সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার11%

সত্য কাহিনী সম্ভার লেখক:
: মাওলানা আলী আক্কাস
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

সত্য কাহিনী সম্ভার
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 79 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 46811 / ডাউনলোড: 5948
সাইজ সাইজ সাইজ
সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি তার বিষয়ের সর্বপ্রথম ও অনন্য অবতারণা হোক অথবা না হোক , এর জন্য প্রাপ্য ফুলের মামলার যোগ্য পাত্র আমি নই , অর্থাৎ যদি এ বইটি কাহিনী রচনার জগতে কোন গুরুত্বপূর্ণ নতুন অবতারণার দাবিদার হয় তাহলে তার গোড়াপত্তনকারী আমি নই। বরং প্রকাশনা ও প্রচারণার একটি প্রতিষ্ঠানে দেশের বিজ্ঞ বিজ্ঞ বিজ্ঞানী-গুণী কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি সম্পাদনা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ অধমও সে বোর্ডের একজন সদস্য। দেশের খ্যাতনামা লেখক ও বিজ্ঞতম ব্যক্তিত্ব সমৃদ্ধ সে বোর্ডের এক বৈঠকে প্রস্তাব রাখা হলো যে , এমন একটি গ্রন্থ রচিত হওয়া উচিত যার মধ্যে চারিত্রিক সুন্দর ও গুণাবলী কাহিনী আকারে উপস্থাপিত থাকবে। আর সে কাহিনীগুলো লেখকের নিজের মস্তিষ্ক থেকে আবিস্কৃত বা নিজের খেয়াল মোতাবেক তৈরি হবে না। বরং তার ভিত্তিমূল ও উৎস হবে হাদীস , বাস্তব জীবন ও ইতিহাসের গ্রন্থরাজি। এর সংকলনের উদ্দেশ্য থাকবে মুসলিম সমাজকে শিক্ষা দান এবং যুব সমাজকে হেদায়েতের পথ প্রদর্শন ও পরিচালনা করা।


1

2

3

তথ্যসূত্র :

১.ইসলামের প্রথম দিকে মসজিদে নববীতে কেবল নামাযই হতো না , বরং তখনকার মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্র ছিল এ মসজিদ। যখন কোন প্রয়োজনীয় কাজের জন্য সকলের একত্র হওয়ার দরকার দেখা দিত তখন সকলকে এ মসজিদে ডাকা হতো। লোকেরা এখানে এসেই তাদের জরুরি বিষয়াদি জেনে নিত। যে কোন নতুন সিদ্ধান্ত এখানেই গ্রহণ করা হতো এবং ঘোষণাও করা হতো এখান থেকেই যাতে করে সকল লোকে জানতে পারে।

মুসলমানরা যতদিন মক্কায় ছিল ততদিন তারা সামাজিক কাজকর্ম ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত ছিল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করতে পারতো না। আর ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষাও গ্রহণ করতে পারতো না নিজেদের ইচ্ছামতো। এ অবস্থা অনেক দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। অতঃপর আরবের আরেকটি স্থা্নের নাম ছিল ইয়াসরিব । সেখানে ইসলামের প্রভাব ছড়িয়ে পড়লো। এ স্থানটিতে পরবর্তীকালে মদীনাতুন্নাবী অর্থাৎ নবীর শহর নামে বিখ্যাত হলো। মহানবী (সাঃ) মদীনার লোকদের প্রস্তাব ও প্রতিশ্রু তি বিবেচনা করে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করলেন। ধীরে ধীরে সকল মুসলমানই হিজরত করে মদীনায় এসে উপস্থিত হয়। তখন থেকে তারা স্বাধীনভাবে ধর্মীয় কাজগুলোতে অংশগ্রহণ করতো। মদীনায় পৌঁছে মহানবী (সাঃ) সর্বপ্রথম যে কাজটি করলেন সেটি হলো একটি মনোরম ও সুবিধাজনক স্থান বেছে নিয়ে তাঁর সাহাবীগণের সহযোগিতায় এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করলেন।

২ মুনিয়াতুল মুরীদ , বোম্বে সংস্করণ , পৃ. ১০।

৩.উসূলে কাফী ,দ্বিতীয় খণ্ড ,পৃ.:১৩৯ , বাবুল কানাআহ ,সাফীনাতুল বিহার , কানাআহ অধ্যায়।

৪.ওয়াসাইল ,আমীর বাহাদর মূদ্রণ ,দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ: ৫২৯।

৫. কোহলিল বাছার ,মুহাদ্দেসে কুমী , পৃ. ৬৯।

৬. নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মহান আলাহ তার সে বান্দাকে কখনও ভালোবাসেন না যে নিজের বন্ধুদের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও্ উত্তম মনে করে এবং নিজেকে অপরের চেয়ে বিশেষ ব্যক্তিত্ব জ্ঞান করে।

৭.কোহলিল বাছার , মুহাদ্দেস কুমী , পৃ. ৬৮ ।

৮.বিহারুল আনোয়ার ,খণ্ড-১১ ,কোম্পানী মুদ্রিত ,পৃ. ২১ ।

৯.অসূলে কাফী ,দ্বিতীয় খণ্ড ,বাবু হুসনুছছাহাবা ওয়া হাককুছছাহেবে ফিস-সফর ,পৃ. ৬৭০।

১০.নাহজুল বালাগাহ , কালিমাতে কেছার ,নং-৩৭ ।

১১.কোহলিল বাছার ,পৃ. ৭০ ,মুহাদ্দেসে কুমী ।

১২.সিরিয়া দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের খেলাফতকালে বিজিত হয়েছিল। বিজয় লাভের পর সেখানকার শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল মুআবিয়ার বড় ভাই ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফিয়ানকে। দুই বছর শাসন করার পর ইয়াযীদ মারা যায়। তার মৃত্যুর পর এ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটির শাসনভার মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের হাতে তুলে দেন স্বয়ং দ্বিতীয় খলিফাই। এরপর থেকে মুআবিয়া একাধারে বিশ বছর পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে শাসন করতে থাকে। হযরত ওমরের খেলাফতকালে বিশেষ একটি নিয়ম ছিল যে ,কোন শাসককেই একই এলাকায় একাধারে কয়েক বছর পর্যন্ত শাসন করার সুযোগ দেয়া হতো না। কারণ সে যেন অনেক দিন পযর্ন্ত শাসন করার সুযোগ নিজের অবস্থান ও ক্ষমতাকে সুদৃঢ় ও মজবুত করতে না পারে। এ জন্যই শাসকদেরকে তাড়াতাড়ি পদচ্যুত করে তদস্থলে অন্য নতুন শাসক নিয়োগ করা হতো। কিন্তু মুআবিয়া নিজের ক্ষমতায় স্থায়ী থাকে। কেননা তাকে করা পদচ্যুত হয়নি। এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে সে নিজের অবস্থান ও ক্ষমতাকে এতো মজবুত করেছে যে , সে খেলাফতের মসনদের স্বপ্ন দেখতে লাগলো। সুতরাং বিশ বছর ক্ষমতায় থাকার সুসংবাদে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। পরবর্তী আরো বিশ বছর সে সিরিয়া ও ইসলামী সাম্রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতে মুসলমানদের খলিফা হিসেবে শাসন করে। এভাবে সিরিয়াতে বসবাসকারী লোকেরা উমাইয়া শাসনাধীনে লালিত-পালিত হয় এবং তাদেরই দেয়া শিক্ষা-দীক্ষায় গড়ে ওঠে। আমরা সকলেই খুব ভালোভাবে জানি যে , বনী উমাইয়ারা হাশেমী খানদানের সাথে আন্তরিক শত্রুতা রাখতো। ইসলামের ঘোষণা প্রকাশের পর সে শত্রুতা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। সুতরাং হযরত আলী (আঃ) ও তার সন্তানগণ উমাইয়াদের শত্রুতার কেন্দ্রে পরিণত হলো। সিরিয়ার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে হযরত আলী ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করার শিক্ষাও লাভ করতে থাকে। এভাবে শত্রুতার শিকড় তাদের অন্তরে ভালোভাবেই গেড়ে গিয়েছিল। বনী উমাইয়ার শাসকরা হযরত আলী ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণের কাজটিকে দ্বীন ইসলামের অংশ বলে সাব্যস্ত করেছিল। তাদের প্রচার দ্বারা অর্থাৎ জনগণকে এভাবে বুঝিয়েছে যে ,সে ব্যক্তি সঠিক মুসলমান হতেই পারবে না যে আলী ও তাঁর সন্তানদের সাথে শত্রুতা না রাখবে। সুতরাং সিরিয়াবাসীদের এ আচরণ এবং হযরত আলী ও তার সন্তানদের প্রতি দুশমনি পোষণ করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।

১৩.নাফশাতুল মাছদুর ,মোহাদ্দেছে কুমী ,পৃ. ৪ ।

১৪.অসূলে কাফী , দ্বিতীয় খণ্ড ,পৃ ,.৪০৪।

১৫.আল ইমামু আলীউন সওতুল আদালাতিল ইনসানিয়্যাহ , পৃ. ৬৩ , বিহারুল আনোয়ার , নবম খণ্ড , তাবরীয সংস্করণ , পৃ. ৫৯৮ (মতান্তরে)।

১৬.হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথম দিকে মুসলমানদের মধ্যে থেকে একটি দল আত্মপ্রকাশ করলো যারা নিজেদেরকে সূফী ও দরবেশ নামে পরিচয় দিত। এরা একটা বিশেষ পদ্ধতিতে জীবন যাপনের পথ অনুসরণ করতো। আর তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা ছিল যে , অন্য মুসলমানদেরকেও তাদের অনুসারী বানাবে। সে দলের লোকেরা এ কথাই বোঝাতে চাইতো যে , তারা যে পন্থা অনুসরণ করে চলেছে প্রকৃতপক্ষে সেটাই ইসলামী জীবন যাপনের পথ। সেটাই ইসলামের শিক্ষা। তাদের দাবী ছিল দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ থেকে দূরে থাকা উচিত। তাদের আকীদা-বিশ্বাসমতে একজন মুমিন মুসলমানের উচিত উত্তম পোশাক , রুচিসম্মত খাদ্য খাবার ও ভালো ভালো ঘর-বাড়ী পরিহার করা। এরা যদি দেখতে পেতো যে , কোন মুসলমান আলাহর দেয়া নেয়ামত দ্বারা কোন ফায়দা হাসিল করছে বা উপভোগ করছে তাহলে তারা তার অপমান ও হেয় করার ব্যাপারে মোটেও দেরী করতো না। তাদের দৃষ্টিতে ভালো পোশাক পরিধানকারী , রুচিসম্মত খাদ্য গ্রহণকারী ও ভালো বাড়িতে বসবাসকারী লোকেরা দুনিয়াদার। তাদের সাথে মহান আল্লাহর কোন সম্পর্ক নেই। ইমাম সাদিক (আঃ) এর প্রতি সাওরীর আপত্তি এ আকীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতেই।

এ মতবাদ সমগ্র পৃথিবীতেই খ্যাতি অর্জন করেছে। শুধু ভারত ও গ্রীসে) নয় , বরং বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে এ মতবাদের অনুসারীদের সংখ্যা বিরাট পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে এ মতের অনুসারীদের সংখ্যা কম নয়। আর তারা তাদের এ মতবাদের গায়ে ধর্মীয় লেবাস পরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এর ধারা বংশানুক্রমে এগিয়েই চলেছে এবং এর প্রভাবও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যথেষ্ট। অতএব এ কথা বললে বেশী বলা হবে না যে , মসলমানদের মধ্যে এমন একটা বিশেষ মতবাদের আবিষ্কার হয়েছে , যার অনিবার্য ফল হচ্ছে জীবন যাপনের রীতিনীতির ক্ষেত্রে মুসলমানরা একটা অমর্যাদাকর অবস্থায় রয়েছে এবং দুনিয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-নীতির অনুসারী নয় বলে পরিচিত হয়েছে। পরবর্তীতে এ নীতিহীনতা ও বেদআতের কারণে ইসলামী দেশগুলো পশ্চাৎপদতায় পতিত হয়েছে।

এ মতবাদের প্রভাব কেবল সুফীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়নি , বরং এ বিশেষ মতবাদটি যার ভিত্তি হচ্ছে দুনিয়া ত্যাগ ও বৈরাগ্যবাদ , তা সেই লোকদের উপরও বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে যারা ছিল এ সুফীবাদের ঘোর বিরোধী। তাদের সংখ্যাও বৈরাগ্যবাদে বিশ্বাসী এ সুফীদের চাইতে কোন অংশ কম নয় ।

এ মত বিশ্বাসটিকে যদি একটি সামাজিক ব্যধি বলে আখ্যায়িত করা হয় তাহলে অত্যুক্তি হবে না অর্থাৎ এটি এমন একটি বিপজ্জনক ও সমাজ ধ্বংসকারী রোগ যা ইসলামী সমাজকে অভ্যন্তরীণভাবে একেবারে আধমরা করে ফেলেছে। অতএব এ বিপজ্জনক রোগের উত্তম চিকিৎসা উদ্ভাবন করা খবই জরুরী। যাতে করে ইসলামী সমাজকে এর কূ-প্রভাবের শিকার হতে না হয়। অত্যন্ত পরিতাপের সাথে এ কথা স্বীকার করতে হয় যে , এখন পর্যন্ত এ রোগের বিরুদ্ধে তেমন কোন কার্যকরী আন্দোলন গড়ে উঠতে পারেনি এবং এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা দূর করার ব্যাপারে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে প্রতিটি আন্দোলনই জাতিগত ঝগড়া ও শেণী সংগ্রামের রূপ পরিগ্রহ করেছে। আর অনেক লোকই দুনিয়ার পদের লোভে এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের পথ থেকে সরে পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তো এটাই দেখা গেছে যে , এ সূফীবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকারীরা নিজেরাই এর ফাঁদে আটকা পড়েছে। এছাড়াও দেখা গেছে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা বেশীর ভাগই উচ্চ চিন্তা- ভাবনা ও মানুষের উচ্চ মর্যাদার ধারণা সম্পর্কে মোটেই কোন জ্ঞান রাখে না। তাদের আদৌ জানা নেই যে , মানবতা ও মানুষের প্রধান কর্তব্য কি ? কিছ লোক যদি মানুষের উচ্চ মর্যাদার ও উচ্চ চিন্তা-ভাবনা করার জ্ঞানের অধিকারী হয় এবং সমাজের বিস্তৃত রোগ-ব্যধিগুলো দূর করার জন্য প্রচার করা শুরু করে তখনই চারদিক থেকে তার উপর আক্রমণ চালানো হয়। তথাকথিত এ সুফীবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সময় এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে , এমন একটি মতবাদের বিরু দ্ধে সংগ্রাম করা হচ্ছে যা ইসলামী সমাজের জন্য একটা মারাত্মক রোগ। যার কারণে ইসলামী উম্মাহ নানা প্রকার বেদআতের শিকার হচ্ছে। সুফীবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদেরকে ইমাম সাদিক (আঃ)-এর সাথে ঘটিত এ ঘটনাটি মনে রাখতে হবে। আরো খেয়াল রাখতে হবে যে , কোন অবস্থাতেই যেন এ আন্দোলন জাতিগত ঝগড়া ও শ্রেণী সংগ্রামের রূপ্ল ধারণ করতে না পারে। আর স্থান , কাল বা ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে সীমিত না হয়ে যায়। বরং কার্যক্রমটি এমন হতে হবে যে , যেখানেই হোক এবং যে দলের দ্বারাই এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকুক , তাদের সাথেই উক্ত মতবাদটি ভ্রান্ত প্রমাণের জন্য সহযোগিতা করা উচিত।

যা হোক এ মতবাদটির জবাব ও তা ভ্রান্ত প্রমাণ করার ব্যাপারে ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ)-এর এ বর্ণনাটি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। আর এটা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের কথা যে , ইমামের এ হাদিসটি সনদযুক্ত কিতাবাদির মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে। যার প্রচারের দ্বারা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিদআত সৃষ্টি করার যে কোন প্রচেষ্টার মোকাবিলা করা যেতে পারে।

১৭.অর্থাৎ যারা হিজরতকারীদের পূর্বে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতো। আর ঈমানে ছিল মজবুত । হিজরত করে যারা তাদের কাছে চলে এসেছে তাদের প্রতি রাখে ভালোবাসার মন। তারা যে (ধন) লাভ করেছে তার জন্য নিজেদের অন্তরে গরজবোধ করে না। যদিও নিজে অভাব-অনটনের মধ্যে রয়েছে এবং নিজের প্রয়োজন মিটাতে পারছে না তথাপিও অপরের প্রয়োজনকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়। আর যারা নিজেদেরকে লোভ-লালসা থেকে রক্ষা করতে পেরেছে তারাই সফলকাম। (সূরা আল-হাশর , আয়াত-৯)।

১৮.অর্থাৎ আর তারা তাকেই ভালোবেসে মিসকীন , ইয়াতীম ও কয়েদীকে খাবার খাওয়ায়। (সূরা-আদ দাহার , আয়াত-৮)।

১৯. অর্থাৎ , আর তারা যখন খরচ করে তখন তারা অতিরিক্ত তথা অপাত্রে খরচ করে না। আর বখিলী কৃপণতাও করে না। তাদের খরচ মধ্যম নীতিতে হয়ে তাকে। (সরা-আল-ফোরকান , আয়াত-৬৭।)

২০.অর্থাৎ , তোমার হাতকে ঘাড়-গর্দানের সাথে বেঁধে রেখো না। তথা বখীল কৃপণ হয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখো না যে , (কাউকে কিছু দিবে না)। আর দান করতে গিয়ে হাত একেবারে খুলে দিও না যে , (সব কিছদিয়ে দিবে) । অবশেষে তোমাকে দঃখি ও লজ্জিত হয়ে বসে থাকতে হবে।(সূরা ইসরা ,২৯)।

২১.অর্থাৎ , সে আমার নিকট প্রার্থনা করে বললো , হে আমার পরোয়ারদিগার! আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর আমাকে এমন একটি রাজত্ব দান করো যা আমার পরে আর কারো পক্ষেই লাভ করা সম্ভব হবে না। নিঃসন্দেহে তুমি বড় দয়ালু দাতা। (সূরা-ছোয়াদ , আয়াত-৩৫)।

২২ অর্থাৎ , ইউসুফ বললো-আমার উপর রাজ্যের কোষাগার বা অর্থনৈতিক বিষয়াদির দায়িত্বভার অর্পণ করুন। কেননা আমি নির্ভরযোগ্য বিশ্বাসী ও কর্মাভিজ্ঞ ।সূরা ইউসুফ , আয়াত-৫৫)।

২৩.তুহফুল উকূল ,পৃ. ৩৪৮-৩৫৪ ,কাফী , প্লঞ্চম খণ্ড , আল-মাঈশাহ অধ্যায় ,পৃ. ৬৫-৭১।

২৪.উষ্ট্রের যুদ্ধটি বসরা শহরের নিকটেই হয়েছিল। এ যুদ্ধে এক পক্ষে ছিলেন আমীরুল ম মিনীন হযরত আলী (আঃ) ও অন্য পক্ষে ছিলেন বিবি আয়েশা , তালহা ও যোবায়ের। এটাকে উষ্ট্রের যুদ্ধ এ জন্য বলা হয় যে , এ যুদ্ধে বিবি আয়েশা একটা উটের পিঠে আরোহণ করে হযরত আলী (আঃ)-এর বিরুদ্ধে দ্ধযরত সৈনিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আরবী ভাষায় জামাল মানে উট। হযরত আলী (আঃ) খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরপরই বিবি আয়েশা , তালহা ও যোবায়ের তাঁর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ চাপিয়ে দেন। কারণ তিনি তাঁর ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক আচরণের কারণে অভিজাত শ্রেণীর লোকদের বেলায় কোন প্রকার বিশেষ সুযোগ প্রদান করতে রাজী ছিলেন না। যুদ্ধে হযরত আলীই জয়ী হয়েছিলেন।

২৫. নাহজুল বালাগা ,খোতবা নং-২০৭।

২৬. অসুলে কাফী ,দ্বিতীয় খণ্ড , ফাজলে ফোকারায়িল মুসলিমীন অধ্যায় , পৃ. ২৬০।

২৭. সাফীনাতুল বিহার , মাদ্দায়ে শোতর , মাজমুআয়ে ওয়ারাম থেকে সংকলিত।

২৮.গাযযালী নামা , পৃ. ১১৬।

২৯. তারীখে উলুমে আকলী দার ইসলাম , পৃ. ২১১।

৩০. বিহারুল আনোয়ার ,কোম্পানী মুদ্রিত ,১১শ খণ্ড ,হালাতে ইমাম বাক্বের (আঃ) ,পৃ. ৮২।

৩১.

কাব্যার্থ

* গগণচুম্বী অট্টালিকা , দুর্জয় দুর্গ গড়ি

চেয়েছে পেতে অনেকে নিরাপ্লদ আশ্রয়।

সশস্ত্র দেহরক্ষী , জাগ্রত সান্ত্রী রাখি

চেয়েছে রুখিতে শঙ্কা-শঙ্কিল বিপ্লর্যয়।

কিন্তু এসে যবে মৃত্যুদূত টুটি ধরে চাপি

ব্যর্থ তাবৎ অস্ত্রশস্ত্র মুহূর্তও দেয়নি প্রশ্রয়।

৩২.

*বিরাট-বিশাল মহল , দুর্ভেদ্য কেলা ছাড়ি

যেতে হয়েছে সমাধির সংকীর্ণ আঁধার গোরে।

চলে গেছে সকল স্বজন নির্জনে অসহায় ফেলি।

কেউ এসে দেখেনি হাল কখনও কবর খুঁড়ে!!

জিজ্ঞাসে তাদের পুনঃপুনঃ বিবেক হাতেফ ডাকি

কোথা তোদের শান-শওকত , কোথা তখতে তাজ ?

দোর্দণ্ড প্রতাপ-প্রতিপত্তি , অহংবোধ কোথা রাখি

এসেছো শন্য হাতে , বলো তো কি হবে আজ ?

*চকচকে ঝলমল রেশমী মিহি পর্দার আড়ালে থাকি

রেখেছো নিজেকে জনগণ থেকে অনেক দর।

আরাম-আয়েশে লালিত গর্বাহংকারে মুখখানি

চলে গেছে কোথা , কোন সুদূর অচিনপুর ?

*চলেছে তারা যে মাটির উপর নিয়ত : দম্ভ ভরি

সঁপেছে লোকেরা তাদের তারই দয়ার দ্বারে।

ভোগ-বিলাসে করেছে সতেজ যে দেহকে সদা লালি।

লাঞ্ছিত আজি কবর নামক বন্দী কারাগারে।

* কালান্তর ধরে জগৎ মাঝে স্বাদাস্বাদের আহার করি

হয়েছে আজি কবর মাঝে মাটিরই খাদ্যাহার।

ভুগিবে কঠোর শাস্তি সাজা মাটিরই গর্ভে থাকি

নিজেদেরই কর্মের ফল , অশেষ-অসীম লাঞ্ছনার।

৩৩.বিহারুল আনোয়ার ,দ্বিতীয় খণ্ড ,আহওয়ালে ইমাম হাদী (আঃ) ,পৃ. ১৬৯ ।

৩৪. বিহারুল আনোয়ার , দ্বাদশ খণ্ড , হালাতে হযরত রেজা , পৃ ৩৯।

৩৫. বিহারুল আনোয়ার , দশম খণ্ড , পৃ. ২৫।

৩৬. আল-ইমামু আলীয়্যুন , সওতিল আদালাতিল ইনসানিয়্যাহ , পৃ. ৪৯ , দেখুন শরহে নাহজুল বালাগা , ইবনে আবিল হাদীদ , বৈরুত সংস্করণ , চতুর্থ খণ্ড , পৃ. ১৮৫।

৩৭. বিহারুল আনোয়ার , একাদশ খণ্ড , হালাতে ইমাম সাদিক , পৃ. ১১৬।

৩৮. ওয়াসায়েল ,দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ ৪৬৯।

৩৯. ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ. ৪৯৪ , বারো ইসতিহবাবির রিফ্কু আলাল মু মিনীন , হাদীস নং-৩ ও ৯।

৪০.মুরূজুযযাহাব মাসউদী , দ্বিতীয় খণ্ড , হালাতে মাহদী আব্বাসী।

৪১. উসলে কাফী , দ্বিতীয় খণ্ড , বাবে হাককল জেওয়ার ,পৃ:৬৬৮।

৪২. ওয়াসায়িল , তৃতীয় খণ্ড , কিতাবুশশাফাআহ , বাবো আদমে জাওয়াযিল ইজরারি বিল মুসলিম , পৃ. ৩২৯ , হাদীস নং-১ , ৩ , ৪।

৪৩. বিহার , ৬ষ্ঠ খণ্ড , বাবো মাকারেমে আখলাকুহু ওয়া সিয়ারুহু ওয়া সুনানুহু।

৪৪.বিহারুল আনোয়ার , একাদশ খণ্ড ,পৃ:১২১।

৪৫. বিহারুল আনোয়ার , ৬ষ্ঠ খণ্ড , বাবো মাকারিমুল আখলাকু ওয়া সিয়ারুহু ওয়া সুনানুহু।

৪৬. বিহারুল আনোয়ার , একাদশ খণ্ড , পৃ:১১৭।

৪৭..কবিতাটির বাংলা অর্থ নিম্নরূপ্ল :

*চেনে তাকে মরু মক্কার প্রতিটি পাথরকণা ,

খানে কা বার কাছে নন তিনি অচেনা অজানা।

হেরেমের ধূলা-বালির যতো অণূ-পরমাণু

বাইরে মৃত্তিকাও অবগত তার পরিচয়খানা।

*নন্দন তিনি অতি প্রিয় বান্দা খোদার ;

সবার সেরা আবেদ তিনি মোত্তাকী পরহেযগার।

পুতঃপবিত্রতার প্রতীক তিনি জগতে খ্যাত ,

অতুল ব্যক্তিত্বাসনে অশেষ মর্যাদার।

*যতোই বলো না কেন চেনো না তারে ;

কি তাতে আসে যায় , না কমে-না বাড়ে!

তোমার চেনা-অচেনায় নেই তাঁর নোকসান-

কেননা আরব-আজম জানে তাঁকে হাড়ে হাড়ে।

৪৮. বিহারুল আনোয়ার , দ্বাদশ খণ্ড , পৃ:. ১৪ ।

৪৯. বিহারুল আনোয়ার , নবম খণ্ড , তাবরিয সংস্করণ , পৃ. ৬১৩।

৫০. ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ: ৫৮২।

৫১. বিহারুল আনোয়ার ,একাদশ খণ্ড ,কোম্পানী ,পৃ. ১১০ ,ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , মুদ্রণ-আসীর বাহাদুর ,পৃ. ৪৯।

৫২.ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ: ২১২।

৫৩.এরশাদে দেইলামী।

৫৪. বিহারুল আনোয়ার , দ্বাদশ খণ্ড , পৃ: ৩১।

৫৫. আল কুনা ওয়াল আলকাব , মুহাদ্দিসে কুমী , দ্বিতীয় খণ্ড , আলহাফী শিরোনাম , পৃ. ১৫৩ , আলামা লিখেছেন মিনহাজুল কারামাহ গ্রন্থ থেকে।

৫৬. মালেক ইবনে আনাস বিন মালেক বিন আবী আমের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের চারজন বিখ্যাত ইমামগণের একজন। বিখ্যাত মালেকী মাযহাব তার নামানুসারেই। তিনি ইমাম আব হানীফার সময়কালের একজন আলেম। ইমাম শাফেঈ ইমাম মালেকের শিষ্য ছিলেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ইমাম শাফেঈর শিষ্য ছিলেন।

ফেকাহশাস্ত্রের দিক থেকে ইমাম মালেক ও আবু হানীফার মতবাদে বিরাট পার্থক্য ছিল। এ দু টি মতবাদকে একটি আরেকটির ঘোর বিরোধী বলে ধরা হয়। কেননা আবু হানীফা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের রায় ও কিয়াসকে প্রাধান্য দিতেন । এর বিপরীতে ইমাম মালেকের ফেকহী মতবাদ অধিকতর হাদীসের উপর নির্ভরশীল। এর সাথে সাথে ইবনে খালকান তার রচিত ওয়াফইয়াতুল আ ইয়ান নামক গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডের ২৮৬ পষ্ঠায় লিখেছেন যে , ইমাম মালেক তার মৃত্যুর পূর্বে অনেক কান্নাকাটি করতেন। এর কারণ ছিল এই যে , তিনি কতিপয় ফতোয়া নিজের রায় ও কিয়াসের ভিত্তিতে দিয়েছিলেন। তার জীবনের শেষ মুহূর্তে সে ভুলের কথা গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছিল। তাই যখনই তার নিজের রায় ও কিয়াস ভিত্তিক প্রদত্ত ফতোয়ার কথা তার মনে জাগতো তখনই তিনি অস্থিরভাবে কান্নাকাটি শুরু করতেন। আর নিজের অজান্তেই বলতেন , হায় আফসোস! আমি যদি অমার রায় মোতাবেক সে ফতোয়াগুলো না দিতাম। আমি এখন এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রস্তুত রয়েছি যে , আমার নিজস্ব রায়ের ভিত্তিতে দেয়া প্রতিটি ফতোয়ার বদলে এক একটি করে বেত্রাঘাত করা হোক। যাতে করে আমি সে সব গুনাহ থেকে মক্তি লাভ করতে পারি।

মালেকী মাযহাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিশেষ ব্যাপার হচ্ছে যে , তারা মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ মাহাজ যিনি শহীদ হয়েছেন তার বাইয়াতকে সঠিক মনে করে। এ মাযহাবের দৃষ্টিতে বনী আব্বাসীয়দের , যারা শক্তি দ্বারা খেলাফতের ক্ষমতা দখল করেছে তাদের বাইয়াত করা জায়েয নয়। ইমাম মালেক কখনও তার এ আকীদা-বিশ্বাস প্রকাশ করা পরিত্যাগ করেননি। তিনি বনী আব্বাসীয়দের প্রতাপ-প্রতিপত্তি ও দোর্দণ্ড প্রভাবের কোনই পরোয়া করতেন না। এ কারণেই সাফফাহ ও মনসুরে চাচা জা ফর ইবনে সুলাইমান আব্বাসীর হুকুমে তাকে কঠোর বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। কিন্তু এটা একটা আশ্চর্যের বিষয় যে , আব্বাসীয় শাসকদের পক্ষ থেকে প্রহারের কারণে মালেকের খ্যাতি , জনপ্রিয়তা ও সম্মান অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেল। ওয়াফইয়াতুল আ ইয়ান গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডের ২৮৫ পৃষ্ঠায় এ পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

মদীনায় অবস্থা্নকালে ইমাম মালেক সব সময় ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতেন। তিনি তাদেরই মধ্য থেকে একজন , যারা ইমাম (আঃ)-এর কাছ থেকে হাদীস বণর্ না করতেন। বিহারুল আনোয়ারের বর্ণনা মতে ইমাম সাদিক (আঃ) ইমাম মালেককে খুব ভালো জানতেন। আর প্রায়ই তিনি মালেককে বলতেন , আমি তোমাকে ভালো জানি। মালেক ইমামের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে খুব খুশী হতেন। আল-ইমাম আস-সাদিক নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে যে , ইমাম মালেক প্রায়ই বলতেন , আমি একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতাম। তখন আমি ইমামকে অধিকাংশ সময় দেখতে পেতাম নামায-রোযা , তিলাওয়াতে কোরআন ইত্যাদি নেক কাজে ব্যস্ত। ইবাদত-বন্দেগী , তাকওয়া-পরহেযগারী ও জ্ঞান-গরিমার জগতে তার থেকে বড় কাউকে আর আমি দেখিনি। বিহারুল আনোয়ারে ভাষ্য অনুযায়ী ইমাম মালেক ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ) সম্পর্কে এভাবে বলতেন , ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ) অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন একজন ইবাদতকারী ও মোত্তাকী-পরহেযগার লোক ছিলেন। তিনি মহান আল্লাহকে অনেক ভয় করতেন। মহানবী (সাঃ) এর অনেক অনেক হাদীস তার মুখস্ত ছিল। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নেক চরিত্রের অধিকারী এক মহান ব্যক্তিত্ব। তাঁর সংস্পর্শে এসে অনেক কিছু অর্জন করা যেতো। তাঁর সংস্পর্শে এসে ও তার মজলিসে বসে লোকেরা সব রকমের সৌভাগ্য ও বরকত হাসিল করতো। মহানবী (সাঃ) এর নাম তাঁর সামনে উচ্চারিত হবার সাথে সাথেই তাঁর চেহারার রং পাল্টে যেতো।

৫৭. বিহারুল আনোয়ার , একাদশ খণ্ড , পৃ. ১০৯।

৫৮. ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ. ৫৩১ , বিহারুল আনোয়ার , নবম খণ্ড , পৃ. ৫৯৯।

৫৯. উসূলে কাফী দ্বিতীয় খণ্ড বাবুল বাযা , পৃ. ৩২৪ , ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ. ৪৭৭।

৬০. নাহজুল বালাগাহ , শরহে ইবনে আবিল হাদীদ , বৈরুত সংস্করণ , চতুর্থ খণ্ড , পৃ. ৩৮৯।

৬১. তাতিম্মাতুল মুনতাহা , মুহাদ্দেসে কুমী , দ্বিতীয় খণ্ড , পৃ. ৪০০ , তারীখে ইবনে খালকান , তৃতীয় খণ্ড , পৃ. ৪৪।

৬২. মুরযুযাহাব ,মাসউদী ,মিসর সংস্করণ ,দ্বিতীয় খণ্ড ,পৃ.১৭৪ ,আহওয়ালে ওমর ইবনে আব্দুল আযীয অধ্যায়ে ।

৬৩. আল আনোয়ারুল বাহিয়াহ ,মোহাদ্দেসে কুম্মী ,পৃ.৭৬ ।

৬৪. কিতাবে নিয়ায়েশ এর অনুবাদের ভূমিকাংশ (আলেকসিস কার্ল রচিত) জনাব মুহাম্মাদ তাকী শরীয়াতীর লিখিত।

৬৫.কাফী , দ্বিতীয় খণ্ড , বাব হাকীকাতল ঈমান ওয়াল ইয়াকনী ,পৃ.৫৩।

৬৬. সীরায়ে ইবনে হিশাম , প্রথম খণ্ড , পৃ. ৩২১-৩৩৮ , শরহে ইবনে আবিল হাদীদ নাহজুল বালাগাহ। চতুর্থ খণ্ড , বৈরুত সংস্করণ , পৃ. ১৭৫- ১৭৭ , নাসেখুত তাওয়ারিখ হিজরত পূর্ব ঘটনাবলী।

৬৭. বিহারুল আনোয়ার , ১১শ খণ্ড , প. ১২০।

৬৮. কাফী , দ্বিতীয় খণ্ড , বাবু হাক্কুল জাওয়ার , পৃ. ৬৬৬।

৬৯. বিহারুল আনোয়ার , ১১শ খণ্ড , প. ১০৫।

৭০. শরহে ইবনে আবিল হাদীদ , তৃতীয় খণ্ড , পৃ. ৫৬৮-৫৭০ , মাগাযীয়ে ওয়াকেদী থেকে সংকলিত।

৭১. ওয়াসায়েল দ্বিতীয় খণ্ড , প. ৪৫৭।

৭২. ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , প. ৪৬২ ।

৭৩. বিহারুল আনোয়ার , একাদশ খণ্ড , পৃ. ২১৫।

৭৪. কুহলিল বাছার , মুহাদ্দেসে কুমী , পৃ. ৭৯।

৭৫. ওয়াসায়েল , দ্বিতীয় খণ্ড , প. ৫৭।

৭৬ সীরাতে ইবনে হিশাম , প্রথম খণ্ড , পৃ. ২৬৫।

৭৭. রওযাতল জান্নাত ,হাজী সাইয়্যেদ সাঈদ প্রকাশিত , পৃ. ৭৪৭।

৭৮. তারীখে উলুমে পিইউররোসো , পৃ. ৩৮২-৩৮৩।

৭৯. আইনে সখানভারী , মরহুম মহাম্মাদ আলী ফরুগী রচিত , দ্বিতীয় খণ্ড , প. ৫-৬।

৮০. সীরাতে ইবনে হিশাম , ১ম খণ্ড , পৃ. ৪১৯-৪২১।

৮১. কাব্যার্থ : *দেখেছো তোমরা ? কতো উচ্চ ব্যক্তিত্বের শবদেহ- চলে গেছে এ পথিবীর মায়া সাঙ্গ করে ; হেরেছো তোমরা ? কেমন করে হলো এমন ? স্তব্ধ হয়ে গেছে প্রজাপতির সমারোহ চিরতরে।

*লুটিয়ে পড়েছে ভূতলে হিমাদ্রিসম পর্বত , হতো যদি নিপতিত অতল সাগর বুকে- উপচে উঠতো তার সীমাহীন জলরাশি , প্লাবিত হতো ভরপুর বারিধির উপরি মুখে!!

*তোমার মৃত্যুর আগে কখনো পায়নি স্থান- আমার বিশ্বাস জগতের মণিকোঠায় একটিবার , পর্বতসম তোমাকেও একদিন মৃত্তিকার অভ্যন্তরে লুকিয়ে নেবে চিরতরে ফিরিয়ে দেবে না আর!!

৮২. ওয়াফইয়াতুল আইয়ান , মুহাদ্দেস কুমী দ্বিতীয় খণ্ড , প. ৩৬৫ আসসাবী অধ্যায়।

৮৩. আলকুনা ওয়াল আলকাব , দ্বিতীয় খণ্ড , আল বসরী শিরোনাম , বিহারুল আনোয়ার , প্রথম খণ্ড , পৃ. ২২৪ , হাদীস নং-১৭ ।

৮৪.তরজমাতুল মুনাকায মিনাদ্দলালাহ (এতেরাফাতে গাযযালী) , তারীখে ইবনে খালকান , পঞ্চম খণ্ড , পৃ. ৩৫১-৩৫২ , গাযযালী নামাহ।

৮৫. আবুযার গিফারী , রচনায় আব্দুল হামীদ জাওয়াতুসসিহার , (অনুবাদ-আলী শরীয়তী , বর্ধিত কলেবরে)।

৮৬. বিহারুল আনোয়ার , ১১শ খণ্ড , পৃ. ১৭ , ২৭ , আল ইমাম আসসাদিক , ১ম খণ্ড , পৃ. ১১১ , আল-ইমামু যয়নুল আবেদীন , রচনায়-আব্দুল আযীয সাইয়্যেদুল আহাল , অনুবাদ-হোসাইন বিজদানী , পৃ. ৯২।

৮৭. বিহারুল আনোয়ার , সপ্তম খণ্ড , ১০৩নং অধ্যায় , পৃ.-৫৯৭ ।

আমরা এবং ইসলাম

ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী আমরা ইরানীরা কয়েক সহস্রাব্দ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ আবার কখনও শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করেছি। এ সম্পর্কের কারণে তাদের অনেক চিন্তা ও বিশ্বাস যেমন আমাদের মধ্যে এসেছে তেমনি আমাদের অনেক চিন্তা ও বিশ্বাসও তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। যখনই অন্য জাতি ও গোষ্ঠীর জাতিসত্তা ও প্রভুত্বের কথা এসেছে আমরা তাদের মাঝে বিলুপ্ত হইনি ;বরং অন্য জাতিসত্তাকে প্রতিরোধ করেছি। তবে আমরা নিজ জাতিসত্তাকে ভালবাসার কারণে এটি করলেও এর মধ্যে কোন গোঁড়ামি বা অন্ধ বিশ্বাস ছিল না। কারণ মনের কোন অন্ধত্বই আমাদের সত্য হতে দূরে রাখতে এবং সত্যের বিরোধী ও শত্রু করতে পারেনি।

হাখামানেশী রাজত্বের সময় যখন ইরান বর্তমান সীমার বাইরেও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশসহ একই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন হতে বর্তমানে দু হাজার পাঁচশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। পঁচিশ শতাব্দীর মধ্যে চৌদ্দ শতাব্দী ধরে আমরা ইসলামের ছায়ায় বাস করছি এবং এ ধর্ম আমাদের জীবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। এ দীনের রীতি ও শিক্ষাতেই আমরা আমাদের শিশুদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছি ,আমাদের জীবন পরিচালিত করেছি ,এক আল্লাহর ইবাদাত করেছি ,এ দীনের রীতিতেই আমাদের মৃতদের কবরস্থ করেছি। আমাদের ইতিহাস ,রাজনীতি ,বিচার ব্যবস্থা ,আইন ,সংস্কৃতি ,সভ্যতা ,সামাজিক আচার-এক কথায় সকল কিছু ইসলামের সঙ্গে মিশে গেছে। সকল জ্ঞানী ব্যক্তিই স্বীকার করেছেন ,ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে শতাব্দীকাল ধরে আমরা অসাধারণ ও মহা মূল্যবান অবদান রেখেছি যা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না ,এমনকি অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে দীনের প্রচার-প্রসার এবং উন্নয়নে আরবদের চেয়েও অধিক অবদান রেখেছি। কোন জাতিই আমাদের মত এ দীনের প্রচার-প্রসার ও বিস্তৃতিতে ভূমিকা রাখতে পারেনি।

এ জন্যই ইসলাম ও ইরানের সম্পর্ককে বিভিন্ন আঙ্গিকে পর্যালোচনার অধিকার আমরা রাখি। ইসলামী জ্ঞানের প্রসারে আমাদের ভূমিকা এবং আমাদের আত্মিক ও বস্তুগত উন্নয়নে ইসলামের অবদান পূর্ণাঙ্গ ও যথার্থরূপে ঐতিহাসিক নির্ভরযোগ্য প্রমাণসহ স্পষ্ট করে তুলে ধরতেই আমাদের এ আলোচনা।

বর্তমান সময়ে জাতি আরাধনা

বর্তমান শতাব্দীর বহুল আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো জাতীয়তা। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক জাতিগোষ্ঠীই ,এমনকি মুসলমানদের মধ্যে ইরানী ও অ-ইরানী সকলেই এ বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। তাদের অনেকে এ আলোচনায় এতটা ডুবে গিয়েছেন ,যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই।

বাস্তবতা হলো বর্তমান সময়ে জাতীয়তাবাদ মুসলিম বিশ্বের জন্য এক বিরাট সমস্যা। জাতীয়তাবাদের ধারণা ইসলামী মৌল প্রশিক্ষণের নীতির বিরোধী ও এ চিন্তাধারা মুসলিম ঐক্যের পথে বড় প্রতিবন্ধক।

আমরা জানি ইসলামী সমাজ বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গঠিত এবং অতীতে ইসলাম বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে ইসলামী সমাজের ছায়ায় একত্রিত করেছে। এ একতা এখনও বাস্তবে বিদ্যমান। এটি বাস্তব সত্য ,এখনও সত্তর কোটি1 মানুষের বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠী এক চিন্তা ,মূল্যবোধ ,অনুভূতি এবং সহাবস্থানের ধারণায় বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে তা তাদের নিজস্ব নয় ;বরং তা সরকারসমূহ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এবং সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোতে যার কারণ আমেরিকা ও ইউরোপের শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ। তদুপরি এ সকল কারণ মানুষের অন্তরের এ ভিত্তিকে ধ্বংস করতে পারেনি। ইকবাল লাহোরীর ভাষায় :

সত্যের প্রমাণ মোদের নিকট রয়েছে একটিই ,

তাঁবুগুলো বিচ্ছিন্ন মোদের ,হৃদয় তো একটিই।

অধিবাসী মোরা কেউ হিজায ,চীন ,ইরান ও ভারতের ,

সকলে মোরা যেন শিশির একই প্রভাতের।

এই একক জনগোষ্ঠী হতেই প্রতি বছর হজ্বের মৌসুমে পনেরো লক্ষ মানুষের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।

জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবাদ এমন এক চিন্তা যা বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করায়। গত শতাব্দী2 হতে ইউরোপে এ চিন্তার ঢেউ উচ্চকিত হয়েছে । হয়তো বা সেখানে এটি স্বাভাবিক। কারণ ইউরোপে এমন কোন মতবাদ ছিল না যা সেখানকার বিভিন্ন জাতিকে উচ্চতর পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদীদের মাধ্যমে এ ঢেউয়ের ধাক্কা প্রাচ্যের জাতিগুলোর মধ্যেও লাগে। সাম্রাজ্যবাদ বিভেদের জন্ম দাও ও শাসন কর নীতি প্রয়োগ শুরু করে। এ নীতি বাস্তবায়নের জন্য সর্বোত্তম পথ হিসেবে ইসলামী জাতি-গোষ্ঠীসমূহকে নিজ নিজ বর্ণ ও জাতিসত্তার প্রতি মনোনিবেশের দিকে পরিচালিত করার প্রচেষ্টা নেয় এবং এক কাল্পনিক আত্মগর্বে নিমজ্জিত হতে উদ্বুদ্ধ করে ,যেমন ভারতীয়কে বলে ,তোমার অতীত এরূপ গৌরবময় ,তুর্কীকে বলে ,প্যানতুর্কী ইজম ধারণায় নব্য তুর্কী আন্দোলন শুরু কর ,আরবকে বলে ,তাদের মধ্যে পূর্ব হতেই গোত্রবাদের ধারণাসহ আরব জাতিত্বের ধারণা প্রকট ছিল-আরবী ভাষার ওপর ভিত্তি করে প্যান আরব ইজম আন্দোলনের সূচনা কর। ইরানীকে বলে ,তুমি আর্য জাতিভুক্ত এবং সেমিটিক জাতিভুক্ত আরব হতে ভিন্ন ,তোমার চিন্তা-ধারণা সবই ভিন্ন।

জাতীয়তাবাদী ধারণা জাতীয় চিন্তা ও অনুভূতির জাগরণের মাধ্যমে হয়তো অনেক জাতিরই স্বাধীন অস্তিত্বের বিষয়ে ইতিবাচক ও কল্যাণকর কিছু প্রভাব রাখতে পারে ,কিন্তু ইসলামী জাতিগুলোর মধ্যে এর কল্যাণকর কোন প্রভাব তো পড়েইনি ;বরং অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দেখা দেয়। ইসলামী জাতিসমূহ শতাব্দীকাল পূর্বে ঐক্যের আরো উচ্চতর পর্যায় অতিক্রম করেছিল। কারণ ইসলাম শতাব্দীকাল পূর্বে একক চিন্তা ,বিশ্বাস ও আদর্শের ভিত্তিতে অনন্য ঐক্য সৃষ্টি করেছিল ,এমনকি বিংশ শতাব্দীতেও ইসলাম প্রমাণ করেছে এ ঐক্যের ভিত্তি উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর!

বিংশ শতাব্দীতে মুসলমানরা উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে যে সব আন্দোলনের মাধ্যমে উপনিবেশবাদীদের প্রভাব হতে নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে তার পেছনে জাতিগত কারণ অপেক্ষা ইসলামী কারণই মুখ্য ও অধিকতর ফলপ্রসূ ছিল। উদাহরণস্বরূপ আলজিরিয়া ,ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের কথা বলতে পারি।

হ্যাঁ ,এ জাতিসমূহ শতাব্দীকাল হতে প্রমাণ দিয়েছে এক চিন্তা ,বিশ্বাস ও মতাদর্শের ভিত্তি এমন এক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সৃষ্টি করতে পারে যা তাদেরকে সাম্রাজ্যবাদের থাবা হতে মুক্ত করতে সক্ষম। তাই এরূপ জাতি-গোষ্ঠীকে জাতীয়তাবাদের মত চিন্তার দিকে পরিচালিত করা প্রতিক্রিয়াশীলতা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

সুতরাং বর্ণ ও জাতীয়তাবাদের উদ্গাতা হলো ইউরোপ এবং এ চিন্তাধারা ইসলামী বিশ্বের জন্য অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সাইয়্যেদ জামালউদ্দীন আসাদাবাদীর (আফগানী) নিজ জাতিসত্তা গোপন করার কারণ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে ,তিনি চান নি তাঁকে বিশেষ কোন জাতিভুক্ত বলে পরিচিত করানো হোক যা উপনিবেশবাদীদের হাতে একটি হাতিয়ার হতে পারে এবং অন্য জাতিভুক্তদের তাঁর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করতে পারে।

আমরা যেহেতু এক ধর্ম ,একই মতাদর্শ ও পথের ওপর রয়েছি যার নাম ইসলাম এবং যার মধ্যে জাতিগত ধারণার উপাদান নেই সেহেতু এ মতাদর্শের বিপরীতে বর্ণ ও জাতিগত যে কোন ধারণার বিরুদ্ধে আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। আমরা অবহিত ,সম্প্রতি অনেক ব্যক্তিই ইরানী জাতিসত্তা সংরক্ষণের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছে এবং আরব ও আরবী ভাষার বিরুদ্ধে সংগ্রামের নামে ইসলামের পবিত্র অনুভূতির প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করছে।3

ইরানে ইসলামের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধের নমুনা আমরা বই-পুস্তক ,দৈনিক ,সাপ্তাহিক ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লক্ষ্য করছি। এটি আকস্মিক কোন বিষয় নয় ;বরং একটি পরিকল্পিত নকশা ও লক্ষ্যের ফলশ্রুতি।

বর্তমানে যারথুষ্ট্র ( Zoroastrian)ধর্মের প্রচারণা বেড়ে গিয়েছে এবং এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। সকলেই জানেন আজকের ইরানীরা কখনই যারথুষ্ট্র ধর্মে ফিরে যাবে না এবং যারথুস্ট্র ধর্মের শিক্ষাও ইসলামের স্থান দখল করতে পারবে না। যে সকল ব্যক্তি মাযদাকী , মনী এবং যারথুষ্ট্র ধর্মের ব্যক্তিত্ব বলে পরিচিত তাদের সকলেই আজ জাতীয় মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিহিত এবং ইসলামী শিক্ষা হতে বিচ্যুত চরিত্র বৈ তাদের ভিন্ন কোন চরিত্র ছিল না। এখানে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই হোক বা আরব জাতির বাহানা এনেই হোক কার্যক্রম চালিয়ে ইরানীদের মন হতে ইসলামের প্রসিদ্ধ বীরদের স্মৃতি মুছে দিতে পারবে না। কখনই আল মুকান্না , মিনবাদ , ববাকে খুররামদীন এবং মজিয়ররা ইরানীদের অন্তরে আলী ইবনে আবি তালিব , হুসাইন ইবনে আলী , এমনকি সালমান ফারসীর স্থান অধিকারে সক্ষম নয়। সকলেই তা জানে।

যদিও এর মাধ্যমে হয়তো অপরিপক্ব ও বুদ্ধিহীন যুবকদের মধ্যে দেশ ,জাতি ও রাষ্ট্রীয় চেতনা ও অনুভূতি জাগরিত করা এবং তাদের সঙ্গে ইসলামের ব্যবধান ও সম্পর্কচ্ছেদ সৃষ্টি সম্ভব। অর্থাৎ যদিও ইসলামী অনুভূতির স্থলাভিষিক্ত হিসেবে অন্য ধর্মানুভূতি প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয় ,কিন্তু ইসলামী অনুভূতির পরিবর্তন ঘটিয়ে তার বিপরীত অনুভূতি সৃষ্টি করে সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতা করা সম্ভব। এজন্যই লক্ষ্য করি ধর্ম ও আল্লাহ্বিরোধী ব্যক্তিরা বুদ্ধিহীন মগজ হতে উৎসারিত অর্থহীন লেখাগুলোতে যারথুষ্ট্র এবং ইসলাম পূর্ববর্তী ইরানের অবস্থাকে সমর্থন করে চলেছে। তাদের লক্ষ্য আমাদের নিকট স্পষ্ট।

আমরা আমাদের এ আলোচনায় ঐ যুক্তি এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আলোচনা করব যে যুক্তি ও দৃষ্টিকোণ থেকে এই ব্যক্তিরা বিষয়টিকে দেখে। আর তা হলো জাতীয়তা ,জাতীয় চেতনা এবং জাতীয়তাবাদ। হ্যাঁ ,এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা আলোচনা রাখব। যদিও আমরা ইকবাল লাহোরীর এ কথা ভুলে যাই নি- জাতিভক্তি ও আরাধনা এক প্রকার অসভ্যতা । এ বিষয়টির প্রতি আমাদের দৃষ্টি রয়েছে যে ,জাতীয় চেতনা ও অনুভূতির ইতিবাচকতা ততক্ষণ পর্যন্ত রয়েছে যতক্ষণ এর মাধ্যমে স্বদেশের মানুষের সেবা করা যায। কিন্তু কখনও কখনও অনুভূতি ও চেতনা নেতিবাচকতার জন্ম দেয় ,বৈষম্যের সৃষ্টি করে ,ভাল-মন্দ বিচারে অন্ধত্ব ও পক্ষপাতিত্ব এবং নৈতিকতা ও মানবিকতাবিরোধী চেতনার উৎপত্তি ঘটায়।

আমরা জানি জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় চেতনার যুক্তি অপেক্ষা উচ্চতর যুক্তি আমাদের নিকট রয়েছে যেখানে জ্ঞান ,দর্শন ও ধর্ম আবেগ-অনুভূতির ঊর্ধে অবস্থান করছে। জাতীয় অনুভূতির চেতনা সকল স্থানে গ্রহণীয় হলেও জ্ঞান ,দর্শন ও ধর্মের অনুসন্ধানে গ্রহণযোগ্য নয়। জ্ঞান ,দর্শন ও ধর্মীয় কোন বিষয়ে তা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় হলেই গ্রহণযোগ্য হবে এমনটি নয়। তেমনিভাবে চিন্তাগত কোন বিষয় বিদেশী ও বিজাতীয় হলেই তা বর্জনীয় এমনও নয়। এ কথা সত্য যে ,জ্ঞান ,ধর্ম ও দর্শনের কোন রাষ্ট্র নেই । কারণ এগুলো সর্বজনীন। তাই ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ,বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদেরও কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্র নেই ,তাঁরাও বিশ্বজনীন। তাঁরা সমগ্র বিশ্বের ,সকল রাষ্ট্রই তাঁদের রাষ্ট্র এবং সকল মানুষই তাঁদের স্বদেশী।

যদিও বিষয়গুলো আমরা জানি তদুপরি এখানে মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চতর এ যুক্তিকে আমরা আপাতত দূরে রাখছি এবং অপূর্ণাঙ্গ মানুষদের উপযোগী অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক যুক্তির ওপর নির্ভর করেই এ আলোচনা শুরু করছি।

আমরা দেখতে চাই জাতীয় চেতনা ও অনুভূতির দৃষ্টিতে যদি ইসলামকে যাচাই করি তা কি বিজাতীয় বলে পরিগণিত হবে ? আমরা দেখতে চাই জাতীয়তার মানদণ্ডে ইসলাম ইরানী জাতীয়তা ও ইরানী জাতীয়তাবাদী চেতনার অন্তর্ভুক্ত নাকি এর বহির্ভূত।

এ লক্ষ্যে আমাদের আলোচনাকে দু টি অংশে ভাগ করব। প্রথমত আমরা জাতীয়তার মানদণ্ড অর্থাৎ কোন বস্তুকে জাতীয়তার অন্তর্ভুক্ত ও বহির্ভূত বলার মানদণ্ড কি তা দেখব। দ্বিতীয়ত দেখব এ মানদণ্ডের আলোকে ইসলাম ইরানী জাতীয়তার অভ্যন্তরের বিষয় নাকি বিজাতীয় ? বাস্তবে আমাদের আলোচনায় দু টি প্রতিজ্ঞা রয়েছে। প্রথম অংশ বৃহত্তর প্রতিজ্ঞা ( major premise) এবং দ্বিতীয় অংশ ক্ষুদ্রতর প্রতিজ্ঞা ( minor premise) ।

প্রসঙ্গত ইসলাম ও যারথুষ্ট্র প্রবণতার (যারথুষ্ট্র ধর্ম প্রবণতা) মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা রাখব এবং তাতে প্রমাণিত হবে জাতীয়তার মানদণ্ডে ইসলাম ইরানী জাতিসত্তার অধিকতর নিকটবর্তী নাকি যারথুষ্ট্র প্রবণতা ?


6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18