৩৪
কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন
রাতের অন্ধকারে এক যুবকের করুণ আহ্বান দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল। সে অত্যন্তকরুণ কণ্ঠে সাহায্যের আবেদন করছিলো এবং সে আম্মাজান , আম্মাজান করে ডাকছিল। আসলে তার দুর্বল রোগা উটটি কাফেলা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত উটটি ক্লান্তহয়ে যমীনে শুয়ে পড়েছিল। সব রকমের চেষ্টা করেও সে উটটিকে ওঠাতে সক্ষম হলো না। কোন উপায়ান্তর না দেখে সে উটটির মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ক্রন্দন করতে লাগলো। এমন সময় মহানবী (সাঃ) , যিনি সর্বদা কাফেলার সকলে পিছে চলে থাকেন , যাতে করে কোন দুর্বল ও বৃদ্ধ লোক কাফেলা থেকে পিছে পড়ে গেলে একা অসহায় না হয়ে পড়ে , তিনি দূর থেকে সে যুবকের ফরিয়াদ শুনতে পেলেন। তিনি যখন যুবকটির কাছে পৌঁছলেন তখন জিজ্ঞাসা করলেন , কে তুমি ?
যুবকটি বললো , আমি জাবের। রাসূল (সাঃ) বললেন , তুমি এতো অস্থির ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কেন ?
যুবক বললো , হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমার উটটি দুর্বল ও ক্লান্তির কারণে কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন সে বসে পড়েছে আর উঠতেই চায় না। ওদিকে কাফেলা এগিয়েই চলেছে।
রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন , তোমার কাছে কোন লাঠি আছে কি ?
সে বললো , জী হ্যাঁ। রাসূল (সাঃ) বললেন , দাও। আমাকে দাও। এরপর মহানবী (সাঃ) লাঠির সাহায্যে উটটিকে ধাক্কা দিলেন। উটটি উঠে দাঁড়ালো। তিনি আবার সেটিকে বসিয়ে দিলেন। তারপর তিনি স্বীয় হাতকে পাদানী বানিয়ে ধরলেন এবং জাবেরকে বললেন , আরোহণ করো।
জাবের উটের পিঠে চড়ে রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সাথে সাথে চললেন। এবার জাবেরের উটটি আগের চেয়ে আরো দ্রুত চলতে লাগলো। পথে আল্লাহর নবী (সাঃ) জাবেরের প্রতি সর্বদা দয়া প্রদর্শন করছিলেন। জাবের গণনা করে দেখলেন যে , রাসূল (সাঃ) পথ চলতে চলতে প্রায় পঁচিশবার তার জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
পথে রাসূল (সাঃ) জাবের ইবনে আবদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমার পিতা থেকে তোমরা কতো ভাইবোন আছো ?
জাবের বললেন , ইয়া রাসূলুলাহ! আমার সাতটি বোন আছে। আর আমিই একমাত্র ভাই।
রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন , তুমি কি তোমার পিতার সমস্তঋণ পরিশোধ করে দিয়েছো ? নাকি এখনো কিছু বাকী আছে ?
জাবের বললেন , না! এখনো কিছু লোকের ঋণ বাকি আছে।
রাসূল (সাঃ) বললেন , মদীনায় পৌঁছে তুমি পাওনাদারদের সাথে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে কথাবার্তা বলে নিও। আর যখন খুরমা তোলার সময় আসবে তখন আমাকে খবর দিও।
: আচ্ছা! ঠিক আছে।
: তুমি কি বিয়ে শাদী করেছো ?
: জ্বী হ্যাঁ।
: কাকে বিয়ে করেছো ?
: আমি অমুকের মেয়ে অমুককে বিয়ে করেছি। সে মদীনার একজন বিধবা রমণী।
: তুমি একটি কুমারী মেয়েকে কেন বিয়ে করলে না ? তোমার মতো একজন যুবকের জন্য তো কুমারী মেয়েই সঙ্গত ছিলো।
: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমার কয়েকটি অনভিজ্ঞ যুবতী বোন আছে। এ জন্য অনভিজ্ঞা যুবতী মেয়েকে বিয়ে করতে চাইনি। বরং কল্যাণকর মনে করলাম যে , একজন বুদ্ধিমতী অভিজ্ঞা বিধবা নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করি।
: এটা তুমি একটা উত্তম কাজ করেছো। এ উটটি তুমি কতো টাকা দিয়ে কিনেছো ? দুইশত দিরহাম ।
: এই টাকা মূল্যেই উটটি আমাকে দাও। মদীনায় এসে তুমি আমার কাছ থেকে তা নিয়ে নিও। এভাবে কয়েকদিন সফর করে কাফেলা মদীনায় এসে পৌঁছলো। জাবের তার উটটি নিয়ে রাসূলে খোদার খেদমতে হাজির হলেন উটটি হস্তান্তর করবেন বলে। রাসূল (সাঃ) জাবেরকে দেখেই বিলালকে ডেকে বললেন , জাবেরকে দুইশত দিরহাম দিয়ে দাও। এটা তার উটের মূল্য। তাকে আরো একশ বিশ দিরহাম দিয়ে দাও যাতে তার বাবার ঋণ পরিশোধ করতে পারে। তার সাথে এ উটটিও তাকে ফেরত দিও। এটা তারই থাকবে।
এরপর রাসূল (সাঃ) জাবেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , পাওনাদারদের সাথে কি তোমার কোন কথাবার্তা হয়েছে ?
জাবের বললেন , না! হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)!
রাসূল (সাঃ) আরো জিজ্ঞাসা করলেন , তোমার পিতা যে সম্পদ রেখে গেছেন তা দিয়ে কি তোমার বাবার ঋণ পরিশোধ করা যথেষ্ট হবে ?
জাবের বললেন , না। হে আল্লাহর নবী (সাঃ)! তা যথেষ্ট নয়।
রাসূল (সাঃ) বললেন , তাহলে খুরমা তোলার সময় হলে আমাকে খবর দিও।
এর কিছুদিন পরেই খুরমা তোলার মওসম এসে পৌঁছল ।জাবের রাসূল (সাঃ)-কে খবর দিলেন। মহানবী (সাঃ) নিজে গিয়ে সমস্তঋণ পরিশোধ করে দিলেন। আর জাবেরের পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য যথেষ্ট টাকা অবশিষ্ট রেখে দিলেন।