শাফাআত

শাফাআত25%

শাফাআত লেখক:
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শাফাআত
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15740 / ডাউনলোড: 4353
সাইজ সাইজ সাইজ
শাফাআত

শাফাআত

লেখক:
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বাংলা

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

শাফাআতের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ

১ । নবী রাসূলগন :

নবী রাসূলগন বিশেষ করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম যিনি শাফাআতের সর্বোচ্চ আসনে মাকামে মাহমুদ অধিষ্টিত , কেয়ামতের দিন গুনাহগারদেরকে শাফাআত করবেন । এ সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,তিন প্রকারের লোকজন শাফাআত করবেন যাদের শাফাআত কবুল করা হবে নবী রাসূলগন , অত:পর আলেমগন , অত:পর শহীদগন ।৮২

মোফাসেরবৃন্দ পবিত্র কোরআনের নিন্মলিখিত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেন ,

) و َقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَـٰنُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۚ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ(

তারা বলল , দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহন করেছেন তার জন্য কখনোই ইহা গ্রহনযোগ্য নয় বরং তারা তো তার সম্মানিত বান্দা।৮৩

একইভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও একজন শাফাআতকারী।

বিভিন্ন প্রকার হাদীস এবং রেওয়ায়াতে মোতাওয়াতের বর্ণিত হয়েছে , যেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে , নবীগণ বিশেষকরে হযরত মহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম শাফাআত কারীদের মধ্যে গন্য। সুয়ুতি তার নিজস্ব গ্রন্থ আদদুররুল মানসুর ৮৪ এ ও সাইয়্যেদ বাহরানী তার তাফসীর আল বোরহান ৮৫ এ যথেষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন।

যা থেকে বুঝা যায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সেই মাকামে মাহমুদ ঠিক সেই মাকামে শাফাআত বলে পরিগণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের দিন শাফাআত করবেন এবং এমন কোন মুসলমান নেই যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে। এই সত্য বিষয়কে কোন সম্প্রদায়ই অস্বীকার করেনি। অতএব এবিষয়টিকে এজমার অন্তর্ভূক্ত করা যায়। কেয়ামতের দিন সর্বোচ্চ আসনে শাফাআত করার অধিকার বিশেষ করে আমাদের শেষ নবীকে দেয়া হবে। (এ বিষয়টিকে কোরআনের স্পষ্ট আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে তাকে মাকামে মাহমুদ দান করা হবে।)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যেদিন কেয়ামত হবে আমি কোন রকম গর্ব অহংকার ছাড়াই সকল নবীদের ইমাম , তাদের বক্তা ও তাদের জন্য শাফাআত কারী হব। ৮৬

ইমাম কাজেম (আঃ) বলেছেন ,

কেয়ামতের দিন মানুষকে ৪০ বছর এক জায়গায় দাড়করিয়ে রাখা হবে। সূর্য আদিষ্ট হবে তাদের উপর উত্তাপ দেয়ার জন্য ,মাটি আদিষ্ট হবে যাতে তাদের ঘাম গ্রহণ না করে। তখন সবাই আদম (আঃ) এর কাছে আসবে শাফাআত পাবার আশায় , তিনি নুহ (আঃ) কে দেখিয়ে দিবেন। কিন্তু নূহ (আঃ) দেখাবেন ইব্রাহিম (আঃ) কে , ইব্রাহিম (আঃ) মুসা (আঃ) কে , মুসা (আঃ) ঈসাকে এবং ঈসা (আঃ) দেখাবেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কে এবং বলবেন তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী তার কাছে যাও। (ঈসা (আঃ) তখন সবাইকে তাঁর কাছে উপস্থাপন করে শাফাআত করার জন্য অনুরোধ করবেন।)

তখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলবেন সবাই আসন , সবাইকে বেহেশতের দরজার কাছে নিয়ে যাবেন তিনি বলবেন , বেহেশতের দরজা খুলে ফেলুন। যখন দরজা খুলে যাবে তখন তিনি সেদিকে ফিরে সেজদায় পড়ে যাবেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত সেজদায় থাকবেন যতক্ষণ বলা হবে না যে , মাথা উঠাও ও যা ইচ্ছা চাও দেয়া হবে শাফাআত কর কবুল করা হবে।

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠবেন এবং যারা আগুনে জ্বলন্ত থাকবে তাদের জন্য শাফাআত করবেন। অতএব সেদিন তার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোন ব্যক্তি থাকবেনা এবং ঠিক সেই আয়াতের মতই হবে যে , (অতিশিঘ্রই আল্লাহ তালা আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্টিত করবেন।)৮৭ এটা সেই পদ যা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছে।

আইস ইবনে কাশেম ইমাম সাদিক (আঃ) এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন , বনি হাশেম বংশেরে কিছুক্ক সংখ্যক লোক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে আবেদন করলেন যে , তাদেরকে চতুষ্পয়ী জন্তুর যাকাত আদায়ের ভার দেয়া হোক। (যাতে করে তারা যাকাতের সুবিধা ভোগ করতে পারে) অতঃপর বললো , ঠিক যে পরিমাণ অর্থ যাকাত আদায় কারীদের দেয়া হয় আযাদেরকেও তাই দেয়া হোক। আমরা তাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন ওহে আব্দল মুত্তালিবের সন্তানগণ , আমার ও তোমাদের জন্য যাকাত খাওয়া হারাম কিন্তু আমি এর বিনিময়ে (যাকাত না খাওয়ার বিনিময়ে)

তোমাদেরকে শাফাআতের ওয়াদা দিচ্ছি। অতঃপর বললেন , আল্লাহ তালা আমাকে শাফাআত করার ওয়াদা দিয়েছেন। ওহে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানগণ যখন আমি (কেয়ামতের দিবসে) দরজার কড়া ধরব কী ধারনা করবে ?

অতঃপর বললেন , কেয়ামতের দিন জিন ও ইনসান এক লাইনে সারিবদ্ধ হবে এবং যখন সুদীর্ঘ অপেক্ষা করতে থাকবে তখন শাফাআতের জন্য আবেদন করবে এবং বলতে থাকবে শাফাআতের জন্য কার শরণাপন্ন হব ? নূহ (আঃ) এর কাছে আসবে , নূহ বলবেন , আমি আবেদন করেছিলাম পূরন হয়েছে , বলবে তাহলে কার কাছে যাব ? বলবে , ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছে , ইব্রাহিম (আঃ) এর কাছে আসবে ও শাফাআতের জন্য আবেদন করবে। তিনি বলবেন আমিও আবেদন করেছিলাম আবেদন পূরন হয়েছে , বলবে তাহলে কার কাছে যাব ? বলবেন , হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও। তখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাবে। তিনি তার শান ও সওকত নিয়ে বেহেশতের দিকে রওয়ানা হবেন , বেহেশতের দরজা পর্যন্ত যাবেন। যখন বেহেশতের দরজায় পৌছবেন তখন দরজায় নক করবেন। ১টি পশ্ন ও উত্তরের পর দরজা খুলে যাবে এবং তাকে সম্ভাসন জানাবে। বেহেশতের দিকে দৃষ্টি পরা মাত্রই তিনি সেজদায় পড়ে যাবেন এবং আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করতে থাকবেন। তখন একজন ফেরেশতা এসে বলবে ওহে রাসূল মাথা উঠান , এবং আল্লাহর কাছে যা চাবেন তাই পাবেন এবং শাফাআত করেন কবুল হবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠাবেন ও বেহেশতের প্রবেশ করবেন। অতঃপর পূনরায় সেজদায় পড়ে যাবেন এবং পূর্বের ন্যায় ফেরেশতা এসে বলতে থাকবে , তখন তিনি মাথা উঠাবেন এবং যা চাবেন তাই পাবেন।৮৮

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আমি আদমেরর বংশধর সন্তান কোন রকম গর্ব অহংকার করিনা। আমি প্রথম ব্যক্তি যাকে সর্ব প্রথম ভূমি থেকে (কবর থেকে) উত্থাপন করা হবে এবং তাতেও গর্ব করিনা। আমি প্রথম শাফাআত কারী এবং যার শাফাআত কবুল করা হবে এবং তাতেও গর্ব করিনা। কেয়ামতের দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতে থাকবে তাতেও গর্ব করিনা।৮৯

উবাইদ ইবনে যুরারাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি ইমাম সাদিক (আঃ) কে প্রশ্ন করেন , মুমিনদেরকে কি শাফাআত করা হবে ? বললেন হ্যাঁ , আল্লাহর কসম। কোন একজন প্রশ্ন করলেন ; তাহলে কি মুমিন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের জন্য নির্ভরশীল থাকবে ? ইমাম বললেন হ্যাঁ , মুমিনদেরও ভুল ভ্রান্তি এবং গুনাহ হয়ে থাকে। এমন কোন ব্যক্তি নেই কেয়ামতের দিন যার জন্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের প্রয়োজন পরবে না । অন্য একজন প্রশ্ন করলেন: হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কি এমন কথা বলেছেন যে , আমি আদমের বংশধর সন্তান কিন্তু গর্ব অহংকার করিনা ? ইমাম বললেন: হ্যাঁ , তিনি বেহেশতের কড়া ধরে তা খুলে ফেলবেন , অতঃপর সেজদায় পড়ে যাবেন , আল্লাহ তালা বলবেন মাথা উঠান , এবং শাফাআত করুন , আপনার শাফাআত কবুল করা হবে এবং যা কিছু চাইবেন দেয়া হবে। অতঃপর তিনি মাথা উঠাবেন কিন্তু পূনরায় সেজদায় পড়ে যাবেন এবং একই ভাবে মাথা উঠাবেন এবং তখন শাফাআত করবেন , শাফাআত কবুল করা হবে এবং অন্য যা কিছু চাইবেন দেয়া হবে।

২। মাসুম ইমামগণ:

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেগু্লোতে বলা হয়েছে যে , পবিত্র ইমামগণ এবং রাসূলের সন্তানগণ কেয়ামতের দিন শাফাআত করবেন। সেরূপ কয়েকটি হাদীস নমুনা হিসেবে তুলে ধরব। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন:

যখন কেয়ামতের দিন উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ তালা আদী থেকে অন্তু সকল জন মানবকে এক অন্ধকার স্থানে সমবেত করবেন। মানুষেরা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ও বিলাপ করতে থাকবে ও বলতে থাকবে হে আমাদের পরওয়ার দেগার! এই অন্ধকার কে আমাদের সামনে থেকে সরিয়ে নাও। তখন কিছু কিছু লোকদের সামনে আলোর ঝলক পরতে থাকবে তাদের আলোতে কেয়ামতের মাঠ আলোকিত হবে।

উপস্থিত জনতা বলতে থাকবে উক্ত ব্যক্তিরা আল্লাহর ফেরেশতা। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত হবে: তারা ফেরেশতা নয়। জিজ্ঞেস করবে , তোমরা কারা ? বলবেন: আমরা আলীর বংশের হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তান এবং আমরা আলী (আঃ) এর সেই সন্তুানবৃন্দ যাদেরকে আল্লাহ তালা কেরামতি দান করেছেন। আমরা সেই ঈমানদার ব্যক্তিবর্গ যারা তাদের ঈমানের প্রতি দৃঢ় ছিল। আল্লাহ তালা তখন তাদেরকে বলবেন , তোমাদের বন্ধুদের ও অনুশারীদের শাফাআত কর এবং তাদের শাফাআত কবুল করা হবে।৯০

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

আমার আহলে বাইতগণ শাফাআত করবো ও তাদের শাফাআত কবুল করা হবে। ৯১

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

শাফাআত কারীরা ৫ দলে বিভক্ত নবী এবং নবীর আহলে বাইতগণ শাফাআত করবেন। ৯২

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

কেয়ামতের দিন আমি শাফাআত করব , তা কবুল করা হবে আলী শাফাআত করবে তার শাফাআতও কবুল করা হবে এবং আমার আহলে বাইত শাফাআত করবে তাও কবুল করা হবে। ৯৩

ইমাম আলী (আঃ) বলেন , আমরা শাফাআত করব এবং আমাদের বন্ধুরাও শাফাআত করবে । ৯৪

ইমাম বাকের (আঃ) আল্লাহর বানীتری کل امّة جاثیه প্রসঙ্গে বলেন ,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও আলী (আ.) সকল সম্ভ্রান্ত লোকজনদের মাঝে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হবেন অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম শাফাআত করবেন এবং বলবেন , ওহে আলী শাফাআ্ত কর ।৯৫

৩. হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)

হযরত ফাতেমা যাহরার (আ.) শাফাআত সম্পর্কেও যথেষ্ট হাদীস বর্ণিত আছে তার কয়েকটি নমূনা এখানে পেশ করব ।

ইমাম বাকের (আ.) বলেন :

আমার পিতা আমাদের পূর্ব পুরুষ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,কেয়ামতের দিন ফাতেমা যাহরা (আ.) বেহেশতের দরজায় এসে অপেক্ষা করতে থাকবেন । আল্লাহ তালা বলবেন , হে আমার হাবিবের কন্যা কী কারনে অপেক্ষা করছেন ? আমি চাই তুমি বেহেশতে প্রবেশ কর ।

ফাতেমা (আ.) বললেন , হে আমার প্রতিপালক ,আমার ইচ্ছা ছিল এমন দিনে আমার পদমর্যাদা স্পষ্ট হোক । যাদের অন্তর তোমার প্রতি অথবা তোমার যে কোন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা পোষন করতো তাদের হাত ধরে বেহেশতে প্রবেশ কর ।

ইমাম বাকের (আ ,) বলেন ,ওহে জাবের! আল্লাহর কসম ,ফাতেমা (আ.) সেদিন আমাদের প্রতি ভালোবাসা পোষনকারী ব্যক্তি ও মুসলমানদের আলাদা করবেন । ঠিক যেভাবে মা পাখি খারাপ শস্য কনা থেকে ভাল শস্য কনা আলাদা করে ।৯৬

মুহম্মদ ইবনে মুসলিম বলেন: ইমাম বাকের (আ.) এর কাছ থেকে শুনেছি যে তিনি বলেছেন:

ফাতেমা (আ.) বেহেশতের দরজায় অপেক্ষা করতে থাকবেন । কেয়ামতের দিন সকল মানুষেরই দুই চোখের মধ্যখানে(কপালে)লেখা থাকবে মুমিন অথবা কাফের । (আহলে বাইতের প্রতি) আশেক ব্যক্তিগন যাদের পাপের পরিমান বেশী তাদের আদিষ্ট হবে দোযখে যাওয়ার জন্য । তখন ফাতেমা (আ.) (দেখতে পাবেন যে তাদের কপালে সেরূপ লেখা আছে এবং তার সাথে সাথে অন্য কিছু লেখা আছে) পড়ে দেখবেন যে তাদের কপালে লেখা আছে মোহেব্ব ( অর্থাৎ তারা মুমীন এবং আহলে বাইতের প্রেমিক কিন্তু তাদের গুনাহের পরিমান অধিক) । অত:পর বললেন ওহে মাবুদ ,আমার নাম দিয়েছো ফাতেমা এবং আমার উসিলায় আমার শুভাকাংখীদের ও বংশধরদের দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দেয়ার ওয়াদা দিয়েছো ,আমি জানি তোমার ওয়াদা সত্য (ভঙ্গ হয় না )। আল্লাহ তালা বলবেন ওহে ফাতেমা ঠিক বলেছো , আমি ওয়াদা দিয়েছি এবং আমার ওয়াদা ভঙ্গ হবেনা কিন্তু আমি আদেশ দিয়েছি এই সকল লোক দোযখে যাবে এবং যখন তুমি তাদের জন্য শাফাআত করবে তখন আমি তোমার শাফাআত কবুল করব , তোমার শাফাআতের কারনে তারা দোযখের আগুন থেকে মুক্তি পেয়ে বেহেশতে যাবে । তখন তোমার মর্যাদা সকল নবী রাসূল ও অলি আওলিয়াদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রমানিত হবে । অতএব তার চোখে যারা মুমিন তাদের হাত ধরে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন ।৯৭

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত পড়বে ,রমজান মাসে রোজা রাখবে ,পবিত্র কাবা ঘরের হজ্ব (ফরজ হলে পালন করবে ,যাকাত দিবে । তার স্বামীর আদেশ পালন করবে এবং আমার পর আলী (আ.) কে ইমাম হিসেবে মেনে নেবে ও তার বন্ধু হবে । সে আমার কন্যা ফাতেমা (আ.) এর শাফাআতের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করবে ।৯৮

৪ । ফেরেশতাদের শাফাআত

কোরআন হাদীসের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে , শাফাআত করার অধিকার নবী রাসূল বা বিশেষ কিছু লোকদের জন্য নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমিত নয় বরং মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রানী ও শাফাআত করতে পারবে যেমন ফেরেশতারা তারা এমনই এক দল যারা শাফাআত করতে পারবে ।

ফেরেশতাদের শাফাআত করার পক্ষ্যে কোরআন ও হাদীসের নিম্নলিখিত দলিল সমূহ পেশ করা যেতে পারে ।

ক- কোরআনের দৃষ্টিতে শাফাআত

) و َالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَن فِي الْأَرْضِ(

ফেরেশতারা আল্লাহর প্রশংসা কীর্তন করে এবং বিশ্ববাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।৯৯

) و َكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّـهُ لِمَن يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ(

আকাশে অনেক ফেরেশতারা রয়েছে যাদের কোন সুপারিশ (শাফাআত) ফলপ্রসু হবেনা , যতক্ষণ না আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা এবং যাকে পছন্দ করেন তাদের জন্য অনুমতি দিবেন।১০০

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট : প্রথম আয়াত ফেরেশতাদের শাফাআতের ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করে কিন্তু দ্বিতীয় আয়াত তাদের শাফাআত কবুল হওয়ার শর্ত আরোপ করেছে এবং ঘোষণা করেছে , তখনই ফেরেশতাদের শাফাআত কবুল হবে যখন তা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হবে এবং তার সাথে যাদেরকে শাফাআত করার জন্য আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবেন।

এর আগেও আমরা উল্লেখ করেছি যে , আরবী সাহিত্যে যদিاثتثنی নেগেটিভ বাক্যের পরে আসে তাহলে তা সঠিক ও সত্য বলে প্রমাণিত হয় তাই্لا تعنی شفعتهم شییا সস্পষ্ট নেগেটিভ বাক্য কিন্তু তার পরই এসেছেالا من بعد أن یاذن الله لمن یشاء و یرضی এই বাক্য দ্বারা পূর্বে নেগেটিভ বাক্যকে অস্বীকার করে সঠিক বলে প্রমাণ করে যে আল্লাহর অনুমতিতে তারা শাফাআত করবে।

খ- হাদীসের বর্ণনা মতে ফেরেশতাদের শাফাআত

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,یشفع النبیون و الملائک

নবীগণও সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ফেরেশতারা শাফাআত করবেন।১০১

ফেরেশতাগণ , নবীগণ ও শহীদ্দেরকে অনুমতি দেয়া হবে শাফাআত করার জন্য।তারাও তখন শাফাআত করবেন এবং তাদের শাফাআত কবুল করা হবে এবং যাদের অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে তারা তাদেরকে দোজখের আগুন থেকে উদ্ধার করবেন।১০২ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তালা বিচার ফায়সালা করার পর কিছু সংখ্যক লোকদেরকে দোজখের আগুন থেকে তুলে আনবেন (যাদেরকে চাইবেন)। অতঃপর ফেরেশতা ও নবীদেরকে বলবেন তাদের জন্য শাফাআত কর , (যারা শাফাআত পাওয়ার উপযোগী) সে সব ব্যক্তির কপালে একটি আলামত ও চিন্হ থাকবে (কারণ তারা সেজদা কারীও নামাজি ছিল)। দোজখের আগুন তাদের কপালকে পোড়াবেনা।

৫। কোরআনের শাফাআত

কোরআনও শাফাআত করবে। এ ব্যাপারে আহলে সুন্নতও শিয়াদের বর্ণিত হাদীসে যথেষ্ট হাদীস উল্লেখিত আছে। তবে কোরআনের শাফাআত করার ব্যাপারে আমাদের উদ্দেশ্য হল

সেই সত্যিকার হাকিকতে কোরআন। বাহ্যিক কোরআনের লেখা ও পৃষ্ঠা নয় ।

হাদীসের বর্ণনামতে কোরআনের শাফাআত

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কেয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দাদের জন্য শাফাআত করবে । রোজা বলবে: হে আল্লাহ আমি দিনের বেলা তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং তাকে খাওয়া , পানাহার ও কাম বাসনা থেকে বিরত রেখেছি , তার ব্যাপারে আমার শাফাআত কবুল করুন। কোরআন বলবে , আমি তাকে রাতের ঘম থেকে বিরত রেখেছি অতএব তার জন্য আমার শাফাআত কবুল করুন। অতএব উভয়ের শাফাআত কবুল করা হবে।১০৩

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কোরআন শিক্ষা কর , কারণ সে তার সঙ্গীদেরকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করবে। ১০৪

কোরআনের একটি সূরাতে ৩০ টি আয়াত রয়েছে যারা উক্ত আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করবে তাদেরকে শাফাআত করবে এবং সে সূরাটি হল আল মূলক।১০৫

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , শাফাআত কারীগণ ৫ দলে বিভক্ত: কোরআন , আপনজন , আমানত , রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইত। ১০৬

আলী (আঃ) বলেন , জেনে নাও কোরআন শাফাআত করবে এবং তা কবুল করা হবে , সে কথা বলবে তার কথা সত্যায়ন করা হবে। কেয়ামতের দিন কোরআন যার যার জন্য শাফাআত তারাই এর সুফল ভোগ করবে।১০৭

৬ শহীদ ও আলেমগনের শাফাআত

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কেয়ামতের দিন নবীগণ অতঃপর আলেমগণ এবং অতঃপর শহীদগণ শাফাআত করবে।১০৮

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , শহীদগণ তার পরিবারের লোকজন থেকে ৭০ জনকে শাফাআত করবে।১০৯

ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন , যেদিন কেয়ামত হবে আলেমকে বলা হবে , দাড়াও এবং যাদেরকে ভাল করে গড়তে পেরেছ তাদের জন্য শাফাআত কর।১১০

৭.প্রতিবেশীর শাফাআত

ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন , প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর জন্য শাফাআত করবে তবে শর্ত হল উক্ত প্রতিবেশী ঈমানদার হতে হবে।১১১

৮ আমলের শাফাআত

অন্য এক প্রকার শাফাআতকারী হল নিজস্ব আমল। প্রত্যেক মানুষের কত আমল কেয়ামতের দিন প্রতিমূর্তি ধারন করবে।

নিম্নলিখিত আমল সমূহ উদাহরণ স্বরূপ পেশ করা যেতে পারে।

১- তওবা

ইমাম আলী (আঃ) বলেন কোন , শাফাআতকারীই তওবার চেয়ে উৎকৃষ্ট হতে পারে না।১১২

২- আমানতদারী

হযরত রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন: শাফাআত কারীগণ পাঁচ ধরনের আমানতদারী১১৩

৩ ও ৪- রোজা ও কোরআন

রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

কেয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন (তাদের আমল কারীগণকে) শাফাআত করবে। রোজা বলবে , হে আল্লাহ সে আমার কারণে খাওয়া ও কাম বাসনা থেকে বিরত রয়েছে অতএব আমাকে তার জন্য শাফাআত করার অনুমতি দাও।১১৪

রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , কোরআন শিক্ষা কর। কোরআন কেয়ামতের দিন তার সঙ্গীদেরকে শাফাআত করবে।১১৫

৫- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ

ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) বলেন , মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরদের উপর দরুদ পড় , যা কেয়ামতের দিন সে কঠিন মুসিবতের সময় আমাদেরকে শাফাআত করবে।১১৬

বিশেষ লক্ষ্যণীয়: আমল ও শাফাআত

কাজ ও প্রচেষ্টা ইসলাম ধর্মে এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আর তাই আল্লাহ তালা পবিত্র কোরআনে বলেন ,

) و َأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ(

মানুষ যা কিছু করবে তারই প্রতিফল পাবে ।১১৭

অতএব মানুষ চেষ্টা করে যা অর্জন করে তার চেয়ে অধিক কিছু তার ভাগ্যে জুটবেনা ।

অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন ,

) ف َمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ(

অতএব যে কেই বিন্দু পরিমান ভাল কাজ করেবে তার পুরস্কার সে পাবে এবং যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমান কাজ করবে তার প্রতিদান ও সে পাবে ।১১৮

) ك ُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ(

প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী ।১১৯

উল্লেখিত আয়াতে স্পষ্টভাবে কৃত আমলের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । আরেকটি বিষয় যা জানতে হবে তা হল আমল ও শাফায়াতের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই । আর আমলের শাফাআত করার বিষয়টি উক্ত কর্মফলেরই একটি দৃষ্টান্ত । কারন শাফাআত পাওয়ার জন্য চেষ্টা ও তদবীর থাকা আবশ্যক ।অন্য দিকে শাফাআত পাওয়ার জন্য পূর্বশর্ত সমূহ ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে । আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিদের উসিলা ব্যতিত শাফাআত পাওয়া সম্ভব নয় এবং তাদের সান্নিধ্য অর্জন করতে হলে তাকওয়া ও পরহেজগার হতে হবে । অতএব ফলাফল দাঁড়ায় যে ,শাফাআত ঠিক মানুষের সেই আমলেরই প্রতিচ্ছবি ।

ষষ্ট অধ্যায়

শাফাআত পাওয়ার শর্তাবলী

১।ইমান

২।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামদের দুশমনি থেকে বিরত থাকা

কোরআনের আলোকে শাফাআত

ক- যে সকল আয়াত সমূহ শাফাআতকে প্রত্যাখ্যান করে সেগুলোর পর্যালোচনা।

) ي َا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(

ওহে বনি ইসরাঈলগণ স্মরণ কর , সেসব নেয়ামতের কথা যে গুলো তোমাদেরকে দান করেছি ; এবং তোমাদেরকে বিশ্ব বাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি (তোমাদেরকে রাসূল দিয়েছে এবং কিতাব) ; আর সে দিনকে ভয় কর যে দিন কাউকে অন্য কাহারো পুরষ্কার দেয়া হবে না এবং কারো জন্যে অন্য কারো শাফাআত গ্রহণ করা হবে না ; এবং কারো প্রতিদান (ক্ষতিপূরণ) অন্য কারোও জন্য গ্রহণ করা হবে না এবং সেদিন কোন সাহায্যকারীই থাকবেনা।15

) ي َا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ () وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ(

উপরোক্ত দুই আয়াতে যদিও শাফাআত সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা পেশ করা হয়েছে মূলতঃ তা শাফাআতের ফলাফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । কেয়ামতে শাফাআত সংগঠিত হ্ওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । উপরোক্ত দুই আয়াতে বনি ইসরাঈলদের পোষিত ধারণা (যেহেতু তারা নবী রাসূলদের সন্তান তাই তারা অবশ্যই বেহেশতে যাবে) কে খণ্ডন করা হয়েছে আর তাই বলা হয়েছে তাদের জন্য কোন শাফায়াতকারী সে দিন থাকবেন ।16

) و َلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ(

(কেয়ামতের দিন বলা হবে) সত্য সত্য তোমরা একে একে সবাই আমার কাছে (হিসাবের জন্য) ফিরে এসেছ ঠিক যেভাবে প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছিলাম তা সবই পিছনে ফেলে রেখে এসেছ। আমিতো তোমাদের সাথে তোমাদের সেই শুপারিশ কারীদের দেখছিনা , যাদের সম্পর্কে তোমাদের ভুল ধারণা ছিল যে তারা তোমাদের সাথে (অংশীদার হয়ে) থাকবে। বাস্তবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের কল্পিত দাবী সমূহ উধাও হয়ে গেছে।17

এই আয়াতে মুশরিকদের আকিদা বিশ্বাসকে ধিক্কার দেয়া হয়েছে (তাদের ধারণা ছিল যে , তাদের এবাদতকৃত মুর্তিগুলো কেয়ামতের দিন তাদের জন্য শাফাআত করবে)।

) ي َا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ(

হে ঈমানদারগণ আমি তোমাদেরকে যে রুজি দিয়েছি , তা থেকে সেদিন আসার পূর্বেই দান কর , যে দিন না আছে কোন কেনাকাটা আর না আছে কোন বন্ধুত্ব ও সুপারিশ (শাফাআত)। আর কাফেররাই হল প্রকৃত জালিম।18

এই আয়াত সম্পর্কে কয়েক প্রকার জবাব দেয়া হয়েছে।

প্রথমত : দুনিয়া সৃষ্টির আগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত শক্তি , ক্ষমতা , সম্পদ ও নেয়ামতের সত্যিকার মালিক হল পরওয়ার দেগার আল্লাহ তালা , তিনি সেদিন সমস্ত বাকশক্তি ও কারণ সমূহ বন্ধ করে দিবেন। অতএব এই আয়াত দ্বারা যা বুঝা যায় তা হল যে , শাফাআতের মূলে যা ধারণা করা হয় যেমন , সম্পদ ও শক্তি কেয়ামতের দিন তা বাতিল হয়ে যাবে। অতএব উক্ত আয়াত শাফাআতের মূল বিষয়কে অস্বীকার করেনা বরং শাফাআতের ভুল ধারণাকৃত কারণ সমূহকে অস্বীকার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: আল্লাহ তালা যদিও এই আয়াতে শাফাআতকে অস্বীকার করেছেন তবে পরবর্তী আয়াতে শাফাআতকে প্রমাণ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে ;

) م َن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ(

এমন কে আছে আল্লাহর কাছে শাফাআত করবে তার অনুমতি ব্যতীত ।19

(তবে) আল্লাহর কাছে তারা শাফাআত করতে পারবে যাদেরকে তিনি অনুমতি দেবেন।

এই আয়াতের উল্লেখিত প্রশ্নের উদ্দেশ্য হল স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা। এবং আরবীالا এর অর্থ হল কিন্তু বা অথচ যা উল্লেখিত আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে এবং তা দ্বারা বলা হয় যে সেদিন শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতিতেই শাফাআত কারীর সুপারিশ কবুল করা হবে।

তৃতীয়তঃ সার্বিকভাবে শাফাআতকে বাতিল করা হয়নি তবে কিছু কিছু ব্যক্তির শাফাআতকে (সুপারিশ) ব্যতিক্রম করা হয়েছে এবং তাদের জন্য শাফাআতকে বাতিল করা হয়েছে। এর প্রমাণ আয়াতের শেষ অংশে বলা হয়েছেهُمُ الظَّالِمُونَ অর্থাৎ কাফেররা নিজেদের উপর যুলুম করেছে সে কারণে তারা শাফাআতের সুফল ভোগ করবেনা।

গুনাহ খাতা শাফাআতের উসিলায় ক্ষমা করা হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস দারাও প্রমাণিত হয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আমি সে সব গুনাহগার বান্দাদের জন্য শাফাআত করব যারা জালিম ও মুশরিক নয়।20

অতএব শাফাআতের উসিলায় আল্লাহর রহমত পেতে হলে অবশ্যই শিরক ও যুলুম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

) ف َمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ(

সেদিন তাদের জন্য শাফাআত কারীদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না।21 কারো কারো মতে , এই আয়াত দ্বারা শাফাআতকে অস্বীকার করা হয়েছে কিন্তু তা ঠিক নয়। আল্লামা তাবাতাবাঈর মতে , এই আয়াত শাফাআতের জন্য একটি দলিল স্বরূপ কারণ নিম্নলিখিত দুই প্রকার বাক্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে আরবী ধাতু যদি কোন নামের সাথে যুক্ত হয় তাহলে তা সে বিষয়কে (ধাতুকে) স্বীকৃতি দেয়।22 মহান আলেম শেখ আব্দুল কাহের এ বাক্য প্রসংঙ্গে বলেন , সংযুক্ত শব্দটি বহুবচনে ব্যবহৃত হয়েছে। যদি তা অতিরিক্ত শব্দ হতো তাহলে বহু বচনে ব্যবহৃত হতোনা এবং যেহেতু এখানে বহু বচনে ব্যবহৃত হয়েছে তাই তা যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রদান করে।23

শাফাআত সম্পর্কিত নেতিবাচক (নেগেটিভ) বাক্য সমূহ পর্যালোচনার পর এই ফলাফলে পৌছতে পারি যে , উল্লেখিত আয়াত সমূহ সত্যিকার ভাবে শাফাআতকে অস্বীকার করেনি বরং সে সব আয়াত দ্বারা শাফাআত সম্পর্কে ভুল ধারণার অপনোদন করা হয়েছে এবং যারা মনে করে যে শাফাআতের জন্য আল্লাহর অনুমতির প্রয়াজন নেই তাদের ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে।

খ: যে সব আয়াত শাফাআতের স্বীকৃতি প্রদান করে।

1। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা যা করে থাকে আল্লাহ তালা সবই জানেন।24 কোন ব্যক্তিই শাফাআত করতে পারবেনা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত , আর তারা সর্বদাই আল্লাহর ভয়ে ভীত- সন্তস্ত্র ।

যদিও এই আয়াতে পথেমে সকলের জন্য শাফাআতকে অস্বীকার করা হয় কিন্তু আয়াতের ধারাবাহিকতায় বলা হয় কিন্তু তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ অনুমতি দেবেন। আরবী শব্দالا কে আরবীতে হাসর حصر হিসিবে গণ্য করা হয় আর যেহেতু এ শব্দটি না বোধক (নেগেটিভ) শব্দের পরে এসেছে তাই আরবী নিয়ম অনুযায়ী নেগেটিভকে অস্বীকার করে মূল বিষয়ের সত্যতা প্রমাণ করে । অতএব উল্লেখিত আয়াত শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে ।

وَكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّـهُ لِمَن يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ

আকাশে কতইনা ফেরেশতা রয়েছে যাদের কোন শাফাআত ফলপ্রসু হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ও যার উপর সন্তুষ্ট থাকেন।25

এই আয়াতে ও পূর্ববর্তী আয়াতের মতالا নেগেটিভের পরে ব্যবহৃত হয়েছে তাই অনুরূপ অর্থের নির্দেশনা দেয়।

) ي َوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا(

সেদিন কোন ব্যক্তির শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না। যতক্ষণ না আল্লাহ রহমান কাউকে শাফাআতের অনুমতি দেন এবং তার কথায় সন্তুষ্ট হন ।26

এই আয়াতেও পথেমে নেগেটিভ বাক্য ও পরে আরেকটি নেগেটিভ বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে ফলে মূলতঃ শাফাআতের সত্যতাই প্রকাশ করে । তবে শর্ত হল , আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টষ্টি ।

তবে উল্লেখিত আয়াতেরالشفاعة শব্দটির কারাআত দুই রকমের হতে পারেرفعنصب আমরা উপরে যে অর্থ করেছি তাرفع এর অর্থ । আল্লামা তাবারসী তার নিজস্ব তাফসীর গ্রন্থে বলেছেন , উভয় প্রকার কারাআতই বৈধ ।27 যদিرفع রাফ পড়া হয় তাহরে অর্থ হবে শাফাআতকে অস্বীকার করেনা তবে শর্ত হল আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন । অন্যদিকে যদি মানসুব পড়া হয় তাহলে অর্থ এরূপ হবে , যে প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী বলেন আল্লাহর এ বাণীতেالا শব্দ যে উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে তা শাফাআতের গুরুত্ব বহন করে ।28

আমাদের মতামতই ঠিক । তবে শাফাআতের প্রাস্থির জন্য কোন প্রকার অনুমতির প্রয়োজন নেই তবে যে ব্যক্তি শাফাআত করবে তাকে অবশ্যই আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টষ্টি হাসিল করতে হবে ।

মূলতঃ (যদি ধরে নেয়া হয় উভয়ের জন্যই আল্লাহর অনুমতি নিতে হবে তবুও) তা শাফাআতের সত্যতাই প্রমাণ করে ।

) و َلَا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ عِندَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ(

আল্লাহ পাক যাকে অনুমতি দেন তার কাচে অন্য কারো শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না ।29

এই আয়াতেও পথেমে শাফাআতের ফলাফলকে অস্বীকার করা হয়েছে কিন্তু পরক্ষণেই বলা হয়েছেإِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ কিন্তু যাদেরকে আল্লাহ পাক অনুমতি দিবেন তারা ব্যতীত। কারণ আরবী শব্দإِلَّا যদি নেগেটিভ কোন বাক্যের পরে ব্যবহৃত হয় তাহলে তা থেকে পজেটিভ ধারনা প্রমাণিত হয়। তাই এখানে সম্ভবতإِلَّا দ্বারা শাফাআত কারীদের বুঝানো হয়েছে যে , একমাত্র তখনই শাফাআত কারীদের সুপারিশ গ্রহন যোগ্য হবে যখন আল্লাহ পাক তাদেরকে অনুমতি দিবেন।

ঠিক একইভাবে এমনও হতে পারে যে , উক্ত আয়াতেإِلَّا দ্বারা শাফাআতকারীকে বুঝানো হয়েছে আর তখন আয়াতের অর্থ হবে ; সেই ব্যক্তির জন্য শাফাআত ফলপ্রসু হবে যার সম্পর্কে শাফাআত করতে আল্লাহ পাক অনুমতি দিবেন। মহান আলেম ও মোফাসসের আল্লামা জামাখশারী দ্বিতীয় মতকে প্রধান্য দিয়েছেন কিন্তু আল্লামা তাবাতাবাঈ প্রথম মতকে গ্রহন করে বলেন ,

সকল ফেরেশতারাই শাফাআতের যোগ্যতা রাখে তবে যে কোন বিষয় অথবা যে কোন ব্যক্তির জন্যই তা প্রযোজ্য হবে না শুধুমাত্র যে বিষয়ে আল্লাহ তালা অনুমতি দিবেন , অথবা শুধুমাত্র যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তালা শাফাআত করার অনুমতি দিবেন। অতএব আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের শাফাআতকে অস্বীকার করেছেন কিন্তু যাদেরকে অনুমতি দিবেন তাদের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না।

আমাদের মতেও উক্ত আয়াত শাফাআত প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য কারণ উল্লেখিত আয়াতের দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে , সে ব্যক্তি শাফাআত পাওয়ার যোগ্য নয় যদি না আল্লাহ তালা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে।

) و َنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ وِرْدًا لَّا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا(

এই আয়াতেلَّا يَمْلِكُونَ শব্দের সর্বনামمُجْرِمِينَ এর প্রতি ফিরে যায় ।30 অর্থাৎ শাফাআত প্রার্থীদের জন্য কোন শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না যদিনা তারা আল্লাহর কাছ থেকে কোন শাফাআতের প্রতিশ্রুতি নিয়েছে । এই আয়াতেإِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا হাসর শব্দটি শাফাআত প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে । অর্থাৎ যারা আল্লাহর কাছ থেকে সুপারিশের প্রতিশ্রুতি নিয়েচে তারা শাফাআতের ফলাফল ভোগ করবে । তবে আরবী শব্দعَهْدًا এর অর্থ হল , আল্লাহর প্রতি ইমান ও শেষ নবীর রেসালাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস । আমাদের মতেও এই আয়াতের উদ্দেশ্য শাফাআত প্রার্থীদের জন্য। করাণإِلَّا নেগেটিভের পরে ব্যবহৃত হয়েছে ।

) و َلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ(

যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পুজা করে তারা শাফাআতের অধিকারী হবে না।31 কিন্তু যারা স্বীকার করতো ও বিশ্বাস করতো তাদের ক্ষেত্রে শাফাআত প্রযোজ্য হবে (ঈসা , উজাইর ও ফেরেশতাগন)।

পূর্ববতী আয়াতের যুক্তির ভিত্তিতে এই আয়াতও শাফাআতের অস্তিত্ব প্রমান করে।

গ- যে সকল আয়াত শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে।

পূর্বোল্লিখিখিত ছয়টি আয়াত শাফাআতের স্পষ্ট নির্দেশনা বহন করে কিন্তু পবিত্র কোরআনে আরোও এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলো শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে। তার কয়েকটি নিম্নে আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ।32

) و َلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ(

খুব শীঘ্রই তোমার পরওয়ারদেগার তোমাকে (শাফাআতের পদাধিকার) দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট থাকবে।

শাফাআত করা এক ধরনের সাহায্য করা , আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লাম) ও পবিত্র মাসুমিন (আলাইহি সাল্লাম) দের এই ক্ষমতা প্রদান করা , হাজারো দুঃখ , কষ্টের মোকাবেলায় এক প্রকার সহমর্মিতা স্বরূপ।

নিম্নলিখিত হাদীস একথার সত্যতা স্বীকার করে । ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন , একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা (আঃ) এর ঘরে প্রবেশ করলেন। ফাতেমার গাযে ছিল উটের চামড়ার তৈরি আবা , সে অবস্থায় গম ভাঙ্গাচ্ছিলেন এবং একই সাথে তাঁর সন্তানকে দুধ পান করাচ্ছিলেন , এ অবস্থা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে দেখলেন অশ্রু শিক্ত কন্ঠে বললেন , ওহে কন্যা , আখেরাতের পুরষ্কারের আশায় দুনিয়ার এহেন কষ্ট সহ্য করে যাও , কারণ এমন সুসংবাদ আমাকে দেয়া হয়েছে।

এই আয়াত ও শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে , অর্থাৎ (শাফাআতের উসিলায়) ক্ষমা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টষ্টির উপর নির্ভর করে।

ইমাম সাদিক (আঃ) এ ব্যাপারে বলেন:33 আমার পূর্বপুরুষ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লাম) এর কামনা হল আল্লাহর ইবাদতকারী কোন ব্যক্তি যাতে জাহান্নামে অবশিষ্ট্য না থাকে।

উপরের আয়াত ক্ষমা ও দান সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয় , শাফাআত ক্ষমারই একটি দৃষ্টান্ত।34

বাশার ইবনে শারিহ বাসরি: ইমাম বাকের (আঃ) এর কাছে পশ্ন করেছিলাম ; কোরআনের কোন আয়াতটি সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক ? ইমাম প্রশ্ন করলেন: তোমার গোত্রের এ ব্যাপারে মতামত কি ? বললাম: আমার গোত্রের ধারনা আয়াতে তওবা ((ওহে লোক সকল গুনাহকারীগণ)) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা , এবং তওবা সহকারে আল্লাহর দরবারে ফিরে যাও।

ইমাম: তোমরা যা বল আমরা আহলে বাইত তা বলিনা। তাহলে আপনারা কী বলেন ?

) و َلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ(

(এই আয়াতের উদ্দেশ্যে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কে যা দান করা হয়েছে তা হল শাফাআত. আল্লাহর কসম তা হল শাফাআত , আল্লাহর কসম তা হল শাফাআত ।

এই আয়াতটি সূরা তওবার সে আয়াতের চেয়ে অধিক আশা ব্রঞ্জক কারণ সূরা তওবার সে আয়াটিতে ক্ষমার জন্য তওবার মর্ত আরোপ করা হয়েছে । কিন্তু

) و َلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ(

এ আয়াতে কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এবং দান করা হয়েছে অর্থক্কাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম যাকে খুশি শাফাআত করতে পারবেন। অতএব আল্লাহ তালা যেখানে বলেছেন আমি সার্বিক ভাবে রহমত বর্ষণ করব তা অত্যাধিক আশাব্যঞ্জনার কারণ হতে পারে।

) ع َسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا(

খুবই সন্নিকটে আল্লাহ তালা তোমাকে মাকামে মাহমুদে (শাফাআতকারীর পদে) অধিষ্টিত করবেন।35

এই আয়াতে ও স্পষ্টভাবে শাফাআতের কথা বলা হয়নি বরং তার ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। অসংখ্য রেওআত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে উক্ত আয়াতেরمَقَامًا مَّحْمُودًا দ্বারা ঠিক শাফাআতের কথাই বুঝানো হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সেটা এমন পদ যার বদৌলতে আমার উম্মতকে শাফাআত করতে পারব।36

প্রসিদ্ধ মোফাসসেরর ফখরুদ্দীন রাযী এ প্রসঙ্গে বলেন , এ আয়াত থেকে ক্ষমা পাওয়ার উসিলা হল তার শাফাআত। তিনি বলেন উক্ত আয়াত শাফাআত সম্পর্কে স্পষ্ট ও শক্তিশালী ইঙ্গিত প্রদান করে।37

অন্য এক মোফাসসের বেইজাভী বলেন , প্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত হল মাকামে মাহামুদ হল সেই মাকামে শাফাআত। কারণ আবু হুরায়রা হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছ থেকে রেওআয়াত করেছেন যে , মাকামে মাহমুদ সেই পদ যার বদৌলতে আমি আমার উম্মতকে শাফাআত করতে পারবো। হাদীসে বলা হয়েছে যে , সেদিন মানুষ লাইন ধরে দাড়িযে তাঁর (রাসূলের) প্রশংসা করবেন। এটাও শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে। এবং তা শাফাআত ব্যতীত অন্য কিছু হতে পারে না।38

শেখ তাবারসি লিখেছেন: মাকামে মাহামুদ এর ব্যাপারে সমস্ত মোফাসসেরগণ এজমা করেছেন। উপরোক্ত আয়াত সমূহ পর্যালোচনার পর আমরা যে উপসংহারে পৌছতে পারি:

1। কোরআনের আয়াত সমূহ শাফাআতের ঘোষণা প্রদান করে কিন্তু মূল শাফাআতকারী স্বয়ং আল্লাহ তালা নিজে তবে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে অন্যরাও শাফাআতের ক্ষমতা পাবেন।

2। কোরআনের আয়াত শাফাআতের স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে কিন্তু শাফাআতকারী ও শাফাআতের অধিকারী কারা হবেন সে সম্পর্কে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেনি।

হাদীসের আলোকে শাফাআত:

শাফাআত সম্পর্কিত আরেক প্রকার দলিল হল , পবিত্র ইমাম (আঃ) দের কাছ থেকে প্রাপ্ত হাদীস সমূহ শাফাআতের স্পষ্ট দিক নির্দেশনার মূল এরূপ হাদীসের সংখ্যা এত বেশি যে তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেছে।39

আল্লামা তাবাতাবাঈ এ সম্পর্কে বলেন , কেয়ামত দিবসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআতের অধিকার সম্পর্কিত যে সকল হাদীস (শিয়া ও সুন্নীদের হাদীস গ্রন্থ সমূহে) বর্ণিত হয়েছে সব মিলে তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেছে।

মোফাসসিরে কোরআন ফখরুদ্দীন রাযী লিখেছেন:

শাফাআত সম্পর্কিত হাদীস সমূহ যদিও এক এক জন ব্যক্তির দ্বারা বর্ণিত হয়েছে তথাপি তাদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং সেগুলোর মধ্যে মোটামুটি একই বিষয় (শাফাআত) বর্ণিত হয়েছে। অতএব সেগুলো একই বিষয়ের বর্ণনা দেয়। তাই সেগু্লোকে রেওআয়াতে মোতাওয়াতের বলা যাবে । অতএব উক্ত হাদীস সমূহ অবশ্যই হুজ্জাত (দলিল ও প্রমাণ)40

মোতাজিলা সম্প্রদায়ের আপত্তি

মোতাজিলা সম্প্রদায় উপরে বর্ণিত হাদীসের উপর আপত্তি পেশ করেছে তাদের দলিল নিম্নরূপ:

1। উক্ত হাদীস গুলো এতই দীর্ঘতম যে সত্যিকার ভাবে তা সংরক্ষণ করে এপর্যন্ত পৌছানো সম্ভব নয়। সম্ভবত রাবী উক্ত হাদীস সমূহ নিজের ইচ্ছা মত বর্ণনা করেছে। তাই সেগুলো সত্যিকার হাদীস নয়।

2। শাফাআত সকলের সম্মতিক্রমের ঘটনা কিন্তু বর্ণিত হাদীস সমূহ বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণিত হয়েছে।

3। বর্ণিত হাদীস গুলো কোরআনের আয়াতের সাথে বিরোধপূর্ণ ।

4। একক খবর যদি নিশ্চিত ফলাফল না দেয় তাহলে গ্রহন যোগ্যতা রাখেনা।

5। শাফাআত একটা গুরুতপূর্ণ ঘটনা এবং এটার উদ্দেশ্যওে অত্যধিক গুরুতপূর্ণ , অতএব যদি রেওআয়াত সঠিক হতে হয় তাহলে অবশ্যই তা তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছতে হবে। কিন্তু উক্ত হাদীস সে পর্যায়ে পৌছেনি তাই তা নির্ভুল হতে পারেনা।

মোতাজিলা সম্প্রদায়ে আপত্তি সমূহের জবাব:

চারটি পর্যায়ে তাদের আপত্তি সমূহের জবাব দেয়া যেতে পারে।

1। যদিও উক্ত রেওয়ায়াত সমূহ একক খবর হিসেবে এসেছে কিন্তু তাদের সংখ্যা অগণিত।

2। উক্ত রেওয়ায়াত সমূহের মধ্যে একটা নিখূত সম্পর্ক বিদ্যমান।

3। অতএব উক্ত রেওআয়াত সমূহ তাওয়াতুরের পর্যায়ে পরিগণিত।

4। আর যে রেওয়ায়াত তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছে হুজ্জাত ও দলিল হিসেবে উপযুক্ত ।

অধিকন্তু উক্ত রেওয়ায়াত সমূহ পবিত্র কোরআনের আয়াত সমূহের সাথে কোন বিরোধ নেই বরং কোরআনের আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ , তাদের অন্যান্য আপত্তি সমূহ যুক্তিযুক্ত নয় বলে জবাব দেয়ার প্রয়াজন মনে করছিনা।

এজমার দৃষ্টিতে শাফাআত

শিয়া ও সুন্নী সর্বপ্রকার আলেমদের ঐক্যবদ্ধ এজমার দ্বারাও শাফাআত স্বীকৃত হয়েছে। বড় বড় তিন জন আলেমের স্বীকৃতি এখানে উল্লেখ করব।

1। খাজা নাসিরউদ্দীন তুসী:

শাফাআতের জন্য আলেমগণ এজমা করেছেন। 41

2। আল্লামা হিল্লি :

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআত করার ব্যাপারে আলেমগণ ঐক্যবদ্ধ মত দিয়েছেন। 42

3। শেখ তাবারসী:

মোফাসসেরগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য যে , মাকামে মাহামুদ অর্থাৎ মাকামে শাফাআত। 43

পরিশেষে যে বিষয়টি উল্লেখ করব তা হল গোত্র , বর্ণ নির্বিশেষে সকল মাযহাবের অনুসারী মুসলমানগণ শাফাআতের মূল বিষযের ব্যাপারে একমত । মোতাজিলা সম্প্রদায়ও শাফাআতকে স্বীকার করে বলে থাকেন: শাফাআত একটি উচ্চ মর্যাদাশীল পদ । ওহাবী সম্প্রদায ও শাফাআতকে স্বীকার করে থাকে , তবে তাদের বিশ্বাস হল শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই শাফাআতের প্রার্থনা করতে হবে । আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাপাআতের প্রার্থনা করা শিরকের তুল্য ।


3

4

5

6

7

8