খ্রিষ্টধর্ম
ইরানে খ্রিষ্টধর্মের আগমন এবং কখনও কখনও চাপের মধ্যে পড়ার পরও খ্রিষ্টানদের প্রতিরোধ ,ইরানের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া ও দিন দিন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া যে সাসানী শাসনকালের শেষ ভাগে কোন কোন সাসানী শাসক ও প্রাচীন যারথুষ্ট্র ধর্মাবলম্বীর এ ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টি আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়ও বটে। এ বিষয়টি যারথুষ্ট্র ধর্মের পুরোহিতদের প্রচণ্ড ক্ষমতাধর হওয়া সত্ত্বেও এ ধর্মের নৈতিক দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।
যদি ইসলাম ইরানে না আসত তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায় খ্রিষ্টধর্ম ইরানকে দখল করে যারথুষ্ট্র ধর্মকে নিশ্চি
হ্ন করত যেমনভাবে ইরানের অভ্যন্তরের মনী ও মাযদাকী ধর্মও দিন দিন যারথুষ্ট্র ধর্মের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল। যারথুষ্ট্র ধর্মাবলম্বীরা এদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ পোষণ করত। এ কারণেই ইরানী যারথুষ্ট্রগণ মনী ,মাযদাকী ,এমনকি খ্রিষ্টানদের মুসলমানদের চেয়ে বড় শত্রু মনে করত। মুসলিম শাসনামলেও আমরা লক্ষ্য করি যারথুষ্ট্রগণ বিশেষত তাদের ধর্মযাজকগণ মনী ও মাযদাকীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতা করেছে। তেমনিভাবে ইরানের খ্রিষ্টানগণ যারথুষ্ট্রদের দ্বারা অত্যাচারিত এবং বিশেষভাবে দ্বিতীয় শাপুরের হাতে গণনিধনের শিকার হওয়ায় যারথুষ্ট্রদের হতে মুসলমানদের পছন্দ করেছিল ও ইরানে তাদের আগমনকে স্বাগত জানিয়েছিল।
ইরানে খ্রিষ্টানদের অগ্রগতি ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক ছিল। ইরানে খ্রিষ্টবাদের উদ্ভবের কারণ সম্পর্কে ক্রিস্টেন সেন বলেন ,
“
যখন সাসানী শাসকগণ আশকানিয়ানদের স্থলাভিষিক্ত হলেন তখন খ্রিষ্টানগণ‘
আলরেহা’
শহরে (এশিয়া মাইনর ,বর্তমানে তুরস্কে) এক গুরুত্বপূর্ণ প্রচার কেন্দ্রের অধিকারী ছিল।... পারস্য সম্রাটগণ রোমের সঙ্গে বড় কোন যুদ্ধ হলে বন্দীদের দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে পুনর্বাসিত করতেন। সিরিয়ায় সেনা অভিযানের সময় সীমান্তবর্তী শহর বা জেলার সকল অধিবাসীকে সরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসতেন। যেহেতু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী খ্রিষ্টান ছিল সেহেতু খ্রিষ্টধর্ম ধীরে ধীরে ইরানের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে।
‘
তামাদ্দুনে ইরানী’
গ্রন্থে কিছু সংখ্যক মধ্যপ্রাচ্যবিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে ,
“
প্রকৃতপক্ষে সিরিয়ার অধিবাসী অরামীরা অথবা আলরেহা ও এডিস হতে আগত ধর্ম প্রচারক অথবা রোমীয় যুদ্ধ বন্দীদের মাধ্যমে ইরানে খ্রিষ্টধর্ম প্রথম প্রবেশ করে। একশ’
খ্রিষ্টাব্দে ইরানে আরবেলে কিছু সংখ্যক খ্রিষ্টান ছিল এবং ১৪৮-১৯১ সালে কারকুকে খ্রিষ্টানদের উপস্থিতির চিহ্ন পাওয়া যায়। যদিও সে সময় খ্রিষ্টধর্ম ইরানে কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে নি ,কিন্তু এ ধর্ম এ দেশের অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল বিশেষত মনী ধর্মের প্রবর্তক‘
মনী’
এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।”
একই গ্রন্থে‘
সাসানী আমলের ইরানে খ্রিষ্টধর্ম’
শিরোনামের আলোচনায় বলা হয়েছে :
‘
বাইজান্টাইন সম্রাট ,তাঁর সভাসদ ও রাজ্যের সকলেই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ছিলেন। অন্যদিকে পারস্যে যারথুষ্টদের হাতে শাসন ক্ষমতা ছিল ও সাসানী সম্রাটগণ এ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। খ্রিষ্টধর্মের আবির্ভাবের প্রথম হতেই এ ধর্মের প্রতি তারা গোঁড়ামি প্রদর্শন করতেন। বিশেষত দ্বিতীয় শাপুরের সময়-যিনি রোম সম্রাট কনস্টানটাইনের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতেন-ইরানে খ্রিষ্টানদের অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়ে...। প্রথম হতেই তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। তাদেরকে কোন বিচার ব্যতিরেকে অথবা সংক্ষিপ্ত বিচারের পর হত্যা করা হতো কিংবা চরম নির্যাতন করা হতো। তৎকালীন সময়ে শহীদ অথবা নিহত খ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা সেমিটিক ভাষার গ্রন্থে পাওয়া গিয়েছে। এ গ্রন্থ সাক্ষ্য হিসেবে রয়েছে ,নাম না জানা কত খ্রিষ্টান সাহসিকতার সাথে প্রতিরোধের পর শহীদ হয়েছেন! তাঁদের আমরা ভুলে গিয়েছি। পরবর্তী পর্যায়ে জানা গিয়েছিল এ সকল খ্রিষ্টান বিদেশী বেঈমান নন ;বরং ইরানী খ্রিষ্টান ছিলেন যাঁরা যারথুষ্ট্র ধর্মের একান্ত অনুরাগী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে পরিগণিত হতেন ,কিন্তু পরবর্তীতে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত ও ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। তাঁদের দেশপ্রেমের বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না ,কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়ে তাঁরা ছিলেন দৃঢ়পদ। পরবর্তীতে শাসকবর্গ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ,এদেরকে নির্যাতন না করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে ,কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয় নি ;বরং চল্লিশ বছরের নিপীড়ন ও নির্যাতনের পরও খ্রিষ্টধর্ম ইরানে শক্তিশালী অবস্থান লাভ করে। এদিকে‘
হুন’
ও‘
হিয়াতালাহ্’
বংশীয়গণের ইরানের পূর্বাঞ্চল আক্রমণের ফলে খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের আপাত যবনিকাপাত ঘটে। এতে খ্রিষ্টানদের স্থায়ী সংগঠনের সৃষ্টির সুযোগ আসে... ইরানের খ্রিষ্টানগণ দ্রুত শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলো যে কারণে পঞ্চম খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় ইয়ায্দগারদ ও পঞ্চম বাহরামের খ্রিষ্টান নিপীড়ননীতি ফলপ্রসূ হয়নি। তিসফুন বা মাদায়েনের সুলূকিয়েহ্ এবং নাসিবীন প্রাচ্যের দীপ্তিমান ধর্মযাজকদের কেন্দ্রে পরিণত হয়। সেখানে পাদ্রীদের আশ্রম তৈরি হওয়ায় ধর্মীয় অনেক শিক্ষক সেখানে প্রশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পান। পাদ্রী আশ্রমগুলোতে এখনও এ রীতির প্রচলন রয়েছে। এদের প্রচার কার্যের ফলেই খ্রিষ্টধর্ম ইরানে নতুন জীবন লাভ করে।
প্রাগুক্ত প্রবন্ধের লেখক পি. জে. দুমানাশেহ সেখানে তৎকালীন খ্রিষ্টধর্মের শক্তিশালী প্রচার ব্যবস্থা ও ইরানে খ্রিষ্টধর্মের সজীব অবস্থার বর্ণনা দানের পর ইরানের পূর্বাঞ্চলে খ্রিষ্টবাদের ওপর ইসলামের বিজয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন ,
“
সম্প্রতি নওলুয আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জে. দুয়াইলিয়ারের পরিশ্রমী গবেষণালব্ধ যে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে চোখ বোলালে পরিষ্কার বোঝা যায় কিরূপে কালাদা প্রদেশের ধর্মযাজকগণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহ ,তিব্বত ,কাশ্মীর ,দক্ষিণ ভারত ,মঙ্গোলিয়া ,এমনকি চীন সাগর পর্যন্ত এলাকার অধিবাসীদের অনেককেই খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন! এ দীনী প্রচার শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল না ;বরং দেশ হতে দেশান্তরে ভ্রমণকারী যাযাবর জাতিসমূহের মধ্যেও চলেছিল। খ্রিষ্টধর্ম এভাবেই ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতেও টিকে ছিল। যখন ফ্রানসিসকেন ধর্ম প্রচারকগণ বিশেষত জাঁ দোপলান করপেন ও রুবেরুক এবং বিশিষ্ট পর্যটক মার্কো পোলো এ দেশগুলোতে ভ্রমণ করেন তখন খ্রিষ্ট ধর্মের সূদৃঢ় অবস্থান লক্ষ্য করেন। তাঁরা পশ্চিমদিকে দেশ জয়ের অভিযানে প্রস্তুত মোগল গোত্রপতিদের শিবিরগুলোতে গিয়ে লক্ষ্য করেন তাঁদের মধ্যে খ্রিষ্টবাদের পক্ষাবলম্বী ব্যক্তির সংখ্যা অসংখ্য ও সম্ভাবনা রয়েছে তারা সকল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাস্ত করবে ,কারণ তারা বৌদ্ধ ,মনুয়ী ও ইসলামের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করত। কিন্তু ঠিক এ মুহূর্তে মোগলদের ইসলাম গ্রহণ এতদঞ্চলে খ্রিষ্টবাদের বিরাট পরাজয় ডেকে আনে।’
খসরু পারভেজের সময়কালে খ্রিষ্টবাদ ইরানে অন্য যে কোন সময় হতে অধিক শক্তিধরে পরিণত হয়েছিল ,এমনকি সম্রাটের নিকটবর্তী অনেকেই তা গ্রহণ করেছিলেন। আমরা অবগত ,প্রসিদ্ধ ইরানী সেনাপতি বাহরাম চুবিনের বিদ্রোহ ও অভ্যুত্থানের কারণে খসরু পারভেজ ইরান ত্যাগ করে তাঁর শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী রোমের বাদশাহ্ মারকিউস-এর আশ্রয় নেন ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি রাজধানীতে প্রত্যাবর্তনের জন্য মারকিউসকে কিছু ছাড় দিতেও রাজী হন। কথিত আছে খসরু রোমে অবস্থানকালে খ্রিষ্টধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন।
ক্রিস্টেন সেন বলেছেন ,
“
৫৮১ সালে যখন খসরু রোম হতে ফিরে আসেন তখন যারথুষ্ট্র পুরোহিতগণ ততটা খুশী হতে পারেননি। কারণ (তাঁদের ভাষায়) এই সম্রাট খ্রিষ্টধর্মের ভিত্তিহীন ও অমূলক বিশ্বাসসমূহের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন। এর সপক্ষে প্রমাণ হলো তাঁর নিকট হেরেমের প্রিয় নারী ছিলেন শিরিন নামের এক খ্রিষ্টান নারী।”
কেউ কেউ দাবি করেছেন খসরু পারভেজ যারথুষ্ট্র ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ক্রিস্টেন সেন এ বিষয়ে বলেন ,
“
কোন কোন গবেষক উতিকিউসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে থাকেন খসরু পারভেজ খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ,কিন্তু এ কথার কোন ভিত্তি নেই। বাস্তবে বিষয়টি এরূপ ,রোমের সম্রাট মারকিউস যিনি তাঁকে সিংহাসন ও রাজমুকুট পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর রোমীয় স্ত্রী (শাহযাদী) মারিয়া ও হেরেমের প্রেয়সী শিরিনের কারণে তিনি বাহ্যিকভাবে কিছু কিছু খ্রিষ্টীয় আচার পালন করতেন। তবে সম্ভাবনা রয়েছে খোদ সম্রাট খসরু খ্রিষ্টধর্মের কোন কোন কুসংস্কার লালন করতেন।”
ক্রিস্টেন সেন অতঃপর খসরুর রাজ দরবারে খ্রিষ্টধর্মের দু’
ফিরকা ইয়াকুবী ও নাসতুরীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও তাঁর দরবারের বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তি ,যেমন মেহরান গুশনাস্প যাঁকে নাসতুরিগণ পবিত্র পানি দ্বারা গোসল দিয়ে‘
গিওরগিম’
নাম দেয় তাঁকেসহ খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত অন্য দরবারীদের নামের তালিকাও দিয়েছেন।
ক্রিস্টেন সেন বলেন ,
‘
মেহরন গুশনাস্প খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর নতুন এ ধর্মের দীক্ষা গ্রহণের জন্য সংসার ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের শরণাপন্ন হন। কিছুদিন পর তিনি তাঁর ভ্রাতাকে প্রশ্ন করেন ,তাঁর খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণে রাজ দরবারে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে ? তাঁর ভ্রাতা উত্তর দেয় ,“
তুমি ফিরে আস ,কোন আশংকাই নেই। সম্রাট তোমার খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের কথা শুনে শুধু বলেছেন: মেহরান গুশনাস্প জাহান্নামের দিকে ধাবিত হয়েছে। এখন নিজের বিষয়ে চিন্তা করে দেখ। যদি ফিরে আস তবে সম্ভাবনা রয়েছে সম্রাট তোমার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবেন। কিছুদিন পর তাঁর ভগ্নি একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে মেহরন তাঁর সাক্ষাতে যায় ও পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে মাথা নীচু করেন। তাঁর ভগ্নি উচ্চাসন হতে নেমে এসে ভ্রাতার দিকে হাত প্রসারিত করে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন: আনন্দিত হও এ জেনে ,আমিও খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছি।”
এতক্ষণের আলোচনায় যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয় তন্মধ্যে প্রথমত যারথুষ্ট্র ইরানে খ্রিষ্টধর্ম স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল এবং এ গতি অব্যাহত থাকলে যারথুষ্ট্র ধর্মের জন্য বড় ধরনের বিপদ ছিল। দ্বিতীয়ত যারথুষ্ট্র ধর্মের বিপরীতে খ্রিষ্টধর্ম বিশ্বজনীন এবং এর আহ্বানও সর্বজনীন। অর্থাৎ খ্রিষ্টান ধর্মযাজকগণ কোন ভূখণ্ড ও সীমায় আবদ্ধ ছিলেন না। তাঁরা সব সময় খ্রিষ্টধর্মকে ইরান ও ইরানের বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়েছিলেন। তৃতীয়ত ইরানে ইসলামের আগমনের মাধ্যমে অবক্ষয় প্রাপ্ত যারথুষ্ট্র ধর্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিবর্তে মূলত ক্রমপ্রসারমান খ্রিষ্টধর্মের ওপরই আঘাত এনেছে ও এর প্রচারের পথকে রুদ্ধ করে ময়দান হতে বিতাড়িত করেছে। যদি ইসলামের আগমন না ঘটত তবে সমগ্র প্রাচ্যে তার মূল প্রসারিত করত। ইসলামের নৈতিক প্রভাবই নিকট ও দূর প্রাচ্যে খ্রিষ্টধর্মের বিস্তারের প্রতিবন্ধক হয়েছিল। তাই ইরানে ইসলামের প্রভাব ও প্রসারে যারথুষ্ট্র পুরোহিতগণ অপেক্ষা খ্রিষ্টান পাদ্রী ও ধর্মযাজকগণ অধিকতর কষ্ট পেয়েছিলেন। কারণ তাঁরাই অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ জন্যই লক্ষ্য করা যায় শতাব্দীকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অপবিত্র প্রকৃতির খ্রিষ্টান লেখকগণ ইরান ও ইরানী জাতির নামে কিছু লিখতে গেলে ইসলামের ওপর আক্রমণ করেন এবং পোপের প্রশংসায় রত হন।