খোৎবা -
১
يَذْكُرُ فِيهَا أبْتِدأ خَلْقِ ألسَّمأ وَ الاَرْضِ وَ خَلْقِ آدَمَ
عليهالسلام
الْحَمْدُ لِلَّه الَّذِي لَا يَبْلُغُ مِدْحَتَه الْقَائِلُونَ، ولَا يُحْصِي نَعْمَاءَه الْعَادُّونَ، ولَا يُؤَدِّي حَقَّه الْمُجْتَهِدُونَ، الَّذِي لَا يُدْرِكُه بُعْدُ الْهِمَمِ، ولَا يَنَالُه غَوْصُ الْفِطَنِ، الَّذِي لَيْسَ لِصِفَتِه حَدٌّ مَحْدُودٌ، ولَا نَعْتٌ مَوْجُودٌ ولَا وَقْتٌ مَعْدُودٌ، ولَا أَجَلٌ مَمْدُودٌ، فَطَرَ الْخَلَائِقَ بِقُدْرَتِه، ونَشَرَ الرِّيَاحَ بِرَحْمَتِه، ووَتَّدَ بِالصُّخُورِ مَيَدَانَ أَرْضِه.
أَوَّلُ الدِّينِ مَعْرِفَتُه وكَمَالُ مَعْرِفَتِه التَّصْدِيقُ بِه، وكَمَالُ التَّصْدِيقِ بِه تَوْحِيدُه، وكَمَالُ تَوْحِيدِه الإِخْلَاصُ لَه، وكَمَالُ الإِخْلَاصِ لَه نَفْيُ الصِّفَاتِ عَنْه، لِشَهَادَةِ كُلِّ صِفَةٍ أَنَّهَا غَيْرُ الْمَوْصُوفِ، وشَهَادَةِ كُلِّ مَوْصُوفٍ أَنَّه غَيْرُ الصِّفَةِ، فَمَنْ وَصَفَ اللَّه سُبْحَانَه فَقَدْ قَرَنَه، ومَنْ قَرَنَه فَقَدْ ثَنَّاه ومَنْ ثَنَّاه فَقَدْ جَزَّأَه، ومَنْ جَزَّأَه فَقَدْ جَهِلَه ومَنْ جَهِلَه فَقَدْ أَشَارَ إِلَيْه، ومَنْ أَشَارَ إِلَيْه فَقَدْ حَدَّه ومَنْ حَدَّه فَقَدْ عَدَّه، ومَنْ قَالَ فِيمَ فَقَدْ ضَمَّنَه، ومَنْ قَالَ عَلَا مَ فَقَدْ أَخْلَى مِنْه: كَائِنٌ لَا عَنْ حَدَثٍ مَوْجُودٌ لَا عَنْ عَدَمٍ، مَعَ كُلِّ شَيْءٍ لَا بِمُقَارَنَةٍ وغَيْرُ كُلِّ شَيْءٍ لَا بِمُزَايَلَةٍ ، فَاعِلٌ لَا بِمَعْنَى الْحَرَكَاتِ والآلَةِ، بَصِيرٌ إِذْ لَا مَنْظُورَ إِلَيْه مِنْ خَلْقِه، مُتَوَحِّدٌ إِذْ لَا سَكَنَ يَسْتَأْنِسُ بِه ولَا يَسْتَوْحِشُ لِفَقْدِه.
আকাশ , পৃথিবী
ও
আদম
সৃষ্টি
সম্পর্কে
প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর। তাঁর গুণরাজী কোন বর্ণনাকারী বর্ণনা করে শেষ করতে পারে না। তার নেয়ামতসমূহ গণনাকারীগণ গুনে শেষ করতে পারে না। প্রচেষ্টাকারীগণ তাঁর নেয়ামতের হক আদায় করতে পারে না। আমাদের সমুদয় প্রচেষ্টা ও জ্ঞান দ্বারা তাঁর পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করা সম্ভব নয় এবং আমাদের সমগ্র বোধশক্তি দ্বারা তার মাহাত্ম্য অনুভব করা সম্ভব নয়। তাঁর সিফাত বর্ণনার কোন পরিসীমা নির্ধারিত নেই এবং সেজন্য কোন লেখা বা বক্তব্য ,কোন সময় বা স্থিতিকাল নির্দিষ্ট করা হয়নি । তিনি নিজ কুদরতে সৃষ্টিকে অস্তিত্বশীল করেছেন ,আপন করুণায় বাতাসকে প্রবাহিত করেছেন এবং শিলাময় পাহাড় দ্বারা কম্পমান পৃথিবীকে সুদৃঢ় করেছেন।
আল্লাহর মা‘
রেফাতেই দ্বীনের ভিত্তি”
। এ মা‘
রেফাতের পরিপূর্ণতা আসে তাকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ায় ; সাক্ষ্যের পরিপূর্ণত হয় তাঁর ঐকল্যের বিশ্বাসে ; বিশ্বাসের পরিপূর্ণত হয় তাঁকে পরম পবিত্ররূপে নিরীক্ষণ করার জন্য আমল করায় ; আমলের পরিপূর্ণতা অর্জিত হয় তাঁর প্রতি কোন সিফাত ( গুণ ) আরোপ না করায়। কারণ কোন কিছুতে গুণ আরোপিত হলে এটাই প্রমাণিত হয় যে ,আরোপিত বিষয় থেকে গুণ পৃথক এবং যার ওপর গুণ আরোপিত হয় সে নিজে সেই গুণ থেকে পৃথক। যারা আল্লাহতে সত্তা বহির্ভূত কোন সিফাত বা গুণ আরোপ করে তারা তাঁর সদৃশতার স্বীকৃতি দেয় ; যারা তাঁর সদৃশতা স্বীকার করে তারা দ্বৈতবাদের স্বীকৃতি দেয় ; যারা তাঁর দ্বৈতের স্বীকৃতি দেয় তারা তাঁকে খণ্ডভাবে দেখে ; যারা তাকে খণ্ডভাবে দেখে তারা তাঁকে ভুল বুঝে ; যারা তাঁকে ভুল বুঝে তারা তাঁকে চিনতে অক্ষম ; যারা তাকে চিনতে অক্ষম তারা তার ত্রুটি স্বীকার করে ; যারা তার ত্রুটি স্বীকার করে তারা তাকে সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ করে।
যদি কেউ বলে তিনি কি ,সে জেনে রাখুক ,তিনি সবকিছু ধারণ করে আছেন ; এবং যদি কেউ বলে তিনি কিসের ওপর আছেন ,সে জেনে নাও ,তিনি নির্দিষ্ট কোন কিছুর ওপর নেই। যদি কেউ তাঁর অবস্থিতি নির্দিষ্ট কোন স্থানে মনে করে তবে সে কিছু কিছু স্থানকে আল্লাহবিহীন মনে করলো। তিনি ওই সত্তা যাঁর আগমন সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে নি। তিনি অস্তিত্বশীল ,কিন্তু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ত্বে আসেন নি। তিনি সব কিছুতেই আছেন ,কিন্তু কোন প্রকার ভৌত নৈকট্য দ্বারা নয়। তিনি সব কিছু থেকে ভিন্ন ,কিন্তু বস্তুগত দ্বান্দ্বিকতা ও বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে নয়। তিনি কর্ম সম্পাদন করেন। কিন্তু সঞ্চলন ও হাতিয়ারের মাধ্যমে নয়। তিনি তখনও দেখেন যখন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কেউ দেখার মতো থাকে না। তিনিই একমাত্র একক ,কেন না। এমন কেউ নেই যার সাথে তিনি সঙ্গ রাখতে পারেন অথবা যার অনুপস্থিতি তিনি অনুভব করেন।
خلق العالم
أَنْشَأَ الْخَلْقَ إِنْشَاءً وابْتَدَأَه ابْتِدَاءً، بِلَا رَوِيَّةٍ أَجَالَهَا ولَا تَجْرِبَةٍ اسْتَفَادَهَا، ولَا حَرَكَةٍ أَحْدَثَهَا ولَا هَمَامَةِ نَفْسٍ اضْطَرَبَ فِيهَا، أَحَالَ الأَشْيَاءَ لأَوْقَاتِهَا ولأَمَ بَيْنَ مُخْتَلِفَاتِهَا، وغَرَّزَ غَرَائِزَهَا وأَلْزَمَهَا أَشْبَاحَهَا، عَالِماً بِهَا قَبْلَ ابْتِدَائِهَا، مُحِيطاً بِحُدُودِهَا وانْتِهَائِهَا عَارِفاً بِقَرَائِنِهَا وأَحْنَائِهَا : ثُمَّ أَنْشَأَ سُبْحَانَه فَتْقَ الأَجْوَاءِ، وشَقَّ الأَرْجَاءِ وسَكَائِكَ الْهَوَاءِ، فَأَجْرَى فِيهَا مَاءً مُتَلَاطِماً تَيَّارُه ، مُتَرَاكِماً زَخَّارُه حَمَلَه عَلَى مَتْنِ الرِّيحِ الْعَاصِفَةِ، والزَّعْزَعِ الْقَاصِفَةِ فَأَمَرَهَا بِرَدِّه، وسَلَّطَهَا عَلَى شَدِّه وقَرَنَهَا إِلَى حَدِّه، الْهَوَاءُ مِنْ تَحْتِهَا فَتِيقٌ والْمَاءُ مِنْ فَوْقِهَا دَفِيقٌ ، ثُمَّ أَنْشَأَ سُبْحَانَه رِيحاً اعْتَقَمَ مَهَبَّهَا ، وأَدَامَ مُرَبَّهَا وأَعْصَفَ مَجْرَاهَا، وأَبْعَدَ مَنْشَأَهَا فَأَمَرَهَا بِتَصْفِيقِ الْمَاءِ الزَّخَّارِ، وإِثَارَةِ مَوْجِ الْبِحَارِ فَمَخَضَتْه مَخْضَ السِّقَاءِ، وعَصَفَتْ بِه عَصْفَهَا بِالْفَضَاءِ، تَرُدُّ أَوَّلَه إِلَى آخِرِه وسَاجِيَه إِلَى مَائِرِه حَتَّى عَبَّ عُبَابُه ورَمَى بِالزَّبَدِ رُكَامُه ، فَرَفَعَه فِي هَوَاءٍ مُنْفَتِقٍ وجَوٍّ مُنْفَهِقٍ، فَسَوَّى مِنْه سَبْعَ سَمَوَاتٍ، جَعَلَ سُفْلَاهُنَّ مَوْجاً مَكْفُوفاً ، وعُلْيَاهُنَّ سَقْفاً مَحْفُوظاً وسَمْكاً مَرْفُوعاً، بِغَيْرِ عَمَدٍ يَدْعَمُهَا ولَا دِسَارٍ يَنْظِمُهَا ثُمَّ زَيَّنَهَا بِزِينَةِ الْكَوَاكِبِ وضِيَاءِ الثَّوَاقِبِ ، وأَجْرَى فِيهَا سِرَاجاً مُسْتَطِيراً وقَمَراً مُنِيراً، فِي فَلَكٍ دَائِرٍ وسَقْفٍ سَائِرٍ ورَقِيمٍ مَائِرٍ.
নিখিল বিশ্ব
সৃষ্টি
তিনি সৃষ্টির সূত্রপাত করলেন একান্তই মৌলিকভাবে-
কোন প্রকার প্রতিরূপ ব্যতীত ,কোন প্রকার পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যতীত ,কোনরূপ বিচলন ব্যতীত এবং ফলাফলের জন্য কোনরূপ ব্যাকুলতা ব্যতীত। সব কিছুকে তিনি নির্দিষ্ট সময় দিলেন ,তাদের বৈচিত্র্যে সামঞ্জস্য বিধান করলেন এবং তাদের বৈশিষ্ট্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন। সৃষ্টির পূর্বেই তিনি সব কিছুর প্রবণতা ,জটিলতা ,সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন।
অতঃপর পবিত্র সত্তা অনন্ত শূন্য সৃষ্টি করলেন এবং প্রসারিত করলেন নভোমণ্ডল ও বায়ু স্তর। তিনি উচ্ছল তরঙ্গবিক্ষুব্ধ পানি প্রবাহিত করলেন। তরঙ্গগুলো এত ঝঞ্জা - বিক্ষুব্ধ ছিল যে ,একটা আরেকটার ওপর দিয়ে গড়িয়ে যেতো। তরঙ্গাঘাতের সাথে তিনি প্রবল বায়ুপ্রবাহ যুক্ত করলেন এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রকম্পন সৃষ্টি করলেন। পানির বাষ্পীয় অবস্থাকে তিনি বৃষ্টিরূপে পতিত হবার নির্দেশ দিলেন এবং বৃষ্টির প্রাবল্যের ওপর বায়ুকে নিয়ন্ত্রণাধিকার দিলেন। মেঘের নিচে বাতাস প্রবাহিত হতে লাগলো এবং পানি বাতাসের ওপর প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হতে লাগলো।
অতঃপর সর্বশক্তিমান আল্লাহ বাতাস সৃষ্টি করে উহাকে নিশ্চল করলেন ,উহার অবস্থান স্থায়ী করলেন ,তার গতিতে প্রচণ্ডতা দিলেন এবং তাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিলেন। তারপর তিনি বাতাসকে আদেশ করলেন গভীর পানিকে গতিশীল ও চঞ্চল এবং সমুদ্র তরঙ্গকে তীব্রতর করার জন্য। ফলে বাতাস দধি তৈরির মতো পানিকে মন্থন করতে লাগলো এবং এমন জোরে মহাশূন্যে প্রক্ষেপ করলো যাতে সম্মুখ পশ্চাতে ও পশ্চাত সম্মুখে চলে গেলো। এতে ওপরের স্তরে বিপুল ফেনপুঞ্জ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত স্থিরকে অস্থির করে রাখলো। সর্বশক্তিমান তখন ফেনপুঞ্জকে অনন্ত শূন্যে উত্তোলন করে তা থেকে সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করলেন যার সর্বনিম্ন স্তর স্ফীত অথচ অনড় এবং ওপরের স্তর আচ্ছাদনের মতো বিদ্যমান যেন এক সুউচ্চ বৃহৎ অট্টালিকা যাতে কোন স্তম্ভ নেই অথবা একত্রে জোড়া লাগাবার পেরেক নেই। তখন তিনি ওপরের স্তরকে তারকা ও উজ্জ্বল উল্কা দিয়ে সুশোভিত করলেন এবং আবর্তিত আকাশ ,চলমান আচ্ছাদন ও ঘূর্ণায়মান নভোমণ্ডলে তিনি দেদীপ্যমান সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্রকে স্থাপন করলেন।
خلق الملائكة
ثُمَّ فَتَقَ مَا بَيْنَ السَّمَوَاتِ الْعُلَا، فَمَلأَهُنَّ أَطْوَاراً مِنْ مَلَائِكَتِه، مِنْهُمْ سُجُودٌ لَا يَرْكَعُونَ ورُكُوعٌ لَا يَنْتَصِبُونَ، وصَافُّونَ لَا يَتَزَايَلُونَ ومُسَبِّحُونَ لَا يَسْأَمُونَ، لَا يَغْشَاهُمْ نَوْمُ الْعُيُونِ ولَا سَهْوُ الْعُقُولِ، ولَا فَتْرَةُ الأَبْدَانِ ولَا غَفْلَةُ النِّسْيَانِ، ومِنْهُمْ أُمَنَاءُ عَلَى وَحْيِه وأَلْسِنَةٌ إِلَى رُسُلِه، ومُخْتَلِفُونَ بِقَضَائِه وأَمْرِه، ومِنْهُمُ الْحَفَظَةُ لِعِبَادِه والسَّدَنَةُ لأَبْوَابِ جِنَانِه، ومِنْهُمُ الثَّابِتَةُ فِي الأَرَضِينَ السُّفْلَى أَقْدَامُهُمْ، والْمَارِقَةُ مِنَ السَّمَاءِ الْعُلْيَا أَعْنَاقُهُمْ، والْخَارِجَةُ مِنَ الأَقْطَارِ أَرْكَانُهُمْ، والْمُنَاسِبَةُ لِقَوَائِمِ الْعَرْشِ أَكْتَافُهُمْ، نَاكِسَةٌ دُونَه أَبْصَارُهُمْ مُتَلَفِّعُونَ تَحْتَه بِأَجْنِحَتِهِمْ، مَضْرُوبَةٌ بَيْنَهُمْ وبَيْنَ مَنْ دُونَهُمْ حُجُبُ الْعِزَّةِ، وأَسْتَارُ الْقُدْرَةِ، لَا يَتَوَهَّمُونَ رَبَّهُمْ بِالتَّصْوِيرِ، ولَا يُجْرُونَ عَلَيْه صِفَاتِ الْمَصْنُوعِينَ، ولَا يَحُدُّونَه بِالأَمَاكِنِ ولَا يُشِيرُونَ إِلَيْه بِالنَّظَائِرِ.
ফেরেশতা সৃষ্টি
তৎপর পরম বিধাতা বিভিন্ন আকাশের মধ্যে উন্মুক্ততা বিধান করলেন এবং বিভিন্ন শ্রেণির ফেরেশতা দ্বারা সেই উন্মুক্ততা পরিপূর্ণ করলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেজদাবনত ,যারা কখনো রুকু করে না ; কেউ কেউ রুকু অবস্থায় ,যারা কখনো দাঁড়ায় না এবং কেউ কেউ সুবিন্যস্তভাবে অবস্থান করছে ,যারা কখনো তাদের স্থান পরিত্যাগ করে না। অন্যরা সর্বক্ষণ আল্লাহর তসবিহু পাঠ করে এবং তারা ক্লান্ত হয় না। নয়নের নিদ্রা ,বুদ্ধির বিভ্রান্তি ,শরীরের অবসন্নতা অথবা বিস্মৃতির প্রভাব এদেরকে স্পর্শও করে না।
ফেরেশতাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর বিশ্বস্ত অহিবাহক ,যারা নবীদের কাছে আল্লাহর মুখপাত্র হিসাবে কাজ করে এবং তাঁর আদেশ নির্দেশকে সর্বত্র পৌছে দেয়। কেউ কেউ আল্লাহর সৃষ্টি রক্ষার কাজে নিযুক্ত। আবার কেউ কেউ বেহেশতের দরজায় প্রহরী হিসাবে নিযুক্ত। আরো অনেক আছে যাদের পদদ্বয় ভূ - মণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে স্থিরভাবে স্থাপিত এবং তাদের শিরোদেশ আকাশের সর্বোচ্চ স্তরে প্রসারিত এবং তাদের বাহু চতুর্দিকে সম্প্রসারিত। তাদের স্কন্ধ আরশের স্তম্ভের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ; তাদের চোখে আরাশের প্রতি নিবদ্ধ এবং তাদের পাখা আরাশের নিচে বিস্তৃত। তাদের নিজেদের মধ্যে এবং অন্য সকল কিছুর মধ্যে সম্মানিত পর্দা ও কুদরতের আবরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা তাদের মহান স্রষ্টাকে আকৃতির মাধ্যমে ধারণা করে না। তারা স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির কোন গুণারোপ করে না ,তাঁকে কোন নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ করে না এবং উপমার মাধ্যমে তার প্রতি ইঙ্গিত করে না ।
خلق آدمعليهالسلام
ثُمَّ جَمَعَ سُبْحَانَه مِنْ حَزْنِ الأَرْضِ وسَهْلِهَا، وعَذْبِهَا وسَبَخِهَا ، تُرْبَةً سَنَّهَا بِالْمَاءِ حَتَّى خَلَصَتْ، ولَاطَهَا بِالْبَلَّةِ حَتَّى لَزَبَتْ ، فَجَبَلَ مِنْهَا صُورَةً ذَاتَ أَحْنَاءٍ ووُصُولٍ وأَعْضَاءٍ، وفُصُولٍ أَجْمَدَهَا حَتَّى اسْتَمْسَكَتْ، وأَصْلَدَهَا حَتَّى صَلْصَلَتْ لِوَقْتٍ مَعْدُودٍ وأَمَدٍ مَعْلُومٍ، ثُمَّ نَفَخَ فِيهَا مِنْ رُوحِه، فَمَثُلَتْ إِنْسَاناً ذَا أَذْهَانٍ يُجِيلُهَا، وفِكَرٍ يَتَصَرَّفُ بِهَا وجَوَارِحَ يَخْتَدِمُهَا ، وأَدَوَاتٍ يُقَلِّبُهَا ومَعْرِفَةٍ يَفْرُقُ بِهَا بَيْنَ الْحَقِّ والْبَاطِلِ، والأَذْوَاقِ والْمَشَامِّ والأَلْوَانِ والأَجْنَاسِ، مَعْجُوناً بِطِينَةِ الأَلْوَانِ الْمُخْتَلِفَةِ، والأَشْبَاه الْمُؤْتَلِفَةِ والأَضْدَادِ الْمُتَعَادِيَةِ، والأَخْلَاطِ الْمُتَبَايِنَةِ مِنَ الْحَرِّ والْبَرْدِ، والْبَلَّةِ والْجُمُودِ، واسْتَأْدَى اللَّه سُبْحَانَه الْمَلَائِكَةَ وَدِيعَتَه لَدَيْهِمْ، وعَهْدَ وَصِيَّتِه إِلَيْهِمْ فِي الإِذْعَانِ بِالسُّجُودِ لَه، والْخُنُوعِ لِتَكْرِمَتِه، فَقَالَ سُبْحَانَه:(
اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ
)،
اعْتَرَتْه الْحَمِيَّةُ، وغَلَبَتْ عَلَيْه الشِّقْوَةُ، وتَعَزَّزَ بِخِلْقَةِ النَّارِ واسْتَوْهَنَ خَلْقَ الصَّلْصَالِ، فَأَعْطَاه اللَّه النَّظِرَةَ اسْتِحْقَاقاً لِلسُّخْطَةِ، واسْتِتْمَاماً لِلْبَلِيَّةِ وإِنْجَازاً لِلْعِدَةِ، فَقَالَ:(
فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ إِلى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ
)
.
ثُمَّ أَسْكَنَ سُبْحَانَه آدَمَ دَاراً أَرْغَدَ فِيهَا، عَيْشَه وآمَنَ فِيهَا مَحَلَّتَه وحَذَّرَه إِبْلِيسَ وعَدَاوَتَه، فَاغْتَرَّه عَدُوُّه نَفَاسَةً عَلَيْه بِدَارِ الْمُقَامِ، ومُرَافَقَةِ الأَبْرَارِ، فَبَاعَ الْيَقِينَ بِشَكِّه والْعَزِيمَةَ بِوَهْنِه، واسْتَبْدَلَ بِالْجَذَلِ وَجَلًا وبِالِاغْتِرَارِ نَدَماً، ثُمَّ بَسَطَ اللَّه سُبْحَانَه لَه فِي تَوْبَتِه، ولَقَّاه كَلِمَةَ رَحْمَتِه ووَعَدَه الْمَرَدَّ إِلَى جَنَّتِه، وأَهْبَطَه إِلَى دَارِ الْبَلِيَّةِ وتَنَاسُلِ الذُّرِّيَّةِ.
আদম সৃষ্টি
আল্লাহ্ কঠিন ,কোমল ,মধুর ও তিক্ত মৃত্তিকা সংগ্রহ করলেন। তিনি এ মৃত্তিকাকে পানি দিয়ে কর্দমে পরিণত করলেন এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত ফোটায় ফোঁটায় পানির পতন ঘটালেন এবং আঠাল না হওয়া পর্যন্ত আদ্রতা দ্বারা পিণ্ড প্রস্তুত করলেন। এ পিণ্ড থেকে তিনি আদল ,জোড়াসমূহ ,অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ ও বিভিন্ন অংশসহ একটা আকৃতি তৈরি করলেন। একটা নির্দিষ্ট সময় ও জ্ঞাত স্থায়িত্ব পর্যন্ত তিনি এটাকে শুকিয়ে কাঠিন্য প্রদান করলেন। অতঃপর এ আকৃতির মধ্যে তিনি তাঁর রূহ ফুৎকার করে দিলেন। ফলে এটা প্রাণ - চৈতন্য লাভ করে মানবাকৃতি ধারণ করলো এবং এতে মন সন্নিবেশ করা হলো ,যা তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ; বুদ্ধিমত্তা দেয়া হলো ,যা তার উপকারে আসে ; অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ দেয়া হলো ,যা তার কাজে লাগে ; ইন্দ্রিয় দেয়া হলো ,যা তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এবং জ্ঞান দেয়া হলো ,যা সত্য - অসত্য ,স্বাদ - গন্ধ ও বর্ণ - প্রকারের পার্থক্য বুঝাতে শেখালো। আদম হলো বিভিন্ন বর্ণের ,আসঞ্জক পদার্থের ,বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী উপকরণের এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন - উষ্ণতা ,শীতলতা ,কোমলতা ,কাঠিন্য ,খুশি - অখুশি ইত্যাদির সংমিশ্রনের কর্দম।
আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণার্থে এবং তাদের প্রতি তাঁর নির্দেশের আনুগত্য পরিপূরণ করণার্থে আত্মসমর্পণের স্বীকৃতি স্বরূপ ও তাঁর মহিমার প্রতি সম্মান স্বরূপ সেজদাবনত হতে বললেন। তিনি বলেনঃ
আদমকে সেজদা কর এবং ইবলিস ব্যতীত সকলেই সেজদা করলো। (কুরআন - ২ - ৩৪ ,৭ - ১১ ,১৭ - ৬১ ,১৮ - ৫০ ,২০ - ১১৬) আত্মম্ভরিতা ইবলিসকে আল্লাহর আদেশ পালনে বিরত করলো এবং ঔদ্ধত্য দ্বারা সে আক্রান্ত হয়েছিল। সুতরাং সে আগুনের তৈরি বলে অহংবোধ করলো এবং মাটির তৈরি বলে আদমকে অবজ্ঞা করলো। ফলে আল্লাহ ইবলিসকে তাঁর রোষের পূর্ণ প্রতিফল প্রদানের এবং মানুষকে পরীক্ষা করার ও শয়তানের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট সময় দিলেন। আল্লাহ বলেনঃ
তা হলে নিশ্চয় তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত - নির্ধারিত সময়ের দিন পর্যন্ত (কুরআন ১৫ - ৩৭ - ৩৮ ,৩৮ - ৮০ - ৮১)
তৎপর আল্লাহ্ আদমকে একটা ঘরে অধিষ্ঠান করলেন যেখানে তিনি মহানন্দে ও পূর্ণ নিরাপত্তায় বসবাস করতে লাগলেন। তিনি আদমকে ইবলিস ও তার শত্রুতা সম্পর্কে সাবধান করে দিলেন। কিন্তু ইবলিস আদমের বেহেশত - বাস ও ফেরেশতাদের সংসর্গের জন্য ঈর্ষান্বিত হলো। সুতরাং সে আদমের "ইয়াকিন ’ শিথিল করলে এবং তার প্রতিশ্রুতি দুর্বল করলো। এতে আদমের আনন্দ ভয়ে পরিণত হলো এবং মর্যাদা লজ্জায় পরিণত হলো। তখন আল্লাহ আদমকে‘
তওবা ’ করার সুযোগ দিলেন এবং তাঁর রহমতের বাক্য শেখালেন। তিনি আদমকে বেহেশতে প্রত্যাবর্তনের ওয়াদা দিলেন এবং তাকে কষ্টভোগ করা ও বংশ বিস্তারের স্থলে অবতরণ করালেন ।
اختيار الأنبياء
واصْطَفَى سُبْحَانَه مِنْ وَلَدِه أَنْبِيَاءَ، أَخَذَ عَلَى الْوَحْيِ مِيثَاقَهُمْ وعَلَى تَبْلِيغِ الرِّسَالَةِ أَمَانَتَهُمْ، لَمَّا بَدَّلَ أَكْثَرُ خَلْقِه عَهْدَ اللَّه إِلَيْهِمْ، فَجَهِلُوا حَقَّه واتَّخَذُوا الأَنْدَادَ مَعَه، واجْتَالَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ عَنْ مَعْرِفَتِه، واقْتَطَعَتْهُمْ عَنْ عِبَادَتِه فَبَعَثَ فِيهِمْ رُسُلَه، ووَاتَرَ إِلَيْهِمْ أَنْبِيَاءَه لِيَسْتَأْدُوهُمْ مِيثَاقَ فِطْرَتِه، ويُذَكِّرُوهُمْ مَنْسِيَّ نِعْمَتِه، ويَحْتَجُّوا عَلَيْهِمْ بِالتَّبْلِيغِ، ويُثِيرُوا لَهُمْ دَفَائِنَ الْعُقُولِ، ويُرُوهُمْ آيَاتِ الْمَقْدِرَةِ، مِنْ سَقْفٍ فَوْقَهُمْ مَرْفُوعٍ ومِهَادٍ تَحْتَهُمْ مَوْضُوعٍ، ومَعَايِشَ تُحْيِيهِمْ وآجَالٍ تُفْنِيهِمْ وأَوْصَابٍ تُهْرِمُهُمْ، وأَحْدَاثٍ تَتَابَعُ عَلَيْهِمْ، ولَمْ يُخْلِ اللَّه سُبْحَانَه خَلْقَه مِنْ نَبِيٍّ مُرْسَلٍ، أَوْ كِتَابٍ مُنْزَلٍ أَوْ حُجَّةٍ لَازِمَةٍ أَوْ مَحَجَّةٍ قَائِمَةٍ، رُسُلٌ لَا تُقَصِّرُ بِهِمْ قِلَّةُ عَدَدِهِمْ، ولَا كَثْرَةُ الْمُكَذِّبِينَ لَهُمْ، مِنْ سَابِقٍ سُمِّيَ لَه مَنْ بَعْدَه،
أَوْ غَابِرٍ عَرَّفَه مَنْ قَبْلَه عَلَى ذَلِكَ نَسَلَتِ الْقُرُونُ ومَضَتِ الدُّهُورُ، وسَلَفَتِ الآبَاءُ وخَلَفَتِ الأَبْنَاءُ.
পয়গম্বর মনোনয়ন
আল্লাহ্ আদমের বংশধর থেকে অনেক পয়গম্বর মনোনীত করলেন এবং তাঁর প্রত্যাদেশ ও বাণী বিশ্বস্ততার সাথে মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। কালক্রমে অনেক লোক আল্লাহকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পরিবর্তন করে ফেললো এবং আল্লাহর প্রতি কর্তব্য বিষয় ভুলে গিয়ে তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে লাগলো। শয়তান তাদেরকে আল্লাহর মা‘
রেফাত থেকে ফিরিয়ে নিল এবং তার ইবাদত থেকে বিচ্ছিন্ন করলো। তখনই আল্লাহ তাদের কাছে রাসূলগণকে প্রেরণ করলেন এবং একের পর এক নবী পাঠালেন যেন তাঁরা পূর্ব - প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণ করার দিকে মানুষকে আহবান করেন এবং ভুলে যাওয়া নেয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেন ; যেন তারা তবলিগের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে প্রণোদিত করেন ,যেন তাদের কাছে প্রজ্ঞার গুপ্ত রহস্য উন্মোচন করে দেন এবং আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহ যেমন-
সমুচ্চ আকাশ ,বিছানো পৃথিবী ,তাদের বাঁচিয়ে রাখার জীবনোপকরণ ,মৃত্যু ,বার্ধক্যের জরা ও ক্রমান্বয়ে আগত ঘটনা প্রবাহ-
তাদেরকে দেখিয়ে দেন।
আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টিকে কখনো পয়গম্বরবিহীন অথবা নাজেলকৃত বাণী অথবা বাধ্যতামূলক প্রত্যাদেশ অথবা সরল সহজ পথ ব্যতীত রাখেননি। পয়গম্বরগণ এমনভাবে তাদের দায়িত্বে অটল ছিলেন যে ,তাদের সহচরের সংখ্যাল্পতা বা তাদেরকে মিথ্যা প্রমাণকারীর দল অধিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের মিশন থেকে কখনো তারা বিরত হননি এবং কোন কিছুই তাদেরকে কর্তব্য থেকে বিরত রাখতে পারেনি । পয়গম্বরগণের প্রত্যেকেই তাঁর পূর্ববর্তী জনের কথা বলে গেছেন এবং পরবর্তী জনের আগমন বার্তা জ্ঞাপন করেছেন ।
مبعث النبي
إِلَى أَنْ بَعَثَ اللَّه سُبْحَانَه مُحَمَّداً، رَسُولَ اللَّهصلىاللهعليهوآله
لإِنْجَازِ عِدَتِه وإِتْمَامِ نُبُوَّتِه، مَأْخُوذاً عَلَى النَّبِيِّينَ مِيثَاقُه، مَشْهُورَةً سِمَاتُه كَرِيماً مِيلَادُه، وأَهْلُ الأَرْضِ يَوْمَئِذٍ مِلَلٌ مُتَفَرِّقَةٌ، وأَهْوَاءٌ مُنْتَشِرَةٌ وطَرَائِقُ مُتَشَتِّتَةٌ، بَيْنَ مُشَبِّه لِلَّه بِخَلْقِه أَوْ مُلْحِدٍ فِي اسْمِه، أَوْ مُشِيرٍ إِلَى غَيْرِه، فَهَدَاهُمْ بِه مِنَ الضَّلَالَةِ وأَنْقَذَهُمْ بِمَكَانِه مِنَ الْجَهَالَةِ، ثُمَّ اخْتَارَ سُبْحَانَه لِمُحَمَّدٍصلىاللهعليهوآله
لِقَاءَه، ورَضِيَ لَه مَا عِنْدَه وأَكْرَمَه عَنْ دَارِ الدُّنْيَا، ورَغِبَ بِه عَنْ مَقَامِ الْبَلْوَى، فَقَبَضَه إِلَيْه كَرِيماً،صلىاللهعليهوآله
وخَلَّفَ فِيكُمْ مَا خَلَّفَتِ الأَنْبِيَاءُ فِي أُمَمِهَا، إِذْ لَمْ يَتْرُكُوهُمْ هَمَلًا بِغَيْرِ طَرِيقٍ وَاضِحٍ ولَا عَلَمٍ قَائِمٍ
নবী মুহাম্মদ (সা.)
এভাবে সময় গড়িয়ে যুগের পর যুগ অতিক্রান্ত হলো। পিতারা মৃত্যুবরণ করলো এবং সন্তানেরা তাদের স্থানে এলো - সুদীর্ঘ সময় পার হবার পর আল্লাহ তাঁর অঙ্গীকার পূরণার্থে ও পয়গম্বর - ধারা সমাপ্তি করে মুহাম্মদকে (সা.) নবী ও রাসূল করে পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন। অন্যান্য পয়গম্বরদের কাছ থেকে মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিল। মুহাম্মদের (সা.) জন্ম ছিল অতীব সম্মানজনক এবং চরিত্র বৈশিষ্ট্য ছিল সুখ্যাতিপূর্ণ। সে সময়ে পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন ধর্মে দলভুক্ত (মাজহাব) ছিল। তাদের মতো ও পথ ছিল বিবিধ ; চিন্তাধারা ছিল বিক্ষিপ্ত এবং একে অপরের সাথে বিবাদমান ছিল। তারা সৃষ্টিকে আল্লাহর সাদৃশ্য করতো অথবা তার মহিমান্বিত নামসমূহ বিকৃত করতো অথবা তিনি ব্যতীত অন্য কিছুকে ক্রিয়া - কর্ম সম্পাদনকারী মনে করতো। মুহাম্মদের (সা.) মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সুপথ দেখালেন এবং তার অক্লান্ত প্রচেষ্টা দ্বারা তিনি তাদেরকে অজ্ঞতা থেকে ফিরিয়ে আনলেন ।
অতঃপর আল্লাহ মুহাম্মদকে (সা.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মনোনীত করে তার মহিমান্বিত নৈকট্য দান করলেন এবং এ পৃথিবীতে থাকার অনেক অনেক উর্দ্ধের মর্যাদাশীল বিবেচনা করে তাকে এ পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। ফলে তিনি মহাসম্মানের সাথে তাঁকে নিজের সান্নিধ্যে নিয়ে গেলেন। মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর বংশধরগণের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক ।
القرآن والأحكام الشرعية
كِتَابَ رَبِّكُمْ فِيكُمْ مُبَيِّناً حَلَالَه وحَرَامَه، وفَرَائِضَه وفَضَائِلَه ونَاسِخَه ومَنْسُوخَه ورُخَصَه وعَزَائِمَه وخَاصَّه وعَامَّه، وعِبَرَه وأَمْثَالَه ومُرْسَلَه ومَحْدُودَه ومُحْكَمَه ومُتَشَابِهَه مُفَسِّراً مُجْمَلَه ومُبَيِّناً غَوَامِضَه، بَيْنَ مَأْخُوذٍ مِيثَاقُ عِلْمِه ومُوَسَّعٍ
عَلَى الْعِبَادِ فِي جَهْلِه، وبَيْنَ مُثْبَتٍ فِي الْكِتَابِ فَرْضُه، ومَعْلُومٍ فِي السُّنَّةِ نَسْخُه، ووَاجِبٍ فِي السُّنَّةِ أَخْذُه، ومُرَخَّصٍ فِي الْكِتَابِ تَرْكُه، وبَيْنَ وَاجِبٍ بِوَقْتِه وزَائِلٍ فِي مُسْتَقْبَلِه، ومُبَايَنٌ بَيْنَ مَحَارِمِه مِنْ كَبِيرٍ أَوْعَدَ عَلَيْه نِيرَانَه، أَوْ صَغِيرٍ أَرْصَدَ لَه غُفْرَانَه، وبَيْنَ مَقْبُولٍ فِي أَدْنَاه مُوَسَّعٍ فِي أَقْصَاه.
পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ
মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মাঝে ওই একই জিনিস রেখে গেছেন যা অন্য পয়গম্বরগণও তাদের উম্মতের কাছে রেখে গিয়েছিলেন। পয়গম্বরগণ মানুষকে অন্ধকারে রেখে যান নি । তাঁরা সুনির্দিষ্ট সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর স্থায়ী নিদর্শনাবলীর তত্ত্বাবধান করেছিলেন। মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের কাছে রেখে গেছেন তোমাদের প্রতিপালকের কিতাব যা নির্ধারিত হালাল ও হারাম বর্ণনাকরে ; ফরজ ও মোস্তাহাবসমূহ বর্ণনা করে ; মনসুখ ও নাসেখ বর্ণনা করে ; বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক বিষয়াদি ,বিশেষ ও সাধারণ বিষয়াদি ,উপদেশ ও উপমা ,সীমিত ও অসীম ,স্পষ্ট ও অস্পষ্ট বর্ণনা করে এবং শব্দ সংক্ষেপের (মুকাত্তাআত) ব্যাখ্যা ও গুপ্ত বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা করে।
কুরআনে কিছু কিছু আয়াত আছে যে বিষয়ে জ্ঞানার্জন বাধ্যতামূলক আবার এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলোর রহস্য বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা মার্জনীয়। রাসূলের সুন্নাহ কুরআনের বাধ্যতামূলক বিষয়াদি প্রকাশক। রাসূলের সুন্নাহর মাধ্যমে বাধ্যতামূলক বিষয়ের রাদ - বদলও প্রতিফলিত হয়েছে অথবা সুন্নাহতে এমন বিষয়াদি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যা পবিত্র গ্রন্থে হয়ত অনুসরণ না করার অনুমতি রয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু আয়াত আছে যা একটা বিশেষ সময় পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ওই সময়ের পর তদ্রুপ নেই। কুরআনের নিষেধাজ্ঞাসমূহও বিভিন্ন - কিছু এমন যাতে জাহান্নামের ভীতি প্রকট এবং কিছু এমন যাতে ক্ষমার প্রত্যাশা অধিক ব্যক্ত হয়েছে। কুরআনে এমন আয়াতও আছে যার একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রাংশও আল্লাহর নিকট বর্ধিত আকারে গ্রহণযোগ্য।
ومنها في ذكر الحج
وفَرَضَ عَلَيْكُمْ حَجَّ بَيْتِه الْحَرَامِ، الَّذِي جَعَلَه قِبْلَةً لِلأَنَامِ، يَرِدُونَه وُرُودَ الأَنْعَامِ ويَأْلَهُونَ إِلَيْه وُلُوه الْحَمَامِ، وجَعَلَه سُبْحَانَه عَلَامَةً لِتَوَاضُعِهِمْ لِعَظَمَتِه، وإِذْعَانِهِمْ لِعِزَّتِه، واخْتَارَ مِنْ خَلْقِه سُمَّاعاً أَجَابُوا إِلَيْه دَعْوَتَه، وصَدَّقُوا كَلِمَتَه ووَقَفُوا مَوَاقِفَ أَنْبِيَائِه، وتَشَبَّهُوا بِمَلَائِكَتِه الْمُطِيفِينَ بِعَرْشِه، يُحْرِزُونَ الأَرْبَاحَ فِي مَتْجَرِ عِبَادَتِه، ويَتَبَادَرُونَ عِنْدَه مَوْعِدَ مَغْفِرَتِه، جَعَلَه سُبْحَانَه وتَعَالَى لِلإِسْلَامِ عَلَماً، ولِلْعَائِذِينَ حَرَماً فَرَضَ حَقَّه وأَوْجَبَ حَجَّه، وكَتَبَ عَلَيْكُمْ وِفَادَتَه ، فَقَالَ سُبْحَانَه:(
ولِلَّه عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطاعَ إِلَيْه سَبِيلًا، ومَنْ كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعالَمِينَ
)
.
হজ্জ সম্পর্কে
আল্লাহ তাঁর পবিত্র গৃহে হজ্জ করা তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন এবং সে গৃহকে মানুষের জন্য কেবলা হিসাবে নির্ধারিত করেছেন। প্রাণীকুল অথবা কবুতর তৃষিত অবস্থায় যেভাবে ঝরনার পানির দিকে ছুটে যায় মানুষও তেমনি যেন কাবার দিকে ধাবমান হয়। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর আজমতের সামনে বান্দাদের তাওয়াজু (বিনয়) প্রকাশের জন্য এবং তাঁর ইজ্জতের প্রতি তাস্দিক (দৃঢ় বিশ্বাস) প্রকাশের জন্য সম্মানিত ঘরকে প্রতীক হিসাবে নির্ধারিত করেছেন। সৃষ্টির মধ্য থেকে তিনি এমন কিছু শ্রবণকারী মনোনীত করেছেন যারা তার ডাকে সাড়া প্রদান করে এবং তার বাণী বাস্তবে পরিণত করে। এসব লোকেরা পয়গম্বরগণের মর্যাদার পর্যায়ে অবস্থান করে এবং তারা ওই সমস্ত ফেরেশতাগণের প্রতিরূপ যারা আরাশের চতুর্দিকে তওয়াফ করে আল্লাহর ইবাদতের সার্বিক মর্যাদা ও তার প্রতিশ্রুত ক্ষমার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মহিমান্বিত আল্লাহ্ পবিত্র গৃহকে ইসলামের জন্য একটা প্রতীক করেছেন এবং আশ্রয় গ্রহণকারীদের জন্য উহা নিরাপদ স্থান। তিনি কাবার হক আদায়কে ওয়াজেব করেছেন এবং উহার দিকে সফরকে বাধ্যতামূলক করেছেন। আল্লাহ্ বলেনঃ এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা সেসকল লোকের জন্য বাধ্যতামূলক যারা কাবা পর্যন্ত যাবার সামর্থ্য রাখে । কিন্তু কেহ অস্বীকার করলে ,জেনে রাখুক ,আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন (কুরআন - ৩:৯৭) ।
____________________
খোৎবা -
২
بَعْدَ انْصِرافِهِ مِن صِفِّينَ:
فلسفه الحمد
أَحْمَدُهُ اسْتِتْماماً لِنِعْمَتِهِ، وَ اسْتِسْلاماً لِعِزَّتِهِ، وَ اسْتِعْصاماً مِنْ مَعْصِيَتِهِ. وَ أَسْتَعِينُهُ فاقَهً الى كِفايَتِهِ؛ انَّهُ لا يَضِلُّ مَنْ هَداهُ، وَ لا يَئِلُ مَنْ عاداهُ، وَ لا يَفْتَقِرُ مَنْ كَفاهُ. فَانَّهُ أَرْجَحُ ما وُزِنَ، وَ أَفْضَلُ ما خُزِنَ. وَ أَشْهَدُ أَنْ لا الهَ الا اللّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، شَهادَهً مُمْتَحَنا اخْلاصُها، مُعْتَقَدا مُصاصُهِّا، نَتَمَسَّكُ بِها أَبَدا ما أبْقانا، وَنَدَّخِرُها
لأَهاوِيلِ ما يَلْقانا، فِانَّها عَزِيمَهُ الايمانِ، وَ فاتِحَهُ الاحْسانِ وَ مَرْضاةُ الرّحمنِ، وَ مَدْحَرَةُ(مهلکة)
الشِّيْطانِ.
خصئص رسول اللهصلىاللهعليهوآلهوسلم
وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدا عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ، أَرْسَلَهُ بِالدِّينِ الْمَشْهُورِ، وَ الْعِلْمِ المَأثُورِ وَ الْكِتابِ الْمَسْطُورِ، وَ النُّورِ السّاطِعِ، وَ الضِّيأِ اللامِعِ، وَ الْأَمْرِ الصّادِعِ، اِزاحَهً لِلشُّبُهاتِ، وَ احْتِجاجا بِالبَيِّناتِ، وَ تَحْذِيرا بِالْآياتِ، وَ تَخْوِيفا بِالمُثلاتِ
وصف الجاهلیّة
وَ النّاسُ فِى فِتَنٍ انْجَذَمَ(انحدم)
فِيها حَبْلُ الدِّينِ، وَ تَزَعْزَعَتْ سَوارِى الْيَقينِ، وَ اخْتَلَفَ النَّجْرُ وَ تَشَتَّتَ الْأَمْرُ، وَ ضاقَ الْمَخْرَجُ وَ عَمِىَ الْمَصْدَرُ، فَالْهُدى خامِلٌ، وَ الْعَمى شامِلٌ. عُصِىَ الرَّحْمنُ، وَ نُصِرَ الشَّيْطانُ، وَ خُذِلَ الْإ يمانُ، فَانْهارَتْ دَعائِمُهُ، وَ تَنَكَّرَتْ مَعالِمُهُ،(اعلامه)
وَ دَرَسَتْ سُبُلُهُ، وَ عَفَتْ شُرُكُهُ. أَطاعُوا الشَّيْطانَ فسَلكُوا مَسالِكَهُ، وَ وَرَدُوا مَناهِلَهُ، بِهِمْ سارَتْ أَعْلامُهُ، وَ قامَ لِواؤُهُ فِى فِتَنٍ داسَتْهُمْ بِأَخْفافِها، وَ وَطِئَتْهُمْ بِأَظْلافِها، وَ قامَتْ عَلى سَنابِكِها، فَهُمْ فِيها تائِهُونَ حائِرونَ جاهِلُونَ مَفْتُونُونَ، فِى خَيْرِ دارٍ، وَ شَرِّ جِيرانٍ. نَوْمُهُمْ سُهُودٌ(سهاد)
، وَ كُحْلُهُمْ دُمُوعٌ، بِأَرْضٍ عالِمُها مُلْجَمٌ، وَ جاهِلُها مُكْرَمٌ.
فضائل عترة النَّبِىَصلىاللهعليهوآلهوسلم
هُمْ مَوْضِعُ سِرِّهِ، وَ لَجَأُ أَمّرِهِ، وَ عَيْبَهُ عِلْمِهِ، وَ مَوئِلُ حُكْمِهِ، وَ كُهُوفُ كُتُبِهِ، وَ جِبالُ دِينِه، بِهِمْ أَقامَ انْحِنأَ ظَهْرِهِ، وَ أَذْهَبَ ارْتِعادَ فَرائِصِهِ.
أعمال الْمُنحرفین
زَرَعُوا الْفُجُورَ، وَ سَقَوْهُ الْغُرُورَ، وَ حَصَدُوا الثُّبُورَ.
لا يُقاسُ بِآلِ مُحَمَّدٍصلىاللهعليهوآلهوسلم
مَنْ هذِهِ الامَّهِ أَحَدٌ، وَ لا يُسوَّى بِهِمْ مَنْ جَرَتْ نِعْمَتُهُمْ عَلَيْهِ أَبَداً. هُمْ أَساسُ الدِّينِ، وَ عِمادُ الْيَقينِ. إلَيْهِمْ يَفِى ءُ الْغالِى، وَ بِهِمْ يِلْحَقُ التّالِى. وَ لَهُمْ خَصائِصُ حَقِّ الْوِلايَةِ، وَ فِيهِمْ الْوَصِيَّةُ وَ الْوِراثَةُ؛ الآنَ إذْرَجَعَ الْحَقُّ إلَى أهلِهِ، وَ نُقِلَ الى مُنتَقَلِهِ!
সিফফিন থেকে
ফেরার
পর
এ
খোৎবা
দিয়েছিলেন।
আল্লাহর প্রশংসা
আমি আল্লাহর প্রশংসা করি তাঁর পরিপূর্ণ নেয়ামতের আশায় ,তার ইজ্জতের প্রতি আত্মসমর্পণের জন্য এবং পাপ থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার আশায়। আমি তার সাহায্যের জন্য মিনতি করি যেহেতু প্রয়োজনে তার সাহায্যই যথেষ্ট ! তিনি যাকে হেদায়েত প্রদান করেন। সে কখনো বিপথগামী হয় না ; আর যার প্রতি তিনি বিরূপ হন তার কোন প্রতিরক্ষা নেই। যাকে তিনি দয়া করেন সে সকল প্রয়োজনের উর্দ্ধে থাকে। তাঁর প্রশংসা সব কিছু থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সকল সম্পদ থেকে মূল্যবান।
নবী (সা .)এর বৈশিষ্ট্য
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,এক আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মা ’ বুদ নেই। তাঁর কোন সাদৃশ্য নেই। এ সাক্ষ্য এমন এক ব্যক্তির যার এখলাছ পরীক্ষিত এবং এর মূল উপাদান আমাদের ইমান যা বিশ্বস্ত (মো ’ তাকাদ) হয়েছে। যত দিন তিনি আমাদের জীবিত রাখেন। ততদিন আমরা এ বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে রাখবো এবং কঠোর দুঃখ - দুর্দশা দ্বারা আমরা আক্রান্ত হলে তা মোকাবেলা করার জন্য এ বিশ্বাস পুঞ্জিভূত করে রাখবো। কারণ এটা ইমানের মূল ভিত্তি এবং কল্যাণকর কর্ম ও ঐশী সন্তুষ্টির প্রথম সোপান। এটা শয়তানকে দূরে সরিয়ে রাখার উপায়।
আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসূল। অতি বিশিষ্ট দ্বীন ,মো ’ জেজা ,সংরক্ষিত দলিল ,দীপ্তিশীল নূর ,জ্বলজ্বলে ঔজ্জ্বল্য ,সন্দেহ - নাশক চুড়ান্ত নির্দেশাবলী ,বিদ্যমান সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ,আল্লাহর আয়াতসমূহ দ্বারা ভীতি প্রদর্শন ও পাপের শাস্তির সতর্কাদেশসহ আল্লাহ তাকে প্রেরণ করেছেন। সে সময়ে মানুষ ছিল ফেতনা - ফ্যাসাদে লিপ্ত এবং তাতে দ্বীনের রাজ্জু ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ,ইয়াকিনের স্তম্ভসমূহ আলোড়িত হয়ে পড়েছিল ,নৈতিক মূল্যবোধ অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে গিয়েছিল ,নিয়ম - শৃংখলা ওলট - পালট হয়ে পড়েছিল ,প্রারম্ভ ছিল ক্ষীণ ,পথ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন ,হেদায়েত ছিল অজানা এবং অজ্ঞতা (জাহেলিয়াত) ছিল বিরাজমান।
জাহেলী যুগের পরিচয়
মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়ে শয়তানের সমর্থক হয়ে পড়েছিল এবং ইমান পরিত্যক্ত বিষয় ছিল। ফলে দ্বীনের স্তম্ভ ধ্বসে পড়েছিল। ইমানের সামান্য চিহ্নও দেখা যাচ্ছিলো না ; এর সকল পথ বিনষ্ট হয়ে পড়েছিল এবং প্রকাশ্য রাস্তাসমূহ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। মানুষ আল্লাহর নাফরমানি করে শয়তানের অনুগত হয়ে পড়েছিল এবং শয়তানের পথ অনুসরণ করছিলো। শয়তানের জলাধার থেকে পানি সংগ্রহে মানুষ আগ্রহান্বিত ছিল। এসব মানুষের মাধ্যমে শয়তানের বিজয় পতাকা উড্ডিয়মান হয়েছিল এবং এরাই মানুষকে ফেতনা - ফ্যাসাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। ফলে মানুষ এদের খুরের নিচে দলিত হয়েছিল এবং এরা মানুষের ওপর দাম্ভিক পদভরে দাঁড়িয়েছিলো। অনৈতিকতা পায়ের আঙ্গুলে ভর করে দাঁড়িয়েছিলো। মানুষ সম্পূর্ণরূপে পথভ্রষ্ট ,জটিল ,অজ্ঞ ও বিপথগামী হয়ে পড়েছিল ; যেন তারা কল্যাণকর ঘরের (কাবা) । কুপ্রতিবেশী (কুরাইশ) । নিদ্রার পরিবর্তে তারা ছিল জাগ্রত এবং তাদের চোখে সুর্মার পরিবর্তে ছিল পানি। তারা এমন এক সমাজ ব্যবস্থায় ছিল যেখানে জ্ঞানীগণ ছিল লাগাম পরিহিত এবং অজ্ঞরা ছিল সম্মানিত ।
আহলে বাইতের মর্যাদা
জেনে রাখো - রাসূলের আহলুল বাইত হলো আল্লাহর গুপ্ত বিষয়ের (সির্র) ধারক ,আল্লাহ সম্পর্কীয় জ্ঞানের মূলাধার ,প্রজ্ঞার কেন্দ্রবিন্দু ,আল্লাহর কিতাবের উপত্যকা ও তাঁর দ্বীনের পর্বত। তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তার দ্বীনের বক্রপিঠ সোজা করলেন এবং দ্বীনের অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের কম্পমান অবস্থা দূরীভূত করলেন।
দুষ্কৃতকারীদের বৈশিষ্ট্য
মনে রেখো - মোনাফেকগণ পাপ কর্ম ও অধার্মিকতা বপন করেছে এবং তাতে প্রবঞ্চনারূপ পানি সিঞ্চন করেছে ; ফলতঃ নিজেদের ধ্বংস রূপ ফসল কর্তন করেছে। ইসলামি উম্মাহর কাউকে আহলুল বাইতের
সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। কেউ তাদের অনুগ্রহভাজন হয়ে থাকলেও তাকে তাদের সমতুল্য মনে করা যাবে না। তাঁরা হলেন দ্বীনের ভিত্তিমূল ও ইমানের স্তম্ভ। তাদেরকে কেউ ডিঙ্গিয়ে যেতে চাইলে আবার ফিরে আসতে হয় তাদের কাছে। আবার যারা পশ্চাতে পড়ে থাকে তারা তাদেরকে অনুসরণ করতে হয়। মূলত তাঁরা রাসূলের বেলায়েতের অধিকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। রাসূলের আমানত ও উত্তরাধিকার তাঁদেরই অনুকূলে। কাজেই ন্যায় ও সত্যের অনুসারীগণকে তাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
__________________