কখন ও কোথায় শাফাআত করা হবে ?
শাফাআতের স্থান ও সময় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে । তবে সার্বিকভাবে তা 2 ভাগে বিভক্ত ।
1 ।শাফাআতের সময় হল কেয়ামত এবং স্থান জাহান্নাম
দলিল ও যুক্তি
ক–
কোরআনের আয়াত সমূহ
(
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ)
হে রাসূল অতিশিঘ্রই আপনার পরওয়ারদেগার আপনাকে এত বেশি দান করবেন যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন ।
আর দানকরার সেই সময় হল কেয়ামত।
)
ع
َسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا(
অতি শীঘ্রই আছে আপনার পরওয়ার দেগা আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্টিত করবেন।
মাকামে মাহমুদে রেওয়ায়াত থেকে বুঝা যায় সে সময় হল কেয়ামত।
)
فَمَا لَنَا مِن شَافِعِينَ)( ف
َمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ(
উপরোক্ত আয়াত দুটিতে শাফাআত সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে কিন্তু তা জাহান্নাম বাসীদের উ্দ্দেশ্যে বলা হয়েছে ।
আর এ থেকে বুঝা যায় যে , শাফাআত কারীগণ গুনাহগারদের দোজখের আগুন থেকে উদ্ধার করবেন অপরদিকে কাফের মুশরিকরা সেখানেই অবস্থান করবে। তাদের জন্য কোন ধরনের শাফাআত থাকবে না।
খ- হাদীসের যুক্তি
শাফাআত সম্পর্কিত হাদীস সমূহ থেকে বুঝা যায় যে , শাফাআতের সময় হল কেয়ামত এবং স্থান জাহান্নাম।
1। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন ,
আল্লাহর কসম , আমি তোমাদের জন্য ভয় পাইনা কিন্তু শুধুমাত্র কবরের বারজাখের সময়কে। (কারণ সেখানে আমরা শাফাআত করতে পারবনা।) অতঃপর যখন আমাদের সে সময় আসবে (কেয়ামত ও তার পরবর্তী সময়) যখন আমাদেরকে শাফাআত করার তৌফিক দেয়া হবে এবং সেদিন আমরা তো তোমাদেরকে শাফাআত করার জন্য যথেষ্ট ও উপযুক্ত ।
কেয়ামতের আগে শাফাআত করার বিষয়কে এই হাদীস খণ্ডন করে।
2। সহীহ হাদীসে ওমর ইবনে ইয়াযিদ বলেন: আমি আবা আবদিলাহ (ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) কে জিজ্ঞেস করে বললাম ; আমি আপনার জন্য উৎসর্গীত অত্যধিক গুনাহ করে ফেলেছি! ইমাম বলেন ,
তোমরা সবাই (ইমানদার গুনাহকারীগণ) সেদিন (কেয়ামতের দিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও তার উত্তরাধিকারীদের শাফাআতের মাধ্যমে বেহেশত প্রবেশ করবে । কিন্তু মৃত্যুর পর কবরে তোমাদের উপর (বারজাখের ) আজাবের জন্য আমি চিন্তিত ( কারন তখন কোন শাফাআত থাকবেনা ) ।
ওমর ইবনে ইয়াযিদ প্রশ্ন করলেন ,বারজাখ কি ?
ইমাম বললেন: মৃত্যুর পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কবরের জীবনের সময়কে বারজাখ বলা হয় ।
আলেমগণ মনে করেন , এই হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে , বারজাখের জীবন মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয়। উদাহরনস্বরূপ আল্লামা তাবা তাবাঈ বলেন ,
“
কেয়ামতের দিন এমন কিছু স্থানে লোকজন একত্রিত হবে যেখানে শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নামে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের প্রতিরোধ করে বেহেশতের প্রবেশ করানো হবে অথবা কিছু কিছু ব্যক্তি যারা জাহান্নামে প্রবেশ করে থাকবে তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হবে।”
2 । দ্বিতীয় মত: শাফাআতের সময় ও স্থান (আভিধানিক অর্থে) বারজাখ এবং দুনিয়ায় ও ঘটে
থাকবে ।
কিছু কিছু আলেমগণ বিশ্বাস করেন যে , দুনিয়া এবং বারজাখেও শাফাআত করা হবে। তারা কিছু কিছু রেওয়ায়াত কে তাদের মতের পক্ষে যুক্তি পেশ করেছেন।
1। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) কে বলেন ,“
ওহে আলী তোমার বন্ধুগন মৃত্যুর সময় তোমাকে দেখতে পাবে , তুমি তাদের জন্য শাফাআতকারী , সুখবর দাতা ও তাদের চোখর মনি হিসেবে থাকবে”
।
জবাব : উক্ত হাদীসে ব্যবহৃত শব্দشفیعا
শাফাআতের আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ।
2। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন ,
যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা রোকাইয়া ইন্তেকাল করলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তার কবরের পাশে এলেন ,
দুই হাত আকাশের দিকে তুললেন , তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তেছিল। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন ,“
ওহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমরা দেখলাম আপনি দুহাত আকাশের দিকে উত্তোলন করলেন এবং দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তেছিল! ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন ,হ্যাঁ ,আমি আল্লাহর কাছে আবেদন করলাম যাতে তার উপর কবরের চাপকে রহিত করেন।”
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কবরের আজাব থেকে মুক্তির জন্য (রোকাইয়ার জন্য) দোয়া করলেন এবং এই দোয়া ঠিক সেই শাফাআত করারই শামিল।
জবাব: উপরোক্ত হাদীস সমূহ এবং অনূরূপ হাদীস সমূহ পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও পবিত্র ইমামগণ কিছু কিছু ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করেছেন যাতে তাদের মৃত্যুর কষ্ট কমানো হয় । কবরের আজাব হ্রাস করা হয়। যদিও এ বিষয়গুলোও এক ধরনের সুপারিশ তথাপি তা শাফাআতের পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। এই কাজ আরবী পরিভাষায় তাছাররোফত ও হুকমাত যা আল্লাহর অনুমোদনক্রমে তার নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য দান করা হয়।
ফলাফল: আমাদের মতে শাফাআত শুধুমাত্র কেয়ামতের দিন ও গুনাহ মাফের জন্য অনুমোদিত। তবে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি বর্গ কিছু লোকের অভাব পূরনের জন্য ,তাদের বিপদ আপদ থেকে দোয়া করার জন্য , তাদের উন্নতির জন্য ক্ষমতা আল্লাহরই এক প্রকার কৃপা যা তাছাররোফত ও হুকুমাত্র এর মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং তা আল্লাহরই অনুমোদনে সংঘটিত হয়। এগুলো এক ধরনের সাহায্য না শাফাআত। আর তাই এমন ধরনের সাহায্য বারজাখেও হতে পারে।