সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার0%

সত্য কাহিনী সম্ভার লেখক:
: মাওলানা আলী আক্কাস
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

সত্য কাহিনী সম্ভার

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহহারী
: মাওলানা আলী আক্কাস
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 43033
ডাউনলোড: 4690

সত্য কাহিনী সম্ভার
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 79 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 43033 / ডাউনলোড: 4690
সাইজ সাইজ সাইজ
সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি তার বিষয়ের সর্বপ্রথম ও অনন্য অবতারণা হোক অথবা না হোক , এর জন্য প্রাপ্য ফুলের মামলার যোগ্য পাত্র আমি নই , অর্থাৎ যদি এ বইটি কাহিনী রচনার জগতে কোন গুরুত্বপূর্ণ নতুন অবতারণার দাবিদার হয় তাহলে তার গোড়াপত্তনকারী আমি নই। বরং প্রকাশনা ও প্রচারণার একটি প্রতিষ্ঠানে দেশের বিজ্ঞ বিজ্ঞ বিজ্ঞানী-গুণী কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি সম্পাদনা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ অধমও সে বোর্ডের একজন সদস্য। দেশের খ্যাতনামা লেখক ও বিজ্ঞতম ব্যক্তিত্ব সমৃদ্ধ সে বোর্ডের এক বৈঠকে প্রস্তাব রাখা হলো যে , এমন একটি গ্রন্থ রচিত হওয়া উচিত যার মধ্যে চারিত্রিক সুন্দর ও গুণাবলী কাহিনী আকারে উপস্থাপিত থাকবে। আর সে কাহিনীগুলো লেখকের নিজের মস্তিষ্ক থেকে আবিস্কৃত বা নিজের খেয়াল মোতাবেক তৈরি হবে না। বরং তার ভিত্তিমূল ও উৎস হবে হাদীস , বাস্তব জীবন ও ইতিহাসের গ্রন্থরাজি। এর সংকলনের উদ্দেশ্য থাকবে মুসলিম সমাজকে শিক্ষা দান এবং যুব সমাজকে হেদায়েতের পথ প্রদর্শন ও পরিচালনা করা।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ভূমিকা

এ কাহিনীগুলো সংগ্রহ , সাজানো ও প্রকাশকালে আমি আমার অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধব ও ঘনিষ্ঠদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছি যে , আজকাল আমি এমন সংগৃহীত। কাহিনীগুলোর সবই সত্য কাহিনী। সত্য ও বাস্তবতা সমৃদ্ধ এ কাহিনীগুলো সাজানোর ব্যাপারে আকর্ষণীয় পদ্ধতি ও সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করেছি যাতে করে সাধারণ ও বিশেষ শ্রেণীর লোকদের প্রত্যেকেই সব সময় এর থেকে উপকৃত হতে পারে। আমার কথা শুনে লোকেরা এ গ্রন্থটির প্রশংসা করতে লাগলেন। কেউ কেউ নিজেদের খেয়াল প্রকাশ করে বললেন , আসলে এ বইটি যুবক শ্রেণী ছাড়াও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী ও কার্যকরী হবে। কেউ কেউ আবার নিজেদের খেয়াল প্রকাশ করে এ কথা বললেন , কাহিনী লেখার জগতে আজ পর্যন্ত এমন কোন দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয় না যেটিকে হাদীস ও ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলী থেকে সংগৃহীত বলে বলা হয়েছে। সুতরাং এ বইটি বিষয়গত দিক থেকে একটি সর্বপ্রথম ও অনন্য পদক্ষেপ। কাহিনী রচনার ময়দানে এ বিষয়টির অভাব অনুভূত হচ্ছিল। আশা করি এ বইটি সে অভাব পুরোপুরিভাবে দূর করে দিতে সক্ষম হবে।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে , এমন সব বহু গ্রন্থাদি সংকলিত , সম্পাদিত ও রচিত হয়েছে , যেগুলোতে চরিত্র আখলাক ও সামাজিক অবস্থার কথা বিষয় ভিত্তিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া এমনও অনেক বই-পুস্তক দেখতে পাওয়া যায় যেগুলোতে মানুষের জীবনের বিভিন্ন অবস্থা্ ও রূপকে লেখক নিজের চিত্তাকর্ষনীয় বর্ণনাভঙ্গি ও সুচিন্তিত পদ্ধতিতে সাজাবার সাথে সাথে কাহিনীর আকারে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু যদি লক্ষ্য করে দেখা যায় তাহলে সে সব কাহিনীতে যা কিছু বর্ণনা করা হয়েছে তার সব কথাই বাস্তব সত্য নয় , বরং দক্ষ লেখক হিসাবে রচয়িতা মানব জীবনে পরিদৃষ্ট হয় এমন সত্যগুলোর ছবি কিছুটা এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে , সাধারণ পাঠকদের নিকট তার বর্ণনাভঙ্গি মনঃপূত হয়। এতদ্ব্যতীত অনেক জীবনী গ্রন্থও পাওয়া যায় যেখানে কোন একজনের কিংবা কয়েকজন মহান ব্যক্তিত্বের জীবনের বিভিন্ন অবস্থা ইতিহাসের ন্যায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং এ সমস্ত গ্রন্থকে কাহিনী গ্রন্থের তালিকায় গণনা করা যায় না। আমার চোখের সামনেও এমন কোন কাহিনী গ্রন্থ পড়েনি যা হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থাদি হতে সংগৃহীত সত্য ও উপকারী কাহিনী সমৃদ্ধ। যার সংকলনের উদ্দেশ্য মানুষের হেদায়েতের সাথে সাথে ইসলামী চরিত্র-আখলাক ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটানো। যদি ইসলামী চরিত্র-আখলাক ও সংস্কৃতির প্রচারের উদ্দেশ্য কোন গ্রন্থ রচিত হয়েছে তবে সেটা কাহিনীর আকারে নয়। আর যদি কোন বই কাহিনীর আকারে জনসমক্ষে এসেছে তবে সেটার সংগ্রহের উৎস হাদীস ও ইতিহাসের গ্রন্থাবলী নয় বরং সেটা রচয়িতার পারদর্শিতা ও দক্ষতাকে স্পষ্ট করে তুলে ধরার নমুনা।

এ বইটি তার বিষয়ের সর্বপ্রথম ও অনন্য অবতারণা হোক অথবা না হোক , এর জন্য প্রাপ্য ফুলের মামলার যোগ্য পাত্র আমি নই , অর্থাৎ যদি এ বইটি কাহিনী রচনার জগতে কোন গুরুত্বপূর্ণ নতুন অবতারণার দাবিদার হয় তাহলে তার গোড়াপত্তনকারী আমি নই। বরং প্রকাশনা ও প্রচারণার একটি প্রতিষ্ঠানে দেশের বিজ্ঞ বিজ্ঞ বিজ্ঞানী-গুণী কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি সম্পাদনা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ অধমও সে বোর্ডের একজন সদস্য। দেশের খ্যাতনামা লেখক ও বিজ্ঞতম ব্যক্তিত্ব সমৃদ্ধ সে বোর্ডের এক বৈঠকে প্রস্তাব রাখা হলো যে , এমন একটি গ্রন্থ রচিত হওয়া উচিত যার মধ্যে চারিত্রিক সুন্দর ও গুণাবলী কাহিনী আকারে উপস্থাপিত থাকবে। আর সে কাহিনীগুলো লেখকের নিজের মস্তিষ্ক থেকে আবিস্কৃত বা নিজের খেয়াল মোতাবেক তৈরি হবে না। বরং তার ভিত্তিমূল ও উৎস হবে হাদীস , বাস্তব জীবন ও ইতিহাসের গ্রন্থরাজি। এর সংকলনের উদ্দেশ্য থাকবে মুসলিম সমাজকে শিক্ষা দান এবং যুব সমাজকে হেদায়েতের পথ প্রদর্শন ও পরিচালনা করা।

সংক্ষিপ্ত কথা হচ্ছে যে , সভায় সকল সদস্যের মতানুযায়ী এ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার ভূমিকা শুধু এতটুকুন যে , এ প্রস্তাব অন্যান্য সদস্যের তুলনায় আমার নিকট বেশী ভালো লেগেছে। তখনই আমি আমার মনে এ অঙ্গীকার করলাম যে , এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি আমি পালন করবো। তাই সত্য কাহিনী সম্ভার নামের এ বইটি সে প্রস্তাব ও অঙ্গীকারেই ফল হিসাবে আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারলাম।

সত্য কাহিনী সম্ভারে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি কাহিনী সংগ্রহের উৎস অর্থাৎ যে গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তার নাম কাহিনীর সমাপ্তি পর্যায়ে টীকা দিয়ে সমাপ্ত পৃষ্ঠারই নিচে লিখে দেয়া হয়েছে। এর কোন কোন কাহিনী একাধিক গ্রন্থ পাওয়া যায়। সুতরাং অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে বিবেচনা করে প্রতিটি সংগ্রহের ভিত্তি উল্লেখ করা হয়েছে। একাধিক গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে এ বিষয়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে যে , বিভিন্ন গ্রন্থে ভিন্ন ভিন্ন রচনাভঙ্গিতে একই ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। একই ঘটনাকে কেউ খুব সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন আবার অন্য লেখক সেটাকেই আরো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন।

মনে রাখতে হবে যে , যে কোন ঘটনাকেই বর্ণনা করার সময় মনের কল্পনা রূপায়ন বা রচনা শৈল্পিক প্রদর্শনীর নীতি অবলম্বন করা হয়নি , বরং যে গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সে গ্রন্থে যে ঘটনা যেভাবে বর্ণিত আছে ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। মোদ্দাকথা মূল ঘটনায় কোন কিছু বাড়ানো হয়নি। আর না তার থেকে কমানো হয়েছে। কিন্তু এর সাথে সাথে এ কথাটিও বলে দেয়া জরুরী যে , এ বইটিকে একটি নিছক শাব্দিক অনুবাদের বই মনে করাটা হবে বাস্তবতা বিরোধী। বরং কাহিনী লেখার সময় যথা সাধ্য এ চেষ্টা করা হয়েছে যে , মূল বর্ণনায় কোন প্রকার বাড়ানো বা কমানো ব্যতীত কাহিনীকে এমন ভঙ্গিতে তুলে ধরা হবে যা দ্বারা মানুষের রুচি-চাহিদাও পূরণ হবে এবং পাঠকের আত্মতৃপ্তিতে কোন প্রকার অসঙ্গতি ও অসম্পূর্ণতা সৃষ্টি হবে না। অধিকাংশ কাহিনীতে আপনারা দেখতে পাবেন যে , যে পুস্তক থেকে কাহিনীটি সংগ্রহ করা হয়েছে সে পুস্তকে কাহিনীর সূচনা এক রকমের আর এ পুস্তকে অন্য রকমের অথবা সে পুস্তকে যেখানে কাহিনীর সমাপ্তি , এ পুস্তকে সেখান থেকে শুরু হয়েছে। এভাবে এ বইয়ের উপস্থাপনা ও বর্ণনাভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। কিন্তু যদি একজন সত্যপন্থী পাঠক এ বইয়ের কাহিনী এবং যে বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে , এ দুটোই পাঠ করে তাহলে সে খুব সহজে বুঝতে পারবে যে , এ রদবদল কিছুটা এমনভাবে করা হয়েছে যে , কাহিনীর সত্যতা ও তার যথার্থতার ক্ষেত্রে কোনই পরিবর্তন সংঘটিত হয়নি , বরং কাহিনীকে আরো সমৃদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এ গ্রন্থে কাহিনীগুলোর ফলাফল ও শিক্ষনীয় বিষয়াবলীর বর্ণনা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়নি। তবে এর মধ্যে এমন কতকগুলো বাক্য নিহিত রয়েছে যা দ্বারা কাহিনীর ফলাফল বেরিয়ে আসে। এমন কি কাহিনীগুলোর শিরোনাম চয়নকালে যথা সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে যে , তা যেন এমন না হয় , যা সরাসরি এর ফলাফলের দিকে ইঙ্গিত করে। এটা এ কারণে যে , আমরা চাইলাম ফলাফল নির্ণয়ের দায়িত্বভার স্বয়ং পাঠকবৃন্দের উপরই ন্যস্ত করবো।

কোন গ্রন্থ রচনা বা বর্ণনার পূর্ণত্ব ও সৌন্দর্য হচ্ছে তার পাঠকের চিন্তা জগতে সাড়া জাগাবে এবং সে বর্ণনায় প্রাপ্ত গভীর তাৎপর্য পর্যন্ত পৌছার জন্য চিন্তাগত দিক থেকে প্রস্তুত হয়ে যাবে। বর্ণনাটি উপস্থাপন করার সময় সহজবোধ্য রচনাভঙ্গি ও সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করা উচিত যাতে করে পাঠককে তা বুঝবার জন্য বেশী চিন্তা-ভাবনা করতে না হয় এবং খুব সহজে সে লেখায় নিহিত তাৎপর্য বুঝে নিতে পারে। কিন্তু সে লেখার ফলাফল হাসিল করার বিষয়টি পাঠকদের চিন্তার ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত যাতে করে তার চিন্তা-ভাবনা করার যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারে। যে লেখার ফলাফল পাঠক নিজে নির্ণয় করতে না পারে এবং নিজের চিন্তা-ভাবনা দ্বারা এর তাৎপর্য আরো বাড়াতে না পারে , সে লেখা তার হৃদয়ে কোন দাগ কাটতে পারে না অর্থাৎ কোন লেখার ফলাফল যদি পাঠক নিজে বের করতে সক্ষম হয় , তাহলে তার চিন্তা-ভাবনার পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে সে ফলাফল তার অন্তরে গেঁথে যায় এবং সে ফলাফলই তার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। আর যার প্রভাব একবার অন্তরে বসে যায় সেটাই বাস্তবে নিশ্চিতরূপে পরিদৃষ্ট হয় , অর্থাৎ নিজের চিন্তা-ভাবনা দ্বারা অর্জিত ফলাফলের প্রভাব তার বাস্তব অনুশীলনে অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও একটি বাস্তব সত্যকে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে , নিজের চিন্তা-ভাবনা দ্বারা অর্জিত ফলাফল প্রকৃতিগতভাবে হয়ে থাকে। সুতরাং এর দ্বারা মানব প্রকৃতি প্রভাবিত হওয়া নিশ্চিত।

আগেই বলা হয়েছে এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ কাহিনীই হাদীস গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। আর কাহিনীর প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বেশীর ভাগ দ্বীনী মহান ব্যক্তিবর্গকে চয়ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি কাহিনীর বেলায়ই এ কথাটি প্রযোজ্য হবে না , বরং ইলমে রিজাল ভিত্তিক কিতাবাদি তথা হাদীসের গ্রন্থাবলী ও দ্বীনের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের জীবন অবস্থা সম্বন্ধে আলোচনা ছাড়াও ইতিহাসের গ্রন্থাবলী থেকেও কোন কোন গল্প গৃহীত হয়েছে। এতদ্ব্যতীত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ওলামা ও বিজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদগণের সাথে সম্পৃক্ত সে সমস্ত ঘটনা কাহিনীকেও শামিল করা হয়েছে। যা দ্বারা মুসলিম সমাজের সংশোধন করা যেতে পারে , যা পাঠ করে লোকেরা উন্নত চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং বাস্তব জীবনে সেগুলোর অনুসরণ করার প্রেরণা লাভ করতে পারে। এ পর্যায়ে কোন প্রকার পক্ষপাতমূলক বা তরফদারীর নীতি অনুসরণ করা হয়নি , বরং শিয়া ওলামা ও পথ প্রদর্শকদের ছাড়াও অন্যান্য ইসলামী ও অনৈসলামী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সাথে সম্পৃক্ত ঘটনাবলীকেও কাহিনীর আকারে পেশ করা হয়েছে যাতে করে লোকেরা এর থেকে পুরোপুরিভাবে উপকৃত হতে পারে ।

গ্রন্থটির নামকরণের বেলায় এ সত্যটি চিন্তা-বিবেচনায় রাখা হয়েছে যে , কাহিনীগুলোতে প্রধান আকর্ষণের ভূমিকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন সব ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন , যাদের চরিত্র-আখলাক ও সত্যবাদিতার ব্যাপারে কারোই দ্বিমত নেই। আর যাদেরকে মহান আল্লাহর কিতাব আল কোরআন সিদ্দিকীন নামে তথা সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত করেছে। তাই এ গ্রন্থের নাম রাখা হয়েছে সত্য কাহিনী সম্ভার অর্থাৎ আমরা এ কথা বলতে চাই যে , এ গল্প-কাহিনীগুলো সে সমস্ত সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কিত , যারা নিজেদের সমগ্র জীবন সত্য-ন্যায় ও সঠিক পথের অনুসরণ ও প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করে রেখেছিলেন। এ নামকরণ দ্বারা অপর একটি ধারণা এটাও নেয়া যেতে পারে যে , এ গল্প-কাহিনীগুলো সে সমস্তলোকের জন্যই রচিত , যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে আগ্রহী এবং যাদের অন্তরে এ স্পন্দন রয়েছে যে , সত্য সত্য কাহিনীর আলোচনা দ্বারা নিজেদের আমল- অনুশীলনকে বিশুদ্ধ করে নেবেন। বস্তুত এ কাহিনীগুলো সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের ও সত্যাগ্রহী লোকদের জন্যই লেখা হয়েছে।

যেহেতু এ কাহিনীগুলো কারো মনগড়া নয় , বরং বাস্তবে যা সংঘটিত হয়েছে এবং এমন সব গ্রন্থাদিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যেগুলোতে যে কোন ঘটনাকেই অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে সত্যের পদাঙ্ক অনুসরণ করে লেখা হয়েছে। সুতরাং এ কাহিনীগুলো সার্বিকভাবে সত্য কাহিনী সম্ভার নামে আখ্যায়িত হওয়ার অধিকারী। মোটকথা এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কাহিনীগুলোকে কোনভাবেই সত্যের গন্ডি থেকে পৃথক করে দেখা যেতে পারে না।

এতে দ্বিমতের কোনই অবকাশ নেই যে , এ কাহিনীগুলো মানুষের চরিত্র-আখলাক ও সামাজিক জীবনে পথপ্রদর্শনের কাজটি আঞ্জাম দেবার বেলায় অত্যন্ত ফলদায়ক। এর সাথে সাথে এ কাহিনীগুলো ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার আধ্যাত্মিক পরিচয়টাও তুলে ধরে অর্থাৎ এ কাহিনীগুলো পাঠ করে পাঠক ইসলামী শিক্ষার আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করতে পারে। ইসলামী তত্ত্বজ্ঞান সম্পর্কে অবগতি হাসিল করার পর এ কাজটি খুবই সহজ হয়ে যায় যে , পাঠক নিজের ব্যক্তিগত জীবন ও সমাজ জীবনের পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তগ্রহণ করবে যে , তিনি যে পরিবেশ ও সমাজে বসবাস করছেন , সেটা ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী কিনা। এমনিতে বলার সময় তো প্রতিটি স্তরের লোকেরাই নিজেদেরকে মুসলমান হিসাবে দাবী করে। কখনও কখনও এমনও দেখা গেছে যে , কোন কোন দল ইসলামের সাইন বোর্ড নিজেদের গলায় ঝুলিয়ে চলাফেরা করে। কিন্তু যেভাবে বলা ও করার মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে , তেমনিভাবে ইসলামের দাবিদার ও ইসলামের ভিত্তির উপর অনুসারী হয়ে চলার মধ্যে বিরাট পার্থক্য থেকে যায়। ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত বাস্তব সত্য ও তত্ত্ব সম্বন্ধে যথাযথ অবগতি হাসিল করে নেয়া এবং আমল-অনুশীলনের জগতে সে সব ভিত্তির ওপর অনুগত থাকা বিরাট গুরুত্বের দাবিদার।

এ কাহিনীগুলো বিশেষ শ্রেণীর লোকদের জন্যও ততখানিই কল্যাণকর ও উপকারী , যতখানি সাধারণ মানুষদের জন্য। কিন্তু এ গ্রন্থ সংকলনের আসল ও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন। কেননা এরাই সে স্তরের লোক , যারা ন্যায়-ইনসাফ ও সত্যের সামনে অবনত মস্তক ঝুঁকিয়ে দেবার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে। এ শ্রেণীর লোকেরা সত্য-ন্যায়ের আনুগত্য করার ব্যাপারে কোন প্রকারের হীলা-বাহানা ও ছল-ছাতরীর পথ অবলম্বন করে না , বরং জানার সাথে সাথেই তার উপর আমল করার অনুসারী হয়ে যায়।

মানব সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের ভালো-মন্দের প্রভাব নিঃসন্দেহে পরস্পরেরে মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করে। এটা কিছুতেই সম্ভব নয় যে , এ শ্রেণীগুলোর মাঝে এমন একটা আড়াল দাড় করানো যেতে পারে , যার কারণে এক শ্রেণীর মন্দ কাজের প্রভাব অন্য শ্রেণীকে প্রভাবিত করতে পারে না। কিন্তু মানব ইতিহাসে আজ পর্যন্ত সাধারণত এটাই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে যে , ঝগড়া-লড়াই বা মন্দ কাজ সব সময় বিশেষ শ্রেণীর লোকদের থেকেই শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে এ মন্দের অনুশীলন সাধারণ লোকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক এর বিপরীতে সব রকমের সামাজিক ভালো কাজ ও জাগরণের ধারা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু হয়ে আসছে। অতঃপর বিশেষ শ্রেণীর লোকদেরকে এ ব্যাপারে বাধ্য করেছে যে , তারা সে ভালো কাজের অনুসরণ করবে অর্থাৎ পূর্ব থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে যে , ঝগড়া-লড়াই ও মন্দ উপর থেকে নিচের দিকে ছড়ায় আর ভালো কাজ নিচে থেকে উপরের দিকে গড়ায়। অল্প কথায় এরূপ বলা যেতে পারে যে , সমাজে বিস্তৃত মন্দ ও খারাপ কীর্তির উপর দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথেই এ কথা বুঝে নিতে হবে যে , এর ভিত্তি স্থা্পনকারী হচ্ছে বিশেষ বা উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা। আর ধীরে ধীরে এ মন্দ সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে একটা বিপজ্জনক ও ধ্বংসকর অবস্থা ধারণ করেছে। অনুরূপভাবে সামাজিক কল্যাণ ও মঙ্গল বিষয়ক প্রতিটি কাজ সাধারণ মানুষ থেকে গোড়াপত্তন হয়েছে। অবশেষে এমন একটি পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে যে , উপরতলার লোকদের নিকট তখন আর কোন উপায়-অন্তর অবশিষ্ট থাকেনি যে , তারা জনগণের কর্মসূচীর সাথে একমত না হয়ে থাকতে পেরেছে।

উপরোক্ত নিয়মের সমর্থনে আমরা দেখতে পাই আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ) তার উচ্চ শিক্ষামূলক বক্তব্যাবলীর এক পর্যায়ে মানুষকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেনে। একটা হলো সাধারণ লোক ও আরেকটি হলো বিশেষ বা উচ্চ শ্রেণীর লোক। সাথে সাথে তিনি সে বিশেষ শ্রেণীর লোকদের কল্যাণের কাজ ও সঠিক পথের অনুসরণের ব্যাপারে হতাশা ও নিরাশা ব্যক্ত করেছেন। আর শুধু সাধারণ লোকদের ব্যাপারেই তিনি আশাবাদের বাণী উল্লেখ করেছেন। তিনি তার খেলাফতকালে এক সরকারী নির্দেশনাময় গভর্নর মালিক আশতার নাখঈকে লিখেছেন :

গভর্নরকে এ কথা জেনে রাখা দরকার যে , অহেতুক কাজে অধিক খরচকারী , বিপদ-আপদে কম সাহায্যকারী , ন্যায়-ইনসাফের প্রতি অধিক ঘৃণা পোষণকারী , উচ্চাভিলাষী , খোদার শুকুর অনাদায়ী , ওযর-আপত্তি গ্রহণ করতে অস্বীকারকারী ও কঠিন বিপদে ধৈর্য ধারণ ক্ষমতার অভাবীরা উচ্চ শ্রেণীর লোক ছাড়া অন্য কেউ নয়। এর বিপরীতে সাধারণ শ্রেণীর লোকেরা দ্বীনের স্তম্ভ। নিঃসন্দেহে এরা মুসলমানদের কেন্দ্রবিন্দু এবং শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ের কারণ। সুতরাং হে মালিক আশতার । সর্বদা এ সাধারণ লোকদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা তোমার জন্য অতীব জরুরী।

এ ধারণা পোষণ করা একটি ভুলেরই নামান্তর যে , বিশেষ শ্রেণীর গুটিকতেক লোকের সাহায্য বিরাট বিরাট সংস্কারকর্ম সাধিত হয়ে যাবে। আর এ সীমিত সংখ্যক লোকদের পক্ষপাতিত্ব করে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করা যেতে পারে।

বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা এ কথাই বাতলে দিচ্ছে যে , সাধারণত উপরতলা থেকে সূচনাকৃত কাজ বাহ্যিকভাবে কল্যাণকর ও উপকারী দেখা যায়। সে কর্মসূচীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের ব্যাপক ও অতিরিক্ত প্রচারাভিযান চালানো হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ সমস্ত প্রপাগাণ্ডা ডঙ্কা বাজানো ব্যতীত আর কিছুই নয়। ঠিক এর বিপরীত পক্ষে জনগণের সাহায্য শুরুকৃত কর্মসূচীতে প্রচার-প্রপাগাণ্ডার বদলে ঐকান্তিকতা ও বিশ্বাসের নমুনাই পরিদৃষ্ট হয়। সাধারণ মানুষের প্রত্যেকেই অত্যন্ত আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের সাথে নিজেদের কাজে পরিপূর্ণরূপে নির্লিপ্ত থাকে।

প্রসঙ্গক্রমে আরো একটি কথা বলতে হচ্ছে। সেটা হলো আমি যখন এ বইটি সংকলন ও প্রকাশনার কাজে লিপ্ত ছিলাম তখন আমার বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনের অনেকেই এ বইটির উপকারিতা ও গুরুত্বের প্রতি আলোকপাত করে অসংখ্য চিঠিপত্র লিখেছেন। প্রায় সকলেই এ বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে , এ বইটি মুসলিম সমাজের জন্য অতীব উপকারী বলে প্রমাণিত হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ এ কথা লিখেছেন যে , তাদের মতে আমার মত একজন আলেমের পক্ষে এটা শোভনীয় নয় যে , অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের রচনা ও সংকলনের কাজ বন্ধ রেখে তাদের পত্রে আফসোস প্রকাশ করার সাথে সাথে আমাকে ভালো-মন্দও বলেছেন। তাদের দষ্টিতে মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাদির রচনা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে একটি সাধারণ ও সহজ বই সংকলনের কাজে লিপ্ত হওয়া কোন অবস্থাতে সঙ্গত হয়নি। কোন কোন বন্ধু এ পরামর্শও দিয়েছেন যে , আপনি যখন কাহিনীর বইটি লেখার কষ্ট মেনেই নিয়েছেন তখন কোন কথা নেই , কিন্তু বইটি আপনার নিজের নামে প্রকাশ না করাটাই উত্তম হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম , কেন ? তাতে অসুবিধা কি ? তারা বললেন , আপনার মত একজন বিজ্ঞ আলেম ও দার্শনিকের শানে এটা অসামঞ্জস্য। এ ধরনের ছোট্ট ও কম গুরুত্বের বই আপনার নামে বের হবে ? তারপর আমি যখন ছোট্ট ও বড় কাজের মাপকাঠি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম , তখন তারা বললেন , কঠিনতম বিষয়গুলোর সম্পাদন করা ও বিজ্ঞতার পরিচয় বহনকারী বই পুস্তক রচনাই বড় কাজের তালিকাভুক্ত। আর সহজবোধ্য রচনাভঙ্গি ও সাধারণ মানুসের বোধগম্যের ভাষায় লিখিত বই-পুস্তকই ছোট কাজের অন্তর্ভূক্ত অর্থাৎ ছোট্ট ও বড় কাজের মাপকাঠি কাজের গুরুত্বের সাথে সম্পৃক্ত নয় , বরং বিধান হচ্ছে সহজ-সরল কাজটি ছোট আর কঠিন কাজটি বড়

এ যুক্তি বা চিন্তা পদ্ধতি যদি একজন বা কয়েকজন লোকের ধারণাপ্রসূত হতো তাহলে আমি এ ব্যাপারে কখনো আলোচনা করতাম না। কিন্তু পরিতাপের সাথে বলতে হয় যে , এ চিন্তা পদ্ধতি একটা বিপজ্জনক সামাজিক ব্যাধির রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। এটাকে ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও প্রকাশনার পথে একটা বিরাট বিদ্রোহ ব্যতীত আর কিছুই বলা যায় না। এ ধরনের চিন্তা-ফিকির অসংখ্য কলমধারীকে এমন হতাশা ও নিরাশার শিকারে পরিণত করেছে যে , তারা রচনা , সম্পাদনা ও সংকলনের কাজই ছেড়ে দিয়েছেন।

এ কারণেই আজ আমরা দ্বীনী ও মাজহাবী উপকারী পুস্তকাদির ময়দানে সীমাহীন দারিদ্র্যতার শিকার। আর এমন মূল্যবান বই-পুস্তকগুলো একেবারেই দুর্লভ হয়ে গেছে যেগুলো দ্বারা মুসলমানরা উপকৃত হতে পারতো। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আলেম ও বিজ্ঞজনদের জন্য যেন এটাই জরুরি কাজ হয়ে গেছে যে , তারা দশ বছর পর্যন্ত কিংবা আরো বেশী সময়কাল ধরে কোন একটি বিষয়ে একটি ইলমসমৃদ্ধ বিরাট গ্রন্থ সংকলন করবেন আর তার প্রচ্ছদে মোটা অক্ষরে নিজের নাম লিখে প্রকাশ করবেন। এখন এটা ভিন্ন কথা যে , সে পুরো গ্রন্থটি দ্বারা সমাজের কোন এক ব্যক্তিও চাই উপকৃত হতে না পারুক। কিন্তু মাপকাঠির দিক থেকে সেটি একটি বিরাট ও মূল্যবান কাজ হিসাবে পরিগণিত হবে। সে বিজ্ঞ আলেম অতীব উপকারী , অথচ সহজ-সরল ভাষার একটি ছোট্ট পুস্তক শুধু এ কারণেই রচনা ও সংকলন করে প্রকাশ করেন না যে , এটি তার মান-সম্মান মোতাবেক নয়। যার ফল এ দাড়িয়েছে , যে সব বিষয় জরুরি দরকার সেগুলোর সংকলন ও প্রকাশনা হতে পারছে না আর যেগুলো খুব বেশী প্রয়োজন নেই সেগুলো একের পর এক জনসমক্ষে এসে হাজির হচ্ছে। এ পর্যায়ে খাজা নাছির উদ্দিন তুসী খুব সুন্দর বলেছেন :

অর্থাৎ , আফসসো! যে খেলায় আমার হেরে যাওয়ার কথা সেখানেই হয়েছি আমি বিজয়ী। আর যে সমস্ত জিনিস আমার চেনা উচিত না সেগুলোর পরিচিতিই আমি হাসিল করেছি। মোদ্দাকথা যে সব জিনিস পরিত্যাগ করা আমার উচিত ছিল , সে সবই আমি আমার গলায় ঝুলিয়ে রেখেছি আর যা যা আমার অর্জন করা দরকার ছিল তা তা আমি করেছি ত্যাগ

কাব্যার্থ :

যেথায় আমার হারার কথা

হইনু সেথা বিজয়ী হায়!

ছিল না যাহা চেনার গরজ

কাটানু বেলা তারই নেশায়।

ত্যাজ্য সকল জিনিস কুড়ায়ে

করিনু আমি গলার মালা।

হেলায় হারানু তাহাই আমি

যাহাই ছিল কুড়ানোর পালা

অবশেষে আমি আমার বন্ধুদের পত্রের জবাবে লিখলাম : আপনাদের এ প্রস্তাব আমাকে বাধ্য করেছে যে , সমাজে বিস্তৃত এ বিপজ্জনক রোগের কতা আলোচনা করবো , যা ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রচার মিশনকে বিরোধিতার মোকাবিলায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয় , আপনাদের এ প্রস্তাব আমার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এ সহজ-সরল বইটিকে আমার নামেই প্রকাশ করবো , বরং এ বইয়ের ভূমিকায় আমি ইসলামী সমাজ যে এ মারাত্মক রোগে আক্রান্ততার কথাও উল্লেখ করবো

এতো সব কথাবার্তা সত্ত্বেও একটি বিষয় আমার মন-মগজকে অস্থির করছে। সেটা হলো যেভাবে মানুষ সহজ-সরল বই রচনা ও সংকলন করাকে নিজের শান সম্মানের লাঘব মনে করে তেমনি আমাদের সমাজে এমন সব লোকও নিশ্চয়ই বর্তমান রয়েছে যারা সহজ-সরল ভাষায় লিখিত জ্ঞানসমৃদ্ধ বই-পুস্তক এ কথা বেবে অধ্যয়ন করে না যে , এ ধরনের ছোট-খাটো বই পাঠ করা তাদের সম্ভ্রমের হানি ঘটবে।

কোরআন মজীদের মান-মসযার্দাও এর ঐতিহ্য-পবিত্রতার প্রতি দৃষ্টি রেখে আমি ইচ্ছা করেই এ ঐশী গ্রন্থের কাহিনীগুলোকে এ গ্রন্থে শামিল করিনি। আমার আকীদা বিশ্বাস হচ্ছে আল কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ কাহিনীগুলোর ওপর একটা স্বতন্ত্র গ্রন্থ সংকলিত হওয়া উচিত। এর কাহিনীগুলোকে অন্য গ্রন্থে শামিল করা ঠিক নয়। মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি যে , এ জাতীয় কাজ আরবী ভাষায় যথেষ্ট হয়েছে এবং ফার্সী ভাষায়ও এ বিষয়ে অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।

বস্তুত আল কোরআনের শিক্ষা নিয়েই আমরা এ গ্রন্থটি সংকলন করেছি। কেননা আল-কোরআনই সর্বপ্রথম কিতাব যা মানব সমাজকে হেদায়েত , পথপ্রদর্শন ও শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে বাস্তব ও সত্য কাহিনীগুলোকে নিজের কলেবরে স্থান দিয়েছে। আর সেগুলোকে উচ্চ ঐশী শিক্ষা বলে ঘোষণা করেছে।

সত্য কাহিনী সম্ভার খন্ডে 75টি কাহিনী স্থা্ন লাভ করেছে। এ খন্ডের জন্য আমি প্রথমে 100টি কাহিনী নির্বাচিত করেছিলাম। আর এ খেয়ালও রেখেছিলাম যে , পরবর্তী খন্ডেও 100টি কাহিনী শামিল করবো। কিন্তু একান্তবন্ধু-বান্ধবগণ ছাড়াও প্রকাশনা বোর্ডও এ পরামর্শই দিয়েছেন যে , 100টি কাহিনীর কারণে গ্রন্থটি আকারে বেশ পুরুহয়ে যাবে। এছাড়াও ছাপানোর জন্য যে কাগজ যোগাড় করা হয়েছিল তাও ছিল কম। এ সমস্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রথম খণ্ড 75টি কাহিনী সমন্বয়ে প্রকাশ করা হলো। এখানে আরো একটি কথা পরিষ্কার করে দেয়া দরকার মনে করছি। কথাটি হলো- এ গ্রন্থে অন্তভুর্ক্ত অধিকাংশ কাহিনীই ইতিবাচক। সমগ্র গ্রন্থে শুধু দুই তিনটি কাহিনী আছে নেতিবাচক। অর্থাৎ এ দুই তিনটি নেতিবাচক কাহিনী লোকমান হাকিমের সে নীতির প্রতি ইঙ্গিত বহন করছে যে , যদি কোন লোকের মধ্যে কোন চারিত্রিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয় তাহলে তার সংশোধনী ও সতর্ক করে দেয়ার জন্য তার সে দুর্বলতা ও মন্দ দিকটা আলোচনা করা জরুরী। উদাহারণ হিসেবে আমরা এখানে সেরূপ তিনটি কাহিনীর অবতারণা করেছি। যেমন- একটি গালী , বাক্যবাণ বন্ধুত্বের চির অবসান । এ তিনটি কাহিনীকে নেতিবাচক বলা যেতে পারে। প্রথম দিকে বিশেষ কোন দৃষ্টিপাত না করেই আমি এ কাহিনীগুলো লিখে চলেছিলাম। কিন্তু ক্রমানুসারে সাজাবার সময় যখন লক্ষ্য করে দেখলাম তখন একবার খেয়াল হলো নেতিবাচক কাহিনীগুলো এ বইয়ের অন্তর্ভুক্ত করবো না , যাতে করে সমস্ত কাহিনী একই ধরনের থেকে যায়। আর ইতিবাচক পদ্ধতি দিয়েই সমাজ সংস্কারের কাজ শুরু করবো। দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থির করতে পারছিলাম না যে , এ কাহিনীগুলোকে এ গ্রন্থে শামিল করবো কিনা ? অবশেষে স্থির করলাম যে , এগুলোও অন্তর্ভুক্ত করে দেবো। আর ভূমিকায় কথাটি আলোচনা করে এ গল্পগুলোর প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের কাছেই পরামর্শ চাইবো যে , এ ধরনের কাহিনীর ব্যাপারে তাদের কি মতামত ? পাঠকদের রায় মোতাবেক পরবর্তী খন্ডে এ ধরনের গল্পের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ উত্তম হবে।

আমি আপনাদের সকলের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শের মুখাপেক্ষী রইলাম। সংশোধন সংক্রান্ত পাঠকবৃন্দের প্রতিটি পরামর্শের জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। তাদের পরামর্শ আমাদের পরবর্তী খণ্ডগুলোকে আরো সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই সহায়ক হবে।

মহান আল্লাহর দরবারে কল্যাণ ও তাওফিক দানের প্রার্থী রইলাম।

মুর্তাজা মোতাহারী

তেহরান , 15 মুহাররামুল হারাম

1380 হিজরী