফাআতের স্বীকৃতি দেয় কারণ যদি এই সম্বন্ধ ও উসিলা না থাকতো তাহলে উর্ধআকাশ থেকে রহমতের ধারা পৃথিবীতে আসতোনা । তবে বিবেক শাফাআতের পারিভাষিক অর্থকে স্বীকৃতি দেয়না ,শুধুমাত্র শাফাআতের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয় । এ ব্যাপারে কাজী আইয়াজ বলেন ; আহলে সুন্নাতের অনুসারীগণ বিবেকের বিচারে শাফাআতকে জায়েয মনে করেনএবং কোরআন হাদীসের দৃষ্টিতে শাফআতকে ওয়াজিব মনে করে থাকেন ।৪৪

ফলাফল: বিবেক সরাসরি শাফাআতকে স্বীকৃতি দেয়না তবে শাফাআতকারীদের উসিলায় গুনাহগার ব্যক্তিদের গুনাহ মাফের ঘটনা কুরআন ও হাদীসে ও শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য বিষয় । শাফাআতের ব্যাপারে কোরআন ও হাদীস নিখুত তথ্য প্রদান করে । কিন্তু বিবেক শাফাআতকে জায়েয বরে স্বীকৃতি প্রদান করে ।

শাফাআতের উপকারিতা সম্পর্কে মতামত

মুসলমানদের বিভিন্ন সম্প্রদায় শাফাআতের ফলাফল সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন । তার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করবো :

১. শাফাআত শুধুমাত্র মুমিন মুসলমানদের সওয়াব ও পুরষ্কার বৃদ্ধিতে কার্যকর হয় ।

২. যে সকল ব্যক্তি আজাব প্রাস্থির উপযুক্ত শাফাআত শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় ।

৩. শাফাআত উপরোক্ত দুটি মতের উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।

শাফাআতের উপকারিতা সম্পর্কিত হাদীস

১. সাইদ উদ্দীন তাফতাজানী বলেন ,

মোতাজিলাদের মতে , শাফাআত শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য , যারা সওয়াবের অধিকারী , এবং শাফাআতের কারণে তাদের সওয়াব বৃদ্ধি পায় যা তাদের প্রাপ্য ছিলনা ।৪৫

২. ইমাম সাদিক (আ.) বলেন ,

আদি যুগ তেকে মেষ যুগ পর্যন্ত মানুষের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার জন্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের প্রয়োজন হবে না । ৪৬

৩. আবু আইমান ইমাম কাজেম (আ.) এর বাড়িতে প্রবেশ করে বললেন , ওহে আবু জাফর! আপনি মানুষকে অহঙ্কারী করে তুলছেন (কারণ মানুষকে শাফাআতের ওয়াদা দিচ্ছেন) তাদেরকে বলে থাকেন মুহাম্মদের শাফাআত , মুহাম্মদের শাফাআত!

ইমাম কাজেম (আ.) এতই রাগান্বিত হলেন যে , চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন ,

তোমার জন্য দুঃখ হয়,৪৭ ওহে আবু আইমান ; তুমি যে হারাম খাওয়া তেকে তোমার পেটকে বিরত রেখেছ কামভাব থেকে নিজেকে বিরত রেখেছ তাই বলে অহঙ্কারী হয়েছো ? যদি তুমি কেয়ামতের কঠিন মুসিবতের বিষয় অনুধাবনকরতে পারতে তাহলে মুহাম্মদের শাফাআতের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে । আফসোস তোমার জন্য , তুমি কি মনে কর ও সেদিন যে ব্যক্তি আযাবের উপযোগী তাকে ছাঢ়া তিনি অন্য কাউকে শাফাআত করবেন ?

অতঃপর বলেন: আদী যুগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি থাকবেনা , যার জন্য মুহাম্মদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম শাফাআত , প্রযোজন হবেনা ।

ইমাম রেজা (আ.) বলেন , যখনই আল্লাহর কাছে কোন আবেদন করবে ,৪৮ বল: আমি তোমাকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এবং আলী (আ.) এর কসম দিয়ে ডাকছি নিশ্চয় এই দু ব্যক্তি তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও সম্মানের অধিকারী ।

কেয়ামতের দিন এমন কোন বাদশা , আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তি. নবী রাসূল ও মুমিন ব্যক্তি অবশিষ্ট থাকবেনা যাদের জন্য এ দু ব্যক্তির শাফাআত তাদের প্রয়োজন হবে না।

উপরে বর্ণিত চারটি হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে , যে সকল ব্যক্তি কোন গুনাহ করেনি যেমন , ফেরেশতাগণ , নবী রাসূল , মুমিন ও সালেহ ব্যক্তিবর্গ তাদেরও শাফাআতের প্রয়োজন হবে । যদিও এদের শাফাআতের বিষয় অকল্পনীয় তবে তাদের পদ ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফাআত করা হলে অকল্পনীয় নয় । কারণ , তারাতো কোন গুনাহ করেনি যে , সে কারণে শাফাআত করা প্রয়োজন হবে ।

অতএব এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে , তাদের ব্যাপারে যে শাফাআত করা হবে তা শাফআতের পারিভাষিক অর্থে নয় বরং তার অর্থ হল আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য উসিলা ধরা ।

তৃতীয় অধ্যায়

শাফাআতের উপকারীতা

গুনাহগারদের আজাব অপনোদন

মোতাজিলাদের যুক্তি পদ ও মর্যাদা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে

মোতাজিলাদের যুক্তি খণ্ডনে হাদীস ও বিবেকের যুক্তি ।

সত্যপন্থীদের মতামত ।

শাফাআত গুনাহগারদের আজাব অপনোদের কারন

শিয়া ও মাযহাবের বিভিন্ন সম্প্রদায় (শুধুমাত্র মোতাজিলা সম্প্রদায় ব্যতীত)এর বিশ্বাস হল শাফাআত গুনাহগার ব্যক্তিদের দোযখের আযাব থেকে মুক্তির কারন হবে । তবে কিছু কিছু রেওয়ায়েত থেকে বুঝা যায় যে ,শাফাআতের কারনে গুনাহ গুনাহ ও মাফ হয়ে থাকে উদাহরন স্বরূপ নিম্নোক্ত হাদীস প্রনিধান যোগ্য ।

১। শাফাআত যে সব গুনাহগারদের জন্য প্রযোজ্য হবে যারা শিরক ও জুলুম করেনি ।৪৯

২। কেয়ামতের দিন (সব নারীরাই শাফাআত করতে পারবেন)আমার গর্বের বিষয় হল সেদিন আমি আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য শাফাআত করব ।৫০

৩।আমার শাফাআত আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য ।৫১

এ ধরনের প্রচুর রেওয়ায়েত রয়েছে যেগুলো গুনাহগার ব্যক্তিদের দোযখের আগুন থেকে মুক্তির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে । আর সে কারনে কিছু কিছু আলেমগন দাবী করেছেন যে এই রেওয়ায়েত তাওয়াতোরের পর্যায়ে পৌঁছেছে । এ প্রসঙ্গে মহান মোফাসসেরে কোরআন ফখরুদ্দীন রাবী লিখেছেন ,যদি ও এ ধরনের প্রত্যেকটি রেওয়ায়েত এককভাবে একক খবর হিসেবে এসেছে তথাপি এত অধিক এবং তাদের সবগুলোর অর্থ প্রায় একইরূপ । ফরে বলা যায় যে এই হাদীস তাত্তাতোরের পর্যায়ে পৌঁছেছে (শাফাআত গুনাহ মাফের কারন ) । অতএব শাফাআত সম্পর্কিত হাদীস একটি হুজ্জাত ও দলীল ।৫২

শেখ তানভীর ( আহলে সুন্নাতের এক বড় আলেম ) বলেন , জেনে নাও! শাফাআত সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস হল যে , তাদের ভাষায়: শাফাআতের কারনে গুনাহগারদের প্রাপ্য আজাব ক্ষমা করা হয় । এটা এভাবে হবে যে ,মহা মুসিবতের সেই কেয়ামতের দিনে যখন গুনাহগারদের জাহান্নামে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হবে তখন শাফাআতের কারনে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে এবং জাহান্নমের পরিবর্তে বেহেশতে পাঠানো হবে ।৫৩

এ প্রসঙ্গে সুন্নী ও শিয়াদের আলেমগন এজমা করেছেন যে , তাদের কিছু কিছু মতামত নিম্নরূপ :

১ । শেখ মুফিদ: ইমামিয়াগন একমত প্রকাশ করেছেন যে ,কেয়ামতের দিন গুনাহগারদেরকে শাফাআত করা হবে ।৫৪

২ ।কাজী আইয়াজ: আহলে সুন্নাতের ভূতপূর্ব ও সাম্প্রতিক কালের সকল আলেমগন ,মুমিনদের গুনাহ মাফের জন্য কেয়ামতের দিন শাফাআত করা হবে বলে মনে করেন ।৫৫

৩ ।ফখরুদ্দীন রাযী: উম্মতে ইসলামীর এজমা হল যে , হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের দিন শাফাআত করবেন এবং অত:পর বলেন , শাফাআতের ফলে আজাব ভোগের উপযোগী ব্যক্তিদের আজাব মাফ করা হবে ।৫৬

মোতাজিলা সম্প্রদায় এ ব্যপারে দ্বিমত প্রকাশ করে থাকে এবং নিম্নোক্ত আয়াত সমূহের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে ।

) و َاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(

অর্থ: সেদিনকে ভয় কর , যখন কেউ কারও সামান্যতম উপকারেও আসবেনা এবং তার পক্ষে কোন শাফাআত ও কবুল করা হবেনা , কারও কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণও নেয়া হবেনা এবং তারা কোন প্রকার সাহা্য্য ও পাবেনা ।৫৭

আমাদের মতে এই আয়াত বনি ইসরাঈল সম্প্রদায় এর জন্য নাযিল হয়েছে , তবে অন্য যে কোন লোকই বাতিল ও ভ্রান্ত ধারনায় বিশাসী তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ তাদের জন্য শাফাআত প্রযোজ্য হবে না এবং এই আয়াত তাদেরকে নিরাশ করেছে। অতএব গুনাহগার ব্যক্তিদের গুনাহ মাফের বিষয়কে এই আয়াত পত্যাখ্যান করেনা।

আল্লামা হিল্লি এ সকল আয়াত সমূহ -প্রসঙ্গে বলেন ,

وَلَا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ - يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا- فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ

এ সকল আয়াত বিশেষ করে কাফের ও মুশরিদের জন্য প্রযোজ্য ,৫৮ কারণ তারা শাফাআতের মাধ্যমে কোনরূপ উপকৃত হবেনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে বলেন ,

আমার শাফাআত সে সব গুনাহগার ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য ,যারা মুশরিক ও কাফের নয় ।৫৯ .

( وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ)

এই আয়াতেরهم অর্থাৎ সে সব কাফেরগণ ।

মোতাজিলা সম্প্রদায়ও এ আয়াত সম্পর্কে ধারণা করে থাকেন যে , আল্লাহ তালা এ আয়াতের মাধ্যমে খবর দেন যে , ফেরেশতারা সেদিন কোন ব্যক্তিকে শাফাআত করবেনা কিন্তু যদি আল্লাহ তালা কারও উপর সন্তুষ্ট থাকে তাহলে সে ব্যক্তি শাফাআত করতে পারবে। এবং এটা স্পষ্ট যে , ফাসেক ও গুনাহগার ব্যক্তিদের উপর আল্লাহ তালা সন্তুষ্ট নন , অতএব ফেরেশতারা তাদের জন্য এবং শাফাআত করবেনা নবী রাসূলগণও তাদের জন্য শাফাআত করবেনা , কারণ শাফাআত কারীদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই ।

তাদের আপত্তির জবাব

প্রথম জবাব : আল্লাহ তালা কোন দিক দিয়েই ফাসেক ব্যক্তিদের উপর সন্তুষ্ট নন। কিন্তু যদি আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাসী থাকে এবং ঈমান এনে থাকে তাহলে তার ব্যাপারে শাফাআত প্রযোজ্য হবে কারণ তার ব্যাপারে আল্লাহ সম্মত থাকবেন , যদিও সে ব্যক্তি গুনাহগার হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

ফেরেশতাগণ,নব ী রাসূল ও শহিদদেরকে শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে , তারা শাফাআত করবেন এবং যাদের অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে তারা শাফাআতের মাধ্যমে দোযেখের আগুন থেকে মুক্তি পাবে।৬০

এই হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , যদিও মানুষ পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী না হয় তবও আল্লাহ তালা তাকে শাফাআত করার জন্য সন্তুষ্ট থাকবে এবং শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।

দ্বিতীয় জবাব : وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ .এই আয়াত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইমাম রেজা বলেন ,.শাফাআত কারীগণ সে সব ব্যক্তিদের জন্য শাফাআত করবেন আল্লাহ তালা যাদের দীন ও ধর্ম সম্পর্কে সন্তুষ্ট থাকবেন।৬১

অতএব , ফাসেক ও গুনাহগার ব্যক্তির দীন ও ধর্ম যদি খোদা সম্মত থাকে তবে তাদেরকে শাফাআত করা হবে।

শাফাআত সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস হল কোন ব্যক্তি ছোট বড় যত গুনাহই করে থাকুক যদি আল্লাহ তার ধর্মের উপর সন্তুষ্ট থাকে তাহলে সে শাফাআত পাবে।৬২

فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ

উল্লেখিত আয়াত সম্পর্কে মোতাজিলা সম্প্রদায় বলে থাকেন ,যদি শাফাআতের ফলে আজাব থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় এবং তারা এর মাধ্যমে উপকৃত হয় তাহলে তা উক্ত আয়াতের পরিপন্থি ।

জবাব: ফখরুদ্দীন রাযী এ যুক্তির মোকাবেলায় বলেন , তার মতে এ আয়াতটি শাফাআতের বিরুদ্ধে নয় বরং তা শাফাআতের পক্ষেরই একটি দলিল স্বরূপ। কারণ কাফের মুশরিকরা শাফাআত থেকে কোন সুবিধা ভোগ করবেনা আর এর কারণ হল তাদের কফরী কাজ সমূহ। নতুবা উক্ত আয়াতের মাধ্যমে শাফাআত প্রমাণিত হয় কারণ উক্ত আয়াতে শাফাআত শব্দটি শাফিয়িণ এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরবী ভাষামতে তা শাফাআতের প্রমাণ বহন করে। কারণ যুক্ত শব্দটি বহুবচন আর আল্লাহর সম্বোধন হল কাফেরদের প্রতি কিন্তু মুসলমানরা কাফের নয়। অতএব শাফাআত মুসলমানদের জন্য যুক্তিযুক্তভাবে প্রমানিত হয়।

) و َإِنَّ الْفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ يَصْلَوْنَهَا يَوْمَ الدِّينِ وَمَا هُمْ عَنْهَا بِغَائِبِينَ( .

নিশ্চয় পাপাচারীরা থাকবে দোযখের আগুনে। তারা বিচার দিবসে তথায় প্রবেশ করবে। তারা সেখান থেকে পৃথক হবেনা।৬৩

মোতাজিলা সম্প্রদায় বিশ্বাস করে থাকে , উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে , পাপাচারীরা দোযখে অনন্তুকাল ধরে থাকবে ও সেখান থেকে কোন দিন বের হতে পারবেনা। অতএব গুনাহগারা যদি জাহান্নামে প্রবেশ করে থাকে তাহলে আর বের হওয়ার উপায় থাকবেনা। অতএব এ অবস্থায় শাফাআতের কারণে কবিরা গুনাহ সমূহ ক্ষমা হতে পারেনা।

আমাদের মতে তাদের এ ধারনার কারণ হল যে তারা কবিরা গুনাহকারী ব্যক্তিদের কাফের মনে করে থাকে যদিও তারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে।

ওমর আবু নাসের এ ব্যাপারে বলেন , মোতাজিলা সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন যে , যারা কবিরা গুনাহ করে তারা নবী রাসুলদের প্রতি ঈমান আনলেও কাফের বলে পর্যবসিত হবে কিন্তু আমাদের মতে (আক্কল ও কোরআন হাদীসের যুক্তি মোতাবেক) কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহ ও তার রাসুলকে স্বীকার করে নেয় কিন্তু গুনাহ করে থাকে তাহলে সে কাফের নয়।৬৪ এবং চির দিনের জন্য জাহান্নামে থাকবেনা ।

বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল

যদি কোন মুসলমান অধিক পরিমাণ ভাল কাজ করে থাকে এবং সারা জীবনে কিছু পরিমাণ পাপ করে ; সে অবস্থায় যদি তাকে চিরদিন দোযখের আগুনে জ্বলতে হয়। তাহলে তার প্রতি অবিচার করা হবে। আর আল্লাহ তালা কারো প্রতিই অবিচার করেন না , অতএব শাফাআতের কারণে সে ব্যক্তি দোযখের আগুন থেকে ক্ষমা পেয়ে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে।

কোরআন হাদীসের যুক্তি

ক-কোরআনের আয়াত:

শাফাআত সম্পর্কিত প্রচুর আয়াত আছে তবে শর্ত হল শাফাআত প্রার্থী কাফের অথবা মুশরিক নয়।

উদাহরণস্বরূপ:

) إ ِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ( .

যে ব্যক্তি শিরক করে আল্লাহ তালা তার গুনাহ খাতা সমূহ ক্ষমা করেন না ।কিন্তু শিরক ব্যতীত অন্য যে কোন গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন ।৬৫

মোতাজিলাদের যুক্তিগত আয়াত ছাড়া ও এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলো দ্বারা মোতাজিলাদের যুক্তি খণ্ডন করে শাফাআত কে প্রমান করা যায় । কারন উক্ত আয়াত সমূহে আল্লাহ তা আলা গুনাহ খাতা মাফ করার ওয়াদা দিয়েছেন । আল্লামা হিল্লি এ প্রসঙ্গে অসংখ্য যুক্তি পেশ করেছেন । তিনি বলেছেন ,যে ব্যক্তি ,ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে সর্বদাই সওয়াব পাওয়ার উপযোগী । আল্লাহ তা আলা এ প্রসঙ্গে বলেন ,

) ف َمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ(

যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমান সৎ কাজ করেছে তার প্রতিদান ও সেদিন দেখতেপাবে ।৬৬ আর ইমান হল সর্বোচ্চ সওয়াবের কাজ এবং ঈমানের ফলে চিরকালই সওয়াবের অধিকারী হয় । যদি বলে থাকি যে ঈমানদার ব্যক্তির জন্য পাপকর্মের আজাব সৎ কাজের প্রতিদানে অগ্রাধিকার প্রাপ্য তবে তা যুক্তিযুক্ত নয় । আর এ ব্যপারে আলেমগন এজমাতে একমত হয়েছেন ।৬৭

খ- হাদীস:

মাসুম ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে অসংখ্য হাদীস আছে যেগুলো থেকে বুঝা যায় যে , শাফাআতের উসিলায় গুনাহগারদের গুনাহ ক্ষমা করা হবে । উদাহরনস্বরূপ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর এ হাদিসটি ;شفاعتی لاصحاب الکبائر

আমার শাফাআত কারীরা গুনাহকারীদের জন্য । অতএব বুদ্ধিবৃত্তিক ও কোরআন হাদীসের যুক্তি দ্বারা মুতাজিলাদের আপত্তি খন্ডিত হয়েছে এবং এরূপ বলা যেতে পারে যে যদি কেহ কোন গুনাহ করার পর তওবা না করেই মৃত্যু বরন করে তাহলে ও সে শাফাআতের কারনে মুক্তি পেতে পারে এবং চিরদিন তাকে জাহান্নামে থাকতে হবেনা ।

ফলাফল:

উপরোক্ত আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রমানিত হয় যে ,শিয়া ও সুন্নী সব আলেমরাই বিশ্বাস করেন যে ,শরিয়তের ভিক্তিতেই শাফাআত কারীগন ক্ষমার উপযুক্ত পাপী ব্যক্তিদের জন্য সুপারিশ করে তাদেরকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন ।

চতুর্থ অধ্যায়

কখন ও কোথায় শাফাআত করা হবে ?

সে সময় ও স্থান হর কেয়ামত ও জাহান্নাম

আয়াত

হাদীস

বারজাখে ও দুনিয়াতেও শাফাআত করা হবে ।

ফলাফল

ইমাম আলী (আ.)-এর পাঁচ বছরের খেলাফতের ফসল

হযরত আলী (আ.) তার 4 বছর 9 মাসের শাসন আমলে খেলাফত প্রশাসনের স্তুপীকৃত অরাজকতা ও বিশৃংখলাকে সম্পূর্ণরূপে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যদিও সমর্থ হননি তবুও এ ক্ষেত্রে তিনটি মৌলিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল ।

1 । নিজের অনুসৃত ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক জীবনাদর্শের মাধ্যমে জনগণকে এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ও আকর্ষনীয় জীবনাদর্শের সাথে পরিচিত করেন । মুয়াবিয়ার চোখ ধাধানো রাজকীয় জীবন যাপন পদ্ধতির সমান্তরাল তিনি জনগণের মাঝে অতি দরিদতেম জীবন যাপন করতেন । তিনি কখনো নিজের বন্ধু-বান্ধব , পরিবার বা আত্মীয় স্বজনকে অন্যায়ভাবে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেননি । অথবা ধনীকে দরিদ্রের উপর বা সক্ষমকে অক্ষমের উপর কখনো তিনি অগ্রাধিকার দেননি ।

2 । পর্বতসম সমস্যাকীর্ণ দিনগুলো অতিবাহিত করা সত্ত্বেও জনগণের মাঝে তিনি ইসলামের সত্যিকারের অমূল্য জ্ঞান সম্ভার বা সম্পদ রেখে গেছেন ।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীরা বলত , ইমাম আলী (আ.) একজন মহাবীর ছিলেন । তিনি কোন রাজনীতিবিদ ছিলেন না । কেননা , তিনি বিরোধীদের সাথে সাময়িক বন্ধুত্ব স্থাপন ও তেলমর্দনের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিত্রিক শান্ত করে , নিজের খেলাফতের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারতেন । অতঃপর সময় বুঝে তাদের দমন করতে পারতেন ।

কিন্তু বিরোধীরা একথাটি ভুলে গেছে যে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফত ছিল এক বৈপ্লবিক আন্দোলন । আর যে কোন বৈপ্লবিক আন্দোলনকেই সব ধরণের তৈল মর্দন ও মেকী আচরণ নীতিগুলো বর্জন করতে হয় । ঠিক একই পরিস্থিতি মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির যুগেও পরিলক্ষিত হয় । মহানবী (সা.)-কে মক্কার কাফের ও মুশরিকরা বহুবার আপোষের প্রস্তা দিয়েছিল । তাদের প্রস্তাব ছিল , মহানবী (সা.) যেন তাদের খোদাগুলোর ব্যাপারে প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করেন , তাহলে তারাও মহানবী (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে কোন বাধা দেবে না । কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের এই প্রস্তাব আদৌ মেনে নেননি । অথচ নবুয়তের চরম দূযোগপূর্ণ সেই দিনগুলোতে তৈলমদন ও আপোষমুখী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারতেন । অতঃপর সময় সুযোগ মত শত্রুদের দমন করতে পারতেন । কিন্তু সত্যিকারের ইসলাম প্রচার নীতি কখনই একটি সত্যকে হত্যার মাধ্যমে অন্য একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা বা একটি মিথ্যাকে দিয়ে অন্য একটি মিথ্যাকে অপসারণ করার অনুমতি দেয় না । এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত উল্লেখযোগ্য ।49

আবার অন্য দিকে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শত্রুরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যে যে কোন ধরণের অন্যায় অপরাধ এবং ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিলংঘনের ব্যাপারেও কুন্ঠিত হয়নি । শুধু তাই নয় , নিজেদের চারিত্রিক কলঙ্ক গুলোকে সাহাবী বা মুজতাহীদ (ইসলামী গবেষক) উপাধি দিয়ে আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছেন । অথচ হযরত ইমাম আলী (আ.) সব সময়ই ইসলামী নীতিমালার পুঙ্খানু পুঙ্খ অনুসরণের ব্যাপারে ছিলেন বদ্ধ পরিকর ।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দ্বারা বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞান , বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় এগারো হাজার অমূল্য সংক্ষিপ্ত হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে ।50 তিনি ইসলামের সুগভীর জ্ঞানরাজীকে অত্যন্ত শুদ্ধ ও উন্নত অথচ প্রাঞ্জল ভাষার বক্তৃতামালায়51 বর্ণনা করেছেন ।52 তিনিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার ব্যাকারণ ও সাহিত্যের মূলনীতি রচনা করেন । তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামের উচ্চতর দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তিস্থাপন করেন এবং উন্মুক্ত যুক্তি-বিন্যাস ও যৌক্তিক প্রত্যক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামকে ব্যাখার নীতি প্রচলন করেন । সে যুগের দার্শনিকরা তখনও যেসব দার্শনিক সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়ে ছিলেন , তিনি সেসব সমস্যার সমাধান দিয়ে ছিলেন । এমন কি এ ব্যাপারে তিনি এতবেশী গুরুত্বারোপ করতেন যে , যুদ্ধের ভয়াবহ ডামাডোলের মাঝেও53 সুযোগ মত ঐসব জ্ঞানগর্ভ মুলক পর্যালোচনার প্রয়াস পেতেন ।

3 । হযরত ইমাম আলী (আ.) ব্যাপক সংখ্যক লোককে ইসলামী পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলেন ।54 ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ঐসব জ্ঞানী- পণ্ডিতদের মাঝে হযরত ওয়ায়েস কারানী (রা.) , হযরত কুমায়েল বিন যিয়াদ (রা.) , হযরত মেইসাম তাম্মার (রা.) ও রশীদ হাজারীর (রা.) মত অসংখ্য সাধুপুরুষও ছিলেন । যারা ইতিহাসে ইসলামী ইরফানের (আধ্যাত্মবাদ) উৎস হিসেবে পরিচিত । ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে আবার অনেকেই ইসলামী ফিকাহ (আইন শাস্ত্র) , কালাম (মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত শাস্ত্র) , তাফসীর , কিরাআত (কুরআনের শুদ্ধপঠন শাস্ত্র) ও অন্যান্য বিষয়ের মুল উৎস হিসেবে পরিচিত ।

ইমাম আলী (আ.)-এর পাঁচ বছরের খেলাফতের ফসল

হযরত আলী (আ.) তার 4 বছর 9 মাসের শাসন আমলে খেলাফত প্রশাসনের স্তুপীকৃত অরাজকতা ও বিশৃংখলাকে সম্পূর্ণরূপে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যদিও সমর্থ হননি তবুও এ ক্ষেত্রে তিনটি মৌলিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল ।

1 । নিজের অনুসৃত ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক জীবনাদর্শের মাধ্যমে জনগণকে এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ও আকর্ষনীয় জীবনাদর্শের সাথে পরিচিত করেন । মুয়াবিয়ার চোখ ধাধানো রাজকীয় জীবন যাপন পদ্ধতির সমান্তরাল তিনি জনগণের মাঝে অতি দরিদতেম জীবন যাপন করতেন । তিনি কখনো নিজের বন্ধু-বান্ধব , পরিবার বা আত্মীয় স্বজনকে অন্যায়ভাবে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেননি । অথবা ধনীকে দরিদ্রের উপর বা সক্ষমকে অক্ষমের উপর কখনো তিনি অগ্রাধিকার দেননি ।

2 । পর্বতসম সমস্যাকীর্ণ দিনগুলো অতিবাহিত করা সত্ত্বেও জনগণের মাঝে তিনি ইসলামের সত্যিকারের অমূল্য জ্ঞান সম্ভার বা সম্পদ রেখে গেছেন ।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীরা বলত , ইমাম আলী (আ.) একজন মহাবীর ছিলেন । তিনি কোন রাজনীতিবিদ ছিলেন না । কেননা , তিনি বিরোধীদের সাথে সাময়িক বন্ধুত্ব স্থাপন ও তেলমর্দনের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিত্রিক শান্ত করে , নিজের খেলাফতের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারতেন । অতঃপর সময় বুঝে তাদের দমন করতে পারতেন ।

কিন্তু বিরোধীরা একথাটি ভুলে গেছে যে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফত ছিল এক বৈপ্লবিক আন্দোলন । আর যে কোন বৈপ্লবিক আন্দোলনকেই সব ধরণের তৈল মর্দন ও মেকী আচরণ নীতিগুলো বর্জন করতে হয় । ঠিক একই পরিস্থিতি মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির যুগেও পরিলক্ষিত হয় । মহানবী (সা.)-কে মক্কার কাফের ও মুশরিকরা বহুবার আপোষের প্রস্তা দিয়েছিল । তাদের প্রস্তাব ছিল , মহানবী (সা.) যেন তাদের খোদাগুলোর ব্যাপারে প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করেন , তাহলে তারাও মহানবী (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে কোন বাধা দেবে না । কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের এই প্রস্তাব আদৌ মেনে নেননি । অথচ নবুয়তের চরম দূযোগপূর্ণ সেই দিনগুলোতে তৈলমদন ও আপোষমুখী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারতেন । অতঃপর সময় সুযোগ মত শত্রুদের দমন করতে পারতেন । কিন্তু সত্যিকারের ইসলাম প্রচার নীতি কখনই একটি সত্যকে হত্যার মাধ্যমে অন্য একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা বা একটি মিথ্যাকে দিয়ে অন্য একটি মিথ্যাকে অপসারণ করার অনুমতি দেয় না । এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত উল্লেখযোগ্য ।49

আবার অন্য দিকে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শত্রুরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যে যে কোন ধরণের অন্যায় অপরাধ এবং ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিলংঘনের ব্যাপারেও কুন্ঠিত হয়নি । শুধু তাই নয় , নিজেদের চারিত্রিক কলঙ্ক গুলোকে সাহাবী বা মুজতাহীদ (ইসলামী গবেষক) উপাধি দিয়ে আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছেন । অথচ হযরত ইমাম আলী (আ.) সব সময়ই ইসলামী নীতিমালার পুঙ্খানু পুঙ্খ অনুসরণের ব্যাপারে ছিলেন বদ্ধ পরিকর ।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দ্বারা বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞান , বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় এগারো হাজার অমূল্য সংক্ষিপ্ত হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে ।50 তিনি ইসলামের সুগভীর জ্ঞানরাজীকে অত্যন্ত শুদ্ধ ও উন্নত অথচ প্রাঞ্জল ভাষার বক্তৃতামালায়51 বর্ণনা করেছেন ।52 তিনিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার ব্যাকারণ ও সাহিত্যের মূলনীতি রচনা করেন । তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামের উচ্চতর দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তিস্থাপন করেন এবং উন্মুক্ত যুক্তি-বিন্যাস ও যৌক্তিক প্রত্যক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামকে ব্যাখার নীতি প্রচলন করেন । সে যুগের দার্শনিকরা তখনও যেসব দার্শনিক সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়ে ছিলেন , তিনি সেসব সমস্যার সমাধান দিয়ে ছিলেন । এমন কি এ ব্যাপারে তিনি এতবেশী গুরুত্বারোপ করতেন যে , যুদ্ধের ভয়াবহ ডামাডোলের মাঝেও53 সুযোগ মত ঐসব জ্ঞানগর্ভ মুলক পর্যালোচনার প্রয়াস পেতেন ।

3 । হযরত ইমাম আলী (আ.) ব্যাপক সংখ্যক লোককে ইসলামী পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলেন ।54 ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ঐসব জ্ঞানী- পণ্ডিতদের মাঝে হযরত ওয়ায়েস কারানী (রা.) , হযরত কুমায়েল বিন যিয়াদ (রা.) , হযরত মেইসাম তাম্মার (রা.) ও রশীদ হাজারীর (রা.) মত অসংখ্য সাধুপুরুষও ছিলেন । যারা ইতিহাসে ইসলামী ইরফানের (আধ্যাত্মবাদ) উৎস হিসেবে পরিচিত । ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে আবার অনেকেই ইসলামী ফিকাহ (আইন শাস্ত্র) , কালাম (মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত শাস্ত্র) , তাফসীর , কিরাআত (কুরআনের শুদ্ধপঠন শাস্ত্র) ও অন্যান্য বিষয়ের মুল উৎস হিসেবে পরিচিত ।


4

5

6

7

8