তাঁর নৈতিক গুণাবলী
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ,‘
যে-ই চায় আকাশগুলোর বাসিন্দা ও পৃথিবীর বাসিন্দাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিকে দেখতে , তাহলে তার উচিৎ হোসেইনের দিকে তাকানো।’
[মীযান আল-হিকমাহ , হাদীস-432]
ইমাম হোসেইন (আ.) বলেছেনে , আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষাতে গিয়েছিলাম যেখানে উবাই বিন কা’
ব তার সাথে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন ,‘
স্বাগতম! হে আবা আবদিল্লাহ , হে আকাশগুলো ও পৃথিবীগুলোর সৌন্দর্য।’
এতে উবাই বললো ,‘
হে রাসূলুল্লাহ (সা.) , আপনি ছাড়া অন্য কারো জন্য এটি কি করে সম্ভব যে সে আকাশগুলো ও পৃথিবীগুলোর সৌন্দর্য হবে ?’
তিনি বললেন ,‘
হে উবাই , আমি তার শপথ করে বলছি যিনি আমাকে তাঁর অধিকার বলে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন , নিশ্চিতভাবেই হোসেইন বিন আলী[-র মূল্য] আকাশগুলো ও পৃথিবীগুলোর চেয়ে বেশী এবং নিশ্চয়ই [তার বিষয়ে] আল্লাহর আরশের ডান দিকে লেখা আছে: হেদায়েতের আলো , নাজাতের নৌকা , একজন ইমাম , দুর্বল না , মর্যাদা ও গৌরবের [উৎস] , এক সুউচ্চ বাতিঘর এবং মহামূল্যবান সম্পদ।’
[মীযান আল-হিকমাহ , হাদীস-433]
ইমাম হোসেইন (আ.) আশুরার দিন [কারবালাতে] তার বক্তৃতায় বলেছিলেন ,‘
সাবধান! ভণ্ডের সন্তান ভণ্ড[উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ এবং যিয়াদ ইবনে আবিহ] আমাকে কোনঠাসা করেছে দুটো জিনিসের মাঝখানে—
খাপ থেকে তরবারি খোলা অথবা অপমান সহ্য করা। আর তা বহু দূরে যে আমরা অপমান বেছে নেবো। নিশ্চয়ই আল্লাহ , তাঁর রাসূল , বিশ্বাসীরা এবং যে ঐশী ও পবিত্র কোল আমাদের সেবা করেছে এবং যা অপমানকে ঘৃণা করে , তারা সবাই এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন যে , সম্মানের মৃত্যুর ওপরে জঘন্য ব্যক্তিদের আনুগত্যকে বেছে নেওয়া হবে।’
[মীযান আল-হিকমাহ , হাদীস-434]
ইমাম হোসেইন (আ.) আশুরার দিন [কারবালাতে] তার বক্তৃতায় বলেছিলেন ,‘
আল্লাহর শপথ , আমি তোমাদের হাতে আমার হাত দিবো না কোন অপমানিত ব্যক্তির মতো , আর না আমি পালিয়ে যাবো একজন ক্রীতদাসের মতো।’
[মীযান আল-হিকমাহ , হাদীস-435]
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেছেন ,‘
আমি হোসেইন (আ.)-কে বলতে শুনেছি ,‘
যদি কোন ব্যক্তি আমাকে এই কানে অপমান করে—
ডান কানের দিকে ইঙ্গিত করে—
এবং ক্ষমা চায় অন্যটিতে , আমি তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করবো ; আর তা এ কারণে যে , আমিরুল মু’
মিনিন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে তিনি আমার নানা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন ,“
যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তির ক্ষমা প্রার্থনা শুনতে চায় না—
হোক সে সঠিক অবস্থানে অথবা ভুল অবস্থানে , সে হাউজে কাউসারে উপস্থিত হবে না।”
’
[মীযান আল-হিকমাহ , হাদীস-436]
হুযাইফা বিন আল-ইয়ামান বর্ণনা করেছেন ,‘
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি হোসেইন (আ.)-এর হাত ধরে থাকা অবস্থায় বলতে ,“
হে জনগণ , এ হলো হোসেইন ইবনে আলী , অতএব তাকে স্বীকার করে নাও। তাঁর শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন , নিশ্চয়ই সে জান্নাতে থাকবে , যারা তাকে ভালোবাসে তারা জান্নাতে থাকবে এবং যারা তার প্রেমিকদের ভালোবাসে তারাও জান্নাতে থাকবে।”
’
[মীযান আল-হিকমাহ , হাদীস-437]
শুয়াইব বিন আব্দুর রহমান আল-খযাঈ বলেছেন ,‘
তাফ’
[আশুরা]-এর দিনে হোসেইন (আ.)-এর পিঠে একটি দাগ দেখা গিয়েছিল , তাই তারা যায়নুল আবেদীন (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলো [এ বিষয়ে] এবং তিনি উত্তর দিলেন ,‘
এগুলো [খাদ্যের] বস্তাগুলোর দাগ যা তিনি পিঠে বহন করে বিধবাদের , ইয়াতিমদের ও সহায় সম্বলহীন ব্যক্তিদের বাড়ীগুলোতে নিতেন।’
[মীযান আল- হিকমাহ , হাদীস-438]
বর্ণিত হয়েছে যে , একদিন ফাতিমা যাহরা (আ.) তার দুই ছেলে ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসেইন (আ.)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে গেলেন যিনি খুব অসুস্থ ছিলেন (এবং পরে তিনি এ কারণেই ইন্তেকাল করেন)। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে অনুরোধ করলেন তার দুই ছেলেকে [তার গুণাবলী থেকে] কিছু উত্তরাধিকার হিসেবে দিতে। এতে রাসূল (সা.) বললেন ,“
হাসানের জন্য সে আমার খোদাভীতি ও শ্রেষ্ঠত্ব উত্তরাধিকার হিসেবে লাভ করবে এবং হোসেইন সে আমার উদারতা ও বীরত্ব উত্তরাধিকার হিসাবে লাভ করবে।”
এটি সুপরিচিত যে , ইমাম হোসেইন (আ.) অতিথিদের আপ্যায়ন ও সেবা করতে ভালোবাসতেন এবং অন্যের আশা পূরণ করতেন এবং আত্মীয়দের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের ও দরিদ্রদের উপহার দিতেন , অভাবীদের দান করতেন , বস্ত্রহীনকে পোষাক দিতেন , ক্ষুধার্তকে খাওয়াতেন , ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্ত করতেন , ইয়াতিমদের স্নেহের সাথে হাত বুলিয়ে দিতেন এবং সাহায্যপ্রার্থীদের সাহায্য করতেন , যখনই তিনি কোন সম্পদ লাভ করতেন তিনি তা অন্যদের মাঝে বণ্টন করে দিতেন।