সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার0%

সত্য কাহিনী সম্ভার লেখক:
: মাওলানা আলী আক্কাস
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

সত্য কাহিনী সম্ভার

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহহারী
: মাওলানা আলী আক্কাস
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 43097
ডাউনলোড: 4716

সত্য কাহিনী সম্ভার
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 79 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 43097 / ডাউনলোড: 4716
সাইজ সাইজ সাইজ
সত্য কাহিনী সম্ভার

সত্য কাহিনী সম্ভার

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি তার বিষয়ের সর্বপ্রথম ও অনন্য অবতারণা হোক অথবা না হোক , এর জন্য প্রাপ্য ফুলের মামলার যোগ্য পাত্র আমি নই , অর্থাৎ যদি এ বইটি কাহিনী রচনার জগতে কোন গুরুত্বপূর্ণ নতুন অবতারণার দাবিদার হয় তাহলে তার গোড়াপত্তনকারী আমি নই। বরং প্রকাশনা ও প্রচারণার একটি প্রতিষ্ঠানে দেশের বিজ্ঞ বিজ্ঞ বিজ্ঞানী-গুণী কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি সম্পাদনা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ অধমও সে বোর্ডের একজন সদস্য। দেশের খ্যাতনামা লেখক ও বিজ্ঞতম ব্যক্তিত্ব সমৃদ্ধ সে বোর্ডের এক বৈঠকে প্রস্তাব রাখা হলো যে , এমন একটি গ্রন্থ রচিত হওয়া উচিত যার মধ্যে চারিত্রিক সুন্দর ও গুণাবলী কাহিনী আকারে উপস্থাপিত থাকবে। আর সে কাহিনীগুলো লেখকের নিজের মস্তিষ্ক থেকে আবিস্কৃত বা নিজের খেয়াল মোতাবেক তৈরি হবে না। বরং তার ভিত্তিমূল ও উৎস হবে হাদীস , বাস্তব জীবন ও ইতিহাসের গ্রন্থরাজি। এর সংকলনের উদ্দেশ্য থাকবে মুসলিম সমাজকে শিক্ষা দান এবং যুব সমাজকে হেদায়েতের পথ প্রদর্শন ও পরিচালনা করা।

23

ঈদের নামায

মামুন একজন চালাক-চতুর , সচেতন ও পরিণামদর্শী আব্বাসীয় খলিফা। সে স্বীয় ভাই মুহাম্মদ আমীনকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে তাকে হত্যা করে। সময়কার বিস্তৃত সাম্রাজ্যের সমস্ত অঞ্চলই সে নিজের করতলগত করে। তার এ ব্যস্ততার সময় সে মারভ নামক স্থানে অবস্থান করছিল। মারভ খোরাসানের একটা এলাকা ছিল। মারভে থেকে মামুন একটি পত্র হযরত ইমাম রেজা (আঃ)-এর নামে মদীনায় পাঠায়। পত্রে সে ইমামকে মারভে আসার আমন্ত্রণ জানায় । জবাবে হযরত ইমাম রেজা (আঃ) বিভিন্ন কারণে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন , এ মুহূর্তে মদীনা ত্যাগ করার মতো অবস্থা আমার নেই। মামুন তার ইচ্ছা থেকে নিবৃত্ত হলো না। তাই সে পরপর কয়েকটি চিঠি ইমামের খেদমতে পাঠালো। প্রতিটি চিঠিতেই ইমামকে মারভে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এভাবে ইমাম বুঝতে পারলেন যে , খলিফা মামুন তার ইচ্ছা থেকে পিছু হটবার পাত্র নয়।

অবশেষে ইমাম রেজা (আঃ) মদীনা থেকে রওনা হলেন এবং মারভে এসে উপস্থিত হলেন। মামুন প্রস্তাব দিল , আসুন! খেলাফতের দায়িত্ব্ভার গ্রহণ করুন। ইমাম (আঃ) মামুনের মনের ভেদ সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সুতরাং তাঁর বুঝতে দেরী হলো না যে , এ প্রস্তাবের একশ ভাগই রাজনৈতিক চালাকির অংশ বিশেষ। তাই তিনি খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণে অস্বীকার করলেন।

প্রায় দুই মাস এভাবে অতিবাহিত হয়ে গেল। একপক্ষ থেকে প্রবল চাপ আর অপর পক্ষ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অটল।

অবশেষে যখন মামুন বুঝতে পারলো যে , ইমাম রেজা (আঃ) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণে মোটেও রাজী নন , তখন সে তার পরবর্তী যুবরাজ পদে প্রস্তাব রাখলো। ইমাম এ প্রস্তাবটি এ শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করলেন যে , তার ওপর কোন দায়-দায়িত্ব অর্পণ করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় কোন ব্যাপারে ইমাম কোন হস্তক্ষেপ করবেন না। মামুন ইমামের সমস্ত শর্ত মেনে নিল।

অতঃপর মামুন লোকদের কাছ থেকে ইমামের যুবরাজ পদে বাইয়াত (শপথ) আদায় করলো। রাজ্যব্যাপী ফরমানও জারি করে পাঠালো। মামুন আরো হুকুম জারি করলো যে , ইমাম রেজা (আঃ) এর নামে মুদ্রা চালু করা হবে এবং সারা দেশের সমস্ত মসজিদগুলোর মিম্বার থেকে ইমামের নামে খোৎবা পাঠ করা হবে। সুতরাং সমগ্র দেশ জুড়েই মামুনের নির্দেশ পালিত হলো।

কোরবানীর ঈদ এসেছে। মামুন এক ব্যক্তিকে ইমামের খেদমতে পাঠালো এবং নিবেদন করলো : এ বছর ঈদের নামায আপনি পড়াবেন যাতে করে লোকদের দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে যায় যে , পরবর্তীতে খেলাফতের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি আপনিই।

ইমাম (আঃ) বার্তা পাঠালেন , আমাদের মধ্যে এ অঙ্গীকার হয়েছিল যে , আমি সরকারী কোন কাজেই হস্তক্ষেপ করবো না। সুতরাং এ কাজটি আঞ্জাম দিতে আমি অপারগ।

মামুন উত্তর পাঠালো : সময়ের দাবি হচ্ছে আপনি লোকদের ঈদের নামায পড়াবার জন্য ঈদগাহে যাবেন। তাতে করে যুবরাজের বিষয়টি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। মোদ্দাকথা মামুন এতো বেশী জিদ ধরলো যে , অবশেষে ইমাম (আঃ) জবাব দিলেন , যদি তুমি আমার অপারগতা মেনে নাও তাহলে সেটাই উত্তম। আর যদি ঈদের নামায পড়াবার জন্য আমাকে অবশ্যই যেতে হয় তাহলে আমি খোদার এ বিধানটিকে এমনভাবে পালন করবো , যে ভাবে মহানবী (সাঃ) ও হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ) পালন করতেন।

মামুন বললো , আপনার পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা রয়েছে। যেভাবে চান সেভাবেই পড়াবেন। ঈদের দিন সকালে সেনাবাহিনীর বড় বড় কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন নেতাবর্গ , অভিজাত মহল ও সাধারণ লোকজন খলিফাদের সময়কার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মূল্যবান নতুন নতুন পোশাক পরিধান করে সুসজ্জিত ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে ঈদের নামাযে শরীক হবার জন্য ইমামের বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল। অন্যান্য লোকজনও অলিতে-গলিতে দাঁড়িয়ে যুবরাজের রাজসিক আগমন প্রত্যক্ষ করার জন্য তার বাহনের অপেক্ষায় অপেক্ষা করতে থাকে। যাতে করে তারাও ঈদগাহ পর্যন্ত যুবরাজের বাহনের পেছনে পেছনে ঈদগাহে যেতে পারে। এমনকি অগণিত নারী-পুরুষ নিজেদের ঘর-বাড়ির ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ইমামের শান-শওকত , পূর্ণ যাত্রার অপেক্ষায় রইলো। সকলের দৃষ্টি ইমামের বাড়ির আঙ্গিনার দিকে নিবদ্ধ ছিল এবং অধীর আগ্রহে সকলেই ইমামের অপেক্ষা করছিল।

অপরদিকে হযরত ইমাম রেজা (আঃ) পূর্ব থেকেই খলিফা মামুনের কাছ থেকে এ অঙ্গীকার নিয়ে রেখেছিলেন এবং এ শর্তসাপেক্ষে তিনি ঈদের নামাযে অংশগ্রহণে রাজী হয়েছিলেন যে , খোদায়ী এ বিধান পালন করার ক্ষেত্রে খলিফাদের নয় , বরং মহানবী (সাঃ) ও হযরত আলী (আঃ)-এর নিয়ম অনুসরণ করবেন। সে মতে তিনি ঈদের দিন সকালে সর্বপ্রথম গোসল করলেন। মাথায় পরিধান করলেন সাদা পাগড়ি। পাগড়ির এক মাথা বুকের উপর ঝুলিয়ে দিলেন এবং অপর মাথাটি দুই কাঁধের মাঝামাঝি রেখে দিলেন। অতঃপর জামার আঁচলকে উপরে ওঠালেন ও খালি পা হয়ে গেলেন। তারপর তার সাথীগণকে বললেন , তোমরাও আমার মতো হয়ে যাও। এরপর তিনি লাঠিটি হাতে নিলেন যার অগ্রভাগ ছিল লোহার। এবার তিনি তাঁর সাথীদেরকে সাথে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে আসলেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথেই ইমাম (আঃ) এদিনে ইসলামী সুন্নত মাতাবেক তাকবীর ধ্বনি উচ্চরণ করলেন : (আলাহু আকবার , আল্লাহু আকবার)।

লোকেরা ইমামের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করলো। এ সময় মনে হচ্ছিল যে , আসমান-যমীন ও প্রতিটি দেয়াল থেকে তাকবীর ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ইমাম (আঃ) কিছুক্ষণ বাড়ির সম্মুখে দাঁড়ালেন এবং অতি উচ্চ স্বরে এ কথাগুলো বললেন : (আলাহু আকবার , আলাহু আকবার , আলাহু আকবার , আলা-মা-হাদানা , আল্লাহু আকবার আলা- রাজাকানা মিন বাহীমাতিল আনআমি , আল হামদুলিলাহি আলা-মা-আবালানা।

সমস্তলোকেরা উচ্চ স্বরে সম্মিলিতভাবেও পরস্পর সমস্বর এ বাক্যটি পুনরাবৃত্তি করলো।

অবস্থা তখন এমন ছিল যে , সকলে অঝোরে কাঁদছিল। লোকদের চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসা অশ্রু এ কথারই সাক্ষ্য দিচ্ছিল যে , সমবেত প্রত্যেকটি লোকের মধ্যেই জোশানুভূতি জেগে উঠেছিল। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা , যারা মূল্যবান সরকারী পোশাক পরিধান করে উত্তম ঘোড়ায় আরোহণ করে এসেছিল , যারা নিজেদের মনে এ ধারণা পোষণ করে রেখেছিল যে , খলিফার যুবরাজ অত্যন্তশান-শওকতপূর্ণ খুব দামী পোশাক পরিধান করে ঈদগাহে গমন করবেন। কিন্তু তারা যখন দেখতে পেলো যে , ইমাম (আঃ) একেবারে সাধারণ পোশাক পরে এবং খালি পদে ঘর থেকে বের হলেন আর পরিপূর্ণরূপে মহান আল্লাহর প্রতি অন্তর নিবদ্ধ আছেন , তখন তারা এমন আবেগময় হয়ে উঠলো যে , তাদের অজান্তেই চোখ দিয়ে অশ্রুপ্রবাহিত হতে লাগলো। তারাও সব জোরেশোরে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে নিজেদের বাহনের পিঠ থেকে নেমে পড়লো এবং নিজেদের জুতার ফিতা চাকু দিয়ে কেটে ফেললো। যাতে করে খালি পা হতে দেরী না হয়। প্রত্যেকের চেষ্টা ছিল যে , সে তার অপরাপর সাথীদের আগেই শূন্য পদ হবার সৌভাগ্যের অধিকারী হবে।

মারভ্ শহরের সর্বত্র আবেগ , উত্তেজনা আর কান্নার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছিল। ইমাম (আঃ) প্রতি দশ কদমে একবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন এবং উচ্চ ¯স্বরে চারবার তাকবীর বলছিলেন। বিরাট সংখ্যক একদল লোক অত্যন্ত জোশানুভূতির সাথে ইমামের সাথে সাথে এগিয়ে চলছিল। জনগণ যারা বস্তুগত ও জাগতিক জাকজমক প্রত্যক্ষ করার অপেক্ষায় ছিল , মুহূর্তেই যেন তাদের সে প্রত্যাশা উঠে গেল।

এ সংবাদ খলিফা মামুনের নিকট পৌঁছে গেল। মামুনের সাথী-বন্ধুরা তাকে পরামর্শ দিয়ে বললো যদি এ অবস্থা আরো কিছুক্ষণ স্থায়ী থাকে এবং ইমাম আলী ইবনে মূসা আর রেজা (আঃ) ঈদগাহে পৌঁছে যান তাহলে বিপ্লব ঘটে যাবার বিপদ রয়েছে। মুহূর্তেই মামুন কেঁপে উঠলো। তৎক্ষণাৎ সংবাদ পাঠালো : (হে ইমাম) আপনি ফিরে আসুন। তা না হলে আপনার সাথে কোন দুঃখজনক ঘটনার অবতারণা হয়ে যেতে পারে। ইমাম (আঃ) নিজের জুতা ও জামা কাপড় চেয়ে পাঠালেন এবং সেগুলো পরিধান করে বাড়ী ফিরে গেলেন। আর বললেন , আমি তো আগেই বলেছিলাম যে , এ কাজ করতে আমি অপারগ।34

24

মায়ের দোয়া শ্রবণ

সে রাত্রে। মা ঘরের এককোণে কেবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। পাশে থেকেই সন্তান মায়ের মুখ থেকে নিঃসৃত প্রতিটি কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। মায়ের রুকু-সেজদা ও ওঠা-বসা অত্যন্ত গভীরভাবে লক্ষ্য করেছিল। যদিও শিশু ছিল কিন্তু শবে জুমআ য় মাতা সমস্ত মুসলমান নরনারীর জন্য মঙ্গল কামনা করে দোয়ায় লিপ্ত আছেন , একজন একজন করে সকলের নাম নিচ্ছেন আর মহান আল্লাহর দরবারে তাদের কল্যাণ , উন্নতি ও মঙ্গল চেয়ে প্রার্থনা করছেন , দেখতে হবে তার নিজের জন্য কি প্রার্থনা করেন ?

রাত কেটে গেল। তার মাতা সারা রাত অন্য মুসলমান নরনারীদের জন্য মঙ্গল কামনা করে দোয়া করতে থাকলেন। এভাবে ইবাদত-বন্দেগী ও দোয়ার মধ্যে দিয়ে সকাল হয়ে গেল। কিন্তু ইমাম হাসান (আঃ) তার মায়ের মুখে তার নিজের ব্যাপারে কোন দোয়া করতে শুনতে পেলেন না। তাই তিনি সকাল বেলা তার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন , আম্মাজান! আমি সারা রাত জেগে জেগে আপনার দোয়া মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। কিন্তু আপানি মহান খোদার দরবারে কেবল অন্য লোকদের জন্য দোয়া করতে থাকলেন। নিজের জন্য তো কোন দোয়া করলেন না ?

মাতা হযরত ফাতিমা যাহরা (আঃ) স্নেহভরা কণ্ঠে বললেন , হে আমার প্রিয় সন্তান! প্রথমে পাড়া- প্রতিবেশীকে দেখতে হয়। তারপর নিজের ঘর।35

25

বিচারকের দরবারে

একজন অভিযোগকারী তদানীন্তন প্রতাপশালী খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাবের দরবারে তার অভিযোগ পেশ করলো। উভয় পক্ষকে বিচারালয়ে হাজির হতে হবে শুনানীর জন্য। যার বিরুদ্ধে অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছিল তিনি ছিলেন আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ)।

হযরত ওমর উভয় পক্ষকে তলব করলেন। ইসলামী বিধি-বিধান মোতাবেক উভয় পক্ষকেই পরস্পরের পাশাপাশি বসতে হবে যাতে আদালতের দৃষ্টিতে সকলের মর্যাদা সমান এটা বাস্তবায়ন হয়। খলিফা বাদীকে তার নাম ধরে ডাকলেন এবং নির্দেশ দিলেন যে , বিচারকের সামনে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়াতে। অতঃপর খলিফা হযরত আলীর দিকে লক্ষ্য করে বললেন , হে আবুল হাসান (হাসানের পিতা)! আপনিও বাদীর পাশে দাঁড়িয়ে যান। এ কথা শুনে হযরত আলী (আঃ)-এর চেহারায় অসন্তুষ্টি ও রাগের চিহ্ন দেখা গেল। খলিফা জিজ্ঞাসা করলেন , হে আলী! আপনি কি আপনার বাদীর পাশে দাঁড়াতে অপছন্দ করছেন ?

জবাবে হযরত আলী (আঃ) বললেন , আমার অসন্তুষ্টি ও রাগের কারণ এটা ছিল না যে , আমি আমার বাদীর পাশে দাঁড়াতে নারাজ , বরং আমি অসুন্তষ্ট এ জন্য যে , আপনি ন্যায়পরায়ণতাকে পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করেননি। কারণ আমাকে আমার কুনিয়ত (আবুল হাসান) বলে ডাকলেন। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষ বাদীকে তার সাধারণ নাম ধরেই ডেকেছেন। প্রকৃতপক্ষে আমার রাগ ও অসন্তুষ্টির কারণ এটাই।36

26

মিনার ময়দানে

হজ্বের উদ্দেশ্যে আগত লোকেরা মিনার ময়দানে সমবেত ছিল। ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) একদল সাহাবীদেরকে নিয়ে ময়দানের এক কোণে বসে তাদের সামনে রাখা আঙ্গুর খাচ্ছিলেন।

এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে কিছু সাহায্য চাইল। ইমাম তাকে কিছু আঙ্গুর দিতে চাইলেন। ভিক্ষুক আঙ্গুর নিতে অস্বীকার করে বললো , আমাকে আঙ্গুর নয় , বরং কিছু টাকা পয়সা দিন। ইমাম বললেন , আমার কাছে তোমাকে দেবার মতো পয়সা নেই। নিরাশ হয়ে ভিক্ষুক চলে গেল।

কিছু দূর গিয়ে সে লজ্জিত হলো এবং ফিরে এসে ইমামকে বললো , সে আঙ্গুরই আমাকে দিন। ইমাম বললেন , না ,সে আঙ্গরও এখন দেয়া যাবে না।

এর অল্প কিছুক্ষণ পর আরেকজন ভিক্ষুক এসে সাহায্য চাইলো। ইমাম তাকে একটি আঙ্গুরের ছড়া দিলেন। সে আঙ্গুর হাতে নিয়ে বললো , মহান আল্লাহর শুকুর যে , তিনি আমাকে রিযিক দান করলেন। ইমাম (আঃ) তার এ কথা শুনে তাকে দাঁড়াতে বললেন। তারপর ইমাম স্বীয় অঞ্জলি ভরে তাকে আরো আঙ্গুর দিলেন। এবারও আঙ্গুর হাতে নিয়ে সে আল্লাহর শুকুর আদায় করলো।

আবারও ইমাম (আঃ) তাকে বললেন , থামো! যেয়ো না। তারপর ইমাম পাশেই দাঁড়ানো তাঁর এক সাথীকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমার কাছে কত টাকা আছে ? সে তালাশ করে দেখলো , প্রায় বিশ দিরহাম আছে। ইমাম বললেন , সমস্ত টাকাটাই তাকে দিয়ে দাও। টাকা পেয়ে ভিক্ষুক তৃতীয়বারের মতো মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো , হে আল্লাহ! সমস্তপ্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা তোমারই। হে খোদা! তুমিই সমস্ত নেয়ামতের দাতা। তোমার কোন অংশীদার নেই।

এ কথা শুনে ইমাম (আঃ) নিজের গায়ের জামা খুলে তাকে দিয়ে দিলেন। এখানে এসে ভিক্ষুক তার ভাষা বদল করে স্বয়ং ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)-এর শানে কৃতজ্ঞতাসূচক কিছু কথা বললো। তারপর ইমাম তাকে আর কিছুই দিলেন না। সে চলে গেলো। সেখানে উপস্থিত ইমামের সাহাবীরা বললেন , আমরা তো মনে করেছিলাম যে , এভাবে ভিক্ষুক যদি খোদার শুকুর আদায় করতে থাকতো , তাহলে ইমামও তার দান করেই যেতেন। কিন্তু যেহেতু ভিক্ষুকের ভাষা বদলে যায় এবং সে স্বয়ং ইমামের শুকরিয়া আদায় করে , সে কারণে ইমাম তাঁর দানের হাতকে থামিয়ে দিলেন।37

27

ভার উত্তোলন প্রতিযোগিতা

একদল মুসলমান যুবক শক্তি পরীক্ষা ও ভার উত্তোলন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। সেখানে খুব ভারী একটা পাথর পড়ে ছিল। যুবক দল সে ভারী পাথরটি উত্তোলন করার ক্ষেত্রে নিজেদের শক্তি ও বাহাদুরী প্রদর্শন করছিল। প্রত্যেকেই নিজের শক্তি অনুযায়ী সে পাথরটি উত্তোলনের চেষ্টা করছিল। এমন সময় রাসূলে আকরাম (সাঃ) সেখানে পৌঁছলেন এবং যুবকদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমরা কি করছো ?

যুবকরা বললো , আমরা শক্তি পরীক্ষা করছি। আমরা দেখতে চাই যে , আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী কে ?

রাসূল (সাঃ) বললেন , তোমরা যদি বলো তাহলে আমি বলে দিতে পারি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী কে ? তারা বললো , জী হ্যাঁ! অবশ্যই! এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে যে , আপনার মতো ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি আমাদের প্রতিযোগিতার বিচারক হবেন ?

সকলেই আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছিল যে , রাসূলে আকরাম (সাঃ) কাকে সব চাইতে শক্তিশালী বলে ঘোষণা করেন। কেউ কেউ ভাবছিল যে , এখনই রাসল (সাঃ) তার হাত ধরে সকলের সামনে ঘোষণা দেবেন যে , তোমাদের মধ্য থেকে এ ছেলেটি সবচেয়ে শক্তিশালী।

আল্লাহর নবী (সাঃ) বললেন , সবচাইতে শক্তিশালী সে ব্যক্তি , যার কোন জিনিস খুব পছন্দ হয় আর সে ঐ জিনিসের প্রতি আসক্তও হয়ে পড়ে। কিন্তু সে জিনিসের আসক্তি তাকে সত্য পথ ও মানবতা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। আর মন্দের দ্বারা কলুষিত করে না। আর যদি সে ব্যক্তি কোন বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয় এবং রাগ ও ক্ষোভের কারণে অগ্নিশর্মা হয়ে যায় তাহলে সে অবস্থাতেও সে নিজেকে সংযত রাখে , সত্য ছাড়া মিথ্যা বলে না। সে যদি প্রতাপশালী হয় এবং বাধাসমূহ তার সামনে থেকে সরে যায় তাহলেও তার অধিকারের বাইরে সে হাত বাড়ায় না।38

28

নওমুসলিম

দুই প্রতিবেশী! একজন মুসলমান ও অন্যজন খ্রিস্টান। তারা মাঝে মাঝে ইসলাম ধর্ম নিয়ে পরস্পরে আলাপ-আলোচনা করতো। মুসলমান লোকটি ছিল খুবই দ্বীনদার-ইবাদতকারী। আলাপ-আলোচনার সময় সে ইসলাম ধর্মের এতো প্রশংসা ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতো যে , তার খ্রিস্টান বন্ধুটি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেলো। অবশেষে কিছুদিন পর সে খ্রিস্টান লোকটি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিলো।

রাতের বেশীর ভাগ সময় পার হয়ে সেহরীর সময় হয়েছিল। নও মুসলিম সে খ্রিস্টান লোকটি বুঝতে পারলো যে , কেউ তার ঘরের দরজায় টোকা দিচ্ছে। সে ত্রস্ত-ব্যস্তহয়ে দরজার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলো , কে ?

দরজার বাহির থেকে জবাব এলো , আমি অমুক অর্থাৎ দরজায় আওয়াজ দেয়া লোকটি নিজের পরিচয় দিল। এ সেই মুসলমান প্রতিবেশী লোকটি যার হাতে খ্রিস্টান লোকটি কয়েকদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল। সে নও মুসলিম খ্রিস্টান লোকটি প্রতিবেশী বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলো , এতো রাতে কি দরকারে এসেছো ?

মুসলমান বন্ধুটি বললো , তাড়াতাড়ি অযু করে নাও। তারপর কাপড়-চোপড় পরে বেরিয়ে এসো। ফজরের নামায পড়ার জন্য মসজিদে যেতে হবে। সে নতুন মুসলমানটি জীবনে প্রথমবারের মতো অযু করলো। তারপর মুসলমান বন্ধুটির সাথে মসজিদে চলে গেল। এখনও সকাল হতে অনেক দেরী। রাতের নফল নামাযের সময় আছে। দইু বন্ধু বেশ কিছুক্ষণ ধরে নফল নামায আদায় করলো। এমন সময় সেহরীর সময় পার হয়ে সাদা আভা দেখা দিল অর্থাৎ ফজরের নামাযের সময় হলো। তারা ফজরের নামায আদায় করলো। এরপর দোয়া-দরুদ ইত্যাদিতে লিপ্ত হলো। এভাবে পূর্ণ সকাল হয়ে গেল। তাই নও মুসলমানটি মসজিদ থেকে বাড়ি যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো। তার মুসলমান বন্ধুটি জিজ্ঞাসা করলো , কোথায় যাচ্ছো ?

জবাবে নও মুসলিমটি বললো , বাড়ি যাচ্ছি। সকালের নামায তো পড়ে নিলাম। এখন আর এখানে কি কাজ ?

মুসলমান বন্ধুটি বললো , আর একটু দেরী করো। নামাযের পরের দোয়া-দরুদ ইত্যাদিও পড়ে নাও। এরই মধ্যে সূর্যও উদয় হয়ে যাবে।

নও মুসলিম বন্ধুটি বললো , বেশ ভালো।

এ কথা বলে সে মসজিদে বসে গেল এবং খোদার যিকির-আযকারে লিপ্ত হলো। সূর্য উঠে গেল। সে আবার বাড়ি যাবার জন্য উঠছিল। এমন সময় তার মুসলমান বন্ধুটি কোরআন মজীদ তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো , আপাতত কিছুক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করো। এতে করে সূর্যটা ও ভালোভাবে উঠে যাবে। আর আমি তোমাকে উপদেশ দেবো যে , আজ তুমি রোযার নিয়ত করে নাও। তুমি কি জানো না রোযা কত সওয়াব ও ফজিলতের কাজ ?

এভাবে ধীরে ধীরে যোহরের নামাযের সময় হয়ে এসেছে। সে মুসলমান বন্ধুটি বললো , আর একটু দেরী করো। যোহরের নামাযের সময় প্রায় হয়ে গেছে। যোহরের নামাযও মসজিদে পড়ে নাও। যোহরের নামাযও পড়া হলো। তারপর মুসলমান বন্ধুটি বললো , আর অল্প কিছুক্ষণ দেরী করো। আসরের নামাযের ফজিলতের সময় খুবই নিকটবর্তী। এ নামাযটাও ফজিলতের সময়ে আদায় করে নেয়া যাক। আসরের নামায শেষ হবার পর তার নও মুসলিম বন্ধুটিকে বললো , সূর্যাস্ত খুব নিকটে। আর অল্প পরেই মাগরিব নামাযের সময় হয়ে যাবে। নও মুসলিম লোকটি মাগরিব নামাযের পর বাড়ি যাবার ইচ্ছা করলো। সারা দিন রোযা রাখার পর এখন ইফতার করবে। তার মুসলমান বন্ধুটি বললো , এখন একমাত্র এশার নামাযই বাকি আছে। আর খানিক সময় অপেক্ষা করো। ঘণ্টা খানিকের মধ্যে এশার নামাযের ফজিলতের সময়। এভাবে এশার নামাযও সে নওমুসলিম লোকটি মসজিদে আদায় করলো। এরপর বাড়ি ফিরে গেলো।

দ্বিতীয় রাতে সেহরীর সময় সে নও মুসলিমের কানে দরজা টোকানোর শব্দ এলো। সে জিজ্ঞাসা করলো , কে ?

জবাব এলো , আমি তোমার প্রতিবেশী অমুক। অযু করে কাপড়-চোপড় পরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসো। এক সাথে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামায আদায় করবো।

নও মুসলিম বললো , আমি গতকাল মসজিদ থেকে ফিরে এসে তখনই ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছি। তুমি চলে যাও। আমার থেকে বেকার কোন লোক খুঁজে নাও যার কাছে নামায , রোযা ও আল্লাহর ইবাদত ব্যতীত দুনিয়ার আর কোন কাজ নেই। সে তার সমস্ত সময় মসজিদে কাটিয়ে দেবে। আমি দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তলোক। তা ছাড়া আমার উপর আমার পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং আমার নামায-রোযা ও খোদার ইবাদত ছাড়া আরো কাজ-কর্ম রয়েছে। আমাকে আমার পরিবারের লোকদের জন্য খাওয়া পরার ব্যবস্থাও করতে হবে।

হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) তাঁর সাহাবীদের নিকট এ ঘটনাটি বর্ণনা করার পর বলেন , এভাবে এ কঠোর ও চরম ইবাদতকারী পরহযেগার লোকটি একজন অমুসলিমকে মুসলমান তো বানালো , কিন্তু নিজের কট্টর মনোভাব অবলম্বনের কারণে সে তার নিজেরই হাতে করা নওমুসলিম বন্ধুটিকে ইসলামের গন্ডী থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। অতএব তোমাদেরকে সর্বদা এ সত্যটি সামনে রাখতে হবে যে , লোকেরা তোমাদের কঠোর মনোভাব ও চরম পন্থা অবলম্বনের কারণে যেনো বিরক্ত না হয়ে যায়। তাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি রেখে কাজ হবে যাতে করে তারা দ্বীন ইসলাম ও এর সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজে নিজেই ইসলামের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়। ইসলাম থেকে যেন সরে না পড়বে। তোমাদের কি এ কথা জানা নেই যে , কঠোরতা ও বলপ্রয়োগ উমাইয়া শাসকদের নীতি ছিল ? কিন্তু আমাদের নীতি হচ্ছে। মধুর চরিত্র , নম্র আচরণ , ভালোবাসা ও পরস্পর আন্তরিকতা ভিত্তিক। নির্ভেজাল ইসলামী চরিত্র ও উত্তম আচরণের দ্বারা লোকদের অন্তর জয় করে নেয়াই আমাদের পন্থা।39

29

খলিফার দস্তরখান

শারীক ইবনে আব্দুল্লাহ নাখায়ী দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দীর খ্যাতনামা ফকীহদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তাকওয়া-পরহেযগারীর জগতে এক উলেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আব্বাসীয় খলিফা মাহদী ইবনে মানসুরের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল যে , তাকে প্রধান বিচারপতির পদটি দেয়া হবে। কিন্তু শারীক ইবনে আবদুল্লাহ জুলুম-অত্যাচার ও বেইনসাফীর ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য সে পদটি গ্রহণ করতে রাজী ছিলেন না। খলিফার আরো একটি ইচ্ছা ছিল যে ,শারীক ইবনে আবদুল্লাহ কে তার সন্তানদের বিশেষ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করবে যাতে করে তার সন্তানরা শারীকের মতো যোগ্য ওস্তাদের কাছ থেকে হাদীসশাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করতে পারে। কিন্তু তিনি সে প্দটাও গ্রহণ করতে রাজী ছিলেন না। বস্তুত তিনি দারিদ্র্য ও স্বাধীন জীবন যাপনেই পরিতৃপ্ত ছিলেন।

একদিন খলিফা তাকে দরবারে ডেকে পাঠালো এবং বললো , আমি আপনার সামনে আজ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রস্তাব রাখছি। আপনি এ তিনটির যে কোন একটি বেছে নিতে পারেন। হয় বিচারপতির পদটি গ্রহণ করবেন অথবা আমার ছেলে-সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষা দানের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন কিংবা আজ দুপুরে আমার সাথে একই দস্তরখানে বসে খাবার খাবেন।

জনাব শারীক কিছুক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে বললেন এ ভাবে জোর যবরদস্তী ও বাড়াবাড়ির পরিস্থিতিতে এ তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে তৃতীয় প্রস্তাবটি আমার জন্য সহজতর। খলিফা তার বিশেষ বাবুর্চিকে ডেকে হুকুম দিল যে , আজ জনাব শারীক ইবনে আব্দুল্লাহর মতো বিজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অতি উত্তম ও রুচিসম্মত খাদ্য-খাবার প্রস্তুত করো। খলিফার নির্দেশ পেয়ে শাহী খেদমতগাররা রকমারী খাদ্য খাবার দিয়ে দস্তরখানা সাজিয়েছিল।

শারীক এর পূর্বে এমন সব খাদ্য-খাবার কখনও দেখেননি। সুতরাং রং-বেরংয়ের খাদ্যসামগ্রী দেখে তার ক্ষুধা বেড়ে গেল। তিনি খুব পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়া খেলেন। তার খাওয়ার ধরন দেখে খানসামা খলিফার কানে আস্তেকরে বললো , খোদার কসম! এখন আর এ ব্যক্তি আমাদের থাবা থেকে ছাড়া পাবে না।

এরপর খুব বেশী দিন দেরী হলো না শারীক খলিফার সন্তানদের শিক্ষা দেয়ার দায়িত্বভারটি গ্রহণ করে নিলেন। এরপর বিচারপতির পদটিও গ্রহণ করলেন। বাইত মাল থেকে তার মাসিক ভাতাও নির্ধারিত হলো।

একদিন ভাতা গ্রহণের সময় লেনদেনের ব্যাপারে কোষাধ্যক্ষের সাথে শারীকের ঝগড়া হয়ে গেলো। খাজাঞ্চী তাকে বললো , আপনি তো আমার কাছে গম বিক্রি করেননি যে , হিসাব কিতাবে এ রকম পাই পাই হিসাব করবেন।

শারীক বললো , তুমি হয়তো জানো না যে , আমি গম থেকে আরো অনেক মূল্যবান ও উত্তম জিনিস বিক্রি করে দিয়েছি।আমি তো আমার দ্বীন-ধর্ম বিক্রি করে দিয়েছি।40