শাফাআত

শাফাআত0%

শাফাআত লেখক:
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শাফাআত

লেখক: উস্তাদ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ কাজাভী
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 13619
ডাউনলোড: 3042

শাফাআত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13619 / ডাউনলোড: 3042
সাইজ সাইজ সাইজ
শাফাআত

শাফাআত

লেখক:
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বাংলা

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

কখন ও কোথায় শাফাআত করা হবে ?

শাফাআতের স্থান ও সময় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে । তবে সার্বিকভাবে তা 2 ভাগে বিভক্ত ।

1 ।শাফাআতের সময় হল কেয়ামত এবং স্থান জাহান্নাম

দলিল ও যুক্তি

কোরআনের আয়াত সমূহ

( وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ)

হে রাসূল অতিশিঘ্রই আপনার পরওয়ারদেগার আপনাকে এত বেশি দান করবেন যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন ।68

আর দানকরার সেই সময় হল কেয়ামত।

) ع َسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا(

অতি শীঘ্রই আছে আপনার পরওয়ার দেগা আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্টিত করবেন।69 মাকামে মাহমুদে রেওয়ায়াত থেকে বুঝা যায় সে সময় হল কেয়ামত।70

) فَمَا لَنَا مِن شَافِعِينَ)( ف َمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ(

উপরোক্ত আয়াত দুটিতে শাফাআত সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে কিন্তু তা জাহান্নাম বাসীদের উ্দ্দেশ্যে বলা হয়েছে ।71 আর এ থেকে বুঝা যায় যে , শাফাআত কারীগণ গুনাহগারদের দোজখের আগুন থেকে উদ্ধার করবেন অপরদিকে কাফের মুশরিকরা সেখানেই অবস্থান করবে। তাদের জন্য কোন ধরনের শাফাআত থাকবে না।

খ- হাদীসের যুক্তি

শাফাআত সম্পর্কিত হাদীস সমূহ থেকে বুঝা যায় যে , শাফাআতের সময় হল কেয়ামত এবং স্থান জাহান্নাম।

1। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন ,

আল্লাহর কসম , আমি তোমাদের জন্য ভয় পাইনা কিন্তু শুধুমাত্র কবরের বারজাখের সময়কে। (কারণ সেখানে আমরা শাফাআত করতে পারবনা।) অতঃপর যখন আমাদের সে সময় আসবে (কেয়ামত ও তার পরবর্তী সময়) যখন আমাদেরকে শাফাআত করার তৌফিক দেয়া হবে এবং সেদিন আমরা তো তোমাদেরকে শাফাআত করার জন্য যথেষ্ট ও উপযুক্ত ।

কেয়ামতের আগে শাফাআত করার বিষয়কে এই হাদীস খণ্ডন করে।

2। সহীহ হাদীসে ওমর ইবনে ইয়াযিদ বলেন: আমি আবা আবদিলাহ (ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) কে জিজ্ঞেস করে বললাম ; আমি আপনার জন্য উৎসর্গীত অত্যধিক গুনাহ করে ফেলেছি! ইমাম বলেন ,

তোমরা সবাই (ইমানদার গুনাহকারীগণ) সেদিন (কেয়ামতের দিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও তার উত্তরাধিকারীদের শাফাআতের মাধ্যমে বেহেশত প্রবেশ করবে । কিন্তু মৃত্যুর পর কবরে তোমাদের উপর (বারজাখের ) আজাবের জন্য আমি চিন্তিত ( কারন তখন কোন শাফাআত থাকবেনা ) ।

ওমর ইবনে ইয়াযিদ প্রশ্ন করলেন ,বারজাখ কি ?

ইমাম বললেন: মৃত্যুর পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কবরের জীবনের সময়কে বারজাখ বলা হয় ।72

আলেমগণ মনে করেন , এই হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে , বারজাখের জীবন মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয়। উদাহরনস্বরূপ আল্লামা তাবা তাবাঈ বলেন ,

কেয়ামতের দিন এমন কিছু স্থানে লোকজন একত্রিত হবে যেখানে শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নামে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের প্রতিরোধ করে বেহেশতের প্রবেশ করানো হবে অথবা কিছু কিছু ব্যক্তি যারা জাহান্নামে প্রবেশ করে থাকবে তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হবে। 73

2 । দ্বিতীয় মত: শাফাআতের সময় ও স্থান (আভিধানিক অর্থে) বারজাখ এবং দুনিয়ায় ও ঘটে

থাকবে ।

কিছু কিছু আলেমগণ বিশ্বাস করেন যে , দুনিয়া এবং বারজাখেও শাফাআত করা হবে। তারা কিছু কিছু রেওয়ায়াত কে তাদের মতের পক্ষে যুক্তি পেশ করেছেন।

1। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) কে বলেন , ওহে আলী তোমার বন্ধুগন মৃত্যুর সময় তোমাকে দেখতে পাবে , তুমি তাদের জন্য শাফাআতকারী , সুখবর দাতা ও তাদের চোখর মনি হিসেবে থাকবে74

জবাব : উক্ত হাদীসে ব্যবহৃত শব্দشفیعا শাফাআতের আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ।

2। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন ,

যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা রোকাইয়া ইন্তেকাল করলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তার কবরের পাশে এলেন ,75 দুই হাত আকাশের দিকে তুললেন , তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তেছিল। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন , ওহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমরা দেখলাম আপনি দুহাত আকাশের দিকে উত্তোলন করলেন এবং দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তেছিল! ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন ,হ্যাঁ ,আমি আল্লাহর কাছে আবেদন করলাম যাতে তার উপর কবরের চাপকে রহিত করেন।

এই হাদীস থেকে বুঝা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কবরের আজাব থেকে মুক্তির জন্য (রোকাইয়ার জন্য) দোয়া করলেন এবং এই দোয়া ঠিক সেই শাফাআত করারই শামিল।

জবাব: উপরোক্ত হাদীস সমূহ এবং অনূরূপ হাদীস সমূহ পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও পবিত্র ইমামগণ কিছু কিছু ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করেছেন যাতে তাদের মৃত্যুর কষ্ট কমানো হয় । কবরের আজাব হ্রাস করা হয়। যদিও এ বিষয়গুলোও এক ধরনের সুপারিশ তথাপি তা শাফাআতের পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। এই কাজ আরবী পরিভাষায় তাছাররোফত ও হুকমাত যা আল্লাহর অনুমোদনক্রমে তার নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য দান করা হয়।

ফলাফল: আমাদের মতে শাফাআত শুধুমাত্র কেয়ামতের দিন ও গুনাহ মাফের জন্য অনুমোদিত। তবে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি বর্গ কিছু লোকের অভাব পূরনের জন্য ,তাদের বিপদ আপদ থেকে দোয়া করার জন্য , তাদের উন্নতির জন্য ক্ষমতা আল্লাহরই এক প্রকার কৃপা যা তাছাররোফত ও হুকুমাত্র এর মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং তা আল্লাহরই অনুমোদনে সংঘটিত হয়। এগুলো এক ধরনের সাহায্য না শাফাআত। আর তাই এমন ধরনের সাহায্য বারজাখেও হতে পারে।

পঞ্চম অধ্যায়

শাফাআত কারীদের শর্তসমূহ

নবীগণ বিশেষ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম শাফাআতকারী

ইমামদের শাফাআত

ফেরেশতাদের শাফাআত

কোরআনের শাফাআত

ফলাফল

শাফাআত কারীদের শর্ত সমূহ

কোরআনের আয়াত ও হাদীসের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে , যারা শাফাআত করার অধিকারী হবে তাদের কিছু শর্ত ও বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। আর তাই যখন সে ব্যক্তি শাফাআত করতে চাইবে আল্লাহর অনুমোদন ও সন্তুষ্টষ্টির প্রয়াজন রয়েছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টষ্টি ও অনুমোদন তখনই পাওয়া যাবে যখন প্রয়াজনীয় শর্ত সমূহ পূরণ হবে। উক্ত শত সমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো:

1। শাফাআতকারীকে আল্লাহর কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। কোরআনের আয়াত এ বিষয়কে সাক্ষ্য দেয় ।

) م َا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِن بَعْدِ إِذْنِهِ( .

কোন শাফাআতকারী নেই যদিনা আল্লাহর পক্ষ্য থেকে অনুমোদন না থাকে ।76

مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ এমন কে আছে , তার নিকট শাফাআত করতে পারবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ?77

উপরোক্ত দু আয়াতে নেগেটিভ বাক্যের পরে এসেছে অতএব তা নিশ্চয়তা ও গুরুত্ব বহন করে। অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত শাফাআত

করা হবেনা (যতক্ষণ না আল্লাহ শাফাআত কারীকে অনুমতি না দেন)

2। শাফাআতকারী সত্যের সাক্ষী হবে। অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদ ও তার গুণ বৈশিষ্ট্যের স্বীকারোক্তি প্রদান করবে এবং তার প্রতি বিশ্বাস থাকতে হবে। এই শর্তের পক্ষেও কোরআনের আয়াত রয়েছে।

.) وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ(

যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও উপাসনা করে তারা শাফাআত করার অধিকারী হবে না , কিন্তু যারা আল্লাহর একত্ববাদকে জেনে বুঝে সাক্ষী থেকে (স্বীকারোক্তি প্রদান করবে)।78

3। আল্লাহ তালা শাফাআত কারীর কথা ও মতামতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

) . يَوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا( .

সেদিন (কেয়ামতের দিন ) কারো শাফাআতই মঙ্গলজনক হবেনা যদিনা আল্লাহ তালা তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে ও তার কথাকে পছন্দ করে ।79

আল্লামা তাবাতাবাঈ (রহ) এ প্রসঙ্গে বলেন : আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকতে হবে এ কথার অর্থ হল সে ব্যক্তি(তার কথা ও কাজে)আল্লাহর বিরোধীতা থেকে বিরত থাকতে হবে । যদি সে ব্যক্তি ভূল ভ্রান্তি করে যার ফলে আল্লাহ তালা তার উপর অসুন্তষ্ট হন তাহলে সে ব্যক্তি শাফাআতের মর্যাদা পাবেনা তবে আল্লাহ তালা তার ভূল ভ্রান্তি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে তার বিশ্বাসে পূত পবিত্র করে এবং দুনিয়ার অপবিত্রতা , শিরক ও জাহেলিয়াত থেকে উদ্ধার করে তাহলেই সম্ভব ।80

4 ।শাফাআতকারীগনকে একত্ববাদী হতে হবে ।

) ل َّا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا(

সেদিন এমন কোন ব্যক্তি নেই যে যারা শাফাআতের মালিক হবে তবে যারা মেহেরবান আল্লাহর সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ( পরিপূর্ণ একত্ববাদী) হবে তারা ব্যতিত ।81

ফলাফল : কোআনের আয়াত ও হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে , শাফাআতের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই হাতে এবং তারই অনুমতিক্রমে কিছু কিছু ব্যক্তি শর্ত সাপেক্ষে শাফাআত করতে পারবে ।