শাফাআত

শাফাআত12%

শাফাআত লেখক:
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শাফাআত
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15184 / ডাউনলোড: 4138
সাইজ সাইজ সাইজ
শাফাআত

শাফাআত

লেখক:
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বাংলা

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

শাফাআতের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ

১ । নবী রাসূলগন :

নবী রাসূলগন বিশেষ করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম যিনি শাফাআতের সর্বোচ্চ আসনে মাকামে মাহমুদ অধিষ্টিত , কেয়ামতের দিন গুনাহগারদেরকে শাফাআত করবেন । এ সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,তিন প্রকারের লোকজন শাফাআত করবেন যাদের শাফাআত কবুল করা হবে নবী রাসূলগন , অত:পর আলেমগন , অত:পর শহীদগন ।৮২

মোফাসেরবৃন্দ পবিত্র কোরআনের নিন্মলিখিত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন ,

) و َقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَـٰنُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۚ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ(

তারা বলল , দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহন করেছেন তার জন্য কখনোই ইহা গ্রহনযোগ্য নয় বরং তারা তো তার সম্মানিত বান্দা।৮৩

একইভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও একজন শাফাআতকারী।

বিভিন্ন প্রকার হাদীস এবং রেওয়ায়াতে মোতাওয়াতের বর্ণিত হয়েছে , যেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে , নবীগণ বিশেষকরে হযরত মহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম শাফাআত কারীদের মধ্যে গন্য। সুয়ুতি তার নিজস্ব গ্রন্থ আদদুররুল মানসুর ৮৪ এ ও সাইয়্যেদ বাহরানী তার তাফসীর আল বোরহান ৮৫ এ যথেষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন।

যা থেকে বুঝা যায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সেই মাকামে মাহমুদ ঠিক সেই মাকামে শাফাআত বলে পরিগণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের দিন শাফাআত করবেন এবং এমন কোন মুসলমান নেই যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে। এই সত্য বিষয়কে কোন সম্প্রদায়ই অস্বীকার করেনি। অতএব এবিষয়টিকে এজমার অন্তর্ভূক্ত করা যায়। কেয়ামতের দিন সর্বোচ্চ আসনে শাফাআত করার অধিকার বিশেষ করে আমাদের শেষ নবীকে দেয়া হবে। (এ বিষয়টিকে কোরআনের স্পষ্ট আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে তাকে মাকামে মাহমুদ দান করা হবে।)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যেদিন কেয়ামত হবে আমি কোন রকম গর্ব অহংকার ছাড়াই সকল নবীদের ইমাম , তাদের বক্তা ও তাদের জন্য শাফাআত কারী হব। ৮৬

ইমাম কাজেম (আঃ) বলেছেন ,

কেয়ামতের দিন মানুষকে ৪০ বছর এক জায়গায় দাড়করিয়ে রাখা হবে। সূর্য আদিষ্ট হবে তাদের উপর উত্তাপ দেয়ার জন্য ,মাটি আদিষ্ট হবে যাতে তাদের ঘাম গ্রহণ না করে। তখন সবাই আদম (আঃ) এর কাছে আসবে শাফাআত পাবার আশায় , তিনি নুহ (আঃ) কে দেখিয়ে দিবেন। কিন্তু নূহ (আঃ) দেখাবেন ইব্রাহিম (আঃ) কে , ইব্রাহিম (আঃ) মুসা (আঃ) কে , মুসা (আঃ) ঈসাকে এবং ঈসা (আঃ) দেখাবেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কে এবং বলবেন তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী তার কাছে যাও। (ঈসা (আঃ) তখন সবাইকে তাঁর কাছে উপস্থাপন করে শাফাআত করার জন্য অনুরোধ করবেন।)

তখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলবেন সবাই আসন , সবাইকে বেহেশতের দরজার কাছে নিয়ে যাবেন তিনি বলবেন , বেহেশতের দরজা খুলে ফেলুন। যখন দরজা খুলে যাবে তখন তিনি সেদিকে ফিরে সেজদায় পড়ে যাবেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত সেজদায় থাকবেন যতক্ষণ বলা হবে না যে , মাথা উঠাও ও যা ইচ্ছা চাও দেয়া হবে শাফাআত কর কবুল করা হবে।

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠবেন এবং যারা আগুনে জ্বলন্ত থাকবে তাদের জন্য শাফাআত করবেন। অতএব সেদিন তার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোন ব্যক্তি থাকবেনা এবং ঠিক সেই আয়াতের মতই হবে যে , (অতিশিঘ্রই আল্লাহ তালা আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্টিত করবেন।)৮৭ এটা সেই পদ যা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছে।

আইস ইবনে কাশেম ইমাম সাদিক (আঃ) এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন , বনি হাশেম বংশেরে কিছুক্ক সংখ্যক লোক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে আবেদন করলেন যে , তাদেরকে চতুষ্পয়ী জন্তুর যাকাত আদায়ের ভার দেয়া হোক। (যাতে করে তারা যাকাতের সুবিধা ভোগ করতে পারে) অতঃপর বললো , ঠিক যে পরিমাণ অর্থ যাকাত আদায় কারীদের দেয়া হয় আযাদেরকেও তাই দেয়া হোক। আমরা তাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন ওহে আব্দল মুত্তালিবের সন্তানগণ , আমার ও তোমাদের জন্য যাকাত খাওয়া হারাম কিন্তু আমি এর বিনিময়ে (যাকাত না খাওয়ার বিনিময়ে)

তোমাদেরকে শাফাআতের ওয়াদা দিচ্ছি। অতঃপর বললেন , আল্লাহ তালা আমাকে শাফাআত করার ওয়াদা দিয়েছেন। ওহে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানগণ যখন আমি (কেয়ামতের দিবসে) দরজার কড়া ধরব কী ধারনা করবে ?

অতঃপর বললেন , কেয়ামতের দিন জিন ও ইনসান এক লাইনে সারিবদ্ধ হবে এবং যখন সুদীর্ঘ অপেক্ষা করতে থাকবে তখন শাফাআতের জন্য আবেদন করবে এবং বলতে থাকবে শাফাআতের জন্য কার শরণাপন্ন হব ? নূহ (আঃ) এর কাছে আসবে , নূহ বলবেন , আমি আবেদন করেছিলাম পূরন হয়েছে , বলবে তাহলে কার কাছে যাব ? বলবে , ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছে , ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছে আসবে ও শাফাআতের জন্য আবেদন করবে। তিনি বলবেন আমিও আবেদন করেছিলাম আবেদন পূরন হয়েছে , বলবে তাহলে কার কাছে যাব ? বলবেন , হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও। তখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাবে। তিনি তার শান ও সওকত নিয়ে বেহেশতের দিকে রওয়ানা হবেন , বেহেশতের দরজা পর্যন্ত যাবেন। যখন বেহেশতের দরজায় পৌছবেন তখন দরজায় নক করবেন। ১টি পশ্ন ও উত্তরের পর দরজা খুলে যাবে এবং তাকে সম্ভাসন জানাবে। বেহেশতের দিকে দৃষ্টি পরা মাত্রই তিনি সেজদায় পড়ে যাবেন এবং আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করতে থাকবেন। তখন একজন ফেরেশতা এসে বলবে ওহে রাসূল মাথা উঠান , এবং আল্লাহর কাছে যা চাবেন তাই পাবেন এবং শাফাআত করেন কবুল হবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠাবেন ও বেহেশতের প্রবেশ করবেন। অতঃপর পূনরায় সেজদায় পড়ে যাবেন এবং পূর্বের ন্যায় ফেরেশতা এসে বলতে থাকবে , তখন তিনি মাথা উঠাবেন এবং যা চাবেন তাই পাবেন।৮৮

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আমি আদমেরর বংশধর সন্তান কোন রকম গর্ব অহংকার করিনা। আমি প্রথম ব্যক্তি যাকে সর্ব প্রথম ভূমি থেকে (কবর থেকে) উত্থাপন করা হবে এবং তাতেও গর্ব করিনা। আমি প্রথম শাফাআত কারী এবং যার শাফাআত কবুল করা হবে এবং তাতেও গর্ব করিনা। কেয়ামতের দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতে থাকবে তাতেও গর্ব করিনা।৮৯

উবাইদ ইবনে যুরারাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি ইমাম সাদিক (আঃ) কে প্রশ্ন করেন , মুমিনদেরকে কি শাফাআত করা হবে ? বললেন হ্যাঁ , আল্লাহর কসম। কোন একজন প্রশ্ন করলেন ; তাহলে কি মুমিন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের জন্য নির্ভরশীল থাকবে ? ইমাম বললেন হ্যাঁ , মুমিনদেরও ভুল ভ্রান্তি এবং গুনাহ হয়ে থাকে। এমন কোন ব্যক্তি নেই কেয়ামতের দিন যার জন্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের প্রয়োজন পরবে না । অন্য একজন প্রশ্ন করলেন: হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কি এমন কথা বলেছেন যে , আমি আদমের বংশধর সন্তান কিন্তু গর্ব অহংকার করিনা ? ইমাম বললেন: হ্যাঁ , তিনি বেহেশতের কড়া ধরে তা খুলে ফেলবেন , অতঃপর সেজদায় পড়ে যাবেন , আল্লাহ তালা বলবেন মাথা উঠান , এবং শাফাআত করুন , আপনার শাফাআত কবুল করা হবে এবং যা কিছু চাইবেন দেয়া হবে। অতঃপর তিনি মাথা উঠাবেন কিন্তু পূনরায় সেজদায় পড়ে যাবেন এবং একই ভাবে মাথা উঠাবেন এবং তখন শাফাআত করবেন , শাফাআত কবুল করা হবে এবং অন্য যা কিছু চাইবেন দেয়া হবে।

২। মাসুম ইমামগণ:

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেগু্লোতে বলা হয়েছে যে , পবিত্র ইমামগণ এবং রাসূলের সন্তানগণ কেয়ামতের দিন শাফাআত করবেন। সেরূপ কয়েকটি হাদীস নমুনা হিসেবে তুলে ধরব। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন:

যখন কেয়ামতের দিন উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ তালা আদী থেকে অন্তু সকল জন মানবকে এক অন্ধকার স্থানে সমবেত করবেন। মানুষেরা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ও বিলাপ করতে থাকবে ও বলতে থাকবে হে আমাদের পরওয়ার দেগার! এই অন্ধকার কে আমাদের সামনে থেকে সরিয়ে নাও। তখন কিছু কিছু লোকদের সামনে আলোর ঝলক পরতে থাকবে তাদের আলোতে কেয়ামতের মাঠ আলোকিত হবে।

উপস্থিত জনতা বলতে থাকবে উক্ত ব্যক্তিরা আল্লাহর ফেরেশতা। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত হবে: তারা ফেরেশতা নয়। জিজ্ঞেস করবে , তোমরা কারা ? বলবেন: আমরা আলীর বংশের হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তান এবং আমরা আলী (আঃ) এর সেই সন্তুানবৃন্দ যাদেরকে আল্লাহ তালা কেরামতি দান করেছেন। আমরা সেই ঈমানদার ব্যক্তিবর্গ যারা তাদের ঈমানের প্রতি দৃঢ় ছিল। আল্লাহ তালা তখন তাদেরকে বলবেন , তোমাদের বন্ধুদের ও অনুশারীদের শাফাআত কর এবং তাদের শাফাআত কবুল করা হবে।৯০

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

আমার আহলে বাইতগণ শাফাআত করবো ও তাদের শাফাআত কবুল করা হবে। ৯১

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

শাফাআত কারীরা ৫ দলে বিভক্ত নবী এবং নবীর আহলে বাইতগণ শাফাআত করবেন। ৯২

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

কেয়ামতের দিন আমি শাফাআত করব , তা কবুল করা হবে আলী শাফাআত করবে তার শাফাআতও কবুল করা হবে এবং আমার আহলে বাইত শাফাআত করবে তাও কবুল করা হবে। ৯৩

ইমাম আলী (আঃ) বলেন , আমরা শাফাআত করব এবং আমাদের বন্ধুরাও শাফাআত করবে । ৯৪

ইমাম বাকের (আঃ) আল্লাহর বানীتری کل امّة جاثیه প্রসঙ্গে বলেন ,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও আলী (আ.) সকল সম্ভ্রান্ত লোকজনদের মাঝে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হবেন অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম শাফাআত করবেন এবং বলবেন , ওহে আলী শাফাআ্ত কর ।৯৫

৩. হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)

হযরত ফাতেমা যাহরার (আ.) শাফাআত সম্পর্কেও যথেষ্ট হাদীস বর্ণিত আছে তার কয়েকটি নমূনা এখানে পেশ করব ।

ইমাম বাকের (আ.) বলেন :

আমার পিতা আমাদের পূর্ব পুরুষ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,কেয়ামতের দিন ফাতেমা যাহরা (আ.) বেহেশতের দরজায় এসে অপেক্ষা করতে থাকবেন । আল্লাহ তালা বলবেন , হে আমার হাবিবের কন্যা কী কারনে অপেক্ষা করছেন ? আমি চাই তুমি বেহেশতে প্রবেশ কর ।

ফাতেমা (আ.) বললেন , হে আমার প্রতিপালক ,আমার ইচ্ছা ছিল এমন দিনে আমার পদমর্যাদা স্পষ্ট হোক । যাদের অন্তর তোমার প্রতি অথবা তোমার যে কোন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা পোষন করতো তাদের হাত ধরে বেহেশতে প্রবেশ কর ।

ইমাম বাকের (আ ,) বলেন ,ওহে জাবের! আল্লাহর কসম ,ফাতেমা (আ.) সেদিন আমাদের প্রতি ভালোবাসা পোষনকারী ব্যক্তি ও মুসলমানদের আলাদা করবেন । ঠিক যেভাবে মা পাখি খারাপ শস্য কনা থেকে ভাল শস্য কনা আলাদা করে ।৯৬

মুহম্মদ ইবনে মুসলিম বলেন: ইমাম বাকের (আ.) এর কাছ থেকে শুনেছি যে তিনি বলেছেন:

ফাতেমা (আ.) বেহেশতের দরজায় অপেক্ষা করতে থাকবেন । কেয়ামতের দিন সকল মানুষেরই দুই চোখের মধ্যখানে(কপালে)লেখা থাকবে মুমিন অথবা কাফের । (আহলে বাইতের প্রতি) আশেক ব্যক্তিগন যাদের পাপের পরিমান বেশী তাদের আদিষ্ট হবে দোযখে যাওয়ার জন্য । তখন ফাতেমা (আ.) (দেখতে পাবেন যে তাদের কপালে সেরূপ লেখা আছে এবং তার সাথে সাথে অন্য কিছু লেখা আছে) পড়ে দেখবেন যে তাদের কপালে লেখা আছে মোহেব্ব ( অর্থাৎ তারা মুমীন এবং আহলে বাইতের প্রেমিক কিন্তু তাদের গুনাহের পরিমান অধিক) । অত:পর বললেন ওহে মাবুদ ,আমার নাম দিয়েছো ফাতেমা এবং আমার উসিলায় আমার শুভাকাংখীদের ও বংশধরদের দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দেয়ার ওয়াদা দিয়েছো ,আমি জানি তোমার ওয়াদা সত্য (ভঙ্গ হয় না )। আল্লাহ তালা বলবেন ওহে ফাতেমা ঠিক বলেছো , আমি ওয়াদা দিয়েছি এবং আমার ওয়াদা ভঙ্গ হবেনা কিন্তু আমি আদেশ দিয়েছি এই সকল লোক দোযখে যাবে এবং যখন তুমি তাদের জন্য শাফাআত করবে তখন আমি তোমার শাফাআত কবুল করব , তোমার শাফাআতের কারনে তারা দোযখের আগুন থেকে মুক্তি পেয়ে বেহেশতে যাবে । তখন তোমার মর্যাদা সকল নবী রাসূল ও অলি আওলিয়াদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রমানিত হবে । অতএব তার চোখে যারা মুমিন তাদের হাত ধরে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন ।৯৭

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত পড়বে ,রমজান মাসে রোজা রাখবে ,পবিত্র কাবা ঘরের হজ্ব (ফরজ হলে পালন করবে ,যাকাত দিবে । তার স্বামীর আদেশ পালন করবে এবং আমার পর আলী (আ.) কে ইমাম হিসেবে মেনে নেবে ও তার বন্ধু হবে । সে আমার কন্যা ফাতেমা (আ.) এর শাফাআতের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করবে ।৯৮

৪ । ফেরেশতাদের শাফাআত

কোরআন হাদীসের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে , শাফাআত করার অধিকার নবী রাসূল বা বিশেষ কিছু লোকদের জন্য নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমিত নয় বরং মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রানী ও শাফাআত করতে পারবে যেমন ফেরেশতারা তারা এমনই এক দল যারা শাফাআত করতে পারবে ।

ফেরেশতাদের শাফাআত করার পক্ষ্যে কোরআন ও হাদীসের নিম্নলিখিত দলিল সমূহ পেশ করা যেতে পারে ।

ক- কোরআনের দৃষ্টিতে শাফাআত

) و َالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَن فِي الْأَرْضِ(

ফেরেশতারা আল্লাহর প্রশংসা কীর্তন করে এবং বিশ্ববাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।৯৯

) و َكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّـهُ لِمَن يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ(

আকাশে অনেক ফেরেশতারা রয়েছে যাদের কোন সুপারিশ (শাফাআত) ফলপ্রসু হবেনা , যতক্ষণ না আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা এবং যাকে পছন্দ করেন তাদের জন্য অনুমতি দিবেন।১০০

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট : প্রথম আয়াত ফেরেশতাদের শাফাআতের ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করে কিন্তু দ্বিতীয় আয়াত তাদের শাফাআত কবুল হওয়ার শর্ত আরোপ করেছে এবং ঘোষণা করেছে , তখনই ফেরেশতাদের শাফাআত কবুল হবে যখন তা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হবে এবং তার সাথে যাদেরকে শাফাআত করার জন্য আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবেন।

এর আগেও আমরা উল্লেখ করেছি যে , আরবী সাহিত্যে যদিاثتثنی নেগেটিভ বাক্যের পরে আসে তাহলে তা সঠিক ও সত্য বলে প্রমাণিত হয় তাই্لا تعنی شفعتهم شییا সস্পষ্ট নেগেটিভ বাক্য কিন্তু তার পরই এসেছেالا من بعد أن یاذن الله لمن یشاء و یرضی এই বাক্য দ্বারা পূর্বে নেগেটিভ বাক্যকে অস্বীকার করে সঠিক বলে প্রমাণ করে যে আল্লাহর অনুমতিতে তারা শাফাআত করবে।

খ- হাদীসের বর্ণনা মতে ফেরেশতাদের শাফাআত

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,یشفع النبیون و الملائک

নবীগণও সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ফেরেশতারা শাফাআত করবেন।১০১

ফেরেশতাগণ , নবীগণ ও শহীদ্দেরকে অনুমতি দেয়া হবে শাফাআত করার জন্য।তারাও তখন শাফাআত করবেন এবং তাদের শাফাআত কবুল করা হবে এবং যাদের অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে তারা তাদেরকে দোজখের আগুন থেকে উদ্ধার করবেন।১০২ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তালা বিচার ফায়সালা করার পর কিছু সংখ্যক লোকদেরকে দোজখের আগুন থেকে তুলে আনবেন (যাদেরকে চাইবেন)। অতঃপর ফেরেশতা ও নবীদেরকে বলবেন তাদের জন্য শাফাআত কর , (যারা শাফাআত পাওয়ার উপযোগী) সে সব ব্যক্তির কপালে একটি আলামত ও চিন্হ থাকবে (কারণ তারা সেজদা কারীও নামাজি ছিল)। দোজখের আগুন তাদের কপালকে পোড়াবেনা।

৫। কোরআনের শাফাআত

কোরআনও শাফাআত করবে। এ ব্যাপারে আহলে সুন্নতও শিয়াদের বর্ণিত হাদীসে যথেষ্ট হাদীস উল্লেখিত আছে। তবে কোরআনের শাফাআত করার ব্যাপারে আমাদের উদ্দেশ্য হল

সেই সত্যিকার হাকিকতে কোরআন। বাহ্যিক কোরআনের লেখা ও পৃষ্ঠা নয় ।

হাদীসের বর্ণনামতে কোরআনের শাফাআত

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কেয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দাদের জন্য শাফাআত করবে । রোজা বলবে: হে আল্লাহ আমি দিনের বেলা তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং তাকে খাওয়া , পানাহার ও কাম বাসনা থেকে বিরত রেখেছি , তার ব্যাপারে আমার শাফাআত কবুল করুন। কোরআন বলবে , আমি তাকে রাতের ঘম থেকে বিরত রেখেছি অতএব তার জন্য আমার শাফাআত কবুল করুন। অতএব উভয়ের শাফাআত কবুল করা হবে।১০৩

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কোরআন শিক্ষা কর , কারণ সে তার সঙ্গীদেরকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করবে। ১০৪

কোরআনের একটি সূরাতে ৩০ টি আয়াত রয়েছে যারা উক্ত আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করবে তাদেরকে শাফাআত করবে এবং সে সূরাটি হল আল মূলক।১০৫

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , শাফাআত কারীগণ ৫ দলে বিভক্ত: কোরআন , আপনজন , আমানত , রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইত। ১০৬

আলী (আঃ) বলেন , জেনে নাও কোরআন শাফাআত করবে এবং তা কবুল করা হবে , সে কথা বলবে তার কথা সত্যায়ন করা হবে। কেয়ামতের দিন কোরআন যার যার জন্য শাফাআত তারাই এর সুফল ভোগ করবে।১০৭

৬ শহীদ ও আলেমগনের শাফাআত

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কেয়ামতের দিন নবীগণ অতঃপর আলেমগণ এবং অতঃপর শহীদগণ শাফাআত করবে।১০৮

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , শহীদগণ তার পরিবারের লোকজন থেকে ৭০ জনকে শাফাআত করবে।১০৯

ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন , যেদিন কেয়ামত হবে আলেমকে বলা হবে , দাড়াও এবং যাদেরকে ভাল করে গড়তে পেরেছ তাদের জন্য শাফাআত কর।১১০

৭.প্রতিবেশীর শাফাআত

ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন , প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর জন্য শাফাআত করবে তবে শর্ত হল উক্ত প্রতিবেশী ঈমানদার হতে হবে।১১১

৮ আমলের শাফাআত

অন্য এক প্রকার শাফাআতকারী হল নিজস্ব আমল। প্রত্যেক মানুষের কত আমল কেয়ামতের দিন প্রতিমূর্তি ধারন করবে।

নিম্নলিখিত আমল সমূহ উদাহরণ স্বরূপ পেশ করা যেতে পারে।

১- তওবা

ইমাম আলী (আঃ) বলেন কোন , শাফাআতকারীই তওবার চেয়ে উৎকৃষ্ট হতে পারে না।১১২

২- আমানতদারী

হযরত রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন: শাফাআত কারীগণ পাঁচ ধরনের আমানতদারী১১৩

৩ ও ৪- রোজা ও কোরআন

রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

কেয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন (তাদের আমল কারীগণকে) শাফাআত করবে। রোজা বলবে , হে আল্লাহ সে আমার কারণে খাওয়া ও কাম বাসনা থেকে বিরত রয়েছে অতএব আমাকে তার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দাও।১১৪

রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কোরআন শিক্ষা কর। কোরআন কেয়ামতের দিন তার সঙ্গীদেরকে শাফাআত করবে।১১৫

৫- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ

ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) বলেন , মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরদের উপর দরুদ পড় , যা কেয়ামতের দিন সে কঠিন মুসিবতের সময় আমাদেরকে শাফাআত করবে।১১৬

বিশেষ লক্ষ্যণীয়: আমল ও শাফাআত

কাজ ও প্রচেষ্টা ইসলাম ধর্মে এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আর তাই আল্লাহ তালা পবিত্র কোরআনে বলেন ,

) و َأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ(

মানুষ যা কিছু করবে তারই প্রতিফল পাবে ।১১৭

অতএব মানুষ চেষ্টা করে যা অর্জন করে তার চেয়ে অধিক কিছু তার ভাগ্যে জুটবেনা ।

অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন ,

) ف َمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ(

অতএব যে কেই বিন্দু পরিমান ভাল কাজ করেবে তার পুরস্কার সে পাবে এবং যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমান কাজ করবে তার প্রতিদান ও সে পাবে ।১১৮

) ك ُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ(

প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী ।১১৯

উল্লেখিত আয়াতে স্পষ্টভাবে কৃত আমলের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । আরেকটি বিষয় যা জানতে হবে তা হল আমল ও শাফায়াতের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই । আর আমলের শাফাআত করার বিষয়টি উক্ত কর্মফলেরই একটি দৃষ্টান্ত । কারন শাফাআত পাওয়ার জন্য চেষ্টা ও তদবীর থাকা আবশ্যক ।অন্য দিকে শাফাআত পাওয়ার জন্য পূর্বশর্ত সমূহ ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে । আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিদের উসিলা ব্যতিত শাফাআত পাওয়া সম্ভব নয় এবং তাদের সান্নিধ্য অর্জন করতে হলে তাকওয়া ও পরহেজগার হতে হবে । অতএব ফলাফল দাঁড়ায় যে ,শাফাআত ঠিক মানুষের সেই আমলেরই প্রতিচ্ছবি ।

ষষ্ট অধ্যায়

শাফাআত পাওয়ার শর্তাবলী

১।ইমান

২।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামদের দুশমনি থেকে বিরত থাকা


2

3

4

5

6

7

8