শাফাআত

শাফাআত0%

শাফাআত লেখক:
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শাফাআত

লেখক: উস্তাদ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ কাজাভী
: মোঃ সামিউল হক
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 13480
ডাউনলোড: 2950

শাফাআত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13480 / ডাউনলোড: 2950
সাইজ সাইজ সাইজ
শাফাআত

শাফাআত

লেখক:
প্রকাশক: খেদমতে ইসলামী সংস্থা, কোম, ইরান
বাংলা

যে বইটি বর্তমানে আপনাদের হাতে আছে তা একজন তাকওয়া সম্পন্ন বিশিষ্ট লেখকের সুদীর্ঘ কষ্টের ফসল। যা তিনি বিবেক সম্মত দলিল ও যুক্তি দিয়ে লিখেছেন। এই বইটি ব্যবহারের মাধ্যমে সত্যের পথ খুজে পাওয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে। তবে এই বইতে যে সকল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি উচ্চমানের এবং অধিক গ্রহণযোগ্য। সর্বোপরি এই বইতে উল্লেখিত প্রতিটি দলিলই হচ্ছে বিবেক সম্মত এবং যা কিছু তার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে তাতে আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনেরও সহানুভতি থাকে।

শাফাআত পাওয়ার শর্তাবলী

ধর্মের আলোকে শাফাআত প্রার্থীদের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক যার ফলে তাদের প্রতি শাফাআত প্রযোজ্য হবে । এ পর্যায়ে আমরা যে সব শর্তাবলীর প্রতি ইশারা করব ।

প্রথমত:শাফাআত প্রার্থীগনকে ইমানদার হতে হবে

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আমার শাফাআত যে ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যারা তাদের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোন শিরক করেনি ।120

এই হাদীস মোতাবেক মুশরিক ও কাফেরদের জন্য শাফাআত প্রযোজ্য হবেনা । কোরআনের আয়াত এই বিষয়কে সত্যায়ন করে ।

) ف ِي جَنَّاتٍ يَتَسَاءَلُونَ ﴿٤٠﴾ عَنِ الْمُجْرِمِينَ ﴿٤١﴾ مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ ﴿٤٢﴾ قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ ﴿٤٣﴾ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ ﴿٤٤﴾ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ ﴿٤٥﴾ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ ﴿٤٦﴾ حَتَّىٰ أَتَانَا الْيَقِينُ ﴿٤٧﴾ فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ ﴾

বেহেশত বাসীরা দোজখ বাসীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বলবে তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিপতিত করেছে ? তারা বলবে আমরা নামাজ পড়তামনা , অভাব গ্রস্থকে আহার্য দিতামনা , আমরা ভ্রান্ত লোকদের সাথে সমালোচনা করতাম। আমরা সেই দিনকে (কেয়ামতের দিনকে) অস্বীকার করতাম। আর এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের মৃত্যু হয়। অতএব শাফাআত কারীদের শাফাআত তাদের জন্য কোন উপকারে আসবেনা।121

﴿ وَجُنُودُ إِبْلِيسَ أَجْمَعُونَ ﴿٩٥﴾ قَالُوا وَهُمْ فِيهَا يَخْتَصِمُونَ ﴿٩٦﴾ تَاللَّـهِ إِن كُنَّا لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ﴿٩٧﴾ إِذْ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿٩٨﴾ وَمَا أَضَلَّنَا إِلَّا الْمُجْرِمُونَ ﴿٩٩﴾ فَمَا لَنَا مِن شَافِعِينَ ﴿١٠٠﴾ وَلَا صَدِيقٍ حَمِيمٍ

ইবলিশের দলভূক্ত সকলেই যখন কথা কাটাকাটি করতে থাকবে তখন বলবে ,আল্লাহর কসম আমরা স্পষ্ট গোমরাহিতে লিপ্ত ছিলাম , কারন আমরা তোমাদেরকে বিশ্ব পালনকর্তার সমতূল্য মনে করতাম । আমাদের দুস্কৃদকারীরাই গোমরাহ করেছিল ,অতএব আমাদের কোন শাফাআতকারী নেই এবং কোন সহৃদয় বন্ধু ও নেই ।122

দ্বিতীয়ত: রাসূলের খান্দানের দুশমন ছিলনা

অন্য একটি বৈশিষ্ট যা শাফাআত প্রার্থীদের জন্য থাকা প্রয়োজন তা হল শাফাআতকারীরা তাদের জীবনে রাসূলের আহলে বাইতের সাথে কোন রকম দুশমনি করেনি ।এ সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।

এরূপ একটি হাদীস লক্ষ্যে করুন :

মুমিনগন তাদের বন্ধুদের জন্য শাফাআত করবেন তবে তারা আহলে বাইতের দুশমন ছিলনা (কারন আহলে বাইতের দুশমন শাফাআত পাবেনা)এবং যদি তারা নাসেবী (যারা পবিতও ইমামদের দুশমন) হয় তাহলে যদি সকল নবী রাসূল ও ফেরেশতাগন ও তাদের জন্য শাফাআত করে তবুও কবুল হবেনা ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন ,

যদি সমস্ত ও আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসূলগন নাসেবী( যারা পবিত্র ইমামের দুশমন)দের জন্য শাফাআত করে তবুও তা কবুল করা হবেনা । 123

তৃতীয়ত : নবীর সন্তানদের কোন রকম কষ্ট দেয়নি ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , যখন আমি এই মাকামে মাহমুদে অধিষ্টিত হব তখন আমার উম্মতের জন্য শাফাআত করব এবং তা কবুল করা হবে । আল্লাহর কসম যারা আমার বংশের লোকজনদেরকে কষ্ট দিয়েছে তাদের জন্য শাফাআত করবনা ।124

আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , ওহে হুসাইন , অতি শিঘ্রই তোমাকে এমন অবস্থায় দেখব যে তোমার রক্ত টগবগিয়ে গড়াতে থাকবে , আমার জালিম উম্মতগন তোমার শিরচ্ছেদ করবে তুমি তৃষ্ণার্ত থাকবে কিন্তু তোমাকে তারা পানি দিবেনা । এত কিছুর পরে ও আমার শাফাআতের আশা পোষন করবে! আল্লাহ তালা তাদের কপালে আমার শাফাআত রাখেনি ।125

চতুর্থ : নামাজের প্রতি অবহেলা করেনি

ইমাম সাদিক (আ.) মৃত্যুর সময় সংক্ষিপ্ত ভাবে বলেন , যে নামাজের প্রতি অবহেলা করবে তারা আমাদের শাফাআত পাবেনা ।126

পঞ্চমত: নবী রাসূলদের শাফাআতকে অস্বীকার করেনি ।

ইমাম আলী (আ.)বলেন ,

যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর শাফাআত কে অস্বীকার করবে সে তার শাফাআত পাবেনা ।127

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , যে কেউ আমার শাফাআতের প্রতি অবিশ্বাস করবে তার ভাগ্যে আমার শাফাআত জুটবেনা ।128

ষষ্ঠত : প্রতারক ও ধোকাবাজ নয় ।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,

যে কেউ আমার সাথে খেয়ানত করবে সে আমার শাফাআত থেকে কোনরূপ ফলভোগ করবেনা ।129

বিশেষ পয়েন্ট : এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে , দ্বীনি ভাইদের সাথে খেয়ানত করলে তা শাফাআতের জন্য বাঁধা হয়ে দাড়ায় , এবং উল্লেখিত হাদীসে ব্যবহৃত আরব শব্দটি তারই উদাহরন হিসেবে পেশ করা হয়েছে ।

সপ্তমত : মদখোর নয় ।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আল্লাহর কসম যারা মদখোর তাদের জন্য আমার শাফাআত থাকবেনা এবং তারা আমার হাউজের ( হাউজে কাউসার) কাছে আসতে পারবেনা । 130

অষ্টমত : জেনাকারী নয় ।

ইবনে শাবল হতে বর্ণিত হয়েছে যে , ইমাম সাদিক (আ.) এর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম এক মুসলমান ব্যক্তি তার চাকরানীর সাথে খেয়ানত করেছে , কিভাবে সেই পাপের শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে পারে ?

ইমাম বললেন , অবশ্যই সেই চাকরানীর মালিকের কাছ থেকে অনুমোদন চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে সে অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে । জিজ্ঞেস করলাম , যদি সে সম্মতি না দেয় , কি হবে ? ইমাম বললেন , নিরুপায় হয়ে জেনাকারী অবস্থায় আল্লাহর সামনে সাক্ষাত করবে ।

বললাম তাহলে অবশেষে জাহান্নামে যাবে!

বললাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামও আমাদের শাফাআতের মাধ্যমে তোমরা মুক্তি পাবে তবে কি তোমরা পূনরায় পাপে লিপ্ত হবে ?131

আল্লাহর কসম , আমাদের এরূপ গুনাহগার ব্যক্তির জন্য পৌঁছাবেনা যতক্ষন সে আজাব ভোগ না করবে এবং দোযখের ভয়াবহতা না দেখবে ।132

একটি প্রশ্ন :

এমন কিছু হাদীস আছে যে ,স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যারা বিন্দু পরিমান ঈমানের অধিকারী হবে তারা ও শাফাআতের অধিকারী হবে ,যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামবলেন ,

শাফাআতকারীগন শাফাআত করবে যারা অন্তত পক্ষে তাদের অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান পোষন করবে । 133

এখন প্রশ্ন হল : এই হাদীসটি পূর্বোক্ত হাদীসের সাথে কিভাবে সামনজস্য রাখে ?

জবাব : কাফের , মুশরিক এবং যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামদের সাথে দুশমনি করে তারা চিরদিনই জাহান্নামে থাকবে ,কারন তারা শাফাআতের উপযোগী নয় । কিন্তু এসব ব্যক্তি ব্যতিত অন্যান্য পাপী ব্যক্তিরা কিছুকাল আজাব ভোগ করার পর সম্ভাবনা রয়েছে শাফাআত পাবে ঠিক যেমন ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন , জেনাকারীরা দোযখের ভয়াবহতা অনুধাবন এবং শাস্তি ভোগ করার পর শাফাআত পাবে যদি তাদের অন্তরে ঈমান থাকে এবং তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবেনা এ থেকে বোঝা যায় যে , উক্ত হাদীস দুটির মাঝে কোন বিরোধ নেই । উক্ত ব্যক্তিরা (ঈমানদার অথচ পাপী) কিছুকাল দোযখের শাস্তি ভোগ করলে ও অবশেষে শাফাআতের মাধ্যমে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি পাবে । ঠিক যেমন ইমাম রেজা বলেছেন , একত্ববাদী গুনাহগার ব্যক্তিরা অনন্ততাল জাহান্নামে থাকবেনা , সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে এবং শাফাআত পাবে ।134

ঠিক একই ভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যারা অন্ততপক্ষে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে এবং বিন্দুমাত্র ঈমান পোষন করবে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি পাবে ।135

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যেতে পারে যে , পারিভার্ষিক অর্থে শাফাআত শুধুমাত্র সেসব ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য হতে পারে যারা শাফাআতের যোগ্য ।

একইভাবে শাফাআতের স্থান সম্পর্কে বলা যেতে পারে যে ,কেয়ামতের দিন দোযখে প্রবেশের পর অর্থাৎ এমন সম্ভাবনা আছে যে ,শাফাআতের যোগ্য কিছু কিছু ব্যক্তি প্রথমে জাহান্নামের ভয়াবহতা অনুধাবন ও আজাব ভোগ করার পর (এমনকি তা দীর্ঘকাল ধরে ও হতে পারে) শাফাআত পেতে পারে ।

এখন এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করব ,যেগুলো শাফাআতকে ত্বরান্বিত করে ও ফলে কিছু কিছু লোকের ভাগ্যে বেহেশত নাছিব হয় ।

1 । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধর সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা ও সহযোগীতা

হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন আমি কেয়ামতের দিন চার প্রকার ব্যক্তিদেরকে শাফাআত করব ।

(1) যে ব্যক্তি. আমাদের সন্তানদেরকে ভালবাসবে ।

(2) যে ব্যক্তি তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরন করবে ।

(3) যে ব্যক্তি তাদের কোন কাজ করার সময় নিজের অসহায় অবস্থা সত্বেও চেষ্টা করে থাকে তা পালন করার জন্য ।

(4) যে ব্যক্তি তার ভাষা ও অন্তর দ্বারা তাদেরকে ভালবাসে ।136

2 । যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরুদ পড়ে ।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন , যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরুদ পড়ে ও বলে যে হে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন তোমার সান্নিধ্য দান কর । তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যায় ।137

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট : উপরোক্ত হাদীস দুটিতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কিছু কিছু ব্যক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করেন যে ,শাফাআত করা হবে । তবে এমন নয় যে , সে ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে তিনি শাফাআত করবেন না । বরং উপরোক্ত হাদীস থেকে বোঝা যায় যে , সেদিন তিনি উল্লেখিত ব্যক্তিদের সবার আগে শাফাআত করবেন যাতে তারা দোযখের আযাব থেকে অতি শীঘ্র নাযাত পায় ।

সপ্তম অধ্যায়

শাফাআত ও ওহাবী সম্প্রদায়ের ধারনা

শাফাআত সম্পর্কে ওহাবী সম্প্রদায়ের ধারনা সমূহের মূল

ওহাবীদের ধারনা মতে যারা নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য নবী রাসূল , অলি আউলিয়া ও ফেরেশতাদের অসিরা ধরে শাফাআত কামনা করে , তাদের এই কাজকে শিরক বলে মনে করে এবং বিশ্বাস পোষন করে থাকে যে , মুষলমানরা এভাবে নবী রাসূল , অলি আউলিয়া ও ফেরেশতাদের এবাদত করে থাকে । আর এ কারনেই মুহাম্মদ ইবনে তাই মিয়া138 আব্দুল ওহাব আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফাআত কামনা করাকে জায়েজ মনে করে না এবং নিজস্ব এ ধারনাকে প্রমান করার জন্য দলিল প্রমানাদি ও পেশ করেছে । সত্য ও সঠিক বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমান করার জন্য আমরা সর্ব প্রথম তাদের দলিলাদি পেশ করব এবং অত:পর তার জবাব দেব ।

প্রথম আপত্তি

ওহাবীরা বলে থাকে নবী রাসূল ও অলি আওলিয়াদের কাছে শাফাআতের আবেদন করা শিরক । মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব বলেন , একাজ (আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে আবেদন করা) এক প্রকার শেরকী এবাদত এবং যে ব্যক্তি এমন কথা বলে (আম্বিয়াদের কাছে শাফাআতের আবেদন করে) । 139

জবাব:

একত্ববাদী ও মুশরিক ধারনা নির্ভর করে মানুষের আন্তরিক বিশ্বাস ও কর্ম তৎপরতার উপর ,অর্থাৎযদি তারা বিশ্বাস করে থাকে যে ,শাফাআতকারীগন আল্লাহর সমতুল্য এবং সে ব্যক্তি মুশরিক

কিন্তু ইমামিয়া গোত্রসহ সকল মুসলিম সম্প্রদায় শাফাআতকারীগনকে (নবী রাসূল ও অলি আওলিয়াদেরকে) আল্লাহর খাঁটি বান্দা বলে মনে করেন । অতএব এ বিশ্বাস মতে তাদের কাছে শাফাআতের আবেদন করা কোন মতেই শিরকের সমতুল্য নয় ।

দ্বিতীয় আপত্তি:

ওহাবীরা বলে থাকে যে ,নবী রাসূলদের কাছে শাফাআতের প্রার্থনা করা মূর্তি পূজার শামিল । মূর্তি পূজা কারীগন ও তাদের মূর্তির কাছে শাফাআত কামনা করে । বড় একজন ওহাবী আলেম সানআনী বলেন, “ মুশরিকদের ইবাদতের একটি উদাহরন হল মূর্তি পূজা । তাদের এমন ধারনা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্যদের কাছে শাফাআতের আবেদন করা)আল্লাহর কাছে নবী রাসুলদের এবাদতের সমতুল্য ।

জবাব

জনাব সানসানী মুসলিমদের বিশ্বাস ও মুশরিকদের বিশ্বাস এর মাঝে যে কিয়াস করেছে তা সঠিক নয় । কারন মূর্তি পূজারীদের আকিদা বিশ্বাসমতে মূর্তিরা আল্লাহর সমতূল্য অথবা আল্লাহর কিছু কিছু কাজ যেমন শাফাআত ও মাগফেরাত তাদের কাছে অর্পিত হয়েছে । কিন্তু এটা স্পষ্ট যে মূর্তিদের কোন ক্ষমতা নেই যার বলে তারা শাফাআত করবে কারন যে সব পাথর , কাঠ ও মাটির দ্বারা স্বহস্তে মুশরিকরা সেই মূর্তি ও প্রতিমা তৈরী করে থাকে তা সবই স্বয়ং আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি , এবং এসবকে শাফাআত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি । যারা তাদের পূজা করে মূলত আল্লাহর ইবাদত থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে । কিন্তু আল্লাহর অলি আওলিয়া ও নবী রাসূলদের কাছে শাফাআতের আবেদন করার কারন হল তারা আল্লাহ তাআলার খাঁটি বান্দা ,তারা আল্লাহর সান্নিধ্যে লাভ করেছে এবং আল্লাহ তাআলাই তাদের শাফাআত করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন । এই ক্ষমতা আল্লাহরই দান এবং এমন কাজের দ্বারা আল্লাহর ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হয়না (বরং শাফাআত প্রার্থীগন আল্লাহর ইবাদতে অত্যধিক মনোযেগী হয় ।)140

তৃতীয় আপত্তি:

ওহাবীরা বিশ্বাস করে যে , একমাত্র আল্লাহর কাছে শাফাআতের আবেদন করতে হবে তার সৃষ্টির কাছে নয় । মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব এ ব্যপারে বলেন , সব ধরনের শাফাআত একমাত্র আল্লাহর অধিকার , অতএব তাঁর কাছে শাফাআতের আবেদন কর । তাই আমি (শাফাআতের আবেদনের প্রেক্ষিতে) বলে থাকি যে , হে আল্লাহ তাঁর (নবীর) শাফাআত থেকে আমাকে বঞ্চিত করনা । তাকে আমার জন্য শাফাআতকারী নিয়োজিত কর । এরূপ অন্যান্য বাক্য সমূহ।141

অত:পর তিনি নিজের ধারনাকে প্রমান করার জন্য নিম্নোক্ত আয়াতটি যুক্তি হিসেবে পেশ করেন ,

) أ َمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّـهِ شُفَعَاءَ ۚ قُلْ أَوَلَوْ كَانُوا لَا يَمْلِكُونَ شَيْئًا وَلَا يَعْقِلُونَ ﴿٤٣﴾ قُل لِّلَّـهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا ۖ لَّهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ(

তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে শাফাআত কারী বানিয়েছে ? তাদেরকে বল. সকল শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই জন্য । দুনিয়া ও আখেরাতের সকল রাজত্ব একমাত্র তারই। অতঃপর সকলে তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।142

জবাব:

কোন আলেম ও মোফাসসেররই উক্ত আয়াতের (তাফসীর প্রসঙ্গে তার মত) এমন মত ব্যক্ত করেননি। আল্লামা তাবারসি উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে মুজাহিদ এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে , উক্ত আয়াতেরلله الشفاعة جمیعاً অংশের অর্থ হল , কোন ব্যক্তিই আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত শাফাআত করবেনা। আল্লামা জামাখশারি বলেন ,لله الشفاعة جمیعاً অর্থ হল আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত এবংدون اللهمن এর অর্থ হল আল্লাহ শাফাআতের মালিক এবং কেহই শাফাআত করার ক্ষমতা পাবেনা যদিনা নিম্নলিখিত 2টি শর্ত না থাকে।

1 । তার জন্য শাফাআত করবে যার উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবে।

2। শাফাআতকারীকে আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

আমাদের মতে উক্ত আয়াতটি তাদের বিরুদ্ধে যারা তাদের নিজেদের হাতে গড়া কাঠ , পাথর ও মাটির মূর্তির কাছে শাফাআত কামনা করে। কারণ মূর্তিদের কোন শক্তি নেই শাফাআত করার। আয়াতেরلله الشفاعة جمیعاً অংশের অর্থ হল , শাফাআত করার ক্ষমতা মূলত আল্লাহ তালার হাতে এবং তিনি ছাড়া অন্য যারা শাফাআত করবে তার অনুমতি সাপেক্ষে তা করবে এবং আল্লাহ তালাই তাদেরকে সে ক্ষমতা প্রদান করবেন আর এরূপ মালিকত্ব বা ক্ষমতা আল্লাহর সমপর্যায়ে (পাশাপাশি) নয় বরং তার নিম্ন পর্যায়ে ।

চতুর্থ আপত্তি:

ওহাবীরা বলে থাকে , দুনিয়াতে কাহারো কাছে শাফাআত পাথ না করা জায়েয নয়। তারা শেখ রাকাব আল মাগরিবের কাছে লিখিত এক পত্রে লিখেছে , শাফাআত করা অযৌক্তিক নয় তবে দুনিয়াতে শাফাআতের প্রার্থনা করোনা তবে করতে পার একমাত্র আল্লাহর কাছে (অন্য কারো কাছে নয়) এবং নবী রাসূল ও অলি আউলিয়াদের মৃত্যুর পর তাদের কাছে শাফাআতের প্রার্থনা করা শিরক।143

জবাব:

শাফাআত করা এক ধরনের দোয়া। এ কথাকে নিজামউদ্দীন নিশাপুরী স্বীকার করেছেন। তিনি নিম্নলিখিত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন ,من یشقع شفاعة حسنة یکن نصیب منها যে ব্যক্তি শাফাআতে হাসানার উসিলা ধরবে সে তার ফল ভোগ করবে।

আল্লাহর কাছে শাফাআত করা ঠিক একপ্রকার দোয়া অতএব যদি দুনিয়াতে শাফাআত করা হয় (যেহেতু তা এক প্রকার দোয়া) কোন অসুবিধা নেই বরং তা আল্লাহর জন্য একটি পছন্দনীয় কাজ।144 কোরআনের আয়াত ও পবিত্র ইমামদের থেকে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া সম্বলিত হাদীস থেকে বোঝা যায় যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় অথবা তার মৃত্যুর পরে তার কাছে শাফাআত প্রার্থনা করা হয়েছে। আর তাই এটা একটা সুন্নতে পরিনত হয়েছে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় আনাস ইবনে মালেক তার কাছে শাফাআতের আবেদন করেছেন । আনাস ইবনে মালেক এ প্রসঙ্গে বলেন , হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আবেদন করেছিলাম যে , কেয়ামতের দিন আমার জন্য শাফাআত করুন তিঁনি বললেন , ঠিক আছে করব। জিজ্ঞেস করলাম: আপনাকে তখন কোথায় পাব ? বললেন পুল সিরাতের পাশে ।145

সাওয়াদ ইবনে কারেব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে একটি সেখানে পরেন , তিনি রাসূলের জীবদ্দশায় এবং তারই কাছে শাফাআতের আবেদন করেন।146

আব্দুল্লাহ রাওয়াহেও রাসুলের কাছে অনুরূপ আরেকটি কবিতা বলেন , তিনিও এই কবিতার মাধ্যমে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) কাছে শাফাআতের আবেদন করেন।147

উপরোক্ত কবিতা সমূহ যেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মখে পেশ করা হয়েছিল তা থেকে বুঝা যায় যে , যদি দুনিয়াতে শাফাআতের আবেদন করা জায়েয না হতো তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম একাজ কে নিষেধ করতেন।

পঞ্চম আপত্তি :

ওহাবীরা বিশ্বাস করে যে , মৃত্যুর পরে শাফাআত প্রার্থনা করাও শিরক। শেখ রাগাব আল মাগবেবিকে লেখা অপর এক পত্রে তারা লিখেছিল:

নবী রাসূলদের পর তাদের কাছে শাফাআত প্রার্থনা করা শিরক।148

জবাব:

নবী রাসূল ও অলি আউলিয়াদের মৃত্যুর পরে তাদের কাছে শাফাআত প্রার্থনা করা জায়েয সংক্রান্ত যথেষ্ট দোয়া রয়েছে সেগুলোর কয়েকটি নমূনা উল্লেখ করব।

মুয়াবিয়া ইবনে আম্মর ইমাম সাদিক (আঃ) এর কাছ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন , উক্ত হাদীসে বলা হয় যে , ইমাম তার এক সাহাবিকে বলেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের কাছে গিয়ে তাঁর উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে আবেদন কর যাতে তোমার গুনাহ খাতা মাফ করা হয়। সুন্নীদের কাছ থেকে বর্ণিত যিয়ারত যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের পাশে পড়া হয় তার বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লামা আমিনি নাবলালী হানাফী ফিল মারাকি এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন:

এই যিয়ারত থেকে বুঝা যায় যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পরও তাঁর কাছে শাফাআতের আবেদন করা হয়।149

অতএব নবী রাসূলদের মৃত্যুর পরও তাদের কাছে ওহাবীদের বিশ্বাসমতে শাফাআত প্রার্থনা করা

জায়েয। যদিও ধরে নেই যে , নবী রাসূলদের মৃত্যুর পরে শাফাআত প্রার্থনা করা জায়েয নয় কিন্তু এমন কাজকে শিরক বলে গন্য করার কোন যুক্তিকতা নেই। তারা সর্বোচ্চ যে দাবীটি করতে পারে তা হলো যে , নবী রাসূলদের মৃত্যুর পর তাদের কাছে শাফাআতের আবেদন করা অযৌক্তিক ।