ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান5%

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান লেখক:
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: ইতিহাস

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 47 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 112202 / ডাউনলোড: 6760
সাইজ সাইজ সাইজ
ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান

ইসলাম ও ইরানের পারস্পরিক অবদান

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে যখন ইসলাম আমাদের এ দেশে আসে তখন তা কিরূপ পরিবর্তন সাধন করে ? এ পরিবর্তনের ধারা কোন্ দিকে ছিল ? ইসলাম ইরান হতে কি গ্রহণ করেছে ও ইরানকে কি দিয়েছে ? ইরানে ইসলামের আগমন অনুগ্রহ ছিল নাকি বিপর্যয় ? বিশ্বের অনেক জাতিই ইসলামকে গ্রহণ করেছিল ও ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিল। তারা ইসলামের শিক্ষা প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রেখেছিল এবং তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে‘ ইসলামী সভ্যতা’ নামে এক বৃহৎ ও আড়ম্বরপূর্ণ সভ্যতার সৃষ্টি হয়। এ সভ্যতার সৃষ্টিতে ইরানীদের অবদান কতটুকু ? এ ক্ষেত্রে ইরানীদের অবস্থান কোন্ পর্যায়ে ? তারা কি এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছিল ? ইসলামের প্রতি তাদের এ অবদান ও ভূমিকার পেছনে কোন্ উদ্দীপনা কাজ করেছিল ? অত্র গ্রন্থের আলোচনাসমূহ এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।


1

2

3

4

5

6

মনী ধর্ম (মনাভী)

সাসানী আমলের অন্যতম গতিশীল ও সজীব ধর্ম হলো মনী ধর্ম। মনী ধর্মের আচার-বিশ্বাস ও রীতিনীতি সম্পর্কে বলতে গেলে তা বেশ দীর্ঘ। মনী ধর্ম-বিশ্বাস ও আচার অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির। সাধারণত বলা হয়ে থাকে মনী ধর্ম বৌদ্ধ ,খ্রিষ্ট ও যারথুষ্ট্র ধর্মের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে স্বয়ং মনী উদ্ভাবিত আচার-বিশ্বাসের সমন্বয়। জনাব সাইয়্যেদ হাসান তাকীযাদেহ্ ইরান পরিচিতি সংঘ -এ তাঁর উত্থাপিত গবেষণানির্ভর দু টি বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন ,

কোন কোন গবেষক মনে করেন মনী ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি হলো প্রাচীন ইরানের বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস , বিশেষত যারওয়ানী ধর্ম এবং আশকানি শাসনামলের শেষ দিকে ও সাসানী শাসনের প্রারম্ভে সৃষ্ট নব মতবাদ সমন্বিত যারথুষ্ট্র ধর্ম বিশ্বাস। কিন্তু যথাযথ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ সাদৃশ্য বাহ্যিক এবং এটি এ কারণে হয়েছে যে , মনী তাঁর ধর্ম বিশ্বাস প্রচারে বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ধর্মীয় পরিভাষা ও শিক্ষাকেই ব্যবহার করতেন। তবে পরবর্তীতে খ্রিষ্টধর্মের বিশেষ কিছু বিশ্বাস এর সঙ্গে সমন্বিত করা হয়। কারণ খতিয়ে দেখা গেছে মনী ইরান ও ভারতের অন্যান্য ধর্ম অপেক্ষা খ্রিষ্টধর্মের বিষয়ে অধিকতর জানতেন। তবে তাঁর এই জ্ঞানের উৎস মূল ধারার খ্রিষ্টধর্ম নয় ; বরং বিশেষ ধারার খ্রিষ্টবাদ যাকে গোনুসী (Gnostic)বলা হয়। এ ধারার খ্রিষ্টবাদ হেলুনিজম প্রভাবিত যা গ্রীক দর্শনের প্লেটোনিক যে ধারাটি সিরিয়া ও দজলা - ফোরাতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আলেকজাণ্ডারের পরবর্তী সময়ে প্রচলন লাভ করেছিল তার সঙ্গে প্রাচ্য দর্শনের মিশ্রণের ফলে সৃষ্ট হয়েছিল। এ ধারাটি খ্রিষ্টপূর্ব সময়ে এতদঞ্চলে প্রসার ও বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এ ধারার দু জন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেন মারকিউন বরদিসান যারা উভয়েই গোনুসী ছিলেন ও সানাভী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ৫৫

তাকী যাদেহ্ আরো বলেছেন , মনী ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মত হলো যদিও মনী সকল প্রসিদ্ধ ধর্ম ও ফির্কা হতে কিছু কিছু চিন্তা-বিশ্বাস গ্রহণ করেছেন ,যেমন বৌদ্ধ ধর্ম হতে সামান্য ,যারথুষ্ট্র ও যারওয়ানী ধর্ম হতে আরো অধিক ,খ্রিষ্ট ধর্ম হতে বিশেষত গোনুসী (খ্রিষ্টীয় আধ্যাত্মিকদের) হতে সর্বাধিক ,তদুপরি মনী ধর্মকে এগুলোর সমন্বয় মাত্র বলা যায় না ;বরং এর মূল ভিত্তি মনীর নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত ও এ ধারার উদ্গাতা স্বয়ং মনীর ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। তাই যদি এ ধর্ম অন্যান্য প্রসিদ্ধ ধর্মের বৈশিষ্ট্য রং ধারণ করে থাকে তা এ ধর্মকে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচারের সুবিধার্থেই করা হয়েছিল। ৫৬

যা হোক মনী ধর্মের বিষয়বস্তু কি ছিল বা স্বয়ং মনী কে ছিলেন তা আমাদের বর্তমান আলোচনার সাথে সম্পর্কশীল নয়। পরবর্তী অধ্যায়ে অবশ্য আমরা তাঁর সানাভী মতবাদ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং মনী ধর্মের অন্যান্য বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের বর্ণনা দেব। যে বিষয়টি আমাদের বর্তমান আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তা হলো ইসলামের আবির্ভাবের মুহূর্তে এ ধর্মের কি অবস্থা ছিল ,এর অনুসারীর সংখ্যা কিরূপ ছিল ও এ ধর্ম কতটুকু আকর্ষণ ও প্রভাব বিস্তার করেছিল ? সে মুহূর্তে তা উত্থানের পথে ছিল নাকি পতনের পথে ?

ঐতিহাসিক সত্য হলো এ ধর্মটি বিশ্বজনীনতা দাবি করে। স্বয়ং মনী নবুওয়াতের দাবি করতেন ,নিজেকে সর্বশেষ নবী এবং তাঁর ধর্মকে সর্বশেষ ধর্ম বলে প্রচার করতেন। যারথুষ্ট্র মতবাদের বিপরীতে মনীদের মাঝে পরবর্তী পর্যায়ে কয়েকজন শক্তিশালী ধর্মপ্রচারক আবির্ভূত হয়েছিলেন যাঁরা মনী ধর্মকে ইরানের সীমার বাইরে নিয়ে যেতে এবং অন্যান্য দেশের অনেক মানুষকেই প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যারথুষ্ট্র পুরোহিতদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত চাপ ও নিপীড়ন সত্ত্বেও ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত এ ধর্ম টিকে ছিল এবং যারথুষ্ট্র অপেক্ষা মনিগণ ইসলামের বিরুদ্ধে অধিকতর দৃঢ়তা প্রদর্শন করে। ইসলামী শাসনামলের কয়েক শতাব্দীব্যাপী তাদের অস্তিত্ব ছিল। তবে ধীরে ধীরে তারা নিশ্চি হ্ন হয়ে যায়।

সাসানী আমলের প্রারম্ভে মনীর আবির্ভাব ঘটে। তাঁর জন্ম দজলা-ফোরাতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে কিন্তু তিনি ইরানী বংশোদ্ভূত ছিলেন। আরদ্শিরের সময়কাল হতে কয়েকজন সাসানী শাসককে তিনি পেয়েছিলেন। সম্ভবত আরদ্শিরের পুত্র প্রথম শাপুরের সময় তিনি নবুওয়াতের দাবি করেন। কথিত আছে শাপুর মনীর দাওয়াতে প্রভাবিত হয়েছিলেন ও মনী ধর্মকে যারথুষ্ট্র ধর্মের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দেবেন কিনা এ বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি অনুতপ্ত হয়ে এ চিন্তা হতে ফিরে আসেন।৫৭ বলা হয়ে থাকে সপ্তম হিজরী শতাব্দী পর্যন্ত মনী ধর্ম টিকে ছিল। সুতরাং এ ধর্মের উৎপত্তির সময় হতে সম্পূর্ণ নিশ্চি হ্ন হওয়া পর্যন্ত এক হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়েছিল।

মনী ধর্ম আবির্ভাবের পর অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সম্পর্কে তাকী যাদেহ্ বলেছেন ,

মনীদের ইতিহাস অত্যন্ত দীর্ঘ ,মোগলদের উত্থানের সময়কাল পর্যন্ত এর অনুসারীরা বিদ্যমান ছিল। মনী ধর্ম আবির্ভাবের পর অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। মনীর মৃত্যুর পঁচিশ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ৩০০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর ধর্ম সিরিয়া ,মিশর ,উত্তর আফ্রিকাসহ স্পেন ও গল পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ৫৮

তিনি আরো বলেছেন ,

ইরানের মারভ ,বালখ ও তাখারিস্তানে মনী ধর্মের অসংখ্য অনুসারী ছিল। বিশিষ্ট চীনা পর্যটক হিউয়ান সাং সপ্তম খ্রিষ্টীয় শতাব্দীর প্রথম ভাগে মনী ধর্মকে ইরানের প্রধান ধর্ম বলে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য তাঁর এ কথার উদ্দেশ্য ইরানের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে এ অবস্থা ছিল অর্থাৎ তাখারিস্তানে মনী ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব ছিল যা অষ্টম খ্রিষ্টাব্দের প্রথম ভাগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ৫৯

ক্রিস্টেন সেন তাদের সম্পর্কে বলেছেন ,

মনীদের ওপর যারথুষ্ট্র পুরোহিতদের চাপ ও কঠোরতা সত্ত্বেও এ নতুন ধর্মটি ইরানে টিকে ছিল তবে কিছুটা অপ্রকাশ্যভাবে। সামানী শাসক নারসী ও দ্বিতীয় হারমুযদের শাসনামলে মনীদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা কিবতী মনী গ্রন্থের শেষে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আরবের হীরা অঞ্চলের আরব শাসনকর্তা আমর ইবনে আদী মনীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। মনী ধর্মের উৎপত্তিস্থল ব্যাবিলন ও তিসফুনের প্রাদেশিক রাজধানীতে প্রচুর মনী বাস করত। কিন্তু তৎকালীন শাসকদের নির্যাতনে তাদের অনেকেই পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের ইরানীদের অঞ্চলে চলে যায়। সেখানকার সাগাদ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মনী বসবাস করত। এ অঞ্চলের মনীরা তাদের পশ্চিমাঞ্চলের স্বধর্মীদের হতে দিন দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ৬০

মনী ধর্ম পরবর্তীতে টিকে থাকতে পারে নি। নিঃসন্দেহে এ পরাজয়ের মূল কারণ ছিল ইসলাম। মনী ধর্ম দ্বিত্ববাদনির্ভর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা ও মানব প্রকৃতিনির্ভর একত্ববাদী ধর্মের মোকাবিলায় টিকে থাকতে পারে নি। কারণ একত্ববাদী ধর্ম সহজেই প্রজ্ঞাবান ও দার্শনিক চিন্তাসম্পন্ন মানুষদের আকর্ষণ করতে সক্ষম। তদুপরি মনী ধর্ম কঠিন যোগ-সাধনা নির্ভর হওয়ায় এর বাস্তব অনুশীলনও অসম্ভব। বিশেষত বিবাহ ও যৌনাচার হতে বিরত থাকা এ ধর্মের অন্যতম পবিত্র নির্দেশ হওয়ায় অনেকেই এ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এর বিপরীতে মানুষ ইসলামের মত এমন এক ধর্ম পায় যা আত্মিক পরিশুদ্ধির সর্বোচ্চ মর্যাদাসহ বিবাহ ,বৈধ যৌনাচার ও সন্তান জন্মদানকে অত্যন্ত পবিত্র সুন্নাহ্ মনে করে।

যদি মুসলমানরা মনী ধর্মকে যারথুষ্ট্র ,ইহুদী ও খ্রিষ্টান ধর্মের ন্যায় ঐশী ধর্ম মনে করত ও আহলে কিতাব হিসেব করত তবে মনীরা ইসলামের আবির্ভাবের সময়কালে যত অধিক ছিল তাতে সম্ভাবনা ছিল যারথুষ্ট্র ,ইহুদী ও খ্রিষ্টধর্মের ন্যায় সংখ্যালঘু হিসেবে টিকে থাকার। কিন্তু মুসলমানরা যেহেতু মনীদের অধার্মিক মনে করত সেহেতু সংখ্যালঘু হিসেবেও তাদের টিকে থাকা সম্ভব হয়নি।

ইরানীদের শিয়া প্রবণতা

অধিকাংশ ইরানী সাফাভী শাসনামলের পরবর্তী সময়ে শিয়া হয়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে সন্দেহ নেই ,অন্য সকল স্থান অপেক্ষা ইরানে শিয়া মাযহাবের উপযোগী পরিবেশ বিরাজ করছিল। শিয়া মাযহাব যেরূপ মন্থর গতিতে ইরানে প্রবেশ করেছে এবং গভীরে প্রবেশ করেছে তা অন্য কোথাও হয় নি। সময়ের আবর্তনে ইরানীদের শিয়া মাযহাব গ্রহণের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হয়েছে। যদি ইরানীদের হৃদয়ে শিয়া প্রবণতার বীজ রোপিত না হতো তাহলে সাফাভিগণ শাসন ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের শিয়া ও আহলে বাইতের অনুসারী করতে পারত না।

বাস্তবতা হলো ইরানীদের শিয়া ও মুসলমান হওয়ার কারণ একই। ইরানীরা ইসলামকে তাদের আত্মার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পেয়েছে এবং ইসলাম তাদের হারানো বস্তুর সন্ধান দিয়েছে। ইরানীরা প্রকৃতিগতভাবে যেমন সচেতন তেমনি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দিক হতেও উজ্জ্বল অতীতের অধিকারী ছিল। তাই অন্যান্য জাতি হতে ইসলামের প্রতি অধিকতর সেবা দান করতে পেরেছে। ইরানের জনসাধারণ অন্যান্য জাতি অপেক্ষা ইসলামের প্রকৃত তাৎপর্য ও প্রাণকে অধিক অনুধাবনে সক্ষম হয়েছিল। এ কারণেই রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রতি তাদের ভালবাসা অন্যদের হতে বেশি ছিল এবং শিয়া মাযহাব তাদের মাঝে অন্যদের অপেক্ষা অধিক প্রসার লাভ করেছিল। ইরানীরা ইসলামের প্রাণকে নবীর আহলে বাইতের নিকট হতে পেয়েছিল এবং তাদের আত্মিক প্রশ্নাবলীর উত্তর কেবল তাঁরাই দান করতে পেরেছিলেন বলে তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।

যে বিষয়টি ইরানীদের ইসলামের প্রতি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল তা হলো ইসলামের সাম্য ও ন্যায়বিচার। শতাব্দীকাল হতে ইরান এর অভাব অনুভব করছিল এবং এর জন্য আকাক্সিক্ষত ছিল। তারা লক্ষ্য করেছিল মুসলমানদের যে অংশটি ইসলামের সাম্য ও ন্যায়ের প্রতি সবচেয়ে নিবেদিত এবং জাতি ,বংশের ঊর্ধ্বে উঠে এর প্রয়োগে সবচেয়ে তৎপর তাঁরা হলেন নবীর পবিত্র আহলে বাইত । নবীর আহলে বাইত অনারবদের নিকট ইসলামের ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক ও আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন।

আমরা যখন কোন কোন খলীফার কর্মকাণ্ডে আরব জাতীয়তার ভিত্তিতে আরব-অনারবদের মধ্যে পার্থক্য করার প্রবণতা লক্ষ্য করি তখন দেখি আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ইসলামের সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে এ বৈষম্যের বিরোধিতায় নেমেছেন। এটি এ সত্যকেই প্রমাণ করে।

বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থের নবম খণ্ডের 124 পৃষ্ঠায় আল কাফী গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত হয়েছে :

একদিন একদল মাওয়ালী (অনারব মুক্ত দাস শ্রেণী) হযরত আলী (আ.)-এর নিকট এসে আরবদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল: রাসূল (সা.) বায়তুল মাল বণ্টন ও বিবাহের ক্ষেত্রে কখনই আরব ও অনারবের মধ্যে পার্থক্য করতেন না। তিনি তাদের মধ্যে সমানভাবে বায়তুল মাল বণ্টন করতেন এবং অনারব সালমান ,বেলাল ও সাহিবকে আরব নারীদের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন ,অথচ এখন আরবরা তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য করছে। হযরত আলী আরবদের নিকট গিয়ে এ বিষয়ে কথা বললেন ,কিন্তু তাতে কোন লাভ হলো না। তিনি তখন চীৎকার করে বললেন: অসম্ভব ,অসম্ভব। অতঃপর তিনি তাদের নিকট হতে অসন্তুষ্ট অবস্থায় ফিরে এসে মাওয়ালীদের জানালেন: অত্যন্ত দুঃখজনক ,এরা তোমাদের সঙ্গে সাম্যের নীতি গ্রহণে ইচ্ছুক নয়। তারা একজন মুসলমান হিসেবে তোমাদের সম অধিকার দানে আগ্রহী নয়। আমি তোমাদের পরামর্শ দেব ব্যবসার পথ ধরার। আশা করি আল্লাহ্ তোমাদের ওপর বরকত অবতীর্ণ করবেন।

মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান ইরাকের প্রদেশিক শাসনকর্তা যিয়াদ ইবনে আবিহ্-এর নিকট লিখিত পত্রে বলেন , ইরানী মুসলমানদের হতে সাবধান থাক। কখনই তাদের আরবদের সম মর্যাদা দান কর না। আরবদের তাদের নারী গ্রহণের অধিকার থাকলেও তাদের আরব নারী গ্রহণের অধিকার নেই। আরবরা তাদের সম্পদের উত্তরাধিকারী হলেও তারা আরবদের সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে না। যতদূর সম্ভব তাদের কম মজুরী ও নিম্নমানের কাজ দাও। আরবদের উপস্থিতিতে তাদের জামায়াতের ইমাম হতে দিও না। জামায়াতের প্রথম সারিতে যেন তারা না দাঁড়ায়। তাদেরকে বিচারক ও সীমান্ত প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দান কর না।

কিন্তু এর বিপরীতে হযরত আলীর নিকট একজন আরব ও একজন ইরানী মহিলা বিচার নিয়ে আসলে তিনি তাদের মধ্যে সমভাবে বিচার করেন। এতে আরব মহিলা ক্ষিপ্ত হলে হযরত আলী মাটি হতে দু মুঠো মাটি উঠিয়ে কিছুক্ষণ এর দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন , যতই চিন্তা করি তবু এ দু মুঠো মাটির মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না।

হযরত আলী তাঁর এ তুলনামূলক কর্মের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রসিদ্ধ এ হাদীসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন :

كلّهم لآدم و آدم من تراب لا فضل لعربيّ على عجميّ إلّا بالتّقوى

সকলেই আদম হতে এবং আদম মাটি হতে সৃষ্ট হয়েছেন। আরবদের অনারবদের ওপর কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই ,কারণ শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড তাকওয়া ও খোদাভীতি। জাতি ,বংশ ,রক্ত সম্পর্ক দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করা যায় না। যখন সকলেই আদমের বংশের ,আর তিনি মাটি হতে সৃষ্ট হয়েছিলেন তখন রক্ত ,বর্ণ ও বংশ গৌরবের কোন স্থান নেই।

সাফিনাতুল বিহার -এর 2য় খণ্ডের 692 পৃষ্ঠায় ওয়ালী ধাতুর অধ্যায়ে বলা হয়েছে :

একদিন হযরত আলী (আ.) মিম্বারে জুমআর নামাজের খুতবা দিচ্ছিলেন। আরবের প্রসিদ্ধ নেতা আশআস ইবনে কাইস কিন্দী তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলল: হে মুমিনদের নেতা! এই রক্তিম বর্ণের লোকেরা (ইরানীরা) আপনার সম্মুখে আমাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ,অথচ আপনি কিছু করছেন না। এ কথা বলে রাগত স্বরে বলল: আজকে আমি দেখাব আরবরা কি করতে পারে। হযরত আলী এ কথা শুনে বললেন , এই স্ফীত উদররা দিনের বেলা যখন নরম বিছানায় ঘুমায় তখন ইরানী ও মাওয়ালীরা আল্লাহর জন্য প্রখর রৌদ্রের নীচে কাজ করে। অথচ এই আরামপ্রিয়রা চায় আমি এই পরিশ্রমী লোকদের বিতাড়িত করে জালিমের অন্তুর্ভুক্ত হই। সেই আল্লাহর শপথ ,যিনি বীজ অঙ্কুরিত ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ,আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি: প্রথম যুগে তোমরা ইসলামের জন্য ইরানীদের ওপর অস্ত্র চালাবে এবং পরবর্তী যুগে ইরানীরা তোমাদের ওপর ইসলামের স্বার্থে তরবারী চালাবে।

সাফিনাতুল বিহার -এর 2য় খণ্ডের 693 পৃষ্ঠায় উল্লিখিত হয়েছে :

মুগীরা ইবনে শোবা প্রায়শঃই হযরত আলী ও হযরত উমরের মধ্যে তুলনা করে বলতেন: আলী অনারব মাওয়ালীদের প্রতি দয়ার্দ্র ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। এর বিপরীতে খলীফা উমর তাদের অপছন্দ করতেন।

এক ব্যক্তি ইমাম সাদিক (আ.)-কে জিজ্ঞেস করল , মানুষ বলাবলি করে ,কেউ খাঁটি আরব ও খাঁটি দাস না হলে নিম্নশ্রেণীর।

সে বলল , যার পিতা-মাতা উভয়েই দাস ছিল।

ইমাম বললেন , খাঁটি দাসের শ্রেষ্ঠত্ব কি জন্য ?

সে বলল , নবী (সা.) যেহেতু বলেছেন প্রত্যেক জাতির দাসরা তাদের জাতিরই অন্তুর্ভুক্ত সেহেতু আরবদের খাঁটি দাস আরবদেরই অন্তর্ভুক্ত এবং সেই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে যে খাঁটি আরব অথবা আরবদের অধীনস্থ খাঁটি দাস।

ইমাম বললেন , তুমি শোন নি রাসূল (সা.) বলেছেন আমি তাদের অভিভাবক যাদের কোন অভিভাবক নেই। আমি আরব-অনারব সকলের অভিভাবক। নবী যাদের অভিভাবক তারা কি নবীর জাতির অন্তর্ভুক্ত নয় ?

ইমাম আরো বললেন , এ দু য়ের মধ্যে কে উত্তম ? যে নবীর সঙ্গে সংযুক্ত নাকি যে মূর্খ ও অত্যাচারী এক আরবের সঙ্গে সংযুক্ত যার মূত্রত্যাগের সভ্যতাটুকুও জানা নেই ?

অতঃপর বললেন , যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট চিত্তে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে সে ঐ ব্যক্তি হতে উত্তম যে ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এই আরবরা ভয়ে মৌখিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছে ,অপর দিকে ইরানীরা নিজ ইচ্ছায় সন্তুষ্ট চিত্তে ইসলামে প্রবেশ করেছে ? 38

এ ধরনের ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিকভাবে আরব ও অনারবদের মধ্যে পার্থক্য করা হতো এবং নবীর আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণ অহরহ এরূপ রাজনীতির বিরোধিতা করতেন বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। এ কারণেই ইরানীরা একদিকে ইসলামের প্রকৃত প্রাণ ও বাস্তবতার প্রতি অধিকতর লক্ষ্য রেখেছিল এবং অন্য দিকে অন্যান্য জাতি হতে অধিকতর বৈষম্যের শিকার হওয়ায় নবীর আহলে বাইতের পক্ষাবলম্বন করেছিল।

পৃষ্ঠপোষকতার নামে অমার্যাদা

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো কিছু লোক ইরানী জাতীয়তা সংরক্ষণের নামে ইরান জাতির প্রতি সর্বাধিক অমর্যাদা করছেন।

কখনও তাঁরা বলেন , ইরান জাতি সর্বাত্মকভাবে চেয়েছিল তাদের প্রাচীন ধর্মকে সংরক্ষণ করতে। কিন্তু সকল প্রকার ইতিবাচক ক্ষমতা ও মর্যাদা এবং বিশাল ভূমি ও চৌদ্দ কোটি মানব শক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তারা পঞ্চাশ বা ষাট হাজার আরবের নিকট পরাস্ত হয়েছিল।

যদি এ কথা সত্য হয়ে থাকে তবে এর চেয়ে অপমান আর কি হতে পারে ?

কখনও তাঁরা বলেন , ইরানীরা ভয়ে তাদের ধর্মীয় রীতি ও আচার পরিত্যাগে বাধ্য হয়। যদি এমনটিই হয় তবে ইরানীরা জাতিসমূহের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট। যে জাতি বিজেতা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্তরিক বিশ্বাসকেও সংরক্ষণে সক্ষম নয় সে জাতি মানবীয় গুণশূন্য।

কখনও তাঁরা বলেন , ইরানী জাতি চৌদ্দ শতাব্দী ধরে আরবদের জোয়ালের নীচে আছে যদিও আরবদের সামরিক কর্তৃত্ব একশ বছরের বেশি স্থায়ী ছিল না। কিন্তু চৌদ্দ শতাব্দী পূর্বে ইরানীদের যে মেরুদণ্ড ভেঙ্গেছিল তা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

কিরূপ উত্তম এ দুর্বলতা ও অক্ষমতা! যখন আফ্রিকার অর্ধবর্বর অনেক জাতি কয়েক শতাব্দীর ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের শেকলগুলো একের পর এক ছিন্ন করে নিজেদের মুক্ত করছে তখন দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী এক জাতি মরুভূমির কিছু গোত্রের হাতে পরাস্ত হওয়ার কিছু দিন পরই স্বাধীনতা লাভ করা সত্ত্বেও চৌদ্দশ বছর ধরে সেই শেকলের বন্ধনে আড়ষ্ট। এমনকি শতাব্দীকাল পূর্বের বিজেতার ভাষা ,আচার ও ধর্মীয় রীতি তাদের নিকট অপছন্দীয় হওয়ার পরেও প্রতিদিন তাদের সামাজিক ,ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক জীবনের গভীর হতে গভীরে প্রবেশ করছে। কি আশ্চর্য!

কখনও তাঁরা বলেন , ইরানীরা তাদের প্রাচীন ধর্ম ও আচার-বিশ্বাসকে সংরক্ষণের লক্ষ্যেই শিয়া মতবাদের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে বাহ্যিকভাবে মুনাফিকের ন্যায় ইসলামকে মেনে চলছিল। তাদের মুসলমান হওয়ার দাবি ও ইসলামের জন্য তাদের সকল অবদান মিথ্যা ভান ছিল। তারা চৌদ্দ শতাব্দী ধরে মিথ্যা বলছে ,মিথ্যা লিখছে ও কৃত্রিম আচরণ করেছে। কি চমৎকার কাপুরুষ ও অমর্যাদাশীল এ জাতি!

কেউ কেউ আবার বলে থাকেন , এত সব আত্মত্যাগ ও ঝোঁকের মূলে ইসলামের সত্যকে অনুধাবন এবং শিয়া মাযহাবের সঙ্গে ইরানীদের আত্মিক মিলের বিষয়টি ছিল না ;বরং একটি বিবাহের রহস্য কার্যকর ছিল এবং এ জাতি একটি বিবাহের কারণেই তাদের জীবন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করেছিল । কিরূপ অন্তঃসারশূন্য এ জাতি!

আবার অনেকে বলেন , ইরানীরা প্রথমে চেয়েছিল তাদের ধর্ম ও শাসন ব্যবস্থার সংরক্ষণে অংশ নিতে ,কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নেয় বিষয়টিকে তলিয়ে দেখায়। কি ভীতু ও কাপুরুষ এ জাতি!

এই সকল ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণে বোঝা যায় ,জাতিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো ইরানী। কারণ ইরানীরা ভয়ে নিজস্ব প্রচীন লিখন পদ্ধতি পরিত্যাগ করে আরবী লিখন পদ্ধতি গ্রহণ করে ,ফার্সী ভাষার ওপর আরবী ভাষাকে প্রধান্য দেয়া শুরু করে ,আরবদের ভয়ে আরবী ভাষার ব্যাকরণবিধি তৈরি করে ও আরবী ভাষায় বই লেখা শুরু করে।

আরব শাসকরা চলে যাওয়ার পরও তাদের এ ভীতি থেকে যায় এবং তারা তাদের সন্তানদের আরবী ভাষা শিক্ষা দেয়। তাদের সাহিত্যে আরবী ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটায় এবং ইসলামকে গ্রহণ করে প্রাচীন ধর্মকে জলাঞ্জলি দেয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো তারা তাদের প্রিয় ধর্মকে (তাদের ভাষায়) রক্ষার কোন প্রচেষ্টাই গ্রহণ করেনি।

মোট কথা ,এই সকল বিশ্লেষকের মত গত চৌদ্দ শতাব্দী ধরে ইরানে সংঘটিত ঘটনাসমূহে এ জাতির অক্ষমতা ,দ্বিমুখিতা ,কাপুরুষতা ,অমর্যাদা ,মূল্যহীনতা ও নীচতাকেই প্রমাণ করে। সে সাথে স্পষ্ট করে যে ,এ জাতির মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছা ক্ষমতা ,ঈমান ,সত্যাকাঙ্ক্ষা ও সত্য নিরূপণ ক্ষমতা অনুপস্থিত। এই সকল মূর্খ লেখক ও বিশ্লেষকের এ সব মন্তব্য সত্যপরায়ণ ও সম্ভ্রান্ত ইরানী জাতির প্রতি অসম্মান ছাড়া কিছুই নয়।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ ,এ গ্রন্থ প্রমাণ করবে এ সকল কিছুই ইরান ও ইরানী জাতির প্রতি মিথ্যা অপবাদ। এ জাতি যা করেছে স্বেচ্ছায় ও স্বাধীন মনোনয়নের মাধ্যমে করেছে। ইরানীরা যোগ্য ,অক্ষম নয় ;সত্যপরায়ণ ,মিথ্যাবাদী নয় ;মুমিন ,মুনাফিক নয় ;সাহসী ,ভীতু ও কাপুরুষ নয় ;সত্যাকাঙ্ক্ষী ,মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণকারী নয় ;মূল ও শেকড়ের অধিকারী ,মূলহীন নয়। ইরানীরা ভবিষ্যতেও তার মৌলিকত্ব সংরক্ষণ করবে এবং ইসলামের সঙ্গে তার চিরন্তন বন্ধনকে দৃঢ় ও মজবুত করবে।

দ্বিতীয় ভাগ

ইরানে ইসলামের অবদান


9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35