সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার0%

সত্য কাহিনী সম্ভার লেখক:
: মাওলানা আলী আক্কাস
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

সত্য কাহিনী সম্ভার

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহহারী
: মাওলানা আলী আক্কাস
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 45862
ডাউনলোড: 5690

সত্য কাহিনী সম্ভার
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 79 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 45862 / ডাউনলোড: 5690
সাইজ সাইজ সাইজ
সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি তার বিষয়ের সর্বপ্রথম ও অনন্য অবতারণা হোক অথবা না হোক , এর জন্য প্রাপ্য ফুলের মামলার যোগ্য পাত্র আমি নই , অর্থাৎ যদি এ বইটি কাহিনী রচনার জগতে কোন গুরুত্বপূর্ণ নতুন অবতারণার দাবিদার হয় তাহলে তার গোড়াপত্তনকারী আমি নই। বরং প্রকাশনা ও প্রচারণার একটি প্রতিষ্ঠানে দেশের বিজ্ঞ বিজ্ঞ বিজ্ঞানী-গুণী কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি সম্পাদনা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ অধমও সে বোর্ডের একজন সদস্য। দেশের খ্যাতনামা লেখক ও বিজ্ঞতম ব্যক্তিত্ব সমৃদ্ধ সে বোর্ডের এক বৈঠকে প্রস্তাব রাখা হলো যে , এমন একটি গ্রন্থ রচিত হওয়া উচিত যার মধ্যে চারিত্রিক সুন্দর ও গুণাবলী কাহিনী আকারে উপস্থাপিত থাকবে। আর সে কাহিনীগুলো লেখকের নিজের মস্তিষ্ক থেকে আবিস্কৃত বা নিজের খেয়াল মোতাবেক তৈরি হবে না। বরং তার ভিত্তিমূল ও উৎস হবে হাদীস , বাস্তব জীবন ও ইতিহাসের গ্রন্থরাজি। এর সংকলনের উদ্দেশ্য থাকবে মুসলিম সমাজকে শিক্ষা দান এবং যুব সমাজকে হেদায়েতের পথ প্রদর্শন ও পরিচালনা করা।

15

ইমাম সাদিক ( আঃ ) ও একদল সুফী

সুফিয়ান সাওরী মদীনার একজন অধিবাসী। একদিন সে হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হলো। দেখতে পেলো ইমাম একটি খুব নরম ও সাদা পোশাক পরিধান করে আছেন। যেন ডিমের খোসা আর ভেতরের তরল অংশের মধ্যবর্তী পাতলা পর্দাটি। তাই সে ইমাম সাদিক (আঃ)-এর প্রতি আপত্তি করে বললো , এ পোশাকটি আপনার জন্য উপযোগী নয়। আপনার পক্ষে এটা কখনও সঙ্গত নয় যে , নিজেকে দুনিয়ার আরাম-আয়েশের সাথে জড়িয়ে ফেলবেন। আপনার কাছ থেকে এটাই আশা যে , খোদাভীতি ও পরহযেগারীর পথ অবলম্বন করে নিজেকে পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য থেকে দূরে রাখবেন।16

ইমাম সাদিক (আঃ) বললেন , আমি তোমাকে এমন একটি কথা বলতে চাই যা তোমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে কল্যাণকর ও উপকারী হবে। তোমার উদ্দেশ্য যদি হয় এ ব্যাপারে ইসলামের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা তাহলে আমার কথা তোমার জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে এবং তুমি এ ব্যাপারে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। কিন্তু যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় ইসলাম ধর্মে কোন বেদআত প্রবেশ করানো এবং সত্য ইসলাম থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির শিকারে পরিণত করা , তাহলে ভিন্ন কথা। কেননা পথভ্রষ্ট ও বেদাআত সৃষ্টিকারী লোকদের জন্য আমার কথা নিস্ফল হয়ে থাকে। সুতরাং তাতে আমার কথা তোমার কোন উপকারে আসবে না। সম্ভবত তোমার মনে রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও তার সাহাবীবৃন্দের সহজ-সরল ও দারিদ্র্যের জীবন যাপনের কথা জেগে উঠেছে। আর তাতে তুমি এ কথা মনে করে নিয়েছো যে , কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য দারিদ্র্যের জীবন যাপন করা ফরজ করে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপার তা নয়। রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও তাঁর অনুগত সাথীগণ এভাবে দারিদ্র্যের ও কষ্ট-ক্লেশের জীবন যাপন করেছিলেন তখন , যখন সমাজের চারদিকে অভাব-অনটন , দুঃখ-দারিদ্র্য , কষ্ট-ক্লেশ , অনাহার-অর্ধাহার ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিল। আর তখন লোকেরা সে সব মৌলিক বস্তু থেকে বঞ্চিত ছিল যা সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরী। তাই রাসূল (সাঃ) ও তাঁর অনুগত সাহাবীদের জীবন যাপনের মান তৎকালের সাধারণ মানুষের অবস্থার সাথে মিল ছিল। কিন্তু যে যুগে জীবন যাপনের যাবতীয় সামগ্রী সহজে পাওয়া যায় এবং আল্লাহর নেয়ামতসমূহ উপভোগের সুযোগ-সুবিধা বর্তমান থাকে তখন তো আল্লাহর নেয়ামতসমূহ থেকে উপকার লাভ করার সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তাঁর অনুগত প্রিয় বান্দাদেরই।

আল্লাহর সে সব নেয়ামতের উপর অসৎ ও ফাসেক লোকদের চাইতে তাঁর সৎ ও নেক বান্দাদের অধিকার কতোই না বেশি। নেয়ামতসমূহের অধিকার কাফেরদের লত নায়সম লমানদের কতোই না অধিক! তুমি কোন বিষয়টিকে আমার দোষের বিষয় হিসেবে নির্ণয় করেছো ? মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি , যেভাবে তুমি দেখতে পাচ্ছো যে , আমি আল্লাহর দেয়া নেয়ামতসমূহ ব্যবহার করছি , ঠিক তেমনিভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্তআমার জীবনে এমন একটি মুহূর্তও অতিবাহিত হয়নি যে , আমি আমার মাল-সম্পদ থেকে অন্যদের অধিকার পৌঁছে দেইনি। প্রতিটি সকাল-সন্ধ্যা এ চিন্তা-ভাবনায় নিমজ্জিত থাকি যে , আমার মাল-সম্পদে যার যে হক আছে তা যেন যথাসময়ে তার কাছে পৌঁছে দিতে পারি

সুফিয়ান সাওরী ইমামের যুক্তিসংগত কথার জবাব দিতে পারলো না এবং মাথা ঝুঁকিয়ে চলে গেল। তারপর সে তার বন্ধু-বান্ধব ও তার মতবাদে বিশ্বাসীদের সাথে সাক্ষাৎ করে সমস্তঘটনা তাদেরকে শোনালো। তাতে তারা সকলে মিলে ফয়সালা করলো যে , তারা সকলে সম্মিলিতভাবে ইমাম সাদিক (আঃ)-এর সাথে এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করবে।

অবশেষে একদিন সুফিয়ান সাওরী ও তার সকল সাথী ইমাম সাদিক (আঃ)-এর খেদমতে হাজির হলো। তারা বললো , আমাদের বন্ধু তার কথাকে হক প্রমাণ করার ব্যাপারে উপযুক্ত দলিল-প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। তাই আমরা এখন সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণের দ্বারা আপনাকে নিরুত্তর করতে এসেছি

ইমাম সাদিক (আঃ) বললেন , বলো! তোমাদের সে সমস্ত প্রমাণ কি যা দিয়ে তোমরা আমাকে নিরুত্তর করতে চাও

তারা বললো , আমরা কোরআনের আয়াত দিয়েই আমাদের দলিল-প্রমাণ পেশ করতে চাই

সাথে সাথেই ইমাম (আঃ) বললেন , কোরআনের চাইতে উত্তম দলিল আর কি হতে পারে ? সুতরাং তোমরা তোমাদের দলিল উপস্থাপন করো। আমি তোমাদের দলিলাদি শোনার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছি । তারা বললো , আমরা আমাদের মতবিশ্বাসের সত্যতা প্রমাণের জন্য কোরআনের দুটি আয়াত তুলে ধরবো। আর আমাদের কথা পরিষ্কার করার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট। আল কোরআনের এক স্থানে মহান আল্লাহ রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কোন কোন সাহাবাদের প্রশংসা এভাবে করেছেন :

যদিও তাদের নিজেদের প্রয়োজন মিটতো না এবং অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য অবস্থায় ছিল নিমজ্জিত। তবুও অপর লোকদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দিয়েছে এবং তাদের প্রয়োজন মিটিয়েছে। আর যারা নিজেদেরকে কৃপণতা থেকে রক্ষা করেছে তারাই সফলকাম17

আল কোরআনের অন্য এক স্থা্নে বলা হয়েছে :

যদিও তাদের খাদ্য-খাবারের প্রয়োজন ও আগ্রহ ছিল সে অবস্থাতেও তারা নিজেদের খাবার ইয়াতিম , মিসকীন ও কয়েদিকে দান করে দিয়েছে18

তাদের বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথেই সাথেই এ মজলিসে উপস্থিত এক ব্যক্তি যে এতোক্ষণ তাদের কথাবার্তাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল , সে নিজের পক্ষ থেকে বলে উঠলো , তোমাদের এতোক্ষণের আলাপ-আলোচনায় আমি যা বুঝতে পেরেছি তা হলো-তোমাদের কথাবার্তায় তোমাদের নিজেদেরই আত্মবল নেই। আসলে এ সমস্ত দলিল দ্বারা তোমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে , লোকেরা যেনো নিজেদের ধন-সম্পদ ও মালিকানার প্রতি কোন প্রকার মায়া-আকর্ষণ না রাখে এবং তার বেশির ভাগ অংশ যেনো তোমাদের মতো ফকির-মিসকিন লোকদেরকে দিয়ে দেয় যাতে তোমরা তাদের পরিবর্তে ভোগ করতে পারো।

এ কারণে বাস্তবে তোমাদেরকে দেখা যায়নি যে , তোমরা উত্তম উত্তম খাবার ত্যাগ করেছো। ইমাম (আঃ) বললেন , আপাতত এসব কথা বাদ দাও কোন ফল নেই । এরপর ইমাম (আঃ) সুফীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন , তোমরা তো কোরআন মজীদ থেকে দলিলাদি পেশ করছো। কিন্তু তার আগে একটা কথা বলো , তোমরা কি আল-কোরআনের মোহকাম-মোতাশাবেহ নাসেখ-মানসুখ আয়াতগুলোর মাঝে পার্থক্য করতে পারো ? এই উম্মতের থেকে যারাই পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা এ পথেই পথভ্রষ্ট হয়েছে। কারণ তারা কোরআনের সঠিক খবর না রেখেই তা আঁকড়ে ধরে।

সুফীরা বললো , এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞান মোটামটি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আমাদের নেই । ইমাম বললেন , তোমাদের দুর্ভাগ্য এটাই। কোরআনের আয়াতের মতো রাসূলে পাক (সাঃ)-এর হাদীসও রয়েছে। এগুলোর উপর পূর্ণ অবগতি রাখা দরকার। কিন্তু তোমরা কোরআনের যে আয়াতগুলোকে পাঠ করেছ , তাতে তো আল্লাহর নেয়ামতসমূহ ব্যবহার করা হারাম বলা হয়নি। এ আয়াতগুলো বদান্যতা , দয়া-দান ও ত্যাগের সাথে সম্পৃক্ত। এ আয়াতগুলোতে আল-কোরআন সে সকল লোকের প্রশংস্রা করছে যারা একটা বিশেষ সময়ে অপরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা নিজেদের হালাল মাল নিজেরা ব্যবহার করার পরিবর্তে অপরকে দান করে দিয়েছেন। যদি তারা এ মাল না দিতেন তাহলেও তাদের কোন গুণাহ হতো না। কেননা মহান আল্লাহ তাদেরকে হুকুম করেননি যে , অবশ্যই এটা করতে হবে। তেমনি আল্লাহ তাদেরকে এ কাজ করতে বাধাও দেননি। সুতরাং তারা নিজেরা দয়া ও সহানুভূতির বশবর্তী হয়ে নিজেরা কষ্ট করেছেন এবং তাদের মাল-সম্পদ অপরকে দিয়ে দিয়েছেন। যার প্রতিদান মহান আল্লাহ তাদেরকে দেবেন। অতএব এ আয়াতগুলো ও তোমাদের দাবির মধ্যে কোন মিল নেই। কেননা তোমরা সে সমস্ত লোকের তিরস্কার ও নিন্দা করছো যারা নিজেদের মাল-সম্পদ ও খোদার দেয়া নেয়ামত ভোগ করে থাকে।

তিনি বললেন , সে সমস্তলোক , [রাসূলে খোদা (সাঃ)-এর সাহাবাগণ] সেদিন এ ধরনের দান- খয়রাতের দৃষ্টান্ত রেখেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পরিপূর্ণ বিধান এসেছে যেখানে আল্লাহ এ কাজের একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যেহেতু এ হুকুমটি পরে এসেছে তাই তাদের (সাহাবাদের) সে আমলকে রহিত করে দিয়েছে। সুতরাং আমাদেরকে এ হুকুম মেনে চলা উচিত। সে আমলকে নয়।

মহান আল্লাহ মমিন-মসলমানদের অবস্থার সংশোধনের জন্য এবং তার বিশেষ রহমতের দ্বারা এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন যে , কোন লোক নিজের পরিবার-পরিজনকে কষ্টের মধ্যে রেখে তার সমস্ত সহায় অপরকে দান করে দেবে। কেননা তার পরিবারে এমন শিশু , বৃদ্ধ ও দূর্বল লোকজন থাকে যারা এ কষ্ট সহ্য করতে পারে না। ধরে নাও , আমার কাছে একটি রুটি আছে আর আমি তা অন্যকে দিয়ে দিলাম। তখন তার পরিণতি এই দাঁড়াবে যে , আমার পরিবার-পরিজন যাদের ভরণ-পোষণের দায়

দায়িত্ব আমার উপর রয়েছে তারা না খেয়ে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। এ জন্য রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন , যদি কোন লোকের কাছে কিছু খোরমা অথবা কিছু রুটি কিংবা কিছু দিনার বা টাকা থাকে আর সে দান করতে চায় , তাহলে প্রথমে উচিত তার পিতামাতাকে দান করবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নিজের ও তার স্ত্রী-সন্তানের জন্য দান করবে। তৃতীয় পর্যায়ে তার আত্মীয়-স্বজন ও মুমিন ভাইদেরকে দান করবে। আর চতুর্থ পর্যায়ে ভালো ও কল্যাণ কাজে দান করার পালা। এভাবে দান-খয়রাত ইত্যাদির পালা আসে সবার শেষে।

রসূলুলাহ (সাঃ) যখন শুনতে পেলেন যে , এক আনসার মারা গেছে , আর তার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বর্তমান রয়েছে , এদিকে মৃত্যুর পূর্বে সে তার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর পথে দান করে দিয়েছে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন , এ সংবাদ যদি তোমরা আমাকে পূর্বেই দিয়ে দিতে তাহলে আমি তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করার অনুমতি দিতাম না। সে তার ছেলে-মেয়েদেরকে অসহায় অবস্থায় রেখে গেছে। এখন তারা অপরের সামনে হাত পাতছে।

আমার পিতা হযরত ইমাম বাকের (আঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে , রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন , সব সময় দানখয়রাতের ব্যাপারে নিজের সন্তানদের থেকে শুরুকরবে। এরপর আত্মীয়- স্বজনের যে যত নিকটের হবে সে ততো প্রাধান্য পাবে।

এতসব কিছু ছাড়াও আল-কোরআন তোমাদের মতবিশ্বাসের বিপক্ষে রায় প্রদান করে থাকে। আল কোরআনের এক স্থানে এভাবে বলা হয়েছে :

মোত্তাকী , পরহেযগার ও খোদাভীরুলোক তারাই যারা দান করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িও করে না। কৃপণতাও করে না , বরং মধ্যম নীতি অবলম্বন করে।19 কোরআন মজীদের অনেক আয়াতেই যেমনিভাবে কৃপণতা করতে নিষেধ করা হয়েছে , ঠিক তেমনিভাবে খরচ ও দান করার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ও অপাত্রে করতে বাধা দান করেছে। এ ব্যাপারে আল-কোরআন একটি মধ্যম নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা উচিত নয় যে , কোন লোক তার সমস্তসম্পদ অপর লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে নিজে দারিদ্র্য ও অভাবগ্রস্ত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছে , হে পরোয়ারদিগার! আমাকে রিযিক দান করো । মনে রাখবে যে , মহান আল্লাহ এমন লোকদের দোয়া কখনো কবুল করেন না। আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন , মহান আল্লাহ কিছু সংখ্যক লোকদের দোয়া কখনো কবুল করেন না। তারা হলো :

(ক) যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে নিজের পিতামাতার অকল্যাণ প্রার্থনা করে।

(খ) যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ কাউকে ধার দেয়। কিন্তু কোন সাক্ষীও রাখে না আর লিখিত কোন প্রমাণও রেখে দেয় না। এদিকে ঋণগ্রহীতা টাকাগুলো মেরে দেয়। তখন সে হাত তুলে দোয়া করে আল্লাহর কাছ থেকে সমাধান চায়। তাহলে আল্লাহ তার দোয়া কখনো কবুল করেন না। কেননা সে কোন প্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ না রেখে অপরকে ঋণ দিয়ে নিজেই সমাধানের পথ বিনষ্ট করে ফেলেছে।

(গ) যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর দরবারে এ দোয়া করে যে , তাকে যেনো তার স্ত্রীর অনিষ্টতা হতে মুক্তি দান করেন , তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া মহান আল্লাহ মোটেও শোনেন না। এ জন্য যে , স্ত্রীর অনিষ্টতা থেকে মুক্তি লাভের পন্থা ও পদ্ধতি তার নিজের হাতেই রয়েছে। যদি সত্য সত্যই সে স্ত্রীর ব্যাপারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে তাহলে তার অধিকার রয়েছে যে , এমন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নিজের মুক্তির পথ বেছে নেবে।

(ঘ) যে ব্যক্তি নিজের ঘরে হাতের উপর হাত রেখে বসে থাকে আর রিযিকের জন্য দোয়া করে আল্লাহর কাছে তখন এমন লোকের দোয়ার জবাবে আল্লাহ বলেন :

হে আমার বান্দা! আমি কি তোমার জন্যে নড়াচড়া ও চলাফেলার রাস্তা খোলা রাখিনি ? আমি কি তোমাকে নিখুঁত ও মজবুত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করিনি ? আমি তোমাকে হাত-পা , কান-নাক ও আকল- বুদ্ধি দান করেছি যাতে করে তুমি এগুলো দিয়ে দেখে-শুনে ও চিন্তা-ভাবনা করে হাত-পা ইত্যাদি ব্যবহার করে রিযিকের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে পারো। এ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টির একটা উদ্দেশ্য আছে। এ নেয়ামতগুলোর কৃতজ্ঞতা হচ্ছে যে , তুমি এগুলোর সদ্ব্যবহার করবে। এভাবে আমি আমার ও তোমার মাঝে উসিলা নির্ধারণ করেছি যাতে করে তুমি প্রতিটি জিনিস হাসিল করার জন্য তোমার মেহনতের দ্বারা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারো। আর শ্রম-সাধনার সাথে সম্পৃক্ত কাজগুলো পালন করতে পারো এবং অন্যের কাঁধের বোঝা যেনো তোমাকে হতে না হয়। তোমার চেষ্টা যদি আমার ইচ্ছা মোতাবেক হয় তাহলে আমি তোমাকে যথেষ্ট পরিমাণে রিযিক দান করবো । আর যদি সংগত কোন কারণে তোমার উন্নতি না হয় তাহলেও তুমি অন্তত এ প্রশান্তিলাভ করতে পারবে যে , তোমাকে চেষ্টা করতে বলা হয়েছিল , তুমিও চেষ্টা করেছো। এখানে তোমার কোনো দোষ নেই।

(ঙ) সে ব্যক্তি যাকে মহান আল্লাহ অনেক ধন-সম্পদ দিয়েছেন। আর সে দান করতে গিয়ে তার সমস্তসম্পদ শেষ করে দিয়েছে। এর পরে সে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করে : হে আমার প্রভু! আমাকে রিযিক দান করো। তখন আল্লাহ এমন লোকের জবাবে বলেন :

আমি কি তোমাকে অনেক অনেক রিযিক দান করিনি ? তুমি কেন মধ্যম নীতি অবলম্বন করোনি ? আমি কি এ হুকুম দেইনি যে , দান করার ব্যাপারে মধ্যম নীতি অবলম্বন করো ? আমি কি দান-খয়রাতের বেলায় বেহিসাবে খরচ করার ব্যাপারে তোমাদেরকে নিষেধ করিনি ? (চ) সে ব্যক্তির দোয়াও কবুল হয় না , যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর দরবারে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে দোয়া করে। আর যে আল্লাহর কাছে এমন জিনিস প্রার্থনা করে যা দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

মহান আল্লাহ কোরআন পাকে বিশেষভাবে তাঁর রাসূলকে দান করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন। একটি ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে , আল্লাহর নবী (সাঃ)-এর নিকট কিছু স্বর্ণমূদ্রা ছিল। তিনি তা দরিদ্র লোকদের মধ্যে বন্টন করে দিতে চাচ্ছিলেন। তিনি চাননি যে , এক রাতের জন্যও সে স্বর্ণমুদ্রাগুলো তার ঘরে পড়ে থাকুক। তাই তিনি সারাদিন ধরে সে মুদ্রাগুলো লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। পরদিন সকালে একজন ভিক্ষুক তাঁর বাড়িতে আসলো এবং সাহায্য প্রার্থনা করলো। সে ভিক্ষুকটি তার প্রয়োজনের তাগিদে বার বার সাহায্যের প্রার্থনা করলো। সে ভিক্ষুকটি তার প্রয়োজনের তাগিদে বার বার সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছিল। কিন্তু নবী (সাঃ)-এর কাছে তাকে দেবার মতো কিছুই ছিল না। এতে তিনি খুবই দুঃখিত হলেন। তখন কোরআন মজীদের এ আয়াত অবতীর্ণ হলো যেখানে মহান আল্লাহ দান করার ব্যাপারে তাঁর বিধান জারি করেছেন :

নিজের হাতকে মুষ্টিবদ্ধ করো না। আর না এতোখানি খুলে রেখো , যাতে করে পরে খালি হাত হয়ে যেতে হয় এবং ভিক্ষুকের সাহায্য প্রার্থনার সময় লজ্জিত ও দুঃখিত হতে হয়।20

এগুলো সে সমস্ত হাদীস যা হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর আল- কোরআনের আয়াতসমূহ এ হাদীসগুলোতে বর্ণিত বিষয়াদিকে সমর্থন করে। তাহলে আল-কোরআনে বিশ্বাসী ঈমানদার লোক যারা , তারা কোরআনে বর্ণিত বিষয়াদির প্রতি ও ঈমান রাখে।

মৃত্যুর সময়ে হযরত আবু বকরকে বলা হয়েছিল : আপনার ধন-সম্পদ সম্পর্কে অসিয়ত (অন্তিম উপদেশ) করুন। তিনি বললেন , আমার সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ দান করে দিও। আর অবশিষ্টাংশ উত্তরাধিকারীদের জন্য রইলো। এক-পঞ্চমাংশ সম্পদ কম নয়। বস্তুত হযরত আব বকর স্বীয় সম্পদের এক-পঞ্চমাংশের ব্যাপারে অসিয়ত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে একজন রোগীর অধিকার হচ্ছে মৃত্যু রোগের সময়ও সে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশেরই অসিয়ত করবে। যদি জানতেন যে তার সমুদয় অধিকারকে কাজে লাগানো উত্তম হবে তাহলে এক-তৃতীয়াংশেরই ওসীয়ত করে যেতেন।

হযরত সালমান ফারসী ও হযরত আবু যার গিফারীর খোদাভীতি-পরহেযগারী ও অন্যান্য ফজিলত ও মর্যাদার কারণে সবাই তাদেরকে খবু ভালোভাবে চেনে। তাদের জীবন যাপনের পদ্ধতি ও চরিত্র- আখলাকও ছিল এরূপ।

হযরত সালমান ফারসী যখন বাইতুলমাল থেকে নিজের বাৎসরিক ভাতা গ্রহণ করতেন তখন সেখান থেকে এক বছরের খরচাদিকে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা নিজের কাছে সংরক্ষিত রাখতেন যাতে করে পরবর্তী বছরের ভাতা পাওয়া পর্যন্তকোন অসুবিধায় পড়তে না হয়। লোকেরা সালমানকে জিজ্ঞাসা করলো :

আপনি এতো বড় একজন মোত্তাকী পরহেযগার লোক হয়েও এক বছরের পুঁজি জমা করে রাখার চিন্তা-ভাবনা করছেন! ধরুন আজকালের মধ্যেই আপনার মৃত্যু হয়ে গেল এবং বছরের শেষ পর্যন্তজীবিত থাকতে পারলেন না তাহলে এক বছরের পুঁজি জমা করে রাখার পেছনে ফায়দা কি ? তাদের প্রশ্নের জবাবে হযরত সালমান ফারসী বললেন , হতে পারে আমি মরবো না। তোমরা কেন এ কথা ধরে নিয়েছো যে , আমি মরেই যাবো। এর বদলে তোমরা এটাও ধরে নিতে পারো যে , আমি আগামী বছর পর্যন্তবেঁচে থাকবো। আর যদি আমি জীবিত থেকে যাই তাহলে আমার জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচাদির সর্বাবস্থায় দরকার হবে। হে অজ্ঞ লোকেরা! তোমরা এ বাস্তব সত্য সম্পর্কে মোটেও ধারণা রাখো না যে , মানুষের কাছে যদি জীবন যাপনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বর্তমান না থাকে তাহলে তার মন আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে যায় এবং আলার আনুগত্য করার জন্য অন্তরের যে স্বস্তিও প্রশান্তিদরকার তার মধ্যে সেটার অভাব দেখা দেয়। আর যদি জীবনযাপন সামগ্রী তার কাছে পুরোপুরি বর্তমান থাকে তাহলে সে আল্লাহর আনুগত্য করার ক্ষেত্রে মোটেও অবহেলা করে না।

কিন্তু হযরত আবু যার গিফারীর নিকট কিছু উট ও ভেড়া-বকরী ছিল , যেগুলোর দুধ পান করে তিনি জীবন যাপন করতেন। কখনো যদি তার গোশত খাবার ইচ্ছা হতো কিংবা বাড়িতে যদি কোন মেহমান আসতো অথবা কোন দরিদ্র-গরিব মানুষের অভাব-অনুভব করতেন তাহলে সে জন্তুগুলো দ্বারা প্রয়োজন মেটাতেন। অন্য লোকদের মাঝে গোশত বন্টন করার সময় নিজের অংশটুকুনও রেখে নিতেন।

তাদের চাইতে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার লোক আর কে ছিলেন ? মহানবী (সাঃ) তাদের সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন তা তোমরা ভালো করে জানো। তারা তাকওয়া-পরহেযগারীর নামে নিজেদের সব কিছু বিলিয়ে দেননি। আজ তোমরা জীবন যাপনের যে পন্থা ও মতবাদ উদ্ভাবন করেছো এবং প্রচার করে বেড়াচ্ছো যে , লোকেরা যেন নিজেদের পরিবার-পরিজনের চিন্তা-ভাবনা না করে নিজেদের সমস্ত অর্থ সম্পদ থেকে হাত গুটিয়ে নেয় এবং দুনিয়া ত্যাগ করে বৈরাগ্যবাদ গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে রাসূলে পাকের সাহাবাগণ কখনো এ পন্থা অবলম্বন করেননি।

আমি আনুষ্ঠানিকভাবে এ হাদীসটি বর্ণনা করছি , যা আমার পিতা ও তার পিতৃ পুরুষগণ রসুলুল্লাহর মাকবুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি। রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন :

ঈমানদার লোকেরা আশ্চর্যজনক গুণ-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। যদি তার দেহকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয় তাতেও তার জন্য মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর যদি তাকে পৃ থিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের সমস্তদেশগুলোর রাজত্ব দান করা হয় তাহলে সেটাও তার জন্য মঙ্গল ও কল্যাণের ব্যাপারই হবে।

ঈমানদার লোকদের কল্যাণ ও মঙ্গল কি এতেই নিহিত যে , সে অবশ্যই দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তহবে ? মুমিনদের উচ্চ মর্যাদা নিভর্র করে ঈমান ও আকীদা বিশ্বাসের উপর। তাই সে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত অবস্থায় থাকুক অথবা সম্পদের প্রাচুর্যে ডুবে থাকুক , কর্তব্যগুলো যথারীতি আঞ্জাম দিয়ে থাকে। এটাই সে বিশেষ ও ব্যতিক্রম গুণ-বৈশিষ্ট্য যা একজন মর্দে মুমিনের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায়। আর এ কারণেই যে কোন প্রকারের কষ্ট ও অভাব-অনটন এবং আরাম ও সুবিধা তার জন্য কল্যাণ ও মঙ্গল হয়ে যায়।

আমি জানি না এ বিষয়ে এতোক্ষণ পর্যন্ত আমি যে বক্তব্য রেখেছি , তা তোমাদের জন্য যথেষ্ট কিনা ? নাকি এ বিষয়ে আমাকে আরো কিছু বলতে হবে ? তোমরা জানো যে , ইসলামের প্রথম দিকে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। তখন জিহাদের বিধান ছিল এই যে , একজন মুসলমান দশজন কাফেরের মোকাবিলায় লড়াই করবে। আর যে এমনটা না করতো সে গুণাহগার , নাফরমান ও অপরাধী বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু যখন মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে গেল এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অস্ত্র-সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি লাভ করলো তখন মহান আল্লাহ তাঁর দয়া ও মেহেরবানী দ্বারা সে বিধানের পরিবর্তন করে দিলেন। তখন প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব হলো সে দুইজন কাফেরের সাথে মোকাবিলা করবে। এর চেয়ে বেশির সাথে লড়াই করা তার কর্তব্য নয়।

আমি তোমাদেরকে ইসলামের বিচার আদালত এবং বিচার আইন বিষয়ে প্রশ্ন করবো। ইসলামে মজলুমের প্রতি ন্যায়-ইনসাফ করার এবং অপরাধীর শাস্তি প্রদার্নের ব্যাপারে কি বিধানের ব্যবস্থা্ রয়েছে ? ধরো তোমাদের মধ্যে থেকে কারো বিরুদ্ধে ইসলামী আদালতে তার স্ত্রীর খোরপোষের বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর বিচারক তার বিরুদ্ধে এ রায় প্রদান করলো যে , তাকে তার স্ত্রীর খোরপোষ দিতে হবে। তখন সে কি ওযর-আপত্তি পেশ করবে এবং নিজের স্ত্রীর খোরপোষের ব্যবস্থা কিভাবে করবে ? তখন কি সে এ ওযর-আপত্তি পেশ করবে যে , আমি একজন মোত্তাকী- পরহেযগার মানুষ এবং আমি দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ পরিত্যাগ করার নীতি অবলম্বন করেছি ? তখন কি তার এ আপত্তি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে ? আর এটা কি সঙ্গত হবে ? তোমাদের আকীদা বিশ্বাস মতে কি বিচারকের এ নির্দেশ ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক নয় ? নাকি সেটা অন্যায়-অবিচার ভিত্তিক ? যদি তোমরা বলো যে , বিচারকের এ হুকুম অন্যায় ও অবিচার ভিত্তিক তাহলে তার অর্থ এ দাঁড়াবে যে , তোমরা পরিষ্কার মিথ্যা বলছো। শুধু তাই নয় , বরং তোমাদের এ মিথ্যা দ্বারা তোমরা সমস্ত মুসলমানের সাথে অন্যায় ও বেইনসাফীর কাজ করছো। আর যদি বলো যে , বিচারকের এ বিচার সঠিক তাহলে তার অর্থ হবে যে , তোমাদের ওযর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা বাতিল। সুতরাং তোমরা এ কথা স্বীকার করে নাও যে , তোমাদের জীবন পদ্ধতি ও মতবাদ ভ্রান্তও বাতিল।

এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে , মানুষের জীবনে এমন অনেকগুলো অবস্থা আছে যেখানে মুসলমানরা অনেক জরুরি ও অজরুরি খরচ আঞ্জাম দিয়ে থাকে। যেমন কখনো যাকাত দিতে হয়। আবার কখনো কাফফারা (অপরাধের শরীয়তী মাশুল) দিতে হয় , তাহলে যদি তোমাদের মনগড়া সংশোধন মেনে নেয়া হয় এবং সমস্তলোক (তোমাদের মতের) মোত্তাকী পরহেযগার হয়ে যায় আর সকল লোকই যদি জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় , তখন এমন অবস্থায় এ সমস্ত ফরজ সদকা ও কাফফারার কি হবে ? সোনা-রূপা , ভেড়া-বকরী , গরু-মহিষ , উট- দুম্বা ও অন্যান্য জন্তু-জানোয়ার , খোরমা , কিশমিশ ইত্যাদির যাকাত দেয়া ফরজ। তাহলে এসব জিনিসের ফরজ যাকাতের কি হবে ? যাকাত কি এ জন্য ফরজ করা হয়নি যে , এর দ্বারা গরিব ও অসহায় লোকদের জীবনকে সুন্দর করে গড়া যায় ? আর গরিব লোকও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন যাপন করতে পারে ? দান-উপহারের দ্বারা সৌভাগ্যবান হতে পারে ? ইসলামের এ বিধানটি নিজেই এ কথার সাক্ষ্য-প্রমাণ বহন করে যে , ইসলামের সমস্ত আইন-কানুনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রাকে সুখ-সমৃদ্ধির পান্তে পৌঁছে দেয়া এবং তার সুখ নিশ্চিত করা। আর যদি দ্বীনের উদ্দেশ্য হতো দারিদ্র্য ও দুনিয়া ত্যাগ এবং দ্বীনের শিক্ষা-দীক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি এটা হতো যে , মানুষ এ দুনিয়া ও তার ধন-সম্পদ থেকে দূরে থাকবে এবং ফকির ও দরিদ্রের জীবন বেছে নেবে , তাহলে তো তার অর্থ এ দাঁড়াবে যে , যারা গরিব-মিসকিন তারা জীবনের আসল ও উচ্চ লক্ষ্য হাসিল করে ফেলেছে। কাজেই তাদেরকে আর কোন কিছু দেয়া উচিত হবে না যাতে করে তাদের এ মঙ্গল ও কল্যাণকর অবস্থা থেকে সরে যেতে না পারে। এর সাথে সাথে গরিব-মিসকীনদের উচিত হবে যে , তারা কারো কাছ থেকে কোন দান ইত্যাদি কখনোই গ্রহণ করবে না যাতে করে তাদের কল্যাণ ও মঙ্গলকর অবস্থা স্থায়ী থেকে যায় ।

মূল কথা হলো যে , যদি তোমাদের কথা সত্য হিসাবে মেনে নেয়া হয় তাহলে তো কোন লোককেই তার ধন-সম্পদ তার কাছে রেখে দেয়া উচিত নয় , বরং তার সমস্ত সম্পদ অন্যদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া উচিত। ফলে যাকাতের কোন অবকাশই বাকি থাকে না।

তাহলে এখন এ কথা পরিষ্কারভাবে জানা গেল যে , তোমরা একটা মারাত্মক ও খারাপ রাস্তা অবলম্বন করেছো এবং একটা মন্দ পথে লোকদেরকে আহবান করছো। তোমরা যে মতবাদে বিশ্বাস করছো এবং অপরাপর লোকদেরকেও সে পথের দিকে আহবান করছো তার ভিত্তি হলো মুর্খতা , কোরআনী শিক্ষা সম্পর্কে এবং রাসূল (সাঃ)-এর হাদীস ও সুন্নত সম্পর্কে অজ্ঞতা। এ হাদীসগুলো সে হাদীস নয় যা সন্দেহের চোখে দেখা যেতে পারে , বরং এগুলো সে হাদীস যার সত্যতা ও বিশুদ্ধতার সাক্ষী স্বয়ং আল-কোরআন। কিন্তু তোমরা সে নির্ভরযোগ্য ও সনদ যুক্ত হাদীসগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকার করছো কারণ সেগুলো তোমাদের মনগড়া মতাদর্শের মোতাবেক নয়। আর এটাও তোমাদের আরেকটা মুর্খতা। তোমরা আল-কোরআনের আয়াতের মধ্যে নিহিত উত্তম ও আশ্চর্যজনক ভেদগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করো না। নাসেখ-মানসখ ও মোহকাম-মোতাশাবেহ আয়াতগুলোর মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করতেও তোমরা অনভিজ্ঞ। আর আদেশ ও নিষেধগুলোও তোমরা নির্ণয় করতে পার না।

তোমরা আমাকে হযরত সুলাইমান ইবনে দাউদ (আঃ)-এর কাহিনীর ব্যাপারে জবাব দাও- যিনি মহান আল্লাহর দরবারে এমন একটি রাজত্ব চেয়েছিলেন যার চাইতে বৃহৎ আর কোন রাজ্য কেউ পেতে না পারে।21 আর মহান আল্লাহ তাকে ঠিক তেমনি একটি রাজত্ব দানও করেছিলেন। আর এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে , আল্লাহর নবী সুলাইমান (অঃ) তার প্রাপ্য অধিকার ব্যতীত প্রার্থনা করতে পারবে না। মহান আল্লাহ কোরআন মজীদে এটাকে সুলাইমানের দোষের বিষয় বলে সাব্যস্ত করেননি আর কোন মুমিন দোষের বিষয় বলে সাব্যস্ত করেননি। আজ পর্যন্ত কাউকে এ কথা বলতে দেখা যায়নি যে , হযরত সুলাইমান (আঃ) এ পৃথিবীতে এতো বিস্তৃত ও নজিরবিহীন রাজত্ব কেন প্রত্যাশা করলেন ? এমনিভাবে হযরত সুলাইমান (আঃ) এর পূর্বে (তার পিতা) হযরত দাউদ (আঃ) এর ঘটনা স্মরণযোগ্য। অনুরূপভাবে হযরত ইউসফু (আঃ)-এর ঘটনাতেও দেখা যায় হযরত ইউসুফ (আঃ) তৎকালীন বাদশার নিকট সরকারিভাবে একথা বলছেন : রাজ্যের কোষাগারের তথা অর্থনৈতিক বিষয়াদির দায়-দায়িত্বের কাজটি আমার উপরে ছেড়ে দিন। কেননা আমি নির্ভরযোগ্য , বিশ্বস্তও অভিজ্ঞ।22

অতঃপর অবস্থা এই দাঁড়ালো যে , মিশর থেকে ইয়ামেন পর্যন্ত বিস্তৃত বিরাট সাম্রাজ্যের সমস্তদায়- দায়িত্বই তার উপর ন্যস্ত হলো। তিনি হলেন সাম্রাজ্যের বাদশাহ। এ সময় আশপাশের দেশগুলোতে দেখা দিল দুর্ভিক্ষ। সে সব দেশের লোকেরা তার রাজ্য থেকে শাক-সবজি , খাদ্য-খাবার ইত্যাদি কিনে নিয়ে যেতো। কিন্তু না , হযরত ইউসুফ (অঃ) কোনদিন কারো সাথে বেইনসাফী ও অন্যায় কাজ করেছেন। আর না তার থেকে কোন দোষের কথা আল্লাহ কোরআনে বলেছেন। ঠিক তেমনিভাবে জনাব যুলকারনাইনের কাহিনীও কারো অজানা নয়। তিনি খোদার এমন এক বান্দা ছিলেন যে , মহান আল্লাহকে ভালোবাসতেন। আর আল্লাহও তাকে ভালোবাসতেন। তাই তো জাগতিক কারণসমূহ তার অধিকারে চলে আসে। তিনি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত জগতের অধিপতি হন।

শোনো হে সুফীদল! এ ভ্রান্তপথ পরিত্যাগ করো এবং ইসলামের প্রকৃত ভিত্তিগুলো আঁকড়ে ধরো। মহান আল্লাহ যে সব বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন তার সীমা লংঘন করো না। আর নিজেদের মনগড়া কোন কিছু আবিষ্কার করো না। যে সব বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই সেখানে হস্ত ক্ষেপ করো না। সে সব বিষয়ের জ্ঞান জ্ঞানী লোকদের কাছ থেকে অর্জন করো। নাসেখ ,মানসুখ ,মোহকাম , মোতাশাবেহ ও হালাল-হারামের জ্ঞান হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত থাকো। এতে কেবল তোমাদের জ্ঞান অর্জনের কল্যাণই নয় , বরং তোমাদেরকে অজ্ঞতা ও মুর্খতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দেবে। অজ্ঞতা থেকে দূরে থাকো। কেননা অজ্ঞতার পক্ষপাতিত্বকারীদের সংখ্যা অনেক। তার বিপরীতে জ্ঞানের সমর্থক বড়ই কম। মহান আল্লাহ বলেন , জ্ঞান গরিমা ও বদ্ধিমত্তা , জ্ঞানী বুদ্ধিমানদের চাইতেও বড়।23