ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান0%

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান লেখক:
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: ইতিহাস

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান

লেখক: শহীদ অধ্যাপক মুর্তাজা মুতাহ্হারী
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 104046
ডাউনলোড: 5063

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 47 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 104046 / ডাউনলোড: 5063
সাইজ সাইজ সাইজ
ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে যখন ইসলাম আমাদের এ দেশে আসে তখন তা কিরূপ পরিবর্তন সাধন করে ? এ পরিবর্তনের ধারা কোন্ দিকে ছিল ? ইসলাম ইরান হতে কি গ্রহণ করেছে ও ইরানকে কি দিয়েছে ? ইরানে ইসলামের আগমন অনুগ্রহ ছিল নাকি বিপর্যয় ? বিশ্বের অনেক জাতিই ইসলামকে গ্রহণ করেছিল ও ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিল। তারা ইসলামের শিক্ষা প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রেখেছিল এবং তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে‘ ইসলামী সভ্যতা’ নামে এক বৃহৎ ও আড়ম্বরপূর্ণ সভ্যতার সৃষ্টি হয়। এ সভ্যতার সৃষ্টিতে ইরানীদের অবদান কতটুকু ? এ ক্ষেত্রে ইরানীদের অবস্থান কোন্ পর্যায়ে ? তারা কি এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছিল ? ইসলামের প্রতি তাদের এ অবদান ও ভূমিকার পেছনে কোন্ উদ্দীপনা কাজ করেছিল ? অত্র গ্রন্থের আলোচনাসমূহ এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে যারথুষ্ট্র ধর্ম

সাসানীরা যেহেতু ধর্মের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছিল সেহেতু যারথুষ্ট্র ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে এবং যারথুষ্ট্র পুরোহিতদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দান করে। তারা অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি সদাচারণ করত না ;বরং কখনও কখনও তারা ধর্মযাজকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করত এবং যারথুষ্ট্র ধর্মকে শক্তি প্রয়োগে তাদের ওপর চাপিয়ে দিত।

ক্রিস্টেন সেন বলেছেন ,

যারথুষ্ট ধর্মযাজকগণ অত্যন্ত গোঁড়া ছিলেন এবং দেশের অভ্যন্তরে অন্য কোন ধর্মকেই অনুমতি দিতেন না। তবে এই নীতি বিশেষভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে গৃহীত হয়েছিল। যারথুষ্ট্র ধর্ম প্রচার উপযোগী ধর্ম ছিল না। কারণ এর পুরোধাগণ সমগ্র মানব জাতির মুক্তির কথা বলতেন না। তাঁরা দেশের অভ্যন্তরে সমগ্র কর্তৃত্বের দাবিদার ছিলেন। অন্যান্য ধর্মের অনুসারিগণের প্রজা হিসেবে কোন নিরাপত্তা ছিল না। বিশেষত যদি ঐ ধর্মের কেউ অন্য রাষ্ট্রে বিশিষ্ট কোন পদ অর্জন করে থাকে তবে তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হতো।

সাঈদ নাফিসী উল্লেখ করেছেন ,

সাসানী আমলের বিশৃঙ্খলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল এই বংশের শাসন কর্তৃত্বের পূর্বে ইরানের সকল মানুষ যারথুষ্ট্র ধর্মাবলম্বী ছিল না। আরদ্শির বাবেকান যেহেতু পূর্বে ধর্মযাজক ছিলেন ও যারথুষ্ট্র পুরোহিতদের সহযোগিতায় শাসন ক্ষমতা লাভ করেছিলেন সেহেতু চেয়েছিলেন যে কোনভাবেই হোক পূর্বপুরুষদের ধর্মকে ইরানে ছড়িয়ে দেবেন। তাই যখন পুরোহিতদের পৃষ্ঠপোষকতায় সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হলেন তখন হতেই যারথুষ্ট্র পুরোহিতগণকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দান করলেন। ফলে তাঁরা সমাজের সবচেয়ে শক্তিধর শ্রেণী বলে পরিগণিত হতেন ,এমনকি কোন সম্রাটের মৃত্যুর পর তাঁরাই নতুন সম্রাট মনোনীত করতেন ও স্বহস্তে রাজমুকুট পরিধান করাতেন। এ কারণেই একমাত্র আরদ্শির বাবেকান তাঁর পুত্র শাপুরকে স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করে গিয়েছিলেন। অন্য কেউ এরূপ স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করে যান নি। কারণ তাঁর মৃত্যুর পর শীর্ষস্থানীয় পুরোহিতগণ যদি তাঁকে মেনে না নিতেন তবে তিনি সম্রাট বলে পরিগণিত হতেন না। এ সময়ের সকল সম্রাট শীর্ষস্থানীয় পুরোহিতদের ক্রীড়নক ছিলেন এবং যদি তাঁদের কেউ এই ধর্মযাজকদের কথা না শুনতেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা হতো। যেমন দ্বিতীয় ইয়ায্দ গারদ খ্রিষ্টানদের হত্যা না করায় তাঁকে গুনাহগার ও অপরাধী ঘোষণা করা হয়। এরই আরবী প্রতিশব্দ হলো আসিম যা আরব ঐতিহাসিকগণ ব্যবহার করেছেন। তিনি আট বছর পর বাধ্য হয়ে তাঁর পূর্বপুরুষদের মত খ্রিষ্টানদের সঙ্গে অসদাচারণ করেন।

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন ,

হাখামানেশী ,আশকানী ও সাসানী সকল রাজত্বকালেই আর্মেনিয়া ইরানের প্রদেশ ছিল এবং মাদ বংশ সেখানে শাসনকার্য চালাত। আশকানী যুবরাজগণও দীর্ঘ সময় সেখানে শাসনকার্য চালিয়েছেন। সাসানী আমলে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের ওপর কঠোরতা আরোপ করা হয় ও জোরপূর্বক যারথুষ্ট্র ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। আর্মেনিয়ার অধিবাসীরা শতাব্দীকাল ধরে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালায় ও মূর্তিপূজা অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে 302 খ্রিষ্টাব্দ হতে ধীরে ধীরে সকলে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। তাদের গৃহীত খ্রিষ্ট মতবাদ আর্মেনিয়ান খ্রিষ্টবাদ বলে প্রসিদ্ধ। ধর্মীয় বিশৃঙ্খলার কারণেই পুরো সাসানী আমল জুড়ে আর্মেনিয়া নিয়ে রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত ছিল। এরূপ ধর্মীয় বাড়াবাড়িই রোম বাইজান্টাইন শাসকদের মোকাবিলায় ইরানকে দুর্বল করে তুলেছিল। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশেষত আরবদের জন্যও ইরান বিজয়কে সহজতর করেছিল।

তিনি আরো বলেছেন ,

প্রথম শাপুরের শাসনামলে আযকিরিতার প্রধান ধর্মযাজক ছিলেন এবং শাপুরের পরবর্তীতেও তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। নাকশে রাজাব ,সার মাশহাদ ও যারথুষ্ট্রদের তীর্থস্থানে বিদ্যমান তিনটি শিলালিপিতে শক্তি প্রয়োগে যারথুষ্ট্র ধর্ম প্রচারে তাঁর ব্যবহৃত পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

তিনি তামাদ্দুনে ইরানী (ইরানী সভ্যতা)48 গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে পুরোহিতগণের শিলালিপি সম্পর্কে আলোচনায় বলেছেন ,

1939 সালে তাখতে জামশিদের নিকটবর্তী নাকশে রুস্তমে শিকাগো ইস্টার্ন এজেন্সী যে খনন কার্য চালায় তাতে যারথুষ্ট্রদের তীর্থস্থানের পূর্বদিকে একটি দীর্ঘ শিলালিপির সন্ধান পাওয়া যায়। এ শিলালিপিতে শীর্ষ ধর্মযাজক কিরিতার বর্ণনা করেছেন যে ,তিনি কিভাবে 242-293 খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রধান ধর্মযাজকের পদ দখল করেছিলেন। অপর একটি শিলালিপিতে অন্য ধর্মের পুরোহিতদের (এ দেশে যাঁদের অবস্থান কল্যাণকর বলে পরিগণিত হতো না) কিভাবে ইরান হতে বহিষ্কার করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। যে সকল পুরোহিতকে বহিষ্কার করা হয় তাঁরা হলেন ইহুদী ,সামনা (বৌদ্ধ পুরোহিত) ,ব্রাহমা ,খ্রিষ্টান ,নাসেরী ,মুকতাকা ,মুক্তিপ্রাপ্ত (সম্ভবত ভারতীয়) এবং মনিগণ।49

অবশ্য সাসানী শাসনামলের সকল পর্যায়ে ধর্মীয় কঠোরতা একরূপ ছিল না তেমনি বিভিন্ন পর্যায়ে যারথুষ্ট্র পুরোহিতদের ক্ষমতারও হ্রাসবৃদ্ধি ঘটত। সকল শাসকই তাঁদের সম্পূর্ণ অনুগত ছিলেন না। যেমন প্রথম শাপুর ,প্রথম ইয়ায্দ গারদ ও খসরু আনুশিরওয়ানগণ অন্তত তাদের শাসনামলের একাংশ তুলনামূলকভাবে স্বাধীন ছিলেন এবং অন্য ধর্মসমূহের প্রতি কিছুটা উদার আচরণ প্রদর্শন করতেন।

তামাদ্দুনে ইরানী গ্রন্থে ধর্মযাজক কিরিতার-এর শিলালিপি ও তাঁর দ্বারা আরোপিত কঠোরতার আলোচনার পর সাসানী আমলে পশ্চিম ইরানের ধর্মীয় অবস্থা শীর্ষক আলোচনায় বলা হয়েছে :

অন্যদিকে আর্মেনীয় লেখক এলিজা ওয়ারদাপেটের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে তিনি সম্রাট শাপুরের হস্তলিপির উল্লেখ করে বলেছেন সেখানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মুগ ,ইহুদী ,মনী ও অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বী যারা ইরানের বিভিন্ন স্থানে বাস করে তাদের যেন স্বাধীনতা দেয়া হয় যাতে করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতে পারে। প্রথম শ্রেণীর শিলালিপিতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অত্যাচারের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা দ্বিতীয় বাহরামের (277-293 খ্রি.) সময়কালীন ঘটনা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলালিপি যাতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনতা দানের কথা বলা হয়েছে তা প্রথম শাপুরের (242-273 খ্রি.) সময়কালের এবং এ কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। 50

ক্রিস্টেন সেন তাঁর গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ের যেখানে ইরানের খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন:

সেখানে তৎকালীন ইরানী খ্রিষ্টানদের সার্বিক অবস্থা এভাবে বর্ণনা করেছেন , চতুর্থ ও পঞ্চম খ্রিষ্টীয় শতাব্দীর ইরানী খ্রিষ্টানদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ধর্মের সম্পর্কের বিষয়ে যাখু হতে বর্ণিত হয়েছে ,সাসানী আমলের সবচেয়ে কঠিন সময়েও খ্রিষ্টধর্ম ইরানে স্বাধীন ছিল ;যদিও কখনও কখনও তারা বিভিন্ন শহর ও গ্রামে রাজকীয় কর্মচারীদের অত্যাচারের শিকার হতো। খ্রিষ্টানরা 410 ও 420 খ্রিষ্টাব্দে ইরানের তৎকালীন রাজধানীতে ধর্ম সমিতি গঠন করে যাতে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পক্ষ হতে দু জন পাদ্রী প্রতিনিধি ছিলেন যাঁদের একজন হলেন মিয়াফারেকিনের বিশপ মারুসা এবং আমিদার বিশপ অকাস । দ্বিতীয় শাপুরের আমলে যখন খ্রিষ্টানদের ওপর চরম নিপীড়ন চালানো হয় তখন খ্রিষ্টান পাদ্রী ইফাউত তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য ও উপদেশ বাণী লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু তাতে এরূপ কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না যে ,খ্রিষ্টানরা তাদের স্বাভাবিক ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠানাদি বন্ধ করেছিল। খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের ওপর সব সময় চাপ থাকলেও কখনো সাধারণ খ্রিষ্টানদের ধর্মান্তরিত করার কোন প্রচেষ্টা নেয়া হয় নি। ইরান ও রোমের খ্রিষ্টানরা পারস্পরিক অধিকারের ক্ষেত্রে রোম ও সিরিয় আইনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করত। বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড খুব কম ঘটত এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্মযাজকদের নৈতিক দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন যাপন করত। 51

সার্বিকভাবে খ্রিষ্টধর্ম ইরানে সংখ্যালঘু হিসেবে স্বাধীনতা ভোগ করত। যদিও ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে খ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতনের কথা শোনা যায় তদুপরি বলা যায় তা রাজনৈতিক কারণে করা হতো। কারণ ইরানের খ্রিষ্টানগণ পারস্য ও রোম সম্রাজ্যের মধ্যকার দ্বন্দ্বে তাদের স্বধর্মের রোমীয়দের পক্ষাবলম্বন করত। তাদের এ ভূমিকা পারস্য সম্রাটদের ক্রোধের উদ্রেক করত।

ক্রিস্টেন সেন প্রথম ইয়ায্দ গারদ সম্পর্কে বলেন ,

প্রথম ইয়ায্দ গারদ রাজনৈতিক কারণেই খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন তা স্পষ্ট। কারণ তিনি ইরান ও রোমের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নের যে ভাল উদ্যোগ গ্রহণ করে তাতে তাঁর সাম্রাজ্যের ভিত মজবুত হয়। খ্রিষ্টানদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলেও প্রকৃতগতভাবে তিনি সকল ধর্মের বিষয়ে সমঝোতার নীতিতে বিশ্বাস করতেন।

তিনি খসরু আনুশিরওয়ান সম্পর্কে বলেছেন ,

খসরু যদিও মাযদাকীদের শায়েস্তা করার জন্য যারথুষ্ট্র পুরোহিতদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর শাসনামলে পুরোহিত ও সম্ভ্রান্তগণের কেউই পূর্বের ন্যায় ক্ষমতা পান নি। প্রথম খসরু নিঃসন্দেহে যারথুষ্ট্র মতাবলম্বী ছিলেন ,কিন্তু অন্যান্য সাসানী শাসকদের হতে তাঁর স্বাতন্ত্র্য হলো তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামী ও স্থবিরতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তাই বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও দর্শনের প্রতি তাঁর বিশেষ ঝোঁক ছিল। তিনি খ্রিষ্টানদের দাতব্য ও সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহে সহযোগিতায় কুণ্ঠিত হতেন না।

খ্রিষ্টধর্ম

ইরানে খ্রিষ্টধর্মের আগমন এবং কখনও কখনও চাপের মধ্যে পড়ার পরও খ্রিষ্টানদের প্রতিরোধ ,ইরানের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া ও দিন দিন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া যে সাসানী শাসনকালের শেষ ভাগে কোন কোন সাসানী শাসক ও প্রাচীন যারথুষ্ট্র ধর্মাবলম্বীর এ ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টি আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়ও বটে। এ বিষয়টি যারথুষ্ট্র ধর্মের পুরোহিতদের প্রচণ্ড ক্ষমতাধর হওয়া সত্ত্বেও এ ধর্মের নৈতিক দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।

যদি ইসলাম ইরানে না আসত তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায় খ্রিষ্টধর্ম ইরানকে দখল করে যারথুষ্ট্র ধর্মকে নিশ্চি হ্ন করত যেমনভাবে ইরানের অভ্যন্তরের মনী ও মাযদাকী ধর্মও দিন দিন যারথুষ্ট্র ধর্মের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল। যারথুষ্ট্র ধর্মাবলম্বীরা এদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ পোষণ করত। এ কারণেই ইরানী যারথুষ্ট্রগণ মনী ,মাযদাকী ,এমনকি খ্রিষ্টানদের মুসলমানদের চেয়ে বড় শত্রু মনে করত। মুসলিম শাসনামলেও আমরা লক্ষ্য করি যারথুষ্ট্রগণ বিশেষত তাদের ধর্মযাজকগণ মনী ও মাযদাকীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতা করেছে। তেমনিভাবে ইরানের খ্রিষ্টানগণ যারথুষ্ট্রদের দ্বারা অত্যাচারিত এবং বিশেষভাবে দ্বিতীয় শাপুরের হাতে গণনিধনের শিকার হওয়ায় যারথুষ্ট্রদের হতে মুসলমানদের পছন্দ করেছিল ও ইরানে তাদের আগমনকে স্বাগত জানিয়েছিল।

ইরানে খ্রিষ্টানদের অগ্রগতি ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক ছিল। ইরানে খ্রিষ্টবাদের উদ্ভবের কারণ সম্পর্কে ক্রিস্টেন সেন বলেন ,

যখন সাসানী শাসকগণ আশকানিয়ানদের স্থলাভিষিক্ত হলেন তখন খ্রিষ্টানগণ আলরেহা শহরে (এশিয়া মাইনর ,বর্তমানে তুরস্কে) এক গুরুত্বপূর্ণ প্রচার কেন্দ্রের অধিকারী ছিল।... পারস্য সম্রাটগণ রোমের সঙ্গে বড় কোন যুদ্ধ হলে বন্দীদের দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে পুনর্বাসিত করতেন। সিরিয়ায় সেনা অভিযানের সময় সীমান্তবর্তী শহর বা জেলার সকল অধিবাসীকে সরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসতেন। যেহেতু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী খ্রিষ্টান ছিল সেহেতু খ্রিষ্টধর্ম ধীরে ধীরে ইরানের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

তামাদ্দুনে ইরানী গ্রন্থে কিছু সংখ্যক মধ্যপ্রাচ্যবিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে ,

প্রকৃতপক্ষে সিরিয়ার অধিবাসী অরামীরা অথবা আলরেহা ও এডিস হতে আগত ধর্ম প্রচারক অথবা রোমীয় যুদ্ধ বন্দীদের মাধ্যমে ইরানে খ্রিষ্টধর্ম প্রথম প্রবেশ করে। একশ খ্রিষ্টাব্দে ইরানে আরবেলে কিছু সংখ্যক খ্রিষ্টান ছিল এবং 148-191 সালে কারকুকে খ্রিষ্টানদের উপস্থিতির চিহ্ন পাওয়া যায়। যদিও সে সময় খ্রিষ্টধর্ম ইরানে কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে নি ,কিন্তু এ ধর্ম এ দেশের অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল বিশেষত মনী ধর্মের প্রবর্তক মনী এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। একই গ্রন্থে সাসানী আমলের ইরানে খ্রিষ্টধর্ম শিরোনামের আলোচনায় বলা হয়েছে :

বাইজান্টাইন সম্রাট ,তাঁর সভাসদ ও রাজ্যের সকলেই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ছিলেন। অন্যদিকে পারস্যে যারথুষ্টদের হাতে শাসন ক্ষমতা ছিল ও সাসানী সম্রাটগণ এ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। খ্রিষ্টধর্মের আবির্ভাবের প্রথম হতেই এ ধর্মের প্রতি তারা গোঁড়ামি প্রদর্শন করতেন। বিশেষত দ্বিতীয় শাপুরের সময়-যিনি রোম সম্রাট কনস্টানটাইনের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতেন-ইরানে খ্রিষ্টানদের অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়ে...। প্রথম হতেই তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। তাদেরকে কোন বিচার ব্যতিরেকে অথবা সংক্ষিপ্ত বিচারের পর হত্যা করা হতো কিংবা চরম নির্যাতন করা হতো। তৎকালীন সময়ে শহীদ অথবা নিহত খ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা সেমিটিক ভাষার গ্রন্থে পাওয়া গিয়েছে। এ গ্রন্থ সাক্ষ্য হিসেবে রয়েছে ,নাম না জানা কত খ্রিষ্টান সাহসিকতার সাথে প্রতিরোধের পর শহীদ হয়েছেন! তাঁদের আমরা ভুলে গিয়েছি। পরবর্তী পর্যায়ে জানা গিয়েছিল এ সকল খ্রিষ্টান বিদেশী বেঈমান নন ;বরং ইরানী খ্রিষ্টান ছিলেন যাঁরা যারথুষ্ট্র ধর্মের একান্ত অনুরাগী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে পরিগণিত হতেন ,কিন্তু পরবর্তীতে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত ও ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। তাঁদের দেশপ্রেমের বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না ,কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়ে তাঁরা ছিলেন দৃঢ়পদ। পরবর্তীতে শাসকবর্গ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ,এদেরকে নির্যাতন না করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে ,কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয় নি ;বরং চল্লিশ বছরের নিপীড়ন ও নির্যাতনের পরও খ্রিষ্টধর্ম ইরানে শক্তিশালী অবস্থান লাভ করে। এদিকে হুন হিয়াতালাহ্ বংশীয়গণের ইরানের পূর্বাঞ্চল আক্রমণের ফলে খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের আপাত যবনিকাপাত ঘটে। এতে খ্রিষ্টানদের স্থায়ী সংগঠনের সৃষ্টির সুযোগ আসে... ইরানের খ্রিষ্টানগণ দ্রুত শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলো যে কারণে পঞ্চম খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় ইয়ায্দগারদ ও পঞ্চম বাহরামের খ্রিষ্টান নিপীড়ননীতি ফলপ্রসূ হয়নি। তিসফুন বা মাদায়েনের সুলূকিয়েহ্ এবং নাসিবীন প্রাচ্যের দীপ্তিমান ধর্মযাজকদের কেন্দ্রে পরিণত হয়। সেখানে পাদ্রীদের আশ্রম তৈরি হওয়ায় ধর্মীয় অনেক শিক্ষক সেখানে প্রশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পান। পাদ্রী আশ্রমগুলোতে এখনও এ রীতির প্রচলন রয়েছে। এদের প্রচার কার্যের ফলেই খ্রিষ্টধর্ম ইরানে নতুন জীবন লাভ করে।

প্রাগুক্ত প্রবন্ধের লেখক পি. জে. দুমানাশেহ সেখানে তৎকালীন খ্রিষ্টধর্মের শক্তিশালী প্রচার ব্যবস্থা ও ইরানে খ্রিষ্টধর্মের সজীব অবস্থার বর্ণনা দানের পর ইরানের পূর্বাঞ্চলে খ্রিষ্টবাদের ওপর ইসলামের বিজয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন ,

সম্প্রতি নওলুয আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জে. দুয়াইলিয়ারের পরিশ্রমী গবেষণালব্ধ যে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে চোখ বোলালে পরিষ্কার বোঝা যায় কিরূপে কালাদা প্রদেশের ধর্মযাজকগণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহ ,তিব্বত ,কাশ্মীর ,দক্ষিণ ভারত ,মঙ্গোলিয়া ,এমনকি চীন সাগর পর্যন্ত এলাকার অধিবাসীদের অনেককেই খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন! এ দীনী প্রচার শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল না ;বরং দেশ হতে দেশান্তরে ভ্রমণকারী যাযাবর জাতিসমূহের মধ্যেও চলেছিল। খ্রিষ্টধর্ম এভাবেই ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতেও টিকে ছিল। যখন ফ্রানসিসকেন ধর্ম প্রচারকগণ বিশেষত জাঁ দোপলান করপেন ও রুবেরুক এবং বিশিষ্ট পর্যটক মার্কো পোলো এ দেশগুলোতে ভ্রমণ করেন তখন খ্রিষ্ট ধর্মের সূদৃঢ় অবস্থান লক্ষ্য করেন। তাঁরা পশ্চিমদিকে দেশ জয়ের অভিযানে প্রস্তুত মোগল গোত্রপতিদের শিবিরগুলোতে গিয়ে লক্ষ্য করেন তাঁদের মধ্যে খ্রিষ্টবাদের পক্ষাবলম্বী ব্যক্তির সংখ্যা অসংখ্য ও সম্ভাবনা রয়েছে তারা সকল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাস্ত করবে ,কারণ তারা বৌদ্ধ ,মনুয়ী ও ইসলামের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করত। কিন্তু ঠিক এ মুহূর্তে মোগলদের ইসলাম গ্রহণ এতদঞ্চলে খ্রিষ্টবাদের বিরাট পরাজয় ডেকে আনে। 52

খসরু পারভেজের সময়কালে খ্রিষ্টবাদ ইরানে অন্য যে কোন সময় হতে অধিক শক্তিধরে পরিণত হয়েছিল ,এমনকি সম্রাটের নিকটবর্তী অনেকেই তা গ্রহণ করেছিলেন। আমরা অবগত ,প্রসিদ্ধ ইরানী সেনাপতি বাহরাম চুবিনের বিদ্রোহ ও অভ্যুত্থানের কারণে খসরু পারভেজ ইরান ত্যাগ করে তাঁর শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী রোমের বাদশাহ্ মারকিউস-এর আশ্রয় নেন ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি রাজধানীতে প্রত্যাবর্তনের জন্য মারকিউসকে কিছু ছাড় দিতেও রাজী হন। কথিত আছে খসরু রোমে অবস্থানকালে খ্রিষ্টধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন।

ক্রিস্টেন সেন বলেছেন ,

581 সালে যখন খসরু রোম হতে ফিরে আসেন তখন যারথুষ্ট্র পুরোহিতগণ ততটা খুশী হতে পারেননি। কারণ (তাঁদের ভাষায়) এই সম্রাট খ্রিষ্টধর্মের ভিত্তিহীন ও অমূলক বিশ্বাসসমূহের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন। এর সপক্ষে প্রমাণ হলো তাঁর নিকট হেরেমের প্রিয় নারী ছিলেন শিরিন নামের এক খ্রিষ্টান নারী। 53

কেউ কেউ দাবি করেছেন খসরু পারভেজ যারথুষ্ট্র ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ক্রিস্টেন সেন এ বিষয়ে বলেন ,

কোন কোন গবেষক উতিকিউসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে থাকেন খসরু পারভেজ খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ,কিন্তু এ কথার কোন ভিত্তি নেই। বাস্তবে বিষয়টি এরূপ ,রোমের সম্রাট মারকিউস যিনি তাঁকে সিংহাসন ও রাজমুকুট পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর রোমীয় স্ত্রী (শাহযাদী) মারিয়া ও হেরেমের প্রেয়সী শিরিনের কারণে তিনি বাহ্যিকভাবে কিছু কিছু খ্রিষ্টীয় আচার পালন করতেন। তবে সম্ভাবনা রয়েছে খোদ সম্রাট খসরু খ্রিষ্টধর্মের কোন কোন কুসংস্কার লালন করতেন। 54

ক্রিস্টেন সেন অতঃপর খসরুর রাজ দরবারে খ্রিষ্টধর্মের দু ফিরকা ইয়াকুবী ও নাসতুরীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও তাঁর দরবারের বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তি ,যেমন মেহরান গুশনাস্প যাঁকে নাসতুরিগণ পবিত্র পানি দ্বারা গোসল দিয়ে গিওরগিম নাম দেয় তাঁকেসহ খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত অন্য দরবারীদের নামের তালিকাও দিয়েছেন।

ক্রিস্টেন সেন বলেন ,

মেহরন গুশনাস্প খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর নতুন এ ধর্মের দীক্ষা গ্রহণের জন্য সংসার ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের শরণাপন্ন হন। কিছুদিন পর তিনি তাঁর ভ্রাতাকে প্রশ্ন করেন ,তাঁর খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণে রাজ দরবারে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে ? তাঁর ভ্রাতা উত্তর দেয় , তুমি ফিরে আস ,কোন আশংকাই নেই। সম্রাট তোমার খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের কথা শুনে শুধু বলেছেন: মেহরান গুশনাস্প জাহান্নামের দিকে ধাবিত হয়েছে। এখন নিজের বিষয়ে চিন্তা করে দেখ। যদি ফিরে আস তবে সম্ভাবনা রয়েছে সম্রাট তোমার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবেন। কিছুদিন পর তাঁর ভগ্নি একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে মেহরন তাঁর সাক্ষাতে যায় ও পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে মাথা নীচু করেন। তাঁর ভগ্নি উচ্চাসন হতে নেমে এসে ভ্রাতার দিকে হাত প্রসারিত করে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন: আনন্দিত হও এ জেনে ,আমিও খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছি।

এতক্ষণের আলোচনায় যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয় তন্মধ্যে প্রথমত যারথুষ্ট্র ইরানে খ্রিষ্টধর্ম স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল এবং এ গতি অব্যাহত থাকলে যারথুষ্ট্র ধর্মের জন্য বড় ধরনের বিপদ ছিল। দ্বিতীয়ত যারথুষ্ট্র ধর্মের বিপরীতে খ্রিষ্টধর্ম বিশ্বজনীন এবং এর আহ্বানও সর্বজনীন। অর্থাৎ খ্রিষ্টান ধর্মযাজকগণ কোন ভূখণ্ড ও সীমায় আবদ্ধ ছিলেন না। তাঁরা সব সময় খ্রিষ্টধর্মকে ইরান ও ইরানের বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়েছিলেন। তৃতীয়ত ইরানে ইসলামের আগমনের মাধ্যমে অবক্ষয় প্রাপ্ত যারথুষ্ট্র ধর্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিবর্তে মূলত ক্রমপ্রসারমান খ্রিষ্টধর্মের ওপরই আঘাত এনেছে ও এর প্রচারের পথকে রুদ্ধ করে ময়দান হতে বিতাড়িত করেছে। যদি ইসলামের আগমন না ঘটত তবে সমগ্র প্রাচ্যে তার মূল প্রসারিত করত। ইসলামের নৈতিক প্রভাবই নিকট ও দূর প্রাচ্যে খ্রিষ্টধর্মের বিস্তারের প্রতিবন্ধক হয়েছিল। তাই ইরানে ইসলামের প্রভাব ও প্রসারে যারথুষ্ট্র পুরোহিতগণ অপেক্ষা খ্রিষ্টান পাদ্রী ও ধর্মযাজকগণ অধিকতর কষ্ট পেয়েছিলেন। কারণ তাঁরাই অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ জন্যই লক্ষ্য করা যায় শতাব্দীকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অপবিত্র প্রকৃতির খ্রিষ্টান লেখকগণ ইরান ও ইরানী জাতির নামে কিছু লিখতে গেলে ইসলামের ওপর আক্রমণ করেন এবং পোপের প্রশংসায় রত হন।