শাফাআত সম্পর্কিত আপত্তিমূলক প্রশ্নাদী ও জবাব সমূহ
প্রথম প্রশ্ন:
শাফাআতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে , মানুষের মনে অহংকার ও গুনাহ করার প্রবণতা পায় এবং ফরজ কাজ সমূহ পালনে নিষ্ক্রিয়তা প্রকাশ করে। কারণ শাফাআতের সুবিধা ভোগ করার প্রতি বিশ্বাসের ফলে মনে করে থাকে যে , তাকে আর শাস্তি দেয়া হবে না।
জবাব:
কোরআনের আয়াত সমূহ শাফাআতের বিষয়কে সার্বিকভাবে নির্দেশনা প্রকাশ করে কিন্তু এমন কোন দলিল নেই যে , কোন ব্যক্তি বলতে পারবে যে , তাকে অবশ্যই শাফাআত করা হবে। অতএব কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবেনা যে , তাকে শাফাআত করা হবে এবং সে অবশ্যই দোজখের আযাব থেকে মুক্তি পাবে। অন্যদিকে শাফাআতের স্থানও কারো জন্য নির্দিষ্ট নয় যে , কেয়ামতে অথবা জাহান্নামের কোন পর্যায়ে তাকে শাফাআত করা হবে ? উদাহরণ স্বরূপ একটি“
হাদীসে হাসানা”
যেখানে ইমাম (আঃ) বলেন , দোযখে প্রবেশ করে কিছু কাল শাস্তি ভোগ করার পর (কিছু লোক) শাফাআতের মাধ্যমে মুক্তি পাবে।
“
ওসমান ইবনে ঈসা , ইবনে মাকান এর কাছ থেকে , সে আবি বাছিরের কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে , আমি ইমাম বাকের (আঃ) এর কাছ থেকে শুনেছি যে , তিনি বলেছেন , একদল লোক জাহান্নামে জ্বলবে ও একটি পর্যায় আতিক্রম হওয়ার পর শাফাআতের সুবিধা ভোগ করবে।
ইমাম বাকের (আঃ) বলেন , দোযখে অবস্থানকারী কাফের ও মুশরিকরা তাদের পার্শবর্তী একত্ববাদীদেরর দিকে লক্ষ্যে করে বলবে যে তোমাদের একত্ববাদীতা তোমাদের জন্য কোন মঙ্গল বয়ে আনেনি , তোমাদের ও আমাদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই আমরা উভয়েই সমান (সম আজাবের অধিকারী)।
তখন আল্লাহ তালা সেই একত্ববাদীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন এবং ফেরেশতাদের বলবেন , শাফাআত কর। অতএব আল্লাহ যাকে চাইবেন তার জন্য ফেরেশতারা শাফাআত করবে।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায় যে , এমন অনির্দিষ্ট ও অনিশ্চিত শাফাআতের সুবিধা মানুষের উদ্ধত করতে পারেনা কারণ , মানুষের ক্ষমতা নেই এক মুহুর্ত জাহান্নমের আগুন ও আজাবকে সহ্য করবে। অতএব সে গুনাহ থেকে দূরে থেকে আল্লাহর এবাদতে মগ্ন থাকতে বাধ্য।
অন্য দিকে সে সকল মহান ব্যক্তিবর্গ যারা দ্বীন ও ধর্মকে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এসেছিলেন তাদের পক্ষ থেকে তাদের অনুসারীদের জন্য এমন একটি আশার বানী থাকা প্রয়োজন যে তারা সুপারিশ করে তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন এবং মুমিনরা তাদের শাফাআতের আশা পোষন করবে এবং আশার দরজা তাদের জন্য সর্বদাই উন্মুক্ত থাকবে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন
গুনাহগার ব্যক্তি তওবার মাধ্যমে আজাব থেকে মুক্তি পেতে পারে , তাহলে শাফাআতের আর কী প্রয়াজন থাকতে পারে ?
জবাব
আল্লাহ তালা তওবা ও শাফাআত যা গুনাহ ক্ষমা করার দুটি পন্থা উভয়ের প্রত্যোকটি বিষয়কে বিশেষ এক উদ্দেশ্যে স্থাপন করেছেন , তওবা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে ,
অনুতাপ , আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসা ও শয়তানের নাকে মুখে মাটি দেয়ার কারণে তওবা কবুল করা হয়। অন্যদিকে শাফাআত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে , অলি ও আউলিয়াদের শাফাআত কবুল করার কারণ হল আল্লাহ তালা তাদেরকে ভালবাসেন এবং তাদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন ।
তৃতীয় প্রশ্ন
আল্লাহ তালা ওয়াদা দিয়েছেন যে , গুনাহগারদের শাস্তি দিবেন না যদি শাফাআতের মাধ্যমে গুনাহগার মুক্তি পায় তাহলে তা আল্লাহর ওয়াদার সাথে সামঞ্জস্যহীন।
)
ف
َلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّـهِ تَبْدِيلًا ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّـهِ تَحْوِيلًا(
আল্লাহর সুন্নত ওপদ্ধতিতে কোন রকম পরিবর্তন ও পরিশোধন দেখতে পাবেনা ।
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে ,আল্লাহর সুন্নত ও পদ্ধতিতে কোনরকম পরিবর্তন হবেনা।জবাব
আপত্তিকারীগণ ধারণা করেছেন যে , আল্লাহর সুন্নত ও পদ্ধতি শুধুমাত্র গুনাহগারদের আজাব দেয়ার মধ্যেইে নিহিত এবং শাফাআতের মাধ্যমে যদি তা ক্ষমা করা হয় তাহলে তা আল্লাহর আইনের ব্যতিক্রম। কিন্তু আল্লাহর সুন্নত ওপদ্ধতি শুধুমাত্র তার বান্দাদের শান্তি ও হুমকির মাধ্যমেই সীমিত নয় বরং শাফাআতের মাধ্যমে গুনাহখাতা ক্ষমা করা তাঁরই নিশ্চিত এক সুন্নত ও পদ্ধতি যা সময় ও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আল্লাহ তালার রহমত ও মাগফেরাতের মত অনেক গুণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো শাফাআতের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়।
চতুর্থ প্রশ্ন
শাফাআত কারীদের শাফাআত আল্লাহর ইচ্ছার উপর এক ধরনের প্রভাব বা ক্ষমতা প্রদর্শন স্বরূপ কারণ শাফাআতকারীরা চায় তাদেরকে (গুনাহগারদেরকে) আজাব থেকে মুক্তি দিতে যাদেরকে আল্লাহ তালা চান শাস্তি দিতে ।
জবাব:
শাফাআত কারীদের শাফাআত তখনই গ্রহনযোগ্য হবে যখন আল্লাহ তালা তাতে অনুমতি দিবেন। কিন্তু যদি শাফাআতকারী আল্লাহর ইচ্ছার উপর প্রভাব ফেলতো তাহলে আল্লাহর অনুমতির প্রয়োজন হতো না , বরং তা অনুসরণ করতে আল্লাহ তালা বাধ্য থাকতেন। মূলত বাস্তবে তার বিপরীত। উদাহরণ স্বরূপ , যদি এমন হতো যে শাফাআতকারী তার অধিনস্ত কারো কাছে সুপারিশ করবে যার উপর তার কতৃত্ব রয়েছে। কিন্তু শাফাআত এমন নয় কারণ শাফাআত শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে গ্রহনযোগ্য। অতএব তা আল্লাহর ইচ্ছার উপর প্রভাব বিস্তুার করতে পারেনা।
পঞ্চম প্রশ্ন
আল্লাহর ভালবাসা অফুরন্তু , আর যদি শাফাআত থেকেই থাকে তবে কেন , সব মানুষ শাফাআতের সুবিধা ভোগ করবেনা ?
জবাব
“
সব মানুষ শাফাআতের সুবিধা পাবেনা”
এর অর্থ এই নয় যে , আল্লাহর রহমত ও মেহেরবানী সীমিত। মূলতঃ এর অর্থ হল অন্য লোকজন তাদের নিজেদের দূর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণেই শাফাআত পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে , একজন বিশেষ ডাক্তার পারেনা কোন মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে , কারণ ঐ লোক বেচে থাকার যোগ্যতা ও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে এতে ডাক্তারের অপারগতা প্রকাশ পায়না।
মূলতঃ প্রত্যেক মানুষই পারে শাফাআত পাওয়ার যোগ্যতা ও শত সমূহ অর্জন করতে এবং যার ফলে সে খোদায়ী রহমত ভোগ করতে পারবে।
ষষ্ঠ প্রশ্ন
শাফাআতকারীদের ভালবাসা ও মহব্বত কী আল্লাহর মহব্বত ও ভালবাসার চেয়ে বেশি ? যদি তাই না হয় তাহলে কেন শাফাআত কারীদের উসিলায় আল্লাহর রহমতের প্রয়োজন হবে ?
জবাব:
এটা স্পষ্ট যে , আল্লাহর রহমত অন্য সকলের চাইতে বেশি কিন্তু তিনিই চেয়েছেন যে , তার মহব্বত তাদের উসিলায় আসবে যাতে খোদায়ী রহমতের পাশাপাশি আল্লাহর কাছে শাফাআত কারীদের অবস্থান ও মর্যাদা মানুষ কাছে স্পষ্ট হয় এবং এই উসিলায় মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করবে এবং সফলতার চাবি অর্জন করবে।
উপসংহার:
আমরা সবাই অবশেষে জীবন চলার পথে তাকওয়া (খোদাভীতি) অর্জন ও গুনাহ খাতা থেকে বিরত থাকবো। কারণ তখনই শাফাআত পাওয়া সম্ভব যদি ঈমানদার অবস্থায় (যে অবস্থায় আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবেন) মৃত্যু বরন করে আল্লাহর সাক্ষাতে মিলিত হব। লক্ষ্যে রাখতে হবে যে , যদি অধিক গুনাহ করা হয় অথবা কবিরা গুনাহ করা হয় তাহলে তা ঈমানের পথে অন্তুরায় হয়ে দাড়াবে এবং যদি সে অবস্থায় তওবা না করেই কেহ মৃত্যু বরণ করে তাহলে তার জন্য পরকাল অত্যন্ত কঠিন হবে। অতএব মানুষ মাত্রই সর্বদা ভয় ও আশা নিয়ে বেচে থাকতে হবে (ভয় এ কারণে যে , হয়তো শাফাআত নসীবে হবেনা , আশা এজন্য যে , যদি শাফাআত পাওয়া যায় তাহলে পরকালে ধন্য হওয়া যাবে)।
কোরআন হাদীসের উল্লেখিত আলোচনা থেকে বলা যেতে পারে যে , শাফাআত অবশ্যই গুনাহগারদের জন্য কিন্তু কেহই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেনা যে , তার কপালে শাফাআত থাকবে এবং জাহান্নামের সব রকম আজাব থেকে সে শাফাআতের মাধ্যমে মুক্তি পাবে। অতএব , আমরা সবাই সর্বদা তাকওয়া (খোদাভীতি) অর্জন করার চেষ্টা করব এবং অপকর্ম ও গুনাহ থেকে বিরত থাকবো । কারণ গুনাহের কারণে ঈমান দর্বল হয় এবং অন্তুর মলিন হয়ে যায় , অধিকন্তু কিছু কিছু গুনাহ শিরক করারও কারণ হয়ে দাড়ায়।
الحمدلله الذیی علی ما هدانا لهذا و ما کنا لنهتدیی لو لا ان هدانا الله